শামুয়েল-২ পুস্তকের ১১-১৫ অধ্যায়

11
দাউদ ও বৎসেবা
1পরের বছর বসন্তকালে রাজাদের যুদ্ধযাত্রার মরশুম এলে দাউদ তাঁর সেনাপতি যোয়াবকে সসৈন্যে আম্মোনীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠালেন। তাঁরা অম্মোনীদের ধ্বংস করে রব্বা শহর অবরোধ করলেন। দাউদ নিজে কিন্তু যুদ্ধে না গিয়ে জেরুশালেমেই থাকলেন।
2একদিন বিকেলে দাউদ ঘুম থেকে উঠে রাজপ্রাসাদের ছাদে বেড়াচ্ছিলেন। সেখান থেকে দেখতে পেলেন এক অপরূপা সুন্দরী নারী স্নান করছে। 3দাউদ লোক দিয়ে তার খোঁজখবর নিয়ে জানলেন যে সে ইলিয়ামের কন্যা এবং হিত্তিয় উরিয়ের স্ত্রী। 4তিনি লোক পাঠিয়ে তাকে আনালেন। সে তাঁর কাছে এলে তিনি তাঁকে শয্যাসঙ্গিনী করলেন। সেই সময় সে ঋতুস্নান করে শুচি হয়েছিল। এরপর সে বাড়ি ফিরে গেল।
5তারপর সেই নারী সন্তান সম্ভবা হয়েছে একথা বুঝতে পেরে দাউদের কাছে লোক পাঠিয়ে খবরটা জানাল। 6দাউদ তখন যোয়াবের কাছে লোক মারফৎ বলে পাঠালেন যেন হিত্তিয় উরিয়কে তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। 7উরিয় তাঁর কাছে এলে তিনি যোয়াবের কথা, সৈন্যসামন্ত ও যুদ্ধের খবর তাকে জিজ্ঞাসা করলেন। 8তারপর তাকে বললেন, যাও, বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম কর। উরিয় রাজবাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে গেলে রাজা তার বাড়িতে উপহার পাঠালেন। 9উরিয় কিন্তু বাড়িতে গেল না। সে বাড়ির দ্বাররক্ষীদের সাথে দেউড়িতে ঘুমিয়ে রাত কাটিযে দিল। 10দাউদ যখন শুনলেন, উরিয় বাড়ি যায় নি তখন তিনি তাকে ডেকে বললেন, কতদিন পর তুমি এলে, তবু বাড়িতে গেলে না কেন? 11উরিয় বলল, মহারাজ, চুক্তি সিন্দুক এবং ইসরায়েলী ও যিহুদীয়ার লোকেরা তাম্বুতে রয়েছে। আমার মনিব সেনাপতি যোয়াব ও সৈন্যধ্যক্ষেরা খোলা মাঠে ছাউনি ফেলে রয়েছেন, আর আমি এখানে বাড়িতে গিয়ে আরামে খাওয়া দাওয়া করে স্ত্রীর সঙ্গসুখ ভোগ করতে পারি? আপনার দিব্যি, আমি এমন কাজ কখনও করতে পারব না। 12দাউদ তখন তাকে বললেন, তাহলে, আজ তুমি এখানেই থাক। কাল তোমাকে আমি পাঠিয়ে দেব। উরিয় সেইদিন এবং তারপরের দিনও জেরুশালেমেই থেকে গেল। 13দাউদ তাকে রাত্রে ভোজে নিমন্ত্রণ করলেন এবং দারুণ মদ খাইয়ে নেশায়চুর করে দিলেন। সে রাত্রেও সে বাড়িতে না গিয়ে দেউড়িতে রাজার রক্ষীদের সঙ্গে ঘুমাল। 14পরদিন সকালবেলায় দাউদ যোয়াবের কাছে একটা চিঠি লিখে উরিয়ের হাতে পাঠিয়ে দিলেন। 15চিঠিতে লেখা ছিল: যেখানে তুমুল যুদ্ধ চলছে সেখানে উরিয়কে একেবারে সামনে পাঠিয়ে দাও। তারপর পিছু হটে এস, যেন সে যুদ্ধে মারা পড়ে। 16যোয়াব তখন একটি নগর অবরোধ করে রেখেছিলেন। তিনি জানতেন, কোনদিকে শত্রুপক্ষের শক্তিশালী যোদ্ধারা যুদ্ধ করছে। সেইদিকে তিনি উরিয়কে পাঠিয়ে দিলেন। 17শত্রুসৈন্য নগর থেকে বেরিয়ে এসে যোয়াবের সৈন্যদলকে আক্রমণ করল। ঘোরতর যুদ্ধে দাউদের কয়েকজন সেনাধ্যক্ষের সাথে হিত্তিয় উরিয়ও নিহত হল। 18যোয়াব যুদ্ধের খবর জানিয়ে দাউদের কাছে লোক পাঠালেন 19এবং তাকে নির্দেশ দিয়ে বললেন, যুদ্ধের সমস্ত বিবরণ শুনে রাজা যদি ক্রুদ্ধ হন 20এবং বলেন যে, কেন তোমরা নগরের অত কাছে গিয়েছিলে যুদ্ধ করতে? তোমরা কি জানতে না যে তারা নগরের প্রাচীরের উপর থেকে তীর ছুঁড়তে পারে? 21যেরুব্বেশতের পুত্র অবিমেলক কে বধ করেছিল? তেবেষে প্রাচীরের উপর থেকে একটি স্ত্রীলোক যাঁতার একখানা পাথর ছুঁড়ে তাকে মেরেছিল, তা কি জানতে না? তাহলে কেন তোমরা প্রাচীরের অত কাছে গিয়েছিলে?—তখন তুমি তাঁকে বলো, সৈন্যাধ্যক্ষ উরিয়ও মারা গেছেন।
22সংবাদ নিয়ে দূত গেল দাউদের কাছে। তাঁর সঙ্গে দেখা করে যোয়াবের সব কথা তাঁকে জানাল। 23তাঁকে বলল, আমাদের শত্রুপক্ষ আমাদের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে নগরদ্বারের বাইরে খোলা মাঠে আমাদের আক্রমণ করতে এসেছিল। আমরা তাড়া করে আবার তাদের নগরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম। 24তখন প্রাচীরের উপর থেকে ধর্নুদ্ধরেরা তীর ছুঁড়তে আরম্ভ করে। তাতে মহারাজের কয়েকজন সৈন্যাধ্যক্ষ নিহত হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে আপনার দাস উরিয়ও আছেন।
25দাউদ দূতকে বললেন, যোয়াবকে বলো, তিনি যেন হতোদ্যম না হন। কারণ যুদ্ধে কার মৃত্যু হবে কি হবে না, সে কথা কেউ বলতে পারে না। তুমি বীর বিক্রমে নগর আক্রমণ করে অধিকার কর।
26উরিয়ের স্ত্রী তার স্বামী উরিয়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে শোকে আচ্ছন্ন হল। 27তার শোকের আবেগ কমে গিয়ে অশৌচকাল কেটে গেলে দাউদ লোক দিয়ে তাকে নিজের প্রাসাদে আনালেন ও তাকে বিবাহ করলেন। তাঁদের একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করল। দাউদের এইসব কাজে প্রভু পরমেশ্বর অসন্তুষ্ট হলেন।
Bengali C.L. Bible, 


