যাবুর ৭২: ১৫
============================
যিরমিয় ৬: ২০
=============================
যিহিস্কেল ২৭: ২২
============================
যিরমিয় ৬: ২০
1হে বিন্যামীন-সন্তানগণ, তোমরা যিরূশালেমের মধ্য হইতে পলায়ন কর, তকোয় নগরে তূরী বাজাও, বৈৎ-হক্কেরমে ধ্বজা তুল, কেননা উত্তরদিক্ হইতে অমঙ্গল ও মহাধ্বংস উকি মারিতেছে। 2সুন্দরী সুখভোগিনী সিয়োন-কন্যাকে আমি সংহার করিব। 3মেষপালকগণ আপন আপন পাল সঙ্গে লইয়া তাহার কাছে আসিবে; তাহারা তাহার বিরুদ্ধে চারিদিকে আপন আপন তাম্বু স্থাপন করিবে, প্রত্যেকে আপন আপন স্থানে পাল চরাইবে। 4তাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজন কর; উঠ, আমরা মধ্যাহ্নকালে যাত্রা করি। ধিক্ আমাদিগকে! কেননা দিবাবসান হইতেছে, সন্ধ্যাকালের ছায়া দীর্ঘ হইতেছে। 5উঠ, আমরা রাত্রিযোগে যাত্রা করি, তাহার অট্টালিকা সকল নষ্ট করি। 6বস্তুতঃ বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা বলিয়াছেন, তোমরা বৃক্ষ কাটিয়া যিরূশালেমের বিরুদ্ধে জাঙ্গাল বাঁধ; সেই নগর প্রতিফল পাইবে; তাহার ভিতরে সকলই উপদ্রব। 7যেমন উনুই আপন জল নির্গত করে, তেমনি সে আপন দুষ্টতা নির্গত করে; তাহার মধ্যে দৌরাত্ম্য ও লুটের শব্দ শুনা যায়; পীড়া ও আঘাত নিয়ত আমার দৃষ্টিগোচর রহিয়াছে। 8হে যিরূশালেম, শাসন গ্রহণ কর, পাছে আমার প্রাণ তোমা হইতে বিভিন্ন হয়, পাছে আমি তোমাকে ধ্বংসস্থান করি, নিবাসীবিহীন ভূমি করি।
9বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, উহারা ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশকে শেষ দ্রাক্ষাফলের ন্যায় ঝাড়িয়া ফেলিবে; তুমি দ্রাক্ষাফল সংগ্রহকারীর ন্যায় ঝুড়িতে পুনঃ পুনঃ হাত দেও। 10আমি কাহাকে বলিলে, কাহাকে সাক্ষ্য দিলে, উহারা শুনিবে? দেখ, তাহাদের কর্ণ অচ্ছিন্নত্বক্, তাহারা শুনিতে পায় না। দেখ, সদাপ্রভুর বাক্য তাহাদের টিট্কারির বিষয় হইয়াছে; সেই বাক্যে তাহাদের কিছুই সন্তোষ হয় না। 11আহা! আমি সদাপ্রভুর ক্রোধে পরিপূর্ণ হইয়াছি; সম্বরণ করিতে করিতে ক্লান্ত হইলাম; সড়কে বালকদের উপরে ও যুবকগণের সভার উপরে একসঙ্গে তাহা ঢালিয়া দেও; কারণ, এমন কি, স্বামী ও স্ত্রী, বৃদ্ধ ও জরাতুর সকলেই ধরা পড়িবে। 