ইসলামে মহিলাদের সাক্ষ্য

 প্রশ্ন-বিস্তারিত: দুই মহিলার সাক্ষ্য দ্বারা কিসাস সংগঠন হবে কি??

উত্তর : আসলে এ ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। সাধারণত নারীগণ আবেগপ্রবণ, এবং যে কোনো বিষয় দ্বারা খুব সহজেই প্রভাবিত হতে পারেন, তাদেরকে কেউ প্রভাবিত করে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়াতে পারেন, পুরুষগণ যতটুকু ঋজু স্বভাবের হন, মেয়েরা তা হননা, এজন্যই নারীদের সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে এবং তা গ্রহণযোগ্য হওয়ার ব্যাপারে কিছু শর্ত রয়েছে। আর যারা গ্রহণযোগ্য হওয়ার ব্যাপারে মত পোষণ করেন, তাদের যুুক্তি হলো, হযরত আয়েশার একক সাক্ষ্য (হাদীস) গ্রহণ যোগ্য । তার থেকে প্রায় ২২২০ টি হাদীস গ্রহণ করা হয়েছে, যা শরীয়তের নিয়ম কানুন হিসেবে প্রযোজ্য হয়। তাছাড়া, চাদ দেখার ক্ষেত্রেও একজন নারী সাক্ষ্যের গ্রহণযোগ্যতার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং, যে ঘরে একজন স্বামী স্ত্রী আছে, কোনো দুরর্বৃত্ত সেই ঘরে প্রবেশ করে, স্বামীকে হত্যা করলো, এখন স্ত্রী ছাড়া তো আর কোনো সাক্ষী নেই । সেক্ষেত্রে সেই স্ত্রীর সাক্ষ্য কেন গ্রহণ করা হবেনা ? অথবা, এক বাড়িতে শুধু ননদ আর ভাবি আছে। বাড়িতে কোনো পুরুষ নেই, সবাই কাজে গেছে। ইতোমধ্যে, কোনো ব্যাক্তিকে পিছনের দরজা দিয়ে নিয়ে এসে ননদ জেনা করলো, এবং ভাবি কোনো ভাবে তা দেখে ফেলল, অথবা, কোনো পুরুষ ধর্ষণ করলো, সেখানে একজন মহিলা ছাড়া আর কোনো সাক্ষী নেই, এসব ক্ষেত্রে একজন মহিলার সাক্ষ্য কেন গ্রহণ করা হবেনা ? তবে, শরীয়তের দৃষ্টিতে একজন কাজী নিজে তদন্ত করে এবং সব কিছু জেনে বুঝে বিচারের ফায়সাল দিতে পারেন। যেমন: হযরত উমর রা: জেনার এক বিচারে চারজন সাক্ষী থাকার পরেও সে ব্যাক্তিকে বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন। কারণ, যে মহিলার সাথে জেনার অপবাদ দেওয়া হয়েছিল, সেই মহিলা, এবং ঐ ব্যাক্তির নিজের স্ত্রী প্রায় একই রকম দেখতে । তাই হযরত উমর ঐ ব্যাক্তিকে বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন। সুতরাং, বলা যায়, বিভিন্ন মামলা এবং তার অবস্থার প্রেক্ষিতে বিচারকের নিজস্ব কিছু ক্ষমতা থাকা উচিত, যাতে পরিস্থিতি সাপেক্ষে সঠিক ফায়সালা তিনি দিতে পারেন। ওয়াল্লাহু আ’লাম।

-----------------------------------------------


একজন পুরুষের সাক্ষীর বিকল্পে দুজন নারীর সাক্ষ্য কেন বলল ইসলাম ? নারীদের কি জ্ঞান পুরুষের অর্ধেক ?

প্রশ্নঃ একজন পুরুষের সাক্ষীর বিকল্পে দুজন নারীর সাক্ষ্য কেন বলল ইসলাম ? নারীদের কি জ্ঞান পুরুষের অর্ধেক ?

