প্রশ্ন: ২৩৫ : একজন নারী কখন তালাক দিতে পারে ।



স্ত্রী কখন তালাক দিতে পারে : 

মুসলিম আইনানুযায়ী বিয়ের মাধ্যমে নারীর মর্যাদা, অধিকার সংরক্ষিত হয়। মুসলিম আইনে পুরুষের মতো নারীরও রয়েছে সমাজে অধিকার ও মর্যাদা। মুসলিম আইনে বিয়ে এমনই একটি বিষয় যার মাধ্যমে নারী ও পুরুষের অধিকার রক্ষিত হয়।

একজন নারী ও পুরুষের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি হলো বিয়ে। মুসলিম পারিবারিক আইনে বিয়ে, তালাক, ভরণপোষণ, যৌতুক ইত্যাদি বিষয়গুলো আলোচিত হয়। বিয়ের মাধ্যমেই নারী-পুরষের সম্পর্কের বৈধতা পায়। আইনানুযায়ী বিয়ে একটি দেওয়ানি চুক্তি। বিয়ে যেমন বৈধ। মুসলিম আইন তালাককেও তেমনি বৈধতা দিয়েছে।

স্ত্রী কি তালাক দিতে পারেন?
কাবিন নামায় স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা অর্পণ করতে পারেন। এ ক্ষমতা শর্তযুক্তও হতে পারে। স্ত্রী অর্পিত ক্ষমতা বলে স্বামীকে তালাক দিতে পারেন। এছাড়াও বেশ কয়েকটি কারণে স্ত্রী স্বেচ্ছায় স্বামীকে তালাক দিতে পারেন।

আদালতের মাধ্যমে স্ত্রীর তালাক দেওয়া ক্ষমতা:
যদি বিয়ের কাবিননামায় স্ত্রীকে তালাকের কোনো ক্ষমতা অর্পন করা না হয়, তবে স্ত্রী আদালতের অনুমতি নিয়ে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করতে পারেন।

স্ত্রী যেসব কারণে তালাক দেওয়ার অধিকার অর্জন করে:
- স্বামী যদি চার বছর নিরুদ্দেশ থাকেন।
- স্বামী যদি দুই বছর ভরণপোষণ না দেন।
-স্বামী যদি আইনের লঙ্ঘন করে দ্বিতীয় বিবাহ করেন।
- স্বামী যদি সাত বছর বা এর বেশি সময়ের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন
- স্বামী যদি যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া তিন বছর বৈবাহিক দায়িত্ব পালন না করেন।
- স্বামী যদি পুরুষত্বহীন থাকেন।
- স্বামী যদি দুই বছর অপ্রকৃতিস্থ বা মারাত্মক ব্যাধিতে ভোগেন।
- নাবালিকা অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ে হয়ে থাকলে সাবালিকা হওয়ার পর স্ত্রী যদি তা অস্বীকার করেন।
- স্ত্রীর সঙ্গে স্বামী নিষ্ঠুর আচরণ বা নির্যাতন করলে।

পরকীয়া করলে স্ত্রী কি তার স্বামীকে তালাক দিতে পারেন?
হ্যা, স্বামী যদি অন্য নারীর সাথে মেলামেশা করেন বা অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তবে স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দিতে পারেন। এছাড়াও শারীরকি ও মানসিক নির্যাতন, নৈতিকতাবিরোধী জীবনযাপন, স্ত্রীর সম্পত্তির বৈধ অধিকার প্রয়োগে বাধা প্রদান, স্ত্রীর ধর্মীয় চর্চায় বাধা প্রদান ইত্যাদি কারণে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারেন।

তালাক সম্পর্কিত কিছু ভুল ত্রুটি : 


