২-রাজাবলি পুস্তকের ৯ থেকে ১৩ অধ্যায়

9

ইসরায়েলের রাজপদে যেহুর অভিষেক
1এদিকে ইলিশায় তাঁর একজন শিষ্য নবীকে বললেন, তুমি তৈরী হয়ে রামোৎ-গিলিয়দে যাও। জলপাই তেলের এই বোতলটি সঙ্গে নাও। 2সেখানে পৌঁছে নিমশির পৌত্র যিহোশাফটের পুত্র যেহুর খোঁজ করবে। তাকে তার সঙ্গীদের কাছ থেকে ডেকে নিয়ে যাবে বাড়ির ভেতরের ঘরে। 3সেখানে নিয়ে গিয়ে তার মাথায় এই বোতলের তেল ঢেলে দিয়ে বলবে, প্রভু পরমেশ্বর বলেছেন, তিনি তোমকে ইসরায়েলের রাজপদে অভিষিক্ত করেছেন, এই কথা বলেই তুমি যত তাড়াতাড়ি পার, দরজা খুলে পালিয়ে আসবে। দেরী করবে না।
4তরুণ নবী তখন রামোৎ-গিলিয়দে চলে গেলেন। 5গিয়ে দেখলেন, সেনাপতিরা সকলে মন্ত্রণাসভায় বসে আছেন। তিনি তাঁদের কাছে গিয়ে বললেন, সেনাপতি মশাই, আপনার কাছে আমার কিছু বক্তব্য আছে। যেহু বললেন, আমাদের মধ্যে কার কাছে তোমার বক্তব্য? তিনি বললেন, আজ্ঞে,আপনারই কাছে। 6যেহু তখন উঠে এলেন এবং তাঁকে নিয়ে ঘরের ভেতরে গেলেন। তারপর সেই শিষ্য নবী তাঁর মাথায় তেল ঢেলে দিয়ে বললেন, ইসরায়েলের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর বলেছেন, আমি আমার প্রজা ইসরায়েলীদের রাজা রূপে তোমাকে অভিষেক করলাম।7আহাবের সেই পুত্র, যে তোমার মনিব ও রাজা, তাকে তুমি হত্যা করবে যাতে আমি আমার নবী ও দাসদের হত্যা করার অপরাধে ঈষেবলের উপরে প্রতিশোধ নিতে পারি। 8আহাব কুল ধ্বংস হবে। তার বংশের শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সমস্ত পুরুষকে আমি শেষ করে দেব। 9ইসরায়েলীদের রাজা যারবিয়াম ও বাশার যে অবস্থা আমি করেছি, আহাব কুলেরও সেই দশা করব। 10যিষ্‌রিযেল উপত্যকায় ঈষেবলের মৃতদেহ কুকুরে খাবে, তার কবর হবে না। এই কথা বলেই তরুণ নবী দরজা খুলে পালিয়ে গেল।
11যেহু তাঁর সহকর্মীদের কাছে ফিরে গেলে তাঁরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, সব খবর ভাল তো? ঐ পাগলটা তোমার কাছে কেন এসেছিল? যেহু তাঁদের বললেন, তোমরা ওকে চেন এবং ও কি চায় তাও জান।
12তাঁরা বললেন, না আমরা জানি না, তুমি বল ও কি বলেছে! তিনি বললেন, সে আমায় বলল, ‘প্রভু পরমেশ্বর বলেছেন, আমি তোমাকে ইসরায়েলের রাজপদে অভিষিক্ত করলাম।’
13সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সহকর্মীরা নিজেদের পোশাক খুলে সিঁড়ির উপর বিছিয়ে দিয়ে যেহুকে দাঁড় করালেন এবং তূরী বাজিয়ে ঘোষণা করলেন, রাজা যেহু জিন্দাবাদ!
ইসরায়েল রাজ যোরাম নিহত
14-15সিরিয়ার রাজা হসায়েলের বিরুদ্ধে রামোৎ-গিলিয়দের যুদ্ধে আহত রাজা যোরাম যখন চিকিৎসার জন্য যিষ্‌রিয়েলে চলে গিয়েছিলেন, যেহু তখন ইসরায়েলের সেনাপতিরূপে সেখানে হসায়েলের আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে ছিলেন। এই সুযোগে যেহু যোরামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে লাগলেন। সহকর্মীদের বললেন, তোমরা যদি আমার পক্ষে থাক, তাহলে যিষ্‌রিয়েলের লোকদের কাছে এই খবর দেবার জন্য রামোৎ-গিলিয়দ থেকে একটা লোক যেন বাইরে যেতে না পারে। 16তারপর যেহু রথে চড়ে যিষ্‌রিয়েলের দিকে রওনা হলেন। যোরাম সেখানে তখনও অসুস্থ। যিহুদীয়ারাজ অহসিয় সেখানেই ছিলেন, তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন।
17যিষ্‌রিয়েলের দুর্গ প্রাকারে যে প্রহরী ছিল, সে যেহুকে সদলবলে আসতে দেখে বলল, একদল লোককে এদিকে আসতে দেখা যাচ্ছে।
যোরাম বললেন, একজন অশ্বারোহীকে পাঠিয়ে খোঁজ নাও, ওরা মিত্র কিনা!