লিখেছেনঃ এম ডি আলী

উত্তরঃ বাহ্যিক দৃষ্টিতে সাক্ষীদানের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের যে বৈষম্য দেখা যায় তা বিন্দুমাত্রও লিঙ্গ বৈষম্যের কারনে নয় । বরং সেটা ইসলামের বিবেচনায় সমাজ নারী ও পুরুষের প্রকৃতি ও ভূমিকার পার্থক্যের জন্য । তাই আসুন প্রথমে উক্ত আয়াতটি সম্পূর্ণ জেনে নেইঃ

* সুরা বাকারা ২:২৮২ = হে ইমানদারগণ যদি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য তোমরা একে অপরের সাথে লেনদেন করো তাহলে তা লিখে রাখো । অতপর তোমাদের নিজেদের মধ্যের দুজন পুরুষকে সাক্ষী বানাও । তখন যদি দুজন পুরুষের আয়োজন না করা যায় তাহলে একজন পুরুষ ও যাদের সাক্ষীর ব্যাপারে তোমরা আস্থাশীল এমন দুজন নারী বেছে নেও যে একজন ভুল করলে অন্যজন স্মরণ করিয়ে দিতে পারে ।

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে ফি যিলাযিল কুরানের খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪০১ এ বলা হয়েছেঃ বিশেষ কোন পরিস্থিতিতে দুইজন পুরুষ সাক্ষী পাওয়া দুর্লভও হতে পারে এই ক্ষেত্রে ইসলামের আইন কাজটি আরও সহজ করার জন্য নারীদেরকেও সাক্ষ্য দেয়ার জন্য তলব করে । ইসলামের আইন পুরুষদের তলব করে শুদু এই জন্য যে একটি সুস্থ স্বাভাবিক মুসলিম সমাজে পুরুষরাই সাধারনত সামাজিক কর্মকাণ্ড সম্পাদন করে থাকে ।

তাফসীরে ফি যিলাযিল কুরানের খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪০২ এ বলা হয়েছেঃ অবশ্য দুই জন পুরুষ পাওয়া না গেলে একজন পুরুষ এবং দুইজন নারীর সাক্ষী দিতে হবে । এখানে একটি প্রশ্ন আসে যে, দুইজন কেন নারী সাক্ষ্য দিবে ? এর কারন হলঃ একজন ভুলে গেলে অন্যজন যাতে স্মরণ করিয়ে দেয় । ভুলে যাওয়ার একাধিক কারন থাকতে পারে। চুক্তির বিষয় নারীর জ্ঞান কম থাকাও একটি কারন বটে, অভিজ্ঞতা কম থাকার কারনে চুক্তির সব বিষয় সম্পর্কে তার জানা নাও থাকতে পারে এটা স্বাভাবিক একটি ব্যাপার । তাই প্রয়োজনের সময় নিরভুল সাক্ষ্য দেয়ার জন্য যতটা পরিষ্কার বুঝ দরকার একজন নারীর তা নাও থাকতে পারে । এই ক্ষেত্রে একে ওপরকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে সকল বিষয়ে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে । আরেকটি কথা হল নারীরা নমনীয় স্বভাবের হয় আবার বেশি আবেগ প্রবন হয় অনেক সময় আর চুক্তি বিষয় গুলা একটু শক্ত মানুষ হয়েই করতে হয় তাই একজন নারীর যেন ধোঁকার স্বীকার না হয় তাই তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে আরেকজন নারীর দরকার । এটা একটা সেফটির মতন অনেকটা ।

এই বিষয় হাফেজ মুনির উদ্দিন আহমেদ এর "সাক্ষীর কাঠগড়ায় নারী" বইটি পড়তে পারেন । 

খেয়াল করুন আয়াতটি ব্যবসা টাকা পয়সা লেনদেন সংক্রান্ত । এসব ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের মধ্যে একটি লিখিত চুক্তির আদেশ দেয়া হয়েছে এবং সেখানে দুজন সাক্ষীর কথা বলা হয়েছে আর সে দুজনই পুরুষ হতে হবে কিন্তু যদি আস্থাভাজন দুজন পুরুষের মানুষের ব্যাবস্থা না করা যায় কেবল তখন অন্ততঃ একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা থাকতে হবে ।আর্থিক লেনদেন বিষয় যেখানে নারীরা বিজনেস সম্পর্কে অথবা যে নারীরা আর্থিক সংক্রান্ত লেনদেন বুঝে কম তাদের ক্ষেত্রে একজন পুরুষের সাক্ষীর বিকল্প হিসেবে দুইজন নারীর সাক্ষীকে রাখা হয়েছে ।

