যাবুর ৭২: ১৫, যিরমিয় ৬: ২০, যিহিস্কেল ২৭: ২২ ও ৩৮: ১৩ এবং ইয়োব ৬: ১৯

যাবুর ৭২: ১৫

============================


 যিরমিয় ৬: ২০
1হে বিন্যামীন-সন্তানগণ, তোমরা যিরূশালেমের মধ্য হইতে পলায়ন কর, তকোয় নগরে তূরী বাজাও, বৈৎ-হক্কেরমে ধ্বজা তুল, কেননা উত্তরদিক্‌ হইতে অমঙ্গল ও মহাধ্বংস উকি মারিতেছে। 2সুন্দরী সুখভোগিনী সিয়োন-কন্যাকে আমি সংহার করিব। 3মেষপালকগণ আপন আপন পাল সঙ্গে লইয়া তাহার কাছে আসিবে; তাহারা তাহার বিরুদ্ধে চারিদিকে আপন আপন তাম্বু স্থাপন করিবে, প্রত্যেকে আপন আপন স্থানে পাল চরাইবে। 4তাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজন কর; উঠ, আমরা মধ্যাহ্নকালে যাত্রা করি। ধিক্‌ আমাদিগকে! কেননা দিবাবসান হইতেছে, সন্ধ্যাকালের ছায়া দীর্ঘ হইতেছে। 5উঠ, আমরা রাত্রিযোগে যাত্রা করি, তাহার অট্টালিকা সকল নষ্ট করি। 6বস্তুতঃ বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা বলিয়াছেন, তোমরা বৃক্ষ কাটিয়া যিরূশালেমের বিরুদ্ধে জাঙ্গাল বাঁধ; সেই নগর প্রতিফল পাইবে; তাহার ভিতরে সকলই উপদ্রব। 7যেমন উনুই আপন জল নির্গত করে, তেমনি সে আপন দুষ্টতা নির্গত করে; তাহার মধ্যে দৌরাত্ম্য ও লুটের শব্দ শুনা যায়; পীড়া ও আঘাত নিয়ত আমার দৃষ্টিগোচর রহিয়াছে। 8হে যিরূশালেম, শাসন গ্রহণ কর, পাছে আমার প্রাণ তোমা হইতে বিভিন্ন হয়, পাছে আমি তোমাকে ধ্বংসস্থান করি, নিবাসীবিহীন ভূমি করি।
9বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, উহারা ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশকে শেষ দ্রাক্ষাফলের ন্যায় ঝাড়িয়া ফেলিবে; তুমি দ্রাক্ষাফল সংগ্রহকারীর ন্যায় ঝুড়িতে পুনঃ পুনঃ হাত দেও। 10আমি কাহাকে বলিলে, কাহাকে সাক্ষ্য দিলে, উহারা শুনিবে? দেখ, তাহাদের কর্ণ অচ্ছিন্নত্বক্‌, তাহারা শুনিতে পায় না। দেখ, সদাপ্রভুর বাক্য তাহাদের টিট্‌কারির বিষয় হইয়াছে; সেই বাক্যে তাহাদের কিছুই সন্তোষ হয় না। 11আহা! আমি সদাপ্রভুর ক্রোধে পরিপূর্ণ হইয়াছি; সম্বরণ করিতে করিতে ক্লান্ত হইলাম; সড়কে বালকদের উপরে ও যুবকগণের সভার উপরে একসঙ্গে তাহা ঢালিয়া দেও; কারণ, এমন কি, স্বামী ও স্ত্রী, বৃদ্ধ ও জরাতুর সকলেই ধরা পড়িবে। 12আর ভূমি ও স্ত্রীসুদ্ধ তাহাদের বাটী সকল পরের অধিকার হইবে; কারণ, আমি এই দেশনিবাসীদের বিরুদ্ধে আপন হস্ত বিস্তার করিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন, 13কেননা তাহারা ক্ষুদ্র ও মহান সকলেই লোভে লুব্ধ, ভাববাদী ও যাজক সকলেই কপটাচার করে। 14আর তাহারা আমার জাতির ক্ষত কেবল একটুমাত্র সুস্থ করিয়াছে; যখন শান্তি নাই, তখন শান্তি শান্তি বলিয়াছে। 15তাহারা ঘৃণার্হ কার্য করিয়াছে বলিয়া কি লজ্জিত হইল? তাহারা মোটেই লজ্জিত হয় নাই, বিষণ্ন হইতেও জানে না; তজ্জন্য তাহারা পতিতগণের মধ্যে পতিত হইবে; আমি যখন তাহাদের প্রতিফল দিব, তখন তাহাদের নিপাত হইবে, ইহা সদাপ্রভু কহেন।
16সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা পথে পথে দাঁড়াইয়া দেখ; এবং কোন্‌ কোন্‌টি চিরন্তন মার্গ, তাহা জিজ্ঞাসা করিয়া বল, উত্তম পথ কোথায়? আর সেই পথে চল, তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে। কিন্তু তাহারা কহিল, আমরা চলিব না। 17আর আমি তোমাদের উপরে প্রহরিগণকে রাখিলাম, [বলিলাম,] ‘তোমরা তূরীধ্বনিতে কর্ণপাত কর;’ কিন্তু তাহারা বলিল, কর্ণপাত করিব না। 18অতএব হে জাতিগণ, শুন; হে মণ্ডলি, তাহাদের মধ্যে কি কি আছে, জ্ঞাত হও। 19হে পৃথিবী, শুন, দেখ, আমিই এই জাতির উপরে অমঙ্গল আনিব, তাহাদের পরিকল্পনাসমূহের ফল বর্তাইব, কারণ তাহারা আমার বাক্যে অবধান করে নাই; আর আমার ব্যবস্থা, তাহারা তাহা হেয়জ্ঞান করিয়াছে। 20শিবা হইতে আমার কাছে কেন ধূপ আইসে? কেন দূর দেশ হইতে মিষ্ট বচ আইসে? তোমাদের হোমবলি সকল আমার গ্রাহ্য নয়, তোমাদের বলিদানও আমার তুষ্টিজনক নয়। 21অতএব সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি এই জাতির সম্মুখে নানা বিঘ্ন স্থাপন করিব, আর পিতারা ও পুত্রেরা একসঙ্গে সেই সকল বিঘ্নে উছোট খাইবে; প্রতিবাসী ও তাহার বন্ধু বিনষ্ট হইবে।
22সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, উত্তর দেশ হইতে একজনসমাজ আসিতেছে, পৃথিবীর প্রান্ত হইতে এক মহাজাতি উত্তেজিত হইয়া আসিতেছে। 23তাহারা ধনুক ও বর্শাধারী, নিষ্ঠুর ও করুণারহিত, তাহাদের রব সমুদ্র-গর্জনের তুল্য, এবং তাহারা অশ্বারোহণে আসিতেছে। অয়ি সিয়োন-কন্যে, তোমারই বিপরীতে যুদ্ধ করণার্থে তাহারা প্রত্যেক জন যোদ্ধার ন্যায় সুসজ্জিত হইয়াছে। 24আমরা এই বিষয়ে জনশ্রুতি শুনিয়াছি, আমাদের হস্ত অবশ হইল; যন্ত্রণা, প্রসবকারিণীর ন্যায় বেদনা, আমাদিগকে ধরিল। 25মাঠে যাইও না, পথে গমন করিও না, কেননা সেখানে শত্রুর খড়্‌গ, চারিদিকেই ভয়। 26হে আমার জাতির কন্যে, তুমি চট পরিধান কর, ভস্মে লুন্ঠিত হও, একমাত্র পুত্রবিয়োগের জন্য শোকের ন্যায় শোক কর, তীব্র বিলাপ কর; কেননা বিনাশক অকস্মাৎ আমাদের উপরে আসিবে।
27আমি আপন প্রজাগণের মধ্যে তোমাকে পরীক্ষক করিয়া দুর্গরূপে স্থাপন করিয়াছি; যেন তুমি তাহাদের পথ জ্ঞাত হও ও পরীক্ষা কর। 28তাহারা সকলে দারুণ অবাধ্য, পরিবাদ করিয়া বেড়ায়; তাহারা পিত্তল ও লৌহস্বরূপ; তাহারা সকলেই ভ্রষ্টাচারী। 29যাঁতা দগ্ধ হইয়াছে, সীসা অগ্নিতে শেষ হইয়াছে; অনর্থক তাহা খাঁটি করিবার চেষ্টা হইতেছে; কারণ দুষ্টগণকে বাহির করা যাইতেছে না। 30তাহাদিগকে অগ্রাহ্য রৌপ্য বলা যাইবে, কারণ সদাপ্রভু তাহাদিগকে অগ্রাহ্য করিয়াছেন।