12আর ভূমি ও স্ত্রীসুদ্ধ তাহাদের বাটী সকল পরের অধিকার হইবে; কারণ, আমি এই দেশনিবাসীদের বিরুদ্ধে আপন হস্ত বিস্তার করিব, ইহা সদাপ্রভু কহেন, 13কেননা তাহারা ক্ষুদ্র ও মহান সকলেই লোভে লুব্ধ, ভাববাদী ও যাজক সকলেই কপটাচার করে। 14আর তাহারা আমার জাতির ক্ষত কেবল একটুমাত্র সুস্থ করিয়াছে; যখন শান্তি নাই, তখন শান্তি শান্তি বলিয়াছে। 15তাহারা ঘৃণার্হ কার্য করিয়াছে বলিয়া কি লজ্জিত হইল? তাহারা মোটেই লজ্জিত হয় নাই, বিষণ্ন হইতেও জানে না; তজ্জন্য তাহারা পতিতগণের মধ্যে পতিত হইবে; আমি যখন তাহাদের প্রতিফল দিব, তখন তাহাদের নিপাত হইবে, ইহা সদাপ্রভু কহেন।
16সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তোমরা পথে পথে দাঁড়াইয়া দেখ; এবং কোন্ কোন্টি চিরন্তন মার্গ, তাহা জিজ্ঞাসা করিয়া বল, উত্তম পথ কোথায়? আর সেই পথে চল, তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে। কিন্তু তাহারা কহিল, আমরা চলিব না। 17আর আমি তোমাদের উপরে প্রহরিগণকে রাখিলাম, [বলিলাম,] ‘তোমরা তূরীধ্বনিতে কর্ণপাত কর;’ কিন্তু তাহারা বলিল, কর্ণপাত করিব না। 18অতএব হে জাতিগণ, শুন; হে মণ্ডলি, তাহাদের মধ্যে কি কি আছে, জ্ঞাত হও। 19হে পৃথিবী, শুন, দেখ, আমিই এই জাতির উপরে অমঙ্গল আনিব, তাহাদের পরিকল্পনাসমূহের ফল বর্তাইব, কারণ তাহারা আমার বাক্যে অবধান করে নাই; আর আমার ব্যবস্থা, তাহারা তাহা হেয়জ্ঞান করিয়াছে। 20শিবা হইতে আমার কাছে কেন ধূপ আইসে? কেন দূর দেশ হইতে মিষ্ট বচ আইসে? তোমাদের হোমবলি সকল আমার গ্রাহ্য নয়, তোমাদের বলিদানও আমার তুষ্টিজনক নয়। 21অতএব সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, আমি এই জাতির সম্মুখে নানা বিঘ্ন স্থাপন করিব, আর পিতারা ও পুত্রেরা একসঙ্গে সেই সকল বিঘ্নে উছোট খাইবে; প্রতিবাসী ও তাহার বন্ধু বিনষ্ট হইবে।
22সদাপ্রভু এই কথা কহেন, দেখ, উত্তর দেশ হইতে একজনসমাজ আসিতেছে, পৃথিবীর প্রান্ত হইতে এক মহাজাতি উত্তেজিত হইয়া আসিতেছে। 23তাহারা ধনুক ও বর্শাধারী, নিষ্ঠুর ও করুণারহিত, তাহাদের রব সমুদ্র-গর্জনের তুল্য, এবং তাহারা অশ্বারোহণে আসিতেছে। অয়ি সিয়োন-কন্যে, তোমারই বিপরীতে যুদ্ধ করণার্থে তাহারা প্রত্যেক জন যোদ্ধার ন্যায় সুসজ্জিত হইয়াছে। 