এখন প্রশ্ন আসতে পারেঃ যদি একজন নারী দক্ষ হয় অথবা পুরুষ আর্থিক সংক্রান্ত লেনদেন কম বুঝে সে ক্ষেত্রে কি সমাধান ? এর উত্তর সহজ । তাহলে উক্ত পুরুষ নারীর থেকে পরামর্শ নিতে পারবে কোন সমস্যা হবে না ।

= একজন পুরুষের সাক্ষীর বিকল্প দুজন নারীর সাক্ষ্য সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য না । সাক্ষী প্রদান করার ক্ষেত্রে কুরানের কিছু আয়াত আছে যেখানে নারী এবং পুরুষের পার্থক্য বা তফাৎ করা হয়নি । যেমনঃ

১/ উত্তরাধিকার ওসিয়ত করার ক্ষেত্রে সাক্ষী হিসেবে দুজন ন্যায়পরায়ন ব্যাক্তির কথা বলা হয়েছে । সুরা মায়দা ৫:১০৬= তোমাদের মধ্যে কেউ যখন মৃত্যুর দুয়ারে পৌছায় তখন ওসিয়ত করলে হলে তোমাদের মধ্যে থেকে সাক্ষী রেখো । তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে দুজন ন্যায়পরায়ন ব্যাক্তি অথবা বাইরের ।

২/ তালাকের ক্ষেত্রে দুজন ন্যায়পরায়ন সাক্ষীর কথা বলা হয়েছে । সুরা তালাক ৬৫:২ = সাক্ষীর জন্য তোমাদের মধ্য থেকে দুজন ন্যায়পরায়ন ব্যাক্তিকে নাও ।

৩/ নারীর প্রতি ব্যভিচারের অভিযোগ করা হলে দাবী কারীর পক্ষে চারজন সাক্ষী দাড় করাতে হবে। সুরা নুর ২৪:৪ = যারা চরিত্রবান নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে তারপর তারা চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে পারবে না (অভিযোগ প্রমানের জন্য) তাহলে তাদেরকে আশিবার বেত্রাঘাত করো এবং আর কখনোই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না । আর এরাই হল ফাসেক ।

৪/ কুরআন পরিষ্কার করে দিয়েছে একজন নারীর সাক্ষী একজন পুরুষের সমান। সুরা নুর ২৪:৬ = যারা তাদের স্ত্রীদের সম্পর্কে অভিযোগ তুলবে অথচ তাদের কাছে তাদের নিজেদের ছাড়া অন্যকোন সাক্ষ্যদাতা নাই তাহলে তাদের একজনের সাক্ষ্যই চারবার আল্লাহ্‌র নামে শপথ করে বললে গ্রহণ যোগ্য হবে ।

৫/ হযরত আয়েশা (রা) এর একক সাক্ষীই হাদিসের বিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে গ্রহণ যোগ্যতা পেয়েছে । হযরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত ২২২০টি  হাদিস শুধুমাত্র তাঁর একার উপরেই বিশুদ্ধতার প্রমান । তিনি একজন নারী এবং  হাজার হাদিস বর্ণনা করেছেন । একজন নারীর সাক্ষীর যে যোগ্যতা আছে কাজের ক্ষেত্র অনুযায়ী এটাই বিশাল প্রমান হিসেবে বলা যায় ।

৬/ চাঁদ দেখার ব্যাপারে একজন ন্যায়পরায়ন নারীর সাক্ষীই এনাফ । এখানে মজার ব্যাপার আছে খেয়াল করেন । ইসলামের একটি স্তম্ভ রোজার কার্যকারিতার ব্যাপার সমগ্র মুসলিম জনগোষ্ঠী মাত্র একজন নারীর সাক্ষীর উপরেই নির্ভর করতে পারে ।

৭/ আবার কোন কোন ক্ষেত্রে শুদুমাত্র নারীর সাক্ষীই গ্রহণযোগ্য সেখানে পুরুষের কোন ভূমিকা নাই । যেমন কোন নারীর মৃতদেহের গোসল করানোর ক্ষেত্রে সাক্ষী শুদুমাত্র একজন নারীর পক্ষেই হওয়া সম্ভব ।

প্রশ্নঃ একজন নারীর জ্ঞান কি পুরুষের অর্ধেক ?