=============================

যিহিস্কেল ২৭: ২২

1আবার সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, 2হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি সোরের বিষয়ে বিলাপ কর। 3সোরকে বল, হে সমুদ্রের প্রবেশস্থান-নিবাসিনি, অনেক উপকূলে জাতিগণের বণিক, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, হে সোর, তুমি বলিতেছ, আমি পরমাসুন্দরী। 4সমুদ্রগণের মধ্যস্থলে তোমার স্থান আছে; তোমার নির্মাণকারীরা তোমার সৌন্দর্য সিদ্ধ করিয়াছে। 5তাহারা সনীরীয় দেবদারু কাষ্ঠে তোমার সমস্ত তক্তা প্রস্তুত করিয়াছে, তোমার জন্য মাস্তুল প্রস্তুত করণার্থে লিবানোন হইতে এরস বৃক্ষ গ্রহণ করিয়াছে। 6তাহারা বাশন দেশীয় অলোন বৃক্ষ হইতে তোমার দাঁড় প্রস্তুত করিয়াছে; কিত্তীয় উপকূলসমূহ হইতে আনীত তাশূর কাষ্ঠে খচিত হস্তিদন্ত দ্বারা তোমার তক্তা নির্মাণ করিয়াছে। 7তোমার পতাকা হইবার জন্য মিসর দেশ হইতে আনীত সূচী-কর্মে চিত্রিত মসীনা-বস্ত্র তোমার পাল ছিল; ইলীশার উপকূলসমূহ হইতে আনীত নীল ও বেগুনে বস্ত্র তোমার আচ্ছাদন ছিল। 8সীদোন ও অর্বদ-নিবাসিগণ তোমার দাঁড়ী ছিল; হে সোর, তোমার জ্ঞানবানেরা তোমার মধ্যে তোমার কর্ণধার ছিল। 9গবালের প্রাচীনবর্গ ও জ্ঞানবানেরা তোমার মধ্যে তোমার ছিদ্র-প্রতীকারক ছিল। সমুদ্রগামী সমুদয় জাহাজ ও তাহাদের নাবিকগণ তোমার বাণিজ্যদ্রব্যের বিনিময় করিবার জন্য তোমার মধ্যে ছিল। 10পারস, লূদ ও পূট দেশীয়েরা তোমার সৈন্যসামন্তের মধ্যে তোমার যোদ্ধা ছিল; তাহারা তোমার মধ্যে ঢাল ও শিরস্ত্রাণ টাঙ্গাইয়া রাখিত; তাহারাই তোমার শোভা সমপাদন করিয়াছে। 11অর্বদের লোক তোমার সৈন্যসামন্তের সহিত চারিদিকে তোমার প্রাচীরের উপরে ছিল, যুদ্ধবীরেরা তোমার সকল উচ্চগৃহে ছিল, তাহারা চারিদিকে তোমার প্রাচীরে আপন আপন ঢাল টাঙ্গাইত; তাহারাই তোমার সৌন্দর্য সিদ্ধ করিয়াছে। 12সর্বপ্রকার ধনের প্রাচুর্য প্রযুক্ত তর্শীশ তোমার বণিক ছিল; তাহারা রৌপ্য, লৌহ, দস্তা ও সীসা দিয়া তোমার পণ্য পরিশোধ করিত। 13যবন, তূবল ও মেশক তোমার ব্যবসায়ী ছিল; তাহারা মনুষ্যের প্রাণ ও তৈজসপত্র দিয়া তোমার বাণিজ্যদ্রব্যের বিনিময় করিত। 14তোগর্ম-কুলের লোকেরা ঘোটক, যুদ্ধাশ্ব ও অশ্বতর আনিয়া তোমার পণ্য পরিশোধ করিত। 15দদান-সন্তানেরা তোমার ব্যবসায়ী ছিল, অনেক উপকূল তোমার করায়ত্ত হাট ছিল; তাহারা হস্তিদন্তের শৃঙ্গ ও আব্‌লুস কাষ্ঠ তোমার মূল্যরূপে আনিত। 16তোমার নির্মিত দ্রব্যের বাহুল্য প্রযুক্ত অরাম তোমার বণিক ছিল; তথাকার লোকেরা তাম্রমণি, বেগুনে ও বুটিদার বস্ত্র, মসীনা-বস্ত্র এবং প্রবাল ও পদ্মরাগমণি দিয়া তোমার পণ্য পরিশোধ করিত। 17যিহূদা এবং ইস্রায়েল-দেশ তোমার ব্যবসায়ী ছিল; তথাকার লোকেরা মিন্নীতের গম, পক্বান্ন, মধু, তৈল ও তরুসার দিয়া তোমার বাণিজ্যদ্রব্যের বিনিময় করিত। 18সর্বপ্রকার ধনবাহুল্য হেতু তোমার নির্মিত দ্রব্যের প্রাচুর্য প্রযুক্ত দম্মেশক তোমার বণিক ছিল, তথাকার লোকেরা হিল্‌বোনের দ্রাক্ষারস ও শুভ্র মেষলোম আনিত। 19বদান ও যবন উষল হইতে আসিয়া তোমার পণ্য পরিশোধ করিত; তোমার বিনিমেয় দ্রব্যের মধ্যে কান্তলৌহ, কাশ ও দারুচিনি থাকিত। 20দদান রথে বিস্তরণীয় দুলিচা সম্বন্ধে তোমার ব্যবসায়ী ছিল। 21আরব এবং কেদরের অধ্যক্ষেরা সকলে তোমার করায়ত্ত বণিক ছিল, মেষশাবক, মেষ ও ছাগ, এই সকল বিষয়ে তাহারা তোমার বণিক ছিল। 22শিবার ও রয়মার ব্যবসায়ীরাও তোমার ব্যবসায়ী ছিল; তাহারা সর্বপ্রকার শ্রেষ্ঠ গন্ধদ্রব্য ও সর্বপ্রকার বহুমূল্য প্রস্তর এবং স্বর্ণ দিয়া তোমার পণ্য পরিশোধ করিত। 23হারণ, কন্নী, এদন, শিবার এই ব্যবসায়ীরা, এবং অশূর ও কিল্‌মদ তোমার ব্যবসায়ী ছিল। 24ইহারা তোমার ব্যবসায়ী ছিল; ইহারা অপূর্ব বস্ত্র এবং নীলবর্ণ ও বুটিদার ও নক্‌শীকৃত শিল্পিত বস্ত্র, রজ্জুবদ্ধ এরস কাষ্ঠময় সিন্দুকে করিয়া, তোমার বিক্রয়স্থানে আনয়ন করিত। 25তর্শীশের জাহাজ সকল দ্রব্য-বিনিময়ে তোমার কাফিলা ছিল; এইরূপে তুমি পরিপূর্ণা ছিলে, সমুদ্রগণের মধ্যস্থলে অতিশয় প্রতাপান্বিতা ছিলে।
26তোমার দাঁড়ীরা তোমাকে প্রশস্ত জলে লইয়া গিয়াছে; পূর্বীয় বায়ু সমুদ্রগণের মধ্যস্থলে তোমাকে ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছে। 27তোমার ধন, তোমার পণ্যদ্রব্যসমূহ, তোমার বিনিমেয় দ্রব্য সকল, তোমার নাবিকগণ, তোমার কর্ণধারেরা, তোমার ছিদ্র-প্রতীকারকগণ ও দ্রব্য বিনিময়কারীরা, এবং তোমার মধ্যবর্তী সমস্ত যোদ্ধা তোমার মধ্যস্থিত জনসমাজের সঙ্গে তোমার পতনের দিনে সমুদ্রগণের মধ্যস্থলে পতিত হইবে। 28তোমার কর্ণধারদের ক্রন্দনের শব্দে উপনগর সকল কমিপত হইবে। 29আর সমুদয় দাঁড়ী, নাবিকগণ, সমুদ্রগামী সমস্ত কর্ণধার আপন আপন জাহাজ হইতে নামিয়া স্থলে দাঁড়াইবে, 30তোমার জন্য উচ্চৈঃস্বর করিবে, তীব্র ক্রন্দন করিবে, আপন আপন মস্তকে ধুলা দিবে ও ভস্মে গড়াগড়ি দিবে। 31আর তাহারা তোমার জন্য মস্তক মুণ্ডন করিবে, ও কটিদেশে চট বাঁধিবে, এবং তোমার জন্য প্রাণের দুঃখে রোদন সহকারে তীব্র বিলাপ করিবে। 32আর তাহারা শোক করিয়া তোমার জন্য বিলাপ করিবে, তোমার বিষয়ে এই বলিয়া বিলাপ করিবে, ‘কে সোরের তুল্য, সমুদ্রের মধ্যস্থানে নিস্তব্ধীকৃতার তুল্য? 33যখন সমুদ্র সকল হইতে তোমার পণ্য দ্রব্য নানা স্থানে যাইত, তখন তুমি বহুসংখ্য জাতিকে তৃপ্ত করিতে; তোমার ধনের ও বিনিমেয় দ্রব্যের বাহুল্যে তুমি পৃথিবীর রাজগণকে ধনী করিতে। 34এখন তুমি সমুদ্র দ্বারা গভীর জলে ভগ্ন হইলে তোমার বিনিমেয় দ্রব্য ও তোমার সমস্ত সমাজ তোমার মধ্যে পতিত হইল। 35উপকূল-নিবাসিগণ সকলে তোমার অবস্থায় বিস্ময়াপন্ন হইয়াছে, ও তাহাদের রাজগণ নিতান্ত উদ্বিগ্ন হইয়াছে, বিকৃতবদন হইয়াছে। 36জাতিগণের মধ্যবর্তী বণিকগণ তোমার বিষয়ে শিস দেয়; তুমি ত্রাসস্বরূপ হইলে, এবং তুমি কোন কালে আর হইবে না।’

