প্রশ্ন: ৩০৬: বিতর নামাজ তিন রাকাত পড়ার দলিল।

বিতর সালাতে আহলে হাদীসের শায়েখরা যে সকল বিষয়ে দলিল নেই বলে জাহির করেন, সে সকল বিষয়ে কতিপয় দলিল:
-------------------------------------
♦বিতর সালাত এক সালামে তিন রাকাত পড়ার দলিলঃ
১. হযরত আয়েশা রা. বলেন:
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوتِرُ بِثَلَاثٍ لَا يُسَلِّمُ إِلَّا فِي آخِرِهِنَّ وَهَذَا وِتْرُ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَعَنْهُ أَخَذَهُ أَهْلُ الْمَدِينَةِ»
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিতর নামায ৩ রাকাত পড়তেন। আর সালাম ফিরাতেন একাবারে শেষে গিয়ে। আর এটা হযরত উমার (রা.) এরও বিতির ছিলো। মদীনাবাসী তাঁর থেকে এটাই গ্রহণ করেছেন। (মুস্তাদরাক হাকীম হাঃ ১১৪০, ইবনে আবী শায়বা হাঃ ৬৯১৩, নাসবুর রায়াহ হাঃ ১০১) ইমাম হাকীম, যাহাবী, আইনী, নববী প্রমুখ মুহাদ্দিস হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
.
২. হযরত উবাই বিন কা’ব রা. বলেন:
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ فِي الْوَتْرِ ‏‏بِسَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الأَعْلَى وَفِي الرَّكْعَةِ الثَّانِيَةِ ‏بِقُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ‏ وَفِي الثَّالِثَةِ بِقٌلْ ‏هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ‏ وَلاَ يُسَلِّمُ إِلاَّ فِي آخِرِهِنَّ.
রাসূলুল্লাহ স. বিতরের ১ম রাকাতে সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন। আর শুধু শেষ রাকাতেই সালাম ফিরাতেন। (সুনান নাসায়ী হাঃ ১৭০৪; শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন-সহীহ-যঈফ নাসায়ী হাঃ ১৭০১)
.
৩. হযরত আয়েশা রা. আরো বলেন:
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ لَا يُسَلِّمُ فِي رَكْعَتَيِ الْوِتْر .
রাসূলুল্লাহ স. বিতরের দ্বিতীয় রাকাতে সালাম ফিরাতেন না। (সুনান নাসায়ী হাঃ ১৭০১, মুস্তাদরাক হাকীম হাঃ ১১৩৯)
ইবনে হাযাম তাঁর ‘মুহাল্লা’ কিতাবের ২৯০ নম্বর মাসআলার অধীনে এ হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন: هَذَا كُلُّ مَا صَحَّ عِنْدَنَا “আমাদের নিকটে যা সহীহ তা এই”। (আল মুহাল্লা: আফযালুল বিতর অধ্যায়)। ইমাম হাকীম হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন: هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ، “এ হাদীসটি বুখারী-মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ। ইমাম যাহাবী তা সমর্থন করেন।
.
৪. হযরত মিসওয়ার বিন মাখরামাহ রা. বলেন: আমরা হযরত আবু বকর রা.কে রাতের বেলা দাফন করলাম। হযরত উমার রা. বললেন:
«إِنِّي لَمْ أُوتِرْ , فَقَامَ وَصَفَفْنَا وَرَاءَهُ , فَصَلَّى بِنَا ثَلَاثَ رَكَعَاتٍ , لَمْ يُسَلِّمْ إِلَّا فِي آخِرِهِنَّ»
আমি বিতর পড়িনি। এ কথা বলে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। আমরাও তাঁর পিছে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি আমাদেরকে তিন রাকাত বিতর পড়ালেন এবং কেবল শেষে গিয়ে সালাম ফিরালেন। (ত্বহাবী হাঃ ১৭৪২; হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন- আদদিরায়াহ বিতির অধ্যায়)
.
৫. হযরত সাবিত রহ. বলেন:
«صَلَّى بِي أَنَسٌ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ الْوِتْرَ أَنَا عَنْ يَمِينِهِ وَأُمُّ وَلَدِهِ خَلْفَنَا , ثَلَاثَ رَكَعَاتٍ لَمْ يُسَلِّمْ إِلَّا فِي آخِرِهِنَّ , ظَنَنْتُ أَنَّهُ يُرِيدُ أَنْ يُعَلِّمَنِي»
হযরত আনাস রা. আমাকে নিয়ে তিন রাকাত বিতর নামায পড়ালেন। আর সালাম ফিরালেন কেবল শেষে গিয়ে। আমি ছিলাম তাঁর ডানে আর ছেলের মা ছিলেন আমাদের পেছনে। আমার ধারণা, তিনি আমাদেরকে শেখাচ্ছিলেন। (ত্বহাবী হাঃ ১৭৪৭, সহীহ)
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন: وَرَوَى الطَّحَاوِيّ من طَرِيق صَحِيح عَن أنس أَنه صَلَّى الْوتر ثَلَاث رَكْعَات لم يسلم إِلَّا فِي آخِرهنَّ ইমাম ত্বহাবী রহ. হযরত আনাস রা. থেকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি তিন রাকাত বিতর পড়েছেন আর সালাম ফিরিয়েছেন কেবল শেষে গিয়ে”। (আদদিরায়াহ: বিতির অধ্যায়)
.
♦দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহুদ পড়ার দলিলঃ
১. উম্মুল মু'মিনীন আয়েশা (রাঃ) বলেন,
ًوَكَانَ يَقُولُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ التَّحِيَّةَ.