উত্তরঃ এই বিষয় হাদিস হলঃ

* ihadis.com, সহিহ বুখারি, হাদিস ৩০৪, সহিহ হাদিসঃ আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একবার ঈদুল আযহা অথবা ঈদুল ফিতরের সালাত আদায়ের জন্য আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেনঃ হে মহিলা সমাজ! তোমার সদাক্বাহ করতে থাক। কারণ আমি দেখেছি জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই অধিক। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেনঃ কী কারণে, হে আল্লাহ্‌র রসূল? তিনি বললেনঃ তোমরা অধিক পরিমানে অভিশাপ দিয়ে থাক আর স্বামীর অকৃতজ্ঞ হও। বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও একজন সদাসতর্ক ব্যক্তির বুদ্ধি হরণে তোমাদের চেয়ে পারদর্শী আমি আর কাউকে দেখিনি। তারা বললেনঃ আমাদের দ্বীন ও বুদ্ধির ত্রুটি কোথায়, হে আল্লাহ্‌র রসূল? তিনি বললেনঃ একজন মহিলার সাক্ষ্য কি একজন পুরুষের সাক্ষ্যের অর্ধেক নয়? তারা উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ’। তখন তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে তাদের বুদ্ধির ত্রুটি। আর হায়েয অবস্থায় তারা কি সালাত ও সিয়াম হতে বিরত থাকে না? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে তাদের দ্বীনের ত্রুটি।

* ihadis.com, সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ২৬৫৮, সহিহ হাদিসঃ আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নারীদের সাক্ষ্য কি পুরুষদের সাক্ষ্যের অর্ধেক নয়? উপস্থিতরা বললো, অবশ্যই অর্ধেক। তিনি বলেন, এটা নারীদের জ্ঞানের ক্রটির কারণেই।

উপরের হাদিস গুলো মনোযোগের সাথে পড়লে আমরা যা বুঝতে পারিঃ

১/ নারীরা জাহান্নামে বেশি যাবে কারন তারা মেক্সিমাম অভিশাপ দিয়ে থাকে , স্বামীর কথা অমান্য করে ।

২/ নারীদের বুদ্ধি ও দ্বীনের ব্যাপারে ত্রুটি আছে ।

৩/ নারীদের এমন ক্ষমতা আছে যে নিজেদের থেকে বেশি দক্ষ একজন মানুষকেও বশ করতে পারে ।

৪/ একজন নারীদের সাক্ষী একজন পুরুষের সাক্ষীর অর্ধেক। হাদিসেই বলা আছে বুদ্ধির ত্রুটির কারনে (সব ক্ষেত্রে নয় বিস্তারিত উপরে লেখা আছে)

৫/ দ্বীনের ত্রুটির জন্য হায়েজ উল্লেখ করেছেন নবী মুহাম্মদ (সা) ।

৬/ নারীরা বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারবে না এই কথা উপরের হাদিসে কথাও নাই ।

৭/ নারীরা জাহান্নামে যেই কারনে যাবে সেই কারন গুলি যদি নারীদের মধ্যে না থাকে তাহলে নারীরা জাহান্নামে যাবে না ।

৮/ আর নারীদের হায়েজ দ্বীনের ত্রুটি বলা হয়েছে এর মানে এই না যে নারীরা আল্লাহ্‌র কাছে প্রিয় হতে পারবে না ।

৯/ সুরা ফাতির ৩৫:২৮ = বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে । - এখানে নারী যদি আল্লাহ্‌কে বেশি ভয় করে তাহলে নারী একজন পুরুষ থেকে আল্লাহর বেশি প্রিয় হতে পারবে যা একজন কম জ্ঞানী পুরুষ হতে পারবে না ।

১০/ একজন নারী যদি কঠোর পরিশ্রম করে জ্ঞান অর্জন করে , অভিশাপ না দেয় , স্বামীর ভাল কথা মান্য করে, ইসলাম মেনে চলে তাহলে আল্লাহ্‌ যদি তাকে মাফ করে তাহলে এই নারীরা জান্নাতে যাবে কোন সন্দেহ নাই ।

১১/ উপরের হাদিসে কথায় আছে "নারীরা জ্ঞান অর্জন করতে পারবে না" ???

১২/ সেসব নারীদের জ্ঞানে ত্রুটি আছে তারা সেটি ঠিক করতে পারবে না এটা হাদিসের কথায় আছে ???


