দাউদ ও সিবা
1দাউদ পাহাড়ের চূড়া পেরিয়ে একটু এগিয়েছেন, সেই সময় মফীবোশতের দাস সিবার সঙ্গে তাঁর দেখা হল। তার সঙ্গে ছিল দুটো গাধা। তাদের পিঠে বোঝাই করা দুশো রুটি, একশো গোছা কিসমিস, একশো গোছা টাটকা ফল আর এক মশক ভর্তি সুরা। 2রাজা সিবাকে বললেন, এসব দিয়ে কি হবে? সিবা বলল, এই গাধা দুটো রাজ পরিবারের লোকদের ব্যবহারের জন্য এবং রুটী ও ফল সৈন্যদের জন্য আর প্রান্তরে আপনার লোকজন অবসন্ন হয়ে পড়লে এই সুরা তারা পান করবে।
3রাজা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, মফীবোশথ কোথায়? সিবা বলল, তিনি জেরুশালেমেই আছেন। তিনি ভেবেছেন, ইসরায়েলীরা এবার তাঁর পিতামহ শৌলের রাজ্য তাঁকে ফিরিয়ে দেবেন।
4রাজা তখন সিবাকে বললেন, মফীবোশথের যা কিছু সম্পত্তি আছে, সব তোমার। সিবা বলল, মহারাজ, আমি আপনার দাস। আমি যেন আপনার কৃপালাভে ধন্য হই।
দাউদ ও শিমিয়ি
5দাউদ বহুরীমের কাছাকাছি এলে শৌলের বংশের গেরার পুত্র শিমিয়ি নামে একটি লোক তাঁকে অভিশাপ দিতে বেরিয়ে এল 6এবং দাউদ ও তাঁর কর্মচারী ও সৈন্যসামন্তদের দিকে ঢিল ছুঁড়তে লাগল।
7শিমিয়ি অভিশাপ দিয়ে বলতে লাগল, দূর হ’, দূর হয়ে যা খুনী নরপিশাচ। 8যার রাজ্য তুই কেড়ে নিয়েছিস সেই শৌলের বংশের সমস্ত রক্তের দায় প্রভু পরমেশ্বর এবার তোর মাথায় চাপিয়েছেন। আর তোর ছেলে অবশালোমের হাতে তুলে দিয়েছেন সেই রাজ্য। এবার তুই নিজের জালে নিজেই পড়েছিস, খুনী! পাষণ্ড!
9সরূয়ার পুত্র অবিশয় রাজাকে বলল, ঐ মরা কুকুরটা আমার প্রভু মহারাজকে এভাবে অভিশাপ দিচ্ছে কোন সাহসে? অনুমতি করুন, এক্ষুণি আমি গিয়ে ওর মুণ্ডুটা ধড় থেকে নামিয়ে নিয়ে আসি।
10অবিশয় ও তার ভাই যোয়াবকে দাউদ বললেন, এ নিয়ে তোমাদের মাথা ঘামাবার কি দরকার? ওকে অভিশাপ দিতে দাও কারণ প্রভু পরমেশ্বর যদি তাকে এই অধিকার দিয়ে থাকেন, তাহলে কার সাধ্য ওকে থামায়।
11দাউদ অবিশয় ও তাঁর পারিষদদের বললেন, দেখ,আমার নিজের পুত্র যেখানে আমার প্রাণনাশের চেষ্টা করছে সেখানে এই বিন্যামীন বংশের লোকটা তো করবেই। এতে আশ্চর্য হবার কি আছে! ওকে ছেড়ে দাও, ও দিক অভিশাপ। প্রভু ওকে অভিশাপ দেওয়াচ্ছেন। 12একদিন না একদিন তিনি আমার দিকে মুখ তুলে চাইবেন এবং এই অভিশাপকে আশীর্বাদে পরিণত করবেন। 13দাউদ তাঁর দল-বল নিয়ে এগোতে লাগলেন, শিমিয়িও পাশাপাশি আর একটা পাহাড়ী পথ ধরে অভিশাপ দিতে দিতে তাঁদের সঙ্গে চলতে লাগল আর ঢিল ও মাটি তাঁদের ওপরে ছুঁড়তে লাগল। 14রাজা তাঁর লোকজন নিয়ে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে জর্ডনে গিয়ে পৌঁছালেন এবং সেখানে সবাই বিশ্রাম করে সতেজ হয়ে উঠলেন।
জেরুশালেমে অবশালোম
15অবশালোম এবং সমস্ত ইসরায়েলীর সাথে অহীথোফলও জেরুশালেমে এল। 16তখন দাউদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু অর্কনিবাসী হুশয় অবশালোমের কাছে গিয়ে অভিবাদন জানিয়ে বলল, মহারাজ, দীর্ঘজীবী হোন।
17অবশালোম তাকে বলল, এই কি তোমার বন্ধুত্বের নমুনা? তোমার বন্ধুর সঙ্গে গেলে না কেন?