দাউদ ও নাথান
1প্রভু পরমেশ্বর প্রবক্তা নবী নাথানকে দাউদের কাছে পাঠালেন। নাথান দাউদকে গিয়ে বললেন, একটি নগরে দুজন লোক ছিল। একজন ছিল ধনী এবং আর একজন গরীব। 2ধনী লোকটির অনেক গরু-ভেড়া ছিল। 3আর গরীব লোকটির একটি মাত্র ভেড়া ছাড়া আর কিছুই ছিল না। সে সেটি কিনেছিল এবং তার নিজের ছেলেমেয়েদের সঙ্গেই অতি যত্নে ভেড়াটি বেড়ে উঠছিল। সে তাকে নিজের ভাগের খাবার খাওয়াত, নিজের বাটিতে জল খাওয়াত, বুকে করে রাখত। বলতে গেলে ভেড়াটিকে তার মেয়ের মতই রাখত। 4একদিন ধনী লোকটির বাড়িতে একজন অতিথি এল। অতিথিদের আদর আপ্যায়ন, খাওয়া দাওয়ার জন্য নিজের পশুপাল থেকে ভেড়া না নিয়ে সেই গরীবের ওই একটি মাত্র মেষ শাবকটিকে এনে অতিথি সেবা করল। 5একথা শুনে ধনী লোকটির উপর দাউদ রাগে জ্বলে উঠলেন। নাথানকে বললেন, সদা জাগ্রত প্রভু পরমেশ্বরের দিব্য যে ব্যক্তি এই কাজ করেছে, মৃত্যুই তার উপযুক্ত শাস্তি। 6এই হৃদয়হীন কাজের জন্য সেই একটি মেষ শাবকের বদলে তাকে চারগুণ ফিরিয়ে দিতে হবে।
7নাথান দাউদকে বললেন, আপনিই সেই ব্যক্তি! ইসরায়েলের ঈশ্বর প্রভু বলেছেন, আমি তোমাকে ইসরায়েলের রাজা করেছি, শৌলের হাত থেকে তোমাকে উদ্ধার করেছি, 8তোমাকে দিয়েছি তোমার মনিবের রাজ্য ও তার রাণীদেরও তোমার রাণী করে দিয়েছি। আমি তোমাকে করেছি ইসরায়েল ও যিহুদা কুলের শ্রেষ্ঠ নরপতি। এতেও যদি সন্তুষ্ট না হতে, তাহলে আমি তোমাকে এর দ্বিগুণ দিতাম। 9কিন্তু কেন তুমি আমার আজ্ঞা অমান্য করলে? কেন তুমি এই ঘৃণ্য কাজ করলে? তুমি হিত্তিয় উরিয়কে বধ করেছ। যুদ্ধে আম্মোনীদের তরবারির মুখে তাকে ফেলে দিয়েছ এবং তার স্ত্রীকে হরণ করেছ। 10অতএব তোমার বংশ কোনদিন যুদ্ধের হাত থেকে রেহাই পাবে না। কারণ তুমি আমাকে অমান্য করেছ এবং হিত্তিয় উরিয়ের স্ত্রীকে নিজের স্ত্রী করেছ। 11অতএব জেনে রাখ, আমি তোমারই বংশের একজনকে তোমার বিরুদ্ধে দাঁড় করাব। সে তোমার জীবনে বিপর্যয় আনবে। আমি তোমার প্রতিবেশীর হাতে তোমার স্ত্রীদের তুলে দেব। সে প্রকাশ্যে তাদের সতীত্ব হরণ করবে। 12তুমি একাজ করেছিলে গোপনে কিন্তু আমি সারা ইসরায়েলের সামনে প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটাব।
13দাউদ নাথানকে বললেন, আমি প্রভু পরমেশ্বরের কাছে পাপ করেছি। নাথান বললেন, প্রভু পরমেশ্বর আপনাকে পাপের দায় থেকে মুক্ত করছেন, আপনি মরবেন না। 14কিন্তু যেহেতু এই দুষ্কর্মের দ্বারা আপনি প্রভু পরমেশ্বরের বিরোধীদের তাঁর নিন্দা করার বড় সুযোগ করে দিয়েছেন, সেইজন্য আপনার নবজাত পুত্রটির মৃত্যু হবে। 15নাথান ফিরে গেলেন বাড়ীতে।
দাউদের পুত্রের মৃত্যু
উরিয়ের স্ত্রীর গর্ভজাত দাউদের পুত্রকে প্রভু পরমেশ্বর আঘাত করলেন। সে অসুস্থ হয়ে পড়ল। 16দাউদ শিশুটির জন্য ঈশ্বরের কাছে কাতর প্রার্থনা জানাতে লাগলেন। উপবাস করে নিভৃতে সারারাত মাটিতে পড়ে রইলেন। 17তাঁর বাড়ীর বয়স্ক ব্যক্তিরা তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে মাটি থেকে তুলে আনতে চেষ্টা করলেন কিন্তু তিনি উঠলেন না এবং তাদের সঙ্গে কিছু খেলেনও না। 18সাতদিন পর শিশুটি মারা গেল। কিন্তু কর্মচারীরা দাউদকে শিশুটির মৃত্যুসংবাদ দিতে সাহস করল না। তারা বলল, শিশুটি যখন বেঁচেছিল তখনই তিনি আমাদের কথায় কান দেননি। এখন কি করে তাঁকে বলি যে শিশুটি মারা গেছে? তাহলে তিনি যদি নিজের উপরে কিছু একটা করে বসেন। 19কর্মচারীদের কানাকানি করতে দেখে দাউদ অনুমানে বুঝলেন যে শিশুটি মারা গেছে।তখন তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, শিশুটি কি মারা গেছে? তারা বলল, আজ্ঞে হ্যাঁ, মারা গেছে।
20তখন দাউদ ভূমিশয্যা থেকে উঠে স্নান করে তেল মেখে পোষাক পরিচ্ছদ পাল্টে পবিত্র স্থানে গিয়ে প্রভু পরমেশ্বরের আরাধনা করলেন। তারপর সেখান থেকে প্রাসাদে ফিরে এলেন, এবং খাবার চাইলেন। পরিচারকেরা তাঁকে খাদ্য পরিবেশন করলে তিনি খাদ্য গ্রহণ করলেন। 21তাঁর পরিচারকেরা তাঁকে বলল, মহারাজ, শিশুটি যতক্ষণ বেঁচেছিল ততক্ষণ আপনি উপবাস করে রইলেন, কাঁদলেন কিন্তু শিশুটি মারা যেতে আপনি উঠে এলেন, খাদ্য গ্রহণ করলেন—এই ব্যাপারটা আমরা ঠিক বুঝতে পারলাম না। 22দাউদ বললেন, হ্যাঁ, যতক্ষণ শিশুটি বেঁচেছিল ততক্ষণ আমি উপবাসী থেকে কেঁদেছিলাম। ভেবেছিলাম, বলা যায় না যদি ঈশ্বর আমায় কৃপা করেন, যদি শিশুটি বেঁচে যায়। 23কিন্তু সে মারা গেল। এখন আর উপবাস করে কি লাভ? তাকে কি আমি আবার ফিরিয়ে আনতে পারব? আমি তার কাছে যাব কিন্তু সে আর আমার কাছে ফিরে আসবে না।
শলোমনের জন্ম
24দাউদ তাঁর স্ত্রী বৎশেবাকে সান্ত্বনা দিলেন। এরপর বৎশেবার আর একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করল। দাউদ তার নাম রাখলেন শলোমন। প্রভু পরমেশ্বর তার প্রতি কৃপা করলেন। 25এবং নবী নাথানের মারফৎ আদেশ পাঠালেন যেন তার নাম রাখা হয় যিদদিয় অর্থাৎ প্রভু পরমেশ্বরের প্রিয়পাত্র।
দাউদের রব্বা অধিকার
26এদিকে যোয়াব আম্মোনের রাজধানী রব্বা অধিকার করার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। রব্বা প্রায় হাতের মুঠোর মধ্যে চলে এসেছে। 27তিনি দূতমুখে দাউদের কাছে বলে পাঠালেন, আমি রব্বার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জলসরবরাহ কেন্দ্র দখল করে ফেলেছি। 28আপনি বাকী সৈন্যসামন্ত জোগাড় করে নিয়ে স্বয়ং এসে নগর অবরোধ করুন এবং অধিকার করুন। নইলে এতে আমারই কৃতিত্ব হবে। আমি তা চাই না। 29দাউদ তখন সমস্ত সৈন্যসামন্ত জোগাড় করে নিয়ে গিয়ে রব্বা আক্রমণ করে অধিকার করলেন। 30দাউদ আম্মোনীদের দেবতা মোলকের মাথা থেকে সোনার মুকুট খুলে নিলেন। মুকুটটার ওজন ছিল এক তালন্ত। তাতে একটি মণি বসানো ছিল। সেটি তিনি নিজের মুকুটে বসালেন। শহর থেকে তিনি প্রচুর জিনিসপত্র লুঠ করে আনলেন। 31সেখানকার লোকদের তিনি বন্দী করে আনলেন এবং তাদের লোহার কোদাল, শাবল ইত্যাদি যন্ত্রপাতি দিয়ে ইঁট তৈরীর কাজে লাগিয়ে দিলেন। আম্মোনের অন্যান্য শহরের লোকদেরও তিনি ঐ একই কাজে লাগিয়ে দিলেন। তারপর সৈন্যসামন্ত নিয়ে ফিরে গেলেন জেরুশালেমে।
Bengali C.L. Bible


