নাবালকের ইমামতি জায়েজ কিনা ?

প্রথম মত :  


(০১)

নাবালেগের ইমামতি সহীহ নয়। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ  
উমর বিন আবদুল আযীয ও আতা রাহ. বলেন, নাবালেগ ছেলে যেন প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগে ইমামতি না করে। ফরয নামাযেও নয়, অন্য নামাযেও নয়।

(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৩৫২৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৫৯; রদ্দুল মুহতার ১/৫৭৭)

الاختيار لتعليل المختار (1/ 58):
"قال: (ولاتجوز إمامة النساء والصبيان للرجال) أما النساء فلقوله عليه الصلاة والسلام: «أخروهنّ من حيث أخرهنّ الله»، وإنه نهي عن التقديم. وأما الصبيّ فلأنّ صلاته تقع نفلاً فلايجوز الاقتداء به، وقيل: يجوز في التراويح؛ لأنها ليست بفرض، والصحيح الأول؛ لأنّ نفله أضعف من نفل البالغ فلايبتنى عليه".
সারমর্মঃ যেহেতু নাবালেগের নামাজ নফল হবে,(কারন নামাজ তার উপর ফরজ নয়)
তাই তাই তার ইকতেদা করা জায়েজ নেই ।
  
الفتاوى الهندية (1/ 85) :
"وإمامة الصبي المراهق لصبيان مثله يجوز، كذا في الخلاصة ... المختار أنه لايجوز في الصلوات كلها، كذا في الهداية وهو الأصح. هكذا في المحيط وهو قول العامة وهو ظاهر الرواية. هكذا في البحر الرائق".

সারমর্মঃ গ্রহণযোগ্য মত হলো কোনো নামাজেই নাবালেগ এর ইমামতি জায়েজ নেই।  

ولایصح اقتداء رجل بامرأة وخنثی وصبي مطلقاً ولو في جنازة ونفل علی الأصح (درمختار مع الشامی: ۲/۳۲۱، ط: زکریا)۔

সারমর্মঃ মহিলা,হিজড়া,এবং নাবালেগের ইক্তেদা করা জায়েজ নেই।
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে নামাজ হবেনা,উক্ত নামাজ পুনরায় আদায় হয়ে হবে।
,
الموسوعة الفقهية" (6/203-204(:
" جُمْهُورُ الْفُقَهَاءِ ( الْحَنَفِيَّةُ وَالْمَالِكِيَّةُ وَالْحَنَابِلَةُ ) عَلَى أَنَّهُ يُشْتَرَطُ لِصِحَّةِ الإْمَامَةِ فِي صَلاَةِ الْفَرْضِ أَنْ يَكُونَ الإِمَامُ بَالِغًا ، فَلاَ تَصِحُّ إِمَامَةُ مُمَيِّزٍ لِبَالِغٍ فِي فَرْضٍ عِنْدَهُمْ ؛ لأِنّها حَال كَمَالٍ وَالصَّبِيُّ لَيْسَ مِنْ أَهْلِهَا ، وَلأِنَّ الإِمَامَ ضَامِنٌ وَلَيْسَ هُوَ مِنْ أَهْل الضَّمَانِ ، وَلأِنَّهُ لاَ يُؤْمَنُ مَعَهُ الإْخْلاَل بِالْقِرَاءَةِ حَال السِّرِّ .
أَمَّا فِي غَيْرِ الْفَرْضِ كَصَلاَةِ الْكُسُوفِ أَوِ التَّرَاوِيحِ : فَتَصِحُّ إِمَامَةُ الْمُمَيِّزِ لِلْبَالِغِ عِنْدَ جُمْهُورِ الْفُقَهَاءِ ( الْمَالِكِيَّةِ وَالشَّافِعِيَّةِ وَالْحَنَابِلَةِ وَبَعْضِ الْحَنَفِيَّةِ ) لأِنَّهُ لاَ يَلْزَمُ مِنْهَا بِنَاءُ الْقَوِيِّ عَلَى الضَّعِيفِ .
وَالْمُخْتَارُ عِنْدَ الْحَنَفِيَّةِ عَدَمُ جَوَازِ إِمَامَةِ الْمُمَيِّزِ لِلْبَالِغِ مُطْلَقًا ، سَوَاءٌ أَكَانَتْ فِي الْفَرَائِضِ أَمْ فِي النَّوَافِل .
وَلَمْ يَشْتَرِطِ الشَّافِعِيَّةُ فِي الإْمَامِ أَنْ يَكُونَ بَالِغًا ، فَتَصِحُّ إِمَامَةُ الْمُمَيِّزِ لِلْبَالِغِ عِنْدَهُمْ مُطْلَقًا ، سَوَاءٌ أَكَانَتْ فِي الْفَرَائِضِ أَمِ النَّوَافِل ، لِحَدِيثِ عَمْرِو بْنِ سَلَمَةَ أَنَّهُ كَانَ يَؤُمُّ قَوْمَهُ عَلَى عَهْدِ رَسُول اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ ابْنُ سِتِّ أَوْ سَبْعِ سِنِينَ ، لَكِنَّهُمْ قَالُوا : الْبَالِغُ أَوْلَى مِنَ الصَّبِيِّ ، وَإِنْ كَانَ الصَّبِيُّ أَقْرَأَ أَوْ أَفْقَهَ ، لِصِحَّةِ الاِقْتِدَاءِ بِالْبَالِغِ بِالإْجْمَاعِ ، وَلِهَذَا نَصَّ فِي الْبُوَيْطِيِّ عَلَى كَرَاهَةِ الاِقْتِدَاءِ بِالصَّبِيِّ .
أَمَّا إِمَامَةُ الْمُمَيِّزِ لِمِثْلِهِ فَجَائِزَةٌ فِي الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ وَغَيْرِهَا عِنْدَ جَمِيعِ الْفُقَهَاءِ .
সারমর্মঃ
 নাবালেগের পিছনে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। 
ইমাম আবু হানিফা রহঃ, ইমাম মালেক রহঃ, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহঃ এর নিকটে ফরজ নামাজের ভিতর এটি কোনোভাবেই জায়েজ নেই।,,,,
ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর মত হলো যদি সে তমিয কারী তথা তার যদি ভালো মন্দের পার্থক্যের মতো জ্ঞান থাকে,নামাজের মাসয়ালা মাসায়েল জানা থাকে,তাহলে তার পিছনে নামাজ জায়েজ আছে।
,
কিছু ইসলামী স্কলারদের মতে ৭ বছর বয়সী ইমামের পিছনে নামাজ পড়া জায়েয আছে। 
সুতরাং তাদের মতানুসারী গন সেই মত অনুযায়ী আমল করতে পারবেন। 
কোনো সমস্যা নেই।             

(০২)      
 যোগ্যতার ভিত্তিতে যদি বালেগ থেকে নাবালেগ বেশি যোগ্য হয়,তাহলেও নাবালেগের পিছনে নামাজ পড়া জায়েয হবেনা।
,
বালেগ  ব্যাক্তিই নামাজ পড়াবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)
------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ

--------------------------


দ্বিতীয় মত : 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ সম্পাদক: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া প্রকাশনায়: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ নাবালকের সংজ্ঞা: সাবালক হয়নি যারা, তারা নাবালক। সাবালক হওয়ার নিদর্শন: (১) স্বপ্নদোষ হওয়া, (২) নাভির নিচের পশম গজানো, (৩) সাবালক হওয়ার বয়স তথা পনের বছর পূর্ণ হওয়া। এ তিনটি আলামতের যে কোন একটি দ্বারা নাবালক ছেলেরা সাবালক হয়। যাদের পনের বছর পূর্ণ হয়নি বা যাদের মধ্যে সাবালক হওয়ার কোন আলামত দেখা যায়নি, এ নিবন্ধে শরিয়তের পরিভাষা মোতাবেক তাদেরকে নাবালক বলা হয়েছে। নাবালক ছেলের ইমামত বৈধ: নাবালক ছেলে যদি বুঝের বয়সে উপনীত হয়, যদি সে ভালোমন্দ বুঝে, সালাতের আহকাম জানে ও বিশুদ্ধভাবে সালাত আদায়ে সক্ষম হয়, তাহলে তার ইমামত দুরস্ত আছে। জুমার সালাতেও সে ইমামতি করতে পারবে। দলিল আমর ইব্‌ন সালামার হাদিস, ইমাম বুখারি রাহিমাহুল্লাহু বর্ণনা করেন: فَلَمَّا كَانَتْ وَقْعَةُ أَهْلِ الْفَتْحِ بَادَرَ كُلُّ قَوْمٍ بِإِسْلَامِهِمْ، وَبَدَرَ أَبِي قَوْمِي بِإِسْلَامِهِمْ، فَلَمَّا قَدِمَ، قَالَ: جِئْتُكُمْ وَاللَّهِ مِنْ عِنْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَحَقًّا، فَقَالَ: " صَلُّوا صَلَاةَ كَذَا فِي حِينِ كَذَا، وَصَلُّوا صَلَاةَ كَذَا فِي حِينِ كَذَا، فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلَاةُ، فَلْيُؤَذِّنْ أَحَدُكُمْ وَلْيَؤُمَّكُمْ أَكْثَرُكُمْ قُرْآنًا "، فَنَظَرُوا فَلَمْ يَكُنْ أَحَدٌ أَكْثَرَ قُرْآنًا مِنِّي لِمَا كُنْتُ أَتَلَقَّى مِنَ الرُّكْبَانِ، فَقَدَّمُونِي بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَأَنَا ابْنُ سِتٍّ أَوْ سَبْعِ سِنِينَ، وَكَانَتْ عَلَيَّ بُرْدَةٌ كُنْتُ إِذَا سَجَدْتُ تَقَلَّصَتْ عَنِّي، فَقَالَتِ امْرَأَةٌ مِنَ الْحَيِّ: أَلَا تُغَطُّوا عَنَّا اسْتَ قَارِئِكُمْ؟ فَاشْتَرَوْا، فَقَطَعُوا لِي قَمِيصًا فَمَا فَرِحْتُ بِشَيْءٍ فَرَحِي بِذَلِكَ الْقَمِيصِ" “যখন ফাত্‌হে মক্কা সংঘটিত হল, প্রত্যেক কওম ইসলাম গ্রহণ করার জন্য প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হল। আমার পিতা আমার সম্প্রদায়ের লোকদের নিয়ে দ্রুত ইসলাম গ্রহণ করলেন। তিনি ফিরে এসে বললেন: আমি তোমাদের নিকট সত্য নবীর কাছ থেকে এসেছি। তিনি বলেছেন: তোমরা অমুক সময় অমুক সালাত আদায় কর, আর অমুক সময় অমুক সালাত আদায় কর। যখন সালাতের সময় হয় তখন যেন তোমাদের কেউ আযান দেয়, এবং তোমাদের মধ্যে অধিক কুরআনধারী ব্যক্তি যেন ইমামত করে। তারা নজর দিয়ে দেখল, আমার চেয়ে অধিক কুরআনধারী কেউ নেই, কারণ আমি পথিকদের থেকে কুরআন গ্রহণ করতাম। তারা আমাকে তাদের সামনে অগ্রসর করে দিল (ইমামতের জন্য), আমি তখন ছয় অথবা সাত বছরের ছেলে। আমার গায়ে ছিল ডোরা-কাটা চাদর, যখন আমি সেজদায় যেতাম, তা গুটিয়ে ওপরে ওঠে যেত। গ্রামের এক মহিলা বলল: তোমাদের ইমামের নিতম্ব আমাদের থেকে তোমরা আড়াল কর। ফলে তারা কাপড় খরিদ করে আমাকে একটা জামা তৈরি করে দিল, আমি সে জামা পেয়ে এতো খুশি হয়েছি, কোন জিনিসের কারণে কখনো সেরূপ খুশি হয়নি”। বুখারি: (৪৩০২), আবু দাউদ: (৫৮৫), নাসায়ি: (২/৮২), নাসায়িতে রয়েছে: “আমি তখন আট বছরের ছেলে”। আবু দাউদে রয়েছে: “আমি তখন সাত অথবা আট বছরের ছেলে”। শাওকানি রাহিমাহুল্লাহ “নাইলুল আওতার” গ্রন্থে বলেছেন: فَقَدَّمُونِي بَيْنَ أَيْدِيهِمْ“তারা আমাকে তাদের সামনে অগ্রসর করল” বাণী থেকে নাবালক ছেলের ইমামতের বৈধতা প্রমাণিত হয়। অপর দলিল আবু মাসউদ আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: " يَؤُمُّ الْقَوْمَ، أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللَّهِ، فَإِنْ كَانُوا فِي الْقِرَاءَةِ سَوَاءً، فَأَعْلَمُهُمْ بِالسُّنَّةِ، فَإِنْ كَانُوا فِي السُّنَّةِ سَوَاءً، فَأَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً، فَإِنْ كَانُوا فِي الْهِجْرَةِ سَوَاءً، فَأَقْدَمُهُمْ سِلْمًا، وَلَا يَؤُمَّنَّ الرَّجُلُ الرَّجُلَ فِي سُلْطَانِهِ، وَلَا يَقْعُدْ فِي بَيْتِهِ عَلَى تَكْرِمَتِهِ، إِلَّا بِإِذْنِهِ " “অধিক কুরআনধারী ব্যক্তি লোকদের ইমামত করবে, যদি তারা তিলাওয়াতে বরাবর হয়, তাহলে তাদের মধ্যে যে সুন্নতে পারদর্শী সে, যদি তারা সুন্নতে বরাবর হয়, তাহলে তাদের মধ্যে যে হিজরতে অগ্রগামী সে, যদি তারা হিজরতে বরাবর হয়, তাহলে তাদের মধ্যে যে বয়সে বড় সে, আর কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির কর্তৃত্বে ইমামত করবে না, কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির বিছানায় তার অনুমতি ব্যতীত বসবে না”। মুসলিম: (১০৮৪) এখানে يَؤُمُّ الْقَوْمَ، أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللَّهِ“অধিক কুরআনধারী ব্যক্তি লোকদের ইমামত করবে” বাণীর ব্যাপকতা নাবালক ও সাবালক সবাইকে শামিল করে। অতএব ভালোমন্দ বুঝের অধিকারী নাবালক ছেলে যদি উপস্থিত লোকদের মধ্যে কুরআনে অধিক পারদর্শী হয়, সবচেয়ে বেশী কুরআন তার মুখস্থ থাকে, তাহলে সে ইমামতের অধিক হকদার। একদল ফিকাহবিদ এর সাথে দ্বিমত পোষণ করেন: তারা বলেন নফল সালাতে নাবালক ছেলের ইমামত বৈধ, ফরয সালাতে নয়। তাদের দলিল ইব্‌ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস: لا يؤم الغلام حتى يحتلم. “কোন ছেলে ইমামত করবে না, যতক্ষণ না সে সাবালক হয়”। মুসান্নাফ ইব্‌ন আব্দুর রায্‌যাক: (৩৮৪৭) এর উত্তর: নাইলুল আওতার: (৩/২০২) গ্রন্থে শাওকানি ও ফাতহুল বারি: (২/২১৭) গ্রন্থে ইব্‌ন হাজার প্রমুখগণ হাদিসটি দুর্বল বলেছেন, এ হাদিস দলিল হিসেবে পেশ করার উপযুক্ত নয়। তাদের দ্বিতীয় দলিল যুক্তি: নাবালক ছেলের সালাত তার ব্যাপারে নফল, সে যদি ফরয আদায়কারীর ইমামত করে তাহলে ইমাম ও মুক্তাদির সালাতে অমিল ও বৈপরীত্য সৃষ্টি হয়, কারণ তার সালাত নফল, এখনো তার ওপর সালাত ফরয হয়নি, আর মুক্তাদির সালাত ফরয, অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: إِنَّمَا جُعِلَ الْإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ فَلَا تَخْتَلِفُوا عَلَيْهِ، فَإِذَا رَكَعَ فَارْكَعُوا ... “ইমাম নির্ধারণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করার জন্য, অতএব তোমরা তার বিরোধিতা করো না, যখন সে রুকু করে তোমরা রুকু কর...” বুখারি: (৬৮৩), মুসলিম: (৬৩০) এর উত্তর: এ হাদিসের ব্যাপকতা সালাতের সকল আমলের সাথে নিয়তকে অন্তর্ভুক্ত করে ঠিক, কিন্তু মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদিসের কারণে নিয়ত এ ব্যাপকতায় শামিল হবে না, যেখানে রয়েছে: أَنَّ مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، كَانَ يُصَلِّي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَثُمَّ يَأْتِي قَوْمَهُ فَيُصَلِّي بِهِمُ الصَّلَاةَ، “মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সালাত আদায় করতেন, অতঃপর নিজ সম্প্রদায়ের নিকট এসে তাদের সাথে পুনরায় তা আদায় করতেন”।বুখারি: (৫৬৬৮), আবু দাউদ: (৫০৬), মুসনাদে আহমদ: (১৩৯৫৪) ও বায়হাকি: (৪৬৯৭) ইত্যাদি গ্রন্থে রয়েছে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এশার সালাত আদায় করে নিজ কওমের নিকট এসে তাদের সাথে পুনরায় তা আদায় করতেন।