বিচারকর্তৃগণ ৬: ২৫-৩২

1ইসরায়েলীরা আবার পরমেশ্বরের অপ্রীতিকর কাজ করতে শুরু করল। তাই তিনি সাত বছর তাদের মিদিয়নের অধীন করে রাখলেন। 2মিদিয়নীরা ইসরায়েলীদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হওয়ায় ইসরায়েলীরা তাদের ভয়ে পাহাড়ের অন্যান্য গুহায় ও সুরক্ষিত স্থানে লুকিয়ে থাকত। 3ইসরায়েলীরা চাষবাস করলে মিদিয়নী, অমালেকী এবং পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য জাতির লোকেরা এসে তাদের উপর নানারকম উৎপাত করত, 4তাদের দেশে এসে ছাউনি ফেলত এবং গাজার সীমান্ত পর্যন্ত এলাকার সমস্ত ফসল নষ্ট করে দিত। ইসরায়েলীদের প্রাণ ধারণের জন্য কোন খাদ্যদ্রব্য এমনকি গরু, ভেড়া কিম্বা গাধা কোন পশুই অবশিষ্ট রাখত না। 5ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপালের মত তারা নিজেদের তাঁবু ও পশুপাল নিয়ে আসত। কারণ তাদের সঙ্গে থাকত অসংখ্য লোকজন ও অগণিত উট। তারা ইসরায়েলীদের দেশের উৎপন্ন ফসল থেকে শুরু করে সবকিছু নির্মমভাবে শেষ করে দিত। 6মিদিয়নীদের এইরকম অত্যাচারের ফলে ইসরায়েলীদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠল। তখন তারা প্রভুর কাছে সাহায্যের জন্য কাতর মিনতি জানাল। 7মিদিয়নীদের অত্যাচারে নিপীড়িত ইসরায়েলীরা প্রভুর কাছে কাতর নিবেদন জানালে 8প্রভু তাদের কাছে একজন নবীকে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি এসে তাদের বললেন, ইসরায়েলীদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু এই কথা বলেছেনঃ আমি মিশর থেকে তোমাদের নিয়ে এসেছি, দাসত্বের বন্ধন থেকে তোমাদের মুক্ত করে এনেছি। 9মিশরীদের কবল থেকে এবং অন্যান্য যারা তোমাদের উপর অত্যাচার করত তাদের সকলের হাত থেকে তোমাদের উদ্ধার করেছি এবং তাদের বিতাড়িত করে তাদের দেশ তোমাদের দিয়েছি। 10আমি তোমাদের বলেছি, আমি প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর। যাদের দেশে তোমরা বাস করছ, সেই ইমোরীদের দেবতাদের আরাধনা তোমরা করো না। কিন্তু তোমরা আমার কথা শোননি।
11পরে একদিন প্রভুর দূত অবিয়েষারের বংশধর যোয়াশের এলাকা অফ্রার একটি ওক গাছের তলায় এসে বসলেন। যোয়াশের পুত্র গিদিয়োন তখন মিদিয়নীদের ভয়ে লুকিয়ে আঙুর মাড়াই করার কুণ্ডে গম মাড়াই করছিলেন যাতে কেউ তাঁকে দেখতে না পায়। 12প্রভুর দূত তাঁর কাছে আবির্ভূত হয়ে বললেন, হে সাহসী বীর, পরমেশ্বর তোমার সহায়। 13গিদিয়োন তাঁকে বললেন, মশাই, তিনিই যদি আমাদের সহায়, তাহলে আজ আমাদের এই দুর্দশা কেন? আমাদের পূর্বপুরুষেরা তাঁর যে সমস্ত অলৌকিক কীর্তিকলাপ আমাদের কাছে বর্ণনা করেছিলেন সে সব আজ কোথায়? তাঁরা বলতেন, পরমেশ্বরই মিশর থেকে আমাদের উদ্ধার করে এনেছেন। কিন্তু তিনি এখন আমাদের পরিত্যাগ করে মিদিয়নীদের হাতে তুলে দিয়েছেন। 14প্রভু তাঁকে আদেশ দিলেন, যাও, তোমার সমস্ত শক্তি দিয়ে মিদিয়নীদের কবল থেকে ইসরায়েলীদের উদ্ধার কর। আমি বলছি, যাও। 15গিদিয়োন তাঁকে বললেন, হে প্রভু, আপনিই বলুন, কি করে আমি ইসরায়েলীদের উদ্ধার করব? দেখুন, মনঃশি বংশে আমাদের গোষ্ঠী সবচেয়ে দুর্বল এবং আমাদের কুলে আমিই সবচেয়ে নগণ্য। 16তিনি তাঁকে অভয় দিয়ে বললেন, তুমি পারবে। আমি তো তোমার সঙ্গে আছি। একটি মাত্র লোককে যেভাবে অনায়াসে হারিয়ে দেওয়া যায়, সেইভাবে তুমি মিদিয়নীদের পরাস্ত করবে। 