প্রশ্ন: ১৪৭: নামাজে কিবলামুখী হওয়া কি জরুরী ?

উত্তর: জ্বী । নামাজে কিবলা মূখী হওয়া ফরজ। 

সুরা বাক্বারায় এসেছে : 

 

﴿قَدْ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ ۖ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا ۚ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۚ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ ۗ وَإِنَّ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا يَعْمَلُونَ﴾
১৪৪) আমরা তোমাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখছি ৷ নাও, এবার তাহলে সেই কিব্‌লার দিকে তোমার মুখ ফিরিয়ে দিচ্ছি , যাকে তুমি পছন্দ করো ৷ মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও ৷এখন তোমরা যেখানেই হও না কেন এদিকেই মুখ করে নামায পড়তে থাকো ৷১৪৬  এসব লোক, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল, খুব ভালো করেই জানে, (কিব্‌লাহ পরিবর্তনের) এ হুকুমটি এদের রবের পক্ষ থেকেই এসেছে এবং এটি একটি যথার্থ সত্য হুকুম ৷ কিন্তু এ সত্ত্বেও এরা যা কিছু করছে আল্লাহ তা থেকে গাফেল নন ৷  
১৪৬ . কিব্‌লাহ পরিবর্তন সম্পর্কিত এটি ছিল মূল নির্দেশ ৷ এ নির্দেশটি ২য় হিজরীর রজব বা শাবান মাসে নাযিল হয় ৷ ইবনে সা'দ বর্ণনা করেছেন , নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি দাওয়াত উপলক্ষে বিশর ইবনে বারাআ ইবনে মা'রুর-এর গৃহে গিয়েছিলেন ৷ সেখানে যোহরের সময় হয়ে গিয়েছিল ৷ তিনি সেখানে নামাযে লোকদের ইমামতি করতে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৷ দুই রাকাত পড়া হয়ে গিয়েছিল ৷ তৃতীয় রাকাতে হঠাৎ অহীর মাধ্যমে এ আয়াতটি নাযিল হলো ৷ সংগে সংগে তিনি ও তাঁর সংগে জামায়াতে শামিল সমস্ত লোক বাইতুল মাকদিসের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে কা'বার দিকে ঘুরে গেলেন ৷ এরপর মদীনায় ও মদীনার আশেপাশে এ নির্দেশটি সাধারণভাবে ঘোষণা করে দেয়া হলো ৷ বারাআ ইবনে আযিব বলেন, এক জায়গায় ঘোষকের কথা লোকদের কানে এমন অবস্থায় পৌছলো যখন তারা রুকূ' করছিল ৷ নির্দেশ শোনার সাথে সাথে সবাই সেই অবস্থাতেই কা'বার দিকে মুখ ফিরালো ৷ আনাস ইবনে মালিক বলেন, এ খবরটি বনী সালমায় পৌছালো পরের দিন ফজরের নামাযের সময় ৷ লোকেরা এক রাকায়াত নামায শেষ করেছিল এমন সময় তাদের কানে আওয়াজ পৌছলো: " সাবধান, কিব্‌লাহ বদলে গেছে ৷ এখন কা'বার দিকে কিব্‌লাহ নির্দিষ্ট হয়েছে ৷ " একথা শোনার সাথে সাথই সমগ্র জামায়াত কা'বার দিকে মুখ ফিরালো ৷
উল্লেখ করা যেতে পারে, বাইতুল মাকদিস মদীনা থেকে সোজা উত্তর দিকে ৷ আর কা'বা হচ্ছে দক্ষিণ দিকে ৷ আর নামাযের মধ্যে কিব্‌লাহ পরিবর্তন করার জন্য ইমামকে অবশ্যি মুকতাদিদের পেছন থেকে সামনের দিকে আসতে হয়েছে ৷ অন্যদিকে মুকতাদিদের কেবলমাত্র দিক পরিবর্তন করতে হয়নি বরং তাদেরও কিছু কিছু চলাফেরা করে লাইন ঠিকঠাক করতে হয়েছে ৷ কাজেই কোন কোন রেওয়ায়াতে এ সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনাও এসেছে ৷
আর আয়াতে যে বলা হয়েছে , 'আমরা তোমাকে বারবার আকাশের দিকে তাকাতে দেখছি' এবং 'সেই কিব্‌লাহ দিকে তোমার মুখ ফিরিয়ে দিচ্ছি যাকে তুমি পছন্দ করো ' এ থেকে পরিস্কার জানা যায় , কিব্‌লাহ পরিবর্তনের নির্দেশ আসার আগে থেকেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ প্রতীক্ষায় ছিলেন ৷ তিনি নিজেই অনুভব করছিলেন , বনী ইসরাঈলের নেতৃত্বের যুগ শেষ হয়ে গেছে এবং তার সাথে সাথে বাইতুল মাকদিসের কেন্দ্রিয় মর্যাদা লাভেরও অবসান ঘটেছে ৷ এখন আসল ইবরাহীমী কেন্দ্রের দিকে মুখ ফিরাবার সময় এসে গেছে ৷
'মসজিদে হারাম' অর্থ সম্মান ও মর্যাদা সম্পন্ন মসজিদ৷ এর অর্থ হচ্ছে, এমন ইবাদত গৃহ যার মধ্যস্থলে কা'বাগৃহ অবস্থিত ৷
কা'বার দিকে মুখ করার অর্থ এ নয় যে , দুনিয়ার যে কোন জায়গা থেকে সোজা নাক বরাবর কা'বার দিকে ফিরে দাঁড়াতে হবে৷ প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য প্রত্যেক জায়গায় সবসময় এটা করা কঠিন ৷ তাই কা'বার দিকে মুখ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ সোজা কা'বা বরাবর মুখ করে দাঁড়াবার নির্দেশ দেয়া হয়নি ৷ কুরআনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে যথাসম্ভব কা'বার নির্ভুল দিকনির্দেশ করার জন্য অনুসন্ধান আমাদের অবশ্যি চালাতে হবে৷ কিন্তু একেবারেই যথার্থ ও নির্ভুল দিক জেনে নেয়ার দায়িত্ব আমাদের ওপর অর্পণ করা হয়নি ৷ সম্ভাব্য সকল উপায়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যে দিকটিতে কা'বার অবস্থিত হওয়া সম্পর্কে আমরা সবচেয়ে বেশী নিশ্চিত হতে পারি সেদিকে ফিরে নামায পড়াই নিসন্দেহে সঠিক পদ্ধতি ৷ যদি কোথাও কিব্‌লার দিকনির্দেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে অথবা এমন অবস্থায় থাকা হয় যার ফলে কিব্‌লার দিকে মুখ করে থাকা সম্ভব না হয় (যেমন নৌকা বা রেলগাড়ীতে ভ্রমণ কালে )তাহলে এ অবস্থায় যে দিকটার কিব্‌লাহ হওয়া সম্পর্কে ধারণা হয় অথবা যেদিকে মুখ ফিরিয়ে থাকা সম্ভব হয়, সেদিকে মুখ ফিরিয়ে নামায পড়া যেতে পারে ৷তবে, হাঁ , নামাযের মধ্যেই যদি কিব্‌লার সঠিক দিকনির্দেশনা জানা যায় অথবা সঠিক দিকে নামায পড়া সম্ভব হয়, তাহলে নামায পড়া অবস্থায়ই সেদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়া উচিত ৷

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...