তালাক সম্পর্কিত কিছু ভুলত্রুটি

এ সংখ্যায় শুধু এ বিষয়ে আলোচনা করাই মুনাসিব মনে হল। একটি কথা তো বারবার লেখা হয়েছে, ওলামা-মাশায়েখও আলোচনা করে থাকেন যে, অতীব প্রয়োজন (যা শরীয়তে ওজর বলে গণ্য) ছাড়া স্বামীর জন্য যেমন তালাক দেওয়া জায়েয নয় তেমনি স্ত্রীর জন্যও তালাক চাওয়া দুরস্ত নয়। তালাকের পথ খোলা রাখা হয়েছে শুধু অতীব প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য। বর্তমান সমাজে, বিশেষ করে আমাদের এতদাঞ্চলে কোনো পরিবারে তালাকের ঘটনা যে কত ফাসাদ-বিশৃঙ্খলা, জুলুম-অত্যাচার এবং ঝগড়া-বিবাদের কারণ হয় তা আর বলে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। তালাক প্রদানের ক্ষমতাকে শরীয়তের নির্ধারিত নীতিমালার বাইরে ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে আল্লাহর বিধানের সাথে বালখিল্যতার শামিল।
এজন্য কেউ দাম্পত্য জীবনে পা রাখার চেষ্টা করলে তার অপরিহার্য কর্তব্য হবে, বিয়ের আগেই দাম্পত্য জীবনের নিত্য প্রয়োজনীয় মাসআলাগুলোর সাথে  তালাকের বিধানসমূহ জেনে নেওয়া।
তালাক অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়। কেউ এই ক্ষমতার অপব্যবহার করলে কিংবা ভুল পন্থায় তা প্রয়োগ করলে সে একদিকে যেমন গুনাহগার হবে অন্যদিকে তালাকও কার্যকর হয়ে যাবে। তাই প্রতিটি বিবেচক স্বামীর দায়িত্ব হল, তালাকের শব্দ কিংবা এর সমার্থক কোনো শব্দ মুখে উচ্চারণ করা থেকে সতর্কতার সাথে বিরত থাকা।
অবশ্য অতীব প্রয়োজনে তালাক প্রদানে বাধ্য হলে স্ত্রীর পবিত্র অবস্থায় শুধু এক তালাক দিয়ে ক্ষান্ত হওয়া উচিত। এভাবে বলবে যে, তোমাকে তালাক দিলাম। তালাকের সাথে বায়েন শব্দ কিংবা ৩ সংখ্যা ব্যবহার করবে না। কেউ বায়েন শব্দ বলে ফেললে (চাই তা এক বা দুই তালাক হোক না কেন) নতুন করে শরীয়তসম্মত পন্থায় বিবাহ দোহরানো ছাড়া স্ত্রীর সাথে পুনরায় মিলনের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
অনুরূপভাবে তিন তালাক দিয়ে ফেললে-একই মজলিসে পৃথক পৃথকভাবে তিন তালাক দেওয়া হোক কিংবা একই শব্দে তিন তালাক দেওয়া হোক- যেমন বলল, তোমাকে তিন তালাক দিলাম। অথবা আগে কখনো দুই তালাক দিয়েছিল আর এখন শুধু এক তালাক দিল। সর্বমোট তিন তালাক দেওয়া হল। যেকোনো উপায়ে তিন তালাক দেওয়া হলে বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে যায়। এ অবস্থায় শুধু মৌখিকভাবে স্ত্রীকে বিবাহে ফিরিয়ে আনার যেমন কোনো সুযোগ থাকে না তেমনি নতুন করে বিবাহ দোহরানোর মাধ্যমেও ফিরিয়ে নেওয়ার পথ খোলা থাকে না।
একসাথে তিন তালাক দেওয়া কিংবা বিভিন্ন সময় তালাক দিতে দিতে তিন পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া একটি জঘণ্য অপরাধ ও ঘৃণিত কাজ। আল্লাহ তাআলা এর শাস্তি হিসেবে এই বিধান দিয়েছেন যে, তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পুনরায় একসাথে বসবাস করতে চাইলে স্ত্রীর ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পর অন্যত্র তার বিয়ে হওয়া এবং সে স্বামীর সাথে তার মিলন হওয়া অপরিহার্য। এরপর কোনো কারণে সে তালাকপ্রাপ্তা হলে কিংবা স্বামীর মৃত্যু হলে ইদ্দত পালনের পর এরা দুজন পরস্পর সম্মত হলে নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। 
এজন্য শরীয়ত আগেই সাবধান করে দিয়েছে যে, প্রথমত তালাকের কথা
চিন্তাও করবে না। তবে অতীব প্রয়োজনে কখনো তালাক প্রদানের প্রয়োজন হলে শুধু সাদামাটা তালাক দাও, শুধু এক তালাক। যেন উভয়ের জন্যই নতুন করে চিন্তা-ভাবনার সুযোগ থাকে এবং পুনরায় ফিরে আসার পথ খোলা থাকে। এরপর আবারো কোনো সমস্যা দেখা দিলে এভাবেই শুধু এক তালাক দিবে। এখনও ফিরে আসার পথ খোলা থাকবে।
কিন্তু এরপর যদি আবার কখনো শুধু এক তালাকই দেওয়া হয় এবং সব মিলে তিন তালাক হয়ে যায় এ অবস্থায় আর তাকে ফিরিয়ে আনারও সুযোগ থাকবে না, নতুন করে বিয়ে করার বৈধতাও বাকি থাকবে না।
আজকাল স্বামী-স্ত্রী তালাকের বিধান জানা ও সে অনুযায়ী আমল করার পরিবর্তে নিজেদের মনে এমনসব ভুল ও বানোয়াট মাসআলা স্থির করে রাখে যে, আল্লাহ মাফ করুন।
১. তিন তালাক ছাড়া কি তালাক হয় না
যেমন, কেউ মনে করে যে, শুধু এক বা দুই তালাক দেওয়ার দ্বারা তো তালাকই হয় না। তালাকের জন্য একসাথে তিন তালাক দেওয়াকে তারা অপরিহার্য মনে করে।
মনে রাখবেন, এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। তালাক দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি হল, শুধু এক তালাক দেওয়া। পরবর্তীতে আবারও প্রয়োজন হলে শুধু এক তালাকই দিবে। এরচেয়ে বেশি দিবে না। কিন্তু তিন তালাক দিয়ে ফেললে তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক বহাল রাখার সকল পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
একই মজলিসে কিংবা একই শব্দে তিন তালাক দেওয়া হারাম ও কবীরা গুনাহ। কিন্তু কেউ এমনটি করলে তালাক কার্যকর হবে এবং তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়ে যাবে।
২. তালাকের সাথে কি বায়েন শব্দ ব্যবহার করা জরুরি
অনেকে মনে করে, শুধু তালাক বললে তালাক হয় না; বরং তালাকের সাথে বায়েন শব্দও যোগ করা অত্যাবশ্যক।