18অশ্বারোহী দূত যেহুর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল, রাজামশাই জানতে চান, আপনারা মিত্রভাবে আসছেন তো? যেহু বললেন, মিত্রভাবে কিনা, তা দিয়ে তোমার কী দরকার? তুমি আমার পিছনে এস।
প্রহরী রাজাকে জানাল যে অশ্বারোহী দূত ওদের কাছে গেল ঠিকই কিন্তু সে ফিরে আসছে না। 19তখন আর একজন দূতকে পাঠান হল। সে গিয়ে একই কথা জিজ্ঞাসা করল যেহুকে। যেহু তাকেও বললেন, মিত্রভাবে কিনা, তাতে তোমার কী দরকার! তুমি আমার পিছনে এস।
20প্রহরী আবার জানাল, এই লোকটিও তাদের কাছে গেল ঠিকই কিন্তু আর ফিরছে না। আরও জানাল, যেহু যেমন রথ চালায়, তাদের নেতা ঠিক সেইভাবেই উন্মত্তের মত রথ চালাচ্ছে।
21রাজা যোরাম বললেন, আমার রথ সাজাও। রথ সাজানো হলে তিনি এবং যিহুদীয়া রাজ অহসিয় নিজের নিজের রথে চড়ে যেহুর সঙ্গে দেখা করতে এগিয়ে গেলেন। যিষ্‌রিয়েলের নাবোতের জমিতে তাঁদের দেখা হল। 22যেহুকে দেখে যোরাম জিজ্ঞাসা করলেন, যেহু, তুমি কি মিত্রভাবে এসেছ? যেহু বললেন, মিত্রতা কি করে হয়? যতদিন আপনার মা ঈষেবলের প্রতিমাপূজা আর ডাকিনীতন্ত্র-মন্ত্র থাকবে ততদিন মিত্রতা সম্ভব নয়।
23যোরাম রথের মুখ ঘুরিয়ে পালাতে লাগলেন এবং চীৎকার করে অহসিয়কে বললেন, রাজদ্রোহ! অহসিয় এ রাজদ্রোহ! 24যেহু তীর ধনুক হাতে নিয়ে সমস্ত শক্তি দিয়ে ধনুকের ছিলা টেনে তীর ছুঁড়লেন। তীরটা যোরামের পিঠ ফুঁড়ে হৃৎপিণ্ডে গিয়ে বিঁধে গেল। যোরাম রথের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলেন। 25যেহু তাঁর অস্ত্রবাহক বিদকারকে বললেন, যাও, তুমি ওর মৃতদেহ তুলে নিয়ে নাবোতের জমিতে ফেলে দিয়ে এস। মনে আছে, তুমি আর আমি যেদিন ঘোড়ায় চড়ে ওর পিতা আহাবের পিছন পিছন যাচ্ছিলাম তখন প্রভু পরমেশ্বর আহাবের বিরুদ্ধে বলেছিলেন, 26গতকাল আমি নাবোত ও তার সন্তানদের রক্তপাত দেখেছি। তাই আমি প্রতিজ্ঞা করছি, তোমাকেও আমি এই একই ভূমিতে শাস্তি দেব। কাজেই তুমি ওকে নাবোতের জমিতে ফেলে এস। তাতে প্রভু পরমেশ্বরের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হবে।
যিহুদীয়ারাজ অহসিয় নিহত
27যিহুদীয়ারাজ অহসিয় এই ঘটনা দেখে রথ নিয়ে বেথ-হাগ্গানের দিকে পালাতে লাগলেন। যেহু তাঁর পিছনে তাড়া করতে লাগলেন এবং সৈন্যদের আদেশ দিলেন, ওকেও বধ কর। য়িবলিয়াম শহরের কাছে গুরের চড়াই পথে তারা তাঁকে রথের মধ্যেই তীরবিদ্ধ করল। এই অবস্থায় অহসিয় মেগিদ্দো পর্যন্ত গেলেন এবং সেখানেই তাঁর মৃত্যু হল। 28তাঁর রাজকর্মচারীরা রথে করে তাঁকে জেরুশালেমে নিয়ে গেল এবং দাউদ নগরে রাজকীয় সমাধিতে সমাধিস্থ করল।
29আহাবের পুত্র যোরামের রাজত্বের একাদশ বছরে অহসিয় যিহুদীয়ার রাজা হয়েছিলেন।
রানী ঈষেবল হত্যা
30যেহু যিষ্‌রিয়েলে এসে পৌঁছালেন। সেই খবর শুনে ইষেবল চোখে কাজল দিয়ে পরিপাটি করে চুল বেঁধে রাজপ্রাসাদের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে নীচে রাস্তার দিকে দেখতে লাগলেন। 31নগরদ্বার দিয়ে যেহু ভেতরে আসতেই তিনি তাঁকে ডেকে বললেন, ওরে সিম্রি, খুনী কোথাকার! তুই এখানে কেন এসেছিস?
32যেহু উপরে জানালার দিকে চেয়ে চীৎকার করে বললেন, কে আছ আমার পক্ষে? কে কে? রাজপ্রাসাদের দু-তিনজন কর্মচারী জানালা দিয়ে মুখ বাড়াতেই 33যেহু তাদের বললেন, ওকে নীচে ফেলে দাও। তারা ঈষেবলকে নীচে ফেলে দিল। তাঁর রক্ত প্রাসাদের দেওয়ালে ও ঘোড়াগুলোর গায়ে ছিটকে লাগল। যেহুর ঘোড়াগুলো ঈষেবলের দেহটাকে মাড়িয়ে দিল। 34তারপর যেহু রাজপ্রাসাদে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া সারলেন। তারপর তিনি বললেন, ঐ অভিশপ্ত নারীর একটা গতি কর, ওকে কবর দাও। হাজার হলেও সে একজন রাজকন্যা। 35কিন্তু যারা তাঁকে কবর দিতে গেল তারা তাঁর মাথার খুলি ও হাত পায়ের হাড় ছাড়া আর কিছুই পেল না। 36ফিরে এসে যেহুকে তারা একথা জানালে তিনি বললেন, প্রভু পরমেশ্বরের কথাই আজ সফল হল। তিনি তাঁর সেবক এলিয়ের মুখে বলেছিলেন, যিষ্‌রিয়েলের এই মাটিতেই ঈষেবলের শব কুকুরে খাবে। 37আর তার দেহাবশেষ যিষ্‌রিয়েলের মাটিতে সারে পরিণত হবে, কেউ জানবে না তার পরিচয়!

