আশুরার রোজার ফজিলত ।

 মহররমের ১০ তারিখে রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে সহিহ হাদিস রয়েছে। জাবের রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা: আমাদের আশুরার রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং এর প্রতি উৎসাহিত করতেন। এ বিষয়ে নিয়মিত তিনি আমাদের খবরাখবর নিতেন। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো, তখন আশুরার রোজার ব্যাপারে তিনি আমাদের নির্দেশও দিতেন না এবং নিষেধও করতেন না। আর এ বিষয়ে তিনি আমাদের খবরাখবরও নিতেন না। (সহিহ মুসলিম শরিফ : ১১২৮)

এই হাদিসের আলোকে আশুরার রোজার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতীয়মান হয়। এমনকি ওই সময়ে তা ফরজ ছিল। বর্তমানে এই রোজা যদিও নফল, তবে অন্যান্য নফল রোজার তুলনায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
ইবন আব্বাস রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা: আশুরা ও রমজানের রোজা সম্পর্কে যেরূপ গুরুত্ব প্রদান করতেন, অন্য কোনো রোজা সম্পর্কে সেরূপ গুরুত্বারোপ করতেন না। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
ইসলাম ও মুসলমানের জন্য এ মাসের রয়েছে অনেক শিক্ষণীয় ও পালনীয় বিষয়। তাই এ মাসের ৯, ১০ ও ১১ তারিখে রোজা রাখা উত্তম।

ইবন আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, ‘মহানবী সা: যখন আশুরার দিনে রোজা রাখেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করেন, তখন সাহাবিরা অবাক হয়ে বলেন, ইয়া রাসূল সা:! ইহুদি-নাসারারা তো এই দিনটিকে বড়দিন মনে করে। আমরা যদি এই দিনে রোজা রাখি, তাহলে তো তাদের সাথে মিল হবে। তাদের প্রশ্নের উত্তরে রাসূল সা: বললেন, ‘তারা যেহেতু এই দিন একটি রোজা পালন করে, আগামী বছর ইনশা আল্লাহ আমরা এই ১০ তারিখের সঙ্গে ৯ তারিখ মিলিয়ে দুই দিন রোজা পালন করব। (সহিহ মুসলিম : ১১৩৪)


আবু হুরায়রা রা: হতে বর্ণিত, নবী করিম সা: বলেন, যে ব্যক্তি আশুরার দিনে আপন পরিবার-পরিজনের মধ্যে পর্যাপ্ত খানাপিনার ব্যবস্থা করবে, আল্লাহ পাক পুরো বছর তার রিজিকে বরকত দান করবেন। (তাবরানি : ৯৩০৩)

উল্লিখিত হাদিস সম্পর্কে আল্লামা ইবনুল জাওজিসহ অনেক মুহাদ্দিস আপত্তিজনক মন্তব্য করলেও বিভিন্ন সাহাবি থেকে এই হাদিসটি বর্ণিত হওয়ায় আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতিসহ অনেক মুহাক্কিক আলেম হাদিসটিকে গ্রহণযোগ্য ও আমলযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। (জামিউস সগির : ১০১৯)

মহররম মাস মানবতাকে ইসলামের সুমহান আদর্শ ও ত্যাগের দিকেই আহবান করে। আশুরা মুসলিম উম্মাহর জন্য কল্যাণ ও মুক্তির জন্য নিবেদিত হোক। আমরা বিগত দিনের অন্যায় ও গোনাহ থেকে মুক্তি লাভ করি। যে মহান উদ্দেশ্যকে স্মরণ করতে হিজরি সন শুরু হয়েছিল, আল্লাহ তায়ালা সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে মহররম মাসে সে স্মরণ, মর্যাদা ও কল্যাণের প্রতি লক্ষ রাখার, আমলি জিন্দেগি যাপন করার তাওফিক দান করুন। এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার। আমিন।

লেখক : বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইসলামী গবেষক

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...