17গিদিয়োন তখন তাঁকে বললেন, আমি যদি সত্যিই আপনার কৃপালাভ করে থাকি তাহলে আপনিই যে আমার সঙ্গে কথা বলছেন, দয়া করে তার কোন প্রমাণ আমাকে দিন। 18আমি যতক্ষণ না আমার নৈবেদ্য এনে আপনার কাছে উৎসর্গ করি ততক্ষণ দয়া করে এখানে থেকে চলে যাবেন না। তিনি বললেন, তুমি ফিরে না আসা পর্যন্ত আমি এখানে আছি। 19গিদিয়োন তখন বাড়িতে গিয়ে একটা ছাগশিশু কেটে তার মাংস রান্না করলেন এবং এক এফা পরিমাণ ময়দার খামিরবিহীন রুটি তৈরি করলেন। তারপর একটা পাত্রে মাংস এবং আর একটা পাত্রে ঝোল নিয়ে সেই ওক গাছের তলায় তাঁর কাছে এলেন। 20ঈশ্বরের দূত তাঁকে বললেন, মাংস এবং খামিরবিহীন রুটি এই পাথরের উপরে রাখ আর তার উপরে ঝোল ঢেলে দাও। গিদিয়োন তা-ই করলেন। 21প্রভুর দূত তখন সেই মাংস ও রুটিতে তাঁর হাতের লাঠিটা ছোঁয়ালেন। সঙ্গে সঙ্গে সেই পাথরে আগুন জ্বলে উঠল এবং সেই মাংস ও রুটি গ্রাস করল আর প্রভুর দূত সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। 22গিদিয়োন বুঝলেন, ইনি সত্যিই প্রভুর দূত। আতঙ্কে বিহ্বল হয়ে তিনি বললেন, হে ভুবনেশ্বর! আমি মুখোমুখি তোমার দূতকে দেখলাম! হায়, হায়, আমার কী হবে! 23প্রভু তাঁকে অভয় দিয়ে বললেন, শান্ত হও। ভয় পেয়ো না, তুমি মরবে না। 24গিদিয়োন তখন প্রভুর উদ্দেশে সেখানে একটি বেদী নির্মাণ করলেন এবং তার নাম দিলেন ‘যিহোবা-শালোম’— (ঈশ্বর মঙ্গলময়)!! (অবিয়েষারের বংশধরদের এলাকা অফ্রায় সেই বেদীটি আজও আছে।)
25সেই রাত্রেই ঈশ্বর গিদিয়োনকে বললেন, তুমি তোমার পিতার দুটি বৃষের মধ্যে সাত বছর বয়সের বৃষটি নাও এবং তোমার পিতার তৈরি বেলদেবের বেদীটা ভেঙ্গে ফেল আর তার পাশে যে আশেরা রয়েছে সেটা কেটে ফেল। 26তারপর এখানে এই দুর্গের চূড়ায় তোমার আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের উদ্দেশে পাথর দিয়ে মজবুত একটি বেদী নির্মাণ কর। তারপর কেটে ফেলা আশেরার কাঠ দিয়ে হোমের আগুন জ্বেলে তাতে বৃষটি উৎসর্গ কর। 27গিদিয়োন তাঁর ভৃত্যদের মধ্য থেকে দশজনকে সঙ্গে নিয়ে ঈশ্বরের আদেশ অনুযায়ী সব কাজ করলেন। তিনি তাঁর পরিবারের লোকজন এবং নগরের অধিবাসীদের ভয়ে দিনে কাজ না করে রাত্রে করলেন।
28পরের দিন ভোরে নগরর অধিবাসীরা দেখল, বেলদেবের বেদী ভাঙ্গা আর তার পাশের আশেরা কেটে ফেলা হয়েছে, আর একটি বদী তৈরী করে তার উপরে বৃষ উৎসর্গ করা হয়েছে। 29তারা তখন একে অপরকে জিজ্ঞাসা করতে লাগল, কে এই কাজ করেছে? খোঁজখবর করে তারা জানতে পারল যে একাজ যোয়াশের ছেলে গিদিয়োনের। 30নগরের অধিবাসীরা তখন যোয়াশকে বলল, তোমার ছেলেকে বার করে আন, তার মৃত্যুদণ্ড হবে কারণ সে বেলদেবের বেদী ভেঙ্গেছে এবং তার পাশের আশেরাও কেটে ফেলেছে। 31যোয়াশ তাদের বললেন, তোমরা কি বেলদেবের হয়ে ঝগড়া করতে এসেছ? বেলদেবের পক্ষে যে দাঁড়াবে কাল সকাল হওয়ার আগেই তাকে মেরে ফেলা হবে। বেলদেব যদি দেবতাই হন তবে তিনি নিজেই নিজেকে রক্ষা করবেন, কারণ তারই বদী ভাঙ্গা হয়েছে। 32যোয়াশ সেদিন গিদিয়োনের নাম দিলেন যিরুব্বেল (বেল বিবাদ করুন)। তিনি বললেন, এর সঙ্গেই বেলদেব ঝগড়া করুন কারণ এই তাঁর বেদী ভেঙ্গেছে।
33সেই সময়ে মিদিয়নী, অমালেকী ও পূর্বাঞ্চলের জাতিগুলি একত্রে জর্ডন পার হয়ে যিষ্‌রিয়েল উপত্যকায় এসে ছাউনি ফেলল। 34তখন প্রভুর আত্মা গিদিয়োনের উপরে অধিষ্ঠিত হলেন এবং গিদিয়োন তুরী বাজিয়ে সঙ্কেত জানালেন। সঙ্কেত ধ্বনি শুনে অবিয়েষার গোষ্ঠীর লোকেরা তাঁর নেতৃত্বাধীনে সমবেত হল। 35তিনি মনঃশি গোষ্ঠীর এলাকার সর্বত্র লোক পাঠালেন। তারাও এসে তাঁর সঙ্গে যোগ দিল। এর পরে তিনি আশের, সবুলুন ও নপ্তালি গোষ্ঠীর কাছে দূত পাঠালেন, তারাও এসে তাঁর সঙ্গে যোগ দিল।
