এলিয়র স্বর্গারোহণ
1নবী এলিয়র স্বর্গে যাবার দিন ঘনিয়ে এল। একদিন নবী এলিয় ও ইলিশায় গিলগল থেকে রওনা হলেন। সেইসময় পরমেশ্বর ঘূর্ণিঝড়ে এলিয়কে স্বর্গে তুলে নিতে উদ্যত হলেন। 2যেতে যেতে এক জায়গায় এলিয় ইলিশায়কে বললেন, তুমি এখানে থাক। প্রভু পরমেশ্বর আমাকে বেথেলে যেতে বলেছেন। কিন্তু ইলিশায় তাঁকে বললেন, সদা জাগ্রত প্রভু পরমেশ্বর ও আপনার দিব্য, আমি আপনার সঙ্গ ছাড়ব না। কাজেই দুজনেই বেথেলে গেলেন।
3সেখানকার নবীরা ইলিশায়কে জিজ্ঞাসা করলেন,আপনি কি জানেন যে আজ পরমেশ্বর আপনার কাছ থেকে আপনার গুরুকে তুলে নেবেন? ইলিশায় বললেন,হ্যাঁ, আমি জানি। এ আলোচনা থাক।
4তারপর এলিয় ইলিশায়কে বললেন, তুমি এখানে থাক, পরমেশ্বর আমাকে যেরিকোতে যেতে আদেশ দিয়েছেন। ইলিশায় বললেন, সদা জাগ্রত প্রভু পরমেশ্বর ও আপনার দিব্য, আমি আপনার সঙ্গ ছাড়ব না। কাজেই তাঁরা যেরিকোতে গেলেন।
5যেরিকোর নবীরা ইলিশায়কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি জানেন যে আজ পরমেশ্বর আপনার কাছ থেকে আপনার গুরুকে তুলে নেবেন? ইলিশায় বললেন, হ্যাঁ, আমি জানি। এ আলোচনা থাক।
6এলিয় ইলিশায়কে বললেন, এবার তুমি এখানে থাক, প্রভু পরমেশ্বর আমাকে জর্ডন নদীতে যেতে বলেছেন। কিন্তু ইলিশায় বললেন, সদা জাগ্রত প্রভু পরমেশ্বর ও আপনার দিব্য, আমি আপনার সঙ্গ ছাড়ব না। কাজেই তাঁরা একসঙ্গে চললেন। 7আরও পঞ্চাশজন নবী তাঁদের সঙ্গে জর্ডনে চললেন। এলিয় ও ইলিশায় জর্ডন নদীর তীরে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং তাঁদের একটু দূরে অন্যান্য নবীরা দাঁড়িয়ে রইলেন। 8তখন এলিয় নিজের আলখাল্লাটা খুলে গুটিয়ে নিয়ে সেটা দিয়ে জলের উপর আঘাত করলেন। জল দুই ভাগ হয়ে দুজনের যাওয়ার মত পথ করে দিল। তিনি ও ইলিশায় শুকনো পথের উপর দিয়ে পার হয়ে গেলেন। 9সেখানে এলিয় ইলিশায়কে বললেন, তোমার কাছ থেকে আমাকে তুলে নেওয়ার আগে বল, তোমার জন্য আমাকে কি করতে হবে? ইলিশায় তাঁকে বললেন, আমাকে আপনার ঐশী শক্তির অংশীদার করুন, যাতে আমি আপনার উত্তরাধিকারী হতে পারি।
10এলিয় বললেন, বড় কঠিন আব্দার করেছ। ঠিক আছে, তোমার কাছ থেকে আমাকে তুলে নেবার সময় আমাকে যদি তুমি দেখতে পাও, তাহলে পাবে। আর যদি দেখতে না পাও, তাহলে পাবে না।
11তাঁরা কথা বলতে বলতে এগিয়ে চলেছেন, এমন সময় হঠাৎ আগুনের ঘোড়ায় টানা আগুনের একটি রথ এসে তাঁদের মাঝখানে দাঁড়াল এবং একটি ঘূর্ণিঝড় এলিয়কে স্বর্গে তুলে নিয়ে গেল। 12ইলিশায় সব দেখতে পেলেন এবং চীৎকার করে উঠলেন, পিতা, আমার পিতা! ইসরায়েলের শক্তিমান রক্ষক, আপনি চলে গেলেন।তারপরে তাঁকে আর দেখতে পেলেন না। দুঃখে ইলিশায় পরণের আলখাল্লাটি ছিঁড়ে দুই টুকরো করে ফেললেন। 13তারপর এলিয়র ফেলে যাওয়া আলখাল্লাটা তুলে নিয়ে জর্ডনের তীরে গিয়ে দাঁড়ালেন। 14এলিয়র আলখাল্লা দিয়ে তিনি নদীর জলের উপরে আঘাত করে বললেন, কোথায় প্রভু, এলিয়ের পরমেশ্বর? তারপর আবার জলে আঘাত করলেন। জল দুই ভাগ হয়ে গেল। তিনি হেঁটে এপারে চলে এলেন। 15যেরিকোর সেই পঞ্চাশজন তাঁকে দেখে বললেন, ইলিশায়ের উপরে এলিয়র ঐশী শক্তি অধিষ্ঠিত হয়েছে। তাঁরা তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলেন 16এবং বললেন, এখানে আমরা পঞ্চাশ জন আছি। সকলেই আমরা শক্ত সমর্থ লোক।আপনি আদেশ করুন, আমরা আপনার গুরুদেবকে খুঁজে আনি। হয়তো পরমেশ্বরের আত্মা তাঁকে নিয়ে গিয়ে কোন পাহাড়ে কিম্বা কোন উপত্যকায় রেখে গেছেন। ইলিশায় বললেন, না, তোমাদের যেতে হবে না।
17কিন্তু তাঁদের পীড়াপীড়িতে বাধ্য হয়ে তিনি তাঁদের অনুমতি দিলেন। তাঁরা পঞ্চাশ জনে সব জায়গায় তিন দিন ধরে খোঁজাখুঁজি করলেন কিন্তু কোথাও তাঁকে পেলেন না। 18তাঁরা ফিরে এলেন ইলিশায়ের কাছে। তিনি তখনও তাঁদের অপেক্ষায় যেরিকোতে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, আমি তো তোমাদের যেতে বারণ করেছিলাম।
ইলিশায়ের অলৌকিক কাজ
19যেরিকো থেকে কয়েকজন লোক একদিন ইলিশায়ের কাছে গিয়ে বলল, প্রভু, আপনি তো দেখছেন এই নগরটি খুবই ভাল। কিন্তু এখানকার জল খুব খারাপ। এই জল বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করে। গর্ভপাত ঘটায়।
20ইলিশায় তাদের আদেশ দিয়ে বললেন, একটা নতুন ভাঁড়ে করে লবণ নিয়ে এস। তারা নিয়ে এল। 21তখন তিনি ঝরণার কাছে গিয়ে জলের মধ্যে লবণটা ফেলে দিয়ে বললেন, প্রভু পরমেশ্বর বলেছেন, আমি এই জল শুদ্ধ করে দিলাম। আর কখনও এই জল মৃত্যু বা গর্ভপাত ঘটাবে না। 22সেই থেকে ইলিশায়ের কথা মত সেই জল আজও বিশুদ্ধ রয়েছে।
23ইলিশায় যেরিকো থেকে বেথেলে রওনা হলেন। পথে শহরের কতকগুলো ছেলে তাঁর সঙ্গে মস্করা করে চীৎকার করতে লাগল, এই টেকো, টেকো, দূর হ এখান থেকে।
24ইলিশায় তাদের দিকে ফিরে কটমট করে তাকিয়ে প্রভুর নামে অভিশাপ দিলেন। তখন জঙ্গল থেকে দুটো ভল্লুকী বেরিয়ে এসে বিয়াল্লিশটা ছেলেকে কামড়ে টুকরো করে ফেলল।
25ইলিশায় চলে গেলেন কার্মেল পাহাড়ে। তারপর সেখান থেকে গেলেন শমরিয়ায়।
Bengali C.L. Bible,
মোয়াব ও ইসরায়েলের যুদ্ধ
