প্রশ্ন :
আসসালামু আলাইকুম। আমি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি। প্রবিডিয়েন্ট ফান্ড এ আমার ৪ হাজার টাকা কেটে রাখে প্রতি মাসে। বছরে ৪৮,০০০ টাকা হয়। বর্তমানে ৫ লক্ষ টাকার উপরে আছে। আমার কি যাকাত দিতে হবে?
উত্তর :
ওয়া আলাইকুম আস সালাম।
১) মনে করুন, আপনাকে বাধ্যতামূলক কাটতে হবে ১০০০ টাকা। তাহলে এই একহাজার টাকায় প্রভিডেন্ট ফান্ডে যে লাভ হবে, তা সুদ হবে না। তার প্রবৃদ্ধি করে সরকার মোট যা যোগ করবে ভোগ ব্যবহার করা সম্পূর্ণ জায়েজ। এবং হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রভিডেন্ট ফান্ডে থাকা কালীন এই সমুদয় টাকার কোনো যাকাত দিতে হবে না।
২) এখন আপনি মাসে কাটেন চার হাজার টাকা। তাহলে আপনার বাড়তি যে ৩০০০ টাকা জমা রাখছেন, সেটার ক্ষেত্রে যে সরকার যে লাভ দেবে, তার আপনার জন্য সুদ হবে। এবং এই বাড়তি টাকা ভোগ ব্যবহার করা আপনার জন্য হারাম হবে। এছাড়া ৩০০০ টাকা করে যা জমেছে তার উপর আপনাকে যাকাত দিতে হবে। এবং ৩০০০ টাকা করে জমার কারণে যে সুদ পেয়েছেন, তা গরীব মিসকিনকে বিনা সওয়াবের নিয়তে দিয়ে দিতে হবে।
এখন ধরুন, আপনার বাধ্যতামূলক কর্তন হিসেবে জমা হয়েছে ১০০,০০০ (এক লক্ষ ) টাকা। তাহলে এই এক লক্ষ টাকার কোনো যাকাত দিতে হবেনা এবং এর উপরে যে লভ্যাংশ পেয়েছেন, তাও আপনার জন্য হালাল।
আর বাকী টাকার উপরে আপনাকে যাকাত দিতে হবে। যেমন ধরেন, ৩০০০ টাকা করে জমানোর ফলে আপনার জমেছে ৩,৫০,০০০ (তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ) টাকা। এই টাকার উপর আপনাকে যাকাত দিতে হবে।
বাকী, ৩০,০০০/ (ত্রিশ হাজার ) টাকার ১০,০০০ টাকা মনে করি আপনার ঐ আসল একলক্ষ টাকার উপর লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে। বাকী, যে ২০,০০০ টাকা, মনে করি এটা আপনার ঐ ৩,৫০,০০০ (তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ) টাকার লভ্যাংশ। তাহলে, এটা আপনার জন্য হারাম।
এখন আপনাকে যা করতে হবে,
১) ৩,৫০,০০০ (তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ) টাকার যাকাত আদায় করবেন।
২) আপনার নিজের কাছ থেকে আরো ২০,০০০ টাকা গরীব দু:খিকে বিনা সওয়াবের নিয়তে দান করে দেবেন। তাহলে ফান্ডের ২০,০০০ টাকা আপনার নিজের হয়ে গেল।
৩) এরপর থেকে শুধুমাত্র যে বাধ্যতামূলক টাকা প্রভিডেন্ট ফান্ডে কাটতে হয়, শুধুমাত্র ততটুকুই কাটাবেন। তাতে যে লভ্যাংশ দেওয়া হয়, তা সুদ হবেনা, এবং তা নিসাব পরিমাণ হলে তার যাকাতও দিতে হবেনা। শুধুমাত্র, যখন টাকা হাতে পাবেন, তখন ঐ বৎসর থেকে লভ্যাংশ সহ পুরো টাকার উপর যাকাত দিতে হবে।
কিন্তু বাধ্যতামূলক এর চেয়ে বাড়তি কাটলে, সেই বাড়তি টাকার লভ্যাংশ সুদ হবে, এবং বাড়তি টাকা নিসাব পরিমাণ হলে তার যাকাতও দিতে হবে।
=======================
প্রভিডেন্ট ফান্ডের যাকাতের নীতিমালা:
(০১)