18হুশয় বলল, না মহারাজ, প্রভু পরমেশ্বর, এই সভাসদেরা ও সমস্ত ইসরায়েলী যাঁকে মনোনীত করেছেন, আমি তাঁরই অধীন এবং তাঁর অধীনেই থাকব। 19তাছাড়া, আমি কার সেবা করব, আমার মনিব পুত্রেরই তো? আমি যেমন আপনার পিতার সেবা করেছি তেমনি আপনারও সেবা করব।
অহীথোফলের পরামর্শ
20অবশালোম অহীথোফলকে বলল, তাহলে এবার বল, আমরা কি করব? আমাদের কি করা উচিত? 21অহীথোফল বলল, আপনার পিতা তাঁর যে উপপত্নীদের রাজপুরী রক্ষার জন্য রেখে গেছেন, যান তাদের সঙ্গে সহবাস করুন, তাহলে সমস্ত ইসরায়েলী জানবে যে আপনি আপনার পিতার ঘৃণার পাত্র হয়েছেন। তখন তারাও উৎসাহ পেয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। 22তখন প্রাসাদের ছাদের উপর তাঁবু খাটানো হল। অবশালোম সমস্ত ইসরায়েলীর জ্ঞাতসারে তাঁর পিতার উপপত্নীদের সঙ্গে সহবাস করল। 23সেই সময় অহীথোফল যা কিছু পরামর্শ দিত, সকলে সাক্ষাৎ ঈশ্বরের নির্দেশেরই মত সব পালন করত এবং দাউদ ও অবশালোমও একইভাবে তার উপদেশ গ্রহণ করত।
Bengali C.L. Bible, পবিএ বাইবেল C.L. © The Bible Society
হুশয়ের পরামর্শে ভ্রান্ত অবশালোম
1অহীথোফল অবশালোমকে আরও পরামর্শ দিয়ে বলল, আমাকে বারো হাজার সৈন্য বেছে নেবার অনুমতি দিন, আমি আজ রাতেই দাউদকে তাড়া করব। 2তিনি ক্লান্ত, অবসন্ন হয়ে পড়লে আমি তাঁকে আক্রমণ করে ব্যতিব্যস্ত করে তুলব। তাতে তাঁর সঙ্গীরা পালিয়ে যাবে। আমি তখন রাজাকে একলা পেয়ে হত্যা করব। 3এইভাবে সমস্ত ইসরায়েলী প্রজাকে তোমার পক্ষে এনে দেব। তাতে তোমার ইচ্ছামত শুধু একটি মানুষেরই মৃত্যু হবে এবং আর সকলে অক্ষত থাকবে। 4পরামর্শটা অবশালোম ও ইসরায়েলী নেতাদের খুব পছন্দ হল।
হুশয়ের পরামর্শ
5তখন অবশালোম বলল, তাহলে হুশয়কেও ডাক, সে কি বলে শুনি। 6হুশয় এলে অবশালোম তাকে বলল, অহীথোফল তার বিবেচনায় যা ভাল বুঝেছে, বলেছে। আমরা কি তার কথামত কাজ করব? যদি না হয় তাহলে তুমিই বল কি করা উচিত।
7হুশয় অবশালোমকে বলল, এবার অহীথোফল যে পরামর্শ দিয়েছে তা কিন্তু মোটেই ভাল নয়। 8আপনি আপনার পিতা ও তাঁর দলের লোকদের খুব ভাল করেই জানেন। তাঁরা শক্তিশালী বীর যোদ্ধা। উপরন্তু ভল্লুকীর কাছ থেকে তার বাচ্চাকে কেড়ে নিলে সে যেমন হিংস্র হয়ে থাকে, তারাও সেই রকম হিংস্র হয়ে আছে। তাছাড়া আপনার পিতা সুদক্ষ অভিজ্ঞ যোদ্ধা। তিনি কখনই দলের লোকদের সাথে রাত্রে থাকবেন না। 9তিনি নিশ্চয় এখন কোন গুহা বা আর কোন জায়গায় লুকিয়ে আছেন। তিনি যদি এদের প্রথমে আক্রমণ করেন, তাহলে যে একথা শুনবে সেই বলবে, অবশালোমের পক্ষের লোকেরা হেরে যাচ্ছে। 10তখন সিংহের মত সবচেয়ে সাহসী লোকও ভয় পেয়ে যাবে। কারণ ইসরায়েলীরা সকলেই জানে যে আপনার পিতা বিক্রমশালী বীর যোদ্ধা এবং তাঁর পক্ষের লোকেরাও শক্তিশালী নিপুণ যোদ্ধা। 11কাজেই, আমার পরামর্শ হচ্ছে, আপনি দেশের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের দান থেকে বেরশেবা পর্যন্ত সমস্ত ইসরায়েলীকে, সাগরবেলার বালুকণার মত অসংখ্য লোককে এক জায়গায় জড়ো করুন এবং আপনি স্বয়ং তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে পরিচালনা করুন। 12যেখানেই তিনি থাকুন, আমরা তাঁকে খুঁজে বের করব আর তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই, শিশির যেমন ঝরে পড়ে তেমনি নিঃশব্দে আমরা তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ব। তাঁকে কিম্বা তাঁর দলের কাউকে বাকী রাখব না। 13যদি তিনি কোন নগরে গিয়ে আশ্রয় নেন, তাহলে ইসরায়েলীরা সেই নগর দড়ি দিয়ে বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে নীচে উপত্যকায় ফেলে দেবে। একটা পাথরও রাখবে না। 14একথা শুনে অবশালোম ও ইসরায়েলী নেতারা বলল, অহীথোফলের চেয়ে অর্কনিবাসী হুশয়ের পরামর্শই বেশী ভাল। প্রভু পরমেশ্বর অবশালোমের অমঙ্গল ঘটাতে চেয়েছিলেন তাই অহীথোফলের সুপরামর্শ ব্যর্থ হল।
