মথি ১৪: ৩-১২, মার্ক ৬: ১৭-১৯ ও লুক ৩: ১৯-২০

মথি ১৪: ৩-১২

একজন ফরীশী নেতার বাড়ীতে হযরত ঈসা মসীহ্‌
1এক বিশ্রামবারে ঈসা একজন ফরীশী নেতার বাড়ীতে খেতে গেলেন। ফরীশীরা খুব ভাল করেই ঈসাকে লক্ষ্য করছিলেন। 2ঈসার সামনে একজন রোগী ছিল যার সমস্ত শরীরটা শোথ রোগে ফুলে গিয়েছিল।
 
 3ঈসা আলেম ও ফরীশীদের জিজ্ঞাসা করলেন, “মূসার শরীয়ত মতে বিশ্রামবারে কি কাউকে সুস্থ করা উচিত?” 4ধর্ম-নেতারা চুপ করে রইলেন। তখন ঈসা লোকটির গায়ে হাত দিয়ে তাকে ধরে সুস্থ করে বিদায় দিলেন।
5তারপর তিনি সেই ধর্ম-নেতাদের বললেন, “বিশ্রামবারে যদি আপনাদের কারও ছেলে বা বলদ কূয়ায় পড়ে যায় তবে আপনারা কি তাকে তখনই তোলেন না?” 6কিন্তু সেই ধর্ম-নেতারা এর জবাব দিতে পারলেন না।
7যে লোকদের দাওয়াত করা হয়েছিল, তারা কিভাবে সম্মানের জায়গাগুলো বেছে নিচ্ছে তা দেখে ঈসা তাদের শিক্ষা দেবার জন্য এই কথা বললেন, 8“যখন কেউ আপনাকে বিয়ের ভোজে দাওয়াত করে তখন আপনি সম্মানের জায়গায় গিয়ে বসবেন না, কারণ আপনার চেয়ে হয়তো আরও সম্মানিত কাউকে দাওয়াত করা হয়েছে। 9তাহলে যিনি আপনাকে ও তাঁকে দাওয়াত করেছেন তিনি এসে আপনাকে বলবেন, ‘এই জায়গাটা ওনাকে ছেড়ে দিন।’ তখন তো আপনি লজ্জা পেয়ে সবচেয়ে নীচু জায়গায় বসতে যাবেন। 10আপনি যখন দাওয়াত পাবেন তখন বরং সবচেয়ে নীচু জায়গায় গিয়ে বসবেন। তাহলে দাওয়াত-কর্তা এসে আপনাকে বলবেন, ‘বন্ধু, আরও ভাল জায়গায় গিয়ে বসুন।’ তখন অন্য সব মেহমানদের সামনে আপনি সম্মান পাবেন। 11যে নিজেকে উঁচু করে তাকে নীচু করা হবে, আর যে নিজেকে নীচু করে তাকে উঁচু করা হবে।”
12যিনি তাঁকে দাওয়াত করেছিলেন পরে ঈসা তাঁকে বললেন, “যখন আপনি খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করবেন বা মেজবানী দেবেন তখন আপনার বন্ধুদের বা ভাইদের কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের বা ধনী প্রতিবেশীদের দাওয়াত করবেন না। তা করলে হয়ত তাঁরাও এর বদলে আপনাকে দাওয়াত করবেন আর এইভাবে আপনার দাওয়াত শোধ হয়ে যাবে।
 
 13কিন্তু আপনি যখন মেজবানী দেবেন তখন গরীব, নুলা, খোঁড়া এবং অন্ধদের ডাকবেন। 14তাতে আপনি আল্লাহ্‌র দোয়া পাবেন, কারণ তারা আপনার সেই দাওয়াতের শোধ দিতে পারবে না। যখন মৃত্যু থেকে ধার্মিক লোকদের জীবিত করা হবে তখন আপনি এর শোধ পাবেন।”


link
===========================================================


মার্ক ৬: ১৭-১৯


হযরত ইয়াহিয়া (আঃ)-এর শাহাদাত বরণ
14ঈসার সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল বলে বাদশাহ্‌ হেরোদ ঈসার কথা শুনতে পেয়েছিলেন। কোন কোন লোক বলছিল, “উনিই সেই তরিকাবন্দীদাতা ইয়াহিয়া। তিনি মৃত্যু থেকে বেঁচে উঠেছেন বলে এই সব অলৌকিক চিহ্ন-কাজ করছেন।”
15কেউ কেউ বলছিল, “উনি ইলিয়াস নবী”; আবার কেউ কেউ বলছিল, “অনেক দিন আগেকার নবীদের মত উনিও একজন নবী।”
16এই সব কথা শুনে হেরোদ বললেন, “উনি ইয়াহিয়া, যাঁর মাথা কেটে ফেলবার হুকুম আমি দিয়েছিলাম। আবার উনি বেঁচে উঠেছেন।”
 
