শামুয়েল-২ পুস্তকের ২০-২২ অধ্যায়

20

শেবার বিদ্রোহ ও মৃত্যু
1সেখানে বিন্যামীন গোষ্ঠীর শেবা নামে একটা দুষ্ট লোক ছিল। তার বাবার নাম ছিল বিখ্রি। শেবা তুরী বাজিয়ে ঘোষণা করল, দাউদের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই, যেশির ছেলের উপর আমাদের কোন দাবীও নেই। হে ইসরায়েল, তোমরা প্রত্যেকে ফিরে যাও নিজের ঘরে।2ইসরায়েলীরা দাউদকে ছেড়ে বিখ্রির ছেলে শেবার অনুসরণ করল। কিন্তু যিহুদা গোষ্ঠীর সকলে অটলভাবে রাজার অনুগত রইল এবং জর্ডনের তীর থেকে জেরুশালেমে তাঁর সঙ্গে গেল। 3জেরুশালেমে রাজপ্রাসাদে ফিরে দাউদ তাঁর যে দশজন উপপত্নীর উপর রাজপ্রাসাদ রক্ষার ভার দিয়ে গিয়েছিলেন তাদের গৃহবন্দী করে রাখলেন। এদের তিনি ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন কিন্তু আর কোনদিন তাদের স্পর্শ করেন নি। তারা সেখানে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত বিধবার মতই জীবন যাপন করেছিল।4রাজা দাউদ অমাসাকে ডেকে বললেন, তিনদিনের মধ্যে যিহুদা গোষ্ঠীর সমস্ত লোককে আমার কাছে এনে হাজির কর এবং তুমিও উপস্থিত থেক। 5অমাসা চলে গেলেন যিহুদা গোষ্ঠীর লোকদের ডাকতে। কিন্তু তিনি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফিরতে পারলেন না। 6দাউদ তাই অবিশয়কে বললেন, দেখ, বিখ্রির ছেলে শেবা অবশালোমের চেয়েও আমাদের বেশি ক্ষতি করবে। তুমি আমার সৈন্যদের নিয়ে ওর পিছনে ধাওয়া কর। নইলে ও কতকগুলি দূর্গশহর দখল করে নিয়ে আমাদের চোখে ধুলো দিয়ে উৎপাত বাড়াবে। 7তখন অবিশয়ের নেতৃত্বে যোয়াবের সৈন্যদল এবং রাজকীয় সৈন্যদল ও তার সমস্ত বীর যোদ্ধারা শেবাকে ধরবার জন্য বেরিয়ে পড়ল জেরুশালেম থেকে। 8গিবিয়োনের বিরাট পাথরের কাছে তাঁরা এসে পৌঁছালে অমাসা তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে এলেন। যোয়াবের পরণে ছিল সৈনিকের বেশ। কোমরে কোমরবদ্ধ এবং তার সাথে কায়দা করে বাঁধা ছিল খাপে ভরা তরোয়াল। তাই অমাসার দিকে এগিয়ে যাবার সময় যোয়াবের কোমর থেকে সেটা খুলে পড়ে গেল। 9যোয়াব অমাসাকে বললেন, ভাল আছ তো ভাই? এই বলে ডান হাতে তার থুতনি ধরে তাকে চুমু দিতে গেলেন।
10ওদিকে যোয়াবের আর এক হাতের তরোয়াল অমাসা লক্ষ্য করেন নি,সেই ফাঁকে যোয়াব তরোয়ালটা তাঁর পেটে চালিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। দ্বিতীয়বার তাঁকে আর মারতে হল না, তিনি মারা গেলেন।
এবার যোয়াব আর তাঁর ভাই অবিশয় ছুটলেন শেবাকে ধরতে। 11যোয়াবের সৈন্যদের একজন অমাসার মৃতদেহের কাছে দাঁড়িয়ে সবাইকে ডেকে বলতে লাগল, যারা যোয়াব ও দাউদের পক্ষে আছ, প্রত্যেকে যোয়াবকে অনুসরণ কর। 12অমাসার রক্তমাখা মৃতদেহ পড়ে রইল রাজপথের উপরে। সেই সৈনিক দেখল, যে ঐ পথ দিয়ে আসছে, সে-ই সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ছে। সে তখন অমাসার মৃতদেহটা তুলে মাঠে ফেলে দিল আর তার উপর একটা কাপড় ঢাকা দিয়ে দিল। 13পথের উপর থেকে তাকে সরিয়ে দিতেই লোকেরা শেবাকে ধরবার জন্য যোয়াবের অনুসরণ করল।