------------------------------

(সংগৃহীত ডকুমেন্ট :  ) 

শারিয়ায় নারী-সাক্ষী

সাক্ষ্য কি ? সাক্ষ্য হল, কোন লোক কোন অপরাধ ঘটতে দেখল এবং আদালতে বিচারকের সামনে সেটা বয়ান করল। বাঘা অপরাধীও ওটাকেই সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। কেন জানেন ? কারণ হল − অপরাধীর বিরুদ্ধে চাক্ষুষ সাক্ষী সবচেয়ে মারাত্মক অস্ত্র। সেজন্যই অপরাধীরা সাক্ষীকে খুন পর্যন্ত করে ফেলে। শুধুমাত্র সাক্ষীর জোরেই অপরাধীর শাস্তি হয়, সাক্ষীর অভাবে সত্যিকারের অপরাধীও ছাড়া পেয়ে যায়। এ-ছাড়াও আছে বিশ্বাসের সাক্ষ্য − “লা ইলাহা ইলালাহু মুহম্মদুর রসুলুলাহ − আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আলাহ একমাত্র মাবুদ আর মুহম্মদ তাঁর রসুল।” এ-সাক্ষ্য ছাড়া মুসলমানই হওয়া যায় না। বিদায় হজ্বে তাঁর শেষ ভাষণে নবীজীও সবার কাছ থেকে সাক্ষ্য নিয়েছিলেন − “আমি কি আলার বাণী তোমাদের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি ?” লক্ষ লক্ষ হাত আকাশে উঠে ঘোষণা করেছিল − “নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই, ইয়া রসুলুলাহ। ” নবীজী বলেছিলেন − “সাক্ষী থাক, আমিও সাক্ষী থাকলাম।” সে-জন্যই খোদ কোরাণও বলেছে সাক্ষ্য গোপন না করতে − বাকারা ২৮৩, মায়েদা ১০৬, ইমরান ১৬১, ইত্যাদি।

এই হলো ইসলামে সাক্ষ্যের মর্যাদা, এই হলো আদালতে সাক্ষ্যের উপকারিতা। এতে নারী-পুরুষ কোনই ভেদ নেই। একটা প্লেটে যদি কোন মানুষের চোখ রাখা হয় তবে কেউ বলতে পারবে না ওটা পুরুষের চোখ না নারীর। গাছের আম পুকুরের মাছ আকাশের তারা পুরুষ যেমন দেখে নারীও হুবহু ঠিক তেমনি দেখে। ডাকাতি বা খুন চোখের সামনে হলে পুরুষ যা দেখে নারীও তাই দেখে। তাই সাক্ষ্যের ব্যাপারে নারী-পুরুষের কোনই ভেদাভেদ থাকার কথা নয়। এবারে চলুন দেখি শারিয়া-আইন পুরুষ ও নারীর সাক্ষ্যের মধ্যে কোনো তফাৎ করে কি না।

হুদুদ মামলায় নারী-সাক্ষ্য চলবে না চারজন মুসলমান পুরুষ সাক্ষীর প্রয়োজন এ-আইন আছে হানাফি আইন ১৭৬ ও ৩৫৩ পৃঃ, শাফি’ই আইন পৃঃ ৬৩৮,Law #o.24.9, মওলানা মুহিউদ্দিনের বাংলা কোরাণ পৃঃ ২৩৯ ও ৯২৮,ক্রিমিনাল ল’ ইন ইসলাম অ্যাণ্ড দ্য মুসলিম ওয়ার্ল্ড পৃঃ ২৫১, পেনাল ল’ অফ ইসলাম পৃঃ ৪৪, ৪৫ ইত্যাদিতে। কারণ হিসেবে বলা আছে, “বোধশক্তির দুর্বলতা, স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা ও পরিস্থিতিকে আয়ত্তে রাখিবার ক্ষমতার অভাবের জন্যই নারীদের সাক্ষ্য প্রম হইতেই গ্রহণযোগ্য নহে” (দ্য পেনাল ল’ অব্ ইসলাম ৪৪ ও ৪৫ পৃষ্ঠা)।