36গিদিয়োন তখন ঈশ্বরের কাছে নিবেদন করলেন, আপনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সত্যিই যদি আপনি আমার দ্বারা ইসরায়েলীদের উদ্ধার করেন, 37তাহলে দেখুন, আমি খামারে এক জায়গায় ছাঁটাই করা মেষলোম রাখব, যদি সকালে উঠে দেখি যে কেবল সেই মেষলোমের উপরেই শিশির পড়েছে এবং অন্য জায়গা শুক্‌নো আছে, তাহলে আমি বুঝব যে আপনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আপনি আমার দ্বারাই ইসরায়েলীদের উদ্ধার করবেন। 38ঠিক সেই রকমই ঘটল। পরের দিন ভোরে উঠে গিদিয়োন সেই মেষলোম নিংড়ালেন। তাতে একবাটি জল হল। 39গিদিয়োন ঈশ্বরের কাছে আবার নিবেদন করলেন, আমার উপর ক্রুদ্ধ হবেন না, আপনার কাছে আমার আর একটি মিনতি আছে। এই মেষলোম দিয়ে আমার আর একবার পরীক্ষা করতে দিন। এবারে মেষলোম যেন শুক্‌নো থাকে, এবং জমির অন্যত্র যেন শিশির পড়ে। 40ঈশ্বর সেই রাত্রে তা-ই করলেন। মেষলোম শুক্‌নো রইল কিন্তু অন্যান্য সব জায়গায় শিশির পড়ল।

বিচারকর্তৃগণ ৩: ৫-৬

যে সব জাতি দেশে রয়ে গেল

1ইসরায়েলীদের মধ্যে যাদের কনান দেশের যুদ্ধবিগ্রহ সম্পর্কে কোন অভিজ্ঞতা ছিল না তাদের যাচাই করে দেখার জন্য এবং 2ইসরায়েলীদের ভাবী বংশধরদের শিক্ষার জন্য অর্থাৎ আগে যারা যুদ্ধ করতে জানত না তাদের যুদ্ধকৌশল শেখানোর জন্য প্রভু এই সব জাতিকে দেশে অবশিষ্ট রেখেছিলেন। 3এরা হল ফিলিস্তিনীদের পাঁচ জন সামন্ত রাজা এবং বেল-হার্মোন থেকে হামাতের তোরণ পর্যন্ত লেবানন পর্বতনিবাসী সমস্ত কনানী, সীদোনী ও হিব্বীয় জাতি। 4ইসরায়েলীদের পরীক্ষার জন্য অর্থাৎ প্রভু মোশির মাধ্যমে তাদের পূর্বপুরুষদের যে সব আজ্ঞা দিয়েছিলেন সেগুলি তারা মেনে চলে কিনা তা জানার জন্যই এই জাতিগুলিকে অবশিষ্ট রাখা হল। 5ইসরায়েলীরা কনানী, হিত্তীয়, ইমোরী, পরিষী, হিব্বীয় ও যিবুষী প্রভৃতি জাতির মাঝেই বসবাস করতে লাগল। 6ইসরায়েলীরা তাদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করত এবং তাদের দেবতাদের পূজা-অর্চনা করত।

বিচারকর্তৃগণ ২: ১১-১৩

1প্রভুর দূত গিলগল থেকে বোখিমে এলেন। তিনি ইসরায়েলীদের বললেন, আমিই তোমাদের মিশর থেকে উদ্ধার করে এনেছি এবং তেমাদের পিতৃপুরুষদের যে দেশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সেই দেশে তোমাদের এনেছি। আমি বলেছি, তোমাদের সঙ্গে যে সম্বন্ধ আমি স্থাপন করেছি তা কখনও ভঙ্গ করব না, 2আর তোমরাও এদেশের লোকদের সঙ্গে কোন সম্পর্ক স্থাপন করবে না। তোমরা তাদের বেদীগুলো ভেঙ্গে ফেলবে। তোমরা কিন্তু আমার সেই আজ্ঞা পালন করনি। কেন এ রকম করলে? 3তাই আমি বলছি, তাদের আমি তোমাদের কাছ থেকে সরাব না। তারা হবে তোমাদের শত্রু আর তাদের দেবতারা হবে তোমাদের মরণ ফাঁদ। 4প্রভুর দূত ইসরায়েলীদের এই কথা বললে তারা চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। 5সেই জন্য জায়গাটির নাম হল বোখিম (রোদনকারিগণ)। সেখানে তারা প্রভুর উদ্দেশে বলিদান করল।
বিচারপতি ও জননায়কদের যুগ