দাউদের সতর্কতা ও পলায়ন
15অহীথোফল অবশালোম ও ইসরায়েলী নেতাদের যে পরামর্শ দিয়েছিল এবং হুশয় নিজে অবশালোমকে যে পরামর্শ দিয়েছিল - সব কথা হুশয় গিয়ে দুই পুরোহিত সাদোক ও অবিয়াথরকে জানাল। 16তারপর বলল, সুতরাং তাড়াতাড়ি দাউদের কাছে খবর পাঠাও। বল, আজ রাতে মরু প্রান্তরের পারঘাটায় আপনি থাকবেন না। এক্ষুণি জর্ডন পেরিয়ে ওপারে চলে যান। নইলে অবশালোম মহারাজকে ও আপনার দলের সবাইকে শেষ করে ফেলবে।
17যোনাথন ও অহিমাশ এন-রোগেল-এর ঝরণার ধারে অপেক্ষা করত। পাছে কেউ দেখে ফেলে তাই শহরে ঢুকতে সাহস করত না। একজন দাসী তাদের সব খবর দিয়ে আসত। 18তারা আবার সেই খবর রাজা দাউদকে জানিয়ে আসত। কিন্তু একটি যুবক তাদের দেখতে পেয়ে অবশালোমকে বলে দেয়। তখন তারা দুজন দৌড়ে বহুরীমে গিয়ে একটি লোকের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তাদের উঠোনে ছিল একটি ইঁদারা। তারা সেই ইঁদারাতে নেমে পড়ল। 19বাড়ির বৌটি তখন ইঁদারার মুখটা ভাল করে ঢাকা দিয়ে দিল। আর তার ওপর শস্য মেলে দিল। তাতে আর কিছুই বোঝার উপায় রইল না। 20অবশালোমের ভৃত্যেরা সেই বাড়িতে এসে বৌটিকে জিজ্ঞাসা করল, অহিমাশ আর যোনাথন কোথায়? বৌটি বলল, ওরা নদীর ওপারে চলে গেছে।
লোকগুলি তাদের অনেক খোঁজাখুঁজি করল কিন্তু পেল না, তখন জেরুশালেমে ফিরে গেল। 21তারা চলে গেলে অহিমাশ ও যোনাথন ইঁদারা থেকে উঠে রাজা দাউদের কাছে চলে গেল এবং অহীথোফলের সমস্ত পরামর্শের কথা তাঁকে জানিয়ে বলল, শিগগির আপনি নদীর ওপারে চলে যান। 22দাউদ তখনই তাঁর সমস্ত দলবল নিয়ে ভোর হবার আগেই জর্ডন পেরিয়ে ওপারে চলে গেলেন।
অহীথোফলের আত্মহত্যা
23অহীথোফল যখন দেখল, তার পরামর্শ মত কাজ হল না, তখন সে তার গাধার পিঠে চড়ে বাড়ি চলে গেল এবং বাড়ির দেখাশুনার সমস্ত ব্যবস্থা করল। তারপর গলায় দড়ি দিয়ে মারা গেল। তার বাবার করবে তাকে সমাধি দেওয়া হল। 24দাউদ মহনায়িমে গিয়ে পৌঁছালেন ইতিমধ্যে অবশালোম সমস্ত ইসরায়েলীদের নিয়ে জর্ডন নদী পার হয়ে এপারে এল। 25(অবশালোম যোয়াবের জায়গায় অমাসাকে ইসরায়েলের সেনাপতি পদে নিযুক্ত করেছিল। ইশ্মায়েলী যিথরোর পুত্র অমাসা। অমাসার মা অবীগল ছিলেন নাহশের কন্যা এবং যোয়াবের মা সরূয়ার বোন।) 26এবং গিলিয়দ দেশে দলবল নিয়ে শিবির সন্নিবেশ করলেন। 27দাউদ মহনায়িমে আসার পর আম্মোন দেশের রব্বা শহরনিবাসী নাহশের পুত্র শোবি, লো-দেবারের আম্মিয়েলের পুত্র মাখীব এবং গিলিয়দ দেশের রোগেলিম নিবাসী বর্সিল্লয়ের সঙ্গে দাউদের দেখা হল। 28-29তারা দাউদ ও তাঁর সঙ্গীদের জন্য বিছানাপত্র, গামলা, মাটির বাসন এবং গম, যব, সুজি, ভাজা শস্য, শিম, মসুর ডাল, মধু, দই, ভেড়া এবং গরুর দুধের পনীর ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য এনেছিল, কারণ তারা বুঝেছিল যে এই নির্জন মরুপ্রান্তরে দাউদ ও তাঁর দলের লোকেরা খিদেয়, তেষ্টায় ও ক্লান্তিতে কাতর হয়ে পড়েছেন।
Bengali C.L. Bible, পবিএ বাইবেল C.L. © The Bible Society
অবশালোমের পরাজয় ও মৃত্যু
