প্রশ্ন: ১৮২ : উলঙ্গ হয়ে গোসল করা জায়েয কি ?

পরিষ্কার-পরিছন্নতা, পবিত্রতা অর্জনের অন্য উপায় হচ্ছে গোসল। পবিত্রতা ঈমানের অন্যতম একটি অঙ্গ। বর্তমান পরিবর্তিত জীবনে মানুষের সমাজিক, সাংস্কৃতিক জীবনেও পরিবর্তনের ছোয়া লেগেছে।
আধুনিক যুগের ছোয়ায় এসে মানুষের মধ্যে দেখা গেছে বাথরুমে বিবস্ত্র হয়ে গোসল করার প্রবণতা। বর্তমানে এটি মানুষের মধ্যে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
কিন্তু ইসলাম কি বলে, আদো কি বিবস্ত্র হয়ে অজু বা গোসল করা যায় কিনা।
এ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলা যায়, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাথরুমে বিবস্ত্র হয়ে গোসল করা উচিত নয়। এ বিষয়ে হাদিসে অনুৎসাহিত করা হয়েছে। যে কারণে আমাদের সকলকে পরিহার করা উচিত।
হাদীস শরীফে এসেছে, লজ্জা করার ব্যপারে মানুষের চেয়ে আল্লাহ তাআলাই বেশি হকদার। তাই গোসলের সময় পুরোপুরি উলঙ্গ হয়ে যাওয়া অনুত্তম।
এক হাদিসে বলা হয়েছে, মুয়াবিয়া বিন হাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তুমি তোমার স্ত্রী ছাড়া অন্যদের কাছ থেকে তোমার লজ্জাস্থান সর্বদা হেফাজত করো (অর্থাৎ ঢেকে রাখো)।’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! যদি কোনো ব্যক্তি কোথাও একাকী থাকে! (তখনো কি তা ঢেকে রাখতে হবে?)।’ তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, কেননা আল্লাহকে অধিক লজ্জা করা উচিত।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৭৬৯)
তবে যদি অন্য কারো দেখার সম্ভাবনা না থাকে তাহলে প্রয়োজনে পাকা গোসল খানায় বা বাথরুমে বিবস্ত্র অবস্থায় গোসল করা জায়েজ। গোসলখানায় চতুষ্পার্শ্বে দেওয়াল থাকা জরুরি। ছাদ না থাকলে সমস্যা নেই। তবে প্রয়োজন ছাড়া এভাবে গোসল করা অনুচিত।
তবে স্বামী ও স্ত্রী একসঙ্গে গোসল করার কথা হাদিসে এসেছে।
এ বিষয়ে মহানবী (সা.) তাঁর স্ত্রী মাইমুনা (রা.) ও আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে একত্রে গোসল করেছেন। এটি সহিহ বুখারি ও মুসলিম দ্বারা প্রমাণিত। এ বিষয়ে কেউ কেউ মুসা (আ.)-এর বিবস্ত্র হয়ে গোসল করার ঘটনাও প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। (দেখুন : বুখারি, হাদিস : ৩৪০৪)।
সব মিলে কথা হচ্ছে উলঙ্গ হয়ে গোসল করা জায়েজ আছে তবে এটা একেবারে অনুত্তম কাজ, সুন্নতের পরিপন্থী। আল্লাহর রাসুল সা: কখনো এরকম করেনি। মোস্তাহাব ও উত্তম হল লুঙ্গি ইত্যাদি বেঁধে গোসল করা ও মেয়েরা নিচে পায়জামা বা উড়না সাদৃশ্য ও বুকে গামছা সদৃশ্য কিছু রাখবে।
কেননা আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মহান আল্লাহ লজ্জাশীল ও পর্দাকারীদের পছন্দ করেন। তাই তোমাদের কেউ যখন গোসল করে তখন সে যেন পর্দা করে নেয়। (তাহতাবী)

উলঙ্গ হয়ে গোসল করা অনুচিত। ফুকাহায়ে কেরাম উলঙ্গ হয়ে গোসল করাকে মাকরুহ বলেছেন। তবে উলঙ্গ হয়ে গোসল করার সময় যদি গোসলের ফরজগুলো পালন করা হয় তাহলে ফরজ গোসল সম্পন্ন এবং শুদ্ধ হয়ে যাবে।  এবং এ গোসলের পরে নতুন করে ওযু করারও কোনো প্রয়োজন নেই। বরং গোসলের পরে ওযু করাই অনুচিত। ফুকাহায়ে কেরাম গোসলের পরে ওযু করাকে মাকরুহ বলেছেন। গোসলের পূর্বে ওযু করার কথা এসেছে; শেষে নয়।


প্রশ্ন : গোসল করলে কি উযূ সম্পন্ন হয়ে যায় নাকি গোসলের পর আবার নতুন করে উযূ করতে হবে?

উত্তর : গোসল করার দ্বারা উযূ হয়ে যায়। গোসল করার পূর্বে উযূ করা হোক বা না হোক। কেননা গোসলের মধ্যে উযূর অঙ্গগুলো ধৌত হয়ে যায়। তবে গোসলের পূর্বে উযূ করা সুন্নাত। আর গোসলের মাধ্যমে উযূর অঙ্গসমূহ সম্পূর্ণ ভিজে যাওয়া সত্ত্বেও গোসলের পর আবার উযূ করা মাকরূহ। সুনানে তিরমিযী; হাদীস ১০৭, রদ্দুল মুহতার ১/২৯৪, মাসাইলে উযূ; পৃষ্ঠা ৩৭, মাসাইলে গোসল; পৃষ্ঠা ৪৮।

1 comment:

  1. আমি তো গোসলের আগেও করি আবার পরে ও করি ..এতে কি মাকরূহ হবে ?

    ReplyDelete

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...