1যিহুদীয়ারাজ যিহোশাফটের রাজত্বের অষ্টাদশ বছরে ইসরায়েলরাজ আহাবের পুত্র যোরাম ইসরায়েলের রাজা হন এবং শমরিয়ায় বারো বছর রাজত্ব করেন। 2তিনিও পরমেশ্বরের দৃষ্টিতে ঘৃণ্য কাজ করতেন কিন্তু তাঁর পিতা অথবা মাতা ইষেবলের মত অতো খারাপ ছিলেন না। তিনি তাঁর পিতার প্রতিষ্ঠিত উপাস্য দেবতা বেলদেবের সমস্ত প্রতিমা ধ্বংস করেছিলেন। 3কিন্তু নবাটের পুত্র যারবিয়াম ইসরায়েলীদের যে সমস্ত পাপে প্ররোচিত করতেন, তিনিও তাই করতে লাগলেন।
4মোয়াব দেশের রাজা মেশা অনেক মেষ পালের মালিক ছিলেন। তিনি প্রতি বছর কর হিসাবে ইসরায়েলরাজকে একলক্ষ মেষশাবক ও একলক্ষ মেষের লোম দিতেন। 5কিন্তু ইসরায়েলরাজ আহাবের মৃত্যু হলে মেশা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। 6সঙ্গে সঙ্গে যোরাম শমরিয়া ত্যাগ করে গেলেন এবং তাঁর সমস্ত সৈন্য সামন্তকে একত্র করলেন। 7যিহুদীয়ার রাজা যিহোশাফটের কাছে দূত মারফৎ প্রস্তাব পাঠালেন, মোয়াবের রাজা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে, আপনি কি আমার সঙ্গে মোয়াবের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দেবেন? যিহোশাফট বলে পাঠালেন, নিশ্চয়ই! কারণ আমি আমার লোকজন ও অশ্বাবাহিনীসহ আপনাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত। 8বলুন, আমরা কোন পথে আক্রমণ করব? যোরাম বলে পাঠালেন, ইদোমের প্রান্তর দিযে চলবে আমাদের অভিযান।
9পরিকল্পনা মত রাজা যোরাম এবং যিহুদীয়া ও ইদোমরাজ একসাথে অভিযানে বার হলেন। সাতদিন পথ চলার পর তাঁদের জলাভাব দেখা দিল। সৈন্য অথবা পশু কারো জন্যই জল রইল না। 10রাজা যোরাম হায় হায় করে উঠলেন, একি হল! আমাদের তিন রাজাকে পরমেশ্বর মোয়াব রাজের হাতে তুলে দিলেন! 11রাজা যিহোশাফট জিজ্ঞাসা করলেন, এখানে কি কোন নবী আছেন, যাঁর মাধ্যমে আমরা প্রভু পরমেশ্বরের ইচ্ছা জানতে পারব? যোরামের সৈন্যবাহিনীর একজন পদস্থ কর্মচারী বলল, যাফতের পুত্র ইলিশায় এখানে আছেন। তিনি এলিয়র সেবক ছিলেন।
12রাজা যিহোশাফট বললেন, হ্যাঁ, উনি একজন প্রকৃত প্রবক্তা। তখন তিন রাজা মিলে ইলিশায়ের কাছে গেলেন।
13ইলিশায় ইসরায়েলরাজকে বললেন, কেন আমি আপনাকে সাহায্য করব? যান সেই সব নবীদের কাছে, যারা আপনার বাবা-মাকে পরামর্শ দিত ।
যোরাম বললেন, না, যাব না। প্রভু পরমেশ্বরই আমাদের এই তিন রাজাকে মোয়াবরাজের হাতে তুলে দিয়েছেন।
14ইলিশায় বললেন, আমি যাঁর সেবক, সেই সদাজাগ্রত প্রভুর নামে শপথ করে আমি বলছি, আপনার মিত্রপক্ষ যিহুদীয়ারাজ যিহোশাফটের প্রতি যদি আমার শ্রদ্ধা না থাকত, তাহলে আমি আপনার দিকে ফিরেও তাকাতাম না। 15এখন একজন বীণা বাদককে আমার কাছে আনুন।বীণাবাদক যখন বীণা বাজাচ্ছিল তখন পরমেশ্বরের শক্তি ইলিশায়ের মধ্যে এল। 16তিনি বললেন, শুনুন, পরমেশ্বর কী বলেনঃ এই শুকনো ঝরণার বুকে সব জায়গা জুড়ে গর্ত খুঁড়ুন। 17ঝড় কিম্বা বৃষ্টি না হলেও এই ঝরণা জলে ভরে যাবে এবং আপনি ও আপনার গরুঋভেড়া ও অন্যান্য পশুপালের জন্য প্রচুর পানীয় জল পাবেন। 18কিন্তু এ তো পরমেশ্বরের পক্ষে সামান্য একটা কাজ। তিনি মোয়াবীদের উপর আপনাকে জয়ীও করবেন। 19আপনি তাদের সমস্ত সুন্দর সুন্দর দুর্গ-নগর জয় করবেন। তাদের সমস্ত ফলের গাছ কেটে ফেলবেন, জলের ফোয়ারা বুঁজিয়ে দেবেন এবং তাদের সমস্ত উর্বরা জমিতে পাথর ছড়িয়ে নষ্ট করে দেবেন।
20পরের দিন সকালের নিয়মিত বলি উৎসর্গের সময় ইদোমের দিক থেকে জলস্রোত এসে সারা দেশ ভাসিয়ে দিল।
21মোয়াবীরা যখন শুনল যে তিনজন রাজা তাদের আক্রমণ করতে এসেছেন, তখন তাদের মধ্যে যারা যুদ্ধ করতে পারে, এমন যুবক-বৃদ্ধ সকলকে তারা ডেকে আনল। তারা সীমান্তে এসে মোতায়েন হল। 22পরের দিন সূর্যের আলো সেই জলের উপর পড়ায় জলের রঙ রক্তের মত লাল দেখাচ্ছিল। সকালে উঠে মোয়াবীরা এই দেখে চমকে বলে উঠল, এ যে রক্ত! 23তারা বলল, তাহলে নিশ্চয়ই ঐ তিন শত্রু নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করে মরেছে। কাজেই মোয়াবী ভাইসব, চল, আমরা ওদের শিবির লুঠ করি।
24তারা ইসরায়েলী শিবিরের কাছে যেতেই ইসরায়েলীরা তাদের আক্রমণ করল। মোয়াবীরা তখন পালাতে লাগল। ইসরায়েলীরা তাদের পিছনে তাড়া করে তাদের হত্যা করল। 25তাদের নগরগুলি ধ্বংস করল। যাবার পথে তাদের উর্বর জমিতে পাথর ছড়িয়ে ঢেকে দিল। জলের ফোয়ারাগুলি বুঁজিয়ে দিল, ফলের গাছগুলো সব কেটে ফেলল। বাকী রইল শুধু তাদের রাজধানী কীর হারাসৎ। ফিঙেধারীরা এবার এই রাজধানীটা ঘিরে ফেলে আক্রমণ করল।
26মোয়াবরাজ যখন বুঝলেন যে তিনি যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন তখন সাতশো অসিধারী সৈন্য নিয়ে শত্রুসৈন্য ভেদ করে সিরিয়ার রাজার কাছে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করলেন কিন্তু তিনি ব্যর্থ হলেন। 27তখন তিনি তাঁর উত্তরাধিকারী জ্যেষ্ঠ পুত্রকে নগর প্রাচীরের উপরে নিয়ে গিয়ে মোয়াবের দেবতার উদ্দেশে বলিদান করলেন। ইসরায়েলীরা এই অবস্থা দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে গেল এবং নগরের অবরোধ তুলে নিয়ে নিজেদের দেশে ফিরে গেল।
Bengali C.L. Bible
গরীব বিধবার সহায় ইলিশায়