1রাজা দাউদ তাঁর দলের সমস্ত লোককে একত্র করে তাদের বিভিন্ন দলে ভাগ করলেন। প্রতি একশো জনের উপর নিযুক্ত করলেন এক একজন নায়ককে এবং প্রতি সহস্র জনের উপর নিযুক্ত করলেন এক একজন অধিনায়ককে।
2তারপর আবার সমগ্র দলটিকে তিন ভাগে ভাগ করলেন। যোয়াব, যোয়াবের ভাই অবিশয় এবং গাতনিবাসী ইত্তয় - এই তিনজনকে তিনটি দলের সেনাপতি নিযুক্ত করে তাদের যুদ্ধে রওনা করে দিলেন।তাদের বললেন, আমিও তোমাদের সঙ্গে যাব। 3সৈন্যেরা বলল, না, না, আপনি আমাদের সঙ্গে যাবেন না। যদি আমরা পালিয়ে যাই, অথবা যদি আমাদের অর্ধেক লোক মারা যায়, তাহলে শত্রুদের কাছে সেটা এমন কিছু নয়, কিন্তু আপনার জীবনের মূল্য আমাদের দশ হাজারের চেয়েও অধিক। কাজেই, আপনি শহরেই থাকুন এবং সেখান থেকে আমাদের সাহায্য পাঠান। তাহলেই বেশি ভাল হবে। 4রাজা তাদের বললেন, বেশ, তোমরা যা সবচেয়ে ভাল মনে কর, আমি তাই করব। তখন রাজা নগরদ্বারের এক পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন এবং সৈন্যেরা সকলে শ’য়ে শ’য়ে হাজারে হাজারে কুচকাওয়াজ করে বেরিয়ে গেল। 5যোয়াব, অবিশয় ও ইত্তয়কে রাজা আদেশ দিয়ে বললেন, আমার মুখ চেয়ে তোমরা যুবক অবশালোমের কোন ক্ষতি করো না। রাজা যখন অবশালোম সম্পর্কে এই আদেশ দিচ্ছিলেন, তখন সৈন্যেরা সব শুনল। 6দাউদের সৈন্যেরা চলে গেল যুদ্ধক্ষেত্রে ইসরায়েলীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। বেধে গেল ঘোরতর যুদ্ধ ইফ্রয়িমের বনভূমিতে। 7দাউদের সৈন্যদলের কাছে ইসরায়েলীরা দারুণভাবে হেরে যেতে লাগল। সেদিনের সেই সাংঘাতিক যুদ্ধে ইসরায়েলীদের কুড়ি হাজার লোক মারা গেল। 8চারিদিকে ছড়িয়ে গেল যুদ্ধের আগুন। যুদ্ধে যত না লোক মারা গেল, তার চেয়ে বেশি লোক পালাতে গিয়ে মারা পড়ল বনে। 9ঘটনাক্রমে অবশালোম দাউদের সৈন্যদের সামনে পড়ে গেল। একটা খচ্চরের পিঠে চড়ে অবশালোম আসছিল। খচ্চরটা একটা বিরাট ওক গাছের ঝাঁকড়া ডালের নীচে দিয়ে আসার সময় অবশালোমের মাথাটা সেই ঝাঁকড়া ডালের মধ্যে এমন শক্ত ভাবে আটকে গেল যে তিনি ঝুলতে লাগলেন এবং খচ্চরটা বেরিয়ে গেল। 10একটি লোক এই অবস্থা দেখে যোয়াবকে গিযে জানাল, বলল, দেখুন, অবশালোমকে একটা ওক গাছের ডালে ঝুলতে দেখে এলাম। 11যোয়াব তাকে বললেন, কি বলছ তুমি? তুমি তাকে দেখেছ? তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে মেরে ফেললে না কেন? তাহলে আমি খুব খুশী হতাম, তোমাকে আমি দশটি রূপোর মুদ্রা আর একটা কোমরবদ্ধ দিতাম। 12কিন্তু সেই লোকটি যোয়াবকে বলল, সহস্র রৌপ্যমুদ্রা হাতে পেলেও আমি অবশালোমের গায়ে হাত তুলতাম না কারণ মহারাজ আপনাকে, অবিশয় ও ইত্তয়কে আমাদেরই সামনে আদেশ দিয়ে বলেছিলেন, আমার মুখ চেয়ে তোমরা যুবক অবশালোমের কোন ক্ষতি করো না। 13এক্ষেত্রে আমি যদি বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে হত্যা করতাম, তাহলে রাজার কাছে সে কথা নিশ্চয় পৌঁছাত। (কারণ রাজার কাছে কিছুই গোপন থাকে না) তখন আপনিও সরে দাঁড়াতেন, আমাকে বাঁচাতে আসতেন না। 14যোয়াব তাকে বললেন, তোমার সঙ্গে কথা বলে আমি সময় নষ্ট করতে চাই না। এই বলে, তিনি তিনটে বর্শা নিয়ে অবশালোমের বুকে গেঁথে দিলেন। অবশালোম তখনও ওক গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় বেঁচেছিল। 15তারপর যোয়াবের দশজন সৈন্য এগিয়ে গিয়ে অবশালোমকে হত্যা করল। 16যোয়াবের আদেশে তখন তুরী বেজে উঠল। যুদ্ধ থেমে গেল। সৈন্যদল আর ইসরায়েলীদের পিছু ধাওয়া না করে ফিরে এল।