17-18এই ঘটনার আগে হেরোদ লোক পাঠিয়ে ইয়াহিয়াকে ধরেছিলেন এবং তাঁকে বেঁধে জেলখানায় রেখেছিলেন। হেরোদ তাঁর ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়ার জন্যই এটা করেছিলেন। হেরোদ হেরোদিয়াকে বিয়ে করেছিলেন বলে ইয়াহিয়া বারবার হেরোদকে বলতেন, “আপনার ভাইয়ের স্ত্রীকে বিয়ে করা আপনার উচিত হয় নি।” 19এইজন্য ইয়াহিয়ার উপর হেরোদিয়ার খুব রাগ ছিল। সে ইয়াহিয়াকে হত্যা করতে চেয়েছিল, 
 
 20কিন্তু হেরোদ ইয়াহিয়াকে ভয় করতেন বলে সে তা করতে পারছিল না। ইয়াহিয়া যে একজন আল্লাহ্‌ভক্ত ও পবিত্র লোক হেরোদ তা জানতেন, তাই তিনি ইয়াহিয়াকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতেন। ইয়াহিয়ার কথা শুনবার সময় মনে খুব অস্বস্তি বোধ করলেও হেরোদ তাঁর কথা শুনতে ভালবাসতেন।
 
 
21শেষে হেরোদিয়া একটা সুযোগ পেল। হেরোদ নিজের জন্মদিনে তাঁর বড় বড় রাজকর্মচারী, সেনাপতি ও গালীল প্রদেশের প্রধান লোকদের জন্য একটা মেজবানী দিলেন। 22হেরোদিয়ার মেয়ে সেই মেজবানীসভায় নাচ দেখিয়ে হেরোদ ও ভোজে দাওয়াতী লোকদের সন্তুষ্ট করল।
তখন বাদশাহ্‌ মেয়েটিকে বললেন, “তুমি যা চাও আমি তোমাকে তা-ই দেব।” 23হেরোদ মেয়েটির কাছে কসম খেয়ে বললেন, “তুমি যা চাও আমি তা-ই তোমাকে দেব। এমন কি, আমার রাজ্যের অর্ধেক পর্যন্তও দেব।”
24মেয়েটি গিয়ে তার মাকে বলল, “আমি কি চাইব?”
তার মা বলল, “তরিকাবন্দীদাতা ইয়াহিয়ার মাথা।”
25মেয়েটি তখনই গিয়ে বাদশাহ্‌কে বলল, “একটা থালায় করে আমি এখনই তরিকাবন্দীদাতা ইয়াহিয়ার মাথাটা চাই।”
26এই কথা শুনে বাদশাহ্‌ হেরোদ খুব দুঃখিত হলেন, কিন্তু ভোজে দাওয়াতী লোকদের সামনে কসম খেয়েছিলেন বলে মেয়েটিকে ফিরিয়ে দিতে চাইলেন না। 27-28তিনি তখনই ইয়াহিয়ার মাথা কেটে আনবার জন্য একজন জল্লাদকে হুকুম দিলেন। সেই জল্লাদ জেলখানায় গিয়ে ইয়াহিয়ার মাথা কেটে একটা থালায় করে তা নিয়ে আসল। বাদশাহ্‌ সেটা মেয়েটিকে দিলে পর সে তা নিয়ে গিয়ে তার মাকে দিল। 29এই খবর পেয়ে ইয়াহিয়ার সাহাবীরা এসে তাঁর লাশটা নিয়ে গিয়ে দাফন করলেন।