অমনোন এবং তামর
1দাউদের পুত্র অবশোলোমের একটি সুন্দরী অবিবাহিতা বোন ছিল। তার নাম ছিল তামর। দাউদের আর একটি পুত্র অম্‌নোন তার প্রেমে পড়ে। 2তার জন্য অম্‌নোনের আকুলতা এত তীব্র হয়ে উঠেছিল যে সে অসুস্থ হয়ে পড়ল। কারণ কুমারী মেয়ে তামরকে কাছে পাওয়া অম্‌নোনের পক্ষে অসম্ভব ছিল। 3দাউদের ভাই শিমিয়র পুত্র যোনাদব ছিল অম্‌নোনের বন্ধু। দারুণ ধূর্ত সে। 4সে অম্‌নোনকে বলল, তুমি রাজার ছেলে।তুমি কেন দিনের পর দিন এভাবে বিমর্ষ হয়ে পড়ছ? কি ব্যাপার? আমাকে বল। সে বলল, আমার সৎভাই অবশোলোমের বোন তামরকে আমি ভালবাসি।
5যোনাদব তাকে বলল, ঠিক আছে, তুমি অসুস্থতার ভাণ করে বিছানায় শুয়ে থাক। তোমার বাবা তোমাকে দেখতে এলে তাঁকে বলো যে, আমার বোন তামরের হাতে আমি খেতে চাই। সে এসে আমার সামনে খাবার তৈরী করে আমাকে খাইয়ে যাক। 6তার কথামত অমনোন অসুস্থতার ভাণ করে শুয়ে রইল।
রাজা দাউদ তাকে দেখতে এলে সে তাঁকে বলল, দয়া করে আমার বোন তামরকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন। সে যেন আমার সামনে বসে খাবার তৈরী করে দেয়। আমি তার হাতে খেতে চাই।
7দাউদ তখন তামরকে বলে পাঠালেন তোমার ভাই অমনোনের ঘরে গিয়ে তার জন্য খাবার তৈরী করে দাও। 8কাজেই তামর অম্‌নোনের ঘরে গেল। গিয়ে দেখল, সে শুয়ে আছে। তামর তখন তার সামনে বসে ময়দা মেখে পিঠে তৈরী করল। 9তারপর অম্‌নোনকে পিঠেগুলো পরিবেশন করে খেতে দিলে সে খেতে চাইল না। বলল, সবাইকে এখান থেকে চলে যেতে বল। সকলে চল গেল। 10তখন অমনোন তামরকে বলল, এবার খাবারগুলো আমার বিছানার কাছে নিয়ে এস, আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দাও। 11তামর তার কাছে খাবার নিয়ে এলে সে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, এস, আমার কাছে শোও। 12সে বলল, না দাদা তা হয় না। এমন জঘন্য কাজ করতে আমাকে বাধ্য করো না। ইসরায়েলের মধ্যে এমন কাজ করা উচিত নয়। এমন মুর্খতার কাজ করো না। 13আমি তাহলে মুখ দেখাব কেমন করে? আর তুমি? তুমিও সমগ্র ইসরায়েলের কাছে ঘৃণার পাত্র হবে। বরং এক কাজ কর, তুমি রাজাকে বল, তিনি আমাকে তোমার হাতে দিতে অসম্মত হবেন না। 14কিন্তু সে তামরের কথা শুনল না। তার গাযের জোর বেশি তাই সে জোর করে তার সতীত্ব নাশ করল।
15তারপর তামরের উপর দারুণ ঘৃণায় অম্‌নোনের মন ভরে গেল। আগে সে তাকে যতখানি ভালবেসেছিল তার চেয়ে বেশি ঘৃণা করতে লাগল। তাকে বলল, এবার দূর হয়ে যাও। সে বলল, না আমি যাব না, 16আমার সঙ্গে যে ব্যবহার করলে তার চেয়ে এভাবে আমাকে তাড়িয়ে দেওয়াটা বেশি অপরাধ হবে! অমনোন তার কথায় কান দিল না। 17সে তার খাস চাকরকে ডেকে বলল, এই মেয়েছেলেটাকে আমার সামনে থেকে দূর করে দাও। ওকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দাও। 18চাকরটি তামরকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। তামরের পরণে ছিল পুরো অস্তিনের লম্বা জমকালো পোষাক। তখনকার দিনে কুমারী রাজকন্যারা এইরকম পোষাকই পরতো। 19সে তখন নিজের মাথায় ছাই মেখে পরণের কাপড় ছিঁড়ে দুহাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। 20তার সহোদর অবশালোম তাকে এভাবে দেখে জিজ্ঞাসা করল, অম্‌নোন কি তোমার সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করেছে? কিন্তু বোনটি আমার, এ কথা তুমি কাউকে বল না। কারণ সে তোমারই সৎ ভাই। তুমি মন খারাপ করো না। তাই তামর সেদিন থেকে অবশালোমের বাড়ীতেই বিষণ্ণ মনে নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে লাগল। 21একথা রাজা দাউদের কানে গেল। তিনি ভীষণ রেগে গেলেন। কিন্তু অমনোন তাঁর প্রথম সন্তান বলে তাকে খুব ভালবাসতেন। তাই তাকে শাস্তি দিলেন না।
22বোন তামরকে মানভ্রষ্ট করার জন্য অবশালোম অম্‌নোনকে তীব্র ঘৃণা করলেও মুখে তাকে ভালমন্দ কিছুই বলল না।
অবশালোমের প্রতিশোধ
23দুবছর পর ইফ্রয়িম শহরের কাছে বেলহাৎসোরে অবশালোমের মেষপালের লোমকাটার সময় অবশালোম সমস্ত রাজপুত্রকে এনে সেখানে নিমন্ত্রণ করল। 24সে রাজার কাছে গিয়ে বল, মহারাজ আপনার সেবকের মেষদের লোম কাটা হবে। এই উৎসবে মহারাজ স্বয়ং তাঁর পারিষদদের নিয়ে যোগ দিলে মহারাজ আপনার সেবক ধন্য হবে।
25রাজা বললেন, না বৎস, আমরা সবাই গেলে তোমার খুব অসুবিধা হবে। সে তাঁকে পীড়াপীড়ি করতে লাগল, তবু তিনি রাজী হলেন না। তাকে আশীর্বাদ করে বিদায় দিলেন।
26অবশালোম তখন তাঁকে বললেন,ঠিক আছে, তা যদি না হয় তাহলে আমার বড় ভাই অমনোনকে আমাদের সাথে পাঠান। রাজা বললেন, সে কেন তোমার সঙ্গে যাবে? 27তবু অবশালোম জিদ ধরে রইল। দাউদ তখন অমনোন ও অন্যান্য সমস্ত রাজকুমারকে তার সঙ্গে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। অবশালোম রাজার উপযুক্ত ভোজসভার আয়োজন করলেন।
28তারপর তাঁর ভৃত্য ও পরিচারকদের নির্দেশ দিয়ে বললেন, অমনোনের ওপর নজর রেখ। সে আকন্ঠ সুরাপানে বেসামাল হয়ে পড়লে, আমি যখন আদেশ দেব, তখন তাকে হত্যা করো। ভয়ের কিছু নেই, সব দায়িত্ব আমার। দ্বিধা করো না, সাহস কর।
29অবশালোমের আদেশ অনুযায়ী ভৃত্যেরা অমনোনকে হত্যা করল। বাকী রাজপুত্রেরা নিজেদের বাহনে চড়ে পালিয়ে গেল।
30রাজপুত্রেরা তখনও পথে। ওদিকে দাউদের কাছে সংবাদ চলে গেল যে, অবশালোম সমস্ত রাজপুত্রকে হত্যা করেছে, একজনও রক্ষা পায়নি। 31এই সংবাদ পেয়ে রাজা নিজের পোশাক ছিঁড়ে ফেলে মাটিতে আছড়ে পড়লেন। তাঁর পরিচারকেরাও নিজেদের পোষাক ছিঁড়ে ফেলে তাঁর কাছে দাঁড়িয়ে রইল। 32তখন দাউদের ভাই শিমিয়র ছেলে যোনাদব তাঁকে বলল, মহারাজ, রাজপুত্রদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে একথা মনে করবেন না। একমাত্র অমনোনকেই হত্যা করা হয়েছে। কারণ যেদিন সে অবশালোমের বোন তামরকে মানভ্রষ্ট করেছিল সেদিন থেকেই অবশালোমের মুখ দেখে বোঝা যেত যে, সে একম কিছু একটা করবে। 33কাজেই রাজপুত্রেরা সকলেই নিহত হয়েছে, একথা ভাববেন না, অমনোনই শুধু মারা গেছে। 34ওদিকে, অবশালোম পালিয়ে গেল। এমন সময় প্রহরী দেখতে পেল, পাহাড়ের গা বেয়ে হরনায়িমের রাস্তা দিয়ে অনেক লোক আসছে। সে গিয়ে রাজাকে এ খবর জানাল এবং বলল, পাহাড়ের গা বেয়ে হরনায়িমের রাস্তা দিয়ে অনেক লোককে আসতে দেখলাম।
35তখন যোনাদব রাজাকে বলল, দেখুন, আমি যা বলেছিলাম, ঠিক তাই! রাজপুত্রেরা আসছে। 36তার কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজপুত্রেরা এসে ঘরে ঢুকল এবং হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। রাজা ও তাঁর পারিষদেরাও সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। 37-38অবশালোম অম্মিহুদের পুত্র গশূরের রাজা তলমায়ির কাছে পালিয়ে গেলেন।তিন বৎসর সেখানে থাকলেন। দাউদ তাঁর পুত্রের জন্য শোকার্ত হয়ে রইলেন।
39মৃত অমনোনের জন্য দাউদের শোকের আবেগ কমে এলে পুত্র অবশালোমের জন্য তাঁর মন আকুল হয়ে উঠল।
Bengali C.L. Bible, 


অবশালোমের প্রত্যাবর্তন
1সরুয়ার পুত্র যোয়াব দেখলেন যে অবশালোমের জন্য রাজার মন ব্যাকুল হয়েছে। 2তাই তিনি তেকোয়াতে লোক পাঠিয়ে একজন বুদ্ধিমতী মহিলাকে আনালেন। বললেন, তোমাকে শোকার্ত রমণীর অভিনয় করতে হবে, যেন বহুদিন ধরে তুমি মৃতজনের জন্য শোকার্ত হয়ে আছ। তোমার পরণে থাকবে শোকবস্ত্র, মাথায় তুমি তেল দেবে না। 3তারপর রাজাকে গিয়ে এইভাবে বল-যোয়াব তাকে কি বলতে হবে শিখিয়ে দিলেন।
4সেই মহিলা রাজার কাছে গিয়ে সসম্ভ্রমে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করে বলল, মহারাজ, আমাকে সাহায্য করুন। 5রাজা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি হয়েছে? মহারাজ, আমি গরীব বিধবা। আমার স্বামী মারা গেছেন। 6আমার দুটি ছেলে ছিল। একদিন মাঠে কাজ করার সময় দুজনর ঝগড়া বেধে যায়। সেখানে এমন কেউ ছিল না যে তাদের ছাড়িয়ে দেয়। ফলে একভাই আর এক ভাইকে মেরে ফেলে। 7মহারাজ, এখন আমার আত্মীয় স্বজনেরা আমার উপর জোর করছে, বলছে, ভ্রাতৃহন্তাকে তুমি আমাদের হাতে তুলে দাও। আমরা তার ভাইকে হত্যার প্রতিশোধে হত্যা করব।
মহারাজ, তাহলে আমার বংশের প্রদীপটাও যে নিভে যাবে। আমার স্বামীর স্মৃতিও পৃথিবী থেকে একেবারে মুছে যাবে। 8সব শুনে রাজা বললেন, তুমি বাড়ি যাও, আমি ব্যাপারটা দেখছি।
9সে বলল, মারাজ, আপনি যা-ই করুন, কুলের উপর সমস্ত অপরাধের দায় বর্তাক কিন্তু মহারাজ ও তাঁর সিংহাসন দোষমুক্ত থাকুন। 10রাজা তাকে বললেন, যদি কেউ তোমাকে এভাবে হুমকি দেয় তাহলে তাকে আমার কাছে এনো। সে আর কখনও তোমায় জ্বালাতন করবে না। 11সে তখন বলল, মহারাজ, কৃপা করে আপনি আপনার প্রভু পরমেশ্বরের কাছে প্রার্থনা করুন, যাতে আমার এক ছেলের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে আমার অন্য ছেলেটিকে হত্যা করে অপরাধ না করে। দাউদ বললেন, সদা জাগ্রত প্রভু পরমেশ্বরের দিব্য কেউ তোমার ছেলের মাথার একটি চুল পর্যন্ত ছুঁতে পারবে না। 12সেই মহিলা তখন বলল, হে মহারাজ, দয়া করে আপনার দাসীকে আর একটি কথা নিবেদন করতে অনুমতি দিন। রাজা বললেন, বল, কি বলতে চাও।
13সে বলল,মহারাজ, তাহলে আপনি কেন ঈশ্বরের প্রজার উপর সেই একই অন্যায় করছেন? নির্বাসিত পুত্রকে ফিরিয়ে না এনে মহারাজ নিজেই নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছেন। 14একদিন আমাদের মৃত্যু হবেই। মাটিতে জল ঢেলে ফেলে দিলে তা যেমন আর তুলে আনা যায় না তেমনি আমাদের ফিরিয়ে আনা যাবে না, কিন্তু মহারাজ, নির্বাসিত ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনা যায় এবং তিনি তাকে আনার উপায় বের করেন, ঈশ্বর তাকে দীর্ঘজীবী করেন। 15হে মহারাজ, লোকেরা আমায় হুমকি দিচ্ছে, তাই ভয়ে আমি আপনার কাছে সেকথা জানাতে এসেছি, এবং আশা করে এসেছি আমার আবেদন আপনি মঞ্জুর করবেন। 16যে আমাকে ও আমার পুত্রকে হত্যা করে ইসরায়েল জাতির মধ্যে থেকে আমাদের মুছে ফেলতে চায়, ঈশ্বরদত্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায়, তার হাত থেকে আপনার এই দাসীকে উদ্ধার করুন। 17আমি জানতাম প্রভু মহারাজের প্রতিজ্ঞা আমার ভরসা। মহারাজ ঈশ্বরের দূতের মত। তিনি ভালমন্দ বিচারে সক্ষম। প্রভু পরমেশ্বর আপনার সহায় হোন।
18রাজা তখন তাকে বললেন, দেখ, আমি তোমাকে যা জিজ্ঞাসা করব, বলবে, লুকাবে না। সে বলল, বলুন, প্রভু মহারাজ।
19রাজা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, বল তো, তোমার সাথে যোগসাজস করে যোয়াব এসব করেছে?
সে বলল, আজ্ঞে হ্যাঁ মহারাজ। আপনার কাছে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। আপনার সেনাপতি যোয়াব আমায় অনুরোধ করেছিলেন এবং আপনার দাসীকে এসব কথা শিখিয়ে দিয়েছিলেন। 20পরিস্থিতিকে সহজ করার জন্যই তিনি একাজ করেছেন। আমার প্রভু বিজ্ঞ। ঈশ্বরের দূতের মতই তাঁর প্রজ্ঞা। এ পৃথিবীর কোন কিছুই তাঁর অজানা নয়।
21পরে রাজা যোয়াবকে বললেন, আমি ঠিক করেছি, তুমি যাচাও,তাই-ই করব। যাও, যুবক অবশালোমকে ফিরিয়ে আন।
22যোয়াব সাষ্টাঙ্গে রাজাকে প্রণাম করে বলল,ধন্য মহারাজ। ঈশ্বর আপনাকে আশীর্বাদ করুন। আজ আপনার দাস জানল যে সে আপনার কৃপা লাভে ধন্য হয়েছে। আমার প্রভু, হে মহারাজ আপনি তার আবেদন মঞ্জুর করেছেন। 23যোয়াব গশূরে গিয়ে অবশালোমকে জেরুশালেমে ফিরিয়ে নিয়ে এলেন। 24কিন্তু রাজা আদেশ করলেন, ওকে তার নিজের ঘরে যেতে বল। তাই অবশালোম নিজের ঘরে চলে গেল। রাজার সাথে আর দেখা করল না।
দাউদের সঙ্গে অবশালোমের মিলন
25সারা ইসরায়েলের মধ্যে অবশালোমের মত রূপবান কেউ ছিল না।তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব নিখুঁত সুন্দর। 26মাথা ভর্তি ঘন লম্বা চুল। ঘন লম্বা চুলে মাথা ভরে গেলে সে বছরের শেষে চুল ছেঁটে ফেলত। কাটা চুলগুলি দেশের প্রচলিত মান অনুযায়ী ওজন করা হত। ওজনের পরিমাণ দাঁড়াত দুশো শেকেল। 27অবশালোমের তিনটি ছেলে ও একটি মেয়ে ছিল। মেয়েটির নাম ছিল তামর। সেও ছিল পরমা সুন্দরী। 28অবশালোম পুরো দুবছর জেরুশালেমে থাকল কিন্তু রাজার সঙ্গে দেখা করল না। 29অবশেষে অবশালোম যোয়াবকে ডেকে পাঠাল তাকে রাজার কাছে পাঠাবার জন্য। কিন্তু যোয়াব এল না। আবার অবশালোম তাকে ডেকে পাঠাল, তবু সে এল না। 30তখন সে কর্মচারীদের বলল, দেখ, আমার ক্ষেতের পাশেই যোয়াবের ক্ষেত। সেখানে যব চাষ করা হয়েছে। যাও, ঐ যবের ক্ষেতে আগুন লাগিয়ে দাও। অবশালোমের কর্মচারীরা ক্ষেতে আগুম লাগিয়ে দিল। 31তখন যোয়াব অবশালোমের কাছে তার বাড়ীতে ছুটে এল। বলল, তোমার কর্মচারীরা কেন আমার ক্ষেতে আগুন লাগিয়েছে? 32অবশালোম বলল, কারণ তোমাকে ডেকে পাঠালাম তবু তুমি এলে না। আমি চেয়েছিলাম, তুমি রাজার কাছে গিয়ে আমার হয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করবে, গশূর থেকে আমাকে কেন এখানে আসতে হল? সেখানে থাকাই আমার ভাল ছিল। আমি রাজার সঙ্গে দেখা করতে চাই। যদি আমি অপরাধী হয়ে থাকি, তিনি আমাকে হত্যা করুন। 33যোয়াব রাজার কাছে গিয়ে সব কথা বললেন, রাজা তখন অবশালোমকে ডেকে পাঠালেন। অবশালোম রাজার কাছে এসে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করল। রাজা তাকে চুম্বন দিয়ে অভ্যর্থনা কলেন।
Bengali C.L. Bible, পবিএ বাইবেল

