ইসলাম ডেস্ক: সামনে পবিত্র ঈদুল আযহা। এদিন মুসলমানেরা পবিত্র ঈদের নামাজ শেষ করে কোরবানি করে থাকেন। তাই মৃত ব্যক্তির নামে কোরবানি জায়েজ কিনা কিংবা কাদের নামে কোরবানি করা জায়েজ-এ বিষয়ে জ্ঞান থাকা খুবই জুরুরী। তাই নিচের বর্ণনাটি একটু মনোযোগ দিয়ে পড়েন।
মৃতের পক্ষ থেকে কোরবানি করা জায়েয। তবে মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তাহলে সেটি নফল কোরবানি হিসেবে গণ্য হবে। কোরবানির স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কোরবানির ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। [মুসনাদে আহমদ ১/১০৭, হাদীস ৮৪৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫২]
প্রশ্ন : আমার পিতা গত বছর ইন্তেকাল করেছেন। আমি তার নামে কোরবানি করার নিয়ত করেছি। প্রশ্ন হল, মৃত ব্যক্তির নামে দেওয়া কোরবানির গোশত কী করতে হবে? তার অংশের পুরো গোশতই কি সদকা করতে হবে, নাকি নিজেরাও তা খেতে পারব? জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর: মৃত ব্যক্তি যদি কোরবানির জন্য ওসিয়ত না করে থাকে তবে তার পক্ষ থেকে দেওয়া কোরবানির গোশতের হুকুম সাধারণ কোরবানির মতো; নিজেরাও খেতে পারবে অন্যদেরকেও দিতে পারবে। পুরোটা সদকা করা জরুরি নয়। তবে মৃত ব্যক্তি যদি অসিয়ত করে যায় এবং তার সম্পদ দ্বারাই কোরবানি করা হয়ে থাকে তাহলে এ কোরবানির পুরো গোশত সদকা করা জরুরি। এ থেকে নিজেদের খাওয়া জায়েয হবে না।
[ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৩; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৩৫]
প্রশ্ন: প্রতি বছর আমরা ছয় ভাই একটি গরু কোরবানি করি। একটি গরুতে যেহেতু সাতজন শরিক হতে পারে তাই এবার আমরা পশুর ৭ম ভাগটি ইছালে ছওয়াবের উদ্দেশে মৃত পিতার পক্ষ থেকে কোরবানি দিতে চাচ্ছি। এভাবে মৃত পিতার পক্ষ থেকে কোরবানি করলে তা সহীহ হবে কি এবং ঐ অংশের গোশত কি আমরা খেতে পারব?
উত্তর: হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ৬ জন মিলে ৭ম অংশ পিতার পক্ষ থেকে কোরবানি করলে তা সহীহ হবে এবং আপনারা ঐ অংশের গোশত খেতে পারবেন। তবে এটি উত্তম পদ্ধতি নয়। এক্ষেত্রে উত্তম হল, সবাই মিলে এক অংশের টাকা এক ভাইকে মালিক বানিয়ে দিবে। আর ঐ ভাই পিতার পক্ষ থেকে কোরবানি করবে। এতে কাজটি নিয়মসম্মত হবে এবং সকলে সওয়াবও পেয়ে যাবে। আর এ অবস্থায়ও মৃত পিতার পক্ষ থেকে দেওয়া অংশের গোশত কোরবানিদাতার হবে। সে তা নিজেও খেতে পারবে, সদকাও করবে পারবে এবং অন্য শরিককে হাদিয়াও দিতে পারবে। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৮৫; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৮] -প্রিয় নিউজ
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/এমআর
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/এমআর
ইমাম আবূ দা'ঊদ এবং ইমাম তিরমিযী এ মর্মে দু'টি হাদীস বর্ণনা করেছেন নিম্নে সে দু'টি নিয়ে আলোচনা করা হলো :
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ حَدَّثَنَا شَرِيكٌ عَنْ أَبِي الْحَسْنَاءِ عَنْ الْحَكَمِ عَنْ حَنَشٍ قَالَ رَأَيْتُ عَلِيًّا يُضَحِّي بِكَبْشَيْنِ فَقُلْتُ لَهُ مَا هَذَا فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْصَانِي أَنْ أُضَحِّيَ عَنْهُ فَأَنَا أُضَحِّي عَنْهُ. (أبوداود : ২৭৯০)
ইমাম আবূ দাঊদ বলেন : আমাদেরকে উসমান ইবনু আবী শাইবাহ্ হাদীস বর্ণনা করে (শুনিয়েছেন), তিনি বলেন : আমাদেরকে শারীক হাদীস বর্ণনা করে (শুনিয়েছেন), তিনি আবুল হাসনা হতে, তিনি আল-হাকাম হতে, তিনি হানাশ হতে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেন : আমি আলী )ঃ(-কে দু'টি মেষ যাব্হ করতে দেখেছি। আমি তাকে বললাম এ কি? (অর্থাৎ দু'টি কেন?) তিনি উত্তরে বললেন : রসূল )সা: ( আমাকে তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানী করার জন্য অসিয়্যাত করে গেছেন। তাই আমি তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানী করছি। [হাদীসটি ইমাম আবূ দাঊদ (২৭৯০) বর্ণনা করেছেন।
আর ইমাম তিরমিযীর ভাষাটি হচ্ছে নিম্নরূপ :
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عُبَيْدٍ الْمُحَارِبِيُّ الْكُوفِيُّ حَدَّثَنَا شَرِيكٌ عَنْ أَبِي الْحَسْنَاءِ عَنْ الْحَكَمِ عَنْ حَنَشٍ عَنْ عَلِيٍّ أَنَّهُ كَانَ يُضَحِّي بِكَبْشَيْنِ أَحَدُهُمَا عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْآخَرُ عَنْ نَفْسِهِ فَقِيلَ لَهُ فَقَالَ أَمَرَنِي بِهِ يَعْنِي النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَا أَدَعُهُ أَبَدًا.
ইমাম তিরমিযী বলেন : আমাদেরকে মুহাম্মাদ ইবনু ওবাইদ মুহারিবী কূফী হাদীস বর্ণনা করে শুনিয়েছেন, তিনি বলেন : আমাদেরকে শারীক হাদীস বর্ণনা করে শুনিয়েছেন, তিনি আবুল হাসনা হতে, তিনি আল-হাকাম হতে, তিনি হানাশ হতে, তিনি আলী )ঃ( হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি (আলী) দু'টি মেষ কুরবানী দিতেন একটি নাবী )ব (-এর পক্ষ থেকে আর দ্বিতীয়টি তার নিজের পক্ষ থেকে। তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন : আমাকে নাবী )সা:( তা করতে নির্দেশ দিয়ে গেছেন। অতএব আমি কখনও তা ছাড়ব না। [হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (১৪৯৫) বর্ণনা করেছেন]।
No comments:
Post a Comment