এখানে তার সালাত ছিল নফল আর তার মুক্তাদির সালাত ছিল ফরয, এ থেকে প্রমাণিত হয় নিয়তে ইমামের অনুসরণ জরুরি নয়, অতএব নাবালক ছেলের সালাত যদিও নফল তার পিছনে সাবালকের ইক্তিদা সহিহ। তারা বুখারিতে বর্ণিত আমর ইব্‌ন সালামা থেকে বর্ণিত হাদিস সম্পর্কে বলেন, তিনি নফল সালাতে ইমামত করেছেন। এর উত্তর: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: “অমুক সালাত অমুক সময়ে আদায় কর ও অমুক সালাত অমুক সময়ে আদায় কর” দ্বারা স্পষ্ট বুঝে আসে যে, এ ঘটনা ছিল ফরযের ক্ষেত্রে। অধিকন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: “যখন সালাত উপস্থিত হয়, তখন তোমাদের কেউ যেন আযান দেয়” ফরয ব্যতীত নফলের কোন সম্ভাবনা রাখে না, কারণ নফল সালাতে আযান বৈধ নয়। জামাতের সাথে আদায় করার নির্দেশও প্রমাণ করে এ সালাত ফরয, নফল নয়, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এরূপ নির্দেশ নেই যেখানে তিনি নফল সালাত জামাতের সাথে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। ফিকাহবিদদের একটি মূলনীতি হচ্ছে, নফল সালাতে যার ইমামত সহিহ ফরয সালাতে তার ইমামতি সহিহ। এ হিসেবেও নাবালক ছেলের ইমামত বৈধ। কতক আলেম বলেছেন: নাবালক ছেলের পিছনে সালাত আদায় করা মকরুহ। অপর একদল ফিকাহবিদ বলেন: ফরয ও নফল সালাতে নাবালক ছেলের ইমামত নাজায়েজ। তাদের দলিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস: " رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلَاثَةٍ: عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ، وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتَّى يَحْتَلِمَ، وَعَنِ الْمَجْنُونِ حَتَّى يَعْقِلَ " “তিন ব্যক্তির ওপর থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, ঘুমন্ত ব্যক্তির ওপর থেকে যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়, বাচ্চার ওপর থেকে যতক্ষণ সে সাবালক হয়। পাগলের ওপর থেকে যতক্ষণ না তার চেতনা ফিরে আসে”। আবু দাউদ: (৩৮২৭), তিরমিযি: (১৩৩৯), ইব্‌ন মাজাহ: (২০৩১) এর উত্তর: তাদের ওপর থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে বা তারা শরিয়তের আদিষ্ট নয় তাই তাদের পিছনে সালাত শুদ্ধ নয় এ কথা সঠিক নয়। বুঝমান নাবালক ছেলের সালাত তার নিজের জন্য সহিহ এতে কারো দ্বিমত নেই, যার নিজের সালাত সহিহ তার অপরের ইমাম হওয়া সহিহ, এটা ফিকাহবিদদের নিকট স্বীকৃত মূলনীতি। সুতরাং নাবালক ছেলের ইমামতি সহিহ। তারা আরো বলেন: নাবালক ছেলের ব্যাপারে নিশ্চয়তা থাকে না সে সালাতের শর্ত পূর্ণ করেছে কি-না। তাই তার পিছনে সালাত শুদ্ধ নয়। এর উত্তর: এ কথা ভিত্তিহীন, এর পশ্চাতে কোন দলিল নেই। শায়খ বাস্‌সাম রাহিমাহুল্লাহ বুখারিতে বর্ণিত আমর ইব্‌ন সালামার হাদিস উল্লেখ করে বলেন: এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় বুঝমান ছেলের ইমামতি দুরস্ত আছে, এমনকি ফরয সালাতেও। যদি বলা হয়: হতে পারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ইমামতি সম্পর্কে জানতেন না? এর উত্তর: নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা জানতেন, এর ওপর তার নীরবতা পালন করা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ওহি নাযিল না করা প্রমাণ করে যে, তাদের কর্ম সঠিক ছিল”। দেখুন: তাওযিহুল কালাম মিন বুলুগুল মারাম। আল্লামা শায়খ মুহাম্মদ সালেহ আল-উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ “যাদুল মুস্তাকনি” গ্রন্থের ব্যাখ্যায় বলেন: নাবালক যদি ইমাম হয় আর মুক্তাদি যদি হয় সাবালক, তাহলে সাবালকের সালাত শুদ্ধ হবে না দু’টি দলিলের কারণে: একটি হচ্ছে হাদিস, অপরটি যুক্তি। হাদিস যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করা হয়, তিনি বলেছেন: ((لا تقدموا سفهاءكم وصبيانكم في صلاتكم ...)) “তোমরা তোমাদের সালাতে বোকা ও বাচ্চাদের অগ্রসর কর না”। দায়লামি: (৭৩১০) আর যুক্তি হচ্ছে নাবালকের সালাত নফল, সাবালকের সালাত ফরয, নিঃসন্দেহে ফরযের মর্তবা নফলের ঊর্ধ্বে। তাই ফরয আদায়কারী হবে অনুকরণীয় নফল আদায়কারী হবে অনুকরণকারী। আমরা যদি ফরয আদায়কারীর সালাত নফল আদায়কারীর পশ্চাতে বৈধ বলি, তাহলে আমরা অধিক মর্যাদাশীলকে কম মর্যাদার অনুগত করে দিলাম, যা কিয়াস ও যুক্তির বিপরীত, যুক্তি হচ্ছে ফরয আদায়কারী অনুকরণীয় হবে, অনুকরণকারী নয়। হ্যাঁ নাবালকের পিছনে নাবালকের সালাত বৈধ, এতে কোন দ্বিমত নেই। লেখক [যাদুল মুস্তাকনি‘ এর লেখক] এ অভিমত গ্রহণ করেছেন। এটা এক অভিমত। দ্বিতীয় অভিমত হচ্ছে সাবালকের সালাত নাবালকের পিছনে বৈধ। এর দলিল বুখারিতে বর্ণিত আমর ইব্‌ন সালামার হাদিস। আর যে হাদিস পেশ করা হয়েছে: (( لا تقدموا صبيانكم في صلاتكم ))فهو حديث لا أصل له إطلاقا، فلا يصح عن النبي صلى الله عليه وسلم. “তোমরা তোমাদের সালাতে বোকা ও বাচ্চাদের অগ্রসর কর না” এ হাদিসের কোন ভিত্তি নেই। আর যে কিয়াস ও যুক্তি পেশ করা হয়েছে, তার উত্তর হচ্ছে একটি মূলনীতি: নস ও দলিলের মোকাবিলায় কিয়াস ও যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ কিয়াস মূলত মানুষের অভিমত, ভুল ও সঠিক উভয় হতে পারে, দ্বীনের ব্যাপারে মানুষের অভিমত গ্রহণযোগ্য নয়, যেহেতু আমাদের সামনে সহিহ হাদিস রয়েছে, তাই এখানে কিয়াসের কোন মূল্য নেই। হ্যাঁ কেউ বলতে পারে, আমর ইব্‌ন সালামার ঘটনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতেন, না জানতেন না? এর উত্তরে আমরা বলতে পারি তিনি জানতেন, অথবা জানতেন না, অথবা আমরা তা জানি না। যদি তিনি জানতেন তাহলে এ হাদিস দ্বারা দলিল দেয়া স্পষ্ট। আর যদি তিনি না জানেন তাহলে আমরা বলব আল্লাহ অবশ্যই জানতেন, ওহি নাযিলের সময় কোন বিষয়ে আল্লাহর নীরবতা ও মৌন সমর্থন তার বৈধতার প্রমাণ। কারণ যদি তা নিষিদ্ধ হতো, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই তার নিষেধাজ্ঞা জারি করতেন, রাসূলের জানা থাক বা না থাক। এর দলিল: প্রথমত: আল্লাহ তাআলার বাণী: ﴿يَسۡتَخۡفُونَ مِنَ ٱلنَّاسِ وَلَا يَسۡتَخۡفُونَ مِنَ ٱللَّهِ وَهُوَ مَعَهُمۡ إِذۡ يُبَيِّتُونَ مَا لَا يَرۡضَىٰ مِنَ ٱلۡقَوۡلِۚ وَكَانَ ٱللَّهُ بِمَا يَعۡمَلُونَ مُحِيطًا ١٠٨﴾ [النساء : ١٠٨] “তারা মানুষের কাছ থেকে লুকাতে চায়, ‎আর আল্লাহর কাছ থেকে লুকাতে চায় না। অথচ ‎তিনি তাদের সাথেই থাকেন যখন তারা রাতে ‎এমন কথার পরিকল্পনা করে যা তিনি পছন্দ ‎করেন না। আর আল্লাহ তারা যা করে তা ‎পরিবেষ্টন করে আছেন”।সূরা নিসা: (১০৮) এখানে আল্লাহ তাদের রাতের অন্ধকারের পরিকল্পনা ফাঁস করে দিয়েছেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ কোন অবৈধ বিষয়ের ওপর নীরবতা পালন করেন না, মানুষের জানা থাক বা না থাক। দ্বিতীয়ত: সাহাবায়ে কেরাম আযল বৈধতার প্রমাণ হিসেবে বলেন: " كُنَّا نَعْزِلُ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَوَالْقُرْآنُ يَنْزِلُ " “আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে আযল করতাম, এ দিকে কুরআনও নাযিল হতো”।বুখারি: (৪৮৩৪)তারা কুরআন নাযিলের সময় আযল করত, কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে নিষেধ করেননি, তাই তারা আল্লাহর মৌন সমর্থন ও নীরবতা থেকে বুঝেছেন আযল বৈধ। অতএব আমর ইব্‌ন সালামার ইমামত বৈধ। ইব্‌ন উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহুর কথা এখানে শেষ। [আযল: স্ত্রী সহবাসের সময় যোনীতে বীর্যপাত না করে বাইরে বীর্যপাত ঘটানোকে আযল বলা হয়।] মুদ্দাকথা:ফরয ও নফল উভয় সালাতে নাবালক ছেলের ইমামতি বৈধ, যদি সে উপস্থিত লোকদের মধ্যে অধিক কুরআনধারী হয়। যেমন আমর ইব্‌ন সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ইমামতের জন্য সামনে অগ্রসর করা হয়েছে। নবুওয়তী যুগে যারা তাকে ইমামতের দায়িত্ব দিয়েছেন তাদের সবাই ছিলেন সাহাবি, তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী থেকে ফরয- নফল ও নাবালক - সাবালকের মধ্যে কোন পার্থক্য বোঝেননি।তাদের এ কর্ম ভুল হলে অবশ্যই আল্লাহ সতর্ক করে দিতেন। বিশেষ করে সালাতের ক্ষেত্রে, যা ইসলামের সবচেয়ে বড় রোকন। যেমন জিবরিল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাতের মধ্যে জুতা খোলার নির্দেশ দিয়েছেন, কারণ তাতে নাপাক ছিল। হাদিসে এসেছে: أن النبي صلى الله عليه وسلم صَلَّى بأصحابه فخلع نعليه فوضعهما عن يساره ، فلما رأى ذلك القوم ألقوا نعالهم ، فلما قضى رسول الله صلى الله عليه وسلم صلاته قال : ما حملكم على إلقائكم نعالكم ؟ قالوا : رأيناك ألقيت نعليك فألقينا نعالنا ، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إن جبريل صلى الله عليه وسلم أتاني فأخبرني أن فيهما قذرا . رواه الإمام أحمد وأبو داود. “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথীদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন, তিনি সালাতে দু’পায়ের জুতো খুলে বাম পাশে রাখলেন। মুক্তাদিরা যখন তা দেখল, তারাও তাদের জুতো খুলে ফেলল। রাসূলূল্লাহ সালাত শেষ করে বললেন তোমরা কি জন্য জুতো খুলেছ? তারা বলল: আমরা আপনাকে জুতো খুলতে দেখেছি, তাই আমরাও আমাদের জুতো খুলে ফেলেছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন জিবরিল আমার কাছে এসে আমাকে বলেছে জুতোদ্বয়ে নাপাক রয়েছে”।আবু দাউদ ও আহমদ। এ থেকে আমরা বুঝি নাবালক ছেলে আমর ইব্‌ন সালামার ইমামতি যদি সঠিক না হতো, অবশ্যই ওহি নাযিল করে তা জানিয়ে দেয়া হতো। যারা বলেন নাবালক ছেলের ইমামতি বৈধ নয় বা তার পিছনে নফল বৈধ, ফরয বৈধ নয়, তারা এর স্বপক্ষে যেসব হাদিস দলিল হিসেবে পেশ করেন তা খুব দুর্বল, দলিল হিসেবে পেশ করার যোগ্য নয়। আর যেসব যুক্তি পেশ করেন তাও শ্রবণ যোগ্য নয়, কারণ সহিহ হাদিসের মোকাবেলায় যুক্তির কোন মূল্য নেই। আল্লাহ ভাল জানেন।