এটিও ভুল ধারণা। শুধু তালাক শব্দ দ্বারাই তালাক হয়ে যায়। এর সাথে বায়েন শব্দ যোগ করার কোনো প্রয়োজন নেই। উপরন্তু এ শব্দের সংযোজন নাজায়েয। তবে কেউ যদি এক তালাক বায়েন বা দুই তালাক বায়েন দেয় তবে সে মৌখিকভাবে রুজু করার (পুনরায় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার) পথ বন্ধ করে দিল। এখন শুধু একটি পথই খোলা আছে। আর তা হল, নতুনভাবে শরীয়তসম্মত পন্থায় বিবাহ দোহরানো। অথচ শুধু তালাক বললে এক তালাক বা দুই তালাক পর্যন্ত মৌখিক রুজুর পথ খোলা থাকে। এজন্য স্বামীর উচিত, যত উত্তেজিতই হোক না কেন, কোনো অবস্থাতেই যেন তিন তালাক না দেয়। এমনকি তা কখনো মুখেও না আনে। অথচ অনেকে তো তিন তালাক দেওয়ার পরও পৃথকভাবে বায়েন শব্দ যোগ করেন। যেন সব কটি তালাক দেওয়ার পরও তার মন ভরল না। না হলে তিন তালাক দেওয়ার পর আর কী বাকি থাকে যে, বায়েন শব্দ বলতে হবে?!
মনে রাখবেন, তিন তালাক দেওয়াই এক গুনাহ, এরপর বায়েন শব্দ যোগ করে সে আরো বেশি গুনাহগার হল।
৩. একসাথে তিন তালাক দিলে কি তালাক হয় না
অনেকে এই ভুল ধারণাও প্রচার করে রেখেছে যে, একসাথে তিন তালাক দেওয়া হলে তালাক হয় না কিংবা শুধু এক তালাক হয়।
এটিও একটি মারাত্মক ভুল। একসাথে তিন তালাক দেওয়া জায়েয না হলেও কেউ যদি এই নাজায়েয কাজ করে তাহলে তার স্ত্রীর উপর তিন তালাক ঠিকই পতিত হয়। এক্ষেত্রে তার মৌখিকভাবে রুজু করার অধিকার অবশিষ্ট থাকে না। এমনকি নতুন করে বিবাহ দোহরিয়ে নেওয়ার দ্বারাও তারা একে অপরের জন্য হালাল হতে পারে না। তাই সকল স্বামীরই কর্তব্য, প্রথম থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা। মুখ দিয়ে কখনো তিন তালাক কিংবা তালাক, তালাক, তালাক শব্দ উচ্চারণ না করা। আর আগেই দুই তালাক দিয়ে থাকলে এখন আর তৃতীয় তালাকের চিন্তাও না করা।
৪. গর্ভাবস্থায় তালাক দিলে কি তালাক পতিত হয় না
অনেকে এই মাসআলা বানিয়ে রেখেছে যে, গর্ভাবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দেওয়া হলে তা কার্যকর হয় না। এটিও সম্পূর্ণ অবাস্তব কথা। গর্ভাবস্থায় হোক বা অন্য যেকোনো অবস্থাই হোক তালাক দেওয়া হলে তা পতিত হয়ে যায়। এজন্য সঠিক মাসআলা শেখা সকলের দায়িত্ব। অজ্ঞতার ধোকায় থাকার কারণে হারাম কখনো হালাল হতে পারে না।
৫. তালাক পতিত হওয়ার জন্য কি সাক্ষীর উপস্থিতি জরুরি
অনেকের ধারণা, স্বামী তালাকের সময় কোনো সাক্ষী না রাখলে তালাক পতিত হয় না। আগেরটার মতো এটাও মানুষের মনগড়া মাসআলা। কোন মূর্খ এই কথা বলেছে জানা নেই। সাক্ষীর প্রয়োজন তো হয় বিবাহের সময়। তালাক পতিত হওয়ার জন্য এক বা একাধিক কোনো সাক্ষীরই প্রয়োজন নেই। স্বামী যদি রাতের অন্ধকারে একা একা বসে তালাক দেয় তাহলেও তালাক হয়ে যায়।
৬. রাগের অবস্থায় তালাক দিলে কি তালাক হয় না
তালাক তো দেওয়াই হয় রাগ হয়ে। কয়জন আছে, শান্তভাবে তালাক দেয়? আসলে তো এমনই হওয়া উচিত ছিল যে, যদি বাস্তবসম্মত ও অনিবার্য প্রয়োজনে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয় তাহলে বড়দের সঙ্গে পরামর্শ করে একে অন্যের কল্যাণকামী হয়ে বুঝে-শুনে, সঠিক মাসআলা জেনে নিয়ে মাসআলা অনুযায়ী তালাক প্রদানের মাধ্যমে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে।
 কিন্তু আফসোস! অধিকাংশ মানুষ মাসআলা জানার চেষ্টাও করে না, আর না তাদের মধ্যে এই সুবুদ্ধি আছে যে, বড়দের সাথে পরামর্শ করবে, চিন্তা-ভাবনা করবে। নিজের ইচ্ছাবিরোধী কোনো কিছু পেলেই রাগের বশে তালাক দিয়ে ফেলে। আর তা এক বা দুইটি নয়; এক নিঃশ্বাসে তিন তালাক।
যখন রাগ প্রশমিত হয় তখন অনুতপ্ত হয় এবং বিভিন্ন ধরনের কথা বানাতে থাকে। বলে, আমি রাগের মাথায় বলে ফেলেছি, তালাক দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না। এসব লোকের জেনে রাখা উচিত যে, তালাক পতিত হওয়ার জন্য নিয়তের কোনো প্রয়োজন নেই। এটা কোনো ইবাদত নয় যে, এর জন্য নিয়ত করতে হবে। নিয়ত থাক বা না থাক সর্বাবস্থায় তালাক শব্দ বলে ফেললে বা কাগজে লিখে দিলেই তালাক হয়ে যায়। তেমনিভাবে রাগের অবস্থায় তালাক দিলেও তালাক হয়ে যায়, এমনকি হাস্যরস বা ঠাট্টাচ্ছলে তালাক দিলেও তা পতিত হয়ে যায়।
অবশ্য কেউ যদি প্রচন্ড রেগে যায় ও রাগের ফলে বেহুঁশ হয়ে পড়ে আর এ অবস্থায় সে কী বলেছে তার কিছুই মনে না থাকে তাহলে ঐ অবস্থার তালাক কার্যকর হবে না।
শেষকথা এই যে, দাম্পত্য জীবন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অনেক বড় ও বিশেষ একটি নেয়ামত। স্বামী-স্ত্রী সকলের কর্তব্য, এই নেয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন করা এবং একে অপরের সকল অধিকার আদায় করা। স্ত্রীর জন্য উচিত নয়, কথায় কথায় স্বামীর কাছে তালাক চাওয়া। আবার স্বামীর জন্যও জায়েয নয় আল্লাহ তাআলার দেওয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করা।
বিয়ে, তালাক ও দাম্পত্য জীবনের সকল বিধান ও মাসআলা শিক্ষা করা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্য জরুরি। বিশেষ করে স্বামীর কর্তব্য হল, তালাকের মাসআলা ও এর পরিণতি সম্পর্কে অবগত না হয়ে মুখে কখনো তালাক শব্দ উচ্চারণ না করা। আর যদি কোনো কারণে তালাক দেয় এবং এমনভাবে দেয় যে, এখন আর তাদের একসাথে থাকা শরীয়তে বৈধ নয় তাহলে তাদের আল্লাহকে ভয় করা উচিত। বিভিন্ন টাল-বাহানা, অজুহাতের আশ্রয় নিয়ে কিংবা ভুল কথার উপর ভিত্তি করে অথবা মূল ঘটনা গোপন রেখে একসাথে বাস না করা উচিত। বিয়ে শুধু একটি সময়ের বিষয় নয়, সারা জীবনের বিষয়।
বাস্তবেই যদি তালাক হয়ে যায় এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈবাহিক সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় এরপরও স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একসাথে বাস করে তাহলে তা হবে কবীরা গুনাহ এবং উভয়েই যেন ব্যভিচারের গুনাহয় লিপ্ত।
আল্লাহ তাআলা সকলকে হেফাযত করুন এবং তাকওয়া ও পবিত্রতা দান করুন। আমীন। 