======================

শত্রুদের উপরে ইস্রায়েলের জয়লাভ
1সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, 2হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি রোশের, মেশকের ও তূবলের অধ্যক্ষ মাগোগ দেশীয় গোগের দিকে মুখ রাখ, ও তাহার বিরুদ্ধে ভাববাণী বল, 3তুমি বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, হে গোগ, রোশের, মেশকের ও তূবলের অধ্যক্ষ, দেখ, আমি তোমার বিপক্ষ; 4তোমাকে এদিক্‌ ওদিক্‌ ফিরাইব, ও তোমার হনূ ফুঁড়িব, আর তোমাকে ও তোমার সমস্ত সৈন্যকে, অশ্বগণকে ও পূর্ণ সজ্জাপরিহিত সমস্ত অশ্বারোহীকে, ঢাল ও ফলকধারী মহাসমাজকে, খড়্‌গহস্ত সমস্ত লোককে বাহিরে আনিব। 5পারস্য, কূশ ও পূট তাহাদের সঙ্গী হইবে; ইহারা সকলে ঢাল ও শিরস্ত্রাণধারী; 6গোমর ও তাহার সকল সৈন্যদল, উত্তরদিকের প্রান্তবাসী তোগর্মের কুল ও তাহার সকল সৈন্যদল, এই নানা মহাজাতি তোমার সঙ্গী হইবে। 7প্রস্তুত হও, আপনাকে প্রস্তুত কর- তুমি ও তোমার নিকটে সমাগত তোমার সমস্ত সমাজ- এবং তুমি তাহাদের রক্ষক হও। 8বহুদিন অতীত হইলে তোমার তত্ত্ব লওয়া যাইবে; শেষের বৎসরসমূহে তুমি এই দেশে, খড়্‌গ হইতে পুনরানীত এবং অনেক জাতি হইতে সংগৃহীত লোকদের নিকটে, ইস্রায়েলের চিরোৎসন্ন পর্বতসমূহে আসিবে; তাহারা জাতিগণের মধ্য হইতে বাহিরে আনীত হইয়াছে, এবং তাহারা সকলেই নির্ভয়ে বাস করিবে। 9কিন্তু তুমি উঠিবে, ঝঞ্ঝার ন্যায় আসিবে, মেঘের ন্যায় তুমি ও তোমার সহিত তোমার সকল সৈন্যদল ও অনেক জাতি সেই দেশ আচ্ছাদন করিবে। 10প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, সেই দিন নানা বিষয় তোমার মনে পড়িবে, এবং তুমি অনিষ্টের সঙ্কল্প করিবে। 11তুমি কহিবে, আমি সেই অপ্রাচীর গ্রামে পূর্ণ দেশের বিরুদ্ধে যাত্রা করিব, আমি সেই শান্তিযুক্ত লোকদের কাছে যাইব, তাহারা নির্ভয়ে বাস করিতেছে; তাহারা সকলে প্রাচীরহীন স্থানে বাস করিতেছে; এবং তাহাদের অর্গল কি কবাট নাই। 12[তোমার অভিপ্রায় এই] যে, লুট কর ও দ্রব্য হরণ কর; [পূর্বে] উৎসন্ন সেই বসতিস্থান সকলের প্রতি এবং জাতিগণের মধ্য হইতে সংগৃহীত, আর পশু ও ধনপ্রাপ্ত এবং পৃথিবীর নাভিনিবাসী জাতির প্রতি হস্ত বিস্তার করা। 13শিবা, দদান ও তর্শীশের বণিকগণ এবং তথাকার সকল যুবসিংহ তোমাকে বলিবে, তুমি কি লুট করিবার জন্য আসিলে? দ্রব্য হরণার্থে কি আপনার নিকটে তোমার এই জনসমাজকে একত্র করিলে? স্বর্ণ ও রৌপ্য লইয়া যাওয়া, পশু ও ধন হরণ করা, বিস্তর লুট করা, কি তোমার অভিপ্রায়?
14অতএব, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি ভাববাণী বল, গোগকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, সেই দিন যখন আমার প্রজা ইস্রায়েল নির্ভয়ে বাস করিবে, তখন তুমি কি তাহা জ্ঞাত হইবে না? 15আর তুমি আপন স্থান হইতে, উত্তরদিকের প্রান্ত হইতে, আসিবে, এবং অনেক জাতি তোমার সঙ্গে আসিবে; তাহারা সকলে ঘোড়ায় চড়িয়া আসিবে, মহাসমাজ ও বিক্রমী সৈন্যসামন্ত হইবে। 16আর তুমি মেঘের ন্যায় দেশ আচ্ছাদন করিবার জন্য আমার প্রজা ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যাত্রা করিবে; উত্তরকালে এইরূপ ঘটিবে; আমি তোমাকে আমার দেশের বিরুদ্ধে আনিব, যেন জাতিগণ আমাকে জানিতে পারে, কেননা তখন, হে গোগ, আমি তাহাদের দৃষ্টিগোচরে তোমাতে পবিত্র বলিয়া মান্য হইব। 17প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি কি সেই ব্যক্তি, যাহার বিষয়ে আমি পূর্বকালে আমার দাসগণ দ্বারা, অর্থাৎ যাহারা সেই সময়ে অনেক বৎসর ব্যাপিয়া ভাববাণী বলিত, সেই ইস্রায়েলীয় ভাববাদিগণ দ্বারা এই কথা কহিতাম যে, আমি তাহাদের বিরুদ্ধে তোমাকে আনাইব? 18সেই দিন যখন গোগ ইস্রায়েল-দেশের বিরুদ্ধে আসিবে, তখন আমার কোপাগ্নি আমার নাসিকায় উঠিবে, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। 19কারণ আমি নিজ অন্তর্জ্বালায় ও রোষানলে বলিয়াছি, অবশ্য সেই দিন ইস্রায়েল-দেশে মহাকমপ হইবে। 20তাহাতে সমুদ্রের মৎস্যগণ, আকাশের পক্ষীগণ, বনের পশুগণ, ভূচর সরীসৃপ সকল এবং ভূতলস্থ মনুষ্য সকল আমার সাক্ষাতে কমপমান হইবে, পর্বত সকল উৎপাটিত হইবে, শৈলাগ্র সকল পতিত হইবে, এবং সমস্ত প্রাচীর ভূমিসাৎ হইবে। 21আর আমি আপনার সকল পর্বতে তাহার বিরুদ্ধে খড়্‌গ আহ্বান করিব, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন; প্রত্যেকের খড়্‌গ তাহার ভ্রাতার বিরুদ্ধ হইবে। 22আর আমি মহামারী ও রক্ত দ্বারা বিচারে তাহার সহিত বিবাদ করিব, এবং তাহার উপরে, তাহার সকল সৈন্যদলের উপরে ও তাহার সঙ্গী অনেক জাতির উপরে প্লাবনকারী ধারাসমপাত ও বড় বড় করকা, অগ্নি ও গন্ধক বর্ষণ করিব। 23আর আমি আপনার মহত্ত্ব ও পবিত্রতা প্রকাশ করিব, বহুসংখ্যক জাতির সাক্ষাতে আপনার পরিচয় দিব;
তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু।

