প্রশ্ন: ৪৬২ : মুসলিম মীরাস / ফারায়েয ।

 

মিরাস সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি মাসআলা এবং বন্টনের মূলনীতি প্রসঙ্গে

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, শ্রদ্ধেয় মুফতি সাহেব, দয়া করে নীচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দানে বাধিত করবেন। প্রশ্ন: ১. জীবিত অবস্থায় যদি কেউ তার সম্পদ ওয়ারিসদের মধ্যে শরীয়তের বিধান ব্যতিরেকে তার ইচ্ছানুযায়ী কম-বেশী বন্টন করে তবে কি সেটা শরীয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হবে? যেমন কারো কয়েকজন ছেলে-মেয়ের মধ্যে সে কাউকে হয়তো একটু বেশী পছন্দ করে বা তার বাধ্যগত তাই তাকে সম্পদের অংশ কিছুটা বেশী দিল। ২. এক ব্যক্তির স্ত্রী, মা-বাবা, ১ ভাই, ২ বোন, ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে আছে। এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে? অথবা স্ত্রী, মা-বাবা, ২ ভাই, ১ বোন ও ৩ মেয়ে আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে?? অথবা স্ত্রী, মা-বাবা, ২ ভাই, ৩ বোন আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে?? অথবা স্ত্রী, মা-বাবা ও ২ ছেলে-মেয়ে আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে?? অথবা স্ত্রী ও মা-বাবা আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে?? অথবা শুধু মা-বাবা, ২ ভাই-বোন ও ১ মেয়ে আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে?? ৩. মিরাস বন্টনের সময় কি কোন ধারাবাহিকতা অবলম্বন করতে হবে? যেমন, প্রথমে মা-বাবাকে দিতে হবে তারপর যা বাকী থাকে তা থেকে স্ত্রীকে দিতে হবে তারপর বাকী অংশ থেকে ছেলেকে বা মেয়েকে ইত্যাদি-ইত্যাদি নাকি যাকে খুশী আগে পরে দিতে পারবে? আসলে মিরাস বন্টনের মূলনীতিটা জানালে উপকৃত হতাম। সাধারণত দেখা যায় এক-এক অবস্থায় বন্টনের নীতি এক এক রকম হয়ে থাক। তাই সহজে বুঝে আসে না। উত্তর وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته بسم الله الرحمن الرحيم প্রশ্ন করার আগে যদি কষ্ট করে আমাদের ওয়েব সাইটের মিরাস সংক্রান্ত অন্যান্য প্রশ্নোত্তরগুলো পড়ে নিতেন, তাহলে এ প্রশ্নের অনেকগুলো প্রশ্ন করার আপনার প্রয়োজন হতো না। তাই অনুরোধ থাকবে পরবর্তীতে যেকোন বিষয়ের প্রশ্ন করার আগে উক্ত বিষয়ে কোন সমাধান দেয়া আছে কি না? তা আগে দেখে নিন। তারপর যদি দেখেন সমাধান নেই, তাহলেই কেবল প্রশ্ন করুন। একই বিষয়ের একাধিক প্রশ্নের মেইল দেখা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। দুঃখিত কষ্ট নিবেন না। ১ নং প্রশ্নের জবাব ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার আগে সুস্থ্য থাকা অবস্থায় যদি আত্মীয়দের মাঝে সম্পদ বন্টন করে যায় শরীয়তের মিরাসী পদ্ধতি অনুসরণ না করে, আর তাতে তিনি কাউকে ঠকানো বা কারো ক্ষতি সাধন ইচ্ছে না করেন, তাহলে কমবেশি করে বন্টন করলেও তা কার্যকরও হবে। সেই সাথে জায়েজও হবে। যেমন দুই ছেলের মাঝে এক ছেলে বিত্তশালী। আরেকজন গরীব। তাই লোকটি গরীব ছেলেকে বেশি সম্পদ দিল আর ধনীকে কম দিল। তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই। এটি জায়েজ আছে। وفى الهندية- لا بأس به اذا لم يقصد به الاضرار وان قصد به الاضرار سوىبينهم وهو المختار- (الفتاوى الهندية ٤/٣۹۱  وفى الردالمحتار- لو وهب رجل شيأ لأولاده فى الصحة واراد بفضيل البعض على البعضز………….عن ابى حنيفة لابأس به اذا كان التفضيل لزيادة فضل له فى الدين وان كان سواء يكره(ردالمحتار )١٢/٦٠٨ তথ্যসূত্র ১-ফাতওয়া আলমগীরী-৪/৩৯১ ২-ফাতওয়া শামী-১২/৬০৮ ৩-ফাতহুল বারী-৫২১৪ ৪-ফাইজুল বারী-৩/৩৬৮ ৫-আহসানুল ফাতওয়া ৭/২৫৬ ৬-ফাতওয়া রহিমীয়া ৯/৩১৪ ৭-ফাতওয়া মুফতী মাহমুদ ৯/২৪৮ ৮-ইমদাদুল ফাতওয়া ৩/৪৭০ ৯-কেফায়াতুল মুফতী ৭/১৮০ ১০-ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া ১৬/৪৯৬ ২ নং প্রশ্নের জবাব এ প্রশ্নের জবাব জানার জন্য প্রথমে আপনি প্রশ্নে যেসব আত্মীয়ের কথা উল্লেখ করেছেন, তারা মৃত থেকে কতটুকু পান? কখন পান? কখন বঞ্চিত হন? এ তিনটি অবস্থা সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকতে হবে। তাহলে আপনি নিজেই কে কতটুকু পাবে তা বের করে নিতে পারবেন। নিচে কে কতটুকু কখন পায় তা উদ্ধৃত করা হল। আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত আত্মীয় স্বজনগণ হলেন, ১-  স্ত্রী। ২-  মা। ৩- বাবা ৪-  আপন ভাই ৫-  আপন বোন। ৬- আপন ছেলে। ৭-  আপন মেয়ে। এবার শরীয়ত নির্ধারিত তাদের অবস্থা খেয়াল করুন স্ত্রীর অবস্থা দুটি ১-মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকলে স্ত্রী পাবে পূর্ণ সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ। আর সন্তান থাকলে পাবে আট ভাগের এক ভাগ। وَلَهُنَّ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْتُمْ إِن لَّمْ يَكُن لَّكُمْ وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَ لَكُمْ وَلَدٌ فَلَهُنَّ الثُّمُنُ مِمَّا تَرَكْتُم ۚ مِّن بَعْدِ وَصِيَّةٍ تُوصُونَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۗ [٤:١٢ স্ত্রীদের জন্যে এক-চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর।  {সূরা নিসা-১২} মিরাসের হকদার হওয়ার ক্ষেত্রে মায়ের অবস্থা ৩টি ১-সম্পত্তির এক ছষ্ঠমাংশ বা ছয় ভাগের এক ভাগ পাবেন যদি মৃত ব্যক্তির এক বা একাধিক সন্তান বা সন্তানের সন্তান থাকে, বা মৃতের দুই বা ততোধিক ভাই/বোন থাকে। ২- আর যদি উপরোক্ত ব্যক্তিগণের কেউ না থাকে, তাহলে মা পাবেন পূর্ণ সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ তথা এক তৃতীয়াংশ। ৩-আর যদি মায়ের সাথে বাবাও থাকে, আর সেই সাথে স্বামী কিংবা স্ত্রী থাকে, তাহলে স্বামী বা স্ত্রীর অংশ দেয়ার পর বাকি সম্পত্তি থেকে তিন ভাগের এক ভাগ পাবেন মা। فى السراجى فى الميراث- واما للام فاحوال ثلث، السدس مع الولد وولد الإبن وان سفل، او مع الإثنين من الاخوة والأخوات فصاعدا من اى وجه كان، وثلث الكل عند عدم هولاء المذكورين، وثلث ما بقى بعد فرض احد الزوجين، وذلك فى مسئلتين زوج وابوين وزوجة وابوين، (السراجى فى الميراث-17-18 বাবার অবস্থা তিনটি ১-শুধু ছয় ভাগের এক ভাগ পাবেন। যদি মৃত ব্যক্তির এক বা ততোধিক ছেলে বা ছেলেদের ছেলে থাকে। ২- যদি মৃত ব্যক্তির মেয়ে বা ছেলের মেয়ে থাকে, তাহলে পিতা সম্পত্তির প্রথমে ছয় ভাগের এক ভাগ পাবেন, তারপর বাকিদের মাঝে সম্পত্তি বন্টনের পর যদি কোন সম্পত্তি বেচে যায়, তাহলে উক্ত অতিরিক্ত সম্পত্তি পুরোটাই পিতা পাবেন। ৩- আর যদি মৃতের ছেলে বা মেয়ে কোন সন্তানই না থাকে, তাহলে পিতা শরীয়ত নির্ধারিত হকদারদের নির্ধারিত অংশ দেবার পর যত সম্পত্তি থাকবে, সকল সম্পত্তির মালিক হবেন। اما الأب فله احوال ثلاث، الفرض المطلق، وهو السدس، وذلك مع الإبن وإبن الإبن وان سفل، والفرض والتعصيب معا، وذلك مع الإبنة او ابنة الإبن وان سفلت، والتعصيب المحض، وذلك عند عدم الولد وولد الإبن وان سفل، (السراجى فى الميراث-9-10 আপন ভাই-বোনদের অবস্থা ১-আপন বোন একজন হলে মৃতের সম্পত্তির অর্ধেক পাবে যদি মিরাসের অধিকারী আর কেউ না থাকে, সে যদি শুধু একা হকদার হয়ে থাকে। ২- আর যদি দুই বা ততোধিক বোন হয়, তাহলে পাবে তিন ভাগের দুই ভাগ। ৩-আর যদি ভাইয়ের সাথে বোনেরা আসে, তাহলে এক ভাই দুইবোনের সমান অংশ হিসেবে সম্পদ বন্টিত হবে। অর্থাৎ এক ভাই যা পাবে, দুই বোন তা পাবে। উদাহরণতঃ এক ভাই আর দুই বোন থাকলে, সম্পদ দুই ভাগে ভাগ করে, এক ভাগ পাবে, এক ভাই, আর বাকি এক ভাগ পাবে দুই বোন। ৪- আর যদি মৃতের শুধু মেয়ে থাকে, কোন ছেলে না থাকে, তাহলে মৃতের মেয়ে তার নির্ধারিত অংশ নেবার পর বাকি সম্পত্তি বোন পাবে। ভাই থাকলে ভাই পাবে। আর ভাই-বোন উভয়ে থাকলে এক ভাই দুই বোনের সমান হিসেবে সম্পদ বন্টন করে নিব। ৫- মৃতের ছেলে বা ছেলের ছেলে থাকলে কিংবা পিতা বা দাদা থাকলে আপন ভাই-বোন কিছুই পাবে না। يَسْتَفْتُونَكَ قُلِ اللَّهُ يُفْتِيكُمْ فِي الْكَلَالَةِ ۚ إِنِ امْرُؤٌ هَلَكَ لَيْسَ لَهُ وَلَدٌ وَلَهُ أُخْتٌ فَلَهَا نِصْفُ مَا تَرَكَ ۚ وَهُوَ يَرِثُهَا إِن لَّمْ يَكُن لَّهَا وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَتَا اثْنَتَيْنِ فَلَهُمَا الثُّلُثَانِ مِمَّا تَرَكَ ۚ وَإِن كَانُوا إِخْوَةً رِّجَالًا وَنِسَاءً فَلِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ ۗ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ أَن تَضِلُّوا ۗ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ [٤:١٧٦ মানুষ আপনার নিকট ফতোয়া জানতে চায় অতএব, আপনি বলে দিন, আল্লাহ তোমাদিগকে কালালাহ এর মীরাস সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নির্দেশ বাতলে দিচ্ছেন, যদি কোন পুরুষ মারা যায় এবং তার কোন সন্তানাদি না থাকে এবং এক বোন থাকে, তবে সে পাবে তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তির অর্ধেক অংশ এবং সে যদি নিঃসন্তান হয়, তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে। তা দুই বোন থাকলে তাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ। পক্ষান্তরে যদি ভাই ও বোন উভয়ই থাকে, তবে একজন পুরুষের অংশ দুজন নারীর সমান। তোমরা বিভ্রান্ত হবে আল্লাহ তোমাদিগকে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন। আর আল্লাহ হচ্ছেন সর্ব বিষয়ে পরিজ্ঞাত। {সূরা নিসা-১৭৬} واما للأخوات لاب وام، فاحوال خمس، النصف للواحدة، والثلثان للاثنتين فصاعدة، ومع الأخ لاب وام للذكر مثل حظ الأنثيين يصرن به عصبة لاستوائهم فى القرابة الى الميت، ولهن الباقى مع البنات او بنات الإبن لقوله عليه السلام- اجعلوا الأخوات مع البنات عصبة…….. وبنوا الأعيان والعلات كلهم يسقطون بالإبن وابن الإبن وان سفل (السرجى فى الميراث-15-17) ছেলে ও মেয়ের মাঝে সম্পদ বন্টনের পদ্ধতি মৃত ব্যক্তির যত ছেলে আর মেয়ে রেখে মারা