অবশালোমের বিদ্রোহ
1এই ঘটনার পর অবশালোম নিজের জন্য রথ ও ঘোড়া এবং পঞ্চাশজন অনুচর রাখল। 2সে প্রতিদিন ভোর বেলায় উঠে নগর তোরণে পথের ধারে দাঁড়িয়ে থাকত। কোন লোক যদি কোন বিবাদ-বিসম্বাদ নিয়ে রাজার কাছে বিচারের জন্য আসত, অবশালোম তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করত, কোন্‌ নগরের লোক তুমি? সে তার গোষ্ঠীর নাম বললে পর 3অবশালোম তাকে বলত, দেখ, আইন তো তোমারই পক্ষে কিন্তু তোমাদের কথা শোনার জন্য রাজার কোন প্রতিনিধি এখানে নেই।
4সেইসাথে অবশালোম আরও বলত, আহা আমাকে যদি দেশের বিচারক নিযুক্ত করা হত তাহলে আমি সকলের মামলা-মকদ্দমার ন্যায্য বিচার করতাম। 5তখন সেই ব্যক্তি তাকে প্রণাম করতে এগিয়ে এলে সে হাত বাড়িয়ে তাকে ধরে ফেলত এবং চুম্বন করত। 6ইসরায়েলের যত লোক বিচারের জন্য রাজার কাছে আসত, সবার সাথে অবশালোম এই ব্যবহার করত। এইভাবে সে ইসরায়েলী প্রজাদের মন জয় করে ফেলল।
7চার বছর পর অবশালোম রাজার কাছে গিয়ে বলল, মহারাজ, প্রভু পরমেশ্বরের কাছে মানত পূর্ণ করার জন্য দয়া করে আমাকে হিব্রোণে যেতে অনুমতি দিন। 8কারণ আমি যখন সিরিয়ার গশূরে ছিলাম তখন মানত করেছিলাম যে, যদি প্রভু পরমেশ্বর আবার আমাকে জেরুশালেমে ফিরিয়ে নিয়ে যান তাহলে আমি হিব্রোণে গিয়ে তাঁর উপাসনা করব।
9রাজা তাকে বললেন, নিশ্চিন্তে যেতে পার।সে তখন হিব্রোণে রওনা হল। 10কিন্তু অবশালোম ইসরায়েলের সমস্ত গোষ্ঠীর কাছে চরের মুখে বলে পাঠাল যে, যখনই তোমরা তূরীধ্বনি শুনবে তখন সকলে চীৎকার করে বলবে, হিব্রোণে অবশালোম রাজা হলেন। 11অবশালোম দুশো লোককে জেরুশালেম থেকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। তারা সরল বিশ্বাসেই তার সঙ্গে গিয়েছিল, এই ষড়যন্ত্রের কিছুই জানত না। 12হোমবলি উৎসর্গ করার সময় অবশালোম গিলো শহর থেকে রাজা দাউদের একজন উপদেষ্টা অহীথোফলকে ডেকে পাঠাল। ষড়যন্ত্র আরও জোরদার হয়ে উঠল, অবশালোমের দলে লোক আরও বেড়ে যেতে লাগল।
জেরুশালেম থেকে দাউদের পলায়ন
13দাউদ সংবাদ পেলেন যে, ইসরায়েলীরা অবশালোমের আনুগত্য স্বীকার করেছে। 14দাউদ তখন তাঁর রাজকর্মচারীদের মধ্যে যারা জেরুশালেমে ছিল তাদের সবাইকে ডেকে বললেন, চল, আমরা পালিয়ে যাই। অবশালোমের হাত থেকে বাঁচতে হলে আমাদের এক্ষুণি পালানো দরকার। নইলে হঠাৎ কখন এসে সে আমাদের উপরে চড়াও হয়ে বিপদ করে ফেলবে। সবাইকে হত্যা করে শহরে রক্তবন্যা বইয়ে দেবে।
15তারা বলল, মহারাজ, আপনি যা বলবেন আমরা তাই-ই করতে প্রস্তুত।
16রাজা তাঁর পরিবার পরিজন সবাইকে নিয়ে চলে গেলেন। রাজবাড়ী দেখাশুনা করার জন্য রেখে গেলেন তাঁর দশজন উপপত্নীকে।
17রাজা চলে যাচ্ছেন। তাঁর পিছনে চলেছে তাঁর লোকজন। শহরের শেষ সীমানায় শেষ বাড়িটার কাছে এসে রাজা থামলেন। 18তাঁর মন্ত্রী ও রাজকর্মচারীরা তাঁর পাশে এসে দাঁড়াল। রাজার দেহরক্ষীরা তাঁর সামনে দিয়ে এগিয়ে চলল। গাত থেকে যে ছশো সৈন্য তাঁর সঙ্গে এসেছিল, তারাও তাঁর সামনে দিয়ে এগিয়ে চলল। 19রাজা তখন তাদের নেতা ইত্তয়কে বললেন, তুমি কেন আমাদের সঙ্গে যাচ্ছ? নতুন রাজার কাছে চলে যাও। তুমি বিদেশী ও উদ্বাস্তু। 20মাত্র কিছুদিন এখানে এসেছ। আমার সঙ্গে তোমায় কেন ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াব? আমি যে কোথায় যাচ্ছি তা আমি নিজেই জানি না। ফিরে যাও আর তোমাদের দেশের লোকদেরও নিয়ে যাও, তোমরা চিরদিন প্রভু পরমেশ্বরের কৃপালাভে ধন্য হও। 21ইত্তয় রাজাকে বলল, মহারাজ সদাজাগ্রত প্রভু পরমেশ্বরের দিব্য এবং আপনার দিব্য করে বলছি, আমার প্রভু মহারাজ জীবিত বা মৃত, যে অবস্থায় যেখানে থাকবেন, আপনার এই দাসও সেইখানেই থাকবে।
22দাউদ বললেন, উত্তম। তাহলে এগিয়ে চল। ইত্তয় তার লোকজন ও সঙ্গীসাথীদের নিয়ে রাজার সঙ্গে চলল। 23সারা দেশের মানুষ কাঁদতে লাগল। দাউদের সঙ্গীসাথীরা এগিয়ে চলল। রাজাও তাদের সবাইকে নিয়ে এগিয়ে কিদ্রোণ স্রোত পার হয়ে মরুপ্রান্তরের পথে এগিয়ে গেলেন।
24তাঁদের সঙ্গে সাদোক ও লেবীয়রাও এলেন। তাঁরা চুক্তি সিন্দুক বয়ে আনছিলেন। যতক্ষণ না সমস্ত লোক শহর থেকে বেরিয়ে গেল ততক্ষণ তাঁরা সিন্দুকটিকে একটি জায়গায় নামিয়ে রাখলেন এবং পুরোহিত অবিয়াথরও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। 25রাজা সাদোককে বললেন, চুক্তিসিন্দুক শহরে ফিরিয়ে নিয়ে যান। যদি কোনদিন আমি প্রভু পরমেশ্বরের কৃপালাভ করি, তিনি আমাকে ফিরিয়ে আনবেন, আবার আমাকে এই সিন্দুক ও তাঁর আবাস দর্শন করাবেন। 26আর যদি তিনি আমার উপর রেগে না থাকেন তাহলে তিনি যা ভাল বুঝবেন, আমার প্রতি তা-ই করবেন। 27রাজা পুরোহিত সাদোককে বলতে লাগলেন, আপনি চারদিকে নজর রেখে চলবেন। আপনার পুত্র অহীমাস ও অবিয়াথরের পুত্র যোনাথনকে নিয়ে আপনারা দুজনে নিরাপদে শহরে ফিরে যান। 28আপনার কাছ থেকে কোন খবর না আসা পর্যন্ত আমি মরুপ্রান্তরে নদীর পারঘাটায় অপেক্ষা করব। 29সাদোক এবং অবিয়াথার তখন চুক্তিসিন্দুক নিয়ে জেরুশালেমে ফিরে গেলেন এবং সেখানেই থাকতে লাগলেন।
30দাউদ খালি পায়ে মাথা ঢেকে কাঁদতে কাঁদতে অলিভ পর্বতে চলে গেলেন। তাঁর সাথীরাও মাথা ঢেকে কাঁদতে কাঁদতে তাঁর সঙ্গে গেল।
31দাউদ জানতে পারলেন যে, অবশালেমের সঙ্গে চক্রান্তকারীদের মধ্যে অহীথোফলও আছে। রাজা তখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে বললেন, হে প্রভু পরমেশ্বর, অহীথোফলের পরামর্শ নির্বোধের পরামর্শ হোক।
32দাউদ পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছালেন। সেখানে গিয়ে লোকে উপাসনা করত। সেইখানে তাঁর বিশ্বস্ত বন্ধু অর্কনিবাসী হুশয় তাঁর সঙ্গে দেখা করল। তার পরণের কাপড় ছেঁড়া ও মাথায় মাটি মাখানো। 33দাউদ তাকে বললেন, তুমি যদি আমার সঙ্গে আস তাহলে আমার কোন উপকার হবে না। 34বরং তুমি শহরে ফিরে যাও। অবশালোমকে গিয়ে বল, মহারাজ, এতদিন আমি আপনার পিতার সেবক ভৃত্য ছিলাম। এবার আমি চাই আপনার ভৃত্য হয়ে সেবা করতে। এইভাবে তুমি সেখানে থেকে অহীথোফলের সব পরামর্শ বানচাল করে দিতে আমাকে সাহায্য করবে। 35সেখানে দুই পুরোহিত, সাদোক ও অবিয়াথার আছেন। রাজপ্রাসাদে তুমি যা কিছু শুনবে সব তাঁদের জানিয়ে দেবে। 36তাঁদের দুই পুত্র অহীমাস ও যোনাথন আছে। এদের দিয়ে সব খবর আমার কাছে পাঠিয়ে দিও। 37দাউদের বন্ধু হুশয় তখন শহরে গেলেন আর সাথে সাথে অবশালোমও জেরুশালেমে প্রবেশ করল।