24আমরা এই বিষয়ে জনশ্রুতি শুনিয়াছি, আমাদের হস্ত অবশ হইল; যন্ত্রণা, প্রসবকারিণীর ন্যায় বেদনা, আমাদিগকে ধরিল। 25মাঠে যাইও না, পথে গমন করিও না, কেননা সেখানে শত্রুর খড়্গ, চারিদিকেই ভয়। 26হে আমার জাতির কন্যে, তুমি চট পরিধান কর, ভস্মে লুন্ঠিত হও, একমাত্র পুত্রবিয়োগের জন্য শোকের ন্যায় শোক কর, তীব্র বিলাপ কর; কেননা বিনাশক অকস্মাৎ আমাদের উপরে আসিবে।
27আমি আপন প্রজাগণের মধ্যে তোমাকে পরীক্ষক করিয়া দুর্গরূপে স্থাপন করিয়াছি; যেন তুমি তাহাদের পথ জ্ঞাত হও ও পরীক্ষা কর। 28তাহারা সকলে দারুণ অবাধ্য, পরিবাদ করিয়া বেড়ায়; তাহারা পিত্তল ও লৌহস্বরূপ; তাহারা সকলেই ভ্রষ্টাচারী। 29যাঁতা দগ্ধ হইয়াছে, সীসা অগ্নিতে শেষ হইয়াছে; অনর্থক তাহা খাঁটি করিবার চেষ্টা হইতেছে; কারণ দুষ্টগণকে বাহির করা যাইতেছে না। 30তাহাদিগকে অগ্রাহ্য রৌপ্য বলা যাইবে, কারণ সদাপ্রভু তাহাদিগকে অগ্রাহ্য করিয়াছেন।
=============================
যিহিস্কেল ২৭: ২২
1আবার সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, 2হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি সোরের বিষয়ে বিলাপ কর। 3সোরকে বল, হে সমুদ্রের প্রবেশস্থান-নিবাসিনি, অনেক উপকূলে জাতিগণের বণিক, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, হে সোর, তুমি বলিতেছ, আমি পরমাসুন্দরী। 4সমুদ্রগণের মধ্যস্থলে তোমার স্থান আছে; তোমার নির্মাণকারীরা তোমার সৌন্দর্য সিদ্ধ করিয়াছে। 5তাহারা সনীরীয় দেবদারু কাষ্ঠে তোমার সমস্ত তক্তা প্রস্তুত করিয়াছে, তোমার জন্য মাস্তুল প্রস্তুত করণার্থে লিবানোন হইতে এরস বৃক্ষ গ্রহণ করিয়াছে। 6তাহারা বাশন দেশীয় অলোন বৃক্ষ হইতে তোমার দাঁড় প্রস্তুত করিয়াছে; কিত্তীয় উপকূলসমূহ হইতে আনীত তাশূর কাষ্ঠে খচিত হস্তিদন্ত দ্বারা তোমার তক্তা নির্মাণ করিয়াছে। 7তোমার পতাকা হইবার জন্য মিসর দেশ হইতে আনীত সূচী-কর্মে চিত্রিত মসীনা-বস্ত্র তোমার পাল ছিল; ইলীশার উপকূলসমূহ হইতে আনীত নীল ও বেগুনে বস্ত্র তোমার আচ্ছাদন ছিল। 8সীদোন ও অর্বদ-নিবাসিগণ তোমার দাঁড়ী ছিল; হে সোর, তোমার জ্ঞানবানেরা তোমার মধ্যে তোমার কর্ণধার ছিল। 9গবালের প্রাচীনবর্গ ও জ্ঞানবানেরা তোমার মধ্যে তোমার ছিদ্র-প্রতীকারক ছিল। সমুদ্রগামী সমুদয় জাহাজ ও তাহাদের নাবিকগণ তোমার বাণিজ্যদ্রব্যের বিনিময় করিবার জন্য তোমার মধ্যে ছিল। 