যাক না কেন, তাদের মাঝে সম্পদ বন্টনের সর্ববস্থায় পদ্ধতি হল, এক ছেলে সমান সমান দুই মেয়ে। অর্থাৎ দুই মেয়ে যা পাবে, এক ছেলে তা পাবে। يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ ۖ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ ۚ [٤:١١ আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। {সূরা নিসা-১১} উপরোক্ত সূরত জানার সাথে সাথে আরেকটি মূলনীতি জানা থাকা জরুরী। সেটি হল- জরুরী মূলনীতি মিরাস বন্টনের ক্ষেত্রে দুটি পার্ট আছে। এক পার্টের মাঝে রয়েছে তিনটি সংখ্যা। আরেকটি পার্টে রয়েছে তিনটি সংখ্যা। প্রথম পার্ট ১-  নিসফ তথা অর্ধেক পাওয়ার দাবিদার থাকা। ২-  রুবু তথা চতুর্থাংশ পাওয়ার দাবিদার থাকা। ৩-  ছুমুন তথা অষ্টমাংশ পাওয়ার দাবিদা থাকা। দ্বিতীয় পার্ট ১-  সুলুস তথা তিনভাগের একভাগ পাওয়ার দাবিদার থাকা। ২-  সুলুসান তথা দুই তৃতিয়াংশ পাওয়ার দাবিদার থাকা। ৩-  সুদুস তথা এক ছষ্ঠমাংশ পাওয়ার দাবিদার থাকা। যদি প্রথম পার্টের নিসফ এর সাথে দ্বিতীয় পার্টের যে কোন একটি বা একাধিক সংখ্যার দাবিদার থাকে ওয়ারিসদের মাঝে, তাহলে বন্টন সূচনা করতে হবে ছয় দিয়ে। আর যদি প্রথম পার্টের রুবুর দাবিদার থাকার সাথে সাথে দ্বিতীয় পার্টের এক বা একাধিক অংশ সংখ্যার দাবিদার থাকে, তাহলে বন্টন শুরু করতে হবে ১২ দিয়ে। আর যদি প্রথম পার্টের ছুমনের হকদারের সাথে দ্বিতীয় পার্টের যে কোন এক বা একাধিক অংশিদার থাকে, তাহলে বন্টন সূচনা হবে ২৪ দিয়ে। {আসসিরাজী ফিল মীরাস-৮-৯} উপরোক্ত মূলনীতির আলোকে আপনার প্রশ্ন করা সূরতগুলোর সমাধান করতে হবে। নিচে তা উদ্ধৃত করা হল। প্রশ্ন এক ব্যক্তির স্ত্রী, মা-বাবা, ১ ভাই, ২ বোন, ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে আছে। এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে? উত্তর আপন ছেলে থাকায় মৃতের ভাই-বোন কিছুই পাবে না। প্রথমে পূর্ণ সম্পত্তিকে চব্বিশ ভাগে বিভক্ত করে পিতাকে চার ভাগ, মাতাকে চারভাগ আর স্ত্রীকে তিনভাগ প্রদান করা হবে। তারপর বাকি যতটুকু সম্পদ থাকবে, সেটিকে সাত ভাগ করে, তিন ভাগ তিন মেয়েকে আর বাকি চার ভাগের মাঝে দুই ভাগ এক ছেলে আর দুই ভাগ আরেক ছেলেকে দেয়া হবে। প্রশ্ন স্ত্রী, মা-বাবা, ২ ভাই, ১ বোন ও ৩ মেয়ে আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে? উত্তর পিতা থাকায় আপন বোন কিছুই পাবে না। পূর্ণ সম্পত্তিকে ২৭ ভাগে ভাগ করা হবে। এর মাঝে ১৬ভাগ পাবে তিন মেয়ে। পিতা পাবে চার ভাগ। মা পাবে চার ভাগ। আর স্ত্রী পাবে তিন ভাগ। উল্লেখ্যঃ এ সুরতটিকে মিরাস শাস্ত্রের পরিভাষায় মাসআলায়ে মিম্বরিয়া বলা হয়, যেহেতু মিম্বরে বসা অবস্থায় হযরত আলী রাঃ এর সমাধান করেছিলেন। {সিরাজী ফিল মীরাস-৩২} প্রশ্ন স্ত্রী, মা-বাবা, ২ ভাই, ৩ বোন আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে?? উত্তর মৃতের পিতা থাকায় আপন ভাই ও বোন কিছুই পাবে না। পূর্ণ সম্পত্তিকে চার ভাগ করে এক ভাগ পাবেন স্ত্রী। বাকি তিনভাগের এক ভাগ পাবেন মা। আর বাকি দুই ভাগ পাবেন পিতা। প্রশ্ন স্ত্রী, মা-বাবা ও ২ ছেলে-মেয়ে আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে? উত্তর প্রথমে পূর্ণ সম্পদকে চব্বিশ ভাগে ভাগ করে তিন ভাগ স্ত্রীকে, চার ভাগ পিতাকে আর চার ভাগ মাকে দেয়া হবে। তারপর বাকি ১৩ ভাগ সম্পদকে তিন ভাগ করা হবে। তার মাঝে একভাগ দেয়া হবে মেয়েকে, আর বাকি দুই ভাগ দেয়া হবে ছেলেকে। প্রশ্ন স্ত্রী ও মা-বাবা আছে । এমতাবস্থায় তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে? উত্তর পূর্ণ সম্পত্তিকে চার ভাগ করে এক ভাগ পাবেন স্ত্রী। বাকি তিনভাগের এক ভাগ পাবেন মা। আর বাকি দুই ভাগ পাবেন পিতা। প্রশ্ন শুধু মা-বাবা, ২ ভাই-বোন ও ১ মেয়ে আছে । উত্তর পিতা থাকায় ভাইবোন কোন অংশ পাবে না। এক্ষেত্রে পূর্ণ সম্পদকে ছয়ভাগে ভাগ করে তিন ভাগ দেয়া হবে মেয়েকে, পিতাকে দেয়া হবে দুই ভাগ আর মাকে দেয়া হবে একভাগ। ৩নং প্রশ্নের উত্তর মিরাস বা উত্তারাধিকার একটি স্বতন্ত্র বিদ্যা। শুধুমাত্র একটি দু’টি মূলনীতি বলার দ্বারা এর পূর্ণাঙ্গ কোন ধারণা আপনি অর্জন করতে পারবেন না। এরজন্য প্রয়োজন একজন বিজ্ঞ আলেমের কাছে গিয়ে সরাসরি উক্ত বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা। মিরাসের সকল সূরতে সুনির্দিষ্ট মূলনীতির আলোকেই মাসআলার হুকুম একেক হয়, বন্টন পদ্ধতি পরিবর্তিত হয়। উক্ত বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ততা এবং জ্ঞানার্জন ছাড়া সহজে তা বুঝে আসার কথা নয়। তাই আপনি যদি উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত বুঝতে চান, তাহলে অবশ্যই বিজ্ঞ একজন আলেম থেকে সরাসরি শিখে নিতে হবে। এ প্রশ্নোত্তরে মিরাসের পূণাঙ্গ অবস্থান বুঝানো প্রায় অসম্ভব। জাযাকাল্লাহ। والله اعلم بالصواب উত্তর লিখনে লুৎফুর রহমান ফরায়েজী পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইসলামী অর্থনীতির মূল কথা দুটো:

১. রিবা বা আর্থিক লেনদেনে সবরকম জুলুম পরিহার করা ২. গারার বা সবরকম অনিশ্চয়তা/গোঁজামিল পরিহার করা প্রতিটি লেনদেন বা চুক্তি হবে সুস্পষ্ট, সকল পক্ষের জন্য ইনসাফপূর্ণ। আরবীতে একটি প্রবাদ আছে, تعاملوا كالأجانب و تعاشروا كالأقارب ‘লেনদেন করো অপরিচিতের ন্যায়, আর ব্যবহার করো আত্মীয়ের ন্যায়।’ মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথে তার সম্পদের মালিকানা ওয়ারিশদের নিকট আল্লাহর আইন অনুসারে চলে যায়, তা বাস্তবে বণ্টন করা হোক বা না হোক। মৃত ব্যক্তির কোনো মালিকানা থাকে না, আর মালিকানা ছাড়া কোনো সম্পদ হতে পারে না। বণ্টনের আগে সবার হক মিশ্রিত থাকে, এককভাবে কেউ ভোগ করলে তা সবার অনুমতি সাপেক্ষে করা উচিৎ, নতুবা অন্য পক্ষ তার জুলুমের স্বীকার হন। অন্যরা অনুমতি দিলে এটা তাদের ইহসান, না দিলে এটা তার হক্ব, নিন্দনীয় নয়। ঠিক তেমনি, বণ্টনের সময় প্রত্যেককে তার প্রাপ্য ইনসাফপূর্ণ উপায়ে বুঝিয়ে দেয়া সকলের কর্তব্য। প্রতিটা সম্পদ এমনভাবে বণ্টন করা উচিৎ যেন সবাই যথাসম্ভব সমান পান। এরপর উনিশ-বিশ হলে তা অর্থ দিয়ে বা অন্য উপায়ে সমাধান করা যেতে পারে। বোন/ মেয়ের হক ব্যক্তির মৃত্যুর সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তাকে তা বুঝিয়ে দেয়া না হলে তা সুস্পষ্টভাবে জুলুম এবং অন্যের সম্পদ ভোগ বলে গণ্য হবে, যার জন্য কিয়ামতের দিন জবাব দিতে হবে। আমরা লক্ষ্য করেছি, আমাদের সমাজে নামায-রোযাসহ অন্যান্য ইবাদতের ব্যাপারে আমরা যতটুকু দায়িত্বশীল, আর্থিক ব্যাপারগুলোতে শরীয়াহ পরিপালন আমাদের কাছে সে তুলনায় গুরুত্বহীন। অথচ পরের ব্যাপারটাতে আল্লাহর হকের পাশাপাশি বান্দার হকও জড়িত, যার ক্ষমা পাওয়ার প্রসেসটা যথেষ্ট জটিল। আমাদের সম্মিলিতভাবে এসব ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। রিবামুক্ত ইনসাফপূর্ণ অর্থনীতি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে হবে সবার। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন।