14শেবা ইসরায়েলীদের সমস্ত গোষ্ঠীর এলাকার মধ্যে দিয়ে আবেল বেথমাকাহ্ শহরে গিয়ে পৌঁছাল এবং বিখ্রি গোষ্ঠীর সকলে একত্র হয়ে তার সঙ্গে শহরের দিকে চলল। 15ইতিমধ্যে যোয়াবের লোকেরা এসে শহরটি ঘিরে ফেলল এবং প্রাচীরের বাইরের দিকে মাটির উঁচু ঢিবি তৈরী করল তারপর প্রাচীরটা ভাঙবার জন্য আঘাত করতে লাগল ও গোড়া খুঁড়তে আরম্ভ করল। 16শহরে একজন বুদ্ধিমতী মহিলা ছিল। সে প্রাচীরের ওধার থেকে চীৎকার করে ডেকে বলল: শোন, তোমরা শোন! যোয়াবকে এখানে আমার কাছে আসতে বল। আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাই। 17যোয়াব সেখানে গেলে সে তাকে জিজ্ঞাসা করল, আপনি যোয়াব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। মহিলাটি তাঁকে বল দয়া করে আমার কথা শুনুন। যোয়াব বললেন, বলুন, আমি শুনছি।
18মহিলাটি বলল, বহুকাল আগে কথাটি প্রচলিত ছিল, ‘আবেল শহরে গিয়ে পরামর্শ নিয়ে এস’- এই কথা অনুযায়ী লোকে প্রয়োজনে তাই-ই করত। 19আমরা ইসরায়েলীদের মধ্যে শান্তিপ্রিয় ও একান্ত অনুগত। আমাদের মায়ের মত এই শহরটিকে কেন আপনি ধ্বংস করতে চাইছেন? প্রভু পরমেশ্বরের সম্পত্তি কি আপনি ধ্বংস করতে চান? 20না, কখনও না। আমি আপনাদের শহর ধ্বংস করতে চাই না। 21আমাদের পরিকল্পনা তা নয়। ইফ্রয়িমের পাহাড়ী এলাকার বিখ্রির পুত্র শেবা এই শহরের মধ্যে ঢুকেছে। সে রাজা দাউদের বিরুদ্দে বিদ্রোহ শুরু করেছে। শুধু তাকেই আমার হাতে তুলে দিন, তাহলে আমি শহর থেকে চলে যাব।
মহিলাটি বলল, ঠিক আছে? লোকটির মাথা প্রাচীরের এদিক থেকে আপনার কাছে ছুঁড়ে দেওয়া হবে। 22মহিলাটি তখন শহরের লোকদের কাছে গিয়ে সব কথা জানাল। তার পরামর্শ মতই শিবার মাথাটা কেটে প্রাচীরের এদিক থেকে যোয়াবের কাছে ছুঁড়ে দিল। যোয়াব তখন তুরী বাজিয়ে সকলকে শহর ছেড়ে ফিরে যাবার সঙ্কেত ঘোষণা করলেন। সকলে বাড়ি ফিরে গেল। যোয়াব ফিরে গেলেন জেরুশালেমে রাজার কাছে।
দাউদের রাজকর্মচারীবৃন্দ
23যোয়াব ছিলেন ইসরায়েলের প্রধান সেনাপতি। যিহোয়াদার পুত্র বনায় ছিলেন দাউদের দেহরক্ষীদের প্রধান, 24আদোরাম ছিলেন বেগারখাটা শ্রমিকের প্রধান, অহিলুদের পুত্র যিহোশাফট ছিলেন ঐতিহাসিক, 25শেবা ছিলেন রাজ সভার সচিব, সাদোক ও অবিয়াথর ছিলেন পুরোহিত 26এবং যায়ীর শহরের ঈরাও ছিলেন দাউদের একজন মন্ত্রী।
Bengali C.L. Bible, 


শৌলের বংশধরদের উপর গিবিয়নীদের প্রতিশোধ