10পারস, লূদ ও পূট দেশীয়েরা তোমার সৈন্যসামন্তের মধ্যে তোমার যোদ্ধা ছিল; তাহারা তোমার মধ্যে ঢাল ও শিরস্ত্রাণ টাঙ্গাইয়া রাখিত; তাহারাই তোমার শোভা সমপাদন করিয়াছে। 11অর্বদের লোক তোমার সৈন্যসামন্তের সহিত চারিদিকে তোমার প্রাচীরের উপরে ছিল, যুদ্ধবীরেরা তোমার সকল উচ্চগৃহে ছিল, তাহারা চারিদিকে তোমার প্রাচীরে আপন আপন ঢাল টাঙ্গাইত; তাহারাই তোমার সৌন্দর্য সিদ্ধ করিয়াছে। 12সর্বপ্রকার ধনের প্রাচুর্য প্রযুক্ত তর্শীশ তোমার বণিক ছিল; তাহারা রৌপ্য, লৌহ, দস্তা ও সীসা দিয়া তোমার পণ্য পরিশোধ করিত। 13যবন, তূবল ও মেশক তোমার ব্যবসায়ী ছিল; তাহারা মনুষ্যের প্রাণ ও তৈজসপত্র দিয়া তোমার বাণিজ্যদ্রব্যের বিনিময় করিত। 14তোগর্ম-কুলের লোকেরা ঘোটক, যুদ্ধাশ্ব ও অশ্বতর আনিয়া তোমার পণ্য পরিশোধ করিত। 15দদান-সন্তানেরা তোমার ব্যবসায়ী ছিল, অনেক উপকূল তোমার করায়ত্ত হাট ছিল; তাহারা হস্তিদন্তের শৃঙ্গ ও আব্লুস কাষ্ঠ তোমার মূল্যরূপে আনিত। 16তোমার নির্মিত দ্রব্যের বাহুল্য প্রযুক্ত অরাম তোমার বণিক ছিল; তথাকার লোকেরা তাম্রমণি, বেগুনে ও বুটিদার বস্ত্র, মসীনা-বস্ত্র এবং প্রবাল ও পদ্মরাগমণি দিয়া তোমার পণ্য পরিশোধ করিত। 17যিহূদা এবং ইস্রায়েল-দেশ তোমার ব্যবসায়ী ছিল; তথাকার লোকেরা মিন্নীতের গম, পক্বান্ন, মধু, তৈল ও তরুসার দিয়া তোমার বাণিজ্যদ্রব্যের বিনিময় করিত। 18সর্বপ্রকার ধনবাহুল্য হেতু তোমার নির্মিত দ্রব্যের প্রাচুর্য প্রযুক্ত দম্মেশক তোমার বণিক ছিল, তথাকার লোকেরা হিল্বোনের দ্রাক্ষারস ও শুভ্র মেষলোম আনিত। 19বদান ও যবন উষল হইতে আসিয়া তোমার পণ্য পরিশোধ করিত; তোমার বিনিমেয় দ্রব্যের মধ্যে কান্তলৌহ, কাশ ও দারুচিনি থাকিত। 20দদান রথে বিস্তরণীয় দুলিচা সম্বন্ধে তোমার ব্যবসায়ী ছিল। 21আরব এবং কেদরের অধ্যক্ষেরা সকলে তোমার করায়ত্ত বণিক ছিল, মেষশাবক, মেষ ও ছাগ, এই সকল বিষয়ে তাহারা তোমার বণিক ছিল। 22শিবার ও রয়মার ব্যবসায়ীরাও তোমার ব্যবসায়ী ছিল; তাহারা সর্বপ্রকার শ্রেষ্ঠ গন্ধদ্রব্য ও সর্বপ্রকার বহুমূল্য প্রস্তর এবং স্বর্ণ দিয়া তোমার পণ্য পরিশোধ করিত। 23হারণ, কন্নী, এদন, শিবার এই ব্যবসায়ীরা, এবং অশূর ও কিল্মদ তোমার ব্যবসায়ী ছিল। 