ফরায়েয

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ফারায়েয (আরবি: فَرَائِضُ) হচ্ছে ইসলামী উত্তরাধিকার আইন। এটি ইসলামী ফিকহ শাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

ফারায়েয-এর পরিচয়

ফরায়েয (فَرَائِضُ) শব্দটি আরবি فَرِيْضَةٌ এর বহুবচন। শাব্দিক অর্থ হচ্ছে: ফরয করা হয়েছে এমন বিষয়, আবশ্যকীয় বিষয়, অকাট্যভাবে প্রমাণিত বিষয়। ইসলামী পরিভাষায় فَرَائِض বলা হয়, মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার সম্পত্তিকে। আর যে বণ্টন পদ্ধতির আলোকে উত্তারাধিকার সম্পত্তি বণ্টন করা হয় তাকে শরীয়তের পরিভাষায় عِلْمُ الْفَرَائِض বলা হয়। আল্লামা আইনি রহ. বলেন, উত্তরাধিকার সম্পত্তিকে ইসলামে فَرَائِض নামে নামকরণ করার কারণ হল, শরীয়তে উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন নীতি আল্লাহ তা’লা বিশেষভাবে ফরয করেছেন এবং প্রত্যকের অংশ কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত এবং এর মাঝে কমবেশি করার কোন সুযোগ নেই। তাই উত্তরাধিকার সম্পত্তিকে শরীয়তে فَرَائِض বলা হয়।