★প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাধ্যতামূলকভাবে চাকরিজীবীর বেতনের যে অংশ প্রভিডেন্ট ফান্ডে কেটে রাখা হয় তার উপর সুদের নামে অতিরিক্ত যা দেওয়া হয় তা চাকরিজীবীর জন্য গ্রহণ করা জায়েয আছে। এটাকে সুদ বলা হলেও শরীয়তের দৃষ্টিতে তা সুদ নয়।
,
আর প্রভিডেন্ট ফান্ডে বাধ্যতামূলক অংশের অতিরিক্ত আরো টাকা নিজ থেকে কাটানো জায়েয নেই। কেউ কাটালে এ টাকার উপর যা অতিরিক্ত দেওয়া হবে তা নাজায়েয ও সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
,
তবে কেহ যদি বাধ্যতামূলক অংশের অতিরিক্ত টাকা জমা করে,তাহলে তাহা বৈধ হবেনা। এটির কারণে সুদি চুক্তির গুনাহ হবে।
এখন সম্ভব হলে কর্তব্য হবে, বাধ্যতামূলকের অতিরিক্ত যা জমা করেছে, তার সুদসহ উঠিয়ে ফেলা এবং এই সুদ সওয়াবের নিয়ত ব্যতীত গরীব-মিসকীনকে সদকা করে দেওয়া। আর এখন উঠানো সম্ভব না হলে চাকরি শেষে যখন সব টাকা উঠাবেন তখন হলেও ঐচ্ছিক জমাকৃত অংশের সুদ সদকা করে দিতে হবে। আর নিজ বেতনের জমাকৃত অংশ আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।
,
প্রকাশ থাকে যে, বাধ্যতামূলক প্রভিডেন্ট ফান্ডের মূল ও অতিরিক্ত হস্তগত হওয়ার আগ পর্যন্ত তা যাকাতযোগ্য সম্পদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই তা হস্তগত হওয়ার পর বিগত বছরের যাকাত দিতে হবে না।
আর আপনি স্বেচ্ছায় যে এক লক্ষ টাকা জমা করেছিলেন এ টাকার যাকাত জমার বছর থেকেই দিতে হবে। এ টাকার অতিরিক্তটা যাকাতযোগ্য নয়; বরং তা পুরোটাই সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকাযোগ্য।
(মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদীস ২৫১১; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/৪৬৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭; ইমদাদুল আহকাম ৩/৪৮০; জাওয়াহিরুল ফিকহ ৩/২৫৮)
★প্রভিডেন্ট ফান্ডে যদি সরকারীভাবে বেতন থেকে কেটে রেখে দেয়া হয়, তা উঠিয়ে ফেলার কোন সুযোগ যদি সরকারী কর্মচারীর না থাকে, তাহলে উক্ত ফান্ডের জমা কৃত টাকার উপর যাকাত আসবে না। যেহেতু উক্ত টাকার মালিকই এখনো পর্যন্ত উক্ত চাকরিজীবি হচ্ছে না।
পক্ষান্তরে যদি স্বেচ্ছায় প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা জমা রাখে। অর্থাৎ ইচ্ছে করলেই উক্ত চাকরিজীবি জমাকৃত টাকা উঠিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়, তাহলে উক্ত টাকার উপর যাকাত আসবে। নতুবা আসবে না।
★প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমাকৃত টাকা খরচ করার ব্যাপারে মালিকের স্বাধীনতা থাকলে অর্থাৎ যেকোন সময়ে উঠানো সম্ভব হলে যাকাত দিতে হবে। আর স্বাধীনতা না থাকলে যখন পাবে তখন সব টাকার যাকাত দিতে হবে। কারণ যাকাত বের করার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে- সম্পদের উপর মালিকের স্বাধীনতা থাকা।
ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩৯৫ পৃঃ।
(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)
------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
No comments:
Post a Comment