6যিহোশূয় ইসরায়েলীদের বিদায় দেওয়ার পর তাদের জন্য নির্ধারিত অঞ্চলে দখল কায়েম করার জন্য যে যার এলাকায় চলে গেল। 7যিহোশূয় যতদিন জীবিত ছিলেন এবং তাঁর মৃত্যুর পরে যে সব প্রবীণ নেতা ইসরায়েলীদের জন্য প্রভুর মহান কীর্তিকলাপ স্বচক্ষে দেখেছিলেন, তাঁদের জীবনকালে ইসরায়েলীরা প্রভুর সেবা-আরাধনা বজায় রেখেছিল। 8নুনের পুত্র, প্রভুর সেবক যিহোশূয় একশো দশ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন। 9ইসরায়েলীরা তাঁকে তাঁর নিজস্ব এলাকায়, গাশ পর্বতের উত্তরে ইফ্রয়িম প্রদেশের পার্বত্য অঞ্চলে তিম্‌নাৎ-হেরেসে সমাধিস্থ করেছিল। 10যিহোশূয়ের সমকালীন অন্যান্য লোকেরাও একে একে মারা গেল। তাদের পরে তাদের বংশধরেরা পরমেশ্বর প্রভুর কাছ থেকে দূরে সরে গেল। ইসরায়েলীদের জন্য তিনি যেসব কীর্তিসাধন করেছিলেন তাও ভুলে গেল। 11এই ইসরায়েলীরা তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করতে লাগল। তারা বেল দেবতাদের পূজা করতে লাগল। 12তাদের বিতৃপুরুষের আরাধ্য ঈশ্বর, যিনি মিশর থেকে তাদের উদ্ধার করে এনেছিলেন, সেই পরমেশ্বর প্রভুকে তারা পরিত্যাগ করে অন্যান্য দেবতাদের অর্থাৎ তাদের চারিদিকে যে সব জাতি বাস করত, তাদের উপাস্য দেবতাদের পূজা-অর্চনা করতে লাগল। ফলে পরমেশ্বর তাদের উপর রুষ্ট হলেন। 13প্রভু পরমেশ্বরকে পরিত্যাগ করে তারা বেল ও অষ্টারোৎ দেবদেবীদের পূজা করতে লাগল। 14ফলে ইসরায়েলীদের বিরুদ্ধে প্রভু পরমেশ্বরের ক্রোধাগ্নি প্রজ্বলিত হল এবং তিনি তাদের লুঠেরাদের হাতে সমর্পণ করলেন। তারা তাদের উপর হামলা করতে লাগল। তাদের চারপাশের শত্রুদের কাছে তিনি তাদের বিকিয়ে দিলেন। ফলে তারা আর শত্রুদের সামনে দাঁড়াতে পারত না। 15তারা কোন অভিযানে বের হলে প্রভু তাদের বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিতেন। তারা চরম দুর্দশায় পড়ত। প্রভুর অবাধ্য হলে যে এই দুর্দশা ঘটবে, সে সম্বন্ধে তিই তাদের আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
16এই পরিস্থিতিতে পরমেশ্বর তাদের পরিচালনার জন্য তাদেরই মধ্য থেকে এক একজন নেতার উদ্ভব ঘটাতেন। এই নেতারা লুঠেরাদের কবল থেকে তাদের উদ্ধার করতেন। 17কিন্তু ইসরায়েলীরা তাদের নেতাদের মানতে চাইত না। অন্য নেতাদের প্রতি তারা আকৃষ্ট হত। তাদের প্রভু পরমেশ্বরকে ত্যাগ করে সেই সব দেবতাদের পূজা করত। তাদের পূর্বপুরুষেরা যেমন প্রভুর নির্দেশ অনুযায়ী চলতেন এরা কিন্তু তা করত না। পূর্বপুরুষদের অনুসৃত পথ পরিত্যাগ করে তারা অবিলম্বে বিপথগামী হয়ে পড়ত। 18প্রভু পরমেশ্বর যখন তাদের উদ্ধারের জন্য কোন নেতার উত্থান ঘটাতেন তখন তিনি তাঁর সহায় হতেন এবং সেই নেতার আমলে তিনি শত্রুদের হাত থেকে ইসরায়েলীদের উদ্ধার করতেন। কারণ নিপীড়িত নির্যাতিত ইসরায়েলীদের আর্তনাদে প্রভু করুণাবিষ্ট হতেন। 19কিন্তু সেই নেতার মৃত্যুর পরই তারা আবার ফিরে যেত আগের অবস্থায় এবং আগের চেয়ে আরও বেশি স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠত। অন্য দেবতাদের সেবা করত। মন্দ পথ পরিত্যাগের কোন আগ্রহই তাদের মধ্যে দেখা যেত না। 20তাই ইসরায়েলীদের উপরে প্রভু ভীষণ ক্রুদ্ধ হলেন এবং বললেন, এদের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে আমার যে চুক্তি ছিল, সেই চুক্তি এরা ভঙ্গ করেছে, আমার আজ্ঞা পালন করেনি। 21তাই যিহোশূয়ের মৃত্যুর পর যে সব জাতি এখনও দেশে রয়ে গেছে তাদের আমি সরাব না, এখানেই তারা থাক। 22এদের দিয়েই আমি ইসরায়েলীদের পরীক্ষা করব। দেখি, এদের পূর্বপুরুষেরা আমার নির্দেশিত পথে যেমন চলত, এরাও তেমনি চলে কিনা। 23এই কারণেই যিহোশূয়ের মৃত্যুর পর যেসব জাতি দেশে থেকে গিয়েছিল, পরমেশ্বর তাদের সরাবার কোন উদ্যোগ নেননি।