শামুয়েল-২ পুস্তকের ১৬-১৯ অধ্যায়

16
দাউদ ও সিবা
1দাউদ পাহাড়ের চূড়া পেরিয়ে একটু এগিয়েছেন, সেই সময় মফীবোশতের দাস সিবার সঙ্গে তাঁর দেখা হল। তার সঙ্গে ছিল দুটো গাধা। তাদের পিঠে বোঝাই করা দুশো রুটি, একশো গোছা কিসমিস, একশো গোছা টাটকা ফল আর এক মশক ভর্তি সুরা। 2রাজা সিবাকে বললেন, এসব দিয়ে কি হবে? সিবা বলল, এই গাধা দুটো রাজ পরিবারের লোকদের ব্যবহারের জন্য এবং রুটী ও ফল সৈন্যদের জন্য আর প্রান্তরে আপনার লোকজন অবসন্ন হয়ে পড়লে এই সুরা তারা পান করবে।
3রাজা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, মফীবোশথ কোথায়? সিবা বলল, তিনি জেরুশালেমেই আছেন। তিনি ভেবেছেন, ইসরায়েলীরা এবার তাঁর পিতামহ শৌলের রাজ্য তাঁকে ফিরিয়ে দেবেন।
4রাজা তখন সিবাকে বললেন, মফীবোশথের যা কিছু সম্পত্তি আছে, সব তোমার। সিবা বলল, মহারাজ, আমি আপনার দাস। আমি যেন আপনার কৃপালাভে ধন্য হই।
দাউদ ও শিমিয়ি
5দাউদ বহুরীমের কাছাকাছি এলে শৌলের বংশের গেরার পুত্র শিমিয়ি নামে একটি লোক তাঁকে অভিশাপ দিতে বেরিয়ে এল 6এবং দাউদ ও তাঁর কর্মচারী ও সৈন্যসামন্তদের দিকে ঢিল ছুঁড়তে লাগল।
7শিমিয়ি অভিশাপ দিয়ে বলতে লাগল, দূর হ’, দূর হয়ে যা খুনী নরপিশাচ। 8যার রাজ্য তুই কেড়ে নিয়েছিস সেই শৌলের বংশের সমস্ত রক্তের দায় প্রভু পরমেশ্বর এবার তোর মাথায় চাপিয়েছেন। আর তোর ছেলে অবশালোমের হাতে তুলে দিয়েছেন সেই রাজ্য। এবার তুই নিজের জালে নিজেই পড়েছিস, খুনী! পাষণ্ড!
9সরূয়ার পুত্র অবিশয় রাজাকে বলল, ঐ মরা কুকুরটা আমার প্রভু মহারাজকে এভাবে অভিশাপ দিচ্ছে কোন সাহসে? অনুমতি করুন, এক্ষুণি আমি গিয়ে ওর মুণ্ডুটা ধড় থেকে নামিয়ে নিয়ে আসি।
10অবিশয় ও তার ভাই যোয়াবকে দাউদ বললেন, এ নিয়ে তোমাদের মাথা ঘামাবার কি দরকার? ওকে অভিশাপ দিতে দাও কারণ প্রভু পরমেশ্বর যদি তাকে এই অধিকার দিয়ে থাকেন, তাহলে কার সাধ্য ওকে থামায়।
11দাউদ অবিশয় ও তাঁর পারিষদদের বললেন, দেখ,আমার নিজের পুত্র যেখানে আমার প্রাণনাশের চেষ্টা করছে সেখানে এই বিন্যামীন বংশের লোকটা তো করবেই। এতে আশ্চর্য হবার কি আছে! ওকে ছেড়ে দাও, ও দিক অভিশাপ। প্রভু ওকে অভিশাপ দেওয়াচ্ছেন। 12একদিন না একদিন তিনি আমার দিকে মুখ তুলে চাইবেন এবং এই অভিশাপকে আশীর্বাদে পরিণত করবেন। 13দাউদ তাঁর দল-বল নিয়ে এগোতে লাগলেন, শিমিয়িও পাশাপাশি আর একটা পাহাড়ী পথ ধরে অভিশাপ দিতে দিতে তাঁদের সঙ্গে চলতে লাগল আর ঢিল ও মাটি তাঁদের ওপরে ছুঁড়তে লাগল। 14রাজা তাঁর লোকজন নিয়ে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে জর্ডনে গিয়ে পৌঁছালেন এবং সেখানে সবাই বিশ্রাম করে সতেজ হয়ে উঠলেন।
জেরুশালেমে অবশালোম
15অবশালোম এবং সমস্ত ইসরায়েলীর সাথে অহীথোফলও জেরুশালেমে এল। 16তখন দাউদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু অর্কনিবাসী হুশয় অবশালোমের কাছে গিয়ে অভিবাদন জানিয়ে বলল, মহারাজ, দীর্ঘজীবী হোন।
17অবশালোম তাকে বলল, এই কি তোমার বন্ধুত্বের নমুনা? তোমার বন্ধুর সঙ্গে গেলে না কেন?
18হুশয় বলল, না মহারাজ, প্রভু পরমেশ্বর, এই সভাসদেরা ও সমস্ত ইসরায়েলী যাঁকে মনোনীত করেছেন, আমি তাঁরই অধীন এবং তাঁর অধীনেই থাকব। 19তাছাড়া, আমি কার সেবা করব, আমার মনিব পুত্রেরই তো? আমি যেমন আপনার পিতার সেবা করেছি তেমনি আপনারও সেবা করব।
অহীথোফলের পরামর্শ
20অবশালোম অহীথোফলকে বলল, তাহলে এবার বল, আমরা কি করব? আমাদের কি করা উচিত? 21অহীথোফল বলল, আপনার পিতা তাঁর যে উপপত্নীদের রাজপুরী রক্ষার জন্য রেখে গেছেন, যান তাদের সঙ্গে সহবাস করুন, তাহলে সমস্ত ইসরায়েলী জানবে যে আপনি আপনার পিতার ঘৃণার পাত্র হয়েছেন। তখন তারাও উৎসাহ পেয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। 22তখন প্রাসাদের ছাদের উপর তাঁবু খাটানো হল। অবশালোম সমস্ত ইসরায়েলীর জ্ঞাতসারে তাঁর পিতার উপপত্নীদের সঙ্গে সহবাস করল। 23সেই সময় অহীথোফল যা কিছু পরামর্শ দিত, সকলে সাক্ষাৎ ঈশ্বরের নির্দেশেরই মত সব পালন করত এবং দাউদ ও অবশালোমও একইভাবে তার উপদেশ গ্রহণ করত।
Bengali C.L. Bible, পবিএ বাইবেল C.L. © The Bible Society