24ইহারা তোমার ব্যবসায়ী ছিল; ইহারা অপূর্ব বস্ত্র এবং নীলবর্ণ ও বুটিদার ও নক্শীকৃত শিল্পিত বস্ত্র, রজ্জুবদ্ধ এরস কাষ্ঠময় সিন্দুকে করিয়া, তোমার বিক্রয়স্থানে আনয়ন করিত। 25তর্শীশের জাহাজ সকল দ্রব্য-বিনিময়ে তোমার কাফিলা ছিল; এইরূপে তুমি পরিপূর্ণা ছিলে, সমুদ্রগণের মধ্যস্থলে অতিশয় প্রতাপান্বিতা ছিলে।
26তোমার দাঁড়ীরা তোমাকে প্রশস্ত জলে লইয়া গিয়াছে; পূর্বীয় বায়ু সমুদ্রগণের মধ্যস্থলে তোমাকে ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছে। 27তোমার ধন, তোমার পণ্যদ্রব্যসমূহ, তোমার বিনিমেয় দ্রব্য সকল, তোমার নাবিকগণ, তোমার কর্ণধারেরা, তোমার ছিদ্র-প্রতীকারকগণ ও দ্রব্য বিনিময়কারীরা, এবং তোমার মধ্যবর্তী সমস্ত যোদ্ধা তোমার মধ্যস্থিত জনসমাজের সঙ্গে তোমার পতনের দিনে সমুদ্রগণের মধ্যস্থলে পতিত হইবে। 28তোমার কর্ণধারদের ক্রন্দনের শব্দে উপনগর সকল কমিপত হইবে। 29আর সমুদয় দাঁড়ী, নাবিকগণ, সমুদ্রগামী সমস্ত কর্ণধার আপন আপন জাহাজ হইতে নামিয়া স্থলে দাঁড়াইবে, 30তোমার জন্য উচ্চৈঃস্বর করিবে, তীব্র ক্রন্দন করিবে, আপন আপন মস্তকে ধুলা দিবে ও ভস্মে গড়াগড়ি দিবে। 31আর তাহারা তোমার জন্য মস্তক মুণ্ডন করিবে, ও কটিদেশে চট বাঁধিবে, এবং তোমার জন্য প্রাণের দুঃখে রোদন সহকারে তীব্র বিলাপ করিবে। 32আর তাহারা শোক করিয়া তোমার জন্য বিলাপ করিবে, তোমার বিষয়ে এই বলিয়া বিলাপ করিবে, ‘কে সোরের তুল্য, সমুদ্রের মধ্যস্থানে নিস্তব্ধীকৃতার তুল্য? 33যখন সমুদ্র সকল হইতে তোমার পণ্য দ্রব্য নানা স্থানে যাইত, তখন তুমি বহুসংখ্য জাতিকে তৃপ্ত করিতে; তোমার ধনের ও বিনিমেয় দ্রব্যের বাহুল্যে তুমি পৃথিবীর রাজগণকে ধনী করিতে। 34এখন তুমি সমুদ্র দ্বারা গভীর জলে ভগ্ন হইলে তোমার বিনিমেয় দ্রব্য ও তোমার সমস্ত সমাজ তোমার মধ্যে পতিত হইল। 35উপকূল-নিবাসিগণ সকলে তোমার অবস্থায় বিস্ময়াপন্ন হইয়াছে, ও তাহাদের রাজগণ নিতান্ত উদ্বিগ্ন হইয়াছে, বিকৃতবদন হইয়াছে। 36জাতিগণের মধ্যবর্তী বণিকগণ তোমার বিষয়ে শিস দেয়; তুমি ত্রাসস্বরূপ হইলে, এবং তুমি কোন কালে আর হইবে না।’
======================
শত্রুদের উপরে ইস্রায়েলের জয়লাভ