link
===========================================================


লুক ৩: ১৯-২০


হযরত ইয়াহিয়া (আঃ)-এর তবলিগ
1রোম-সম্রাট টিবেরিয়াস সিজারের রাজত্বের পনের বছরের সময় এহুদিয়া প্রদেশের প্রধান শাসনকর্তা ছিলেন পন্তীয় পীলাত। তখন হেরোদ গালীল প্রদেশ ও তাঁর ভাই ফিলিপ যিতূরিয়া প্রদেশ ও ত্রাখোনীতিয়া শাসন করছিলেন। লুষানিয়া ছিলেন অবিলীনীর শাসনকর্তা, 2আর হানন ও কাইয়াফা ছিলেন ইহুদীদের মহা-ইমাম। ঠিক এই সময়ে আল্লাহ্‌ মরুভূমিতে জাকারিয়ার পুত্র ইয়াহিয়ার উপর তাঁর কালাম নাজেল করলেন। 3তখন ইয়াহিয়া জর্ডান নদীর চারদিকের সমস্ত জায়গায় গিয়ে তবলিগ করতে লাগলেন যেন লোকে গুনাহের মাফ পাবার জন্য তওবা করে এবং তার চিহ্ন হিসাবে তরিকাবন্দী নেয়। 4নবী ইশাইয়ার কিতাবে যা লেখা আছে ঠিক সেইভাবে এই সব হল। লেখা আছে,
“মরুভূমিতে একজনের কন্ঠস্বর চিৎকার করে জানাচ্ছে,
‘তোমরা মাবুদের পথ ঠিক কর,
তাঁর রাস্তা সোজা কর।
5সমস্ত উপত্যকা ভরা হবে,
পাহাড়-পর্বত সমান করা হবে।
আঁকাবাঁকা পথ সোজা করা হবে,
অসমান রাস্তা সমান করা হবে।
6মানুষকে নাজাত করবার জন্য
আল্লাহ্‌ যা করেছেন,
সব লোকেই তা দেখতে পাবে।’ ”
7তখন তরিকাবন্দী নেবার জন্য অনেক লোক ইয়াহিয়ার কাছে আসতে লাগল। ইয়াহিয়া তাদের বললেন, “সাপের বংশধরেরা! আল্লাহ্‌র যে গজব নেমে আসছে তা থেকে পালিয়ে যাবার এই বুদ্ধি তোমাদের কে দিল? 8তোমরা যে তওবা করেছ তার উপযুক্ত ফল তোমাদের জীবনে দেখাও। নিজেদের মনে ভেবো না যে, তোমরা ইব্রাহিমের বংশের লোক। আমি তোমাদের বলছি, এই পাথরগুলো থেকে আল্লাহ্‌ ইব্রাহিমের বংশধর তৈরী করতে পারেন। 9গাছের গোড়াতে কুড়াল লাগানোই আছে। যে গাছে ভাল ফল ধরে না তা কেটে আগুনে ফেলে দেওয়া হবে।”
10তখন লোকেরা ইয়াহিয়াকে জিজ্ঞাসা করল, “তা হলে আমরা কি করব?”
11ইয়াহিয়া তাদের বললেন, “যদি কারও দু’টা কোর্তা থাকে তবে যার কোর্তা নেই সে তাকে একটা দিক। যার খাবার আছে সেও সেই রকম করুক।”
12কয়েকজন খাজনা-আদায়কারী তরিকাবন্দী নেবার জন্য এসে ইয়াহিয়াকে বলল, “হুজুর, আমরা কি করব?”
13তিনি তাদের বললেন, “আইনে যা আছে তার বেশী আদায় কোরো না।”
14কয়েকজন সৈন্যও তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, “আর আমরা কি করব?”
তিনি সেই সৈন্যদের বললেন, “জুলুম করে বা অন্যায়ভাবে দোষ দেখিয়ে কারও কাছ থেকে কিছু আদায় কোরো না এবং তোমাদের বেতনেই সন্তুষ্ট থেকো।”
15লোকেরা খুব আশা নিয়ে মনে মনে ভাবছিল হয়ত বা ইয়াহিয়াই মসীহ্‌। 16এমন সময় ইয়াহিয়া তাদের সবাইকে বললেন, “আমি তোমাদের পানিতে তরিকাবন্দী দিচ্ছি, কিন্তু যিনি আমার চেয়ে শক্তিশালী তিনি আসছেন। আমি তাঁর জুতার ফিতা খুলবারও যোগ্য নই। তিনি পাক-রূহ্‌ ও আগুনে তোমাদের তরিকাবন্দী দেবেন। 17কুলা তাঁর হাতেই আছে; তা দিয়ে তিনি তাঁর ফসল মাড়াবার জায়গা পরিষ্কার করে ফসল গোলায় জমা করবেন, কিন্তু যে আগুন কখনও নেভে না তাতে তিনি তুষ পুড়িয়ে ফেলবেন।”
18ইয়াহিয়া আরও অনেক উপদেশের মধ্য দিয়ে লোকদের মনে উৎসাহ জাগিয়ে আল্লাহ্‌র দেওয়া সুসংবাদ তবলিগ করলেন।
 
 19শাসনকর্তা হেরোদের ভাইয়ের স্ত্রী হেরোদিয়ার সংগে হেরোদের সম্পর্কে র দরুন এবং তাঁর আরও অনেক খারাপ কাজের দরুন ইয়াহিয়া তাঁর দোষ দেখিয়ে দিয়েছিলেন। 20তাতে তিনি ইয়াহিয়াকে বন্দী করে জেলে দিলেন। এতে তাঁর অন্য সব খারাপ কাজের সংগে এই খারাপ কাজটাও যোগ হল।
 

link
===========================================================

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...