প্রশ্ন: ১৫২ : মদ পান করার শাস্তি ।

কোরআনের আয়াত: 
  লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করে মদ ও জুয়া সম্পর্কে। তুমি বল: উভয়ের মধ্যে আছে মহাপাপ এবং উপকারও আছে মানুষের জন্যতবে এদের পাপ উপকারের চেয়ে অধিক। [সূরা বাকারা-২১৯] 
  ওহে যারা ঈমান এনেছ! মদজুয়ামুর্তিপূজার বেদী এবং ভাগ্য নির্ণায়ক তীর তো ঘৃন্য বস্তুশাইতানের কাজ। অতএব তোমরা সব বর্জন কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। [সূরা মায়িদা-৯০] 
  শাইতান তো তোমাদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে এবং তোমাদের বাধা দিতে চায় আল্লাহর স্মরণ থেকে ও সালাত থেকে। তবুও কি তোমরা নিবৃত্ত হবেনা? [সূরা মায়িদা-৯১] 
 এ বিষয়ে অন্যান্য সূরা দেখুন : সূরা নিসা-৪৩। 
হাদীস: 
  নবী করীম (সাঃ)  বলেছেন: যে ব্যক্তি দুনিয়ার মদ পান করেছে এরপর সে তা থেকে তওবা করেনি সেই ব্যক্তি আখিরাতে তা থেকে বঞ্চিত থাকবে। [বুখারী ৫১৬২-আ,উমর (রাঃ) , [তিরমিযী ১৮৬৭] 
 আয়িশা (রাঃ)  বলেননবী করীম (সাঃ)  বলেছেন: সব নেশা যাতীয় পানীয়ই হারাম। [বুখারী ৫১৭২তিরমিযী ১৮৬৯মুসলিম ৫০৪১] 
 নবী করীম (সাঃ)  বলেছেন: আমার উম্মতের মাঝে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে যারা ব্যাভিচাররেশমী কাপড়মদ ও বাদ্য যন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে। [বুখারী ৫১৭৬-আগানাম আশারী (রাঃ )] 
  কোন শরাব পানকারী শরাব পান করার সময় ঈমানদার থাকেনা। [বুখারী ৬৩০২-আবূ হুরাইরা (রাঃ)] 
মদ পানের ভয়াবহতা সম্পর্কে নবী করীম (সাঃ)
  এর সতর্কবানী: 
মদ পান করা অবস্হায় মদ পানকারী কোন মুসলিমের ঈমান থাকেনা। অতএব যদি এ অবস্হায় মৃত্যু এসে যায় তাহলে তাকে বে-ঈমান হয়ে মরতে হবে। কেননা হাদীসে এসেছে: আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন: নবী করীম (সাঃ) বলেছেন: ব্যভিচারী ব্যাভিচারে লিপ্ত থাকা অবস্হায় ঈমানদার থাকেনামদ পানকারী মদ পান করার সময় ঈমানদার থাকেনা এবং চোর চুরি করার সময় ঈমানদার থাকেনা। [হাদীসটি বুখারী (২৪৭৫,৫৫৭৮,৬৭৭২), মুসলিম (৫৭), তিরমিযী (২৬২৫), নাসাঈ (৪৮৭০,৪৮৭১), আবূ দাঊদ (৪৬৮৯), ইবনে মাযাহ (৩৯৩৬), আহমদ (৭২৭৬) ও দারেমী (২১০৬) বর্ণনা করেছেন]। 
  নবী করীম (সাঃ) শরাব পানকারীকে বেত্রাঘাত এবং জুতা মেরেছেন। [বুখারী ৬৩০৩-আমালিক (রাঃ), ইবনে মাযাহ ২৫৭০] 
১০
 যা নেশা সৃষ্টি করে তাই মদআর যা নেশা সৃষ্টি করে তাই হারাম। [মুসলিম ৫০৪৯-ইবন উমর (রাঃ) তিরমিযী ১৮৬৭] 
১১
 নবী করীম (সাঃ)  বলেছেন: কেহ মাতাল হলে তাকে বেত্রাঘাত কর। সে পুনরায় মাতাল হলে তাকে বেত্রাঘাত কর। সে পুনরায় মাতাল হলে আবারো বেত্রাঘাত কর। এরপর চতুর্থবার বলেছেন: সে যদি পুনরায় মাতাল হয় তাহলে তার গর্দান উড়িয়ে দাও। [ইবনে মাযাহ ২৫৭২-আবূ হুরাইরা (রাঃ)] 
১২
 মদ পান করবেনা। কেননা তা সমস্ত পাপ কাজের উৎস। [ইবনে মাযা ৪০৩৪] 
১৩
 হালাল ও পবিত্র শরবতের পরে অন্যান্য শরবত ঘৃন্য হারাম। [বুখারী ৫১৮৪] 
১৪
 প্রত্যেক নেশার বস্তুই হারাম। [বুখারী ৫৬৮২-আবূ মুসা (রাঃআবূ দাঊদ ৩৬৪৩) 
১৫
 যা অধিক পরিমাণে পানকরলে নেশার সৃষ্টি হয় তা অল্প পরিমানে পান করাও হারাম। [আবূ দাঊদ ৩৬৪০] 
আল্লাহ এবং আখেরাতে বিশ্বাসী কোন ব্যক্তি মদ পান করতে পারে না এবং মদের টেবিলে বসতেও পারে না। 