Bengali C.L. Bible, 


আহাবের বংশ ধ্বংস হল
1শমরিয়ায় রাজা আহাবের সত্তরজন বংশধর ছিল। যেহু শমরিয়ার শাসক, নাগরিকদের নেতৃবৃন্দ ও আহাবের বংশধরদের অভিভাবকদের কাছে চিঠি লিখলেন। চিঠিতে লেখা ছিল: 2আপনার রাজার বংশধরদের অভিভাবক। আপনাদের হাতে অনেক রথ, অশ্ব, অস্ত্রশস্ত্র এবং সুরক্ষিত দুর্গনগর আছে। 3কাজেই আমার চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজার বংশধরদের মধ্যে থেকে সবচেয়ে উপযুক্ত একজনকে বেছে নেবেন এবং তাকে রাজা করে আহাবকুলের হয়ে যুদ্ধ করবেন।
4শমরিয়ার শাসকেরা এই চিঠি পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে উঠলেন। বললেন, দুই জন রাজা তাঁর সামনে দাঁড়াতেই পারলেন না। আমরা কি তাঁর সঙ্গে যুদ্ধে পেরে উঠব? 5তাই, রাজপ্রাসাদের অধ্যক্ষেরা, নগরপালেরা, নাগরিক নেতৃবৃন্দ এবং বংশধরদের অভিভাবকেরা সকলে মিলে যুক্তি করে যেহুর কাছে সংবাদ পাঠালেনঃ আমরা আপনার দাস। আপনি যা বলবেন, আমরা তাই করব। কিন্তু আমরা কাউকে রাজা করতে পারব না। আপনি যা ভাল বুঝবেন, করবেন।
6যেহু তখন তাঁদের আর একটি চিঠি লিখলেনঃ আপনারা যদি আমার পক্ষে থাকেন এবং আমার সমস্ত আদেশ পালন করতে রাজী থাকেন তাহলে আগামীকাল ঠিক এই সময়ে রাজা আহাবের বংশধরদের মুণ্ড যিষ্‌রিয়েলে আমার কাছে এনে হাজির করবেন। রাজা আহাবের সত্তরজন বংশধর শমরিয়ার নাগরিক নেতৃবৃন্দের তত্ত্বাবধানে ও রক্ষণাবেক্ষণে পালিত হচ্ছিল। 7যেহুর চিঠি পেয়ে শমরিয়ার ঐ নেতারা আহাবের সত্তরজন বংশধরকে হত্যা করে তাদের মুণ্ডগুলি ঝুড়িতে ভরে যিষ্‌রিয়েলে যেহুর কাছে পাঠিয়ে দিলেন।
8আহাবের বংশধরদের মুণ্ড আনার সংবাদ পেয়ে যেহু সেগুলিকে নগরদ্বারের দুদিকে ঢিবি করে পরের দিন সকাল পর্যন্ত রেখে দেওয়ার আদেশ দিলেন। 9সকাল বেলায় তিনি নগরদ্বারে গিয়ে সেখানে যারা ছিল তাদের বললেন, রাজা যোরামের বিরুদ্ধে আমিই ষড়যন্ত্র করে তাঁকে হত্যা করেছি। তার জন্য তোমরা দায়ী নও? কিন্তু এদের কারা হত্যা করেছে? 10এতেই প্রমাণিত হচ্ছে যে,আহাবের বংশধরদের সম্বন্ধে প্রভু পরমেশ্বর যা কিছু বলেছিলেন তার কোনটাই বিফলে যায় নি। নবী এলিয়র মাধ্যমে তিনি যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তা তিনি এইভাবে পূর্ণ করলেন। 11তারপর যেহু যিষ্‌রিয়েলে আহাবের যত আত্মীয়-স্বজন বাস করত তাদের সবাইকে হত্যা করলেন। আহাবকুল নিশ্চিহ্ন হল, আহাবের সমস্ত কর্মচারী, ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব, যাজক—পুরোহিত—কাউকে বাকী রাখলেন না।
রাজা অহসিয়ের আত্মীয়-নিধন
12তারপর যেহু যিষ্‌রিয়েল থেকে চললেন শমরিয়ায়। পথে ‘মেষপালকদের আস্তানা’য় যিহুদীয়ার রাজা অহসিয়র কয়েকজন আত্মীয়ের সঙ্গে তাঁর দেখা হল। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কারা?তারা বলল, আমরা রাজা অহসিয়র আত্মীয়। আমরা যিষ্‌রিয়েলে যাচ্ছি রানীমা ঈষেবল ও রাজকুমার, রাজকুমারীদের সঙ্গে দেখা করতে। 13-14যেহু তাঁর সৈন্যদের আদেশ দিলেন, ওদের ধরে আন! তারা তাদের ধরে এনে সকলকে মেষপালকদের আস্তানার একটা কূপের কাছে হত্যা করলেন। বিয়াল্লিশ জনের একজনও রেহাই পেল না।
আহাবের অবশিষ্ট স্বজনদের নিধন