তালাক দেওয়ার অধিকার ইসলামে শুধু স্বামীকেই দেওয়া হয়েছে। স্ত্রীর হাতে এ জন্য দেওয়া হয়নি যে নারীদের স্বভাবে সাধারণত তাড়াহুড়া প্রবণতাটা একটু বেশি। তাই তাদের ক্ষমতা দিলে ছোটখাটো বিষয়েও তাড়াহুড়া করে তালাক দেওয়ার আশঙ্কাটা বেশি। তাই বেশি পরিমাণে বিবাহবিচ্ছেদ রোধেই ইসলাম নারীদের তালাকের ক্ষমতা দেয়নি। মনে রাখতে হবে, ইসলাম নারীকে তালাকের অধিকার দেয়নি, কিন্তু তালাকের যে মূল উদ্দেশ্য বিবাহবিচ্ছেদ, তার অধিকার দিয়েছে। অর্থাৎ কোনো কারণে নারী চাইলে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটানোর বিভিন্ন সুযোগ রয়েছে। ইসলামে নারীদের আটকে রাখা হয়নি, বরং তারাও প্রয়োজনে যথাবিহিত নিয়মে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারে। যথা :
ক. বিবাহের আগেই স্ত্রী এ শর্ত দিতে পারবে যে আমাকে ‘তালাক’ (বিবাহবিচ্ছেদ) দেওয়ার অধিকার দিতে হবে। তখন স্বামী থেকে প্রাপ্ত অধিকারবলে স্ত্রী প্রয়োজনে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারবে, যা আমাদের দেশের কাবিননামার ১৮ নম্বর ধারায় উল্লেখ থাকে। (দেখুন : ফাতহুল কাদির : ৩/৪২৭)
খ. যদি বিবাহের সময় শর্ত না-ও দিয়ে থাকে, তার পরও স্ত্রী স্বামী থেকে আপসের ভিত্তিতে এমনকি প্রয়োজনে বিনিময়ের মাধ্যমেও তালাক নিতে পারবে। এটাকে ‘খোলা তালাক’ বলা হয়। (দেখুন : সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২৭৩)
গ. ওই পদ্ধতিদ্বয় ছাড়াও স্বামী নপুংসক, পাগল, অস্বাভাবিক ক্রোধসম্পন্ন হলে কোনোক্রমেই মনের মিল না হলে বা নিখোঁজ হয়ে গেলে অথবা যেকোনো কঠিন সমস্যায় পতিত হলে স্ত্রী বিচারকের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ করিয়ে নিতে পারবে। (শরহুস সগির, দরদির : ২/৭৪৫, কিফায়াতুল মুফতি : ৬/২৫২)