17তারা অবশালোমের মৃতদেহ জঙ্গলের মধ্যে একটা গভীর গর্তে ফেলে দিল। আর গর্তের মুখে পাথরের ঢিবি করে দিল। ওদিকে সমস্ত ইসরায়েলী ছত্রভঙ্গ হয়ে নিজেদের বাড়িতে পালিয়ে গেল।
18বংশরক্ষার জন্য অবশালোমের কোন সন্তান না থাকায় অবশালোম বেঁচে থাকতেই রাজার উপত্যকায় একটা স্তম্ভ তৈরী করে নিজের নামে তার নাম রেখেছিল। আজও সেই স্তম্ভ ‘অবশালোমের স্তম্ভ’ নামে খ্যাত।
দাউদের কাছে অবশালোমের মৃত্যু সংবাদ
19তখন সাদোকের পুত্র অহীমাশ যোয়াবকে বলল, আমাকে অনুমতি দিন আমি মহারাজের কাছে গিয়ে এই সুসংবাদ নিবেদন করি যে, প্রভু পরমেশ্বর আমাদের শত্রুর হাত থেকে উদ্ধার করেছেন। 20যোয়াব তাকে বললেন, না আজ তুমি এই সংবাদ নিয়ে যাবে না। তুমি বরং অন্যদিন যেও। আজ নয় কারণ আজ রাজপুত্র মারা গেছেন। 21তারপর যোয়াব তাঁর সুদানী ক্রীতদাসকে বললেন, তুমি রাজার কাছে যাও আর যা কিছু দেখলে সব তাঁকে বল। সে তখন যোয়াবকে প্রণাম করে দৌড়াতে শুরু করল।
22অহীমাশ তখন যোয়াবকে আবার বলল, যা হয় হোক, আমাকেও ঐ সুদানী ক্রীতদাসের পিছনে সংবাদ নিয়ে যেতে দিন।
যোয়াব তাকে বললেন, তুমি কেন যেতে চাও বৎস—এই সুসংবাদের জন্য তুমি তো কোন পুরস্কার পাবে না। 23অহীমাশ আবার বলল, যা ঘটে ঘটুক, আমাকে যেতে দিন। তখন যোয়াব বললেন, তাহলে যাও।
অহীমাশ তখন সমতলভূমির পথ দিয়ে দৌড়াতে লাগল আর সুদানী ক্রীতদাসকে ছাড়িয়ে গেল।
24দাউদ সেই সময় নগরের প্রবেশদ্বার ও বহির্দ্বারের মাঝামাঝি জায়গায় বসেছিলেন। প্রহরী প্রাচীরের উপর দিয়ে তোরণের মাথায় উঠে চারিদিকে দেখতে দিয়ে দেখতে পেল একটি লোক একা দৌড়ে আসছে। 25সে চীৎকার করে রাজাকে সে কথা জানাল। রাজা বললেন, সে যদি একা আসে তাহলে জেন, সুসংবাদ আছে। 26লোকটি কাছাকাছি আসার পরেই প্রহরী আর একটি লোককে দৌড়ে আসতে দেখে দ্বাররক্ষীকে ডেকে বলল, দেখ, আরও একজন একা দৌড়ে আসছে। রাজা বললেন, সেও ভাল খবরই আনছে। 27প্রহরী বলল, প্রথম লোকটিকে সাদোকের পুত্র অহীমাশ বলে মনে হচ্ছে। সে কথা শুনে রাজা বললেন, লোকটি ভাল, ভাল খবরই সে আনছে।
28অহীমাশ রাজাকে চীৎকার করে অভিনন্দন জানিয়ে বলল, মহারাজ, সবই কুশল। এই বলে রাজাকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে বলল, আপনার প্রভু পরমেশ্বর ধন্য, আমার প্রভু মহারাজের বিরুদ্ধে যারা বিদ্রোহী হয়েছিল তাদের উপরে তিনি আপনাকে বিজয়ী করেছেন।
29রাজা তখন জিজ্ঞাসা করলেন, কুমার অবশালোমের খবর ভাল তো? অহীমাস উত্তর দিল, মহারাজ, আপনার দাস যোয়াব যখন আমাকে পাঠান তখন সেখানে দারুণ ভীড় আর উত্তেজনা দেখে এলাম, কিন্তু কি ঘটেছে তা বলতে পারি না। 30রাজা তাকে বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি ওদিকে গিয়ে অপেক্ষা কর। সে তখন একদিকে সরে দাঁড়াল। 31ইতিমধ্যে সেই সুদানী ক্রীতদাস এসে পৌঁছাল। সে এসে বলল, সুসংবাদ হে আমার প্রভু মহারাজ। প্রভু আপনাকে আজ বিদ্রোহীদের উপর বিজয়ী করেছেন। 32রাজা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কুমার অবশালোম কুশলে আছে তো? সুদানী ক্রীতদাস বলল, মহারাজ, তাঁর উপরে যা ঘটেছে, তা আপনার শত্রুদের উপর এবং আপনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের উপর ঘটুক। 33এই সংবাদে রাজা গভীর শোকে ভেঙ্গে পড়লেন। নগর তোরণের উপরের ঘরে গিয়ে কাঁদতে লাগলেন। ঘরে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলেন, পুত্র আমার। পুত্র অবশালোম, তোমার বদলে কেন আমার মরণ হল না। হায়, হায় ! হায় অবশালোম !