15যেহু আবার যাত্রা শুরু করলেন। পথে রেখাবের পুত্র যিহোনাদবের সঙ্গে তাঁর দেখা হল। যেহু তাঁকে সম্ভাষণ জানিয়ে বললেন, তোমার সঙ্গে আমার মতের কোন পার্থক্য নেই। ঠিক তো? যিহোনাদব বললেন, না। যেহু বললেন, তাই যদি হয়, হাতে হাত মেলাও। তাঁরা হাতে হাত মিলালেন এবং যেহু তাঁকে নিজের রথে তুলে নিলেন। 16বললেন, আমার সঙ্গে চল। নিজের চোখে দেখে যাও প্রভুর কাজে আমি কতখানি একনিষ্ঠ। তাঁরা দুজনে একসাথে শমরিয়ায় পৌঁছালেন। 17সেখানে তাঁরা পৌঁছালে, যেহু আহাবের সমস্ত আত্মীয়-স্বজনকে হত্যা করলেন। কেউ বাদ গেল না। প্রভু পরমেশ্বর এলিয়কে যে কথা বলেছিলেন সেই অনুসারে তিনি আহাবকুলের সকলকে নিঃশেষে হত্যা করলেন।
বেলদেবের ভক্তদের নিধন
18তারপর যেহু শমরিয়ার সমস্ত লোককে একত্র করে বললেন, রাজা আহাব বেলদেবকে কী এমন সেবা ভক্তি করতেন? আমি তাঁকে আরও অনেক বেশী সেবা করব। 19কাজেই তোমরা বেলদেবের সমস্ত নবী, ভক্ত ও পুরোহিতদের আমার কাছে ডেকে আন। কেউ যেন বাদ না পড়ে। কারণ আমি বেলদেবের উদ্দেশে বিরাট এক যজ্ঞ করব। এই যজ্ঞে যে আসবে না তার মৃত্যুদণ্ড হবে। যেহু কিন্তু বেলদেবের ভক্তদের ধ্বংস করার জন্যই এই ছলনার আশ্রয় নিলেন। 20তারপর যেহু আদেশ দিলেন, বেলদেবের সম্মানার্থে একটি মহাসভা আহ্বান কর। 21যেহু সারা ইসরায়েল রাজ্যে লোক পাঠিয়ে বেলদেবের সমস্ত ভক্তকে একত্র করলেন। কেউ বাদ গেল না। তারা সকলে বেলদেবের মন্দিরে গেল। মন্দিরের একপ্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত লোকে পূর্ণ হয়ে গেল। 22যেহু তখন মন্দিরের পবিত্র বস্ত্রাগারের অধ্যক্ষ পুরোহিতকে আদেশ দিলেন, বেলদেবের সমস্ত ভক্তকে পোশাক দাও। 23পোশাক দেওয়া হলে যেহু যিহোনাদবকে সঙ্গে নিয়ে মন্দিরের ভেতরে গেলেন এবং ভক্তদের বললেন, ভাল করে খুঁজে দেখে নাও, যেন বেলদেবের ভক্তেরা ছাড়া আর কেউ এই মন্দিরে না থাকে। দেখো, প্রভু পরমেশ্বরের কোন ভক্ত যেন তোমাদের মধ্যে না থাকে। 24তারপর তারা বেলদেবের কাছে হোমবলি উৎসর্গ করতে গেল। এদিকে যেহু মন্দিরের বাইরে আশীজন লোককে মোতায়েন করে রেখেছিলেন এবং নির্দেশ দিয়েছিলেন, এদের সকলকে হত্যা করবে। কেউ যেন পালাতে না পারে, যার কাছ থেকে পালাবে তার প্রাণদণ্ড হবে।
25হোমবলি উৎসর্গ করার সঙ্গে সঙ্গে যেহু রক্ষী ও সেনাপতিদের হুকুম দিলেন, ভিতরে যাও, সকলকে শেষ করে দাও। কেউ যেন পালাতে না পারে। তারা ভিতরে গিয়ে সকলকে হত্যা করে মৃতদেহগুলি মন্দিরের বাইরে ফেলে দিল। তারপর তারা মন্দিরের পবিত্রতম স্থানে গিয়ে, 26পবিত্র স্তম্ভটি বাইরে টেনে এনে পুড়িয়ে দিল, 27তারপর বেলদেবের স্তম্ভ ভেঙ্গে চুরমার করে দিল। মন্দির ধ্বংস করে সেটিকে পায়খানায় পরিণত করল। সেটি আজও লোকে সেইভাবেই ব্যবহার করে।
28এইভাবে যেহু ইসরায়েল দেশ থেকে বেলদেবের পূজা উচ্ছেদ করেছিলেন। 29কিন্তু তিনি নিজে রাজা যারবিয়ামের পাপাচার থেকে সরে এলেন না। বেথেল ও দানে যারবিয়ামের প্রতিষ্ঠিত সোনার বৃষমূর্তিগুলি রয়ে গেল এবং তাঁর সহায়তায় ইসরায়েলীরা সেগুলির পূজা করে পাপ করতে থাকল। 30প্রভু পরমেশ্বর যেহুকে বললেন, আহাবের বংশধরদের প্রতি আমি যা কিছু করতে চেয়েছিলাম, সবই তুমি করেছ। তাই, আমি তোমায় প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, তোমার বংশ চার পুরুষ পর্যন্ত ইসরায়েলের উপরে রাজত্ব করবে। 31কিন্তু যেহু ইসরায়েলের প্রভু পরমেশ্বরের বিধি-বিধান সর্বান্তঃকরণে পালন করেন নি, তার পরিবর্তে তিনি যারবিয়ামের পথ অনুসরণ করেছেন এবং ইসরায়েলকে পাপের পথে নিয়ে গেলেন।