1ঋষিকুলের একজন ঋষির বিধবা স্ত্রী ইলিশায়ের কাছে এসে বলল, মহর্ষি, আমার স্বামী মারা গেছেন। আপনি তো জানেন, তিনি কত ঈশ্বরভক্ত ছিলেন! কিন্তু তিনি একজনের কাছে ঋণ করেছিলেন। সে এখন তার পাওনার বদলে আমার ছেলে দুটিকে ক্রীতদাস করে নিয়ে যেতে চাইছে।
2ইলিশায় তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমাকে তোমার জন্য কি করতে হবে, বল। তোমার ঘরে কি কি আছে? সে বলল, ছোট এক ভাঁড় জলপাই তেল ছাড়া আর কিছুই নেই।
3ইলিশায় তাকে বললেন, যাও, তোমার পাড়া-পড়শীদের কাছ থেকে যত খালি পাত্র চেয়ে আনতে পার, নিয়ে এস। 4সেগুলো নিয়ে তুমি আর তোমার ছেলেরা ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দাও। তারপর খালি পাত্র গুলোতে তেল ঢালতে শুরু কর। এক একটা পাত্র ভরে গেলে একদিকে সরিয়ে রাখবে।
5বিধবাটি বাড়ি ফিরে গিয়ে ছেলেদের নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। তারপর তার ছেলেরা যে সব পাত্র চেয়ে এনেছিল সেগুলোতে এক এক করে তেল ঢালতে শুরু করল। 6সব পাত্রগুলো ভরে গেল সে ছেলেদের বলল, আর একটা আন। তারা বলল, এটাই শেষ, সঙ্গে সঙ্গে ভাঁড় থেকে তেল পড়া থেমে গেল। 7বিধবাটি তখন ইলিশায়ের কাছে গিয়ে সে কথা জানাল। ইলিশায় তাকে বললেন, এবার ঐ তেল বিক্রি করে তোমার ধার শোধ কর। ধার শোধের পর বাকী যা থাকবে তাতে তোমাদের সকলের ভরণপোষণের খরচ ভালভাবেই চলে যাবে।
ইলিশায় ও শুনেমের ধনবতী মহিলা
8একদিল ইলিশায় শুনেমে গেলেন। সেখানে একজন ধনবতী মহিলা থাকতেন। তিনি ইলিশায়কে তাঁর বাড়িতে খাওয়ার নিমন্ত্রণ করলেন। সেই থেকে যখনই তিনি শুনেমে যেতেন, তখনই সে মহিলার বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করতেন। 9এই মহিলা তাঁর স্বামীকে বললেন, এই যে মানুষটি প্রায়ই এখানে আসেন, আমি বেশ বুঝেছি যে ইনি একজন ঈশ্বরভক্ত পুণ্যাত্মা মানুষ। 10এঁর জন্য ছাদে একটা ছোট ঘর তৈরী করলে ভাল হয়। সেখানে একটা বিছানা, টেবিল-চয়ার, আর একটা বাতি রেখে দেব। উনি এলে ওখানেই থাকতে পারবেন।
11একদিন ইলিশায় শুনেমে গেলেন এবং সরাসরি তাঁর ঘরে চলে গেলেন বিশ্রাম করতে। 12তারপর তাঁর ভৃত্য গেহসিকে দিয়ে সেই মহিলাকে ডেকে পাঠালেন। মহিলাটি এলে 13তিনি গেহসিকে বললেন, ওঁকে জিজ্ঞাসা কর, আমাদের সুখ-সুবিধার জন্য উনি যে কষ্ট করে এতসব ব্যবস্থা করেছেন, তার বিনিময়ে ওঁর জন্য আমি কি করতে পারি? আমি কি ওঁর হয়ে মহারাজ কিম্বা সেনাপতির কাছে কিছু বলব?মহিলাটি বললেন, আমার আত্মীয়-স্বজনের মাঝে আমি বেশ সুখেই আছি।
14ইলিশায় গেহসিকে বললেন, তাহলে আমি ওঁর জন্য কী করতে পারি? গেহসি বলল, ওঁর কোন সন্তান নেই। ওঁর স্বামীরও বয়স হয়েছে।
15ইলিশায় তাকে বললেন, ওঁকে আর একবার এখানে আসতে বলতো! মহিলাটি এসে দরজার কাছে দাঁড়ালে 16ইলিশায় তাঁকে বলেলন, আগামী বছর এই সময় তোমার কোলে একটি ছেলে থাকবে। মহিলাটি বললেন, প্রভু, দয়া করে আমাকে আপনি মিথ্যা আশা দেবেন না, আপনি ঈশ্বরভক্ত মানুষ।
17কিন্তু ইলিশায়ের কথামত পরের বছর সেই সময়ে মহিলাটির একটি পুত্র সন্তান হল।
18তারপর কয়েক বছর কেটে গেছে, ছেলেটি বড় হয়েছে।একদিন ফসল কাটার সময় সে ক্ষেতে তার বাবার কাছে গেল। তার বাবা তখন ক্ষেতে মজুরদের সঙ্গে ছিলেন। 19এমন সময় হঠাৎই সে চেঁচিয়ে উঠে তার বাবাকে বলতে লাগল, উঃ, মাথা গেল! আমার মাথা গেল! তার বাবা একজন ভৃত্যকে বললেন, ছেলেটাকে ওর মায়ের কাছে নিয়ে যাও। 20ভৃত্যটি তাকে কোলে করে তার মায়ের কাছে নিয়ে গেল। মা তাকে কোলে নিয়ে রইলেন, দুপুর নাগাদ সে মায়ের কোলেই মারা গেল। 21তার মা তখন ছাদে, ইলিশায়ের ঘরে নিয়ে গিয়ে তাঁর বিছানায় তাকে শুইয়ে দিলেন। তারপর ঘরের দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে এসে 22তাঁর স্বামীকে ডেকে বললেন, একজন দাসকে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও। তার সাথে একটা গাধা দিও। আমি মহর্ষি ইলিশায়ের কাছে যাব, আর যত তাড়াতাড়ি পারি ফিরে আসব।
23তাঁর স্বামী তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি আজ কেন তাঁর কাছে যাবে? আজ তো বিশ্রাম বারও নয় বা শুক্লা প্রতিপদের উৎসবও নয়। মহিলাটি বললেন, তা নাই বা হল। 24গাধাকে জিন পরিয়ে তার পিঠে বসে তিনি দাসকে বললেন, যত তাড়াতাড়ি পার গাধাটাকে চালিয়ে নিয়ে চল। আমি না বললে ওর গতি কমিও না। 25তিনি রওনা হয়ে গেলেন এবং কার্মেল পাহাড়ে মহর্ষি ইলিশায়ের কাছে গিয়ে পৌঁছালেন।ইলিশায় তাঁকে দূর থেকে আসতে দেখে তাঁর ভৃত্য গেহসিকে বললেন দেখ—শুনেমের সেই মহিলাটি আসছেন। 26দৌড়ে তাঁর কাছে যাও। তাঁর কুশল সংবাদ নাও। তাঁর স্বামী-পুত্র কেমন আছে? মহিলাটি গেহসিকে বললেন, হ্যাঁ, ভালই আছে। 27কিন্তু ইলিশায়ের কাছে এসে তাঁকে প্রণাম করে তাঁর পা দুখানা জড়িয়ে ধরলেন। গেহসি তাঁকে ঠেলে সরিয়ে দিতে গেলে ইলিশায় তাকে বললেন, ওঁকে ছেড়ে দাও। দেখছ না ওঁর মনে কী দারুণ কষ্ট? এ ব্যাপারে পরমেশ্বর আমাকে কিছুই জানান নি।
28মহিলাটি তাঁকে বললেন, মহর্ষি, আমি কি আপনার কাছে সন্তান চেয়েছিলাম? বলি নি আপনাকে যে, আমাকে মিথ্যে আশা দেবেন না?
