উত্তর :
﴿يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَىٰ وَهُم مِّنْ خَشْيَتِهِ مُشْفِقُونَ﴾
(আল আম্বিয়া : ২৮) যাকিছু তাদের সামনে আছে এবং যাকিছু আছে তাদের অগোচরে সবই তিনি জানেন৷ যাদের পক্ষে সুপারিশ শুনতে আল্লাহ সম্মত তাদের পক্ষে ছাড়া আর কারো সুপারিশ তারা করে না এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত৷২৭
২৭. মুশরিকরা দু'টি কারণে ফেরেশতাদেরকে মাবুদে পরিণত করতো৷ এক, তাদের মতে তারা ছিল আল্লাহর সন্তান, দুই তাদরকে পূজা (খোশামোদ তোশামোদ) করার মাধ্যমে তারা তাদেরকে আল্লাহর কাছে নিজেদের জন্য শাফায়াতকারীতে (সুপারিশকারী) পরিণত করতে চাচ্ছিল৷ যেমন-
﴿وَيَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا
يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَٰؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِندَ
اللَّهِ ۚ قُلْ أَتُنَبِّئُونَ اللَّهَ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي
السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ ۚ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَىٰ عَمَّا
يُشْرِكُونَ﴾
১৮) এ লোকেরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের ইবাদত করছে তারা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না৷ আর তারা বলে এরা আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী ৷ হে মুহাম্মাদ ! ওদেরকে বলে দাও, “তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয়ের খবর দিচ্ছো যার অস্তিত্বের কথা তিনি আকাশেও জানেন না এবং যমিনেও না!” ২৪ তারা যে শিরক করে তা থেকে তিনি পাক -পবিত্র এবং তার উর্ধে৷
(সূরা ইউনুস আয়াত ১৮)
এবং
﴿أَلَا لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ ۚ وَالَّذِينَ
اتَّخَذُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا
لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَىٰ إِنَّ اللَّهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ
فِي مَا هُمْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي مَنْ هُوَ
كَاذِبٌ كَفَّارٌ﴾
৩) সাবধান! একনিষ্ঠ ইবাদাত কেবল আল্লাহরই প্রাপ্য৷ ৪ যারা তাঁকে ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক বানিয়ে রেখেছে (আর নিজেদের এ কাজের কারণ হিসেবে বলে যে,) আমরা তো তাদের ইবাদাত করি শুধু এই কারণে যে, সে আমাদেরকে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেবে৷ ৫ আল্লাহ নিশ্চিতভাবেই তাদের মধ্যকার সেসব বিষয়ের ফায়সালা করে দেবেন যা নিয়ে তারা মতভেদ করছিলো৷ ৬ আল্লাহ এমন ব্যক্তিকে হিদায়াত দান করেন না, যে মিথ্যাবাদী ও হক অস্বীকারকারী৷ ৭
( সূরা যুমার আয়াত ৩)
এ আয়াতগুলোতে এ দুটি কারণই প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে৷
এ জায়গায় এ বিষয়টিও প্রণিধানযোগ্য যে, কুরআন সাধরণত শাফায়াতের মুশরিকী আকীদা বিশ্বাস, খণ্ডন করতে গিয়ে এ সত্যটির ওপর জোর দিয়ে থাকে যে, যাদেরকে তোমরা শাফায়াতকারী গণ্য করেছো তারা অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী নয় এবং তাদের গোচরে ও অগোচরে যেসব কথা আছে আল্লাহ সেগুলো জানেন৷ এ থেকে একথা হৃদয়ংগম করানোই উদ্দেশ্য যে, তারা যখন প্রত্যেক মানুষের সামনে পেছনের ও গোপন-প্রকাশ্য অবস্থায় জানে না তখন তারা শাফায়াত করার একচ্ছত্র ও