===============================

ইয়োবের উত্তর
1পরে ইয়োব উত্তর করিয়া কহিলেন,
2হায়, যদি আমার মনস্তাপ তৌল করা হইত,
যদি আমার বিপদ তুলায় পরিমিত হইত,
3তবে তাহা সমুদ্রের বালি হইতেও ভারী হইত,
এই জন্য আমার বাক্য অসংলগ্ন হইয়া পড়ে।
4কারণ সর্বশক্তিমানের বাণ সকল আমার ভিতরে প্রবিষ্ট,
আমার আত্মা সেই সকলের বিষ পান করিতেছে,
ঈশ্বরীয় ত্রাসদল আমার বিরুদ্ধে শ্রেণীবদ্ধ।
5বনগর্দভ ঘাস পাইলে কি চিৎকার করে?
গরু জাব পাইলে কি রব করে?
6যাহার স্বাদ নাই,
তাহা কি লবণ বিনা ভোজন করা যায়?
ডিম্বের লালার কি কিছু আস্বাদ আছে?
7আমার প্রাণ যাহা স্পর্শ করিতে অসম্মত,
তাহাই আমার ঘৃণিত ভক্ষ্যস্বরূপ হইল।
8আঃ! আমি যেন বাঞ্ছনীয় বিষয় পাইতে পারি,
ঈশ্বর যেন আমার অপেক্ষণীয় বিষয় আমাকে দেন,
9হাঁ, ঈশ্বর অনুগ্রহ করিয়া আমাকে চূর্ণ করুন,
হস্ত প্রসারণ করিয়া আমাকে কাটিয়া ফেলুন;
10তবু তখনও আমার সান্ত্বনা থাকিবে,
নির্মম যাতনায়ও আমি উল্লাস করিব,
কারণ আমি পবিত্রতমের বাক্য সকল অস্বীকার করি নাই।
11আমার বল কি যে, প্রতীক্ষা করিতে পারি?
আমার পরিণাম কি যে, সহিষ্ণু হইতে পারি?
12আমার বল কি প্রস্তরের বল?
আমার মাংস কি পিত্তলের?
13আমার দ্বারা কি আমার আর উপকার হইতে পারে?
আমা হইতে কি বুদ্ধিকৌশল দূরীকৃত হয় নাই?
14শীর্ণ লোকের প্রতি বন্ধুর দয়া করা কর্তব্য,
পাছে সে সর্বশক্তিমানের ভয় ত্যাগ করে।
15আমার ভ্রাতৃগণ স্রোতের ন্যায় বিশ্বাসঘাতক,
তাহারা স্রোতমার্গস্থ প্রণালীর ন্যায় চঞ্চল।
16সেই স্রোত হিম হেতু কৃষ্ণবর্ণ হয়,
তুষার পড়িয়া তাহার মধ্যে লীন হয়;
17কিন্তু উত্তপ্ত হইবামাত্র তাহা লুপ্ত হয়,
গ্রীষম হইলে তাহা স্বস্থান হইতে শুষিয়া যায়।
18সেই পথের বণিকদল পথ ছাড়ে,
তাহারা মরুস্থানে গিয়া বিনষ্ট হয়।
19টেমার বণিকদল দৃষ্টিপাত করিল,
শিবার পথিকদল সেই সকলের অপেক্ষা করিল।
20তাহারা প্রত্যাশা করাতে লজ্জিত হইল,
সেখানে আসিলে তাহারা হতাশ হইল।
21বস্তুতঃ এখন তোমরা কিছুই নও;
ত্রাস দেখিয়া ভয় পাইয়াছ।
22আমি কি বলিয়াছিলাম,
আমাকে কিছু দেও,
তোমাদের সঙ্গতি হইতে আমার জন্য ভেট দেও,
23বিপক্ষের হস্ত হইতে আমাকে রক্ষা কর,
দুর্দান্তদের হস্ত হইতে আমাকে মুক্ত কর?
24আমাকে শিক্ষা দেও, আমি নীরব হইব;
আমাকে বুঝাইয়া দেও, কিসে আমি প্রমাদে পড়িয়াছি।
25ন্যায্য বাক্য কেমন প্রবল!
কিন্তু তোমাদের তর্কে কি দোষ ব্যক্ত হয়?
26তোমরা কি শব্দের দোষ ধরিবার সঙ্কল্প করিতেছ?
নিরাশ ব্যক্তির বাক্য ত বায়ুর তুল্য।
27তোমরা ত অনাথের জন্য গুলিবাঁট করিবে,
তোমাদের বন্ধুকে বিক্রয় করিবে।
28এখন অনুগ্রহ করিয়া আমার প্রতি দৃষ্টিপাত কর,
আমি তোমাদের সাক্ষাতে মিথ্যা কহিব না।
29তোমরা ফিরিয়া যাও, অন্যায় না হউক;
আমি বলি, ফিরিয়া যাও, আমার পক্ষ ন্যায্য।
30আমার জিহ্বাতে কি অন্যায় আছে?
আমার রসনা কি বিপাকের স্বাদ বুঝে না?


‍‌(যাত্রা পুস্তক ২০: ৪) , (লেবীয় পুস্তক ২৬: ১) , (দ্বিতীয় বিবরণ ৪: ১৬-১৮) , (দ্বিতীয় বিবরণ ২৭: ১৫) , (রাজাবলী-১, ১১অধ্যায়)

