২-শমুয়েল ১২: ১-৯

দাউদ ও নাথান
1প্রভু পরমেশ্বর প্রবক্তা নবী নাথানকে দাউদের কাছে পাঠালেন। নাথান দাউদকে গিয়ে বললেন, একটি নগরে দুজন লোক ছিল। একজন ছিল ধনী এবং আর একজন গরীব। 2ধনী লোকটির অনেক গরু-ভেড়া ছিল। 3আর গরীব লোকটির একটি মাত্র ভেড়া ছাড়া আর কিছুই ছিল না। সে সেটি কিনেছিল এবং তার নিজের ছেলেমেয়েদের সঙ্গেই অতি যত্নে ভেড়াটি বেড়ে উঠছিল। সে তাকে নিজের ভাগের খাবার খাওয়াত, নিজের বাটিতে জল খাওয়াত, বুকে করে রাখত। বলতে গেলে ভেড়াটিকে তার মেয়ের মতই রাখত। 4একদিন ধনী লোকটির বাড়িতে একজন অতিথি এল। অতিথিদের আদর আপ্যায়ন, খাওয়া দাওয়ার জন্য নিজের পশুপাল থেকে ভেড়া না নিয়ে সেই গরীবের ওই একটি মাত্র মেষ শাবকটিকে এনে অতিথি সেবা করল। 5একথা শুনে ধনী লোকটির উপর দাউদ রাগে জ্বলে উঠলেন। নাথানকে বললেন, সদা জাগ্রত প্রভু পরমেশ্বরের দিব্য যে ব্যক্তি এই কাজ করেছে, মৃত্যুই তার উপযুক্ত শাস্তি। 6এই হৃদয়হীন কাজের জন্য সেই একটি মেষ শাবকের বদলে তাকে চারগুণ ফিরিয়ে দিতে হবে।
7নাথান দাউদকে বললেন, আপনিই সেই ব্যক্তি! ইসরায়েলের ঈশ্বর প্রভু বলেছেন, আমি তোমাকে ইসরায়েলের রাজা করেছি, শৌলের হাত থেকে তোমাকে উদ্ধার করেছি, 8তোমাকে দিয়েছি তোমার মনিবের রাজ্য ও তার রাণীদেরও তোমার রাণী করে দিয়েছি। আমি তোমাকে করেছি ইসরায়েল ও যিহুদা কুলের শ্রেষ্ঠ নরপতি। এতেও যদি সন্তুষ্ট না হতে, তাহলে আমি তোমাকে এর দ্বিগুণ দিতাম। 9কিন্তু কেন তুমি আমার আজ্ঞা অমান্য করলে? কেন তুমি এই ঘৃণ্য কাজ করলে? তুমি হিত্তিয় উরিয়কে বধ করেছ। যুদ্ধে আম্মোনীদের তরবারির মুখে তাকে ফেলে দিয়েছ এবং তার স্ত্রীকে হরণ করেছ। 10অতএব তোমার বংশ কোনদিন যুদ্ধের হাত থেকে রেহাই পাবে না। কারণ তুমি আমাকে অমান্য করেছ এবং হিত্তিয় উরিয়ের স্ত্রীকে নিজের স্ত্রী করেছ। 11অতএব জেনে রাখ, আমি তোমারই বংশের একজনকে তোমার বিরুদ্ধে দাঁড় করাব। সে তোমার জীবনে বিপর্যয় আনবে। আমি তোমার প্রতিবেশীর হাতে তোমার স্ত্রীদের তুলে দেব। সে প্রকাশ্যে তাদের সতীত্ব হরণ করবে। 12তুমি একাজ করেছিলে গোপনে কিন্তু আমি সারা ইসরায়েলের সামনে প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটাব।
13দাউদ নাথানকে বললেন, আমি প্রভু পরমেশ্বরের কাছে পাপ করেছি। নাথান বললেন, প্রভু পরমেশ্বর আপনাকে পাপের দায় থেকে মুক্ত করছেন, আপনি মরবেন না। 14কিন্তু যেহেতু এই দুষ্কর্মের দ্বারা আপনি প্রভু পরমেশ্বরের বিরোধীদের তাঁর নিন্দা করার বড় সুযোগ করে দিয়েছেন, সেইজন্য আপনার নবজাত পুত্রটির মৃত্যু হবে। 15নাথান ফিরে গেলেন বাড়ীতে।
দাউদের পুত্রের মৃত্যু