২--রাজাবলি অধ্যায় ১ ও ২ এবং ২--বংশাবলি, অধ্যায় ২১

২--রাজাবলি অধ্যায় ১ 



নবী এলিয় এবং রাজা অহসিয়
1ইসরায়েলরাজ আহাবের মৃত্যুর পর মোয়াব দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করল।
2ইসরায়েলেরাজ অহসিয় শমরিয়ার রাজপ্রাসাদের ঝুল বারান্দা থেকে নীচে পড়ে গিয়ে গুরুতরভাবে আহত হন। তাই তিনি এক্রোণের ফিলিস্তিনী দেবতা বেলসবুবের মন্দিরে লোক পাঠালেন তিনি সুস্থ হবেন কিনা—একথা জানতে। 3কিন্তু পরমেশ্বরের একজন দূত তিশবী নিবাসী এলিয়কে বললেন, যাও অহসিয়র দূতদের এই কথা জিজ্ঞাসা কর, কেন তোমরা এক্রোণের দেবতা বেলসবুবের কাছে যাচ্ছ? তোমরা কি ভেবেছ, ইসরায়েলের কোন ঈশ্বর নেই? 4যাও, রাজাকে গিয়ে বল, পরমেশ্বর বলেছেন, তুমি আর সুস্থ হবে না, তোমার মৃত্যু হবে! পরমেশ্বরের আদেশ অনুযায়ী এলিয় কাজ করলেন। 5দূতেরা ফিরে গেল রাজার কাছে। রাজা তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা ফিরে এলে কেন?
6তারা বলল, পথে একটি লোকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তিনি আমাদের ফিরে আসতে বললেন এবং আপনাকে বলতে বললেন যে পরমেশ্বর বলেছেন, এক্রোণের দেবতা বেলসবুবের কাছে কেন দূত পাঠিয়েছেন? আপনি কি ভেবেছেন ইসরায়েলের কোন দেবতা নেই? আপনি সুস্থ হবেন না। আপনার মৃত্যু হবে!
7রাজা জিজ্ঞেস করলেন, লোকটি কি রকম বল তো?
8তারা বলল, তাঁর পরণে লোমের তৈরী আলখাল্লা আর কোমরে চামড়ার বেল্ট বাঁধা। রাজা বলে উঠলেন, এ তো তিশবীর এলিয়।
9রাজা তখন পঞ্চাশ জন সৈন্য দিয়ে একজন দলপতিকে পাঠালেন এলিয়কে ধরে আনবার জন্য। সেই দলপতি তাঁকে একটা পাহাড়ের উপর বসে থাকতে দেখে তাঁর কাছে গিয়ে বললেন, মুনিবর, রাজার আদেশ, আপনি নেমে আসুন।
10এলিয় বললেন, আমি যদি সত্যিই তাই হই, তাহলে আকাশ থেকে আগুন নেমে আসুক, ধ্বংস করুক তোমাকে ও তোমার দলবলকে! সঙ্গে সঙ্গে আকাশ থেকে আগুন নেমে এসে দলবলসহ সেই দলপতিকে শেষ করে দিল।
11রাজা আর একজন দলপতিকে আরও পঞ্চাশজন লোক দিয়ে পাঠালেন। তিনিও এলিয়ের কাছে গিয়ে বললেন, সাধুজী রাজার আদেশ, আপনি এক্ষুণি নেমে আসুন।
12এলিয় বললেন, আমি যদি সত্যিই তাই হই, তাহলে আকাশ থেকে আগুন নেমে আসুক, ধ্বংস করুক তোমাকে ও তোমার দলবলকে। সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরের আগুন নেমে এসে দলবলসহ সেই দলপতিকে গ্রাস করল।
13রাজা আবার আর‍ও পঞ্চাশজন লোক দিয়ে আর একজন দলপতিকে পাঠালেন। তিনি পাহাড়ের উপরে উঠে গিয়ে এলিয়র সামনে নতজানু হয়ে অত্যন্ত বিনীতভাবে বললেন, মহর্ষি, আমাকে এবং আমার দলের লোকদের কৃপা করুন, আমাদের জীবন রক্ষা করুন। 14আগের দুই জন দলপতি ও তাদের দলের লোকদের আকাশ থেকে আগুন নেমে এসে গ্রাস করেছে। আপনি দয়া করে আমাদের জীবন রক্ষা করুন।
15পরমেশ্বরের দূত এলিয়কে বললেন, ভয় নেই, ওদের সঙ্গে যাও। এলিয় তখন সেই দলপতির সঙ্গে রাজার কাছে গেলেন 16এবং বললেন, পরমেশ্বর বলেছেন, যেহেতু তুমি এক্রোণের দেবতা বেলসবুবের কাছে দৈবাদেশ জানতে লোক পাঠিয়েছিলে, ভেবেছিলে, বুঝি ইসরায়েলের কোন ঈশ্বর নেই, যাঁর কাছে তুমি এ সম্বন্ধে জানতে পারতে। তাই তুমি আর সুস্থ হবে না, তোমার মৃত্যু সুনিশ্চিত!