হুশয়ের পরামর্শে ভ্রান্ত অবশালোম
1অহীথোফল অবশালোমকে আরও পরামর্শ দিয়ে বলল, আমাকে বারো হাজার সৈন্য বেছে নেবার অনুমতি দিন, আমি আজ রাতেই দাউদকে তাড়া করব। 2তিনি ক্লান্ত, অবসন্ন হয়ে পড়লে আমি তাঁকে আক্রমণ করে ব্যতিব্যস্ত করে তুলব। তাতে তাঁর সঙ্গীরা পালিয়ে যাবে। আমি তখন রাজাকে একলা পেয়ে হত্যা করব। 3এইভাবে সমস্ত ইসরায়েলী প্রজাকে তোমার পক্ষে এনে দেব। তাতে তোমার ইচ্ছামত শুধু একটি মানুষেরই মৃত্যু হবে এবং আর সকলে অক্ষত থাকবে। 4পরামর্শটা অবশালোম ও ইসরায়েলী নেতাদের খুব পছন্দ হল।
হুশয়ের পরামর্শ
5তখন অবশালোম বলল, তাহলে হুশয়কেও ডাক, সে কি বলে শুনি। 6হুশয় এলে অবশালোম তাকে বলল, অহীথোফল তার বিবেচনায় যা ভাল বুঝেছে, বলেছে। আমরা কি তার কথামত কাজ করব? যদি না হয় তাহলে তুমিই বল কি করা উচিত।
7হুশয় অবশালোমকে বলল, এবার অহীথোফল যে পরামর্শ দিয়েছে তা কিন্তু মোটেই ভাল নয়। 8আপনি আপনার পিতা ও তাঁর দলের লোকদের খুব ভাল করেই জানেন। তাঁরা শক্তিশালী বীর যোদ্ধা। উপরন্তু ভল্লুকীর কাছ থেকে তার বাচ্চাকে কেড়ে নিলে সে যেমন হিংস্র হয়ে থাকে, তারাও সেই রকম হিংস্র হয়ে আছে। তাছাড়া আপনার পিতা সুদক্ষ অভিজ্ঞ যোদ্ধা। তিনি কখনই দলের লোকদের সাথে রাত্রে থাকবেন না। 9তিনি নিশ্চয় এখন কোন গুহা বা আর কোন জায়গায় লুকিয়ে আছেন। তিনি যদি এদের প্রথমে আক্রমণ করেন, তাহলে যে একথা শুনবে সেই বলবে, অবশালোমের পক্ষের লোকেরা হেরে যাচ্ছে। 10তখন সিংহের মত সবচেয়ে সাহসী লোকও ভয় পেয়ে যাবে। কারণ ইসরায়েলীরা সকলেই জানে যে আপনার পিতা বিক্রমশালী বীর যোদ্ধা এবং তাঁর পক্ষের লোকেরাও শক্তিশালী নিপুণ যোদ্ধা। 11কাজেই, আমার পরামর্শ হচ্ছে, আপনি দেশের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের দান থেকে বেরশেবা পর্যন্ত সমস্ত ইসরায়েলীকে, সাগরবেলার বালুকণার মত অসংখ্য লোককে এক জায়গায় জড়ো করুন এবং আপনি স্বয়ং তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে পরিচালনা করুন। 12যেখানেই তিনি থাকুন, আমরা তাঁকে খুঁজে বের করব আর তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই, শিশির যেমন ঝরে পড়ে তেমনি নিঃশব্দে আমরা তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ব। তাঁকে কিম্বা তাঁর দলের কাউকে বাকী রাখব না। 13যদি তিনি কোন নগরে গিয়ে আশ্রয় নেন, তাহলে ইসরায়েলীরা সেই নগর দড়ি দিয়ে বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে নীচে উপত্যকায় ফেলে দেবে। একটা পাথরও রাখবে না। 14একথা শুনে অবশালোম ও ইসরায়েলী নেতারা বলল, অহীথোফলের চেয়ে অর্কনিবাসী হুশয়ের পরামর্শই বেশী ভাল। প্রভু পরমেশ্বর অবশালোমের অমঙ্গল ঘটাতে চেয়েছিলেন তাই অহীথোফলের সুপরামর্শ ব্যর্থ হল।
দাউদের সতর্কতা ও পলায়ন
15অহীথোফল অবশালোম ও ইসরায়েলী নেতাদের যে পরামর্শ দিয়েছিল এবং হুশয় নিজে অবশালোমকে যে পরামর্শ দিয়েছিল - সব কথা হুশয় গিয়ে দুই পুরোহিত সাদোক ও অবিয়াথরকে জানাল। 16তারপর বলল, সুতরাং তাড়াতাড়ি দাউদের কাছে খবর পাঠাও। বল, আজ রাতে মরু প্রান্তরের পারঘাটায় আপনি থাকবেন না। এক্ষুণি জর্ডন পেরিয়ে ওপারে চলে যান। নইলে অবশালোম মহারাজকে ও আপনার দলের সবাইকে শেষ করে ফেলবে।
17যোনাথন ও অহিমাশ এন-রোগেল-এর ঝরণার ধারে অপেক্ষা করত। পাছে কেউ দেখে ফেলে তাই শহরে ঢুকতে সাহস করত না। একজন দাসী তাদের সব খবর দিয়ে আসত। 18তারা আবার সেই খবর রাজা দাউদকে জানিয়ে আসত। কিন্তু একটি যুবক তাদের দেখতে পেয়ে অবশালোমকে বলে দেয়। তখন তারা দুজন দৌড়ে বহুরীমে গিয়ে একটি লোকের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তাদের উঠোনে ছিল একটি ইঁদারা। তারা সেই ইঁদারাতে নেমে পড়ল। 19বাড়ির বৌটি তখন ইঁদারার মুখটা ভাল করে ঢাকা দিয়ে দিল। আর তার ওপর শস্য মেলে দিল। তাতে আর কিছুই বোঝার উপায় রইল না। 20অবশালোমের ভৃত্যেরা সেই বাড়িতে এসে বৌটিকে জিজ্ঞাসা করল, অহিমাশ আর যোনাথন কোথায়? বৌটি বলল, ওরা নদীর ওপারে চলে গেছে।
লোকগুলি তাদের অনেক খোঁজাখুঁজি করল কিন্তু পেল না, তখন জেরুশালেমে ফিরে গেল। 21তারা চলে গেলে অহিমাশ ও যোনাথন ইঁদারা থেকে উঠে রাজা দাউদের কাছে চলে গেল এবং অহীথোফলের সমস্ত পরামর্শের কথা তাঁকে জানিয়ে বলল, শিগগির আপনি নদীর ওপারে চলে যান। 22দাউদ তখনই তাঁর সমস্ত দলবল নিয়ে ভোর হবার আগেই জর্ডন পেরিয়ে ওপারে চলে গেলেন।
অহীথোফলের আত্মহত্যা
23অহীথোফল যখন দেখল, তার পরামর্শ মত কাজ হল না, তখন সে তার গাধার পিঠে চড়ে বাড়ি চলে গেল এবং বাড়ির দেখাশুনার সমস্ত ব্যবস্থা করল। তারপর গলায় দড়ি দিয়ে মারা গেল। তার বাবার করবে তাকে সমাধি দেওয়া হল। 24দাউদ মহনায়িমে গিয়ে পৌঁছালেন ইতিমধ্যে অবশালোম সমস্ত ইসরায়েলীদের নিয়ে জর্ডন নদী পার হয়ে এপারে এল। 25(অবশালোম যোয়াবের জায়গায় অমাসাকে ইসরায়েলের সেনাপতি পদে নিযুক্ত করেছিল। ইশ্মায়েলী যিথরোর পুত্র অমাসা। অমাসার মা অবীগল ছিলেন নাহশের কন্যা এবং যোয়াবের মা সরূয়ার বোন।) 26এবং গিলিয়দ দেশে দলবল নিয়ে শিবির সন্নিবেশ করলেন। 27দাউদ মহনায়িমে আসার পর আম্মোন দেশের রব্বা শহরনিবাসী নাহশের পুত্র শোবি, লো-দেবারের আম্মিয়েলের পুত্র মাখীব এবং গিলিয়দ দেশের রোগেলিম নিবাসী বর্সিল্লয়ের সঙ্গে দাউদের দেখা হল। 28-29তারা দাউদ ও তাঁর সঙ্গীদের জন্য বিছানাপত্র, গামলা, মাটির বাসন এবং গম, যব, সুজি, ভাজা শস্য, শিম, মসুর ডাল, মধু, দই, ভেড়া এবং গরুর দুধের পনীর ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য এনেছিল, কারণ তারা বুঝেছিল যে এই নির্জন মরুপ্রান্তরে দাউদ ও তাঁর দলের লোকেরা খিদেয়, তেষ্টায় ও ক্লান্তিতে কাতর হয়ে পড়েছেন।
Bengali C.L. Bible, পবিএ বাইবেল C.L. © The Bible Society