1দাউদের রাজত্বকালে তিন বছর ধরে দেশে দারুণ দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। তাই দাউদ প্রভু পরমেশ্বরের কাছে এই ব্যাপারে পরামর্শ চাইলেন। প্রভু বললেন, শৌল এবং তার বংশধরেরা হতার অপরাধে অপরাধী। সে গিবিয়োনের অধিবাসীদের হত্যা করেছিল। 2(গিবিয়োনের অধিবাসীরা ইসরায়েলী নয়,তারা ছিল অমোরীদের ছোট একটি অংশ। ইসরায়েলীরা এদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিন্তু শৌল ইসরায়েল ও যিহুদীয়ার লোকদের স্বার্থেই অতি মাত্রায় উৎসাহী হয়ে ওদের হত্যা করতে চেয়েছিলেন।)
3দাউদ তখন গিবিয়োনের লোকদের ডেকে বললেন, আমি তোমাদের জন্য কি করতে পারি? তোমাদের উপরে যে অন্যায় করা হয়েছিল, আমি তার ক্ষতিপূরণ করতে চাই যাতে তোমরা প্রভু পরমেশ্বরের প্রজাদের প্রতি প্রসন্ন হও ও তারা আশীর্বাদ লাভ করে।
4তারা বলল, সোনা কিম্বা রূপো দিয়ে অথবা কোন ইসরায়েলীকে হত্যা করে শৌলের ও তাঁর বংশের সঙ্গে আমাদের বিবাদ ঘুচবে না।
তাহলে, তোমাদের জন্য আমি কি করতে পারি? দাউদ জিজ্ঞাসা করলেন। 5তারা বলল, শৌল চেয়েছিলেন আমাদের নিঃশেষে ধ্বংস করতে, ইসরায়েলের মধ্যে আমাদের একজনকেও তিনি বাঁচিয়ে রাখতে চাননি। 6কাজেই তাঁর বংশধরদের মধ্যে সাতজন পুরুষকে আমাদের হাতে তুলে দিন। প্রভু পরমেশ্বরের মনোনীত রাজা শৌলের জন্মভূমি গিবিয়াতে পরমেশ্বর প্রভুর সামনে আমরা তাদের ফাঁসি দেব।
রাজা বললেন, ঠিক আছে, তোমাদের হাতে তাদের তুলে দেব। 7কিন্তু দাউদ ও যোনাথন যে পবিত্র শপথ নিয়ছিলেন, সেই অনুযায়ী দাউদ যোনাথনের পুত্র এবং শৌলের পৌত্র মফিবোশেথকে রেহাই দিলেন।8যাই হোক, তিনি অয়ের কন্যা রিসপার গর্ভজাত শৌলের দুই পুত্র আরমোনি ও মফিবোশেথকে এবং শৌলের কন্যা মীখলের গর্ভজাত মেহোলাহ্ নিবাসী বর্সিল্লয়ের পুত্র অদ্রীয়েলের পাঁচ পুত্রকে নিয়ে গিয়ে9গিবিয়োনের লোকদের হাতে তুলে দিলেন। তারা পাহাড়ে প্রভু পরমেশ্বরের সামনে তাদের ফাঁসি দিল, একসাথে সাতজনের মৃত্যু হল। বসন্ত বিদায়ের মুখে, যব কাটার মরশুমের তখন সবে শুরু-এমনি সময়েই তাদের মৃত্যু হয়েছিল। 10শৌলের উপপত্নী রিসপা (অয়ের কন্যা) তখন সেই পাহাড়ে পুত্রদের মৃতদেহের কাছে একটা চট বিছিয়ে সেখানেই থাকতে লাগল। দিনের বেলায় সে পাখি তাড়াতো আর রাতে বুনো জানোয়ার তাড়াতো যাতে তারা দেহগুলি খেতে না পারে। এইভাবে ফসল কাটার মরশুমের শুরু থেকে বর্ষাকাল না আসা পর্যন্ত সে সেখানেই থাকল।
11শৌলের উপপত্নী রিসপার এই অবস্থার কথা শুনে রাজা। 12দাউদ গিলিয়দের যাবেশ নামে জায়গাটির লোকদের কাছ থেকে শৌল ও তাঁর পুত্র যোনাথনের সমস্ত অস্থি নিয়ে এলেন। (গিলবোয়াতে ফিলিস্তিনীরা শৌলকে হত্যা করার পর তাঁদের দুজনের মৃতদেহ বেথশানের বারোয়ারী চকে ঝুলিয়ে দিয়েছিল। সেখান থেকে যাবেশ বাসীরা মৃতদেহ দুটি চুরি করে আনে।)