ফারায়েয শাস্ত্রের গুরুত্ব ও ফযীলত

ইসলামী শরীয়তে উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন পদ্ধতিকে পরিভাষায় عِلْمُ الْفَرَائِض বা ফারায়েয শাস্ত্র বলা হয়। শরীয়তে عِلْمُ الْفَرَائِض একটি স্বতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্র। এ কারণেই عِلْمُ الْفَرَائِض নিজে শেখা এবং অন্যকে শেখানোর গুরুত্ব যেমন আছে; তেমনিভাবে এর অনেক ফযীলতও রয়েছে। নিম্নে عِلْمُ الْفَرَائِض এর গুরুত্ব এবং ফযীলত সংক্রান্ত কিছু হাদীস উল্লেখ করা হল: (১) ইবনে মাজাহ এবং ইমাম দারে ক্বুতনী রহ. হযরত আবু হুরায়রা রা. এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, عن أبى هريرة رضـ أنَّ النبي صلى الله عليه و سلم قال: تَعَلَّمُوا الْفَرَائِضَ وَعَلِّمُوهَ النَّاسَ فَإِنَّهُ نِصْفُ الْعِلْمِ وَهُوَ أَوَّلُ شَيْءٍ يُنْسَى وَهُوَ أَوَّلُ شَيْءٍ يُنْتَزَعُ مِنْ أُمَّتِي. অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. ইরশাদ করেছন, তোমরা নিজের عِلْمُ الْفَرَائِض শেখো এবং লোকদেরকেও শেখাও। কারণ তা জ্ঞানের অর্ধেক। আর এই জ্ঞানকেই সর্বপ্রথম বিস্মৃত করে দেয়া হবে এবং একেই সর্বপ্রথম (মানুষের মন থেকে) উঠিয়ে নেয়া হবে। (২) ইমাম তিরমিযি, ইমাম নাসাঈ, ইমাম আহমাদ, ইমাম হাকিম রহ. সহ অনেকেই ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, عن ابن مسعودٍ رضـ عن النبي صلى الله عليه و سلم قال: تَعَلَّمُوا الْفَرَائِضَ وَعَلِّمُوهَا النَّاسَ فَإِنِّي امْرُؤٌ مَقْبُوضٌ ، وَإِنَّ الْعِلْمَ سَيُقْبَضُ و تَظْهَرُ الفِتَنُ حَتَّى يَخْتَلِفَ الِاثْنَانِ فِي الْفَرِيضَةِ لَا يَجِدَانِ مَنْ يَقْضِيْهَا. অর্থ: রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, তোমরা নিজের عِلْمُ الْفَرَائِض শেখো এবং লোকদেরকেও শেখাও। কারণ আমাকে অচিরেই উঠিয়ে নেয়া হবে। আর একসময় ইলমকেও উঠিয়ে নেয়া হবে এবং বিভিন্ন ফেতনার আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তখন দুই ব্যক্তি তাদের উত্তরাধিকার সম্পদ নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হবে কিন্তু তারা এ বিষয়ে শরয়ী সমাধান দেয়ার মত লোক খোঁজে পাবে না। (৩) ইমাম ত্ববরানী রহ. আবু বাকরাহ রা. এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, مَا رَوَاهُ أبو بَكْرَةَ مَرْفُوعًا: تَعَلَّمُوا الْقُرْآنَ وَالْفَرَائِضَ وَعَلِّمُوهَا النَّاسَ ، أَوْشَكَ أَنْ يَأْتِيَ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَخْتَصِمُ الرَّجُلَانِ فِي الْفَرِيضَةِ فَلَا يَجِدَانِ مَنْ يَفْصِلُ بَيْنَهُمَا. অর্থ: রাসূল সা. ইরশাদ করেছন, তোমরা কোরআন এবং عِلْمُ الْفَرَائِض নিজে শিখ এবং লোকদেরকে শেখাও। অদূর ভবিষ্যতে লোকদের কাছে এমন এক সময় আসবে যখন দুই ব্যক্তি তাদের উত্তরাধিকার সম্পদ নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হবে কিন্তু তারা এ বিষয়ে শরয়ী সমাধান দেয়ার মত লোক খোঁজে পাবে না।

ফরায়েয শাস্ত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য

প্রতিটি ধর্ম এবং সমাজ ব্যবস্থায় উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই ইসলামী শরীয়তে উত্তারাধিকার সম্পত্তির বণ্টন পদ্ধতির বিষয়টি বেশ গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়েছে। আত্মীয়দের মাঝে এই সম্পত্তি কিভাবে বণ্টন হবে এবং কার অংশ কতটুকু হবে তার মৌলিক আলোচনা আল্লাহ তা’লা স্বয়ং কুরআনে অবতীর্ণ করেছেন এবং রাসূল সা. প্রতিটি বিষয়ে বিশদ বিবরণ হাদীসে উল্লেখ করেছেন। ফলে ইসলামী শরীয়তে عِلْمُ الْفَرَائِض বা উত্তরাধিকার সম্পদ বণ্টন পদ্ধতি পৃথিবীর অন্য সকল ধর্ম এবং মতবাদের বণ্টন পদ্ধতি থেকে সবদিকে থেকে মানুষের জন্য উপযোগী এবং সমতাভিত্তিক ও ভারসাম্যপূর্ণ একটি পদ্ধতি। নিচে ইসলামী শরীয়তের উত্তরাধিকার সম্পদের বণ্টন পদ্ধতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হল: ১ম বৈশিষ্ট্য : মৃত ব্যক্তির সকল সম্পদই উত্তরাধিকার সম্পত্তি। ইসলামী উত্তরাধিকা বণ্টন পদ্ধতির প্রথম এবং অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল: মৃত ব্যক্তি যত ধরনের সম্পদ রেখে গিয়েছে সকল সম্পদই ইসলামী শরীয়তে মিরাসের সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়। চাই সেটা মৃত ব্যক্তি ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিসপত্র হোক; যেমন: মৃতের ব্যবহারে পোশাক-আশাক ইত্যাদি, অথবা লাভজনক কোন ব্যবসায়িক সম্পদ হোক; যেমন: জমি, বাড়ি, বাগান, অর্থ-সম্পদ ইত্যাদি। ইসলামী শরীয়তে এই ধরনের সকল সম্পদই উত্তরাধিকা সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু ইসলামের পূর্ব থেকেই এমন অনেক ধর্ম এবং মতবাদ আছে যেখানে মৃত ব্যক্তির ব্যক্তিগত জিনিসপত্রকে মিরাসের সম্পদ হিসেবে গণ্য করে না। তারা এগুলোকে হয়ত কবরের সাথে দাফন করে দেয় কিংবা স্মৃতি হিসেবে রেখে দেয়। ফলে এতে অনেক সময় ওয়ারিশরা বিপুল পরিমাণ সম্পদ থেকে বঞ্চিত হয়। ২য় বৈশিষ্ট্য : উত্তরাধিকার সম্পদ শুধুমাত্র আত্মীয়দের মাঝে বণ্টিত হবে; অনাত্মীয়দের মাঝে নয়। ইসলামী উত্তরাধিকা বণ্টন পদ্ধতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল: শরীয়তে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে শুধুমাত্র আত্মীয়দের অংশ আছে এবং আত্মীয়রা যতক্ষণ জীবিত আছে ততক্ষণ অনাত্মীয় কোন ব্যক্তি মৃতের যতই কাছের হোক তাদের জন্য উত্তরাধিকার সম্পদে কোন অংশ থাকবে না। কিন্তু অনেক ধর্ম এবং মতবাদ এমন আছে যারা মৃতের প্রতিবেশী এবং ঘনিষ্ট বন্ধু-বান্ধবের জন্যও মিরাসের সম্পদের একটি অংশ নির্ধারণ করে থাকে। ফলে প্রকৃত হকদার অনেক আত্মীয়-স্বজন উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। ৩য় বৈশিষ্ট্য : উত্তরাধিকার সম্পদে নারী-পুরুষ, বড়-ছোট সকলের অংশই নির্ধারিত। ইসলামী উত্তরাধিকা বণ্টন পদ্ধতির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল: শরীয়তে নারী-পুরুষ, বড়-ছোট সকলের জন্যই তাদের অংশ অনুপাতে উত্তরাধিকার সম্পদ নির্ধারণ করেছে। তাই শরীয়তে শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণে কিংবা ছোট হওয়ার কারণে তাদের প্রাপ্য অংশ থেকে বঞ্চিত করা কিংবা তাদেরকে কম দেয়ার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু ইসলামের আগমনের পূর্বে জাহেলী সমাজে নারী এবং ছোট সন্তানের জন্য উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে কোন অংশ ছিল না। তাদেরকে উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হত। ৪র্থ বৈশিষ্ট্য : উত্তরাধিকার সম্পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের মাপকাঠি হল নিকটাত্মীয়তা; বয়সে বড় হওয়া নয়। ইসলামী উত্তরাধিকা বণ্টন পদ্ধতির আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল: শরীয়তে কে কতটুকু অংশ পাবে তার মাপকাঠি হল মৃতের নিকটাত্মীয়তা। অর্থাৎ যে মৃতব্যক্তির যতবেশি নিকটাত্মীয় হবে সে ততবেশী মিরাস পাবে। এক্ষেত্রে বয়সে বড়-ছোট হওয়ার মাঝে শরীয়ত কোন তারতম্য করে নি। কিন্তু খৃষ্টধর্মের বণ্টন পদ্ধতিতে বড়-ছোটর মাঝে তারতম্য করা হয়ে থাকে। এতে অনেক সময় মৃতের দূরের আত্মীয়রা শুধুমাত্র বয়সে বড় হওয়ার কারণে বেশি পরিমাণ মিরাস পায় আর নিকটাত্মীয় হওয়া সত্ত্বেও বয়সে ছোট হওয়ার কারণে সম্পদ কম পায়। ৫ম বৈশিষ্ট্য : উত্তরাধিকার সম্পত্তি সম্পূর্ণরূপে বণ্টন করা; শরীকানাধীন কোন সম্পদ না রাখা। ইসলামী উত্তরাধিকা বণ্টন পদ্ধতির আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল: শরীয়তে মৃতের সকল সম্পদই ওয়ারিশেদর মাঝে সম্পূর্ণরূপে বণ্টন করে দেয়া হবে। কোন সম্পত্তিই শরিকানাধীন রাখা হবে না। কিন্তু হিন্দু ধর্ম এবং প্রাচীন রোমক এবং গ্রীক সমাজে সকল সম্পত্তিকে সম্পূর্ণরূপে বণ্টন করা হত না। বরং জমি এবং বসবাসের বাড়ি ইত্যাদি সকলে ওয়ারিশদের মাঝে শরিকানাধীন রেখে দেয়া হত। ফলে পরবর্তীতে এগুলো নিয়ে বিভিন্ন ঝগড়া-বিবাদ, মামলা-মুকাদ্দামা ইত্যাদির সূচনা হত। তাই ইসলাম এই প্রথাকে বিলুপ্ত করে দিয়েছে।  