Bengali C.L. Bible, পবিএ বাইবেল C.L. © The Bible Society
দাউদকে যোয়াবের অনুযোগ
1যোয়াবের কাছে খবর গেল যে রাজা অবশালোমের জন্য শোকে দুঃখে খুব কান্নাকাটি করছেন। 2ফলে দাউদের সৈন্য দলের লোকেরা যখন শুনল রাজা পুত্রের জন্য শোকাচ্ছন্ন হয়েছেন। তখন বিজয়ের আনন্দের পরিবর্তে তাদের মধ্যে নেমে এল বিষণ্ণতা। 3যুদ্ধে হেরে পালিয়ে এলে সৈন্যরা যেমন লজ্জায় মুখ নিচু করে বাড়ি ফেরে সেইভাবে তারাও নীরবে শহরে ফিরে গেল। 4রাজা মুখ ঢেকে চীৎকার করে কাঁদতে লাগলেন, হায় অবশালোম ! আমার পুত্র ! আমার পুত্র ! অবশালোম ! বৎস আমার !
5যোয়াব তখন রাজবাড়িতে গিয়ে রাজাকে বললেন, যারা আপনার জীবন রক্ষা করেছে, আপনার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা ও উপপত্নীদের জীবন যারা রক্ষা করেছে, তাদের আজ আপনি অপমান করলেন। 6আপনাকে যারা ঘৃণা করে, তাদের আপনি ভালবাসেন এবং যারা আপনাকে ভালবাসে, তাদের আপনি ঘৃণা করেন। আজ আপনি স্পষ্টই বুঝিয়ে দিলেন যে, আপনার সেনাপতিরা ও দাসেরা আপনার কাছে কিছুই নয়। আজ যদি অবশালোম না মরে আমরা সবাই যদি মরে যেতাম তাহলে আপনি খুব খুশী হতেন ! 7কাজেই, এবার উঠুন, বাইরে গিয়ে আপনার দাসদের অভিনন্দন জানান, আশ্বস্ত করুন। নইলে প্রভু পরমেশ্বরের নামে শপথ করে বলছি, রাতারাতি সবাই আপনার বিপক্ষে চলে যাবে। ফলে ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত আপনার জীবনে যত বিপর্যয় ঘটেছে, সব কিছুর চেয়ে এবারের বিপর্যয় কিন্তু চরম হবে। 8রাজা তখন উঠে এসে নগর তোরণে তাঁর আসনে এসে বসলেন। সেই খবর শুনে তাঁর সমস্ত সৈন্য-সামন্ত রাজার কাছে এসে সমবেত হল।
দাউদের কাছে যিহুদা গোষ্ঠীর আনুগত্য
ইতিমধ্যে ইসরায়েলীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পলায়ন করল, ফিরে গেল যে যার ঘরে। 9ইসরায়েলীদের সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্যে শুরু হয়ে গেল ঝগড়া, কোন্দল। তারা বলতে লাগল, রাজা আমাদের শত্রুদের হাত থেকে উদ্ধার করেছিলেন, ফিলিস্তিনীদের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন, আর আজ তিনি অবশালোমের ভয়ে দেশ থেকে পালিয়েছেন। 10যে অবশালোমকে আমরা আমাদের রাজারূপে অভিষিক্ত করেছিলাম, তিনি যুদ্ধে নিহত। কাজেই এখন রাজাকে আবার ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না কেন? 11ইসরায়েলীদের এইসব কথাবার্তা রাজা দাউদের কাছে পৌঁছে গেল। তিনি তখন দুই পুরোহিত-সাদোক ও অবিয়াথরের কাছে বলে পাঠালেন, যিহুদীয়ার প্রবীণ নেতাদের বলুন, যখন সমস্ত ইসরায়েলী প্রজা তাদের রাজাকে ফিরে পেতে চায়, তখন তাঁরা কেন রাজাকে নিজের প্রাসাদে ফিরিয়ে আনার কাজে পিছিয়ে আছেন? 12আপনারা আমার আত্মীয়,আমার স্বজন,আমার রক্তমাংসের শরিক। আপনারা আমাকে কেন ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন না? 13দাউদ সেই সঙ্গে অমাসাকে বলতে বললেন, তুমি আমার আত্মীয়, এখন থেকে যোয়াবের পরিবর্তে তোমাকেই আমি সেনাপতি নিযুক্ত করলাম। অন্যথায় ঈশ্বর আমাকে মৃত্যু দিন। 14দাউদের এই কথা যিহুদীয়ার সমস্ত মানুষের মন জয় করে নিল। তারা রাজাকে তাঁর সমস্ত কর্মচারী ও সৈন্যসামন্ত নিয়ে ফিরে আসতে অনুরোধ জানাল।