17এলিয়কে দিয়ে পরমেশ্বর যে প্রত্যাদেশ ঘোষণা করেছিলেন, সেই অনুযায়ী অহসিয়র মৃত্যু হল। অহসিয়র কোন পুত্র না থাকায় তাঁর ভাই যোরাম রাজা হলেন। যিহুদীয়ার রাজা যিহোশাফটের পুত্র যিহোরামের রাজত্বের তখন দ্বিতীয় বছর চলছিল।
18রাজা অহসিয়র সমস্ত কার্য বিবরণ ইসরায়েলের রাজকাহিনীতে লেখা আছে।


এলিয়র স্বর্গারোহণ
1নবী এলিয়র স্বর্গে যাবার দিন ঘনিয়ে এল। একদিন নবী এলিয় ও ইলিশায় গিলগল থেকে রওনা হলেন। সেইসময় পরমেশ্বর ঘূর্ণিঝড়ে এলিয়কে স্বর্গে তুলে নিতে উদ্যত হলেন। 2যেতে যেতে এক জায়গায় এলিয় ইলিশায়কে বললেন, তুমি এখানে থাক। প্রভু পরমেশ্বর আমাকে বেথেলে যেতে বলেছেন। কিন্তু ইলিশায় তাঁকে বললেন, সদা জাগ্রত প্রভু পরমেশ্বর ও আপনার দিব্য, আমি আপনার সঙ্গ ছাড়ব না। কাজেই দুজনেই বেথেলে গেলেন।
3সেখানকার নবীরা ইলিশায়কে জিজ্ঞাসা করলেন,আপনি কি জানেন যে আজ পরমেশ্বর আপনার কাছ থেকে আপনার গুরুকে তুলে নেবেন? ইলিশায় বললেন,হ্যাঁ, আমি জানি। এ আলোচনা থাক।
4তারপর এলিয় ইলিশায়কে বললেন, তুমি এখানে থাক, পরমেশ্বর আমাকে যেরিকোতে যেতে আদেশ দিয়েছেন। ইলিশায় বললেন, সদা জাগ্রত প্রভু পরমেশ্বর ও আপনার দিব্য, আমি আপনার সঙ্গ ছাড়ব না। কাজেই তাঁরা যেরিকোতে গেলেন।
5যেরিকোর নবীরা ইলিশায়কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি জানেন যে আজ পরমেশ্বর আপনার কাছ থেকে আপনার গুরুকে তুলে নেবেন? ইলিশায় বললেন, হ্যাঁ, আমি জানি। এ আলোচনা থাক।
6এলিয় ইলিশায়কে বললেন, এবার তুমি এখানে থাক, প্রভু পরমেশ্বর আমাকে জর্ডন নদীতে যেতে বলেছেন। কিন্তু ইলিশায় বললেন, সদা জাগ্রত প্রভু পরমেশ্বর ও আপনার দিব্য, আমি আপনার সঙ্গ ছাড়ব না। কাজেই তাঁরা একসঙ্গে চললেন। 7আরও পঞ্চাশজন নবী তাঁদের সঙ্গে জর্ডনে চললেন। এলিয় ও ইলিশায় জর্ডন নদীর তীরে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং তাঁদের একটু দূরে অন্যান্য নবীরা দাঁড়িয়ে রইলেন। 8তখন এলিয় নিজের আলখাল্লাটা খুলে গুটিয়ে নিয়ে সেটা দিয়ে জলের উপর আঘাত করলেন। জল দুই ভাগ হয়ে দুজনের যাওয়ার মত পথ করে দিল। তিনি ও ইলিশায় শুকনো পথের উপর দিয়ে পার হয়ে গেলেন। 9সেখানে এলিয় ইলিশায়কে বললেন, তোমার কাছ থেকে আমাকে তুলে নেওয়ার আগে বল, তোমার জন্য আমাকে কি করতে হবে? ইলিশায় তাঁকে বললেন, আমাকে আপনার ঐশী শক্তির অংশীদার করুন, যাতে আমি আপনার উত্তরাধিকারী হতে পারি।
10এলিয় বললেন, বড় কঠিন আব্দার করেছ। ঠিক আছে, তোমার কাছ থেকে আমাকে তুলে নেবার সময় আমাকে যদি তুমি দেখতে পাও, তাহলে পাবে। আর যদি দেখতে না পাও, তাহলে পাবে না।
11তাঁরা কথা বলতে বলতে এগিয়ে চলেছেন, এমন সময় হঠাৎ আগুনের ঘোড়ায় টানা আগুনের একটি রথ এসে তাঁদের মাঝখানে দাঁড়াল এবং একটি ঘূর্ণিঝড় এলিয়কে স্বর্গে তুলে নিয়ে গেল। 12ইলিশায় সব দেখতে পেলেন এবং চীৎকার করে উঠলেন, পিতা, আমার পিতা! ইসরায়েলের শক্তিমান রক্ষক, আপনি চলে গেলেন।তারপরে তাঁকে আর দেখতে পেলেন না। দুঃখে ইলিশায় পরণের আলখাল্লাটি ছিঁড়ে দুই টুকরো করে ফেললেন। 13তারপর এলিয়র ফেলে যাওয়া আলখাল্লাটা তুলে নিয়ে জর্ডনের তীরে গিয়ে দাঁড়ালেন। 