দশ আজ্ঞা প্রদান
1আর ঈশ্বর এই সকল কথা কহিলেন, 2আমি তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু, যিনি মিসর দেশ হইতে, দাস-গৃহ হইতে, তোমাকে বাহির করিয়া আনিলেন।
3আমার সাক্ষাতে তোমার অন্য দেবতা না থাকুক।
4তুমি আপনার নিমিত্তে খোদিত প্রতিমা নির্মাণ করিও না; উপরিস্থ স্বর্গে, নিচস্থ পৃথিবীতে ও পৃথিবীর নিচস্থ জলমধ্যে যাহা যাহা আছে, তাহাদের কোন মূর্তি নির্মাণ করিও না; 5তুমি তাহাদের কাছে প্রণিপাত করিও না, এবং তাহাদের সেবা করিও না; কেননা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আমি স্বগৌরব রক্ষণে উদ্‌যোগী ঈশ্বর; আমি পিতৃগণের অপরাধের প্রতিফল সন্তানদের উপরে বর্তাই, যাহারা আমাকে দ্বেষ করে, তাহাদের তৃতীয় চতুর্থ পুরুষ পর্যন্ত বর্তাই; 6কিন্তু যাহারা আমাকে প্রেম করে ও আমার আজ্ঞা সকল পালন করে, আমি তাহাদের সহস্র [পুরুষ] পর্যন্ত দয়া করি।
7তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর নাম অনর্থক লইও না, কেননা যে কেহ তাঁহার নাম অনর্থক লয়, সদাপ্রভু তাহাকে নির্দোষ করিবেন না। 8তুমি বিশ্রামদিন স্মরণ করিয়া পবিত্র করিও। 9ছয় দিন শ্রম করিও, আপনার সমস্ত কার্য করিও; 10কিন্তু সপ্তম দিন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে বিশ্রামদিন। সেই দিন তুমি, কি তোমার পুত্র কি কন্যা, কি তোমার দাস কি দাসী, কি তোমার পশু, কি তোমার পুরদ্বারের মধ্যবর্তী বিদেশী, কেহ কোন কার্য করিও না। 11কেননা সদাপ্রভু আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী, সমুদ্র ও সেই সকলের মধ্যবর্তী সমস্ত বস্তু ছয় দিনে নির্মাণ করিয়া সপ্তম দিনে বিশ্রাম করিলেন। এই জন্য সদাপ্রভু বিশ্রামদিনকে আশীর্বাদ করিলেন, ও পবিত্র করিলেন।
12তোমার পিতাকে ও তোমার মাতাকে সমাদর করিও, যেন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে দেশ দিবেন, সেই দেশে তোমার দীর্ঘ পরমায়ু হয়।
13নরহত্যা করিও না।
14ব্যভিচার করিও না।
15চুরি করিও না।
16তোমার প্রতিবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিও না।
17তোমার প্রতিবাসীর গৃহে লোভ করিও না; প্রতিবাসীর স্ত্রীতে, কিম্বা তাহার দাসে কি দাসীতে, কিম্বা তাহার গরুতে কি গর্দভে, প্রতিবাসীর কোন বস্তুতেই লোভ করিও না।
18তখন সমস্ত লোক মেঘগর্জন, বিদ্যুৎ, তূরীধ্বনি ও ধূমময় পর্বত দেখিয়া ত্রাসযুক্ত হইল, এবং দূরে দাঁড়াইয়া রহিল। 19আর তাহারা মোশিকে কহিল, তুমিই আমাদের সহিত কথা বল, আমরা শুনিব; কিন্তু ঈশ্বর আমাদের সহিত কথা না বলুন, পাছে আমরা মারা পড়ি। 20মোশি লোকদিগকে কহিলেন, ভয় করিও না; কেননা তোমাদের পরীক্ষা করণার্থে, এবং তোমরা যেন পাপ না কর, এই নিমিত্তে আপন ভয়ানকতা তোমাদের দৃষ্টিগোচর করণার্থে ঈশ্বর আসিয়াছেন। 21তখন লোকেরা দূরে দাঁড়াইয়া রহিল; আর মোশি সেই ঘোর অন্ধকারের নিকটে গমন করিলেন, যেখানে ঈশ্বর ছিলেন।
=========================================

ঈশ্বরীয় নানা প্রতিজ্ঞা ও চেতনা-বাক্য
1তোমরা আপনাদের জন্য অবস্তু প্রতিমা নির্মাণ করিও না, এবং ক্ষোদিত প্রতিমা কিম্বা স্তম্ভ স্থাপন করিও না, ও তাহার কাছে প্রণিপাত করিবার জন্য তোমাদের দেশে কোন ক্ষোদিত প্রস্তর রাখিও না; কেননা আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর। 2তোমরা আমার বিশ্রামবার সকল পালন করিও, ও আমার ধর্মধামের সমাদর করিও; আমি সদাপ্রভু।
3যদি তোমরা আমার বিধিপথে চল, আমার আজ্ঞা সকল মান, ও সেই সমস্ত পালন কর, 4তবে আমি যথাকালে তোমাদিগকে বৃষ্টি দান করিব; তাহাতে ভূমি শস্য উৎপন্ন করিবে ও ক্ষেত্রের বৃক্ষ সকল স্ব স্ব ফল দিবে। 5তোমাদের শস্যমর্দনকাল দ্রাক্ষাচয়নকাল পর্যন্ত থাকিবে, ও দ্রাক্ষাচয়নকাল বীজ বপনকাল পর্যন্ত থাকিবে; এবং তোমরা তৃপ্তি পর্যন্ত অন্ন ভোজন করিবে, ও নিরাপদে নিজ দেশে বাস করিবে। 6আর আমি দেশে শান্তি প্রদান করিব; তোমরা শয়ন করিলে কেহ তোমাদিগকে ভয় দেখাইবে না, এবং আমি তোমাদের দেশ হইতে হিংস্র জন্তুদিগকে দূর করিয়া দিব; ও তোমাদের দেশে কোন যুদ্ধবিগ্রহ হইবে না। 7আর আপনাদের শত্রুগণকে তাড়াইয়া দিবে, ও তাহারা তোমাদের সম্মুখে খড়গে পতিত হইবে। 8আর তোমাদের পাঁচ জন তাহাদের একশত জনকে তাড়াইয়া দিবে, তোমাদের একশত জন দশ সহস্র লোককে তাড়াইয়া দিবে, এবং তোমাদের শত্রুগণ তোমাদের সম্মুখে খড়গে পতিত হইবে। 9আর আমি তোমাদের প্রতি প্রসন্নবদন হইব, তোমাদিগকে ফলবন্ত ও বহুবংশ করিব, ও তোমাদের সহিত আমার নিয়ম স্থির করিব। 10আর তোমরা সঞ্চিত পুরাতন শস্য ভোজন করিবে, ও নূতনের সম্মুখ হইতে পুরাতন শস্য বাহির করিবে। 11আর আমি তোমাদের মধ্যে আপন আবাস রাখিব, আমার প্রাণ তোমাদিগকে ঘৃণা করিবে না। 12আর আমি তোমাদের মধ্যে গমনাগমন করিব, ও তোমাদের ঈশ্বর হইব, এবং তোমরা আমার প্রজা হইবে। 13আমি সদাপ্রভু তোমাদের ঈশ্বর; আমি মিসর দেশ হইতে তোমাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছি, তাহাদের দাস থাকিতে দিই নাই; আমি তোমাদের জোয়ালি-কাষ্ঠ ভাঙ্গিয়া সোজা ভাবে তোমাদিগকে গমন করাইয়াছি।
===================================

