প্রশ্ন: ১৬৫ : তিলাওয়াতে সিজদার হুকুম ও নিয়ম।

সুরা আ’রাফ :


﴿إِنَّ الَّذِينَ عِندَ رَبِّكَ لَا يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِ وَيُسَبِّحُونَهُ وَلَهُ يَسْجُدُونَ ۩﴾
২০৬) তোমার রবের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে অবস্থানকারী ফেরেশতাগণ কখনো নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে তাঁর ইবাদতে বিরত হয় না,১৫৫  বরঞ্চ তারা তাঁরই মহিমা ঘোষণা করে ১৫৬  এবং তাঁর সামনে বিনত থাকে ৷ ১৫৭ 


১৫৭. এ ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান এই যে, যে ব্যক্তি এ আয়াতটি পড়বে বা শুনবে তাকে সিজদা করতে হবে৷ এভাবে তার অবস্থা হয়ে যাবে আল্লাহর নিকটতম ফেরেশতাদের মত৷ এভাবে সারা বিশ্ব জাহানের ব্যবস্থাপনা পরিচালনাকারী কর্মীরা যে মহান আল্লাহর সামনে নত হয়ে আছে তারাও তাদের সাথে তাঁর সামনে নত হয়ে যাবে এবং নিজেদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সংগে সংগেই একথা প্রমাণ করে দেবে যে, তারা কোন অহমিকায় ভোগে না এবং আল্লাহর বান্দেগী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়াও তাদের স্বভাব নয়৷
কুরআন মজীদে চৌদ্দটি স্থানে সিজদার আয়াত এসেছে৷ এ আয়াতগুলো পড়লে বা শুনলে সিজদা করতে হবে, এটি ইসলামী শরীয়াতের একটি বিধিবদ্ধ বিষয়,এ ব্যাপারে সবাই একমত৷তবে এ সিজদা ওয়াজিব হবার ব্যাপারে বিভিন্ন মত রয়েছে৷ ইমাম আবু হানীফা, (র) তেলাওয়াতে সিজদাকে ওয়াজিব বলেন৷ অন্যান্য উলামা বলেন এটি সুন্নত৷ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক সময় একটি বড় সমাবেশ কুরআনে পড়তেন এবং সেখানে সিজদার আয়াত এলে তিনি নিজে তৎক্ষণাৎ সিজদা করতেন এবং সাহাবীগণএর যিনি যেখানে থাকতেন তিনি সেখানেই সিজদানত হতেন৷এমনকি কেউ কেউ সিজদা করার জায়গা না পেয়ে নিজের সামনের ব্যক্তির পিঠের ওপর সিজদা করতেন৷ হাদীসে একথাও এসেছে, মক্কা বিজয়ের সময় তিনি কুরআন পড়েন৷ সেখানে সিজদার আয়াত এলে যারা মাটির ওপর দাঁড়িয়েছিলেন তারা মাটিতে সিজদা করেন এবং যারা ঘোড়ারও উটের পিঠে সওয়ার ছিলেন তারা নিজেদের বাহনের পিঠেই ঝুঁকে পড়েন৷ কখনো নবী (সা) খুতবার মধ্যে সিজদার আয়াত পড়তেন, তখন মিম্বার থেকে নেমে সিজদা করতেন তারপর আবার মিম্বরের ওপর উঠে খুতবা দিতেন৷
অধিকাংশ আলেমের মতে নামাযের জন্যে যেসব শর্ত নির্ধারিত এ তেলাওয়াতের সিজাদার জন্যও তাই নির্ধারিত ৷ অর্থাৎ অযুসহকারে কিবলার দিকে মুখ করে নামাযের সিজদার মত করে মাটিতে মাথা ঠেকাতে হবে৷কিন্তু তেলাওয়াতের সিজদার অধ্যায়ে আমরা যতগুলো হাদীস পেয়েছি সেখানে কোথাও এ শর্তগুলোর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ নেই৷ সেখান থেকে তো একথাই জানা যায় যে, সিজদার আয়াত শুনে যে ব্যক্তি যেখানে যে অবস্থায় থাকে সে অবস্থায়ই যেন সিজদা করে - তার অযু থাক বা না থাক,কিবলামুখী হওয়া তার পক্ষে সম্ভব হোক বা না হোক, মাটিতে মাথা রাখার সুযোগ পাক বা না পাক তাতে কিছু আসে যায় না৷ প্রথম যুগের আলেমদের মধ্যেও আমরা এমন অনেক লোক দেখি যারা এভাবেই তেলাওয়াতের সিজদা করেছেন৷ ইমাম বুখারী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) সম্পর্কে লিখেছেন, তিনি অযু ছাড়াই তেলাওয়াতের সিজদা করতেন৷কাতহূল বারীতে আবু আবদুর রহমান সুলামী সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি পথ চলতে কুরআন মজীদ পড়তেন এবং কোথাও সিজদার আয়াত এলেই মাথা ঝুঁকিয়ে নিতেন৷ অযু সহকারে থাকুন বা থাকুন এবং কিবলার দিকে মুখ ফিরানো থাক বা না থাক, তার পরোয়া করতেন না৷ এসব কারণে আমি মনে করি, যদিও অধিকাংশ আলেমদের মতটিই অধিকতর সতর্কমূলক তবুও কোন ব্যক্তি যদি অধিকাংশ আলেমের মতের বিপরিত আমল করে তাহলে তাকে তিরস্কার করা যেতে পারে না৷ কারণ অধিকাংশ আলেমদের মধ্যে এমনসব লোকও পাওয়া গেছে যাদের রীতি ছিল পরবর্তীকালের অধিকাংশ আলেমদের থেকে ভিন্নতর৷

1 comment:

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...