14এলিয়র আলখাল্লা দিয়ে তিনি নদীর জলের উপরে আঘাত করে বললেন, কোথায় প্রভু, এলিয়ের পরমেশ্বর? তারপর আবার জলে আঘাত করলেন। জল দুই ভাগ হয়ে গেল। তিনি হেঁটে এপারে চলে এলেন। 15যেরিকোর সেই পঞ্চাশজন তাঁকে দেখে বললেন, ইলিশায়ের উপরে এলিয়র ঐশী শক্তি অধিষ্ঠিত হয়েছে। তাঁরা তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলেন 16এবং বললেন, এখানে আমরা পঞ্চাশ জন আছি। সকলেই আমরা শক্ত সমর্থ লোক।আপনি আদেশ করুন, আমরা আপনার গুরুদেবকে খুঁজে আনি। হয়তো পরমেশ্বরের আত্মা তাঁকে নিয়ে গিয়ে কোন পাহাড়ে কিম্বা কোন উপত্যকায় রেখে গেছেন। ইলিশায় বললেন, না, তোমাদের যেতে হবে না।
17কিন্তু তাঁদের পীড়াপীড়িতে বাধ্য হয়ে তিনি তাঁদের অনুমতি দিলেন। তাঁরা পঞ্চাশ জনে সব জায়গায় তিন দিন ধরে খোঁজাখুঁজি করলেন কিন্তু কোথাও তাঁকে পেলেন না। 18তাঁরা ফিরে এলেন ইলিশায়ের কাছে। তিনি তখনও তাঁদের অপেক্ষায় যেরিকোতে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, আমি তো তোমাদের যেতে বারণ করেছিলাম।
ইলিশায়ের অলৌকিক কাজ
19যেরিকো থেকে কয়েকজন লোক একদিন ইলিশায়ের কাছে গিয়ে বলল, প্রভু, আপনি তো দেখছেন এই নগরটি খুবই ভাল। কিন্তু এখানকার জল খুব খারাপ। এই জল বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করে। গর্ভপাত ঘটায়।
20ইলিশায় তাদের আদেশ দিয়ে বললেন, একটা নতুন ভাঁড়ে করে লবণ নিয়ে এস। তারা নিয়ে এল। 21তখন তিনি ঝরণার কাছে গিয়ে জলের মধ্যে লবণটা ফেলে দিয়ে বললেন, প্রভু পরমেশ্বর বলেছেন, আমি এই জল শুদ্ধ করে দিলাম। আর কখনও এই জল মৃত্যু বা গর্ভপাত ঘটাবে না। 22সেই থেকে ইলিশায়ের কথা মত সেই জল আজও বিশুদ্ধ রয়েছে।
23ইলিশায় যেরিকো থেকে বেথেলে রওনা হলেন। পথে শহরের কতকগুলো ছেলে তাঁর সঙ্গে মস্করা করে চীৎকার করতে লাগল, এই টেকো, টেকো, দূর হ এখান থেকে।
24ইলিশায় তাদের দিকে ফিরে কটমট করে তাকিয়ে প্রভুর নামে অভিশাপ দিলেন। তখন জঙ্গল থেকে দুটো ভল্লুকী বেরিয়ে এসে বিয়াল্লিশটা ছেলেকে কামড়ে টুকরো করে ফেলল।
25ইলিশায় চলে গেলেন কার্মেল পাহাড়ে। তারপর সেখান থেকে গেলেন শমরিয়ায়।


1যিহোশাফটের মৃত্যু হলে তাঁকে দাউদ নগরে রাজপরিবারের সমাধিক্ষেত্রে সমাহিত করা হল। তাঁর পুত্র যিহোরাম তাঁর সিংহাসনে বসলেন।
যিহুদিয়ারাজ যিহোরাম
(২ রাজা 8:17-24)
2রাজা যিহোশাফটের পুত্র যিহোরামের ছয় ভাই ছিল। তাদের নাম: অসরিয়, যিহিয়েল, সখরিয়, অসরিয়াহু, মিখায়েল ও সফটিয়। 3তাদের পিতা তাদের প্রচুর পরিমাণে সোনা, রূপো এবং অন্যান্য মূল্যবান ধনসম্পদ দিয়েছিলেন এবং প্রত্যেকের যিহুদীয়ার এক একটি দুর্গনগরীর অধিকর্তারূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। যেহেতু যিহোরাম ছিলেন যিহোশাফটের জ্যেষ্ঠপুত্র, সেই হেতু তিনি তাকে তাঁর সিংহাসনের উত্তরাধিকার দিয়েছিলেন। 4রাজ্যের সমস্ত কর্তৃত্ব সম্পূর্ণভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণাধীনে আসার পর রাজা যিহোরাম তাঁর ভাইদের ও বিশেষ পদাধিকারী কয়েকজন ইসরায়েলী অধ্যক্ষকে হত্যা করলেন।