কিন্তু ওগুলো বাহানা ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশে দেশে এমন কোন কাজ নেই যা নারীরা পুরুষের মতোই করছেন না, বরং অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা পুরুষের চেয়ে ভাল করছেন। এর সাথে এ-আইনও আছে − “হুদুদ মামলায় নারী বিচারক হতে পারবে না” (বিধিবদ্ধ ইসলামী আইন ২য় খণ্ড পৃঃ ২১৭, ধারা ৫৫৪)। এ-জন্যই ইরাণে সব নারী-বিচারককে কোর্টের কেরানি বানানো হয়েছে। যিনি জাতির গর্ব হতে পারতেন নোবেল প্রাইজ প্রাপ্ত সেই নারী-বিচারক শিরিণ এবাদী তাঁদের একজন, তিনি পদত্যাগ করেছেন।

মনে করুন কোন মা-বোনের চোখের সামনে খুন বা ডাকাতি হল, সেখানে আর কেউ নেই। শারিয়া-আদালতে মামলা গেল, মা-বোন সাক্ষী দিতে গেলেন। কিন্তু শারিয়ায় তাঁদের চাক্ষুষ সাক্ষ্য নেয়া হবে না। কারণ আইনটা হল − “খুনীর অপরাধ প্রমাণের জন্য কমপক্ষে দুইজন পুরুষ সাক্ষীর প্রয়োজন হইবে” (ধারা ৫৯৩, ২য় খণ্ড, পৃঃ ২৮৬ বিধিবদ্ধ ইসলামী আইন, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ), এআইনে ক সমর্থন করার জন্য সুরা বাকারা ২৮২ আর সুরা ত্বালাক আয়াত ২-এর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কোরাণ খুলে দেখুন ওখানে খুনের কোন কথাই নেই। বাকারা বলছে ধার-দেনার দলিলে আর ত্বালাকে আছে বৌ-তালাকে দু’জন পুরুষ সাক্ষী রাখতে। শারিয়ায় এক হাদিসের সূত্রে এ-ও বলা আছে, দু’জন পুরুষের চাক্ষুষ সাক্ষ্য না থাকলে “বিচারক খুনীকে কায়েদমুক্ত করিয়া দিবেন” (ঐ পৃষ্ঠা ২৮৭), অথবা, চাক্ষুষ সাক্ষ্য না থাকলে শুধু আলামতের ভিত্তিতে খুনী-ডাকাতের শাস্তি হবে না (“ঐ” ধারা ৬০০-এর বিশেষণ, ২য় খণ্ড পৃঃ ২৯২), অথচ খুনের চাক্ষুষ সাক্ষী পাওয়া কঠিন, পারিপার্শ্বিক আলামতের ভিত্তিতে বহু খুনীর শাস্তি হয়। তাই আমরা বারবার বলছি এই আইনগুলো বদলানো দরকার। আশ্চর্য এই যে, শারিয়া বইতেও বলা হয়েছে আইনগুলো বদলানোর সুযোগ আছে (“ঐ” পৃঃ ২৬৭, ধারা ৫৭৬) কিন্তু বদলানো তো হয়ই নি বরং না বদলিয়েই এই আইন তাঁরা দেশে চালাতে চান। এটা শারিয়াপন্থীদের ১৪০০ বছরের পুরনো কৌশল। মুখে বলা হবে “পরিবর্তনের সুযোগ আছে” কিন্তু সে পরিবর্তন কোনদিনই করা হবে না।

এ-আইন ইসলাম-বিরোধী এটা শারিয়াবিদরাও বোঝেন। তাই আইনটাকে একটু মেরামত করার চেষ্টা হয়েছে যেমন, যেনা প্রমাণের ক্ষেত্রে চারজন ন্যায়পরায়ণ মুসলমান পুরুষ সাক্ষী লাগবে, অথবা প্রতিজন পুরুষের পরিবর্তে দু’জন মুসলিম ন্যায়পরায়ণ মহিলা হলেও চলবে (“ঐ” ৩য় খণ্ডের ৮৮৮ পৃষ্ঠা), অর্থাৎ রোকেয়া হলে বা শামসুনড়বাহার হলে সাতজন মেয়েদের সামনে যদি জ্বেনা হয় তবে অপরাধীরা সবার সামনে অট্টহাসি হাসতে হাসতে পগার পার হয়ে যাবে। আর “ন্যায়পরায়ণ মহিলা” কে, তা নিয়ে উকিলের তর্কবিতর্কের শেষ হবে না।