ইসলামে তালাকের অবস্থান
ইসলামী শরিয়তে অতি প্রয়োজনে তালাকের অবকাশ থাকলেও বিষয়টি অপছন্দনীয়। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপ্রিয় হালাল বস্তু হচ্ছে তালাক।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৭৭)
তাই নারী-পুরুষ উভয়ের কর্তব্য তালাক থেকে দূরে থাকা। তালাক দেওয়ার ক্ষমতা যেহেতু পুরুষের, তাই পুরুষকে ক্ষমতা প্রয়োগের ব্যাপারে খুবই সংযমী হতে হবে। অন্যদিকে নারীর ব্যাপারেও হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে নারী স্বামীর কাছে বিনা কারণে তালাক প্রার্থনা করে, তার জন্য জান্নাতের সুঘ্রাণ পর্যন্ত হারাম।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২০৫৫)
সম্প্রতি পরকীয়ার বিস্তারে যেমন পুরুষের অপরাধ আছে, তেমনি আছে নারীরও। দেখা যাচ্ছে, এক নারীর দ্বারাই অন্য নারীর সংসার ভাঙছে। এ ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর এই বাণী খুবই প্রাসঙ্গিক—‘কোনো নারী যেন তার বোনের (অপর নারীর) অংশ নিজের পাত্রে নেওয়ার জন্য তালাকের আবেদন না করে। সে নিজে পছন্দ মোতাবেক বিবাহ করুক, কেননা তার ভাগ্যে যা লেখা আছে সে তা-ই পাবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬০০)
তাই প্রত্যেকের কর্তব্য, নিজের পাতে যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা। অন্যের পাতের জিনিস নিজের পাতে নিয়ে নেওয়ার মতো লোভী মানসিকতা কোনো ভদ্র মানুষের হতে পারে না। উপরন্তু যখন ওই নারীটিও একজন নারী।

