প্রশ্ন: ১৮৭ : আমরা সবাই জানি মৌমাছি ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে কিন্তু কোরাণ বলছে ফলথেকে মধু সংগ্রহ করে এর ব্যাখ্যা কি হবে ।

এর ব্যাখ্যা খুবই সিম্পল । যে ফুল গুলো পরিণত হয়ে ফলে রূপান্তরিত হয় সেগুলো থেকেই মৌমাছি মধূ সংগ্রহ করে। এছাড়া ফল থেকেও মধু সংগ্রহ করে, আবার মিষ্টির দোকানে মিষ্টির ওপরও মৌমাছি বসে। এছাড়া অন্যান্য ফুলের উপরও মৌমাছি বসে। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামাদিহী ।

﴿ثُمَّ كُلِي مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِي سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًا ۚ يَخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِّلنَّاسِ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ﴾
( নাহল:  ৬৯) তারপর সব রকমের ফলের রস চোসো এবং নিজের রবের তৈরি করা পথে চলতে থাকো৷ ৫৭ এ মাছির ভেতর থেকে একটি বিচিত্র রংগের শরবত বের হয়, যার মধ্যে রয়েছে নিরাময় মানুষের জন্য৷ ৫৮ অবশ্যি এর মধ্যেও একটি নিশানী রয়েছে তাদের জন্য যারা চিন্তা-ভাবনা করে৷ ৫৯ 
৫৭. 'রবের তৈরী করা পথে ' বলে মৌমাছিদের একটি দল যে ব্যবস্থা ও কর্মপদ্ধতির আওতাধীনে কাজ করে সেই সমগ্র ব্যবস্থা ও কর্মপদ্ধতির দিকে ইংগিত করা হয়েছে ৷ মৌচাকের আকৃতি ও কাঠামো তাদের দল গঠন প্রক্রিয়া, তাদের বিভিন্ন কর্মীর মধ্যে কর্মবন্টন তাদের আহার সংগ্রহের জন্য অবিরাম যাওয়া আসা এবং তাদের নিয়ম মাফিক মধু তৈরী করে তা ক্রমাগত গুদামে সঞ্চয় করতে থাকা - এসব হচ্ছে সেই পথ যা তাদের রব তাদের কাজ করার জন্য এমনভাবে সুগম করে দিয়েছেন যে, তাদের কখনো এ ব্যাপারে নিজেদের চিন্তা ভাবনা করার প্রয়োজন হয় না ৷ এটা একটা নির্ধারিত ব্যবস্থা ৷ এরি ভিত্তিতে একটি বাঁধাধরা নিয়মে এ অগণিত চিনিকলগুলো হাজার হাজার বছর ধরে কাজ করে চলছে ৷
৫৮. মধু যে একটি উপকারী ও সুস্বাদু খাদ্য তা কারোর অজানা নেই ৷ তাই একথাটি এখানে উল্লেখ করা হয়নি ৷ তাবে তার মধ্যে যে রোগ নিরাময় শক্তি আছে একথাটা তুলনামূলকভাবে একটি অজানা বিষয় ৷ এ জন্য একথাটা জানিয়ে দেয়া হয়েছে ৷ মধু প্রথমত কোন কোন রোগে এমনিতেই উপকারী ৷ কেননা, তার মধ্যে রয়েছে ফুল ও ফলের রস এবং তাদের উন্নত পর্যায়ের গ্লুকোজ ৷ তারপর মধুর একটা বৈশিষ্ট হচ্ছে, তা নিজে কখনো পচে না এবং অন্য জিনিসকেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত নিজের মধ্যে পচন থেকে সংরক্ষিত রাখে ৷ এর ফলে তৈরী করার জন্য তার সাহায্য গ্রহণ করার মত যোগ্যতা তার মধ্যে সৃষ্টি হয়ে যায় ৷ এ জন্যই ঔষধ নির্মাণ শিল্পে আল-কোহলের পরিবর্তে মধুর ব্যবহার শত শত বছর থেকে চলে আসছে ৷ তাছাড়া মৌমাছি যদি এমন কোন এলাকায় কাজ করে যেখানে কোন বিশেষ ধরনের বনৌষধি পরিমাণ পাওয়া যায় তাহলে সেই এলাকার মধু নিছক মধুই হয় না বরং তা ঐ ঔষধির সর্বোত্তম উপাদান ধারণ করে এবং যে রোগের ঔষধ আল্লাহ ঐ ঔষধির মধ্যে তৈরী করেছেন তার জন্যও তা উপকারী হয় ৷ যদি যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী মৌমাছিদের সাহায্যে এ কাজ করানো হয় এবং বিভিন্ন ঔষধি বৃক্ষের উপাদান তাদের সাহায্যে বের করে তাদের মধু আলাদা আলাদাভাবে সংরক্ষিত হয়ে তাহলে আমাদের মতে এ মধু ল্যাবরেটরিতে তৈরী উপদানের চেয়ে বেশী উপকারী প্রমাণিত হবে ৷