29ইলিশায় গেহসিকে বললেন, শিগ্গির! আমার লাঠিটা নিয়ে রওনা হয়ে যাও। পথে কারও সঙ্গে দেখা হলে থামবে না বা কথা বলবে না। কেউ তোমাকে অভিনন্দন জানালেও থামবে না উত্তর দেবে না। সোজা ঐ বাড়িতে চলে যাও। গিয়ে শিশুটির উপর আমার লাঠিটা ধর।
30মহিলাটি তখন ইলিশায়কে বললেন, সদা জাগ্রত প্রভু পরমেশ্বর ও আপনার কাছে শপথ করে বলছি, আপনার চরণ আমি কিছুতেই ছাড়ব না! তাই মহিলাটির সঙ্গে তিনি তাঁর বাড়ির দিকে রওনা হলেন। 31গেহসি তাঁদের আগে গিয়ে ছেলেটির দেহের উপর ইলিশায়ের ছড়ি ধরল কিন্তু তার কোন সাড়া পাওয়া গেল না বা প্রাণের কোন লক্ষণ দেখা গেল না। তখন ফিরে গিয়ে সে ইলিশায়কে বলল, কই, ছেলেটা তো জাগল না।
32ইলিশায় সেখানে পৌঁছে একা গেলেন ঘরের মধ্যে। গিয়ে দেখলেন ছেলেটির মৃতদেহ বিছানার উপরে শোয়ানো আছে। 33তিনি তখন দরজা বন্ধ করে প্রার্থনা করলেন। 34তারপর ছেলেটির চোখে চোখ, মুখে মুখ ও হাতে হাত রেখে তার দেহের ওপর উবুড় হয়ে শুয়ে পড়লেন। এইভাবে তিনি শুয়ে পড়ায় ছেলেটির দেহ ধীরে ধীরে গরম হতে লাগল। 35ইলিশায় উঠে ঘরের মধ্যে কিছুক্ষণ পায়চারি করে আবার তার দেহের উপর শুয়ে পড়লেন। তখন সাতবার হেঁচে ছেলেটি চোখ মেলে চাইল।36ইলিশায় গেহসিকে ডেকে ছেলেটির মাকে ডাকতে বললেন। তিনি এলে ইলিশায় তাঁকে বললেন, এই নাও তোমার ছেলে। 37মলিহাটি তাঁর পায়ে উবুড় হয়ে প্রণাম করলেন। তারপর ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে চলে গেলেন।
আরও দুটি অলৌকিক কাজ
38একবার সারা দেশে দারুণ দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। সেই সময় ইলিশায় ফিরে গিয়েছিলেন গিলগলে। তখন একদিন একদল শিষ্যকে তিনি শিক্ষা দিচ্ছিলেন। তিনি তাদের জন্য বড় একটা হাঁড়িতে করে সুরুয়া রান্না করতে বললেন তাঁর ভৃত্যকে। 39একজন নবী তখন ক্ষেতে গেল কিছু আনাজ জোগাড় করতে। ক্ষেতে গিয়ে সে একটা বুনো লাউয়ের গাছ দেখতে পেল। তার থেকে যত পারলো বুনো লাউ তুলে আনল। তারপর সেগুলো যে কি জিনিস না জেনেই কুটে হাঁড়িতে সুরুয়া চড়িয়ে দিল। 40সকলকে সেই সুরুয়া পরিবেশন করলে তারা মুখে দিয়েই চেঁচিয়ে ইলিশায়কে বলল, এ যে বিষাক্ত জিনিষ। তারা আর খেল না। 41ইলিশায় তাদের খানিকটা ময়দা আনতে বললেন। ময়দাটা নিয়ে তিনি হাঁড়ির মধ্যে ফেলে দিয়ে বললেন, এবার এর থেকে আরও সুরুয়া ওদের পাতে দাও। তখন সেগুলো আর বিষাক্ত রইল না।
42আর একবার বেল-শালিশা থেকে একটি লোক ইলিশায়ের জন্য সে বছরের ফসল যবের প্রথম কাটা শস্যের আটা দিয়ে তৈরী কুড়িটা রুটি আর এক বস্তা তাজা যবের শীষ এনেছিল। ইলিশায় তাঁর ভৃত্যকে বললেন, তাঁর খাবারগুলো লোকদের পরিবেশন করে খাওয়াতে। 43কিন্তু সে বলল, এই খাবার একশো জনকে দিতে কুলাবে কি করে? ইলিশায় বললেন, দাও না ওদের খেতে। পরমেশ্বর বলেছেন, ওদের খাওয়ার পরও খাবার বেঁচে যাবে। 44ভৃত্যটি তাদের সকলকে খাবার পরিবেশন করল। প্রভু পরমেশ্বরের কথামত সকলের খাওয়ার পরও কিছু খাবার বেঁচে গেল।
Bengali C.L. Bible,
নামানের আরোগ্য লাভ
1সিরিয়ার সৈন্যবাহিনীর অধ্যক্ষ নামান ছিলেন সিরিয়ারাজের অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র। কারণ নামানের হাত দিয়েই পরমেশ্বর সিরিয়ার সৈন্যবাহিনীকে বিজয়ী করেছিলেন। তিনি ছিলেন বীর যোদ্ধা। কিন্তু তিনি কুষ্ঠ রোগে ভুগছিলেন। 2একবার ইসরায়েলীদের বিরুদ্ধে একটি অভিযানের সময় সিরিয়ার সৈন্যরা ইসরায়েলীদের একটি ছাট মেয়েকে ধরে এনেছিল। সে নামানের স্ত্রী দাসী হয়েছিল। 3একদিন সে তার গিন্নীমাকে বলল, কর্তামশায় যদি শমরিয়ার মহর্ষির কাছে যেতে পারতেন, তাহলে উনি ওঁর রোগ ভাল করে দিতেন। 4নামান এ কথা শুনে রাজার কাছে গিয়ে মেয়েটির কথা বললেন। 5রাজা বললেন, আমি ইসরায়েলরাজের কাছে চিঠি লিখে দিচ্ছি, তুমি চিঠিটা নিয়ে সেখানে যাও। নামান রওনা হয়ে গেলেন। সঙ্গে নিলেন ত্রিশ হাজার রৌপ্য মুদ্রা, ছয় হাজার স্বর্ণমুদ্রা এবং দশ প্রস্থ দামী পোষাক। 6ইসরায়েলরাজের কাছে তিনি চিঠিটা দিলেন। তাতে লেখা ছিল: এই পত্রসহ আমার রাজকর্মচারী নামানকে পাঠালাম। আপনি তার রোগ সারিয়ে দেবেন।
7চিঠিটা পড়ে ইসরায়েলরাজ নিজের পোষাক ছিঁড়ে বললেন, এই লোকটিকে আমি সুস্থ করে দিতে পারি, সিরিয়ারাজ এই আশা করলেন কি করে? উনি কি ভেবেছেন আমি ঈশ্বর? জীবন মৃত্যুর বিধাতা: এতে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে উনি আমার সঙ্গে ঝগড়া বাধাতে চাইছেন!