13দাউদ শৌল আর যোনাথনের অস্থি এবং সাতজনের অস্থি একজায়গায় জড়ো করালেন। 14তারপর বিন্যামীনের বংশের এলাকার সেলাতে শৌলের পিতা কীশের সমাধিতে অস্থিগুলিকে সমাহিত করা হল। রাজার আদেশে তাঁদের মরদেহের সৎকারে কাজ শেষ হল। তারপর ঈশ্বর প্রসন্ন হলেন, দেশের জন্য তাঁদের আবেদনে সাড়া দিলেন।
ফিলিস্তিনী যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
(১ বংশা 20:4-8)
15ফিলিস্তিনী আর ইসরায়েলীদের মধ্যে আবার যুদ্ধ বাধল। দাউদ সৈন্য সামন্ত নিয়ে ফিলিস্তিনীদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগলেন। যুদ্ধ করতে করতে দাউদ খুব ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। 16সেখানে ছিল ইশবীবেনোব নামে বিরাটাকায় দুর্দান্ত এক যোদ্ধা। তার কোমরে বাঁধা ছিল নতুন তরোয়াল আর হাতে তিনশো শেকেল ওজনের ব্রোঞ্জের তৈরী বর্শা। সে এগিয়ে এল দাউদকে হত্যা করবে বলে। 17ইতিমধ্যে সরূয়ার পুত্র অবিশয় দাউদকে সাহায্য করতে ছুটে এল এবং সেই ফিলিস্তিনী যোদ্ধাকে আক্রমণ করে হত্যা করল। দাউদের সৈন্য সামন্তরা তখন রাজাকে প্রতিজ্ঞা করাল, বলল, রাজা আর কখনও তাদের সঙ্গে যুদ্ধে যাবেন না। তারা বলল, আপনি ইসরায়েলের প্রদীপ। সেই প্রদীপকে আমরা নিভতে দেব না। 18এরপর গোব-এর ফিলিস্তিনীদের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ বাধল। হুশাহ্ নিবাসী সিব্বেকাই সফ নামে বিরাটকায় আর এক যোদ্ধাকে বধ করল। 19গোবেতেই ফিলিস্তিনীদের সঙ্গে আর একটা যুদ্ধে বেথলেহেমের তাঁতি যায়ীরের পুত্র এলহানান গাতের গলিয়াৎকে হত্যা করল। গলিয়াৎ-এর বর্শার হাতলটা ছিল তাঁতের নরাজের মত মোটা। 20আবার একটা যুদ্ধ বাধল গাতে। সেখানে ছিল এক দারুণ যুদ্ধবাজ লোক। বিরাট তার দেহ। তার প্রত্যেক হাতে পায়েছিল ছয়টা করে মোট চব্বিশটা আঙ্গুল। 21সে ইসরায়েলীদের গালাগালি দিতে লাগল। তখন দাউদের ভাই শামমাহর পুত্র যোনাথন তাকে বধ করল। 22এই চারজন ছিল গাতের বিরাটাকায় মানুষদের বংশধর। দাউদ ও তাঁর সৈন্যদের হাতে তারা নিহত হল।
Bengali C.L. Bible, 


দাউদের স্তব
(গীত 18)
11 যেদিন প্রভু পরমেশ্বর শৌল ও অন্যান্য শত্রুদের হাত থেকে দাউদকে উদ্ধার করেছিলেন, সেদিন তিনি প্রভু পরমেশ্বরের উদ্দেশে এই স্তব নিবেদন 2করেনঃ
প্রভু পরমেশ্বরই আমার শৈল,
আমার দুর্গ আমার উদ্ধার কর্তা,
3আমার ঈশ্বর, আমার সুদৃঢ শৈল,
আমি তাঁরই শরণাগত।
তিনিই আমার ঢাল, আমার পরিত্রাতা,
আমার সুউচ্চ নিরাপদ আশ্রয়।
4আমি প্রভুকেই করব আবাহন
তিনিই স্তুতির যোগ্য,
শত্রুদের হাত থেকে
তাহলে আমি পাব উদ্ধার।
5মৃত্যুর তরঙ্গ আমায়
ঘিরে রেখেছিল,
সর্বনাশের বন্যায় আমি বিধ্বস্ত হয়েছিলাম,
6পাতাল পুরীর মরণ-পাশে
আমি বাঁধা পড়েছিলাম।
আমার সামনে পাতা ছিল মরণের ফাঁদ।
7সেই সঙ্কটে আমি ডাকলাম
প্রভু পরমেশ্বরকে,
আমি ডাকলাম আমার ঈশ্বরকে।