শর্তহীন অধিকার কেমন করে লাভ করতে পারে? কাজেই ফেরেশতা, নবী সৎলোক প্রত্যেকের শাফায়াত করার এখ্তিয়ার অবশ্যি আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষ৷ আল্লাহ তাদের কাউকে কোন ব্যক্তির পক্ষে শাফায়াত করার অনুমতি দিলে তবেই তিনি তার পক্ষে শাফায়াত করতে পারবেন৷ নিজেই অগ্রণী হয়ে তারা যে কোন ব্যক্তির শাফায়াত করতে পারেন না৷ আর যখন শাফায়াত শোনা বা না শোনা এবং তা কবুল করা বা না করা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল তখন এ ধরনের ক্ষমতাহীন শাফায়াতকারীর সামনে মাথা নোয়ানো এবং প্রার্থনার হাত পাতা কিভাবে সমীচীন ও উপযোগী হতে পারে? (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা ত্বা-হাঃ ৮৫-৮৬ টীকা)৷
সূরা ত্বা-হাঃ
﴿يَوْمَئِذٍ لَّا تَنفَعُ الشَّفَاعَةُ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَٰنُ وَرَضِيَ لَهُ قَوْلًا﴾
১০৯) সেদিন সুপারিশ কার্যকর হবে না, তবে যদি করুণাময় কাউকে অনুমতি দেন এবং তার কথা শুনতে পছন্দ করেন৷ ৮৫
৮৫. এ আয়াতের দুটি অনুবাদ হতে পারে৷ একটি অনুবাদ আমরা অবলম্বন করেছি৷ দ্বিতীয়টি হচ্ছে, "সেদিন সুপারিশ কার্যকর হবে না, তবে যদি কারো পক্ষে করুণাময় এর অনুমতি দেন এবং তার জন্য কথা শুনতে রাজি হয়ে যান"৷ এখানে এমন ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যা উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আর প্রকৃত ব্যাপারও এই যে, কিয়াতমের দিন কারো সুপারিশ করার জন্য স্বতপ্রণোদিত হয়ে মুখ খোলা তো দূরের কথা, টুঁশব্দটি করারও কারোর সাহস হবে না৷ আল্লাহ যাকে বলার অনুমতি দেবেন একমাত্র সেই-ই সুপারিশ করতে পারবে৷ এ দুটি কথা কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে৷ একদিকে বলা হয়েছেঃ
ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ
"কে আছে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর সামনে সুপারিশ করতে পারে"? (আল বাকারাহ, ২৫৫ আয়াত)
আরো বলা হয়েছেঃ
﴿يَوْمَ يَقُومُ الرُّوحُ وَالْمَلَائِكَةُ صَفًّا ۖ لَّا يَتَكَلَّمُونَ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَٰنُ وَقَالَ صَوَابًا﴾
"সেদিন যখন রূহ ও ফেরেশতারা সবাই কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়াবে, একটুও কথা বলবে না, শুধুমাত্র সে-ই বলতে পারবে যাকে করুণাময় অনুমতি দেবেন এবং যে ন্যায়সংগত কথা বলবে"৷ (আন নাবা, ৩৮ আয়াত)
অন্যদিকে বলা হয়েছেঃ
﴿يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَىٰ وَهُم مِّنْ خَشْيَتِهِ مُشْفِقُونَ﴾
"আর তারা কারোর সুপারিশ করে না সেই ব্যক্তির ছাড়া যার পক্ষে সুপরিশ শোনার জন্য (রহমান) রাজী হবেন এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত হয়ে থাকে"৷ (আল আম্বিয়া, ২৮ আয়াত)
আরো বলা হয়েছেঃ
﴿وَكَم مِّن مَّلَكٍ فِي السَّمَاوَاتِ لَا تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلَّا مِن بَعْدِ أَن يَأْذَنَ اللَّهُ لِمَن يَشَاءُ وَيَرْضَىٰ﴾
"কত ফেরেশতা আকাশে আছে, তাদের সুপারিশ কোনই কাজে লাগবে না, তবে একমাত্র তখন যখন আল্লাহর কাছ থেকে অনুমতি নেবার পর সুপারিশ করা হবে এবং এমন ব্যক্তির পক্ষে করা হবে যার জন্য তিনি সুপরিশ শুনতে চান এবং পছন্দ করেন৷ (আন নাজম, ২৬ আয়াত)
প্রশ্ন করার জন্য প্রশ্নোত্তর এ্যাপের লিংক : Download
No comments:
Post a Comment