15রাজার ফেরার পথে জর্ডন নদীর তীরে যিহুদা গোষ্ঠীর লোকদের সঙ্গে দেখা হল। তারা জর্ডনের ওপার থেকে রাজাকে সম্বর্ধনা করে নিয়ে যাবার জন্য গিলগলে এসেছিল। 16এদিকে বিন্যামীন গোষ্ঠীর গেরার পুত্র শিমিয়ি বহুরীম থেকে যিহুদা গোষ্ঠীর লোকদের সঙ্গে ছুটে এল রাজা দাউদের সঙ্গে দেখা করতে। 17তার সাথে ছিল বিন্যামীন গোষ্ঠীর এক হাজার লোক। শৌলের রাজপরিবারের ভৃত্য সিবা তার পনেরোটি পুত্র আর নিজের কুড়ি জন ভৃত্যকে নিয়ে ছুটে এল জর্ডন নদীর তীরে রাজার কাছে। 18রাজপরিবারের সকলকে নদী পার করে আনার জন্য সে ওপারে চলে গেল এবং রাজার যাবতীয় কাজকর্ম করার জন্য উঠে পড়ে লাগল।
শিমিয়ির প্রতি দাউদের কৃপা
রাজা নদী পার হবার জন তৈরী হয়েছেন এমন সময়ে গেরার পুত্র শিমিয়ি রাজার পায়ে উবুড় হয়ে পড়ে বলল, 19হে আমার প্রভু মহারাজ, জেরুশালেম ছেড়ে আপনার চলে আসার দিন আমি আপনার কাছে যে অন্যায় করেছিলাম তার জন্য আপনি অপরাধ নেবেন না। সেজন্য কিছু মনে করবেন না মহারাজ। 20কারণ আপনার দাস আমি জানি, আমি পাপ করেছি। সেই জন্যই আজ যোষেফ গোষ্ঠীর লোক হয়ে আমি সবার আগে ছুটে এসেছি মহারাজের কাছে।
21সরূয়ার পুত্র অবিশয়বলল, শিমিয়ির মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত,কারণ সে এমন একজনকে অভিশাপ দিয়েছিল,যাঁকে প্রভু পরমেশ্বর রাজারূপে মনোনীত করেছেন।
22কিন্তু দাউদ সরূয়ার দুই পুত্র অবিশয় ও যোয়াবকে বললেন, তোমাদের মত কে চেয়েছে? আজকের দিনেও তোমরা আমার কাজে বাধা সৃষ্টি করছ? আমি ইসরায়েলীদের রাজা। আমি বলছি, আজকের দিনে তাদের কাউকে প্রাণদণ্ড দেওয়া যাবে না। 23তিনি শিমিয়িকে শপথ করে বললেন, তোমাকে আমি কথা দিচ্ছি, তোমার প্রাণদণ্ড হবে না।
মফিবোশেথের প্রতি দাউদের কৃপা
24শৌলের পৌত্র মফিবোশথ এল দাউদের সঙ্গে দেখা করতে। রাজা জেরুশালেম ছেড়ে চলে যাবার দিন থেকে বিজয়ী হয়ে নিরাপদে ফিরে না আসা পর্যন্ত সে স্নান করেনি। 25জেরুশালেম থেকে সে রাজার সঙ্গে দেখা করতে এলে রাজা তাকে বললেন, তুমি আমার সঙ্গে গেলে না কেন মফিবোশেথ? 26সে বলল, আমার প্রভু, হে মহারাজ ! আপনার এই ভৃত্য খোঁড়া। তাই আমি আমার ভৃত্যকে বলেছিলাম গাধাকে লাগাম লাগিয়ে সাজাতে, বলেছিলাম, তাতে চড়ে আমি রাজার সঙ্গে যাব। কিন্তু সে আমাকে ঠকিয়েছিল। 27সে আমার প্রভু মহারাজের কাছে আপনার এই দাসের নামে মিথ্যা কথা বলেছিল। কিন্তু আপনি ঈশ্বরের দূতের মত। আপনার যা ভাল মনে হয়, আপনি তাই করুন। 28আমার পিতৃকুলের সকলে মহারাজের কাছে মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য ছিল কিন্তু মহারাজ তাঁর এই দাসকে তাঁর সঙ্গে ভোজনের অধিকার দিয়েছিলেন। কাজেই মহারাজের কাছে এর বেশি কৃপা ভিক্ষা করার আর কোন অধিকার আছে আমার? 29রাজা তাকে বললেন তোমাকে আর বেশি কিছু বলতে হবে না। তুমি আর সিবা ঐ ভূসম্পত্তি ভাগ করে নেবে-এই আমার সিদ্ধান্ত। 30তখন মফিবোশেথ রাজাকে বলল, ও সব নিয়ে নিক। আমার প্রভু মহারাজ নিরাপদে বাড়ি ফিরে এসেছেন, এই আমার যথেষ্ট।