আমি ইসলামের কথা বলছি। আমি ন্যায়ের ও মানবতার কথা বলছি।

শারিয়ার একটা মারাত্মক আইন হল ধর্ষণের সাক্ষী। এ-আইনে অবৈধ সম্পর্ক এবং ধর্ষণ এ-দু’টোকেই প্রমাণ করতে লাগবে অভিযুক্তের স্বীকারোক্তি অথবা চারজন বয়স্ক পুরুষ মুসলিমের চাক্ষুষ সাক্ষ্য (পাকিস্তানে শারিয়া আইনের ১৯৭৯-এর অর্ডিন্যান্স নম্বর ৭, ১৯৮০ সালের এর অর্ডিন্যান্স নম্বর ২০ দ্বারা সংশোধিত), এই আইন নিয়ে বহু সেমিনার, কন্ফারেন্স, বহু নিবন্ধ হয়েছে, এর পালায় পড়ে পাকিস্তানে হাজারো মা-বোন বহু বছর ধরে জেলখানায় বন্দি আছেন কারণ তাঁরা ধর্ষণের চারজন চাক্ষুষ সাক্ষী আদালতে হাজির করাতে পারেননি। মাত্র ২০০৬ সালের জুলাই মাসে প্রেসিডেণ্ট মুশাররফ এক হাজার নারীকে মুক্তি দিয়েছেন (‘ভোরের কাগজ’ ৯ জুলাই ২০০৬), এত বছরের জেলের ফলে এই হতভাগিনীদের জীবন ধ্বংস হল, এর জন্য দায়ী এই শারিয়া আইন। আরো দেখুন ‘দৈনিক স্টার, ৭ই জুলাই ২০০৩ – কল্যাণপুরে মা’কে বেঁধে কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ধর্ষণের একমাত্র সাক্ষী হল মেয়ের মা, ধর্ষক হল স্থানীয় তিন লোক। এখন এই মামলা যদি শারিয়া কোর্টে ওঠে তবে শারিয়ার আইন অনুযায়ী এক নারীর সাক্ষ্যে ধর্ষকদের শাস্তি দেয়া সম্ভব নয়। গ্রামের নির্জন ধানক্ষেতে ধর্ষিতা অভাগিনীদের একলা সাক্ষ্যেও সম্ভব নয়। এ-ধরনের আরো বহু ঘটনা আমাদের দলিলে আছে। কোনো কোনো দেশে এ-আইন বদলানো হয়েছে, পাকিস্তানে এখনো হয়নি।

এবারে আসা যাক কোরাণ-হাদিসে।

নিসা-র ১৫ নম্বর আয়াত : − “ব্যাভিচারিণী নারীদের বিরুদ্ধে চারজন পুরুষকে সাক্ষী হিসাবে তলব কর।” কারণ হল − “এ শর্ত আরোপের কারণ, যাতে স্ত্রীর স্বামী, তার জননী অন্য স্ত্রী অথবা ভাই-বোন ব্যক্তিগত জীঘাংসার বশবর্তী হয়ে অহেতুক অপবাদ আরোপ করার সুযোগ না পায় অথবা অন্য অমঙ্গলকারী লোকেরা শত্র“তা-বশত অপবাদ আরোপ করতে সাহসী না হয়” (মওলানার মুহিউদ্দিনের বাংলা কোরাণের তফসির পৃঃ ২৩৯)।