৫৯. এ গোটা বর্ণনার উদ্দেশ্য হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত দ্বিতীয় অংশের সত্যতা সপ্রমাণ করা ৷ দুটি কারণেই কাফের ও মুশরিকরা তাঁর বিরোধিতা করতো ৷ এক, তিনি পরকালীন জীবনের ধারণা পেশ করেন ৷ এ ধারণা চরিত্র ও নৈতিকতার সমগ্র নখশাটাই বদলে দেয় ৷ দুই, তিনি কেবল মাত্র এক আল্লাহকেই মাবুদ, আনুগত্য করার যোগ্য, সংকট থেকে উদ্ধারকারী ও ফরিয়াদ শ্রবণকারী গণ্য করেন ৷ এর ফলে শিরক ও নাস্তিক্যবাদের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সমগ্র জীবন ব্যবস্থাটাই ভ্রান্ত গণ্য হয় ৷ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের উপরোক্ত দুটি অংশকে সত্য প্রমাণ করার জন্য এখানে বিশ্বজাহানের নিদর্শনাবলীর প্রতি সৃষ্টি আকৃষ্ট করা হয়েছে ৷ বক্তব্যের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, নিজের চারপাশের জগতের দিকে তাকিয়ে দেখো, সর্বত্র এই যে চিহ্নগুলো পাওয়া যাচ্ছে এগুলো কি নবীর বর্ণনার সত্যতা প্রমাণ করছে, না তোমাদের কাল্পনিক চিন্তা - ভাবনা ও কুসংস্কারকে সত্য প্রমাণ করছে ? নবী বলেন, মরার পর তোমাদের আবার জীবিত করা হবে ৷ তোমরা নবীর একথাকে একটি অসম্ভব কথা বলে গণ্য করছো ৷ কিন্তু প্রতি বর্ষাকালে পৃথিবী এর প্রমাণ পেশ করে ৷ সৃষ্টির পুনরাবর্তন কেবল সম্ভবই নয় বরং প্রতি বর্ষাকালে তোমাদের চোখের সামনে ঘটছে ৷ নবী বলেন, এ বিশ্বজাহান আল্লাহ বিহীন নয় ৷ তোমাদের নাস্তিকরা একথাকে একটি প্রামণহীন দাবী মনে করছে ৷ কিন্তু গবাদি পশুর গঠনাকৃতি, খেজুর ও আংগুরের উৎপাদন এবং মৌমাছির সৃষ্টি কৌশল একথার সাক্ষ দিচ্ছে যে, একজন প্রাজ্ঞ ও করুণাময় রব এ জিনিসগুলোর নকশা তৈরী করেছেন ৷ অন্যথায় এতগুলো পশু, এতসব গাছপালা এবং এত বিপুল সংখ্যক মৌমাছি মিলেমিশে মানুষের জন্য এ নানাবিধ উন্নতমানের, উৎকৃষ্ট, সুস্বাদু ও লাভজনক জিনিস প্রতিদিন যথা নিয়মে তৈরী করে যাচ্ছে, এটা কেমন করে সম্ভব ছিল ? নবী বলেন, আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর কেউ উপাস্য, মাবুদ এবং প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা লাভের হকদার নেই ৷ তোমাদের মুশরিকরা একথায় নাক সিটকায় এবং নিজেদের বহু সংখ্যক উপাস্যের পূজাবেদীতে অর্ঘ ও উপঢৌকনাদি নিবেদন করতে বদ্ধপরিকর ৷ কিন্তু তোমরা নিজেরাই বলো, এ দুধ, খেজুর, আংগুর ও মধু এগুলো তোমাদের সর্বোৎকৃষ্ট খাদ্য, এ নিয়ামতগুলো আল্লাহ ছাড়া আর কে তোমাদের দান করেছেন ? কোন দেবী, দেবতা বা অলী তোমাদের আহার পৌঁছাবার এ ব্যবস্থা করেছেন ?


No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...