বর্সিল্লয়ের প্রতি দাউদের দয়া
31গিলিয়দ থেকে বর্সিল্লয়ও এলেন রোগলীমে, রাজাকে জর্ডনের ওপার থেকে এপারে নিয়ে আসবেন বলে। 32বর্সিল্লয় খুবই বৃদ্ধ, আশী বছর বয়স। রাজা মহনায়িমে থাকার সময় তিনি রাজাকে খাদ্য জোগান দিতেন। তিনি ছিলেন খুবই ধনী মানুষ। 33রাজা বর্সিল্লয়কে বললেন, আমার সঙ্গে জেরুশালেমে চল। আমি তোমার সমস্ত ভার নেব। 34কিন্তু বর্সিল্লয় বললেন, কতদিন আর বাঁচব যে আমি মহারাজের সঙ্গে জেরুশালেমে যাব? 35আমার বয়স আশী বছর হয়ে গিয়েছে। এখন কি আর আমার ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা আছে? কি খাচ্ছি, কি পান করছি, তার স্বাদ বোঝার ক্ষমতা কি আর আপনার এই দাসের আছে? এখন কি আর আমি গায়ক-গায়িকাদের মধুর সঙ্গীত উপভোগ করতে পারি? কাজেই কেন আপনার এই দাস মহারাজের বাড়তি বোঝা হবে? 36এমন মহান পুরস্কারের যোগ্য আমি নই। আপনার দাস মহারাজের সঙ্গে জর্ডনের ওপারে মাত্র কিছুদূর পর্যন্ত যাবে। 37নিবেদন করি, আপনার দাসকে ফিরে যেতে দিন। আমার নিজের শহরে আমার বাবা-মার কাছে আমি মরতে চাই। তবে, এই যে আপনার সেবক কিমহাম, আমার প্রভু মহারাজ একে সঙ্গে নিয়ে যান এবং তার জন্য আপনার যা ভাল মনে হয়, করুন।
38রাজা বললেন, কিমহামকে আমি নিয়ে যাব এবং তোমার যা ভাল মনে হয়, আমি তার জন্য তা-ই করব এবং তুমি আমাকে তোমার জন্য যা করতে বলবে, তা-ই করব।
39রাজা বর্সিল্লয়কে চুম্বন ও আশীর্বাদ করলেন। বর্সিল্লয় নিজের বাড়িতে ফিরে গেলেন। তারপর রাজা ও তাঁর দলের সকলে জর্ডনের ওপারে চলে গেলেন।
40রাজা গিলগলে চলে গেলেন। কিমহামও রাজার সঙ্গে গেল। যিহুদা গোষ্ঠীর সমস্ত লোক এবং ইসরায়েলীদের অর্ধেক লোক গিয়েছিল তাঁকে অভ্যর্থনা করে এগিয়ে আনতে।
রাজাকে নিয়ে যিহুদা গোষ্ঠী ও ইসরায়েলের বাদানুবাদ
41ইসরায়েলীরা রাজাকে গিয়ে বলল, মহারাজ আমাদের ভাইয়েরা অর্থাৎ শুধু যিহুদা গোষ্ঠীর লোকেরাই কেন আপনাকে, রাজপরিবারের সবাইকে এবং আপনার লোকজনকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে? 42যিহুদা গোষ্ঠীর সকলে বলল, রাজা আমাদের নিকট আত্মীয়, তাই আমরা এই কাজ করেছি। তা, তোমরা এতে এত রাগ করছ কেন? রাজা তো আমাদের খেতেও দেন নি বা অন্য কোন কিছু দেন নি। 43ইসরায়েলীরা বলল, রাজার উপর আমাদের দশ ভাগ অধিকার আছে, আর দাউদের উপর অধিকার তোমাদের চেয়ে অনেক বেশি। তাহলে কেন তোমরা আমাদের হীন চোখে দেখছ? রাজাকে ফিরিয়ে আনার কথা আমরাই তো প্রথমে বলেছিলাম। কিন্তু যিহুদা গোষ্ঠীর লোকেরা ইসরায়েলীদের চেয়ে আরও জোর গলায় তাদের দাবী জানাতে লাগল।
Bengali C.L. Bible, পবিএ বাইবেল C.L. © The Bible Society
No comments:
Post a Comment