 

ফারায়েযের বণ্টন-পদ্ধতি

ইসলামী শরীয়তে মৃত ব্যক্তির সকল ওয়ারিশদেরকে তিনভাগে ভাগ করা হয়: (‌ক) أَصْحَابُ الفُرُوْض বা নির্ধারিত অংশের হকদার। (খ) العَصَبَة বা অবশিষ্টভোগী। (গ) أوْلُوْ الأَرْحَام বা মৃতের অন্যান্য নিকটাত্মীয়। নিচে ধারাবাহিকভাবে এই তিন শ্রেণী ওয়ারিশদের পরিচয় এবং তাদের মাঝে উত্তরাধিকার সম্মত্তি বণ্টনের প্রক্রিয়া উল্লেখ করা হল: এক. أصحاب الفروض বা নির্ধারিত অংশের হকদার: কুরআনে কারীমে যে সকল ওয়ারিশদের জন্য মিরাসের অংশ নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে তাদেরকে أَصْحَابُ الفُرُوْض বলা হয়। মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন, ঋণ পরিশোধ এবং ওসিয়ত পূরণের পর যে সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকবে তা সর্বপ্রথম أَصْحَابُ الفُرُوْض এর মাঝে তাদের নির্দিষ্ট অংশ অনুযায়ী বণ্টন করা হবে। এরপর যদি কোন সম্পদ অবশিষ্ট থাকে তাহলে পরবর্তী দু শ্রেণী পর্যায়ক্রমে পাবে। أَصْحَابُ الفُرُوْض হল মোট ১২ জন। তন্মধ্যে ৪ জন পুরুষ এবং ৮ জন মহিলা। পুরুষ ৪ জন হল: ১. পিতা। ২. স্বামী। ৩. দাদা (দাদার পিতা, তার পিতা এভাবে ঊর্ধ্বতন পুরষ দাদার অন্তর্ভুক্ত)। ৪. বৈপিত্রেয় ভাই। আর নারী ৮ জন হল: ১. মা। ২. স্ত্রী। ৩. আপন কন্যা। ৪. পুত্রের কন্যা (পুত্রের পুত্রের কন্যা- এভাবে পুরুষযোগে অধস্তন সকল মেয়েই পুত্রের কন্যার অন্তর্ভুক্ত)। ৫. আপন বোন। ৬. বৈমাত্রেয় বোন। ৭. বৈপিত্রেয় বোন। ৮. দাদী ও নানী (পিতার মা, পিতামহের মা- এভাবে পুরুষযোগে ঊর্ধ্বতন সকল দাদী এবং মাতার মা, মাতার নানী- এভাবে নারীযোগে ঊর্ধ্বতন সকল নানী যথাক্রমে দাদী এবং নানীর অন্তর্ভুক্ত) । নিম্নে أَصْحَابُ الفُرُوْض এর প্রত্যেকের সম্পত্তির পরিমাণ এবং কোন অবস্থায় কতটুকু পাবে তা উল্লেখ্য করা হলো: ১। স্বামীঃ স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামীর দুই অবস্থা হতে পারে: (ক) যদি স্ত্রীর পক্ষ থেকে তার কোন ঔরষজাত সন্তান না থাকে তাহলে সম্পত্তির ১/২ অংশ (অর্ধেক) পাবেন। (খ) আর যদি ঔরষজাত কোন সন্তান থাকে তাহলে ১/৪ অংশ (এক চতুর্থাংশ) পাবেন। ৪। পিতাঃ সন্তান মারা গেলে পিতার তিন অবস্থা: (ক) যদি মৃত সন্তানের কোন পুত্র (আপন পুত্র বা পুত্রের পুত্র- এভাবে অধস্তন কোন পুরুষ) থাকে তাহলে পিতা সম্পত্তির ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবেন। (খ) যদি মৃত সন্তানের কোন পুত্র (আপন পুত্র বা পুত্রের পুত্র- এভাবে অধস্তন কোন পুরুষ) না থাকে কিন্তু তার কোন কন্যা (আপন কন্যা বা কন্যার কন্যা- এভাবে অধস্তন কোন নারী) থাকে তাহলে পিতা أَصْحَابُ الفُرُوْض হিসেবে ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবে এবং العَصَبَة হিসেবে অবশিষ্ট অংশ পাবেন। (গ) যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তানই না থাকে (চাই তা যত অধস্তনই হোক না কেন) তাহলে পিতা শুধুমাত্র العَصَبَة হিসেবে অবশিষ্ট সকল অংশ পাবেন। ৩। দাদাঃ দাদা দ্বারা উদ্দেশ্য হল পিতার বাবা, পিতামহের বাবা, প্রপিতামহের বাবা এভাবে পুরুষযোগে ঊর্ধ্বতন সকলেই দাদার হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। যদি মৃত ব্যক্তির পিতা জীবিত থাকে তাহলে দাদা বঞ্চিত হবে। তবে মৃত ব্যক্তির পিতা যদি জীবিত না থাকে তাহলেই শুধুমাত্র দাদা মিরাসের সম্পত্তি পাবে। আর দাদার মিরাসের সম্পত্তির ক্ষেত্রে পিতার ন্যায়। অর্থাৎ পিতা যে অবস্থায় যতটুকু পেয়েছে দাদা সে অবস্থায় ততটুকু পাবে। ৪। বৈপিত্রেয় ভাইঃ বেপিত্রেয় ভাই দ্বারা উদ্দেশ্য হল মৃত ব্যক্তির মায়ের গর্ভজাত ভাই কিন্তু পিতা ভিন্ন। বৈপিত্রেয় ভাইয়ের তিন অবস্থা হতে পারে: (ক) যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র, কন্যা, নাতি-নাতনী বা অধস্তন কেউ কিংবা পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ বা ঊর্ধতন কোন পুরষ না থাকে এবং শুধুমাত্র একজন বৈপিত্রেয় ভাই থাকে তাহলে সে সম্পত্তির ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবে। (খ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির একাধিক বৈপিত্রেয় ভাই থাকে তাহলে সবাই মিলে সম্পত্তির ১/৩ অংশ (এক তৃতীয়াংশ) পাবে। (গ) আর যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র, কন্যা, নাতি-নাতনী বা অধস্তন কেউ কিংবা পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ বা ঊর্ধতন কেউ জীবিত থাকে তাহলে বৈপিত্রেয় ভাইয়েরা বঞ্চিত হবে। ৫। মাতাঃ সন্তান মারা গেলে মায়ের তিন অবস্থা হতে পারে: (ক) যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান থাকে কিংবা একাধিক ভাইবোন থাকে তাহলে মা সমুদয় সম্পত্তির ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবেন। (খ) যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রীর সাথে পিতা মাতা উভয়ে থাকে তাহলে সম্পত্তি থেকে স্বামী বা স্ত্রীর অংশ দেয়ার পর মা বাকি সম্পত্তির ১/৩ অংশ (এক তৃতীয়াংশ) পবেন। (গ) যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকে বা ভাইবোন ২ জনের কম থাকে এবং স্ত্রী কিংবা স্বামী জীবিত না থাকে তাহলে মা সমুদয় সম্পত্তির ১/৩ অংশ (এক তৃতীয়াংশ) পাবেন। ৬। স্ত্রীঃ স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর দুই ধরনের অবস্থা হতে পারে: (ক) যদি মৃত স্বামীর কোন সন্তান না থাকে তাহলে ১/৪ অংশ (এক চতুর্থাংশ) পাবেন। (খ) আর যদি কোন সন্তান থাকে তাহলে ১/৮ অংশ (এক অষ্টমাংশ) পাবেন। উল্লেখ্য যে, একাধিক স্ত্রী জীবিত থাকলেও সবাই মিলে এক স্ত্রীর প্র‍্যাপ্য অংশ পাবেন এবং এক স্ত্রীর প্র‍্যাপ্য অংশ সবাই নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিবেন। ৭। কন্যাঃ বাবার মৃত্যুর পর কন্যার তিন অবস্থা হতে পারে: (ক) যদি শুধুমাত্র একজন কন্যা থাকে এবং কোন পুত্র না থাকে তাহলে সে সম্পত্তির ১/২ অংশ (অর্ধেক) পাবে। (খ) আর কন্যা যদি একাধিক থাকে এবং কোন পুত্র না থাকে তাহলে সবাই ২/৩ অংশ (দুই তৃতীয়াংশ) পাবে। (গ) আর যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র এবং কন্যা একসাথে থাকে তাহলে পুত্র-কন্যা ২:১ অনুপাতে পাবে। ৮। পৌত্রীগণঃ পুত্রের কন্যা দ্বারা উদ্দেশ্য হল আপন পুত্রের কন্যা, পৌত্রের কন্যা, প্রপৌত্রের কন্যা এভাবে অধস্তন সকল পুত্রের কন্যা। তারা একে অপরের অবর্তমানে দাদার সম্পত্তি থেকে মিরাস লাভ করবে। এদের মিরাস পাওয়ার জন্য শর্ত হল