প্রশ্ন ১৮ : পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত একমাত্র সাহাবীর নাম ।

 সুরা আহযাব : আয়াত নং: ৩৭ :
 
﴿وَإِذْ تَقُولُ لِلَّذِي أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَأَنْعَمْتَ عَلَيْهِ أَمْسِكْ عَلَيْكَ زَوْجَكَ وَاتَّقِ اللَّهَ وَتُخْفِي فِي نَفْسِكَ مَا اللَّهُ مُبْدِيهِ وَتَخْشَى النَّاسَ وَاللَّهُ أَحَقُّ أَن تَخْشَاهُ ۖ فَلَمَّا قَضَىٰ زَيْدٌ مِّنْهَا وَطَرًا زَوَّجْنَاكَهَا لِكَيْ لَا يَكُونَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ حَرَجٌ فِي أَزْوَاجِ أَدْعِيَائِهِمْ إِذَا قَضَوْا مِنْهُنَّ وَطَرًا ۚ وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ مَفْعُولًا﴾
 হে নবী! ৬৭ স্মরণ করো, যখন আল্লাহ এবং তুমি যার প্রতি অনুগ্রহ করেছিলে ৬৮ তাকে তুমি বলছিলে, তোমার স্ত্রীকে ত্যাগ করো না এবং আল্লাহকে ভয় করো৷ ৬৯ সে সময় তুমি তোমার মনের মধ্যে যে কথা গোপন করছিলে আল্লাহ তা প্রকাশ করতে চাচ্ছিলেন, তুমি লোকভয় করছিলে, অথচ আল্লাহ এর বেশী হকদার যে, তুমি তাকে ভয় করবে৷ ৭০ তারপর তখন তার ওপর থেকে যায়েদের সকল প্রয়োজন ফুরিয়ে গেল ৭১ তখন আমি সেই (তালাকপ্রাপ্তা মহিলার) বিয়ে তোমার সাথে দিয়ে দিলাম,৭২  যাতে মুমিনদের জন্য তাদের পালক পুত্রদের স্ত্রীদের ব্যাপারে কোনো প্রকার সংকীর্ণতা না থাকে যখন তাদের ওপর থেকে তাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়৷ ৭৩ আর আল্লাহর হুকুম তো কার্যকর হয়েই থাকে৷



