প্রশ্ন
সালাম মুফতী সাহেব!
কিছুদিন পূর্বে আপনাদের ওয়েব সাইটে একটি প্রশ্নের জবাব প্রকাশিত হয়েছে। যাতে আপনি বলেছেন যে, লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে অজু ভঙ্গ হবে না। এ বিষয়ে ফিক্বহের কিতাবের উদ্ধৃতি প্রদান করেছেন। দয়া করে হাদীসের আলোকে বিষয়টি পরিস্কার করার অনুরোধ রইল।
প্রশ্নকর্তা-আলী আহমাদ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রশ্নের জবাব দেয়া হয়ে থাকে প্রশ্ন অনুপাতে। উক্ত প্রশ্নটি ছিল জবাব জানার জন্য দলীল জানার জন্য নয়। তাই আমরা উত্তরটি প্রদান করে ফিক্বহের কিতাবের উদ্ধৃতি প্রদান করেছি। যেহেতু ফিক্বহের কিতাবের মাসআলাগুলো কুরআন ও হাদীসের আলোকেই বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ সংকলন করেছেন। তাই ফিক্বহের কিতাবের রেফারেন্স দেয়ার দ্বারাই দলীল হয়ে গেছে বলে সাব্যস্ত হয়ে যায়।
পৃথকভাবে এ প্রশ্ন করায় আমরা উক্ত মাসআলার প্রমাণবাহী হাদীসও উদ্ধৃত করে দিচ্ছি।
عَنْ قَيْسِ بْنِ طَلْقٍ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: سَأَلَ رَجُلٌ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيَتَوَضَّأُ أَحَدُنَا إِذَا مَسَّ ذَكَرَهُ؟ قَالَ: ” إِنَّمَا هُوَ بَضْعَةٌ مِنْكَ أَوْ جَسَدِكَ
কায়েশ বিন তালক তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসূল সাঃ কে জিজ্ঞাসা করে যে, যে ব্যক্তি তার গোপনাঙ্গ স্পর্শ করেছে সে কি অজু করবে? রাসূল সাঃ বললেন, এটিতো তোমার একটি অঙ্গ বা বলেছেন তোমার শরীরের একটি অঙ্গ। [তাই এটি ধরলে অজু ভাঙ্গবে কেন?] {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৬২৮৬}
ইবনে হিব্বান, তাবারানী ইবনে হাযম একে সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন। আল্লামা আলী বিন মাদিনী রহঃ বলেন, এটি বুসরাহ রাঃ এর [গোপনাঙ্গ স্পর্শ করলে অজু ভেঙ্গে যাবার] হাদীসের তুলনায় এটি উত্তম। {আসারুস সুনান-৪৯}
ইমাম তিরমিজী এ সংক্রান্ত হাদীস আনার পর মন্তব্য করেন
قال الترمذي: وقد روي عن غير واحد من أصحاب النبي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وبعض التابعين: أنهم لم يَرَوْا الوضوء من مسِّ الذكر، وهو قول أهل الكوفة وابن المبارك. وهذا الحديث أحسن شيء روي في هذا الباب.
এছাড়া আরো সাহাবায়ে কেরামগণ এবং তাবেয়ীগণ থেকে এরকম বক্তব্য নির্ভর হাদীস বর্ণিত হয়েছে। যারা লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে অজু করার কথা বলতেন না। এটিই আহলে কুফা এবং আব্দুল্লাহ বিন মুবারকের সিদ্ধান্ত। আর এ হাদীস এ বিষয়ে বর্ণিত সবচে’ উত্তম। {তিরমিজী, হাদীস নং-৮৫}
عَنْ أَرْقَمَ بْنِ شُرَحْبِيلَ، قَالَ: ” قُلْتُ لِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ: إِنِّي أَحُكُّ جَسَدِي وَأَنَا فِي الصَّلاةِ فَأَمَسُّ ذَكَرِي، فَقَالَ: إِنَّمَا هُوَ بِضْعَةٌ مِنْكَ
হযরত আরকাম বিন শুরাহবিল থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদকে বললাম, আমি নামাযরত অবস্থায় আমার শরীর চুলকাচ্ছিলাম। এর মাঝে আমি আমার গোপনাঙ্গ স্পর্শ করে ফেলি।[এ পরিস্থিতে হুকুম কী? অজু কি ভেঙ্গে গেছে?] আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রাঃ বললেন, এটিতো তোমার শরীরেরই একটি অংশ। [তাই অজু ভাঙ্গবে কেন? শরীরের অন্য অঙ্গে ধরলে যেমন ভাঙ্গবে না, তো এখানে ধরলে ভাঙ্গবে কেন?] {মুয়াত্তা মুহাম্মদ, হাদীস নং-২১}
এর সনদটি হাসান। {আসারুস সুনান-৪৯}
عَنْ إِبْرَاهِيمَ، ” أَنَّ ابْنَ مَسْعُودٍ سُئِلَ عَنِ الْوُضُوءِ مِنْ مَسِّ الذَّكَرِ؟ فَقَالَ: إِنْ كَانَ نَجِسًا فَاقْطَعْهُ
হযরত ইবরহীম নাখয়ী থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় ইবনে মাসঊদ রাঃ কে লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে অজু ভেঙ্গে যাবে কি না? মর্মে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যদি এটি নাপাকই হয়, তাহলে এটি কেটে ফেল। {মুয়াত্তা মুহাম্মদ, হাদীস নং-১৯}
এ সংক্রান্ত আরো অনেক সহীহ হাদীস ও আছারে সাহাবা তাহাবী শরীফ, মুয়াত্তা মুহাম্মদ, মুসনাদে আহমাদ, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, আসারুস সুনানসহ হাদীসের বিভিন্ন গ্রন্থে বিদ্যমান। যা পরিস্কার প্রমাণ করে যে লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে অজু ভঙ্গ হবে না। কারণ এটি শরীরের একটি অঙ্গ। নাক স্পর্শ করলে যেমন ভাঙ্গবে না, তেমনি লজ্জাস্থান স্পর্শ করলেও অজু ভাঙ্গবে না। যদি এটি নাপাকই হতো, তাহলে সর্বক্ষণই মানুষের শরীর নাপাক হিসেবে গণ্য হতো। কিন্তু একথা কি কেউ বলেন?
তাহলে বুঝা গেল লজ্জাস্থান স্পর্শ করার সাথে অজু ভঙ্গের কোন সম্পর্ক নেই। যে হাদীসে ভঙ্গের কথা আসছে সেখানে উদ্দেশ্য হল এর দ্বারা যদি ভিতর থেকে মজী বা অদী জাতীয় নাপাক বেরিয়ে আসে, তাহলে অজু ভেঙ্গে যাবার কথা বুঝানো উদ্দেশ্য। এমনিতে ধরলেই অজু ভেঙ্গে যাওয়া উদ্দেশ্য নয়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
তবে শাফেয়ী মাজহাব অনুসারে লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে অজু ভেঙ্গে যাবে।
No comments:
Post a Comment