- আরিফুল ইসলাম । 

--------------------------------

হাদিস বিস্তারিত : হাদিস কাকে বলে ? হাদিস কত প্রকার ও কি কি ?

 ইসলামী শরীয়তের দ্বিতীয় উৎস হলো হাদিস। একে কুরআনের ব্যাখ্যা বলা হয়। এটি কুরআন বুঝার পথকে সহজ করে দেয়। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কথা, কাজ ও মৌনসম্মতি হলো হাদিস। চলুন তাহলে হাদিস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

হাদিসের পরিচয়

হাদিস আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো –

  • কথা / বাণী
  • উপদেশ
  • কাহিনী / ঘটনা
  • সংবাদ
  • বক্তব্য ইত্যাদি

পারিভাষিক অর্থে

ইসলামি শরীয়তের পরিভাষায়, “মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কথা, কাজ, অনুমোদন ও মৌনসম্মতিকে হাদিস বলে।”

ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, “হাদিস এমন একটি শাস্ত্র যার মাধ্যমে মহানবী (সাঃ) এর বক্তব্য বা কথা ও অবস্থা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।”

ড. মুহাম্মদ ত্বহান বলেছেন, “যে কথা, কাজ ও সমর্থনের সম্বন্ধ মহানবী (সাঃ) এর দিকে করা হয়েছে তাকে হাদীস বলে।”

নূরুল আনওয়ার গ্রন্থে বলা হয়েছে, “শুধুমাত্র রাসূল (সাঃ) এর বাণীকেই হাদীস বলা হয়।”

মিজানুল আকবর প্রণেতার মতে, “রাসূল পাক (সাঃ) এর সাথে সম্পর্কিত কথা, কাজ ও মৌনসম্মতিকে হাদীস বলা হয়।”

জমহুর মুহাদ্দিস-ই কিরাম এর মতে, “মহানবী (সাঃ) ও সাহাবী কিরাম এর কথা কাজ ও মৌনসম্মতিকে হাদীস বলে।”

অধিকাংশ মুহাদ্দিসিনে কিরামের মতে, “মহানবী (সাঃ) এর কথা, কাজ ও মৌনসম্মতি এবং সাহাবী ও তাবেঈগণের বক্তব্যকে হাদিস বলে।”

হাদীসের প্রকারভেদ

বিভিন্ন দিক থেকে হাদিসকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। যেমন –

মতনের দিক থেকে হাদীস ৩ প্রকার। যথাঃ-

  • হাদীস-ই- মারফু
  • হাদীস-ই- মাওকুফ
  • হাদীস-ই- মাকতু

যে হাদীসের সনদ সরাসরি মহানবী (সাঃ) পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে হাদিসে হাদীসে মারফু বলে।

যে হাদীসের সনদ মহানবী (সাঃ) পর্যন্ত পৌঁছে নাই এবং সাহাবী কিরাম (রাঃ) পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে হাদীসে মাওকুফ বলে।

যে হাদিসের সনদ তাবেঈ (রহঃ) পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে হাদীসে মাকতু বলে।

কোন কোন মুহাদ্দিসগণ এর সাথে আরেকটি প্রকার সংযুক্ত করেছেন সেটি হলো হাদীসে কুদসি।

হাদীসে কুদসীঃ যে হাদীসের ভাব ভাষা দুটিই আল্লাহ তায়ালার তবে সেটি মহানবী (সাঃ) বর্ণনা করেছেন, তাকে হাদীসে কুদসি বলে।

রাবী বাদ পড়া হিসাবে হাদীস দুই প্রকার।যথাঃ

  • মুত্তাছিল হাদীস
  • মুনকাতে হাদীস

যে হাদীসের সনদের ধারাবাহিকতা সর্বস্তরে ঠিক রয়েছে কোথাও কোন রাবী বাদ পড়ে নি তাকে মুত্তাছিল হাদীস বলে।

যে হাদীসের সনদের মধ্যে কোন রাবীর নাম বাদ পড়েছে তাকে মুনকাতে হাদীস বলে।

মুনকাতে হাদীস আবার তিন প্রকারঃ

  • মুরসাল হাদীস
  • মুয়াল্লাক হাদীস
  • মুদাল হাদীস

যে হাদীসে শেষের দিকে রাবীর নাম বাদ পড়েছে অর্থাৎ সাহাবীদের নামই বাদ পড়েছে তাকে মুরসাল হাদীস বলে।

যে হাদীসের সনদের প্রথম দিকে রাবীর নাম বাদ পড়েছে অথার্ৎ সাহাবীর পর তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ীর নাম বাদ পড়েছে তাকে মুয়াল্লাক হাদীস বলে।

যে হাদীসে দুই বা ততোধীক রাবী ক্রমান্বয়ে সনদ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে তাকে মুদাল হাদীস বলে।


বিষয়বস্তুর বিচারে হাদীসকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ-

  • হাদীস-ই-ক্বাওলি
  • হাদীস-ই- ফেইলি
  • হাদীস-ই- তাকরিরি

মহানবী (সাঃ), সাহাবী (রাঃ) ও তাবেঈগণের সরাসরি বক্তব্য বা বাণীকে হাদীস-ই-ক্বাওলি বলা হয়।

মহানবী (সাঃ) তাঁর সাহাবী কিরাম (রাঃ) ও তাবেঈগণের কাজকে হাদীস-ই-ফেইলি বলে।

মহানবী (সাঃ) তাঁর সাহাবী কিরাম (রাঃ) ও তাবেঈগণের মৌনসম্মতিকে হাদীস-ই-তাকরিরি বলে।

বিশুদ্ধতার বিচারে হাদীস ৩ প্রকার। এগুলো হলো –

  • সহীহ হাদীস
  • হাসান হাদীস
  • যঈফ হাদীস
  • সহীহ হাদীসঃ যে হাদীসের বর্ণনাকারীদের বর্ণনার ধারাবাহিকতা রয়েছে এবং সনদের প্রতিটি স্তরে বর্ণনাকারীর নাম, বর্ণানাকারীর বিশ্বস্ততা, আস্তাভাজন, স্বরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর এবং কোনস্তরে তাদের সংখ্যা একজন হয়নি তাকে সহীহ হাদীস বলে।
  • হাসান হাদীসঃ যে হাদীসে সহীহ হাদীসের সব গুনই রয়েছে, তবে তাদের স্বরণ শক্তির যদি কিছুটা দুর্বলতা প্রমাণিত হয়েছে, তাকে হাসান হাদীস বলে।
  • যঈফ হাদীসঃ হাসান, সহীহ হাদীসের গুন সমুহ যে হাদীসে পাওয়া না যায় তাকে যঈফ হাদীস বলে।