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলতেন, "সালাতে প্রতি দুই রাকাতে একবার আত্তাহিয়্যাতু (তাশাহুদ) পড়বে।" (সহীহ মুসলিম হাঃ ৪৯৮, আবু দাউদ হাঃ ৭৮৩ মুসনাদে আহমদ হাঃ ২৩৫১০, ২৫০৮৯)
.
২. হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. বলেন:
«الْوِتْرُ ثَلَاثٌ , كَوِتْرِ النَّهَارِ , صَلَاةِ الْمَغْرِبِ»
বিতর তিন রাকাত; দিনের বিতির তথা মাগরিবের নামাযের মতো। (ত্বহাবী, শারহুল মা'আনিল আসার, হাঃ ১৭৪৫; বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হাঃ ৪৮১২) ইমাম বায়হাকী রহ. বলেন: هَذَا صَحِيحٌ مِنْ حَدِيثِ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ مِنْ قَوْلِهِ “হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা.-এর নিজের বক্তব্য হিসেবে হাদীসটি সহীহ”।
.
৩.আবুল আলিয়া রহ. বলেন:
«عَلَّمَنَا أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْ عَلَّمُونَا أَنَّ الْوِتْرَ مِثْلُ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ , غَيْرَ أَنَّا نَقْرَأُ فِي الثَّالِثَةِ , فَهَذَا وِتْرُ اللَّيْلِ , وَهَذَا وِتْرُ النَّهَارِ»
আমাকে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সাহাবাগণ শিক্ষা দিয়েছেন যে, বিতর হলো মাগরিবের নামাযের মতো। তবে মাগরিবের তৃতীয় রাকাতে আমরা কিরাত পড়ি না। এটা হলো রাতের বিতির আর ওটা হলো দিনের বিতির। (ত্বহাবী হাঃ ১৭৪৩, হাদীসের মান সহীহ)
এ সকল সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রত্যেক নামাযে দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহুদ রয়েছে আর বিতর নামাযেও মাগরিবের মতো দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহুদ পড়তে হবে। তবে পার্থক্য হল, মাগরিবের তৃতীয় রাকাতে ফাতিহার পর কিরাত পড়া যাবে না কিন্তু বিতরে কিরাত পড়তে হবে।
.
♦ কুনুতের আগে তাকবীর বলে উভয় হাত উঠানোর দলিলঃ
১. মাসরূক, আসওয়াদ ও ইবনে মাসউদ রা. এর আরো কতিপয় শিষ্য বলেন:
كان عبد الله لا يقنت إلا في الوتر ، وكان يقنت قبل الركوع، يكبر إذا فرغ من قراءته حين يقنت.
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু বিতর নামাযেই কুনূত পড়তেন। আর তা পড়তেন রুকুর পূর্বে। কিরাত সমাপ্ত করার পর তাকবীর বলে কুনুত শুরু করতেন। (মুশকিলুল আসার ১১/৩৭৪ ইবনে আবী শাইবা হাঃ ৭০২১, সনদ সহীহ)
.
২. হযরত আলী রা. থেকেও এরূপ আমল বর্ণিত হয়েছে। (ইবনে আবী শাইবা হাঃ ৭১১৩, মুশকিলুল আসার ১১/৩৭৪)
ইমাম ত্বহাবী র. বর্ণনাদুটি উল্লেখপূর্বক বলেন: “এ থেকে বুঝা যায় হযরত আলী ও ইবনে মাসউদ রা. এর এক কথা নিজ গবেষণাপ্রসূত নয়। কেননা ইবাদতের এধরণের বিষয়গুলো নিজ থেকে বলারও নয়। বরং এগুলো কেবল রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জেনেই বলা যায়”। (মুশকিলুল আসার ১১/৩৭৪)
.
৩. ইমাম বুখারী সহীহ সনদে বর্ণনা করেন,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ أَنَّهُ كَانَ يَقْرَأُ فِي آخِرِ رَكْعَةٍ مِنَ الْوِتْرِ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ ثُمَّ يَرْفَعُ يَدَيْهِ وَيَقْنُتُ قَبْلَ الرَّكْعَةِ.
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. বিতরের শেষ রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন। অতঃপর উভয় হাত উত্তোলন করতেন এবং রুকুর পূর্বে দুআ কুনূত পড়তেন। (বুখারী, জুযউ রফইল ইয়াদাইন হাঃ ৯৬)
ইমাম বুখারী রহ. তাঁর ‘জুযউ রফইল ইয়াদাইন’ কিতাবে হাদীসটি উল্লেখ করে এটাকে সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. থেকে অনুরূপ বর্ণনা ইবনে আবী শাইবাতেও নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণিত হয়েছে। (হাদীস নং ৭০২৭ ও ৭০২৮)
.
৪. হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত:
أَنَّهُ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِي قُنُوتِ الْوِتْرِ.
তিনি বিতর নামাযের দুআয়ে কুনূতের সময়ে হাত উঠাতেন। (ইবনে আবী শাইবা: ৭০২৭)

6 comments:

  1. যারা এক রাকাত বেতর পড়ে তাদের কি হবে? এক রাকাতের দলিল দিলেন নাযে।

    ReplyDelete
  2. আলহামদু লিল্লাহ । আমার মনের সংশয় দূর হয়ে গেছে ।

    ReplyDelete
  3. যাজাকাল্লাহ।

    ReplyDelete
  4. প্রথমে দুরাকাত পরে এক রাকাত নামাজ পড়ার কি কোন হাদিস আছে?

    ReplyDelete

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...