8ইলিশায় এই ঘটনার কথা শুনে রাজাকে বলে পাঠালেন, আপনি এমন ভেঙ্গে পড়ছেন কেন? লোকটিকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন। আমি তাকে দেখিয়ে দেব যে ইসরায়েলে একজন মহর্ষি আছেন।
9কাজেই নামান রথ চালিয়ে দিলেন, রথের ঘোড়া রথ নিয়ে এসে থামল ইলিশায়ের বাড়ির দরজায়। 10ইলিশায় একজন ভৃত্যকে দিয়ে তাঁকে বলে পাঠালেন, জর্ডন নদীতে গিয়ে সাতবার ডুব দাও। তাহলে তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে। 11এতে নামানের কিন্তু খুব রাগ হয়ে গেল। তিনি বললেন, আমি ভাবলাম, তিনি অন্তত আমার কাছে বেরিয়ে এসে পরমেশ্বরের কাছে প্রার্থনা করবেন এবং আমার আক্রান্ত জায়গাগুলোতে হাত বুলিয়ে সুস্থ করে দেবেন! 12দামাস্কাসের আবানা আর ফার্পার নদী তো ইসরায়েল দেশের নদীর চেয়ে অনেক ভাল। সেগুলিতে স্নান করে আমি কি সুস্থ হতে পারতাম না? তিনি রাগ করে চলে গেলেন।
13তাঁর কর্মচারীরা তাঁর কাছে এসে বললেন, হুজুর, মহর্ষি যদি কোন কঠিন কাজ করতে বলতেন তাহলে নিশ্চয়ই আপনি করতেন। তাহলে তাঁর কথামত মাত্র এই স্নানটুকু করে কেন সুস্থ হতে যাচ্ছেন না? 14নামান তখন জর্ডন নদীতে নেমে ইলিশায়ের নির্দেশ মত সাতবার ডুব দিয়ে উঠলে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন। শিশুর ত্বকের মত সতেজ ও মসৃণ হয়ে উঠল দেহত্বক। 15লোকজনদের সবাইকে নিয়ে তিনি ইলিশায়ের কাছে ফিরে গেলেন। তাঁকে বললেন, এবার আমি জেনেছি যে ইসরায়েল দেশেই ঈশ্বর আছেন আর কোথাও নেই। দয়া করে আপনি আমার এই সমস্ত উপহার গ্রহণ করুন।
16ইলিশায় বললেন, আমার আরাধ্য সদাজাগ্রত প্রভু পরমেশ্বরের নামে শপথ করে বলছি, আমি কোন উপহার নেব না। নামানের অনেক অনুরোধ-উপরোধ সত্ত্বেও তিনি উপহার নিলেন না। 17তখন নামান বললেন, যদি আমার এই উপহার আপনি না নেন, তাহলে দয়া করে এই অধমকে এখানকার মাটি নিয়ে যেতে আমাকে অনুমতি দিন। দুটো গাধার পিঠে করে যতখানি সম্ভব মাটি আমি নিয়ে যেতে চাই। কারণ এখন থেকে প্রভু পরমেশ্বর ছাড়া আমি আর কোন দেবতার কাছে নৈবেদ্য বা হোমবলি উৎসর্গ করব না। 18কিন্তু আমার মনিব যখন রিম্মোণেরমন্দিরে আমার হাতে ভর দিয়ে দেবতা প্রণাম করতে যাবেন, তখন আমাকে বাধ্য হয়ে তাঁর সঙ্গে প্রণাম করতে হবে। এই ব্যাপারে আমার বিশ্বাস, প্রভু পরমেশ্বর নিশ্চয়ই আমায় ক্ষমা করবেন।
19ইলিশায় বললেন, নিশ্চিন্তে ফিরে যাও। তোমার কল্যাণ হোক! নামান চলে গেলেন। তিনি কিছু দূর মাত্র গিয়েছেন, 20এমন সময় ইলিশায়ের ভৃত্য গেহসি ভাবল আমার মনিব নামানের কাছ থেকে কোন উপহার না নিয়েই তাকে ছেড়ে দিলেন! তা হবে না। যাই, দৌড়ে গিয়ে তার কাছ থেকে কিছু আদায় করে নিয়ে আসি। 21সে নামানের পিছনে দৌড়াতে লাগল। নামান যখন দেখতে পেলেন যে একটা লোক তাঁর পিছনে ছুটে আসছে, তখন তিনি তাঁর রথ থেকে নেমে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কী ব্যাপার, কিছু হয়েছে নাকি? গেহসি বলল,
22না, কিছু হয়নি। তবে, আমার মনিব আপনাকে বলে পাঠালেন যে, ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকা থেকে দুজন তরুণ শিষ্য নবী এইমাত্র এসেছেন। তিনি এঁদের দেবার জন্য এক তালন্ত রূপো আর দু প্রস্থ দামী কাপড় চাইছেন।
23নিশ্চয়ই! তাহলে দু তালন্ত নিয়ে যাও—এই বলে নামান দুটো থলিতে রৌপ্য মুদ্রা এবং দু প্রস্থ দামী কাপড় তাঁর দুজন ভৃত্যের হাতে দিয়ে গেহসির সঙ্গে পাঠিয়ে দিলেন। 24ইলিশায় যে পাহাড়ে থাকতেন সেখানে তারা পৌঁছালে গেহসি জিনিষগুলো তাদের হাত থেকে নিয়ে ঘরে রেখে দিল এবং ভৃত্যদের ফেরৎ পাঠিয়ে দিল। 25সে ঘরের ভেতরে ইলিশায়ের কাছে গেলে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোথায় গিয়েছিলে গেহসি?
সে বলল, কোথাও তো যাইনি মালিক!
26ইলিশায় বললেন, ঐ ব্যক্তি যখন তোমার সঙ্গে কথা বলার জন্য রথ থেকে নামল তখন আমি সূক্ষ্ম দেহে সেখানে ছিলাম। অর্থ, বস্ত্র, জলপাই কুঞ্জ ও দ্রাক্ষাকুঞ্জ, মেষ ও বৃষ, দাস ও দাসী নেওয়ার এই কি সময়? 27কাজেই, নামানের কুষ্ঠরোগ এবার তোমার উপরে বর্তাবে, তোমার এবং তোমার বংশধরদের উপর বর্তাবে চিরকাল!
গেহসির সমস্ত শরীর ধব ধবে সাদা হয়ে গেল। সে সেখান থেকে চেল গেল।
Bengali C.L. Bible,
কুঠার উদ্ধার
1একদিন ইলিশায়ের অধীন নবী সঙ্ঘের নবীরা ইলিশায়কে বললেন, দেখুন, আমাদের থাকবার জায়গাটা খুব ছোট। 2অনুমতি দিন, আমরা জর্ডনে গিয়ে প্রত্যেকে গাছের গুঁড়ি কেটে এনে একটা ঘর তৈরী করি। ইলিশায় বললেন, ঠিক আছে, যাও।
নবীদের মধ্যে একজন তাঁকে বললেনঃ আপনিও আমাদের সঙ্গে চলুন।
3তিনি যেতে রাজী হলেন। 4সকলে তখন একসঙ্গ রওনা হলেন। জর্ডনে পৌঁছে সবাই কাজ শুরু করে দিলেন। 5গাছ কাটতে কাটতে ওঁদের মধ্যে একজনের কুড়ালের ফলা জলে পড়ে গেল। তিনি ‘হায় হায়’ করে উঠলেন, ইলিশায়কে বললেন, গুরুদেব, এবার আমি কী করি? কুড়ালটা যে আমি ধার করে এনেছিলাম।
6ইলিশায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোথায় পড়েছে? তিনি জায়গাটা দেখিয়ে দিলেন। ইলিশায় তখন একটা লাঠি কেটে সেই জায়গায় জলে ছুড়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে লোহার কুড়ালের ফলাটা জলের ওপর ভেসে উঠল। 7ইলিশায় বললেন, যাও, তুলে আন। সেই নবী তখন হাত বাড়িয়ে কুড়ালের ফলাটা তুলে আনলেন।
সিরিয়ার সৈন্যদের পরাজয়
8ইসরায়েলীদের সঙ্গে একবার সিরিয়ার রাজার যুদ্ধ বাধে। তিনি তাঁর সেনাপতিদের সঙ্গে পরামর্শ করে ওৎ পেতে থাকার জন্য একটা জায়গা নির্বাচন করলেন যেখান থেকে তাঁর শত্রুপক্ষের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন। 9কিন্তু ইলিশায় ইসরায়েলরাজের কাছে খবর পাঠিয়ে সাবধান করে দিলেন যেন তাঁরা সেই জায়গার কাছে না যান কারণ সিরিয়ার সৈন্যদল সেখানে আগে থেকে ওৎ পেতে বসে আছে। 10ইসরায়েলরাজও সেখানকার অধিবাসীদের এ সম্বন্ধে সাবধান করে দিলেন। তারাও সজাগ রইল। এইরকম ঘটনা কয়েকবারই ঘটেছিল।
11ফলে সিরিয়ারাজ খুব উদ্ভ্রান্ত হয়ে পড়লেন। সেনাপতিদের ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনাদের মধ্যে কে ইসরায়েলরাজের পক্ষে রয়েছেন?