পরের প্রমাণ আরও অকাট্য। দেখুন সুরা নূর আয়াত ১১ থেকে ২০ পর্যন্ত। পঞ্চম হিজরিতে এক যুদ্ধ শেষে নবীজীর কাফেলা ফিরতি-পথে মদিনার কাছেই রাত্রি যাপনের জন্য থেমেছিল। তারপরে রওনা হবার সময় বিবি আয়েশা প্রাকৃতিক কারণে দূরে গিয়েছিলেন। তিনি ফিরে এসে দেখেন তাঁ র গলার হারটি নেই। তিনি সেটা খুজঁ তে যাবার পর লোকেরা পালকির ভেতরে তিনি আছেন মনে করে পালকিটা উটের পিঠে চড়িয়ে রওনা হয়ে যায়। এ-দিকে তিনি হারটি পেয়ে ফিরে এসে কাফেলা না দেখে সেখানে অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েন এবং সারারাত ঘুমিয়ে থাকেন। সেকালে প্রতিটি কাফেলার কিছুটা পিছনে একজন লোক হেঁটে আসার রেওয়াজ ছিল, যাতে কিছু খোয়া গেলে তা পাওয়া যায়। এ- ক্ষেত্রে ছিলেন সাফওয়ান। তিনি পৌঁছলে বিবি আয়েশা সাফওয়ানের উটে চড়ে কাফেলার কাছে পৌঁছান। লম্বা সময় সাফওয়ানের সাথে একা ছিলেন বলে তখন সমাজে বিবি আয়েশার চরিত্র নিয়ে কানাঘুষা ও অপবাদ শুরু হয়। বিবি আয়েশা রাগে-দুঃখে বাপের বাড়ি চলে যান। মাসখানেক পর নবীজী তাঁর বাসায় এলে বিবি আয়েশা এবং তাঁর বাবা-মা এই তিনজনের সামনে সুরা নূরের ১১ থেকে ২০ পর্যন্ত দশটা আয়াত নাজিল হয়। বিবি আয়েশা বলছেন : − “আলাহ আমার নির্দোষিতা প্রমাণের জন্যই কোরাণের ওই আয়াতগুলি নাজিল করিয়াছেন” (সহি বোখারি ৫ম খণ্ড পৃঃ ৩১৯ থেকে ৩২৯, হাদিস নম্বর ৪৬২, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসিন খানের বোখারির অনুবাদ)।

তাহলে আমরা দেখলাম আয়াতগুলো এসেছিল নারীদেরকে পুরুষের হিংস্র ছোবল থেকে বাঁচানোর রক্ষাকবচ হিসেবে। বউগুলোকে চরিত্রহীনতার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আগে বেশ ঝেড়ে ফেলে পার পাওয়া যেত, এখন আনতে হবে চার-চারজন পুরুষ সাক্ষী। না হলে শাস্তি। অথচ নারী-রক্ষার সেই আয়াতের নামে নারী-বিরোধী আইন বানিয়ে চিরকালের জন্য মা-বোনের চাক্ষুষ সাক্ষ্যকে নির্লজ্জভাবে কি করে অস্বীকার করব আমরা ? এ-জন্যই বুঝি ডঃ ত্বাহা আল্ আলওয়ানী উদ্বিগড়ব হয়ে বলেছেন : “সামর্থ্য, ভুলিয়া যাইবার সম্ভাবনা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, সত্যভাষণ বা মিথ্যা বলার ক্ষেত্রে নারীপুরুষের ষর কোনই ভেদাভেদ নাই। কোরাণে এমন কিছুই নাই যা দিয়া ওইরকম ধরা যাইতে পারে। সুতরাং, নরনারীর সাম্য ছাড়া অন্য কিছু বলিবার কোন যুক্তিই নাই”

http://www.crescentlife.com/thisthat/feminist%20muslims/testimony_of_women_islamic_law.htm

কে এই ডঃ ত্বাহা আল্ আলওয়ানী ? রাস্তার লোক ? মোটেই নয়। শখের ইসলামি পড়–য়া ? মোটেই নয়। স্বঘোষিত ইসলামি বিশেষজ্ঞ ? মোটেই নয়। তিনি পৃথিবীর সর্বোচ্চ মুসলিম-সংস্থা ও-আই-সি (দি অর্গানাইজেশন অব্ দি ইসলামিক কনফারেন্স)-এর ফিকাহ্ অ্যাকাডেমীর সদস্য, আমেরিকা-ক্যানাডা ফিকাহ্ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, এবং হেনডন ভার্জিনিয়ার স্কুল অব্ ইসলামিক অ্যাণ্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস্-এর প্রেসিডেণ্ট।

এ-জন্যই বুঝি নবীজী উদ্বিগড়ব হয়ে বলেছেন − “আমার অনুসারীদের জন্য আমার সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা পথভ্রষ্টকারী ইমামগণ নিয়ে” − সহি ইবনে মাজাহ ৫ম খণ্ড হাদিস ৩৯৫২, অতঃপর, একজন বিবেকবান মুসলমান হিসেবে আর কোন্ কোন্ প্রমাণ তুমি অস্বীকার করিবে ?

(সংগৃহীত) 


No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...