যেহুর মৃত্যু
32সেই সময় প্রভু পরমেশ্বর ইসরায়েল রাজ্যের সীমানা হ্রাস করতে শুরু করেছিলেন। সিরিয়ার রাজা হসায়েল ইসরায়েলীদের পরাজিত করে 33জর্ডন নদীর পূর্ব দিকে থেকে দক্ষিণ প্রান্তে অর্ণোন নদীর তীরে অরোয়ের নগর পর্যন্ত সমগ্র অঞ্চল অধিকার করে নেন। গিলিয়দ ও বাশান এই অঞ্চলের মধ্যে ছিল। ইসরায়েলের গাদ ও রূবেণ গোষ্ঠীর লোকেরা। এই অঞ্চলে বাস করত এবং পূর্বদিকে বাস করত মনঃশি গোষ্ঠীর লোকেরা।
34যেহুর বীরত্বপূর্ণ কার্যবিবরণ ও যা কিছু তিনি করেছিলেন—সব বিবরণ লেখা আছে ইসরায়েলী রাজকাহিনীতে। 35তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে শমরিয়ায় সমাহিত করা হয় এবং তাঁর পুত্র যিহোয়াহাস তাঁর উত্তরাধিকারীরূপে রাজা হন। 36ইসরায়েলের রাজারূপে যেহু আঠাশ বছর রাজত্ব করেন।

Bengali C.L. Bible,


যিহুদীয়ার রাণী অথলিয়া
(২ বংশা 22:10—23:15)
1রাজমাতা অথলিয়া যখন দেখলেন যে তাঁর পুত্র রাজা অহসিয়র মৃত্যু হয়েছে তখন সঙ্গে সঙ্গে তিনি রাজপরিবারের সকলকে হত্যা করার আদেশ দিলেন। 2হত্যাকাণ্ড চরমে উঠেছে। তারই এক ফাঁকে রাজা যিহোরামের কন্যা এবং রাজা অহসিয়র সৎ-বোন যিহোশেবা যোয়াশকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলেন এবং মন্দিরের একটি গোপন শয়ন কক্ষে তাঁকে ও তাঁর ধাত্রীকে অথলিয়ার চোখের আড়ালে লুকিয়ে রাখলেন। অহসিয়ের পুত্র একমাত্র যোয়াশ বেঁচে গেলেন। 3এইভাবে যিহোশেবা ছেলেটিকে ছয় বছর মন্দিরে লুকিয়ে রেখে লালন-পালন করলেন, ওদিকে অথলিয়া দেশের রাণী হয়ে রাজত্ব করতে লাগলেন।
4সপ্তম বছরে পুরোহিত যিহোয়াদা রাজার দেহরক্ষী ও প্রাসাদরক্ষী বাহিনীর নায়কদের প্রভুর মন্দিরে ডেকে আনলেন এবং তাঁদের শপথ করিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা বললেন ও সেইমত কাজ করতে রাজী করলেন। তারপর তিনি তাঁদের রাজা অহসিয়র পুত্র যোয়াশকে এনে দেখালেন এবং 5আদেশ দিলেন, সাব্বাথ দিনে যখন তোমাদের পাহারার পালা পড়বে তখন তোমাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ লোক রাজপ্রাসাদে পাহারা দেবে। 6(আর এক তৃতীয়াংশ লোক সুর-দ্বারে থাকবে এবং বাকী এক তৃতীয়াংশ লোক থাকবে সদর-দ্বারে প্রহরীদলের পিছনে।) 7সাববাথ দিনে যে দুটি দলের ছুটি হয়ে যাবে তারা চলে আসবে মন্দির পাহারায় রক্ষা করবে রাজাকে। 8তোমরা খোলা তরোয়াল হাতে রাজাকে পাহারা দেবে এবং যেখানেই তিনি যান, তাঁর সঙ্গে সঙ্গে যাবে। কেউ তোমাদের কাছে এলেই তাকে হত্যা করবে।
9যিহোয়াদার নির্দেশমত সেনানায়কেরা সব কিছু করলেন। সাব্বাথ দিনে পাহারার পালা বদলের সময়ও যাদের পালা শেষ হল এবং যারা পাহারার পালা দিতে এল, তাদের সকলকেই তারা পুরোহিত যিহোয়াদার কাছে নিয়ে গেলেন। 10মন্দিরে রাজা দাউদের যে সমস্ত বর্শা ও ঢাল রাখা ছিল, পুরোহিত যিহোয়াদা সেগুলি সেনানায়কদের দিলেন 11এবং রাজাকে রক্ষা করার জন্য মন্দিরের সামনের দিকে এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত ঘিরে খোলা তরোয়াল হাতে প্রহরীদের মোতায়েন করে দিলেন। 12তারপর যিহোয়াদা যোয়াশকে গোপন কক্ষ থেকে বার করে এনে তাঁকে রাজটীকা পরিয়ে দিলেন এবং তাঁর হাতে তুলে দিলেন বিধানগ্রন্থ। তারপর যোয়াশকে অভিষেক করে তাঁকে রাজা বলে ঘোষণা করলেন। সমবেত জনতা হাততালি দিয়ে রাজার জয়ধ্বনি করতে লাগল। রাজা দীর্ঘজীবী হোন!