12তাদের মধে একজন বললেন, মহারাজ, আমরা কেউ না। কিন্তু ইসরায়েলের নবী ইলিশায় ইসরায়েলরাজকে সব বলে দেন, এমনকি আপনি গোপনে অন্দরমহলে বসে যা বলেন, তা-ও বলে দেন।
13তোমরা খোঁজ নাও, সেই লোকটা কোথায় আছে। আমি তাকে বন্দী করব। তিনি যখন খবর পেলেন যে ইলিশায় দোথনে আছেন। 14তখন অনেক অশ্ব ও রথ নিয়ে বিরাট একদল সৈন্য সেখানে পাঠিয়ে দিলেন। তারা রাতের অন্ধকারে এসে নগরটি ঘিরে ফেলল। 15পরের দিন ভোরবেলায় নবী ইলিশায়ের ভৃত্য ঘুম থেকে উঠে বাইরে এসে দেখে, বিরাট একদল সৈন্য অশ্ব-রথ নিয়ে নগরটাকে ঘিরে রয়েছে। সে ছুটে এসে ইলিশায়কে বলল, হায়, হায় এ কী হল? এবার আমরা কী করব?
16ইলিশায় বললেন, ভয নেই! ওদের চেয়ে আমাদের দলে বেশী লোক আছে। 17তারপর তিনি প্রার্থনা করলেন, হে প্রভু পরমেশ্বর, দয়া করে এর চোখ খুলে দাও যেন এ দেখতে পায়! পরমেশ্বর তাঁর প্রার্থনার উত্তর দিলেন। সে দেখল, ইলিশায়ের চারিদিকে পাহাড়গুলো আগুনের রথ ও অশ্বে পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে।
18সিরিয়ার সেনাবাহিনী তাঁদের আক্রমণ করার জন্য এগিয়ে আসতে লাগল। ইলিশায় তখন প্রার্থনা করলেন, হে প্রভু পরমেশ্বর, ওদের অন্ধ করে দাও। পরমেশ্বর তাঁর প্রার্থনায় সাড়া দিলেন। তারা অন্ধ হয়ে গেল। 19ইলিশায় তখন তাদের কাছে গিয়ে বললেন, তোমরা ভুল পথে এসেছ। যে নগরে তোমরা যেতে চাও, এটা সেই নগর নয়। এস আমার সঙ্গে। তোমরা যাঁর সন্ধানে এসেছ, আমি তাঁর কাছে তোমাদের নিয়ে যাব। এই বলে, তিনি তাদের শমরিয়ায় নিয়ে গেলেন।
20শমরিয়া শহরে তারা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ইলিশায় প্রার্থনা করলেন, হে পরমেশ্বর, এদের চোখ খুলে দাও, যেন এরা দেখতে পায়। পরমেশ্বর তাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিলেন। তারা দেখল যে তারা শমরিয়ায় এসে পড়েছে।
21ইসরায়েলরাজ সিরিয়ার সৈন্যদের দেখে ইলিশায়কে জিজ্ঞাসা করলেন, গুরুদেব, এদের আমি হত্যা করি?
22ইলিশায় বললেন, না, হত্যা করো না। যাদের তুমি যুদ্ধে বন্দী কর, তাদের কি তুমি হত্যা কর? ওদের রুটি আর জল দাও। খেয়েদেয়ে ওরা ওদের রাজার কাছে ফিরে যাক। 23রাজা তখন ওদের বিরাট ভোজ দিলেন। তারা খেয়েদেয়ে তাদর রাজার কাছে ফিরে গেল। এরপর সিরিয়ার সৈন্যদল আর ইসরায়েল দেশ আক্রমণ করেনি।
শমরিয়া অবরোধ
24কিছুদিন পর সিরিয়ার রাজা বেনহদদ তাঁর সমস্ত সৈন-সামন্ত নিয়ে শমরিয়া অবরোধ করলেন। 25দীর্ঘদিন অবরোধের ফলে নগরের মধ্যে দারুণ খাদ্যাভাব দেখা দিল। একটা গাধার মাথার দাম আশী রৌপ্য মুদ্রা এবং দুশো গ্রাম বুনো পেঁয়াজের দাম হয়েছিল পাঁচ রৌপ্য মুদ্রা।
26ইসরায়েলরাজ নগরের প্রাচীরের উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন, সেইসময় একটি স্ত্রীলোক তাঁকে চেঁচিয়ে বলল, মহারাজ, আমাকে বাঁচান।
27রাজা বললেন, পরমেশ্বর যদি তোমায় না বাঁচান, তাহলে আমি কি করে তোমায় বাঁচাব? আমার কাছে কি গম কিম্বা সুরা রয়েছে? 28বল, তোমার কি অসুবিধা? মহারাজ, সেদিন এই মেয়েটা আমাকে বলল, তোমার ছেলেটাকে দাও, আজ আমরা ওর মাংস খাই। তারপর কাল আমার ছেলেটার মাংস খাওয়া যাবে। 29ওর কথামত আমার ছেলেটাকে রান্না করে আমরা খেলাম। কিন্তু পরের দিন যখন বললাম যে, তোমার ছেলেটাকে দাও, আমরা খাব, ও কিন্তু দিল না, ছেলেকে লুকিয়ে রাখল।
30এই কথা শুনে রাজা গভীর দুঃখ ও হতাশায় নিজের পোষাক ছিঁড়ে ফেললেন। সেইসময় তিনি প্রাচীরের উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন, তাই লোকে দেখতে পেল যে রাজা পোশাকের নীচে চট পরে রয়েছেন। 31রাজা সখেদে চীৎকার করে বললেন, আমি যদি আজ ইলিশায়ের ঘাড় থেকে মাথা না খসাই তো পরমেশ্বর যেন আমার মৃত্যু দেন। 32এই কথা বলে তিনি ইলিশায়কে ধরে আনার জন্য একজন লোক পাঠালেন। এদিকে, ইলিশায় তখন তাঁর বাড়িতে কয়েকজন সমাজপতির সঙ্গে বসে কথাবার্তা বলছিলেন। রাজার কাছ থেকে সেই লোকটি ইলিশায়ের কাছে পৌঁছাবার আগেই তিনি সমাজপতিদের বললেন, ঐ খুনীটা লোক পাঠিয়েছে আমার মাথা নেবার জন্য। ও এলেই তোমরা দরজা বন্ধ করে দিও, ওকে ঘরে ঢুকতে দিও না। ওর মনিবও ওর পিছনে আসছেন। 33তাঁর কথা শেষ হতে না হতেই রাজা এসে পড়লেন, বললেন, পরমেশ্বরই এই অমঙ্গল ঘটিয়েছেন। তাহলে আমি কেন আর তাঁর অপেক্ষায় থাকব?