আবূ হূরাইরা (রাঃ)  হতে বর্নিত হয়েছেকারন রাসূল (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে মদ পান করতে পারে না এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখেসে ব্যক্তি সেই দস্তরখানা (টেবিল বা স্হানে)  বসতে পারে না যেখানে মদ পান করা হয় [হাদীসটি ইমাম ত্ববরনী আল-মুজামুল কাবীর গ্রন্হে (১১৩০০)  বর্ননা করেছেন। হাদীসটিকে শায়খ আলবানী সহীহ আখ্যা দিয়েছেনদেখুন সহীহ তারগীব অত-তারহীব (১৭২)] 
আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ)  হতে বর্নিত হয়েছেতিনি রাসূল (সাঃ)  হতে বর্ননা করেনতিনি বলেন: তিন শ্রেনীর লোক কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবেন না: দায়ূসপুরুষের বেশধারী এবং অব্যাহতভাবে মদ পানকারী। সাহাবীগন বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! মদ পানকারীকে আমরা চিনি তবে দায়ূস কেতিনি বললেন: সেই ব্যক্তি যে তার পরিবারের (স্ত্রীর) নিকট কে প্রবেশ করছে সে ব্যাপারে তার কোন রোয়াই নাই (কিছুই মনে করে না) । আমর বললাম: পুরুষের বেশ ধারনকারী নারী দ্বারা কি বুঝালো হয়েছেতিনি বললেন: পুরুষের সাথে সাদৃশ ধারনকারী নারী। [হাদীসটি ইমাম ত্ববরনী বর্ননা করেছেন। হাদীসটিকে শায়খ আলবানী সহীহ আখ্যা দিয়েছেনদেখুন সহীহ তারগীব অত-তারহীব (২০৭১২৩৬৭) ] 
আখেরাতে মদ পানকারীর শাস্তি: জাবের (রাঃ) হতে বর্নিত হয়েছে যেএক ব্যাক্তি ইয়ামানের জীশানা অ জায়শানু হতে আগমন করে রাসূল (সাঃ) কে তাদের ভূমিতে উৎপন্ন যুরাহ (ভুট্টা) থেকে প্রস্তুতকৃত শরাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল যাকে মিযরু বলা হয়ে থাকে। রাসূল (সাঃ)  বলেছেন: তা কি মাতাল করে (নেশা সৃষ্টিকারীসে ব্যক্তি বলল: জি হ্যা। তখন রাসূল (সাঃ)  বললেন: সকল প্রকার মাতালকারী বস্তু হারাম। আর আল্লাহ এ অঙ্গীকার করেছেন যেযে ব্যক্তি মাতালকারী বস্তু পান করবে তিনি তাকে তীনাতুল খাবাল ভক্ষন করাবেন। তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল! ত্বীনাতুল খাবাল কিতিনি বললেন: জাহান্নামীদের ঘাম অথবা জাহান্নামীদের থেকে নির্গত দুর্গন্ধযুক্ত নিকৃষ্ট  রস। [হাদীসটি ইমাম মুসলিম (২০০২)  ও নাসাঈ (৫৭০৯) বর্ননা করেছেন।] 
মদ পানকারীর ৪০ দিনের সালাত কবুল করা হবে না: আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)  হতে বর্নিত হয়েছেতিনি বলেন: রাসূল (সাঃ)  বলেছেন: যে ব্যক্তি মদ পান করে মাতাল হয়ে যাবে তার ৪০ দিনের সালাত কবূল করা হবেনা। সে যদি এ অবস্হায় মারা যায় তাহলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (পান করার পর যদি সে তাওবাহ করে তাহলে আল্লাহ তার রাওবাহ কবুল করবেন। অত:পর সে যদি পুনরায় মদ পান করে মাতাল হয়ে যায় তাহলে তার ৪০ দিনের সালাত কবুল করা হবেনা। অত:পর সে যদি এ অবস্হায় মারা যায় তাহলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।  অত:পর সে যদি ৪র্থ বার মদ পান করে তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর উপরে তাকে রাদাগাতুল খাবালত্বীনাতুল খাবাল পান করানো অপরিহার্য হয়ে যায়। তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল! রাদাগাতুল খাবালত্বীনাতুল খাবাল কিতিনি বললেন: জাহান্নামীদের থেকে নির্গত দুর্গন্ধযুক্ত নিকৃষ্ট রস।[হাদীসটি ইবনু মাযাহ (৩৩৭৭) এবং ইমাম আহমদ ও তিরমিযীও বর্ননা করেছেন।] 

1 comment:

  1. কেহো যদি কোন কোম্পানি তে job করে ওটা মদের কোম্পানি না but কিছু time মদ ডেলিভারি দিতে হয় তার বিনিময়ে কিছু tips নেওয়া জায়েজ হবে?

    ReplyDelete

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...