1এক্ষণে, হে ইস্রায়েল, আমি যে যে বিধি ও শাসন পালন করিতে তোমাদিগকে শিক্ষা দিই, তাহা শ্রবণ কর; যেন তোমরা বাঁচিতে পার, এবং তোমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদিগকে যে দেশ দিতেছেন, তাহার মধ্যে প্রবেশ করিয়া তাহা অধিকার করিতে পার। 2আমি তোমাদিগকে যাহা আজ্ঞা করি, সেই বাক্যে তোমরা আর কিছু যোগ করিবে না, এবং তাহার কিছু হ্রাস করিবে না। আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আদেশ করিতেছি, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেই সকল আজ্ঞা পালন করিবে। 3বাল-পিয়োরের বিষয়ে সদাপ্রভু যাহা করিয়াছিলেন, তাহা তোমরা স্বচক্ষে দেখিয়াছ; ফলতঃ তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু বাল-পিয়োরের অনুগামী প্রত্যেক জনকে তোমার মধ্য হইতে বিনষ্ট করিয়াছিলেন; 4কিন্তু তোমরা যত লোক তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুতে আসক্ত ছিলে, সকলেই অদ্য জীবিত আছ। 5দেখ, আমার ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাকে যেরূপ আজ্ঞা করিয়াছিলেন, আমি তোমাদিগকে সেইরূপ বিধি ও শাসন শিক্ষা দিয়াছি; যেন, তোমরা যে দেশ অধিকার করিতে যাইতেছ, সেই দেশের মধ্যে তদনুসারে ব্যবহার কর। 6অতএব তোমরা সেই সমস্ত মান্য করিও ও পালন করিও; কেননা জাতি সকলের সমক্ষে তাহাই তোমাদের জ্ঞান ও বুদ্ধিস্বরূপ হইবে; এই সকল বিধি শুনিয়া তাহারা বলিবে, সত্যই, এই মহাজাতি জ্ঞানবান ও বুদ্ধিমান লোক; 7কেননা কোন্‌ বড় জাতির এমন নিকটবর্তী ঈশ্বর আছেন, যেমন আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু? যখনই আমরা তাঁহাকে ডাকি, তিনি নিকটবর্তী। 8আর আমি অদ্য তোমাদের সাক্ষাতে যে সমস্ত ব্যবস্থা দিতেছি, তাহার মত যথার্থ বিধি ও শাসন কোন্‌ বড় জাতির আছে? 9কিন্তু তুমি নিজের বিষয়ে সাবধান, তোমার প্রাণের বিষয়ে অতি সাবধান থাক; পাছে তুমি যে সকল ব্যাপার স্বচক্ষে দেখিয়াছ, তাহা ভুলিয়া যাও; আর পাছে জীবন থাকিতে তোমার হৃদয় হইতে তাহা লুপ্ত হয়; তুমি আপন পুত্র পৌত্রদিগকে তাহা শিক্ষা দেও। 10সেই দিন, যে দিন তুমি হোরেবে আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে দাঁড়াইয়াছিলে, সেই দিন সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, তুমি আমার নিকটে লোকদিগকে একত্র কর, আমি আপন বাক্য সকল তাহাদিগকে শুনাইব; তাহারা পৃথিবীতে যত দিন জীবিত থাকে, তত দিন যেন আমাকে ভয় করে, এই বিষয় তাহারা শিখিবে, এবং আপন সন্তানগণকেও শিখাইবে। 11তাহাতে তোমরা নিকটবর্তী হইয়া পর্বতের তলে দাঁড়াইয়াছিলে; এবং সেই পর্বত গগনের অভ্যন্তর পর্যন্ত অগ্নিতে জ্বলিতেছিল, অন্ধকার, মেঘ ও ঘোর তিমির ব্যাপ্ত ছিল। 12তখন অগ্নির মধ্য হইতে সদাপ্রভু তোমাদের কাছে কথা কহিলেন; তোমরা বাক্যের রব শুনিতেছিলে, কিন্তু কোন মূর্তি দেখিতে পাইলে না, কেবল রব হইতেছিল। 13আর তিনি আপনার যে নিয়ম পালন করিতে তোমাদিগকে আজ্ঞা করিলেন, সেই নিয়ম অর্থাৎ দশ আজ্ঞা তোমাদিগকে আদেশ করিলেন, এবং দুইখান প্রস্তরফলকে লিখিলেন।
14তোমরা যে দেশ অধিকার করিতে পার হইয়া যাইতেছ, সেই দেশে তোমাদের পালনীয় বিধি ও শাসন সকল তোমাদিগকে শিক্ষা দিতে সদাপ্রভু সেই সময়ে আমাকে আজ্ঞা করিলেন। 15যে দিন সদাপ্রভু হোরেবে অগ্নির মধ্য হইতে তোমাদের সহিত কথা কহিতেছিলেন, সেই দিন তোমরা কোন মূর্তি দেখ নাই; অতএব আপন আপন প্রাণের বিষয়ে অতিশয় সাবধান হও; 16পাছে তোমরা ভ্রষ্ট হইয়া আপনাদের জন্য কোন আকারের মূর্তিতে ক্ষোদিত প্রতিমা নির্মাণ কর; পাছে পুরুষের বা স্ত্রীর প্রতিকৃতি, 17পৃথিবীস্থ কোন পশুর প্রতিকৃতি, আকাশে উড্ডীয়মান কোন পক্ষীর প্রতিকৃতি, 18ভূচর কোন সরীসৃপের প্রতিকৃতি, অথবা ভূমির নিচস্থ জলচর কোন জন্তুর প্রতিকৃতি নির্মাণ কর; 19আর আকাশের প্রতি চক্ষু তুলিয়া সূর্য, চন্দ্র ও তারা, আকাশের সমস্ত বাহিনী দেখিলে, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু যাহাদিগকে সমস্ত আকাশমণ্ডলের নিচে স্থিত সমস্ত জাতির জন্য বণ্টন করিয়াছেন, পাছে ভ্রান্ত হইয়া তাহাদের নিকটে প্রণিপাত কর ও তাহাদের সেবা কর। 20কিন্তু সদাপ্রভু তোমাদিগকে গ্রহণ করিয়াছেন, লৌহের হাফর হইতে, মিসর হইতে তোমাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন, যেন তোমরা তাঁহার অধিকাররূপ প্রজা হও, যেমন অদ্য আছ। 21আর তোমাদের জন্য সদাপ্রভু আমার প্রতিও ক্রুদ্ধ হইয়া এই দিব্য করিয়াছেন যে, তিনি আমাকে যর্দন পার হইতে দিবেন না, এবং তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে দেশ অধিকারার্থে দিতেছেন, সেই উত্তম দেশে আমাকে প্রবেশ করিতে দিবেন না। 22বাস্তবিক এই দেশেই আমাকে মরিতে হইবে; আমি যর্দন পার হইয়া যাইব না; কিন্তু তোমরা পার হইয়া সেই উত্তম দেশ অধিকার করিবে। 23তোমরা আপনাদের বিষয়ে সাবধান থাকিও, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের সহিত যে নিয়ম স্থির করিয়াছেন, তাহা ভুলিয়া যাইও না, কোন বস্তুর মূর্তিবিশিষ্ট ক্ষোদিত প্রতিমা নির্মাণ করিও না; উহা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিষিদ্ধ। 24কেননা তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু গ্রাসকারী অগ্নিস্বরূপ; তিনি স্বগৌরব রক্ষণে উদ্যোগী ঈশ্বর।