5বত্রিশ বছর বয়সে যিহোরাম রাজা হন এবং আট বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেন। 6তিনি রাজা আহাবের এক কন্যাকে বিবাহ করেন এবং আহাব ও অন্যান্য ইসরায়েলী রাজাদের পথ অনুসরণ করার ফলে প্রভু পরমেশ্বরের দৃষ্টিতে সমস্ত ঘৃণ্য কাজ তিনি করতেন। 7কিন্তু তা সত্ত্বেও পরমেশ্বর দাউদের বংশকে ধ্বংস করতে চান নি কারণ তিনি দাউদের সঙ্গে এক চুক্তিতে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন যে তাঁর কুলে বাতি দেবার লোকের অভাব হবে না।
8যিহোরামের রাজত্বকালের ইদোম যিহুদীয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করল। 9তখন যিহোরাম তাঁর সমস্ত রথী বাহিনী নিয়ে ইদোম আক্রমণ করলেন। ইদোমী সৈন্যরা তাঁকে ঘিরে ফেলল। রাত্রিবেলায় তিনি তাঁর রথী সেনাপতিদের নিয়ে ইদোমী সৈন্যদের বেষ্টনী ভেদ করে পালিয়ে গেলেন। 10সেই থেকে ইদোম যিহুদীয়ারঅধীনতা অস্বীকার করে স্বাধীনতা ভোগ করছে। ঠিক এই একই সময়ে লিবনা নগরও বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। কারণ যিহোরাম তাঁর পূর্বপুরুষের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরকে পরিত্যাগ করেছিলেন। 11এমন কি তিনি যিহুদীয়ার পার্বত্য প্রদেশের নানা জায়গায় উপাসনার জন্য দেবস্থান নির্মাণ করেন এবং যিহুদীয়া ও জেরুশালেমনিবাসী সমস্ত লোককে প্রভু পরমেশ্বরের বিরুদ্ধে পাপাচারে লিপ্ত করেন।
12নবী এলিয় যিহোরামের কাছে একটি চিঠি লিখলেন। চিঠিতে লেখা ছিল: তোমার পূর্বপুরুষ দাউদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর তোমাকে দণ্ডাদেশ দিয়েছেন কারণ তুমি তোমার পিতা যিহোশাফটের অথবা তোমার পিতামহ আসার অনুসরণ কর নি। 13পরিবর্তে তুমি ইসরায়েলের রাজাদের অনুসরণ করেছ এবং সমগ্র যিহুদীয়া এবং জেরুশালেমের অধিবাসীদের ঈশ্বরের কাছে অবিশ্বস্ততার পথে পরিচালিত করেছ, ঠিক যেভাবে আহাব ও তার উত্তরাধিকারীরা ইসরায়েল জাতিকে অবিশ্বস্ততার পথে পরিচালনা করেছিল। এমন কি তুমি তোমার ভাইদের হত্যা করেছে, যারা তোমার চেয়ে অনেক ভাল ছিল। 14এর ফলে প্রভু পরমেশ্বর তোমার প্রজাদের তোমার সন্তান-সন্ততিদের ও তোমার স্ত্রীদের ভয়াবহ দণ্ড দেবেন এবং তোমার সমস্ত ঐশ্বর্য-সম্পদ ধ্বংস করবেন। 15তুমি নিজে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক অন্ত্ররোগে কষ্ট পাবে এবং দিনে দিনে অবস্থা মন্দ থেকে মন্দতর হবে।
16সমুদ্রের উপকুলবর্তী অঞ্চলে যেখানে কিছু সুদানী বাস করত, তারই কাছাকাছি জায়গায় কিছু ফিলিস্তিনী ও আরবীয় বাস করত। প্রভু পরমেশ্বর যিহোরামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তাদের প্ররোচিত করলেন। 17তারা যিহুদীয়া দেশ আক্রমণ করে রাজপ্রাসাদ লুন্ঠন করল এবং রাজার সমস্ত স্ত্রী ও রাজা কনিষ্ঠ পুত্র অহসিয়কে বাদে সমস্ত পুত্রকে বন্দী করে নিয়ে গেল।
18এই সমস্ত ঘটনার পর প্রভু পরমেশ্বর অত্যন্ত বেদনাদায়ক অন্ত্ররোগে রাজাকে জর্জরিত করলেন। 19প্রায় দুবছর তিনি অকথ্য যন্ত্রণা ভোগ করে দারুণ মর্মবেদনায় মারা গেলেন। যেভাবে তাঁর পূর্বপুরুষদের ক্ষেত্রে হয়ে এসেছে সেইভাবে তাঁর প্রজারা তার সম্মানে বহ্নুৎসব করে শোক প্রকাশ করল না।
20বত্রিশ বছর বয়সে যিহোরাম রাজা হয়েছিলেন এবং জেরুশালেমে আট বছর রাজত্ব করেন। তাঁর মৃত্যুতে কেউ দুঃখিত হল না। তাঁকে প্রজারা দাউদ নগরে সমাহিত করল ঠিকই কিন্তু রাজপরিবারের সমাধি ভূমিতে তাঁর সমাধি হল না।

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...