সনদের ভিত্তিতে হাদীস আবার ৪ প্রকার। যথাঃ

  • হাদীস-ই-মুত্তাসিল
  • হাদীস-ই-মুনকাতেঈ
  • হাদীস-ই- মাউযু
  • হাদীস-ই-মাতবুক

এছাড়াও আরও অনেক প্রকার হাদীস রয়েছে।


-------------------------------------------------


প্রাককথন:
হাদীসের উপরে বিস্তারিত আলোচনার জন্য বৃহত আকারের পুস্তকের প্রয়োজন। আর একথা জ্ঞানী ব্যক্তি মাত্রেরই জানা রয়েছে যে, শুধুমাত্র হাদীস এবং উসূলে হাদীস বিষয়ের উপরে অসংখ্য বহু মূল্যবান কিতাব বিগত প্রায় দেড় হাজার বছরে পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন ভাষায় রচিত, পঠিত এবং সমাদৃত হয়ে আসছে। আলহামদুলিল্লাহ, কলেবর বৃদ্ধি না হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে অত্র নিবন্ধে শুধু হাদীস বিষয়ক মৌলিক ধারণা তুলে ধরারই চেষ্টা করা হবে ইনশাআল্লাহু তাআ'লা। প্রথমেই হাদীসের প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করার প্রয়াস পাব। বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে হাদীসের প্রকার-প্রকরণ বিবেচনা করেছেন মুহাদ্দিসীনে কিরাম।

হাদীসের সংজ্ঞা:
হাদীস (ﺣَﺪِﻳْﺚ ) এর শাব্দিক অর্থ- নতুন; প্রাচীন ও পুরাতন এর বিপরীত বিষয়। এ অর্থে যে সব কথা, কাজ ও বস্তু পূর্বে ছিল না, এখন অস্তিত্ব লাভ করেছে তাই হাদীস। এর আরেক অর্থ হলো: কথা। ফক্বীহগণের পরিভাষায় নাবী কারীম (ﷺ ) আল্লাহর রাসূল হিসেবে যা কিছু বলেছেন, যা কিছু করেছেন এবং যা কিছু বলার বা করার অনুমতি দিয়েছেন অথবা সমর্থন জানিয়েছেন তাকে হাদীস বলা হয়। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ এর সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (ﷺ ) সম্পর্কিত বর্ণনা ও তার গুণাবলী সম্পর্কিত বিবরণকেও হাদীসের অন্তর্ভুক্ত করেন।

হাদীসের সংজ্ঞায় কেউ কেউ বলেন- হাদিস (আরবিতে الحديث) হলো মূলত: ইসলাম ধর্মের সর্বশেষ ঐশীবাণীবাহক হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী ও জীবনাচরণ। হাদিসের উপদেশ মুসলমানদের জীবনাচরণ ও ব্যবহারবিধির অন্যতম পথনির্দেশ। আল কুরআন ইসলামের মৌলিক গ্রন্থ এবং অসংখ্য হাদিস সম্ভারকে তার ব্যাখ্যা হিসেবেও অভিহিত করা যায়।

আল্লামা হাফেজ সাখাবী (রহ) বলেন-
والحديث لغة ضد القد يم واصطلا حامااضيف الى النبى ﷺ قولا له اوفعلا له اوتقرير اوصفة حتى الحركات والسكنات فى اليقظة والمنام -
অর্থ : আভিধানিক অর্থে হাদীস শব্দটি কাদীম তথা অবিনশ্বরের বিপরীত আর পরিভাষায় বলা হয় রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে সম্বন্ধযুক্ত। চাই তার বক্তব্য হোক বা কর্ম বা অনুমোদন অথবা গুণ এমন কি ঘুমন্ত অবস্থায় বা জাগ্রত অবস্থায় তাঁর গতি ও স্থির সবই হাদীস।

বুখারী শরীফের বিশিষ্ট ব্যাখ্যাগ্রন্থ عمدة القارى এর মধ্যে হাদীস সম্বন্ধে রয়েছে:
علم الحديث هو علم يعرف به اقوال النبى ﷺ وافعاله واخواله –
অর্থ : ইলমে হাদীস এমন বিশেষ জ্ঞান যার সাহায্যে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা, কাজ ও অবস্থা জানতে পারা যায়।

আর ফিক্হবিদদের নিকট হাদীস হল:
اقوال رسول الله ﷺ وافعاله –
অর্থ : হাদীস হলো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা ও কাজসমূহ।

বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক হেড মাওলানা মুফতী সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান বারকাতী (রহ.) এর মতে, 'হাদীস (حديث) এমন একটি বিষয় যা রাসূলুাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী, কর্ম ও নীরবতা এবং সাহাবায়ে কেরাম, তাবিঈনদের কথা, কর্ম ও মৌন সম্মতিকে বুঝায়।'

হাদীসের সংজ্ঞায় এককথায় বলা যায়, প্রিয়তম রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুয়াতী জীবনের সকল কথা, কাজ এবং অনুমোদনই হচ্ছে হাদীস।

হাদীসের প্রকারভেদ:
হাদীসের মূল বক্তব্য হিসেবে হাদীস তিন প্রকার। যথা:
১। ক্বওলী হাদীস: কোন বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (ﷺ ) যা বলেছেন, অর্থাৎ যে হাদীসে তাঁর কোন কথা বিবৃত হয়েছে তাকে ক্বওলী (বাণী সম্পর্কিত) হাদীস বলা হয়।

২। ফে’লী হাদীস: মহানাবী (ﷺ )-এর কাজকর্ম, চরিত্র ও আচার-আচরণের ভেতর দিয়েই ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান ও রীতিনীতি পরিস্ফুট হয়েছে। অতএব যে হাদীসে তাঁর কোন কাজের বিবরণ উল্লেখিত হয়েছে তাকে ফে’লী (কর্ম সম্পর্কিত) হাদীস বলা হয়।

৩। তাকরীরী হাদীস: সাহাবীগণের যে সব কথা বা কাজ নাবী কারীম (ﷺ )-এর অনুমোদন ও সমর্থন প্রাপ্ত হয়েছে, সে ধরনের কোন কথা বা কাজের বিবরণ হতেও শরীয়াতের দৃষ্টিভঙ্গি জানা যায়। অতএব যে হাদীসে এ ধরনের কোন ঘটনার বা কাজের উল্লেখ পাওয়া যায় তাকে তাকরীরী (সমর্থন মূলক) হাদীস বলে।

রাবীদের সংখ্যা হিসেবে হাদীস তিন প্রকারঃ
১। খবরে মুতাওয়াতির: যে হাদীস এত অধিক সংখ্যক রাবী বর্ণনা করেছেন যাদেও মিথ্যার উপর একমত হওয়া অসম্ভব।
২। খবরে মাশহুর: প্রত্যেক যুগে অন্তত: তিনজন রাবী রেওয়ায়েত করেছেন,তাকে খবরে মাশহুর বলে, তাকে মুস্তাফিজ ও বলে।
৩। খবরে ওয়াহেদ বা খবরে আহাদ: হাদীস গরীব আজিজ এবং খবরে মাশহুর এ তিন প্রকারের হাদীদকে একত্রে খবরে আহাদ বলে, প্রত্যেকটিকে পৃথক পৃথকভাবে খবরে ওয়াহিদ বলে।

#আযীয হাদীসঃ যে হাদীস প্রত্যেক যুগে অন্তত: দুজন রাবী রেওয়ায়েত করেছেন, তাকে আযীয হাদীস বলে।

#গরীব হাদীসঃ যে হাদীস কোন যুগে মাত্র একজন রাবী বর্ণনা করেছেন। তাকে গরীব হাদীস বলে।

রাবীদের সিলসিলা হিসেবে হাদীস তিন প্রকারঃ
১। মারফু হাদীসঃ যে হাদীসের সনদ রাসুল(সঃ) পর্যন্ত পৌছাইয়াছে তাকে মারফু হাদীস বলে।
২। মাওকুফ হাদীসঃ যে হাদীসের সনদ সাহাবী পর্যন্ত পৌছাইয়াছে তাকে মাওকুফ হাদীস বলে।
৩। মাকতু হাদীসঃ যে হাদীসের সনদ তাবেয়ী পর্যন্ত পৌছাইয়াছে তাকে মাকতু হাদীস বলে।

রাবী বাদ পড়া হিসাবে হাদীস দুই প্রকার-
১। মুত্তাছিল হাদীসঃ যে হাদীসের সনদের ধারাবাহিকতা সর্বস্তরে ঠিক রয়েছে কোথা ও কোন রাবী বাদ পড়ে না তাকে মুক্তাছিল হাদীস বলে।
২। মুনকাতে হাদীসঃ যে হাদীসের সনদের মধ্যে কোন রাবীর নাম বাদ পড়েছে তাকে মুনকাতে হাদীস বলে।