উরিয়ের স্ত্রীর গর্ভজাত দাউদের পুত্রকে প্রভু পরমেশ্বর আঘাত করলেন। সে অসুস্থ হয়ে পড়ল। 16দাউদ শিশুটির জন্য ঈশ্বরের কাছে কাতর প্রার্থনা জানাতে লাগলেন। উপবাস করে নিভৃতে সারারাত মাটিতে পড়ে রইলেন। 17তাঁর বাড়ীর বয়স্ক ব্যক্তিরা তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে মাটি থেকে তুলে আনতে চেষ্টা করলেন কিন্তু তিনি উঠলেন না এবং তাদের সঙ্গে কিছু খেলেনও না। 18সাতদিন পর শিশুটি মারা গেল। কিন্তু কর্মচারীরা দাউদকে শিশুটির মৃত্যুসংবাদ দিতে সাহস করল না। তারা বলল, শিশুটি যখন বেঁচেছিল তখনই তিনি আমাদের কথায় কান দেননি। এখন কি করে তাঁকে বলি যে শিশুটি মারা গেছে? তাহলে তিনি যদি নিজের উপরে কিছু একটা করে বসেন। 19কর্মচারীদের কানাকানি করতে দেখে দাউদ অনুমানে বুঝলেন যে শিশুটি মারা গেছে।তখন তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, শিশুটি কি মারা গেছে? তারা বলল, আজ্ঞে হ্যাঁ, মারা গেছে।
20তখন দাউদ ভূমিশয্যা থেকে উঠে স্নান করে তেল মেখে পোষাক পরিচ্ছদ পাল্টে পবিত্র স্থানে গিয়ে প্রভু পরমেশ্বরের আরাধনা করলেন। তারপর সেখান থেকে প্রাসাদে ফিরে এলেন, এবং খাবার চাইলেন। পরিচারকেরা তাঁকে খাদ্য পরিবেশন করলে তিনি খাদ্য গ্রহণ করলেন। 21তাঁর পরিচারকেরা তাঁকে বলল, মহারাজ, শিশুটি যতক্ষণ বেঁচেছিল ততক্ষণ আপনি উপবাস করে রইলেন, কাঁদলেন কিন্তু শিশুটি মারা যেতে আপনি উঠে এলেন, খাদ্য গ্রহণ করলেন—এই ব্যাপারটা আমরা ঠিক বুঝতে পারলাম না। 22দাউদ বললেন, হ্যাঁ, যতক্ষণ শিশুটি বেঁচেছিল ততক্ষণ আমি উপবাসী থেকে কেঁদেছিলাম। ভেবেছিলাম, বলা যায় না যদি ঈশ্বর আমায় কৃপা করেন, যদি শিশুটি বেঁচে যায়। 23কিন্তু সে মারা গেল। এখন আর উপবাস করে কি লাভ? তাকে কি আমি আবার ফিরিয়ে আনতে পারব? আমি তার কাছে যাব কিন্তু সে আর আমার কাছে ফিরে আসবে না।
শলোমনের জন্ম
24দাউদ তাঁর স্ত্রী বৎশেবাকে সান্ত্বনা দিলেন। এরপর বৎশেবার আর একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করল। দাউদ তার নাম রাখলেন শলোমন। প্রভু পরমেশ্বর তার প্রতি কৃপা করলেন। 25এবং নবী নাথানের মারফৎ আদেশ পাঠালেন যেন তার নাম রাখা হয় যিদদিয় অর্থাৎ প্রভু পরমেশ্বরের প্রিয়পাত্র।
দাউদের রব্বা অধিকার
26এদিকে যোয়াব আম্মোনের রাজধানী রব্বা অধিকার করার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। রব্বা প্রায় হাতের মুঠোর মধ্যে চলে এসেছে। 27তিনি দূতমুখে দাউদের কাছে বলে পাঠালেন, আমি রব্বার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জলসরবরাহ কেন্দ্র দখল করে ফেলেছি। 28আপনি বাকী সৈন্যসামন্ত জোগাড় করে নিয়ে স্বয়ং এসে নগর অবরোধ করুন এবং অধিকার করুন। নইলে এতে আমারই কৃতিত্ব হবে। আমি তা চাই না। 29দাউদ তখন সমস্ত সৈন্যসামন্ত জোগাড় করে নিয়ে গিয়ে রব্বা আক্রমণ করে অধিকার করলেন। 30দাউদ আম্মোনীদের দেবতা মোলকের মাথা থেকে সোনার মুকুট খুলে নিলেন। মুকুটটার ওজন ছিল এক তালন্ত। তাতে একটি মণি বসানো ছিল। সেটি তিনি নিজের মুকুটে বসালেন। শহর থেকে তিনি প্রচুর জিনিসপত্র লুঠ করে আনলেন। 31সেখানকার লোকদের তিনি বন্দী করে আনলেন এবং তাদের লোহার কোদাল, শাবল ইত্যাদি যন্ত্রপাতি দিয়ে ইঁট তৈরীর কাজে লাগিয়ে দিলেন। আম্মোনের অন্যান্য শহরের লোকদেরও তিনি ঐ একই কাজে লাগিয়ে দিলেন। তারপর সৈন্যসামন্ত নিয়ে ফিরে গেলেন জেরুশালেমে।

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...