13রাণী অথলিয়া প্রহরী, সৈন্য ও জনতার জয়ধ্বনি শুনে মন্দিরে সমবেত জনতার সামনে ছুটে গেলেন। 14দেখলেন, নতুন রাজা মন্দিরের প্রবেশপথে প্রথা অনুযায়ী মঞ্চের উপরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁকে ঘিরে আছে সেনানায়কেরা ও তূরীবাদকেরা এবং সমগ্র জনতা হর্ষধ্বনি করছে ও তূরী বাজাচ্ছে। অথলিয়া তখন নিজের পোশাক ছিঁড়ে ফেলে চেঁচিয়ে উঠলেন, বিদ্রোহ! ঘোর বিদ্রোহ!
15পুরোহিত যিহোয়াদা মন্দির এলাকায় অথলিয়াকে হত্যা করতে চাননি। তাই তিনি সেনানায়কদের আদেশ করলেন, দুই সারি প্রহরী সৈন্যর মাঝখানে রেখে ওকে বাইরে নিয়ে যাও। কেউ ওকে উদ্ধার করতে চেষ্টা করলে তাকে হত্যা করো। 16তাঁরা তাঁকে বন্দী করে রাজপ্রাসাদের অশ্বদ্বার দিয়ে বাইরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করল।
যিহোয়াদার সংস্কার
(২ বংশা 23:16-21)
17পুরোহিত যিহোয়াদা প্রভু পরমেশ্বরের সঙ্গে রাজা যোয়াশ ও প্রজাদের এক চুক্তিতে স্থির করলেন যে তারা সকলেই হবে প্রভু পরমেশ্বরের প্রজা। সেইসঙ্গে তিনি রাজা ও প্রজাদের মধ্যেও আর একটি চুক্তি করলেন। 18তখন প্রজারা সকলে বেলদেবের মন্দিরে গিয়ে মন্দির ভেঙ্গে ফেলল। সমস্ত প্রতিমা ও বেদী ভেঙ্গে তছনছ করে দিল এবং বেলদেবের পুরোহিত মাত্তানকে বেদীগুলির সামনে হত্যা করল তারপর পুরোহিত যিহোয়াদা প্রভু পরমেশ্বরের মন্দির রক্ষার জন্য প্রহরী নিযুক্ত করে 19সেনানায়কদল, রাজার দেহরক্ষী এবং প্রাসাদ রক্ষী ও প্রজাসাধারণকে নিয়ে প্রভুর মন্দির থেকে শোভাযাত্রা করে রাজাকে প্রহরীদ্বার দিয়ে রাজপ্রাসাদে নিয়ে এলেন এবং তাঁকে রাজসিংহাসনে বসালেন। প্রজাদের মন আনন্দে ভরে গেল এবং এইভাবে 20রানী অথলিয়ার মৃত্যুতে নগরে শান্তি বিরাজ করতে লাগল।
21মাত্র সাত বছর বয়সে যোয়াশ যিহুদীয়ার রাজা হন।

Bengali C.L. Bible,


যিহুদীয়ার রাজা যোয়াশ
(২ বংশা 24:1-16)
1ইসরায়েলরাজ যেহুর রাজত্বের সপ্তম বৎসরে যোয়াশ যিহুদীয়ার রাজা হন। তিনি চল্লিশ বছর রাজত্ব করেন। তাঁর রাজধানী ছিল জেরুশালেমে। তাঁর জননী সিবিয়া ছিলেন বেরশেবা নগরীর কন্যা। 2পুরোহিত যিহোয়াদার পরিচালনায় রাজা যোয়াশ ঈশ্বরের সন্তোষজনক কাজ করতেন। 3কিন্তু তাহলেও দেবস্থানগুলি উচ্ছেদ না করায় প্রজারা সেখানে নিয়মিত বলি উৎসর্গ এবং ধূপদীপ জ্বালিয়ে যেতে লাগল।
4যোয়াশ পুরোহিতদের আদেশ দিলেন, মন্দিরে পবিত্র অনুষ্ঠান উপলক্ষে উৎসর্গিত সমস্ত অর্থ, মন্দিরে প্রত্যেকের দেয় কর বাবদ সংগৃহীত অর্থ এবং উপাসকদের স্বেচ্ছায় নিবেদিত অর্থ তাঁরা যেন সঞ্চয় করেন। 5যজমানদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ প্রত্যেক পুরোহিত নিজেদের দায়িত্বে সঞ্চয় করে রাখবেন। এই অর্থ প্রয়োজন অনুযায়ী মন্দিরের মেরামতের কাজে ব্যবহার করা হবে।
6কিন্তু যোয়াশের রাজত্বের তেইশ বছরেও মন্দিরের ভাঙ্গা জায়গাগুলো পুরোহিতেরা সারালেন না। 7তখন রাজা যোয়াশ পুরোহিত যিহোয়াদা এবং অন্যান্য পুরোহিতদের ডেকে বললেন, আপনারা কেন মন্দিরের সংস্কার করছেন না? এখন থেকে আপনারা আর সংগৃহীত অর্থ নিজেদের কাছে রাখবেন না, মন্দির মেরামতের জন্য সব দিয়ে দেবেন। 8পুরোহিতেরা এতে রাজী হলেন এবং মন্দির সংস্কারের কাজেও আর হাত দেবেন না বলে কথা দিলেন।