1সদাপ্রভুর এই বাক্য আমার নিকটে উপস্থিত হইল, 2হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি রোশের, মেশকের ও তূবলের অধ্যক্ষ মাগোগ দেশীয় গোগের দিকে মুখ রাখ, ও তাহার বিরুদ্ধে ভাববাণী বল, 3তুমি বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, হে গোগ, রোশের, মেশকের ও তূবলের অধ্যক্ষ, দেখ, আমি তোমার বিপক্ষ; 4তোমাকে এদিক্ ওদিক্ ফিরাইব, ও তোমার হনূ ফুঁড়িব, আর তোমাকে ও তোমার সমস্ত সৈন্যকে, অশ্বগণকে ও পূর্ণ সজ্জাপরিহিত সমস্ত অশ্বারোহীকে, ঢাল ও ফলকধারী মহাসমাজকে, খড়্গহস্ত সমস্ত লোককে বাহিরে আনিব। 5পারস্য, কূশ ও পূট তাহাদের সঙ্গী হইবে; ইহারা সকলে ঢাল ও শিরস্ত্রাণধারী; 6গোমর ও তাহার সকল সৈন্যদল, উত্তরদিকের প্রান্তবাসী তোগর্মের কুল ও তাহার সকল সৈন্যদল, এই নানা মহাজাতি তোমার সঙ্গী হইবে। 7প্রস্তুত হও, আপনাকে প্রস্তুত কর- তুমি ও তোমার নিকটে সমাগত তোমার সমস্ত সমাজ- এবং তুমি তাহাদের রক্ষক হও। 8বহুদিন অতীত হইলে তোমার তত্ত্ব লওয়া যাইবে; শেষের বৎসরসমূহে তুমি এই দেশে, খড়্গ হইতে পুনরানীত এবং অনেক জাতি হইতে সংগৃহীত লোকদের নিকটে, ইস্রায়েলের চিরোৎসন্ন পর্বতসমূহে আসিবে; তাহারা জাতিগণের মধ্য হইতে বাহিরে আনীত হইয়াছে, এবং তাহারা সকলেই নির্ভয়ে বাস করিবে। 9কিন্তু তুমি উঠিবে, ঝঞ্ঝার ন্যায় আসিবে, মেঘের ন্যায় তুমি ও তোমার সহিত তোমার সকল সৈন্যদল ও অনেক জাতি সেই দেশ আচ্ছাদন করিবে। 10প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, সেই দিন নানা বিষয় তোমার মনে পড়িবে, এবং তুমি অনিষ্টের সঙ্কল্প করিবে। 11তুমি কহিবে, আমি সেই অপ্রাচীর গ্রামে পূর্ণ দেশের বিরুদ্ধে যাত্রা করিব, আমি সেই শান্তিযুক্ত লোকদের কাছে যাইব, তাহারা নির্ভয়ে বাস করিতেছে; তাহারা সকলে প্রাচীরহীন স্থানে বাস করিতেছে; এবং তাহাদের অর্গল কি কবাট নাই। 12[তোমার অভিপ্রায় এই] যে, লুট কর ও দ্রব্য হরণ কর; [পূর্বে] উৎসন্ন সেই বসতিস্থান সকলের প্রতি এবং জাতিগণের মধ্য হইতে সংগৃহীত, আর পশু ও ধনপ্রাপ্ত এবং পৃথিবীর নাভিনিবাসী জাতির প্রতি হস্ত বিস্তার করা। 13শিবা, দদান ও তর্শীশের বণিকগণ এবং তথাকার সকল যুবসিংহ তোমাকে বলিবে, তুমি কি লুট করিবার জন্য আসিলে? দ্রব্য হরণার্থে কি আপনার নিকটে তোমার এই জনসমাজকে একত্র করিলে? স্বর্ণ ও রৌপ্য লইয়া যাওয়া, পশু ও ধন হরণ করা, বিস্তর লুট করা, কি তোমার অভিপ্রায়?