মুনকাতে হাদীস তিন প্রকারঃ
১। মুরসাল হাদীস: যে হাদীসে রাবীর নাম বাদ পড়া শেষের দিকে অথাৎ সাহাবীর নামই বাদ পড়েছে তাকে মুরসাল হাদীস বলে।
২। মুয়াল্লাক হাদীস: যে হাদীসের সনদের প্রথম দিকে রাবীর নাম বাদ পড়েছে অথার্ৎ সাহাবীর পর তাবেয়ী তাবে তাবেয়ীর নাম বাদ পড়েছে তাকে মুয়াল্লাক হাদীস বলে।
৩। মুদাল হাদীস: যে হাদীসে দুই বা ততোধীক রাবী ক্রমান্বয়ে সনদ থেকে বিলুপ্ত হয় তাকে মুদাল হাদীস বলে।

বিশ্বস্ততা হিসেবে হাদীস তিন প্রকারঃ
১। সহীহ হাদীসঃ যে হাদীসের বর্ণনাকারীদের বর্ণনার ধারাবাহিকতা রয়েছে, সনদের প্রতিটি স্তরে বর্ণনাকারীর নাম, বর্ণানাকারীর বিশ্বস্ততা, আস্তাভাজন, স্বরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর কোনস্তরে তাদের সংখ্যা একজন হয়নি তাকে সহীহ হাদীস বলে।
২। হাসান হাদীসঃ সহীহ সবগুনই রয়েছে, তবে তাদের স্বরণ শক্তির যদি কিছুটা দুর্বলতা প্রমাণিত হয় তাকে হাসান হাদীস বলে।
৩। যায়ীফ হাদীসঃ হাসান, সহীহ হাদীসের গুন সমুহ যে হাদীসে পাওয়া না যায় তাকে যায়ীফ হাদীস বলে।

#হাদীসে কুদসীঃ "যে হাদীসের মুল বক্তব্য আল্লাহ সরাসরি রাসূল (সঃ) কে ইলহাম বা স্বপ্ন যোগে জানিয়ে দিয়েছেন, রাসূল (সঃ) নিজ ভাষায় তা বর্ণনা করেছেন তাকে হাদীসে কুদসী বলে।"