9পুরোহিত যিহোয়াদা তখন একটা সিন্দুকের ডালায় ফুটো করে সেটি বেদীর পাশে রেখে দিলেন এমনভাবে যাতে মন্দিরে যে কেউ প্রবেশ করলে সিন্দুকটি তার ডানদিকে পড়ে। প্রবেশদ্বারে দ্বাররক্ষী পুরোহিতেরা উপাসকদের নিবেদিত সমস্ত অর্থ ঐ সিন্দুকের মধ্যে ফেলে দিতেন। 10সিন্দুকের মধ্যে রূপোর পরিমাণ অনেক হলে রাজার সচিব এবং প্রধান পুরোহিত এসে সিন্দুক থেকে সেগুলি নিয়ে ওজন করে থলিতে ভরে রাখতেন। 11তারপর তার মূল্য স্থির করে তাঁরা সেই রূপো মন্দিরের সংস্কারের কাজে ভারপ্রাপ্ত কমর্চারীর হাতে দিতেন, এই কর্মচারীরা ছুতোর, রাজমিস্ত্রী। 12পাথর কাটার মিস্ত্রি ও জোগাড়েদের মজুরী দিত এবং মেরামতির কাজের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠ ও পাথর কেনা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জামের জন্য এই অর্থ ব্যয় করত। 13প্রভুর মন্দিরের জন্য রূপোর বাটি, বাতি নিভানোর জিনিস, চিমটে, গামলা, তূরী অথবা সোনা-রূপোর কোন তৈজসপত্র তৈরীর জন্য এই অর্থ ব্যবহার করা হত না। 14এই অর্থ শুধুমাত্র মেরামতির কাজের জন্য জিনিসপত্র কেনা ও শ্রমিকদের মজুরী দেবার জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মচারীদের হাতে দেওয়া হত। 15এই কাজের ভারপ্রাপ্ত লোকেরা নিঃসন্দেহে বিশ্বস্ত ছিলেন তাই তাঁদের কাছ থেকে ঐ অর্থের হিসাব-নিকাশ চাওয়ার কোন প্রয়োজন হত না। 16প্রায়শ্চিত্ত এবং পাপস্খালক বলি বাবদ যে অর্থ সংগৃহীত হত, তা সিন্দুকে জমা পড়ত না। এ অর্থ ছিল পুরোহিতের প্রাপ্য দক্ষিণা।
17সেই সময় সিরিয়ারাজ হসায়েল গাৎ নগর আক্রমণ করে অধিকার করেন। তারপর তিনি জেরুশালেম আক্রমণ করতে উদ্যত হলেন। 18যিহুদীয়ারাজ যোয়াশ তখন তাঁর পূর্বপুরুষ যিহোশাফট, যিহোরাম এবং অহসিয়ের প্রভুর উদ্দেশ্যে নিবেদিত সমস্ত সোনারূপো সংগ্রহ করলেন ও সেই সাথে তাঁর নিজের নিবেদিত সমস্ত উপহার এবং রাজপ্রাসাদে ও মন্দিরের কোষাগারে যা কিছু সোনা পাওয়া গেল সব নিয়ে রাজা হসায়েলের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। হসায়েল তখন জেরুশালেম আক্রমণ না করে ফিরে গেলেন।
19রাজা যোয়াশের সমস্ত কার্যবিবরণ ‘যিহুদীয়া রাজবংশের ইতিহাসে’ লেখা আছে।
20-21পরে রাজা যোয়াশের পারিষদেরা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করল এবং তাদের মধ্যে দুজন—শিমিয়ির পুত্র যোষাখর ও শোমরের পুত্র যিহোষাবদ সিল্লা যাওয়ার পথে মিল্লোতে যে প্রাসাদ ছিল সেখানে রাজা যোয়াশকে হত্যা করল। দাউদ নগরে রাজকীয় সমাধিক্ষেত্রে তাঁকে সমাহিত করা হল। তাঁর পুত্র অমৎসিয় তাঁর সিংহাসনে বসলেন।

Bengali C.L. Bible,
13
ইসরায়েলরাজ যিহোয়াহাস
1রাজা অহসিয়ের পুত্র যিহুদীয়ারাজ যোয়াশের রাজত্বকালের তেইশ বছরে রাজা যেহুর পুত্র যিহোয়াহাস শমরিয়ায় ইসরায়েলের রাজা হলেন। তিনি রাজত্ব করলেন সতেরো বছর। 2তাঁর পূর্ববর্তী রাজা যারবিয়ামের মতই যিহোয়াহাসও প্রভু পরমেশ্বরের দৃষ্টিতে ঘৃণ্য পাপ করতে লাগলেন এবং প্রজা ইসরায়েলকেও সেই পথে পরিচালিত করলেন। কোনদিনই তিনি পাপের পথ থেকে ফেরেন নি। 3তাই প্রভু পরমেশ্বর ক্রুদ্ধ হয়ে ইসরায়েলকে সিরিয়ার রাজা হসায়েল ও তাঁর পুত্র বেনহদদের পদানত করে রাখলেন। 4তখন রাজা যিহোয়াহাস প্রভু পরমেশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানালেন। ইসরায়েলীদের উপর সিরিয়ার রাজার নির্মম অত্যাচার দেখে প্রভু পরমেশ্বর রাজার প্রার্থনায় সাড়া দিলেন। 5প্রভু ইসরায়েলীদের জন্য একজন নেতা পাঠিয়ে দিলেন।এই নেতা তাদের সিরিয়ার রাজার হাত থেকে উদ্ধার করলেন। তারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল। 6কিন্তু তবু তারা পাপাচার বন্ধ করল না। রাজা যারবিয়াম ইসরায়েলকে যে পথে পরিচালিত করেছিলেন সেই পথেই তারা চলতে লাগল। শমরিয়াতে আশেরা দেবীর প্রতিমা আগের মতই প্রতিষ্ঠিত রইল।