14অতএব, হে মনুষ্য-সন্তান, তুমি ভাববাণী বল, গোগকে বল, প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, সেই দিন যখন আমার প্রজা ইস্রায়েল নির্ভয়ে বাস করিবে, তখন তুমি কি তাহা জ্ঞাত হইবে না? 15আর তুমি আপন স্থান হইতে, উত্তরদিকের প্রান্ত হইতে, আসিবে, এবং অনেক জাতি তোমার সঙ্গে আসিবে; তাহারা সকলে ঘোড়ায় চড়িয়া আসিবে, মহাসমাজ ও বিক্রমী সৈন্যসামন্ত হইবে। 16আর তুমি মেঘের ন্যায় দেশ আচ্ছাদন করিবার জন্য আমার প্রজা ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যাত্রা করিবে; উত্তরকালে এইরূপ ঘটিবে; আমি তোমাকে আমার দেশের বিরুদ্ধে আনিব, যেন জাতিগণ আমাকে জানিতে পারে, কেননা তখন, হে গোগ, আমি তাহাদের দৃষ্টিগোচরে তোমাতে পবিত্র বলিয়া মান্য হইব। 17প্রভু সদাপ্রভু এই কথা কহেন, তুমি কি সেই ব্যক্তি, যাহার বিষয়ে আমি পূর্বকালে আমার দাসগণ দ্বারা, অর্থাৎ যাহারা সেই সময়ে অনেক বৎসর ব্যাপিয়া ভাববাণী বলিত, সেই ইস্রায়েলীয় ভাববাদিগণ দ্বারা এই কথা কহিতাম যে, আমি তাহাদের বিরুদ্ধে তোমাকে আনাইব? 18সেই দিন যখন গোগ ইস্রায়েল-দেশের বিরুদ্ধে আসিবে, তখন আমার কোপাগ্নি আমার নাসিকায় উঠিবে, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন। 19কারণ আমি নিজ অন্তর্জ্বালায় ও রোষানলে বলিয়াছি, অবশ্য সেই দিন ইস্রায়েল-দেশে মহাকমপ হইবে। 20তাহাতে সমুদ্রের মৎস্যগণ, আকাশের পক্ষীগণ, বনের পশুগণ, ভূচর সরীসৃপ সকল এবং ভূতলস্থ মনুষ্য সকল আমার সাক্ষাতে কমপমান হইবে, পর্বত সকল উৎপাটিত হইবে, শৈলাগ্র সকল পতিত হইবে, এবং সমস্ত প্রাচীর ভূমিসাৎ হইবে। 21আর আমি আপনার সকল পর্বতে তাহার বিরুদ্ধে খড়্গ আহ্বান করিব, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন; প্রত্যেকের খড়্গ তাহার ভ্রাতার বিরুদ্ধ হইবে। 22আর আমি মহামারী ও রক্ত দ্বারা বিচারে তাহার সহিত বিবাদ করিব, এবং তাহার উপরে, তাহার সকল সৈন্যদলের উপরে ও তাহার সঙ্গী অনেক জাতির উপরে প্লাবনকারী ধারাসমপাত ও বড় বড় করকা, অগ্নি ও গন্ধক বর্ষণ করিব। 23আর আমি আপনার মহত্ত্ব ও পবিত্রতা প্রকাশ করিব, বহুসংখ্যক জাতির সাক্ষাতে আপনার পরিচয় দিব;
তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু।
===============================
ইয়োবের উত্তর
1পরে ইয়োব উত্তর করিয়া কহিলেন,
2হায়, যদি আমার মনস্তাপ তৌল করা হইত,
যদি আমার বিপদ তুলায় পরিমিত হইত,
3তবে তাহা সমুদ্রের বালি হইতেও ভারী হইত,
এই জন্য আমার বাক্য অসংলগ্ন হইয়া পড়ে।
4কারণ সর্বশক্তিমানের বাণ সকল আমার ভিতরে প্রবিষ্ট,
আমার আত্মা সেই সকলের বিষ পান করিতেছে,
ঈশ্বরীয় ত্রাসদল আমার বিরুদ্ধে শ্রেণীবদ্ধ।
5বনগর্দভ ঘাস পাইলে কি চিৎকার করে?
গরু জাব পাইলে কি রব করে?
6যাহার স্বাদ নাই,
তাহা কি লবণ বিনা ভোজন করা যায়?
ডিম্বের লালার কি কিছু আস্বাদ আছে?