অবশালোমের পরাজয় ও মৃত্যু
1রাজা দাউদ তাঁর দলের সমস্ত লোককে একত্র করে তাদের বিভিন্ন দলে ভাগ করলেন। প্রতি একশো জনের উপর নিযুক্ত করলেন এক একজন নায়ককে এবং প্রতি সহস্র জনের উপর নিযুক্ত করলেন এক একজন অধিনায়ককে।
2তারপর আবার সমগ্র দলটিকে তিন ভাগে ভাগ করলেন। যোয়াব, যোয়াবের ভাই অবিশয় এবং গাতনিবাসী ইত্তয় - এই তিনজনকে তিনটি দলের সেনাপতি নিযুক্ত করে তাদের যুদ্ধে রওনা করে দিলেন।তাদের বললেন, আমিও তোমাদের সঙ্গে যাব। 3সৈন্যেরা বলল, না, না, আপনি আমাদের সঙ্গে যাবেন না। যদি আমরা পালিয়ে যাই, অথবা যদি আমাদের অর্ধেক লোক মারা যায়, তাহলে শত্রুদের কাছে সেটা এমন কিছু নয়, কিন্তু আপনার জীবনের মূল্য আমাদের দশ হাজারের চেয়েও অধিক। কাজেই, আপনি শহরেই থাকুন এবং সেখান থেকে আমাদের সাহায্য পাঠান। তাহলেই বেশি ভাল হবে। 4রাজা তাদের বললেন, বেশ, তোমরা যা সবচেয়ে ভাল মনে কর, আমি তাই করব। তখন রাজা নগরদ্বারের এক পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন এবং সৈন্যেরা সকলে শ’য়ে শ’য়ে হাজারে হাজারে কুচকাওয়াজ করে বেরিয়ে গেল। 5যোয়াব, অবিশয় ও ইত্তয়কে রাজা আদেশ দিয়ে বললেন, আমার মুখ চেয়ে তোমরা যুবক অবশালোমের কোন ক্ষতি করো না। রাজা যখন অবশালোম সম্পর্কে এই আদেশ দিচ্ছিলেন, তখন সৈন্যেরা সব শুনল। 6দাউদের সৈন্যেরা চলে গেল যুদ্ধক্ষেত্রে ইসরায়েলীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। বেধে গেল ঘোরতর যুদ্ধ ইফ্রয়িমের বনভূমিতে। 7দাউদের সৈন্যদলের কাছে ইসরায়েলীরা দারুণভাবে হেরে যেতে লাগল। সেদিনের সেই সাংঘাতিক যুদ্ধে ইসরায়েলীদের কুড়ি হাজার লোক মারা গেল। 8চারিদিকে ছড়িয়ে গেল যুদ্ধের আগুন। যুদ্ধে যত না লোক মারা গেল, তার চেয়ে বেশি লোক পালাতে গিয়ে মারা পড়ল বনে। 9ঘটনাক্রমে অবশালোম দাউদের সৈন্যদের সামনে পড়ে গেল। একটা খচ্চরের পিঠে চড়ে অবশালোম আসছিল। খচ্চরটা একটা বিরাট ওক গাছের ঝাঁকড়া ডালের নীচে দিয়ে আসার সময় অবশালোমের মাথাটা সেই ঝাঁকড়া ডালের মধ্যে এমন শক্ত ভাবে আটকে গেল যে তিনি ঝুলতে লাগলেন এবং খচ্চরটা বেরিয়ে গেল। 10একটি লোক এই অবস্থা দেখে যোয়াবকে গিযে জানাল, বলল, দেখুন, অবশালোমকে একটা ওক গাছের ডালে ঝুলতে দেখে এলাম। 11যোয়াব তাকে বললেন, কি বলছ তুমি? তুমি তাকে দেখেছ? তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে মেরে ফেললে না কেন? তাহলে আমি খুব খুশী হতাম, তোমাকে আমি দশটি রূপোর মুদ্রা আর একটা কোমরবদ্ধ দিতাম। 12কিন্তু সেই লোকটি যোয়াবকে বলল, সহস্র রৌপ্যমুদ্রা হাতে পেলেও আমি অবশালোমের গায়ে হাত তুলতাম না কারণ মহারাজ আপনাকে, অবিশয় ও ইত্তয়কে আমাদেরই সামনে আদেশ দিয়ে বলেছিলেন, আমার মুখ চেয়ে তোমরা যুবক অবশালোমের কোন ক্ষতি করো না। 13এক্ষেত্রে আমি যদি বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে হত্যা করতাম, তাহলে রাজার কাছে সে কথা নিশ্চয় পৌঁছাত। (কারণ রাজার কাছে কিছুই গোপন থাকে না) তখন আপনিও সরে দাঁড়াতেন, আমাকে বাঁচাতে আসতেন না। 14যোয়াব তাকে বললেন, তোমার সঙ্গে কথা বলে আমি সময় নষ্ট করতে চাই না। এই বলে, তিনি তিনটে বর্শা নিয়ে অবশালোমের বুকে গেঁথে দিলেন। অবশালোম তখনও ওক গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় বেঁচেছিল। 15তারপর যোয়াবের দশজন সৈন্য এগিয়ে গিয়ে অবশালোমকে হত্যা করল। 16যোয়াবের আদেশে তখন তুরী বেজে উঠল। যুদ্ধ থেমে গেল। সৈন্যদল আর ইসরায়েলীদের পিছু ধাওয়া না করে ফিরে এল।
17তারা অবশালোমের মৃতদেহ জঙ্গলের মধ্যে একটা গভীর গর্তে ফেলে দিল। আর গর্তের মুখে পাথরের ঢিবি করে দিল। ওদিকে সমস্ত ইসরায়েলী ছত্রভঙ্গ হয়ে নিজেদের বাড়িতে পালিয়ে গেল।
18বংশরক্ষার জন্য অবশালোমের কোন সন্তান না থাকায় অবশালোম বেঁচে থাকতেই রাজার উপত্যকায় একটা স্তম্ভ তৈরী করে নিজের নামে তার নাম রেখেছিল। আজও সেই স্তম্ভ ‘অবশালোমের স্তম্ভ’ নামে খ্যাত।
দাউদের কাছে অবশালোমের মৃত্যু সংবাদ
19তখন সাদোকের পুত্র অহীমাশ যোয়াবকে বলল, আমাকে অনুমতি দিন আমি মহারাজের কাছে গিয়ে এই সুসংবাদ নিবেদন করি যে, প্রভু পরমেশ্বর আমাদের শত্রুর হাত থেকে উদ্ধার করেছেন। 20যোয়াব তাকে বললেন, না আজ তুমি এই সংবাদ নিয়ে যাবে না। তুমি বরং অন্যদিন যেও। আজ নয় কারণ আজ রাজপুত্র মারা গেছেন। 21তারপর যোয়াব তাঁর সুদানী ক্রীতদাসকে বললেন, তুমি রাজার কাছে যাও আর যা কিছু দেখলে সব তাঁকে বল। সে তখন যোয়াবকে প্রণাম করে দৌড়াতে শুরু করল।
22অহীমাশ তখন যোয়াবকে আবার বলল, যা হয় হোক, আমাকেও ঐ সুদানী ক্রীতদাসের পিছনে সংবাদ নিয়ে যেতে দিন।
যোয়াব তাকে বললেন, তুমি কেন যেতে চাও বৎস—এই সুসংবাদের জন্য তুমি তো কোন পুরস্কার পাবে না। 23অহীমাশ আবার বলল, যা ঘটে ঘটুক, আমাকে যেতে দিন। তখন যোয়াব বললেন, তাহলে যাও।
অহীমাশ তখন সমতলভূমির পথ দিয়ে দৌড়াতে লাগল আর সুদানী ক্রীতদাসকে ছাড়িয়ে গেল।
24দাউদ সেই সময় নগরের প্রবেশদ্বার ও বহির্দ্বারের মাঝামাঝি জায়গায় বসেছিলেন। প্রহরী প্রাচীরের উপর দিয়ে তোরণের মাথায় উঠে চারিদিকে দেখতে দিয়ে দেখতে পেল একটি লোক একা দৌড়ে আসছে। 25সে চীৎকার করে রাজাকে সে কথা জানাল। রাজা বললেন, সে যদি একা আসে তাহলে জেন, সুসংবাদ আছে। 26লোকটি কাছাকাছি আসার পরেই প্রহরী আর একটি লোককে দৌড়ে আসতে দেখে দ্বাররক্ষীকে ডেকে বলল, দেখ, আরও একজন একা দৌড়ে আসছে। রাজা বললেন, সেও ভাল খবরই আনছে। 27প্রহরী বলল, প্রথম লোকটিকে সাদোকের পুত্র অহীমাশ বলে মনে হচ্ছে। সে কথা শুনে রাজা বললেন, লোকটি ভাল, ভাল খবরই সে আনছে।
28অহীমাশ রাজাকে চীৎকার করে অভিনন্দন জানিয়ে বলল, মহারাজ, সবই কুশল। এই বলে রাজাকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে বলল, আপনার প্রভু পরমেশ্বর ধন্য, আমার প্রভু মহারাজের বিরুদ্ধে যারা বিদ্রোহী হয়েছিল তাদের উপরে তিনি আপনাকে বিজয়ী করেছেন।
29রাজা তখন জিজ্ঞাসা করলেন, কুমার অবশালোমের খবর ভাল তো? অহীমাস উত্তর দিল, মহারাজ, আপনার দাস যোয়াব যখন আমাকে পাঠান তখন সেখানে দারুণ ভীড় আর উত্তেজনা দেখে এলাম, কিন্তু কি ঘটেছে তা বলতে পারি না। 30রাজা তাকে বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি ওদিকে গিয়ে অপেক্ষা কর। সে তখন একদিকে সরে দাঁড়াল। 31ইতিমধ্যে সেই সুদানী ক্রীতদাস এসে পৌঁছাল। সে এসে বলল, সুসংবাদ হে আমার প্রভু মহারাজ। প্রভু আপনাকে আজ বিদ্রোহীদের উপর বিজয়ী করেছেন। 32রাজা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কুমার অবশালোম কুশলে আছে তো? সুদানী ক্রীতদাস বলল, মহারাজ, তাঁর উপরে যা ঘটেছে, তা আপনার শত্রুদের উপর এবং আপনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের উপর ঘটুক। 33এই সংবাদে রাজা গভীর শোকে ভেঙ্গে পড়লেন। নগর তোরণের উপরের ঘরে গিয়ে কাঁদতে লাগলেন। ঘরে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলেন, পুত্র আমার। পুত্র অবশালোম, তোমার বদলে কেন আমার মরণ হল না। হায়, হায় ! হায় অবশালোম !
Bengali C.L. Bible, পবিএ বাইবেল C.L. © The Bible Society