7পঞ্চাশজন অশ্বারোহী সৈন্য, দশটি রথ এবং দশ হাজার পদাতিক সৈন্য ছাড়া রাজা যিহোয়াহাসের আর কোন সশস্ত্র সৈন্যবাহিনী ছিল না। কারণ সিরিয়ার রাজা বাকী সমস্ত সৈন্যদলকে ধূলোর মত পায়ে দলে শেষ করে দিয়েছিলেন।
8রাজা যিহোয়াহাসের বীরত্বের কাহিনী এবং যা কিছু তিনি করেছিলেন, সব ‘ইসরায়েলের রাজ কাহিনীতে’ লেখা আছে। 9শমরিয়াতেই তাঁর মৃত্যু ও সমাধি হয়। তাঁর পরে তাঁর পুত্র যিহোয়াশ16 রাজা হন।
ইসরায়েলরাজ যিহোয়াশ
10যিহুদীয়ারাজ যোয়াশের রাজত্বের সাঁইত্রিশ বছরে রাজা যিহোয়াহাসের পুত্র যিহোয়াশ শমরিয়ার সিংহাসনে বসেন এবং ষোল বছর রাজত্ব করেন। 11রাজা যারবিয়াম যে ভাবে প্রভু পরমেশ্বরের অপ্রীতিজনক পথে ইসরায়েলকে পরিচলিত করেছিলেন, তিনিও তাঁর অনুসরণ করলেন। 12রাজা যিহোয়াশ যা কিছু করেছিলেন সব কথা এবং যিহুদীয়ারাজ অমৎসিয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাঁর বীরত্বের গাথাও ‘ইসরায়েলের রাজকাহিনী’তে লেখা আছে। 13শমরিয়াতেই যিহোয়াশের মৃত্যু হয় এবং সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়। তাঁর পরে তাঁর পুত্র দ্বিতীয় যারবিয়াম রাজা হন।
ইলিশায়ের মৃত্যু
14নবী ইলিশায় গুরুতর অসুখে শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেন, মরণাপন্ন নবীকে দেখতে গেলেন ইসরায়েলরাজ যিহোয়াশ। তাঁকে দেখে রাজা কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলেন, পিতা, পিতা আমার! আপনি ছিলেন ইসরায়েলের শক্তিমান রক্ষক।
15ইলিশায় তাঁকে বললেন, একটা ধনুক ও কতকগুলি তীর নিয়ে এস। যিহোয়াশ তীর ধনুক আনলেন। 16ইলিশায় তাঁকে বললেন,তীর ছুঁড়বার জন্য তৈরী হও। রাজা তৈরী হলে ইলিশায় রাজার হাতের উপর হাত রাখলেন। 17তিনি নবীর নির্দেশ মত পূর্বে সিরিয়ার দিকে ঘরের যে জানলাটি ছিল সেটি খুললেন। ইলিশায় আদেশ দিলেন, তীর ছোঁড়! তীর ছোড়ার সাথে সাথে ইলিশায় আবেগে বলে উঠলেন, তুমি প্রভু পরমেশ্বরের তীর। এই তীর দিয়ে তিনি সিরিয়া জয় করবেন! অফেকে তুমি সিরীয়দের সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করবে।
18তারপর ইলিশায় রাজাকে অন্য তীরগুলো পরপর মেঝেতে ছুঁড়তে বললেন। রাজা তাঁর নির্দেশ মত তিনবার তীর ছুঁড়ে থেমে গেলেন। 19এসে ইলিশায় তাঁর ওপর রেগে গেলেন। বললেন, তোমার পাঁচ-ছয়বার তীর ছোঁড়া উচিত ছিল। তাহলে তুমি সিরীয়দের উপর সম্পূর্ণভাবে বিজয়ী হতে পারতে! এখন তুমি মাত্র তিনবার তাদের পরাজিত করবে।
20ইলিশায়ের মৃত্যু হল। লোকেরা তাঁকে সমাধি দিল। প্রতি বছর মোয়াবী হানাদার দস্যুরা দল বেঁধে ইসরায়েল রাজ্যে এসে লুঠপাঠ করত। 21একবার কয়েকজন লোক একটি মৃতদেহ কবর দিচ্ছিল। এমন সময় হানাদার দস্যুদের আসতে দেখে তারা মৃতদেহটিকে একটা কবরে ছুঁড়ে ফেলে পালিয়ে গেল। কবরটা ছিল নবী ইলিশায়ের। নবী ইলিশায়ের অস্থির ছোঁয়া লাগার সঙ্গে সঙ্গে মৃতদেহে প্রাণ ফিরে এল, সে উঠে দাঁড়াল।
সিরিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ
22যিহোয়াহাসের আমলে সিরিয়ার রাজা হসায়েল ইসরায়েলীদের সর্বদা উৎপীড়ন করতেন। 23কিন্তু প্রভু পরমেশ্বর অব্রাহাম, ইসহাক ও যাকোবের সঙ্গে চুক্তির দরুণ ইসরায়েলীদের উপর কৃপাপরবশ ছিলেন, তাই তাদের ধ্বংস হয়ে যেতে দেন নি বরং সাহায্য করেছিলেন। কোনদিন তিনি তাঁর প্রজাদের ভুলে যান নি।
24সিরিয়ার রাজা হসায়েলের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র বেনহদদ রাজা হন। 25ইসরায়েলরাজ যিহোয়াশ যুদ্ধে বেনহদদকে তিনবার পরাজিত করেন এবং যিহোয়াশের পিতা রাজা যিহোয়াহাসের আমলে হসায়েল যে নগরগুলি অধিকার করেছিলেন, সেই নগরগুলি তিনি পুনরুদ্ধার করেন।

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...