তাঁর মন্দির থেকে তিনি শুনলেন আমার ডাক,
আমার কান্না পৌঁছাল তাঁর কানে।
8তখন জ্বলে উঠল তাঁর ক্রোধ
পৃথিবী টলতে লাগল, কাঁপতে লাগল
পর্বতমালার ভিত্তি দুলে উঠল,
কাঁপতে লাগল থর থর করে।
9তাঁর নাসারন্ধ্র থেকে উদ্গীর্ণ হল ধূম,
মুখ থেকে বেরিয়ে আসতে লাগল
সর্বগ্রাসী অগ্নিশিখা, জ্বলন্ত অঙ্গার।
10গগনমণ্ডল অবনত করে তিনি নেমে এলেন
তাঁর পদতলে ছিল গাঢ় অন্ধকার।
11করূবপৃষ্ঠে আরোহণ করে
তিনি হলেন উড্ডীয়মান,
প্রভঞ্জনের পাখায় ভর করে
তিনি উড়ে এলেন।
12তিনি অন্ধকারে নিজেকে ঢেকে ফেললেন,
আকাশের ঘোর ঘনঘটায়
রচনা করলেন আবরণ।
13তাঁর শ্রীমুখের তেজপুঞ্জ থেকে
জ্বলে উঠল অঙ্গার রাশি,
14প্রভু পরমেশ্বর আকাশ থেকে
বজ্রনাদ করলেন,
বজ্রনির্ঘোষে ধ্বনিত হল
পরাৎপরের কন্ঠস্বর।
15শর নিক্ষেপ করে তিনি
শত্রুকুলকে করলেন ছত্রভঙ্গ,
অজস্র বিদ্যুৎ চমকে তারা হল
ইতঃস্তত বিক্ষিপ্ত।
16প্রভু পরমেশ্বরের হুঙ্কারে,
তাঁর প্রচণ্ড ফুৎকারে
সাগরের জল সরে গেল,
প্রকাশিত হল পৃথিবীর ভিত্তিমূল।
17ঊর্ধ্ব থেকে হাত বাড়িয়ে
তিনি আমাকে ধারণ করলেন,
অথৈ জল থেকে,
আমায় তিনি টেনে তুললেন।
18তিনি আমায় উদ্ধার করলেন
প্রবল শত্রুর কবল থেকে,
উদ্ধার করলেন আমার বিদ্বেষীদের হাত থেকে,
কারণ তারা ছিল আমার চেয়ে শক্তিমান।
19বিপদের দিনে তারা আমায় আক্রমণ করল
কিন্তু প্রভু পরমেশ্বর হলেন আমার সহায়।
20তিনি আমাকে উদ্ধার করে
নিয়ে এলেন মুক্ত অঙ্গনে,
প্রসন্ন ছিলেন তিনি আমার উপর,
তাই আমায় আনলেন উদ্ধার করে।
21আমার ন্যায়নিষ্ঠা অনুযায়ী প্রভু পরমেশ্বর
পুরস্কার দিলেন আমায়,
আমার কলঙ্কহীন হাতদুখানির জন্য
আবার আমায় দিলেন প্রতিষ্ঠা।
22প্রভু পরমেশ্বরের নির্দেশিত পথেই
আমি চলেছি,
মতিচ্ছন্ন হয়ে আমি পরিত্যাগ করি নি
আমার ঈশ্বরকে।
23তাঁর সমস্ত বিধান আমি পালন করেছি,
আমি অমান্য করি নি তাঁর অনুশাসন।
24তিনি জানেন, আমি নির্দোষ,
অপরাধ থেকে আমি নিজেকে
দূরে রেখেছি।
25তাই প্রভু পরমেশ্বর
আমার ন্যায়নিষ্ঠার পুরস্কার দিলেন।
কারণ তিনি জানেন
আমার হাত অমলিন।
26তোমার প্রতি যারা একনিষ্ঠ
তাদের প্রতি তুমিও নিষ্ঠাবান
নিখুঁত মানুষের সাথে
খুঁতহীন তোমারও আচরণ।
27শুদ্ধাচারীর কাছে প্রকাশ কর
তুমি নিজের শুদ্ধতা,
কুটিলের কুটিলতা
তোমার কাছে হার মানে।
28নত-নম্র মানুষকে তুমি উদ্ধার কর
কিন্তু গর্বোদ্ধতকে তুমি কর অবনমিত।
29হে প্রভু পরমেশ্বর, তুমিই আমার প্রদীপ,
তুমিই আমার ঈশ্বর, আমার আঁধারের আলো।
30তুমি সহায় হলে আমি ধ্বংস করতে পারি
শত্রুসেনানী হে আমার ঈশ্বর,
তোমার শক্তিতে আমি
লঙ্ঘন করতে পারি বাধার প্রাচীর।
31ইনিই ঈশ্বর, এঁর পথ নির্ভুল
প্রভু পরমেশ্বরের প্রতিজ্ঞা নির্ভরযোগ্য,
তিনি তাঁর শরণাগতের ঢালস্বরূপ।
32প্রভু পরমেশ্বর ছাড়া ঈশ্বর আর কে আছে?