========================================

মোশির তৃতীয় বক্তৃতা
কনান দেশে ব্যবস্থা ঘোষণা করিবার আদেশ
1পরে মোশি ও ইস্রায়েলের প্রাচীন-বর্গ লোকদিগকে এই আজ্ঞা করিলেন, বলিলেন, অদ্য আমি তোমাদিগকে যে সকল আজ্ঞা দিই, তোমরা সেই সমস্ত পালন করিও। 2আর তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে যে দেশ দিতেছেন, তুমি যখন যর্দন পার হইয়া সেই দেশে উপস্থিত হইবে, তখন আপনার জন্য কতকগুলি বৃহৎ প্রস্তর স্থাপন করিবে ও তাহা চুন দিয়া লেপন করিবে। 3আর পার হইলে পর তুমি সেই প্রস্তরগুলির উপরে এই ব্যবস্থার সমস্ত কথা লিখিবে; যেন তোমার পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার কাছে যে অঙ্গীকার করিয়াছেন, তদনুসারে যে দেশ, যে দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশ তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে দিতেছেন, তথায় প্রবেশ করিতে পার। 4আর আমি অদ্য যে প্রস্তরগুলির বিষয়ে তোমাদিগকে আদেশ করিলাম, তোমরা যর্দন পার হইলে পর এবল পর্বতে সেই সকল প্রস্তর স্থাপন করিবে, ও তাহা চূণ দিয়া লেপন করিবে। 5আর সেই স্থানে তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি, প্রস্তরের এক বেদি গাঁথিবে; এবং তাহার উপরে লৌহাস্ত্র তুলিবে না। 6তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর সেই বেদি অতক্ষিত প্রস্তর দিয়া গাঁথিবে; এবং তাহার উপরে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে হোমবলি উৎসর্গ করিবে; 7এবং মঙ্গলার্থক বলিদান করিবে, আর সেই স্থানে ভোজন করিবে; এবং তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর সম্মুখে আনন্দ করিবে। 8আর সেই প্রস্তরের উপরে এই ব্যবস্থার সমস্ত বাক্য অতি স্পষ্টরূপে লিখিবে।
9আর মোশি ও লেবীয় যাজকগণ সমস্ত ইস্রায়েলকে কহিলেন, হে ইস্রায়েল, নীরব হও, শ্রবণ কর, অদ্য তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর প্রজা হইলে। 10অতএব তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে অবধান করিবে, এবং অদ্য আমি তোমাদিগকে তাঁহার যে সকল আজ্ঞা ও বিধি আদেশ করিলাম, সেই সকল পালন করিবে।
11সেই দিবসে মোশি লোকদিগকে এই আজ্ঞা করিলেন, 12বলিলেন, তোমরা যর্দন পার হইলে পর শিমিয়োন, লেবি, যিহূদা, ইষাখর, যোষেফ ও বিন্যামীন, ইহারা লোকদিগকে আশীর্বাদ করিবার জন্য গরিষীম পর্বতে দাঁড়াইবে। 13আর রূবেণ, গাদ, আশের, সবূলূন, দান ও নপ্তালি, ইহারা শাপ দিবার জন্য এবল পর্বতে দাঁড়াইবে। 14পরে লেবীয়গণ কথা আরম্ভ করিয়া ইস্রায়েলের সমস্ত লোককে উচ্চৈঃস্বরে বলিবে,
15যে ব্যক্তি কোন ক্ষোদিত কিম্বা ছাঁচে ঢালা প্রতিমা, সদাপ্রভুর ঘৃণিত বস্তু, শিল্পকরের হস্ত নির্মিত বস্তু নির্মাণ করিয়া গোপনে স্থাপন করে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক উত্তর করিয়া বলিবে, আমেন।
16যে কেহ তাহার পিতাকে কি মাতাকে অবজ্ঞা করে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে, আমেন।
17যে কেহ আপন প্রতিবাসীর ভূমিচিহ্ন স্থানান্তর করে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে, আমেন।
18যে কেহ অন্ধকে পথভ্রষ্ট করে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে, আমেন।
19যে কেহ বিদেশীর, পিতৃহীনের, কি বিধবার বিচারে অন্যায় করে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে, আমেন।
20যে কেহ পিতৃভার্যার সহিত শয়ন করে, আপন পিতার আবরণীয় অনাবৃত করাতে সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে, আমেন।
21যে কেহ কোন পশুর সহিত শয়ন করে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে, আমেন।
22যে কেহ আপন ভগিনীর সহিত, অর্থাৎ পিতৃকন্যার কিম্বা মাতৃকন্যার সহিত শয়ন করে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে, আমেন।
23যে কেহ আপন শাশুড়ীর সহিত শয়ন করে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে, আমেন।
24যে কেহ আপন প্রতিবাসীকে গোপনে বধ করে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে, আমেন।
25যে কেহ নিরপরাধের প্রাণ হত্যা করিবার জন্য উৎকোচ গ্রহণ করে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে, আমেন।
26যে কেহ এই ব্যবস্থার কথা সকল পালন করিবার জন্য সেই সকল অটল না রাখে, সে শাপগ্রস্ত। তখন সমস্ত লোক বলিবে, আমেন।