দাউদকে যোয়াবের অনুযোগ
1যোয়াবের কাছে খবর গেল যে রাজা অবশালোমের জন্য শোকে দুঃখে খুব কান্নাকাটি করছেন। 2ফলে দাউদের সৈন্য দলের লোকেরা যখন শুনল রাজা পুত্রের জন্য শোকাচ্ছন্ন হয়েছেন। তখন বিজয়ের আনন্দের পরিবর্তে তাদের মধ্যে নেমে এল বিষণ্ণতা। 3যুদ্ধে হেরে পালিয়ে এলে সৈন্যরা যেমন লজ্জায় মুখ নিচু করে বাড়ি ফেরে সেইভাবে তারাও নীরবে শহরে ফিরে গেল। 4রাজা মুখ ঢেকে চীৎকার করে কাঁদতে লাগলেন, হায় অবশালোম ! আমার পুত্র ! আমার পুত্র ! অবশালোম ! বৎস আমার !
5যোয়াব তখন রাজবাড়িতে গিয়ে রাজাকে বললেন, যারা আপনার জীবন রক্ষা করেছে, আপনার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা ও উপপত্নীদের জীবন যারা রক্ষা করেছে, তাদের আজ আপনি অপমান করলেন। 6আপনাকে যারা ঘৃণা করে, তাদের আপনি ভালবাসেন এবং যারা আপনাকে ভালবাসে, তাদের আপনি ঘৃণা করেন। আজ আপনি স্পষ্টই বুঝিয়ে দিলেন যে, আপনার সেনাপতিরা ও দাসেরা আপনার কাছে কিছুই নয়। আজ যদি অবশালোম না মরে আমরা সবাই যদি মরে যেতাম তাহলে আপনি খুব খুশী হতেন ! 7কাজেই, এবার উঠুন, বাইরে গিয়ে আপনার দাসদের অভিনন্দন জানান, আশ্বস্ত করুন। নইলে প্রভু পরমেশ্বরের নামে শপথ করে বলছি, রাতারাতি সবাই আপনার বিপক্ষে চলে যাবে। ফলে ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত আপনার জীবনে যত বিপর্যয় ঘটেছে, সব কিছুর চেয়ে এবারের বিপর্যয় কিন্তু চরম হবে। 8রাজা তখন উঠে এসে নগর তোরণে তাঁর আসনে এসে বসলেন। সেই খবর শুনে তাঁর সমস্ত সৈন্য-সামন্ত রাজার কাছে এসে সমবেত হল।
দাউদের কাছে যিহুদা গোষ্ঠীর আনুগত্য
ইতিমধ্যে ইসরায়েলীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পলায়ন করল, ফিরে গেল যে যার ঘরে। 9ইসরায়েলীদের সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্যে শুরু হয়ে গেল ঝগড়া, কোন্দল। তারা বলতে লাগল, রাজা আমাদের শত্রুদের হাত থেকে উদ্ধার করেছিলেন, ফিলিস্তিনীদের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন, আর আজ তিনি অবশালোমের ভয়ে দেশ থেকে পালিয়েছেন। 10যে অবশালোমকে আমরা আমাদের রাজারূপে অভিষিক্ত করেছিলাম, তিনি যুদ্ধে নিহত। কাজেই এখন রাজাকে আবার ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না কেন? 11ইসরায়েলীদের এইসব কথাবার্তা রাজা দাউদের কাছে পৌঁছে গেল। তিনি তখন দুই পুরোহিত-সাদোক ও অবিয়াথরের কাছে বলে পাঠালেন, যিহুদীয়ার প্রবীণ নেতাদের বলুন, যখন সমস্ত ইসরায়েলী প্রজা তাদের রাজাকে ফিরে পেতে চায়, তখন তাঁরা কেন রাজাকে নিজের প্রাসাদে ফিরিয়ে আনার কাজে পিছিয়ে আছেন? 12আপনারা আমার আত্মীয়,আমার স্বজন,আমার রক্তমাংসের শরিক। আপনারা আমাকে কেন ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন না? 13দাউদ সেই সঙ্গে অমাসাকে বলতে বললেন, তুমি আমার আত্মীয়, এখন থেকে যোয়াবের পরিবর্তে তোমাকেই আমি সেনাপতি নিযুক্ত করলাম। অন্যথায় ঈশ্বর আমাকে মৃত্যু দিন। 14দাউদের এই কথা যিহুদীয়ার সমস্ত মানুষের মন জয় করে নিল। তারা রাজাকে তাঁর সমস্ত কর্মচারী ও সৈন্যসামন্ত নিয়ে ফিরে আসতে অনুরোধ জানাল।
15রাজার ফেরার পথে জর্ডন নদীর তীরে যিহুদা গোষ্ঠীর লোকদের সঙ্গে দেখা হল। তারা জর্ডনের ওপার থেকে রাজাকে সম্বর্ধনা করে নিয়ে যাবার জন্য গিলগলে এসেছিল। 16এদিকে বিন্যামীন গোষ্ঠীর গেরার পুত্র শিমিয়ি বহুরীম থেকে যিহুদা গোষ্ঠীর লোকদের সঙ্গে ছুটে এল রাজা দাউদের সঙ্গে দেখা করতে। 17তার সাথে ছিল বিন্যামীন গোষ্ঠীর এক হাজার লোক। শৌলের রাজপরিবারের ভৃত্য সিবা তার পনেরোটি পুত্র আর নিজের কুড়ি জন ভৃত্যকে নিয়ে ছুটে এল জর্ডন নদীর তীরে রাজার কাছে। 18রাজপরিবারের সকলকে নদী পার করে আনার জন্য সে ওপারে চলে গেল এবং রাজার যাবতীয় কাজকর্ম করার জন্য উঠে পড়ে লাগল।
শিমিয়ির প্রতি দাউদের কৃপা
রাজা নদী পার হবার জন তৈরী হয়েছেন এমন সময়ে গেরার পুত্র শিমিয়ি রাজার পায়ে উবুড় হয়ে পড়ে বলল, 19হে আমার প্রভু মহারাজ, জেরুশালেম ছেড়ে আপনার চলে আসার দিন আমি আপনার কাছে যে অন্যায় করেছিলাম তার জন্য আপনি অপরাধ নেবেন না। সেজন্য কিছু মনে করবেন না মহারাজ। 20কারণ আপনার দাস আমি জানি, আমি পাপ করেছি। সেই জন্যই আজ যোষেফ গোষ্ঠীর লোক হয়ে আমি সবার আগে ছুটে এসেছি মহারাজের কাছে।
21সরূয়ার পুত্র অবিশয়বলল, শিমিয়ির মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত,কারণ সে এমন একজনকে অভিশাপ দিয়েছিল,যাঁকে প্রভু পরমেশ্বর রাজারূপে মনোনীত করেছেন।
22কিন্তু দাউদ সরূয়ার দুই পুত্র অবিশয় ও যোয়াবকে বললেন, তোমাদের মত কে চেয়েছে? আজকের দিনেও তোমরা আমার কাজে বাধা সৃষ্টি করছ? আমি ইসরায়েলীদের রাজা। আমি বলছি, আজকের দিনে তাদের কাউকে প্রাণদণ্ড দেওয়া যাবে না। 23তিনি শিমিয়িকে শপথ করে বললেন, তোমাকে আমি কথা দিচ্ছি, তোমার প্রাণদণ্ড হবে না।
মফিবোশেথের প্রতি দাউদের কৃপা
24শৌলের পৌত্র মফিবোশথ এল দাউদের সঙ্গে দেখা করতে। রাজা জেরুশালেম ছেড়ে চলে যাবার দিন থেকে বিজয়ী হয়ে নিরাপদে ফিরে না আসা পর্যন্ত সে স্নান করেনি। 25জেরুশালেম থেকে সে রাজার সঙ্গে দেখা করতে এলে রাজা তাকে বললেন, তুমি আমার সঙ্গে গেলে না কেন মফিবোশেথ? 26সে বলল, আমার প্রভু, হে মহারাজ ! আপনার এই ভৃত্য খোঁড়া। তাই আমি আমার ভৃত্যকে বলেছিলাম গাধাকে লাগাম লাগিয়ে সাজাতে, বলেছিলাম, তাতে চড়ে আমি রাজার সঙ্গে যাব। কিন্তু সে আমাকে ঠকিয়েছিল। 27সে আমার প্রভু মহারাজের কাছে আপনার এই দাসের নামে মিথ্যা কথা বলেছিল। কিন্তু আপনি ঈশ্বরের দূতের মত। আপনার যা ভাল মনে হয়, আপনি তাই করুন। 28আমার পিতৃকুলের সকলে মহারাজের কাছে মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য ছিল কিন্তু মহারাজ তাঁর এই দাসকে তাঁর সঙ্গে ভোজনের অধিকার দিয়েছিলেন। কাজেই মহারাজের কাছে এর বেশি কৃপা ভিক্ষা করার আর কোন অধিকার আছে আমার? 29রাজা তাকে বললেন তোমাকে আর বেশি কিছু বলতে হবে না। তুমি আর সিবা ঐ ভূসম্পত্তি ভাগ করে নেবে-এই আমার সিদ্ধান্ত। 30তখন মফিবোশেথ রাজাকে বলল, ও সব নিয়ে নিক। আমার প্রভু মহারাজ নিরাপদে বাড়ি ফিরে এসেছেন, এই আমার যথেষ্ট।
বর্সিল্লয়ের প্রতি দাউদের দয়া
31গিলিয়দ থেকে বর্সিল্লয়ও এলেন রোগলীমে, রাজাকে জর্ডনের ওপার থেকে এপারে নিয়ে আসবেন বলে। 32বর্সিল্লয় খুবই বৃদ্ধ, আশী বছর বয়স। রাজা মহনায়িমে থাকার সময় তিনি রাজাকে খাদ্য জোগান দিতেন। তিনি ছিলেন খুবই ধনী মানুষ। 33রাজা বর্সিল্লয়কে বললেন, আমার সঙ্গে জেরুশালেমে চল। আমি তোমার সমস্ত ভার নেব। 34কিন্তু বর্সিল্লয় বললেন, কতদিন আর বাঁচব যে আমি মহারাজের সঙ্গে জেরুশালেমে যাব? 35আমার বয়স আশী বছর হয়ে গিয়েছে। এখন কি আর আমার ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা আছে? কি খাচ্ছি, কি পান করছি, তার স্বাদ বোঝার ক্ষমতা কি আর আপনার এই দাসের আছে? এখন কি আর আমি গায়ক-গায়িকাদের মধুর সঙ্গীত উপভোগ করতে পারি? কাজেই কেন আপনার এই দাস মহারাজের বাড়তি বোঝা হবে? 36এমন মহান পুরস্কারের যোগ্য আমি নই। আপনার দাস মহারাজের সঙ্গে জর্ডনের ওপারে মাত্র কিছুদূর পর্যন্ত যাবে। 37নিবেদন করি, আপনার দাসকে ফিরে যেতে দিন। আমার নিজের শহরে আমার বাবা-মার কাছে আমি মরতে চাই। তবে, এই যে আপনার সেবক কিমহাম, আমার প্রভু মহারাজ একে সঙ্গে নিয়ে যান এবং তার জন্য আপনার যা ভাল মনে হয়, করুন।
38রাজা বললেন, কিমহামকে আমি নিয়ে যাব এবং তোমার যা ভাল মনে হয়, আমি তার জন্য তা-ই করব এবং তুমি আমাকে তোমার জন্য যা করতে বলবে, তা-ই করব।
39রাজা বর্সিল্লয়কে চুম্বন ও আশীর্বাদ করলেন। বর্সিল্লয় নিজের বাড়িতে ফিরে গেলেন। তারপর রাজা ও তাঁর দলের সকলে জর্ডনের ওপারে চলে গেলেন।
40রাজা গিলগলে চলে গেলেন। কিমহামও রাজার সঙ্গে গেল। যিহুদা গোষ্ঠীর সমস্ত লোক এবং ইসরায়েলীদের অর্ধেক লোক গিয়েছিল তাঁকে অভ্যর্থনা করে এগিয়ে আনতে।
রাজাকে নিয়ে যিহুদা গোষ্ঠী ও ইসরায়েলের বাদানুবাদ
41ইসরায়েলীরা রাজাকে গিয়ে বলল, মহারাজ আমাদের ভাইয়েরা অর্থাৎ শুধু যিহুদা গোষ্ঠীর লোকেরাই কেন আপনাকে, রাজপরিবারের সবাইকে এবং আপনার লোকজনকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে? 42যিহুদা গোষ্ঠীর সকলে বলল, রাজা আমাদের নিকট আত্মীয়, তাই আমরা এই কাজ করেছি। তা, তোমরা এতে এত রাগ করছ কেন? রাজা তো আমাদের খেতেও দেন নি বা অন্য কোন কিছু দেন নি। 43ইসরায়েলীরা বলল, রাজার উপর আমাদের দশ ভাগ অধিকার আছে, আর দাউদের উপর অধিকার তোমাদের চেয়ে অনেক বেশি। তাহলে কেন তোমরা আমাদের হীন চোখে দেখছ? রাজাকে ফিরিয়ে আনার কথা আমরাই তো প্রথমে বলেছিলাম। কিন্তু যিহুদা গোষ্ঠীর লোকেরা ইসরায়েলীদের চেয়ে আরও জোর গলায় তাদের দাবী জানাতে লাগল।
Bengali C.L. Bible, পবিএ বাইবেল C.L. © The Bible Society

উইকিপিডিয়া লিংক

উইকিপিডিয়া লিংক

Man in a Whale's Stomach: 

James Bartley (1870–1909) is the central figure in a late nineteenth-century story according to which he was swallowed whole by a sperm whale. He was found still living days later in the stomach of the whale, which was dead from constipation.
The story originated of an anonymous firm, began to appear in American newspapers. The anonymous article appeared in the St. Louis Globe Democrat of Saint Louis, Missouri, then the note appeared in other newspapers with the title "A Modern Jonah" or something similar in multiple newspapers[1]
The news spread beyond the ocean in articles as "Man in a Whale's Stomach. "Rescue of a Modern Jonah" in page 8 of the August 22, 2017 issue of the Yarmouth Mercurynewspaper of Great Yarmouth on England.[2][3]

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...