ইলমে হাদীসের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিভাষা:
সুন্নাহ (ﺍﻟﺴﻨﺔ): হাদীসের অপর নাম সুন্নাহ্ (ﺍﻟﺴﻨﺔ) সুন্নাত শব্দের অর্থ চলার পথ, কর্মের নীতি ও পদ্ধতি। যে পন্থা ও রীতি নাবী কারীম (ﷺ ) অবলম্বন করতেন তাকে সুন্নাত বলা হয়। অন্য কথায় রাসুলুল্লাহ (ﷺ ) প্রচারিত উচ্চতম আদর্শই সুন্নাত। কুরআন মাজিদে মহত্তম ও সুন্দরতম আদর্শ ( ﺃُﺳْﻮَﺓٌ ﺣَﺴَﻨَﺔٌ ) বলতে এই সুন্নাতকেই বুঝানো হয়েছে।
খবর (ﺧﺒﺮ): হাদীসকে আরবী ভাষায় খবরও (ﺧﺒﺮ ) বলা হয়। তবে খবর শব্দটি হাদীস ও ইতিহাস উভয়টিকেই বুঝায়।
আসার (ﺃﺛﺮ ): আসার শব্দটিও কখনও কখনও রাসুলুল্লাহ (ﷺ ) এর হাদীসকে নির্দেশ করে। কিন্তু অনেকেই হাদীস ও আসার এর মধ্যে কিছু পার্থক্য করে থাকেন। তাঁদের মতে- সাহাবীগণ থেকে শরীয়াত সম্পর্কে যা কিছু উদ্ধৃত হয়েছে তাকে আসার বলে।
সাহাবী (ﺻﺤﺎﺑﻰ): যিনি ঈমানের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ ( ﷺ) এর সাহচর্য লাভ করেছেন এবং ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁকে রাসুলুল্লাহ (ﷺ )-এর সাহাবী বলা হয়।
তাবেঈ (ﺗﺎﺑﻌﻰ) : যিনি রাসুলুল্লাহ (ﷺ )-এর কোন সাহাবীর নিকট হাদীস শিক্ষা করেছেন অথবা অন্ততপক্ষে তাঁকে দেখেছেন এবং মুসলমান হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁকে তাবেঈ বলা হয়।
তাবে-তাবেঈ ( ﺗﺎﺑﻌﻰ ﺗﺎﺑﻊ ) : যিনি কোন তাবেঈ এর নিকট হাদীস শিক্ষা করেছেন অথবা অন্ততপক্ষে তাঁকে দেখেছেন এবং মুসলমান হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁকে তাবে-তাবেঈ বলা হয়।
মুহাদ্দিস (ﻣﺤﺪﺙ) : যিনি হাদীস চর্চা করেন এবং বহু সংখ্যক হাদীসের সনদ ও মতন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান রাখেন তাঁকে মুহাদ্দিস বলা হয়।
শাইখ (ﺷﻴﺦ) : হাদীসের শিক্ষাদাতা রাবীকে শায়খ বলা হয়।
শাইখান (ﺷﻴﺨﺎﻥ ) : সাহাবীগনের মধ্যে আবূ বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ)- কে একত্রে শাইখান বলা হয়। কিন্তু হাদীস শাস্ত্রে ইমাম বুখারী (রাহি.) ও ইমাম মুসলিম (রাহি.)-কে এবং ফিক্বহ-এর পরিভাষায় ইমাম আবূ হানীফা (রাহি.) ও আবূ ইউসুফ (রাহি.)-কে একত্রে শাইখান বলা হয়।
হাফিয (ﺣﺎﻓﻆ ) : যিনি সনদ ও মতনের বৃত্তান্ত সহ এক লাখ হাদীস আয়ত্ত করেছেন তাঁকে হাফিয বলা হয়।
হুজ্জাত (ﺣﺠﺔ ) : অনুরূপভাবে যিনি তিন লক্ষ হাদীস আয়ত্ত করেছেন তাঁকে হুজ্জাত বলা হয়।
হাকিম ( ﺣﺎﻛﻢ ) : যিনি সব হাদীস আয়ত্ত করেছেন তাকে হাকিম বলা হয়।
রিজাল (ﺭﺟﺎﻝ) : হাদীসের রাবী সমষ্টিকে রিজাল বলে। যে শাস্ত্রে রাবীগণের জীবনী বর্ণনা করা হয়েছে তাকে আসমাউর-রিজাল বলা হয়।
রিওয়ায়াত (ﺭﻭﺍﻳﺔ ): হাদীস বর্ণনা করাকে রিওয়ায়াত বলে। কখনও কখনও মূল হাদীসকেও রিওয়ায়াত বলা হয়। যেমন- এই কথার সমর্থনে একটি রিওয়ায়াত (হাদীস) আছে।
সনদ (ﺳﻨﺪ ): হাদীসের মূল কথাটুকু যে সূত্র পরম্পরায় গ্রন্থ সংকলনকারী পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে সনদ বলা হয়। এতে হাদীস বর্ণনাকারীদের নাম একের পর এক সজ্জিত থাকে।
মতন (ﻣﺘﻦ ): হাদীসে মূল কথা ও তার শব্দ সমষ্টিকে মতন বলে।
মারফূ ( ﻣﺮﻓﻮﻉ): যে হাদীসের সনদ (বর্ণনা পরম্পরা) রাসুলুল্লাহ (ﷺ ) পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে মারফূ হাদীস বলে।
মাওকূফ (ﻣﻮﻗﻮﻑ ) : যে হাদীসের বর্ণনা- সূত্র ঊর্ধ্ব দিকে সাহাবী পর্যন্ত পৌঁছেছে , অর্থাৎ যে সনদ -সূত্রে কোন সাহাবীর কথা বা কাজ বা অনুমোদন বর্ণিত হয়েছে তাকে মাওকূফ হাদীস বলে। এর অপর নাম আসার।
মাকতূ (ﻣﻘﻄﻮﻉ): যে হাদীসের সনদ কোন তাবেঈ পর্যন্ত পৌঁছেছে, তাকে মাকতূ হাদীস বলা হয়।
তা’লীক ( ﺗﻌﻠﻴﻖ): কোন কোন গ্রন্থকার হাদীসের পূর্ণ সনদ বাদ দিয়ে কেবল মূল হাদীস বর্ণনা করেছেন। এরূপ করাকে তা’লীক বলা হয়।
মুদাল্লাস (ﻣﺪﻟﺲ ): যে হাদীসের রাবী নিজের প্রকৃত শাইখের (উস্তাদের) নাম উল্লেখ না করে তার উপরস্থ শাইখের নামে এভাবে হাদীস বর্ণনা করেছেন যাতে মনে হয় যে, তিনি নিজেই উপরস্থ শাইখের নিকট তা শুনেছেন অথচ তিনি তাঁর নিকট সেই হাদীস শুনেন নি- সে হাদীসকে মুদাল্লাস হাদীস এবং এইরূপ করাকে ‘তাদ্লীস’ আর যিনি এইরূপ করেন তাকে মুদালস্নীস বলা হয়।
মুযতারাব (ﻣﻀﻄﺮﺏ ): যে হাদীসের রাবী হাদীসের মতন ও সনদকে বিভিন্ন প্রকারে বর্ণনা করেছেন সে হাদীসকে হাদীসে মুযতারাব বলা হয়। যে পর্যন্ত না এর কোনরূপ সমন্বয় সাধন সম্ভবপর হয়, সে পর্যন্ত এই হাদীসের ব্যাপারে অপেক্ষা করতে হবে অর্থাৎ এই ধরনের রিওয়ায়াত প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
মুদ্রাজ (ﻣﺪﺭﺝ): যে হাদীসের মধ্যে রাবী নিজের অথবা অপরের উক্তিকে অনুপ্রবেশ করিয়েছেন, সে হাদীসকে মুদ্রাজ এবং এইরূপ করাকে ‘ইদরাজ’ বলা হয়।
মুত্তাসিল (ﻣﺘﺼﻞ ): যে হাদীসের সনদের ধারাবাহিকতা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পূর্ণরূপে রক্ষক্ষত আছে, কোন সত্মরেই কোন রাবীর নাম বাদ পড়ে নি তাকে মুত্তাসিল হাদীস বলে।
মুনকাতি (ﻣﻨﻘﻄﻊ ): যে হাদীসের সনদে ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয় নি, মাঝখানে কোন এক স্তরে কোন রাবীর নাম বাদ পড়েছে, তাকে মুনকাতি হাদীস, আর এই বাদ পড়াকে ইনকিতা বলা হয়।
মুরসাল (ﻣﺮﺳﻞ): যে হাদীসের সনদে ইনকিতা শেষের দিকে হয়েছে, অর্থাৎ সাহাবীর নাম বাদ পড়েছে এবং তাবেঈ সরাসরি রাসুলুল্লাহ (ﷺ ) এর উল্লেখ করে হাদীস বর্ণনা করেছেন তাকে মুরসাল হাদীস বলা হয়।
মু’আল্লাক ( ﻣﻌﻠﻖ ) : সনদের ইনকিতা প্রথম দিকে হলে, অর্থাৎ সাহাবীর পর এক বা একাধিক রাবীর নাম বাদ পড়লে তাকে মু’আল্লাক হাদীস বলা হয়।
মু‘দাল (ﻣﻌﻀﻞ ): যে হাদীসে দুই বা ততোধিক রাবী ক্রমান্বয়ে সনদ থেকে বাদ পড়েছে তাকে মু‘দাল হাদীস বলে।
মুতাবি ও শাহিদ ( ﻣﺘﺎﺑﻊ ﻭ ﺷﺎﻫﺪ ): এক রাবীর হাদীসের অনুরূপ যদি অপর রাবীর কোন হাদীস পাওয়া যায় তবে দ্বিতীয় রাবীর হাদীসকে প্রথম রাবীর হাদীসের মুতাবি বলা হয়। যদি উভয় হাদীসের মূল রাবী অর্থাৎ সাহাবী একই ব্যক্তি না হয় তবে দ্বিতীয় ব্যক্তির হাদীসকে শাহিদ বলে। আর এইরূপ হওয়াকে শাহাদাত বলে। মুতাবা’আত ও শাহাদাত দ্বারা প্রথম হাদীসটির শক্তি বৃদ্ধি পায়।
মা‘রূফ ও মুনকার ( ﻣﻌﺮﻭﻑ ﻭ ﻣﻨﻜﺮ ): কোন দুর্বল রাবীর বর্ণিত হাদীস অপর কোন মাকবূল (গ্রহণযোগ্য) রাবীর বর্ণিত হাদীসের বিরোধী হলে তাকে মুনকার বলা হয় এবং মাকবূল রাবীর হাদীসকে মা‘রূফ বলা হয়।
সহীহ (ﺻﺤﻴﺢ ) : যে মুত্তাসিল হাদীসের সনদে উল্লেখিত প্রত্যেক রাবীই পূর্ণ আদালত ও যাবত (ধারণ ক্ষমতা) গুণ সম্পন্ন এবং হাদীসটি যাবতীয় দোষত্রুটি ও শায মুক্ত তাকে সহীহ হাদীস বলে।
হাসান (ﺣﺴﻦ ) : যে হাদীসের মধ্যে রাবীর যাবত (ধারণ ক্ষমতা) এর গুণ ব্যতীত সহীহ হাদীসের সমস্ত শর্তই পরিপূর্ণ রয়েছে তাকে হাসান হাদীস বলা হয়। ফক্বীহগণ সাধারণত সহীহ ও হাসান হাদীসের ভিত্তিতে শরীয়াতের বিধান নির্ধারণ করেন।
যঈফ (ﺿﻌﻴﻒ ) : যে হাদীসের রাবী কোন হাসান হাদীসের রাবীর গুণসম্পন্ন নন তাকে যঈফ হাদীস বলে।
মাওযূ‘ ( ﻣﻮﺿﻮﻉ ) : যে হাদীসের রাবী জীবনে কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে রাসুলুল্লাহ (ﷺ )-এর নামে মিথ্যা কথা রটনা করেছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে, তার বর্ণিত হাদীসকে মাওযূ‘ হাদীস বলে।
শায (ﺷﺎﺫ): একাধিক নির্ভরযোগ্য রাবীর বিপরীত একজন নির্ভরযোগ্য রাবীর বর্ণনাকে শায হাদীস বলে।
কিয়াস (ﻗﻴﺎﺱ ): অর্থ অনুমান, পরিমাপ, তুলনা ইত্যাদি। পরিভাষায়: শাখাকে মূলের সঙ্গে তুলনা করা, যার ফলে শাখা ও মূল একই হুকুমের অমত্মর্ভুক্ত হয়ে যায়।
তাক্বলীদ ( ﺗﻘﻠﻴﺪ): দলীল উল্লেখ ছাড়াই কোন ব্যক্তির মতামতকে গ্রহণ করা।
ইজতিহাদ (ﺍﺟﺘﻬﺎﺩ ): উদ্দিষ্ট জ্ঞান অর্জনের প্রচেষ্টা চালানোকে ইজতিহাদ বলে।
শরীয়াত ( ﺷﺮﻳﻌﺔ) অর্থ: আইন, বিধান, পথ, পন্থা ইত্যাদি। পরিভাষায়: মহান আল্লাহ্ স্বীয় দীন হতে বান্দার জন্য যা বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন তাকে শরীয়াত বলে।
মাযহাব (ﻣﺬﻫﺐ ): অর্থ- মত, পথ, মতবাদ ইত্যাদি। ফিক্বহী পরিভাষায়: ইবাদাত ও মু‘আমালাতের ক্ষেত্রে শারঈ হুকুম পালনের জন্য বান্দা যে পথ অনুসরণ করে এবং প্রত্যেক দলের জন্য একজন ইমামের উপর অথবা ইমামের ওসীয়ত কিংবা ইমামের প্রতিনিধির উপর নির্ভর করে তাকে মাযহাব বলে।
নাযর (ﻧﺬﺭ ): কোন বিষয়ে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য চিন্তা-ভাবনা করাকে নাযর বলে।
আম (ﻋﺎﻡ ): সীমাবদ্ধ করা ছাড়াই যা দুই বা ততোধিক বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে তাকে আম বলে।
খাস (ﺧﺎﺹ ): আম এর বিপরীত, যা নির্দিষ্ট বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে।
ইজমা (ﺍﺟﻤﺎﻉ ): কোন এক যুগে আলিমদের কোন শারঈ বিষয়ের উপর এক মত পোষণ করাকে ইজমা বলে।
মুসনাদ (ﻣﺴﻨﺪ ): যার সনদগুলো পরস্পর এমনভাবে মিলিত যে, প্রত্যেকের বর্ণনা সুস্পষ্ট।
ফিক্বহ (ﻓﻘﻪ ): ইজতিহাদ বা গবেষণার পদ্ধতিতে শারঈ হুকুম সম্পর্কে জানার বিধানকে ফিক্বহ বলে।
আসল বা মূল (ﺍﺻﻞ ): এমন প্রথম বিষয়, যার উপর ভিত্তি করে কোন কিছু গড়ে উঠে। যেমন- দেয়ালের ভিত্তি।
ফারা বা শাখা (ﻓﺮﻉ ): আসলের বিপরীত যা কোন ভিত্তির উপর গড়ে উঠে।
ওয়াজিব (ﻭﺍﺟﺐ ): যা আমল করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে আর পরিত্যাগ করলে শাস্তি পাওয়া যাবে।
মানদূব (ﻣﻨﺪﻭﺏ ): যা আমল করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে আর পরিত্যাগ করলে শাস্তি হবে না।
মাহযূর (ﻣﺤﻈﻮﺭ ): যা পরিত্যাগ করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে আর আমল করলে শাস্তি পাওয়া যাবে।
মাকরূহ (ﻣﻜﺮﻭﻩ ): যা পরিত্যাগ করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে আর আমল করলে শাস্তি হবে না।
ফাৎওয়া (ﻓﺘﻮﻯ ): জিজ্ঞাসিত ব্যক্তির নিকট থেকে দলীল ভিত্তিক শারঈ হুকুম সুস্পষ্ট বর্ণনা করে নেয়াকে ফাৎওয়া বলে।
নাসিখ ( ﻧﺎﺳﺦ): পরিবর্তিত শারঈ দলীল যা পূববর্তী শারঈ হুকুমকে রহিত করে দেয় তাকে নাসিখ বলে।
মানসূখ (ﻣﻨﺴﻮﺥ): আর যে হুকুমটি রহিত হয়ে যায় সেটাই মানসূখ।
মুতলাক্ব (ﻣﻄﻠﻖ ): যা প্রকৃতিগত দিক থেকে জাতির সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে কিন্তু অনির্দিষ্টভাবে একটি অর্থকে বুঝায়।
মুকাইয়্যাদ (ﻣﻘﻴﺪ): যা মুতলাক্বের বিপরীত অর্থাৎ জাতির সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে না। বরং নির্দিষ্ট একটি অর্থকে বুঝায়।
হাক্বীকাত (ﺣﻘﻴﻘﺔ ): শব্দকে আসল অর্থে ব্যবহার করাকে হাক্বীকত বলে। যেমন- সিংহ শব্দটি এক প্রজাতির হিংস্র প্রাণীকে বুঝায়।
মাজায (ﻣﺠﺎﺯ): শব্দ যখন আসল অর্থকে অতিক্রম করে তার সাথে সাদৃশ্য রাখে এমন অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে মাজায বলে। যেমন- সাহসী লোককে সিংহের সাথে তুলনা করা।