7আমার প্রাণ যাহা স্পর্শ করিতে অসম্মত,
তাহাই আমার ঘৃণিত ভক্ষ্যস্বরূপ হইল।
8আঃ! আমি যেন বাঞ্ছনীয় বিষয় পাইতে পারি,
ঈশ্বর যেন আমার অপেক্ষণীয় বিষয় আমাকে দেন,
9হাঁ, ঈশ্বর অনুগ্রহ করিয়া আমাকে চূর্ণ করুন,
হস্ত প্রসারণ করিয়া আমাকে কাটিয়া ফেলুন;
10তবু তখনও আমার সান্ত্বনা থাকিবে,
নির্মম যাতনায়ও আমি উল্লাস করিব,
কারণ আমি পবিত্রতমের বাক্য সকল অস্বীকার করি নাই।
11আমার বল কি যে, প্রতীক্ষা করিতে পারি?
আমার পরিণাম কি যে, সহিষ্ণু হইতে পারি?
12আমার বল কি প্রস্তরের বল?
আমার মাংস কি পিত্তলের?
13আমার দ্বারা কি আমার আর উপকার হইতে পারে?
আমা হইতে কি বুদ্ধিকৌশল দূরীকৃত হয় নাই?
14শীর্ণ লোকের প্রতি বন্ধুর দয়া করা কর্তব্য,
পাছে সে সর্বশক্তিমানের ভয় ত্যাগ করে।
15আমার ভ্রাতৃগণ স্রোতের ন্যায় বিশ্বাসঘাতক,
তাহারা স্রোতমার্গস্থ প্রণালীর ন্যায় চঞ্চল।
16সেই স্রোত হিম হেতু কৃষ্ণবর্ণ হয়,
তুষার পড়িয়া তাহার মধ্যে লীন হয়;
17কিন্তু উত্তপ্ত হইবামাত্র তাহা লুপ্ত হয়,
গ্রীষম হইলে তাহা স্বস্থান হইতে শুষিয়া যায়।
18সেই পথের বণিকদল পথ ছাড়ে,
তাহারা মরুস্থানে গিয়া বিনষ্ট হয়।
19টেমার বণিকদল দৃষ্টিপাত করিল,
শিবার পথিকদল সেই সকলের অপেক্ষা করিল।
20তাহারা প্রত্যাশা করাতে লজ্জিত হইল,
সেখানে আসিলে তাহারা হতাশ হইল।
21বস্তুতঃ এখন তোমরা কিছুই নও;
ত্রাস দেখিয়া ভয় পাইয়াছ।
22আমি কি বলিয়াছিলাম,
আমাকে কিছু দেও,
তোমাদের সঙ্গতি হইতে আমার জন্য ভেট দেও,
23বিপক্ষের হস্ত হইতে আমাকে রক্ষা কর,
দুর্দান্তদের হস্ত হইতে আমাকে মুক্ত কর?
24আমাকে শিক্ষা দেও, আমি নীরব হইব;
আমাকে বুঝাইয়া দেও, কিসে আমি প্রমাদে পড়িয়াছি।
25ন্যায্য বাক্য কেমন প্রবল!
কিন্তু তোমাদের তর্কে কি দোষ ব্যক্ত হয়?
26তোমরা কি শব্দের দোষ ধরিবার সঙ্কল্প করিতেছ?
নিরাশ ব্যক্তির বাক্য ত বায়ুর তুল্য।
27তোমরা ত অনাথের জন্য গুলিবাঁট করিবে,
তোমাদের বন্ধুকে বিক্রয় করিবে।
28এখন অনুগ্রহ করিয়া আমার প্রতি দৃষ্টিপাত কর,
আমি তোমাদের সাক্ষাতে মিথ্যা কহিব না।
29তোমরা ফিরিয়া যাও, অন্যায় না হউক;
আমি বলি, ফিরিয়া যাও, আমার পক্ষ ন্যায্য।
30আমার জিহ্বাতে কি অন্যায় আছে?
আমার রসনা কি বিপাকের স্বাদ বুঝে না?
No comments:
Post a Comment