দাম্পত্য সম্পর্কের দৃঢ়তায় ইসলামের দিকনির্দেশনা
যেসব কারণে দাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়, সেগুলো দূর করার জন্য কোরআন-হাদিসে অনেক নির্দেশনা রয়েছে।
প্রথমত, বিবাহের আগে একে অন্যকে ভালোভাবে দেখে নেবে, যাতে বুঝে-শুনেই বিবাহ সম্পন্ন হয় এবং কোনো ধরনের দৈহিক ত্রুটির কারণেই যেন সম্পর্ক ছিন্ন করার উপক্রম না হয়।
দ্বিতীয়ত, শুধু একে অন্যের দোষ-ত্রুটির দিকেই দেখবে না, বরং তার মধ্যে যেসব ভালো গুণ বিদ্যমান সেগুলোর দিকে তাকিয়ে অপছন্দের দিকগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তাকে তোমার অপছন্দও হয়, তবু তুমি যা অপছন্দ করছ আল্লাহ তাতে সীমাহীন কল্যাণ দিয়ে দেবে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)
এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ মুমিন নারীর ওপর রুষ্ট হবে না, কেননা যদি তার কোনো কাজ খারাপ মনে হয়, তাহলে তার এমন গুণও থাকবে, যার ওপর সে সন্তুষ্ট হতে পারবে।’ (মুসলিম হাদিস : ১৪৬৯)

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...