------------------------------------------
========================
------------------------------------------

প্রশ্নঃ সহীহ হাদীছ কাকে বলে?
উত্তরঃ মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায় যে হাদীসের মধ্যে ৫টি শর্ত পূরণ হয়েছে তাকে সহীহ হাদীস বলা হয় -
১) আদালত : হাদীসের সকল রাবী পরিপূর্ণ সত ও বিশ্বস্ত বলে প্রমাণিত ।
২)যাবত : সকল রাবীর “নির্ভুল বর্ণনার ক্ষমতা’ পূর্ণরুপে বিদ্যমান বলে প্রমাণিত
৩)ইত্তিসাল : সনদের প্রত্যেক রাবী তাঁর উর্দ্ধতন রাবী থেকে স্বকর্ণে শুনেছেন বলে প্রমাণিত ।
৪)শুযুয মুক্তি বা শায না হওয়া : হাদীসটি অন্যান্য প্রামাণ্য বর্ণনার বিপরীত নয় বলে প্রমাণিত ।
৫)ইল্লাত মুক্তি : হাদীসটির মধ্যে সূক্ষ্ণ কোন সনদগত বা অর্থগত ত্রুটি নেই বলে প্রমাণিত।

--------------------------------------------
=========================
--------------------------------------------

প্রশ্নোত্তরে হাদীস বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু টার্মস:
প্রশ্নঃ হাদীছ কাকে বলে?
উত্তরঃ নবী (সাঃ)এর কথা, কাজ ও সমর্থনকে হাদীছ বলে।
প্রশ্নঃ হাদীছ কত প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ হাদীছ দুপ্রকারঃ মাকবূল (গ্রহণযোগ্য) হাদীছ ও (মারদূদ) অগ্রহণযোগ্য হাদীছ।
প্রশ্নঃ মাকবূল হাদীছ কত প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ মাকবূল হাদীছ দুপ্রকারঃ ছহীহ ও হাসান।
প্রশ্নঃ মারদূদ বা অগ্রহণযোগ্য হাদীছ কত প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ দুপ্রকারঃ যঈফ (দুর্বল) ও জাল (বানোয়াট)।
প্রশ্নঃ সহীহ হাদীছ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে হাদীছটি নির্ভরযোগ্য ও পূর্ণ স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন, উহার সনদ পরস্পর সম্পৃক্ত, তার মধ্যে গোপন কোন ত্রুটি নেই এবং উহা শাযও (তথা অন্য কোন অধিকতর নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর বর্ণনার বিরোধী) নয় তাকে সহীহ হাদীছ বলে।
প্রশ্নঃ প্রসিদ্ধ হাদীছ গ্রন্থ কয়টি ও কি কি?
উত্তরঃ ৬টি। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানে তিরমিযী, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ।
প্রশ্নঃ সিহাহ সিত্তা বলতে কি বুঝায়?
উত্তরঃ হাদীছের ছয়টি গ্রন্থকে বুঝানো হয়। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানে তিরমিযী, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ। (বুখারী ও মুসলিমের সবগুলো এবং অন্য কিতাবগুলোর অধিকাংশ হাদীছ বিশুদ্ধ, তাই এগুলোকে একসাথে সিহাহ সিত্তা বা ছয়টি বিশুদ্ধ হাদীছ গ্রন্থ বলা হয়)
প্রশ্নঃ হাদীছ গ্রন্থগুলোর মধ্যে কোন কিতাবে সবচেয়ে বেশী হাদীছ সংকলিত হয়েছে?
উত্তরঃ মুসনাদে আহমাদে (হাদিস সংখ্যা ২৭৭৪৬টি)।
প্রশ্নঃ ছয়টি প্রসিদ্ধ হাদীছ গ্রন্থ ছাড়া আরো ৫টি হাদীছ গ্রন্থের নাম উল্লেখ কর?
উত্তরঃ মুসনাদে আহমাদ, মুআত্ত্বা মালেক, দারাকুত্বনী, সুনানে দারেমী, সুনানে বায়হাক্বী।
প্রশ্নঃ রিয়াযুস্ সালেহীন কিতাবটির লিখক কে?
উত্তরঃ ইমাম নববী।
প্রশ্নঃ জাল হাদীছ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে কথাটি মানুষে তৈরী করেছে, অতঃপর তা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে, তাকে জাল হাদীছ বলে।
প্রশ্নঃ আল্লাহর কুরআনের পর সর্বাধিক বিশুদ্ধতম গ্রন্থ কোনটি?
উত্তরঃ সহীহ বুখারী (বুখারির হাদিস সংখ্যা ৭০০৮টি। মতান্তরেঃ ৭৫৬৩টি)।
প্রশ্নঃ সহীহ বুখারীর একটি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ভাষ্য (ব্যাখ্যা) গ্রন্থের নাম কি?
উত্তরঃ হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) প্রণীত ফাতহুল বারী।
প্রশ্নঃ কোন দুটি হাদীছ গ্রন্থকে সহীহায়ন বলা হয়?
উত্তরঃ সহীহ বুখারী (হাদিস সংখ্যা ৭০০৮টি। মতান্তরেঃ ৭৫৬৩টি) ও সহীহ মুসলিম (হাদিস সংখ্যা ৩০৩৩টি)
প্রশ্নঃ মুত্তাফাকুন আলাইহে বলতে কি বুঝানো হয়?
উত্তরঃ যে হাদীছটি ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম নিজ নিজ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, সে হাদীছ সম্পর্কে বলা হয় মুত্তাফাকুন আলাইহে।

--------------------------------------------
=========================
--------------------------------------------

বেশী সংখ্যক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীগনের কয়েকজন:
১। হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু, বর্ণিত হাদীস সংখ্যা: ৫৩৭৪ টি, ইনতিকাল: ৫৭ হিজরী, বয়স: ৭৮ বছর।
২। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহা, বর্ণিত হাদীস সংখ্যা: ২২১০ টি, ইনতিকাল: ৫৮ হিজরী, বয়স: ৬৭ বছর।
৩। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু, বর্ণিত হাদীস সংখ্যা: ১৬৬০ টি, ইনতিকাল: ৫৮ হিজরী, বয়স: ৭১ বছর।
৪। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু, বর্ণিত হাদীস সংখ্যা: ১৬৩০ টি, ইনতিকাল: ৭০ হিজরী, বয়স: ৮৪ বছর।
৫। হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু, বর্ণিত হাদীস সংখ্যা: ১৫৪০ টি, ইনতিকাল: ৭৪ হিজরী, বয়স: ৯৪ বছর।
৬। হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু, বর্ণিত হাদীস সংখ্যা: ১২৮৬ টি, ইনতিকাল: ৯৩ হিজরী, বয়স: ১০৩ বছর।
৭। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু, বর্ণিত হাদীস সংখ্যা: ১১৭০ টি, ইনতিকাল: ৪৬ হিজরী, বয়স: ৮৪ বছর।
৮। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু, বর্ণিত হাদীস সংখ্যা: ৮৪৮ টি, ইনতিকাল: ৩২ হিজরী।
৯। হযরত আমর ইবনুল আস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু, বর্ণিত হাদীস সংখ্যা: ৭০০ টি, ইনতিকাল: ৬৩ হিজরী।

--------------------------------------------
=========================
--------------------------------------------

সিহাহ্ সিত্তা হাদীস গ্রন্থগুলো এবং সংকলকদের নামঃ
১। সহীহ বুখারী- ইমাম বুখারী (রহঃ)- হাদীস সংখ্যা ৭৩৯৭
২। সহীহ মুসলিম - ইমাম মুসলিম (রহঃ) হাদীস সংখ্যা- ৪০০০
৩। জামি তিরমিযী- ইমাম তিরমিযী (রহঃ) হাদীস সংখ্যা ৩৮১২
৪। সুনানে আবুদাউদ (রহঃ) ইমাম আবুদাউদ (রহঃ) হাদীস সংখ্যা ৪৮০০
৫। সুনানে নাসায়ী – ইমাম নাসাই (রহঃ) হাদীস সংখ্যা ৪৪৮২
৬। সুনানে ইবনে মাজাহ ইমাম ইবনে মাজাহ (রহঃ) হাদীস- ৪৩৩৮




Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...