আমাদের ঈশ্বর ছাড়া
আশ্রয় শৈল আর কে আছে?
33এই ঈশ্বরই আমার সুদৃঢ় দুর্গ,
তিনি নিরঙ্কুশ করেছেন আমার চলার পথ।
34তিনি আমার চরণযুগলে দিয়েছেন
হরিণীচরণের ক্ষিপ্রতা,
শৈল শিখরেও আমায় তিনি
নিরাপদে রাখেন।
35তিনি আমার এই হাতদুখানিকে
শিখিয়েছেন রণকৌশল
তাই আমার বাহুদ্বয় তাম্রনির্মিত
ধনুক নোয়াতে পারে।
36তুমি আমায় দিয়েছ তোমার পরিত্রাণের ঢাল
তোমার অমায়িকতা আমায় করেছে মহান,
37তুমি আমায় দিয়েছ চলার জন্য প্রশস্ত পথ
তাই স্খলিত হয় নি আমার চরণ।
38শত্রুরা পালিয়ে রক্ষা পায় নি
আমি ধ্বংস করেছি তাদের,
একেবারে শেষ না করে,
আসি নি ফিরে-
39আমি তাদের ধ্বংস করেছি,
সংহার করেছি সমূলে।
যাতে তারা আর মাথা তুলে
দাঁড়াতে না পারে,
তারা পরাজিত, শায়িত আমার পদতলে।
40কারণ তুমিই দিয়েছ আমায় যুদ্ধ করার শক্তি
আমায় যারা আক্রমণ করেছিল
তাদের উপর তুমি আমায় করেছ বিজয়ী।
41আমার শত্রুদের তুমি পলায়নে বাধ্য করেছ,
আমার বিদ্বেষীদের আমি করেছি নিধন।
42তারা সাহায্যের জন্য কেঁদেছিল
কিন্তু তাদের রক্ষা করতে কেউ আসে নি
তারা ডেকেছিল প্রভু পরমেশ্বরকে,
কিন্তু তিনিও দেন নি সাড়া।
43আমি তাদের গুঁড়িয়ে ধুলো করে দিলাম,
পথের কাদার মত পায়ে দলে
ছুঁড়ে ফেললাম।
44তুমি আমাকে বিদ্রোহী প্রজার
হাত থেকে রক্ষা করেছ,
জাতিবৃন্দের উপরে তুমি আমার
কর্তৃত্ব বজায় রেখেছ,
যাদের আমি চিনতাম না
তারা আমার বশ্যতা স্বীকার করেছে।
45বিদেশীরা আমার কাছে নতি স্বীকার করেছে,
আমার কথা শোনামাত্রই
তারা আমার আজ্ঞা পালন করে।
46তারা সাহস হারিয়েছে,
কাঁপতে কাঁপতে বেরিয়ে এসেছে
তাদের দুর্গ থেকে।
47প্রভু পরমেশ্বর চিরজাগ্রত।
ধন্য আমার আশ্রয়দুর্গ
আমার পরিত্রাতা ঈশ্বরের মহিমা হোক।
48তুমিই সেই ঈশ্বর, তুমি আমায়
শত্রুর ওপর বিজয়ী করেছ,
জাতিবৃন্দকে করেছ আমার পদানত।
49তুমিই সেই ঈশ্বর, তুমি আমায়
শত্রুর কবল থেকে উদ্ধার করে এনেছ,
বিপক্ষের উপরে করেছ আমায় বিজয়ী,
উদ্ধার করেছ আমায় দুর্বৃত্তের হাত থেকে।
50তাই আমি, হে প্রভু পরমেশ্বর,
জাতিবৃন্দের মাঝে কীর্তন করব
মহিমা তোমার!
স্তবগান, করব আমি তোমারই নামে।
51তিনি তাঁর রাজাকে ভূষিত করেন
মহাবিজয় গৌরবে।
তাঁর অভিষিক্তের প্রতি,
দাউদ ও তাঁর বংশের প্রতি
প্রদর্শন করেন তাঁর অবিচল প্রেম।
Bengali C.L. Bible,

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...