==============================

শলোমনের পাপে পতন ও তাহার ফল
1শলোমন রাজা ফরৌণের কন্যা ব্যতিরেকে আরও অনেক বিদেশীয়া রমণীকে, অর্থাৎ মোয়াবীয়া, অম্মোণীয়া, ইদোমীয়া, সীদোনীয়া ও হিত্তীয়া রমণীকে প্রেম করিতেন। 2যে জাতিগণের বিষয়ে সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানগণকে বলিয়াছিলেন, তোমরা তাহাদের কাছে যাইও না, এবং তাহাদিগকে আপনাদের কাছে আসিতে দিও না, কেননা তাহারা অবশ্য তোমাদের হৃদয়কে আপনাদের দেবগণের অনুগমনে বিপথগামী করিবে, শলোমন তাহাদেরই প্রতি প্রেমাসক্ত হইলেন। 3সাত শত রমণী তাঁহার পত্নী, ও তিনশত তাঁহার উপপত্নী ছিল; তাঁহার সেই স্ত্রীরা তাঁহার হৃদয়কে বিপথগামী করিল। 4ফলে এইরূপ ঘটিল, শলোমনের বৃদ্ধ বয়সে তাঁহার স্ত্রীরা তাঁহার হৃদয়কে অন্য দেবগণের অনুগমনে বিপথগামী করিল; তাঁহার পিতা দায়ূদের অন্তঃকরণ যেমন ছিল, তাঁহার অন্তঃকরণ তেমনি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর ভক্তিতে একাগ্র ছিল না। 5কিন্তু শলোমন সীদোনীয়দের দেবী অষ্টোরতের ও অম্মোনীয়দের ঘৃণার্হ দেবতা মিল্‌কমের অনুগামী হইলেন। 6এইরূপে শলোমন সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ তাহাই করিলেন; আপন পিতা দায়ূদের ন্যায় সম্পূর্ণরূপে সদাপ্রভুর অনুগামী হইলেন না। 7সেই সময়ে শলোমন যিরূশালেমের সম্মুখস্থ পর্বতে মোয়াবের ঘৃণার্হ বস্তু কমোশের জন্য ও অম্মোন-সন্তানদের ঘৃণার্হ বস্তু মোলকের জন্য উচ্চস্থলী নির্মাণ করিলেন। 8তাঁহার যত বিদেশীয়া স্ত্রী আপন আপন দেবতার উদ্দেশে ধূপ জ্বালাইত ও বলিদান করিত, সেই সকলের জন্য তিনি তদ্রূপ করিলেন।
9অতএব সদাপ্রভু শলোমনের প্রতি ক্রুদ্ধ হইলেন; কেননা তাঁহার অন্তঃকরণ ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু হইতে বিপথগামী হইয়াছিল, যিনি দুইবার তাঁহাকে দর্শন দিয়াছিলেন, 10এবং এই বিষয় তাঁহাকে আজ্ঞা দিয়াছিলেন, যেন তিনি অন্য দেবগণের অনুগামী না হন; কিন্তু সদাপ্রভু যাহা আজ্ঞা দিয়াছিলেন, তাহা তিনি পালন করিলেন না। 11অতএব সদাপ্রভু শলোমনকে কহিলেন, তোমার ত এই ব্যবহার, তুমি আমার নিয়ম ও আমার আদিষ্ট বিধি সকল পালন কর নাই; এই কারণ আমি অবশ্য তোমা হইতে রাজ্য চিরিয়া লইয়া তোমার দাসকে দিব। 12তথাপি তোমার পিতা দায়ূদের জন্য তোমার বর্তমান কালে তাহা করিব না, কিন্তু তোমার পুত্রের হস্ত হইতে তাহা চিরিয়া লইব। 13যাহা হউক, সমুদয় রাজ্য চিরিয়া লইব না; কিন্তু আমার দাস দায়ূদের জন্য ও আমার মনোনীত যিরূশালেমের জন্য তোমার পুত্রকে এক বংশ দিব।
14পরে সদাপ্রভু শলোমনের একজন বিপক্ষ উৎপন্ন করিলেন; তিনি ইদোমীয় হদদ; ইদোমের রাজবংশে তাঁহার জন্ম হয়। 15দায়ূদ যখন ইদোমে ছিলেন, আর সেনাপতি যোয়াব নিহতদিগকে কবর দিতে উঠিয়া গিয়াছিলেন ও ইদোমের প্রত্যেক পুরুষকে আঘাত করিয়াছিলেন; 16[কারণ যাবৎ যোয়াব ইদোমের সমস্ত পুরুষকে উচ্ছিন্ন না করিলেন, তাবৎ ছয় মাস পর্যন্ত তিনি ও সমস্ত ইস্রায়েল ইদোমে ছিলেন;] 17তৎকালে ঐ হদদ ও তাঁহার সহিত তাঁহার পিতার দাস কয়েক জন ইদোমীয় পুরুষ মিসরে পলায়ন করিয়াছিলেন; তখন হদদ ক্ষুদ্র বালক ছিলেন। 18তাঁহারা মিদিয়ন হইতে উঠিয়া পারণে যান; পরে পারণ হইতে লোক সঙ্গে লইয়া মিসরে গিয়া মিসর-রাজ ফরৌণের নিকটে উপস্থিত হন; তিনি তাঁহাকে এক বাটী দেন, এবং তাঁহার জন্য খাদ্য দেন ও তাঁহাকে ভূমি দান করেন। 19আর হদদ ফরৌণের কাছে অতিশয় অনুগ্রহ পান; এবং ফরৌণ তাঁহার সহিত আপন শ্যালিকার অর্থাৎ তহ্‌পনেষ রাণীর ভগিনীর বিবাহ দেন। 20আর তহ্‌পনেষের ভগিনী তাঁহার জন্য গনুবৎ নামে এক পুত্র প্রসব করেন, এবং তহ্‌পনেষ ফরৌণের বাটীতে তাহার স্তন্য ত্যাগ করান, আর গনুবৎ ফরৌণের বাটীতে ফরৌণের পুত্রদের মধ্যে ছিল। 21পরে যখন হদদ মিসরে শুনিলেন যে, দায়ূদ আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইয়াছেন ও যোয়াব সেনাপতি মরিয়াছেন, তখন হদদ ফরৌণকে কহিলেন, আমাকে বিদায় করুন, আমি স্বদেশে যাই। 22ফরৌণ তাঁহাকে কহিলেন, আমার এখানে তোমার কিসের অভাব হইয়াছে যে, দেখ, তুমি স্বদেশে যাইতে চেষ্টা করিতেছ? তিনি কহিলেন, অভাব হয় নাই, তথাপি কোন প্রকারে আমাকে বিদায় করুন।
23ঈশ্বর শলোমনের আর একজন বিপক্ষ উৎপন্ন করিলেন; তিনি ইলিয়াদার পুত্র রষোণ; সেই ব্যক্তি সোবার রাজা হদদেষর নামক আপন প্রভুর নিকট হইতে পলায়ন করিয়াছিলেন। 24আর যে সময়ে দায়ূদ [সোবার] লোকদিগকে আঘাত করেন, তৎকালে ইনি আপনার নিকটে লোক সংগ্রহ করিয়া দলপতি হইয়াছিলেন। পরে তাঁহারা দম্মেশকে গিয়া সেখানে বাস করিলেন, এবং দম্মেশকে রাজত্ব করিলেন। 25হদদের কৃত অপকার ছাড়া ইনি শলোমনের সমস্ত জীবনকাল ব্যাপিয়া ইস্রায়েলের বিপক্ষ ছিলেন, এবং ইস্রায়েলকে দ্বেষ করিলেন, আর অরামের উপরে রাজত্ব করিলেন।
26আর সরেদা-নিবাসী ইফ্রয়িমীয় নবাটের পুত্র যারবিয়াম শলোমনের দাস ছিলেন; তাঁহার মাতার নাম সরূয়া, তিনি বিধবা; সেই ব্যক্তিও রাজার বিরুদ্ধে হস্ত তুলিলেন। 27রাজার বিরুদ্ধে তাঁহার হস্ত তুলিবার কারণ এই; শলোমন মিল্লো গাঁথিতেছিলেন, ও আপন পিতা দায়ূদের নগরের ভগ্নস্থান বদ্ধ করিয়া দিতেছিলেন। 28আর যারবিয়াম লোকটি বলবান বীর ছিলেন; এবং শলোমন এই যুবা লোকটিকে কার্যদক্ষ দেখিয়া যোষেফ-কুলের সমস্ত ভারের অধ্যক্ষ করেন। 29তৎকালে যারবিয়াম যিরূশালেমের বাহিরে গেলে শীলোনীয় অহিয় ভাববাদী পথে তাঁহার দেখা পাইলেন; অহিয় নূতন বস্ত্র পরিহিত ছিলেন, এবং মাঠে কেবল তাঁহারা দুই জন ছিলেন। 30তখন অহিয় আপন গাত্রের নূতন বস্ত্রখানি ধরিয়া ছিঁড়িয়া বারো খণ্ড করিলেন। 31আর তিনি যারবিয়ামকে কহিলেন, দশ খণ্ড তুমি লও, কেননা ইস্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি শলোমনের হস্ত হইতে রাজ্য চিরিয়া লইব, ও দশ বংশ তোমাকে দিব। 32[কিন্তু আমার দাস দায়ূদের জন্য এবং ইস্রায়েলের সমস্ত বংশের মধ্য হইতে আমার মনোনীত যিরূশালেম নগরের জন্য অবশিষ্ট এক বংশ উহার থাকিবে।] 33কারণ তাহারা আমাকে ত্যাগ করিয়া সীদোনীয়দের দেবী অষ্টোরতের, মোয়াবের দেব কমোশের ও অম্মোন-সন্তানদের দেব মিল্‌কমের কাছে প্রণিপাত করিয়াছে; উহার পিতা দায়ূদের ন্যায় তাহারা আমার দৃষ্টিতে যাহা ভাল, তাহা করণার্থে এবং আমার বিধি ও শাসন সকল পালনার্থে আমার পথে চলে নাই। 34তথাচ আমি উহার হস্ত হইতে সমস্ত রাজ্য লইব না, কিন্তু আমার মনোনীত দাস যে দায়ূদ আমার আজ্ঞা ও বিধি সকল পালন করিত, তাহার জন্য উহাকে যাবজ্জীবন অধ্যক্ষ-পদে রাখিব। 35কিন্তু উহার পুত্রের হস্ত হইতে রাজ্য লইব, এবং তোমাকে দিব, দশ বংশ দিব। 36আর আমার নাম স্থাপনার্থে আমার মনোনীত যে যিরূশালেম নগর, তন্মধ্যে আমার সম্মুখে যেন আমার দাস দায়ূদের প্রদীপ নিত্য থাকে, এই নিমিত্ত উহার পুত্রকে এক বংশ দিব। 37আর আমি তোমাকে গ্রহণ করিব, তাহাতে তুমি আপন প্রাণের সমস্ত বাসনানুসারে রাজত্ব করিবে, ইস্রায়েলের উপরে রাজা হইবে। 38আর যদি তুমি আমার দাস দায়ূদের ন্যায় আমার সমস্ত আদেশে কর্ণপাত কর, এবং আমার বিধি ও আজ্ঞা পালনার্র্থে আমার পথে চল, ও আমার দৃষ্টিতে যাহা ভাল, তাহা কর, তবে আমি তোমার সহবর্তী থাকিব, এবং যেমন দায়ূদের জন্য গাঁথিয়াছি, তেমনি তোমার জন্যও এক দৃঢ় কুল গাঁথিব, এবং ইস্রায়েলকে তোমায় দিব। 39আর এই কারণ আমি দায়ূদের বংশকে অবনত করিব, কিন্তু চিরকালের জন্য নয়।
40অতএব শলোমন যারবিয়ামকে বধ করিতে চেষ্টা করিলেন; কিন্তু যারবিয়াম উঠিয়া মিসরে মিসর-রাজ শীশকের নিকটে পলাইয়া গেলেন, এবং শলোমনের মৃত্যু পর্যন্ত মিসরে থাকিলেন।
41শলোমনের অবশিষ্ট বৃত্তান্ত এবং তাঁহার সমস্ত কর্ম ও জ্ঞানের বিবরণ কি শলোমনের বৃত্তান্ত-পুস্তকে লিখিত নাই? 42শলোমন যিরূশালেমে চল্লিশ বৎসর যাবৎ সমস্ত ইস্রায়েলের উপরে রাজত্ব করিলেন। 43পরে শলোমন আপন পিতৃলোকদের সহিত নিদ্রাগত হইলেন, ও আপন পিতা দায়ূদের নগরে কবরপ্রাপ্ত হইলেন, এবং তাঁহার পুত্র রহবিয়াম তাঁহার পদে রাজা হইলেন।


Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...