Bengali C.L. Bible,
1ইলিশায় বললেন, শোন, প্রভু পরমেশ্বর কি বলছেন! আগামীকাল ঠিক এই সময় শমরিয়ার দেউড়িতে এক রৌপ্যমুদ্রায় তিন কিলোগ্রাম সবচেয়ে ভাল গমের ময়দা এবং ছয় কিলোগ্রাম যবের আটা বিক্রি হবে।
2রাজার খাস দেহরক্ষী ইলিশায়কে বলল, হতেই পারে না, এমনকি পরমেশ্বর যদি এই মুহূর্তে আকাশের দ্বার খুলে দেন, তাহলেও না। ইলিশায় বললেন, তুমি স্বচক্ষে এ ঘটনা ঘটতে দেখবে কিন্তু এ সবের কিছুই মুখে তুলতে পারবে না।
সিরিয়ার সৈন্যদলের পলায়ন
3শমরিয়ার দেউড়ির বাইরে তখন চারজন কুষ্ঠরোগী বসেছিল। তারা পরামর্শ করল, বলল, মরার জন্য এখানে বসে থাকি কেন? 4শহরের ভেতরে গিয়েও তো কোন লাভ নেই, ওখানে না খেয়ে মরতে হবে, এখানে বসে থাকলেও সেই দশা হবে। তার চেয়ে চল বরং আমরা সিরীয়দের ছাউনিতে যাই। তারা এমন বেশি কি আর করবে, না হয় মেরেই ফেলবে। আবার হয়তো ছেড়েও দিতে পারে! 5সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে তারা চলল সিরীয়দের ছাউনির দিকে। সেখানে পৌঁছে দেখে ছাউইতে কেউ নেই। 6পরমেশ্বর অসংখ্য ঘোড়ার খুরের আওয়াজ আর রথের চাকার ঘর্ঘর শব্দে বিশাল এক সৈন্যবাহিনীর এগিয়ে আসার প্রচণ্ড আওয়াজ শোনালেন সিরীয় সৈন্যদের। তারা ভাবল, ইসরায়েলরাজ হয়তো তাদের আক্রমণ করার জন্য হিত্তিয় ও মিশরী রাজাদের সৈন সামন্ত ভাড়া করে এনেছেন। 7তারা ভয় পেয়ে প্রাণ নিয়ে পালাল। ঘোড়া, গাধা আর শিবিরের যেখানে যা কিছু যেমনটি ছিল তেমনি সব ফেলে রেখে গেল।
8সেই চারজন কুষ্ঠরোগী সৈন্য শিবিরের কাছে গিয়ে একটা তাঁবুতে ঢুকে খুব খাওয়া দাওয়া করল। তারপর সোনা-রূপো, কাপড়-চোপড় যা কিছু সেখানে পেল নিয়ে এসে লুকিয়ে রাখল। সেখান থেকে গিয়ে ঢুকল আর একটা তাঁবুতে। সেখানেও তারা তাই করল। 9কিন্তু তারপর তাদের চেতনা হল, তারা বলল, এ আমাদের ঠিক কাজ হচ্ছে না। আজ মহানন্দের দিন। সুসংবাদের দিন। এ সংবাদ আমাদের চারজনের মধ্যে চেপে রাখা উচিত নয়। ভোরের অপেক্ষায় যদি আমরা দেরী করি তাহলে অন্যায় হবে। তার চেয়ে চল, আমরা এক্ষুনি গিয়ে রাজার কর্মচারীদের খবরটা দিই! 10তারা তখন দেউড়ির রক্ষীদের কাছে গিয়ে বলল, সিরীয় সেনাদের ছাউনিতে গিয়েছিলাম। কাউকে দেখতে পেলাম না, কারও সাড়াশব্দও পেলাম না। ঘোড়া গাধা সব বাঁধা রয়েছে। তাঁবুগুলো যেমনকার তেমনি রয়েছে।
11রক্ষীরা সেই সংবাদ ঘোষণা করে দিল। সংবাদ পৌঁছে গেল রাজপ্রাসাদে। 12তখনও গভীর রাত। রাজা বিছানা থেকে উঠে এসে প্রাসাদের কর্মচারীদের বললেন, আমি তোমাদের বলে দিচ্ছি, এ হল সিরীয়দের চতুর কৌশল। তারা জানে যে আমরা অনাহারে মরছি। কাজেই তারা শিবির ছেড়ে প্রান্তরে কোথাও লুকিয়ে আছে। ভাবছে, নগর ছেড়ে এদের বাইরে আসতেই হবে। আর তখনই ওরা আমাদের ধরে বন্দী করে নগর দখল করবে।
13একজন রাজকর্মচারী বলল, লোকেরা তো নগরের মধ্যে শেষ হয়েই যাচ্ছে, তার চেয়ে বরং কিছু লোক বাকী যে কটা ঘোড়া আছে তার মধ্যে থেকে পাঁচটা ঘোড়া নিয়ে যাক, দেখে আসুক ব্যাপারটা কি? 14তারা কয়েকজন লোককে বেছে ঠিক করল। রাজা তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে দুটো রথে করে সিরীয় সেনাদের সম্বন্ধে খোঁজখবর আনতে পাঠিয়ে দিলেন। 15তারা সিরীয়দের সন্ধানে জর্ডন পর্যন্ত গেল, দেখল, সারা পথে সিরীয় সৈন্যদের পালাবার সময় ফেলে যাওয়া কাপড়-চোপড় আর সাজ-সরঞ্জাম ছড়িয়ে পড়ে আছে। তারা ফিরে এসে রাজার কাছে সব সংবাদ পেশ করল। 16শমরিয়ার লোকেরা তখন ছুটে বেরিয়ে এসে সিরীয়দের ছাউনি লুঠ করল। সেদিন প্রভু পরমেশ্বরের কথামত এক শেকেলে ভাল ময়দা তিন কিলোগ্রাম আর যব ছয় কিলোগ্রাম বিক্রি হতে লাগল।
17ইসরায়েলরাজ তাঁর খাস দেহরক্ষীর হাতে নগরের তোরণ রক্ষার ভার দিয়েছিলেন, তোরণে মানুষের পায়ের চাপে পিষে সেই দেহরক্ষী মারা গেল। রাজা যখন ইলিশায়ের বাড়ীতে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তখন নবী লোকটির সম্বন্ধে যে কথা বলেছিলেন, সেই কথা ফলে গেল। 18নবী রাজাকে বলেছিলেন, আগামীকাল এই সময় শমরিয়া নগরের তোরণে শেকেলে তিন কেজি গম ও ছয় কেজি যব বিক্রি হবে। 19ঐ সেনাপতি নবী ইলিশায়কে বলেছিলেন, পরমেশ্বর যদি এই মুহূর্তে আকাশের দ্বার খুলে দেন তাহলেও এমন ঘটনা ঘটতেই পারে না। এই কথায় তাকে বলেছিলেন, তুমি স্বচক্ষে এই ঘটনা দেখবে কিন্তু তুমি তার কণামাত্রও মুখে তুলতে পারবে না। 20ঠিক তা-ই ঘটল—নগর তোরণে মানুষ তাক পায়ে দলে চলে গেল। সে মারা গেল।
Bengali C.L. Bible,
শূনেমী মহিলা সম্পত্তি ফিরে পেলেন
1নবী ইলিশায় শূনেমের যে মহিলার পুত্রকে পুনর্জীবিত করেছিলেন, তাঁকে তিনি বলেছিলেন, পরমেশ্বর দুর্ভিক্ষ পাঠাচ্ছেন। সাত বছর দুর্ভিক্ষ চলবে। কাজেই তুমি পরিবারের সকলকে নিয়ে অন্য কোথাও গিয়ে থাক। 2নবী ইলিশায়ের কথামত সেই মহিলা সপরিবারে বিদেশে, ফিলিস্তিয়ায় চলে গেলেন। সাত বৎসর সেখানে থাকলেন।