৬৮. এখানে যায়েদের (রা) কথা বলা হয়েছে৷ সামনের দিকে কথাটি সুস্পষ্ট করে প্রকাশ করা হয়েছে৷ তাঁর প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ কি ছিল এবং নবী (সাঃ) এর অনুগ্রহ কি ছিল? এ বিষয়টি অনুধাবন কি ছিল এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি কাহিনীটি বর্ননা করে দেয়া জরুরী মনে করছি৷ তিনি ছিলেন আসলে কালব গোত্রের হারেসা ইবনে শারাহীল নামক এক ব্যক্তির পুত্র৷ তাঁর মাতা সু'দা বিনতে সা'লাব ছিলেন তাঈ গোত্রের বনী মা'ন শাখার মেয়ে৷ তাঁর বয়স যখন আট বছর তখন তাঁর মা তার নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যান৷ সেখানে নবী কাইন ইবনে জাসকরের লোকেরা তাদের লোকালয় আক্রমণ করে এবং লুটপাট করে যেসব লোককে নিজেদের সাথে পাকড়াও করে নিয়ে যায় তদের মধ্যে হযরত যায়েদও ছিলেন৷ তারা তায়েফের নিকটবর্তী উকাযের মেলায় নিয়ে গিয়ে তাঁকে বিক্রি করে দেয়৷ হযরত খাদীজার (রা) ভাতিজা হাকিম ইবনে হিযাম তাঁকে কিনে নিয়ে যান৷ তিনি তাঁকে মক্কায় নিয়ে এসে নিজের ফুফুর খেদমতে উপঢৌকন হিসেবে পেশ করেন৷ নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে হযরত খাদীজার (রা) যখন বিয়ে হয় তখন নবী করীম (সাঃ) তার কাছে যায়েদকে দেখেন এবং তার চালচলন ও আদব কায়দা তার এত বেশী পছন্দ হয়ে যায় যে, তিনি হযরত খাদীজার (রা) কাছ থেকে তাকে চেয়ে নেন৷ এভাবে এই সৌভাগ্যবান ছেলেটি সৃষ্টির সেরা এমন এক ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে এসে যান যাকে কয়েক বছর পরেই মহান আল্লাহ নবীর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে যাচ্ছিলেন৷ তখন হযরত যায়েদের (রা) বয়স ছিল ১৫ বছর৷ কিছুকাল পরে তার বাপ চাচা জানতে পারেন তাদের ছেলে মক্কায় আছে৷ তারা তার খোজ করতে করতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পৌঁছে যার৷ তারা বলেন, আপতি মুক্তিপণ হিসেবে যা নিতে চান বলুন আমরা তা আপনাকে দিতে প্রস্তুত আছি, আপনি আমাদের সন্তান আমাদের হাতে ফিরিয়ে দিন৷ নবী করীম (সা) বলেন, আমি ছেলেকে ডেকে আনছি এবং তার ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দি‌চিছ, সে চাইলে আপনাদের সাথে চলে যেতে পারে এবং চাইলে আমার কাছে থাকতে পারে৷ যদি সে আপনাদের সাথে চলে যেতে চায় তাহলে আমি এর বিনিময়ে মুক্তি পণ হিসেবে কোন অর্থ নেবো না এবং তাকে এমনিই ছেড়ে দেবো৷ আর যদি সে আমার কাছে থাকতে চায় তাহলে আমি এমন লোক নই যে, কেউ আমার কাছে থাকতে চাইলে আমি তাকে খামখা তাড়িয়ে দেবো৷ জাববে তারা বলেন, আপনি যে কথা বলেছেন তাতো ইনসাফেরও অতিরিক্ত৷ আপনি ছেলেকে ডেকে জিজ্ঞেস করে নিন৷ নবী করীম (সা) যায়েদকে ডেকে আনেন এবং তাকে বলেন, এই দু'জন ভদ্রলোককে চেনো? যায়েদ জবাব দেন, জি হ্যাঁ, ইনি আমার পিতা এবং ইনি আমার চাচা৷ তিনি বলেন, আচ্ছা, তুমি এদেরকেও জানো এবং আমাকেও জানো৷ এখন তোমার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে, তুমি চাইলে এদের সাথে চলে যেতে পারো এবং চাইলে আমার সাথে থেকে যাও৷ তিনি জবাব দেন, আমি আপনাকে ছেড়ে কারো কাছে যেতে চাই না৷ তার বাপ ও চাচা বলেন, যায়েদ, তুমি কি স্বাধীনতার ওপর দাসত্বকে প্রাধান্য দিচ্ছো এবং নিজের মা-বাপ ও পরিবার পরিজনকে ছেড়ে অন্যদের কাছে থাকতে চাও? তিনি জবাব দেন, আমি এ ব্যক্তির যে গুণাবলী দেখেছি তার অভিজ্ঞতা লাভ করার পর এখন আর দুনিয়ার কাউকেও তার ওপর প্রাধান্য দিতে পারি না৷ যায়েদের এ জবাব শুনে তার বাপ ও চাচা সন্তুষ্ট চিত্তে তাকে রেখে যেতে রাজি হয়ে যান৷ নবী (সাঃ) তখনই যায়েদকে আযাদ করে দেন এবং হারাম শরীফে গিয়ে কুরাইশদের সাধারণ সমাবেশে ঘোষণা করেন, আপনারা সবাই সাক্ষী থাকেন আজ থেকে যায়েদ আমার ছেলে, সে আমার উত্তরাধিকারী হবে এবং আমি তার উত্তরাধিকারী হবো৷ এ কারণে লোকেরা তাঁকে যায়েদ ইবণে মুহাম্মাদ বলতে থাকে৷ এসব নবুওয়াতের পূর্বের ঘটনা৷ তারপর যখন নবী (সা) আল্লাহর পক্ষ থেকে নবুওয়াতের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হন তখন চারজন এমন ছিলেন যারা এক মুহূর্তের জন্যও কোন প্রকার সন্দেহ ছাড়াই তাঁর মুখে নবুওয়াতের দাবী শুনতেই তাকে নবী বলে মেনে নেন৷ তাদের একজন হযরত খাদীজা (রা), দ্বিতীয়জন হযরত যায়েদ (রা), তৃতীয় জন হযরত আলী (রা) এবং চতুর্থজন হযরত আবু বকর (রা)৷ এ সময় হযরত যায়েদের (রা) বয়স ছিল ৩০ বছর এবং নবী করীমের (সা) সাথে তার ১৫ বছর অতিবাহিত হয়ে গিয়েছিল৷ হিজরাতের পরে ৪ হিজরীতে নবী (সা) নিজের ফুফাত বোনের সাথে তার বিয়ে দিয়ে দেন৷ নিজের পক্ষ থেকে তার মোহরানা আদায় করেন এবং ঘর-সংসার গুছিয়ে নেবার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও দেন৷ এ অবস্থায় প্রতিই মহান আল্লাহ তাঁর "যার প্রতি আল্লাহ ও তুমি অনুগ্রহ করেছিল" বাক্যাংশের মধ্যে ইশারা করেছেন৷

 

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...