3সাত বছর কেটে গেলে তিনি ফিলিস্তিয়া থেকে ইসরায়েল দেশে ফিরে এলেন এবং রাজার কাছে তাঁর ঘরবাড়ি ও জমিজমা ফেরৎ পাবার জন্য আবেদন জানাতে গেলেন। 4রাজার কাছে গিয়ে দেখলেন, ইলিশায়ের ভৃত্য গেহসির সঙ্গে রাজা কথা বলছেন। রাজা তাকে বলছেন, নবীর অলৌকিক কীর্তি কাহিনীর কথা আমাকে বল। 5ইলিশায় কি ভাবে মৃতকে পুনর্জীবন দান করেছিলেন, সেই কথা যখন গেহসি বলছিল, ঠিক সেই সময় এই মহিলা তাঁর ঘর-বাড়ি ও জমিজমা ফিরে পাওয়ার আবেদন নিয়ে উপস্থিত হলেন। গেহসি রাজাকে বরললেন, এই সেই মহিলা, যাঁর ছেলেকে ইলিশায় বাঁচিয়েছিলেন। 6রাজা তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সেই ঘটনার কথা বললেন। রাজা তখন একজন কর্মচারীকে ডেকে বললেন, এঁর সমস্ত সম্পত্তি ফিরিয়ে দাও এবং যেদিন ইনি দেশ ত্যাগ করেছিলেন সেই দিন থেকে এ পর্যন্ত তাঁর জমি থেকে যা কিছু পাওনা হয়েছে—সব তাঁকে কড়ায়-গণ্ডায় ফিরিয়ে দাও।
ইলিশায় ও সিরিয়ার রাজা বেনহদদ
7সিরিয়ার রাজা বেনহদদ একবার খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেই সময় ইলিশায় গিয়েছিলেন দামাসকাসে। ইলিশায়ের আগমন সংবাদ পেয়ে 8বেনহদদ হসায়েল নামে তাঁর এক কর্মচারীকে বললেন, তুমি কিছু উপহার নিয়ে নবীর কাছে যাও এবং আমি সুস্থ হব কিনা এ সম্বন্ধে পরমেশ্বরের কাছে জানার জন্য তাঁকে অনুরােধ কর। 9হসায়েল তখন দামাসকাসের সমস্ত সেরা জিনিস চল্লিশটা উটের পিঠে বােঝাই করে নবী ইলিশায়ের কাছে গেলেন। তাঁর সাথে দেখা করে হসায়েল বললেন, আপনার সেবক রাজা বেনহদদ আপনার কাছে আমাকে জানতে পাঠিয়েছেন যে তিনি সুস্থ হবেন কিনা?
10ইলিশায় বললেন, তাঁকে গিয়ে বল, আপনি নিশ্চয়ই সুস্থ হবেন! তবে প্রভু পরমেশ্বর আমাকে জানিয়েছেন যে, তিনি মরবেন। 11এই বলে ইলিশায় এক দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলেন। তাঁর এই মর্মভেদী দৃষ্টিতে হসায়েল অস্বস্তি বোধ করতে লাগলেন। নবী ইলিশায় তখন কাঁদতে লাগলেন। 12হসায়েল তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, প্রভু আপনি কাঁদছেন কেন? ইলিশায় বললেন, আমি কাঁদছি, আমি জানি তুমি ইসরায়েলীদের কী ভয়ঙ্কর অনিষ্ট করবে। তাদের দুর্গগুলি পুড়িয়ে দেবে, যুবকদের হত্যা করবে, শিশুদের আছড়ে মেরে ফেলবে, গর্ভবতী নারীদের উদর চিরে ফেলবে।
13হসায়েল বললেন, আমি একটা তুচ্ছ নগণ্য মানুষ মাত্র। এমন সাঙ্ঘাতিক কাজ করার ক্ষমতা আমার কি করে হবে? ইলিশায় বললেন, প্রভু পরমেশ্বর আমাকে দেখিয়েছেন যে তুমি সিরিয়ার রাজা হবে।
14হসায়েল তখন বেনহদদের কাছে ফিরে গেলেন। রাজা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেলন, ইলিশায় তোমাকে কি বললেন? হসায়েল বললেন, তিনি বলেছেন, আপনি অবশ্যই সুস্থ হবেন। 15কিন্তু পরের দিনই হসায়েল একটা কম্বল জলে ভিজিয়ে রাজার মুখে চাপা দিয়ে তাঁকে মেরে ফেললেন। তারপর হসায়েল সিরিয়ার রাজা হলেন।
যিহুদীয়ার রাজা যিহোরাম
(২ বংশা 21:1-20)
16রাজা আহাবের পুত্র ইসরায়েলরাজ যোরামের রাজত্বের পঞ্চম বছরে যিহোশাফটের পুত্র যিহোরাম যিহুদীয়ার রাজা হন। 17তখন তাঁর বয়স ছিল বত্রিশ বছর। জেরুশালেমে তিনি আট বছর রাজত্ব করেন। 18তিনি আহাবের কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন বলে আহাব কুলের ইসরায়েলী রাজাদের মত তিনিও মন্দ পথে চলতেন এবং প্রভু পরমেশ্বর যা ঘৃণা করেন, সেইসব কাজ তিনি করতেন। 19কিন্তু পরমেশ্বর যিহুদীয়াকে ধ্বংস করতে চাননি, কারণ তিনি তাঁর দাস দাউদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তাঁর কুলে বাতি দেবার লোকের অভাব কোনদিন হবে না।
20যিহোরামের রাজত্বকালে ইদোম যিহুদীয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করল। 21তখন যিহোরাম তাঁর সমস্ত রথীবাহিনী নিয়ে সায়ীরের বিরুদ্ধে যাত্রা করলেন। সেখানে ইদোমী সৈন্যরা তাঁকে ঘিরে ফেলল। রাত্রিবেলায় তিনি তাঁর রথী সেনাপতিদের নিয়ে ইদোমী সৈন্যদের বেষ্টনী ভেদ করে পালিয়ে গেলেন এবং তাঁর সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যে যার বাড়ি পালিয়ে গেল। 22সেই থেকে ইদোম যিহুদীয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে চলেছে, নতি স্বীকার করেনি। লিব্নাও এই সময় বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল।
23যিহোরামের সমস্ত কাজের বিবরণ যিহুদীয়ার রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লেখা আছে। 24যিহোরামের মৃত্যুর পর তাঁকে দাউদ নগরে রাজপরিবারের সমাধিতে সমাহিত করা হয়। তারপর তাঁর সিংহাসনে বসলেন তাঁর পুত্র অহসিয়।
যিহুদীয়ার রাজা অহসিয়
25রাজা আহাবের পুত্র ইসরায়েলরাজ যোরামের রাজত্বের দ্বাদশ বছরে যিহোরামের পুত্র অহসিয় যিহুদীয়ার রাজা হন। 26তখন তাঁর বয়স ছিল বাইশ বছর। তিনি মাত্র একবছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর জননী অথলিয় ছিলেন ইসরায়েলের রাজা অম্রির পৌত্রী। 27আহাব কুলের জামাতা হওয়ার দরুণ অহসিয়ও পরমেশ্বরের দৃষ্টিতে যা কিছু ঘৃণিত ছিল আহাব কুলের অনুসরণে তা-ই তিনি করতেন।
28রাজা অহসিয় সিরিয়ার রাজা হসায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাজা যোরামের সঙ্গে যোগ দিলেন। রামোৎ-গিলিয়দে দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ হল। 29যোরাম যুদ্ধে আহত হয়ে শুশ্রূষার জন্য যিষ্রিয়েল নগরে গেলেন। অহসিয় তাঁকে দেখতে সেখানে গেলেন।
Bengali C.L. Bible,
No comments:
Post a Comment