মৃত ব্যক্তির কোন পুত্র কিংবা একাধিক কন্যা জীবিত না থাকা। পুত্রের কন্যাদের ছয়টি অবস্থা হতে পারে: (ক) যদি মৃত ব্যক্তির কোন পুত্র-কন্যা না থাকে এবং শুধুমাত্র একজন পৌত্রী থাকে তাহলে সে সম্পত্তির ১/২ অংশ (অর্ধেক) পাবে। (খ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির একাধিক পৌত্রী থাকে তাহলে সবাই মিলে সম্পত্তির ২/৩ অংশ (দুই তৃতীয়াংশ) পাবে। (গ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির কোন পৌত্র থাকে এবং সাথে এক বা একাধিক পৌত্রী থাকে তাহলে পৌত্রীগণ আসাবা হয়ে যাবে এবং আসহাবুল ফুরুযকে তাদের অংশ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তা পৌত্র এবং পৌত্রীগণ ১:২ অনুপাতে পাবে। (ঘ) যদি মৃত্যু ব্যক্তির কোন পুত্র না থাকে কিন্তু একজন মাত্র কন্যা থাকে এবং সাথে এক বা একাধিক পৌত্রী থাকে তাহলে পৌত্রীগণ সবাই মিলে সম্পত্তির ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবে। (ঙ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির একাধিক কন্যা থাকে তাহলে পৌত্রীগণ বঞ্ছিত হবে। (চ) আর যদি মৃত্যু ব্যক্তির কোন পুত্র থাকে তাহলেও পৌত্রীণন বঞ্ছিত হবে। ৯। আপন বোনঃ আপন বোনের পাঁচ অবস্থা হতে পারে: (ক) যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা, পিতা-ভাই কেউ জীবিত না থাকে এবং আপন বোন শুধুমাত্র একজন থাকে তাহলে বোন আসহাবুল ফুরুয হিসেবে সম্পত্তির  ১/২ অংশ (অর্ধেক) পাবে। (খ) যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা, পিতা-ভাই কেউ জীবিত না থাকে এবং আপন বোন একের অধিক থাকে তাহলে তারা সবাই মিলে সম্পত্তির   থাকলে ২/৩ অংশ (দুই তৃতীয়াংশ) পাবে। (গ) যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা এবং পিতা জীবিত না থাকে এবং আপন বোনের সাথে আপন ভাই জীবিত থাকে তাহলে বোনেরা ভাইয়ের কারণে আসাবা হয়ে যাবে। তখন আসহাবুল ফুরুযের অংশ বণ্টনের পর অবশিষ্ট অংশ আসবা হিসেবে ভাই-বোন ২:১ অনুপাতে পাবে। (ঘ) যদি মৃত্যু ব্যক্তির আপন ভাই না থাকে কিন্তু একজন মাত্র কন্যা থাকে তাহলে আপন বোনেরা ১/৬ অংশ পাবেন। আর একাধিক কন্যা থাকলে এবং অন্য কোন ওয়ারিশ না থাকলে আপন কন্যাকে দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে বোনেরা তা আসাবা হিসেবে পাবে। (ঙ) যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র কিংবা পিতা কেউ জীবিত থাকে তাহলে আপন বোনেরা বঞ্ছিত হবে। ১০। বৈপিত্রেয় বোন। বৈপিত্রেয় বোন বলতে এমন বোনকে বোঝায় যা মৃত ব্যক্তির সহাদোরা অর্থাৎ একই মায়ের সন্তান কিন্তু বাবা ভিন্ন। বৈপিত্রেয় বোন মিরাসের সম্পত্তি লাভের জন্য শর্ত হল মৃত ব্যক্তির পুত্র, পুত্রের পুত্র কিংবা কন্যা, কন্যার কন্যা- এভাবে অধস্তন কেউ কিংবা পিতা, দাদা এভাবে ঊর্ধ্বতন কেউ জীবিত না থাকা। বৈপিত্রেয় বোনের তিন অবস্থা হতে পারে: (ক) যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা কিংবা অধস্তন কেউ অথবা পিতা-দাদা উর্ধ্বতন কেউ না থাকে আর বৈপিত্রেয় বোন শুধুমাত্র একজন থাকে তাহলে সম্পত্তির ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবে। (খ) আর উল্লেখিত অবস্থায় যদি বৈপিত্রেয় বোন একাধিক থাকলে তাহলে সবাই মিলে সম্পত্তির ১/৩ অংশ (এক তৃতীয়াংশ) পাবে। (গ) যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা বা অধস্তন কেউ এবং পিতা-দাদা বা উর্ধ্বতন কেউ জীবিত থাকে তাহলে বৈপিত্রেয় বোনেরা বঞ্ছিত হবে। ১১। বৈমাত্রেয় বোনঃ বৈমাত্রেয় বোন বলা হয় যাদের বাবা এক কিন্তু মা ভিন্ন। বৈমাত্রে বোনের সাত অবস্থা হতে পারে: (ক) যদি মৃত্যু ব্যক্তির পুত্র, পুত্রের পুত্র বা অধস্তন কেউ, পিতা, দাদা বা ঊর্ধতন কেউ, আপন ভাই, একাধিক আপন বোন কিংবা একজন আপন বোন; সাথে কন্যা, কন্যার কন্যা বা অধস্তন কেউ যদি জীবিত না থাকে আর বৈমাত্রিয় বোন শুধুমাত্র একজন থাকে তাহলে সে আসহাবুল ফুরুয হিসেবে সম্পত্তির ১/২ অংশ (অর্ধেক) পাবে। (খ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় বৈমাত্রেয় বোন একাধিক থাকে তাহলে তারা সবাই মিলে সম্পত্তির ২/৩ অংশ (দুই তৃতীয়াংশ) পাবে। (গ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির একজন মাত্র আপন বোন থাকে তাহলে বৈমাত্রেয় বোন ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবে। (ঘ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির একাধিক আপন বোন থাকে তাহলে বৈমাত্রেয় বোনেরা বঞ্ছিত হবে। (ঙ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির একাধিক আপন বোন থাকে এবং বৈমাত্রেয় বোনের সাথে বৈমাত্রেয় ভাইও থাকে তাহলে ভাইয়ের কারণে বোনেরা আসাবা হয়ে যাবে। তখন আসহাবুল ফুরুযের অংশ বণ্টনের পর অবশিষ্ট যা থাকবে তা বৈমাত্রেয় ভাই-বোন ২:১ অনুপাতে পাবে। (চ) যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির কোন কন্যা, কন্যার কন্যা বা অধস্তন কেউ থাকে এবং আপন বোন না থাকে তাহলে বৈমাত্রিয় বোন আসাবা হয়ে যাবে। তখন আসহাবুল ফুরুযকে দেয়ারপর যা অবশিষ্ট থাকবে তার পুরটাই বৈমাত্রেয় বোন আসাবা হিসেবে পাবে। (ছ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির কোন পুরুষ ওয়ারিশ জীবিত থাকে তাহলে বৈমাত্রিয় বোনেরা বঞ্ছিত হবে। ১২। দাদী বা নানীঃ দাদী দ্বারা উদ্দেশ্য হল পিতার মা, পিতামহের মা, পিতা মহীর মা, প্রপিতামহের মা, প্রপিতামহীর মা এভাবে ঊর্ধতন সকলেই দাদীর হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপভাবে নানী দ্বারা উদ্দেশ্য মায়ের মা, নানীর মা, নানীর নানী এভাবে ঊর্ধ্বতন সকলেই নানীর হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। দাদী ও নানীর তিন অবস্থা হতে পারে: (ক)  যদি মৃত ব্যক্তির পিতা-মাতা, দাদা বা ঊর্ধ্বতন কেউ যদি জীবিত না থাকে তাহলে দাদী এবং নানী উভয়ে সম্পত্তির ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবে। (ক) যদি মৃত ব্যক্তির মা জীবিত থাকে তাহলে দাদী এবং নানী উভয়ে বঞ্চিত হবে। (খ) আর যদি মৃত ব্যক্তির পিতা জীবিত থাকে তাহলে দাদী বঞ্চিত হবে কিন্তু নানী যথারীতি ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবে। দুই. العَصَبَة বা অবশিষ্টভোগী। মৃত ব্যক্তির এমন আত্মীয়-স্বজন যাদের কোন অংশ শরীয়ত কর্তৃক নির্দিষ্ট করা হয় নি। তবে أَصْحَابُ الفُرُوْض তাদের নির্দিষ্ট অংশ পাওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে কিংবা أصحاب الفروض এর অবর্তমানে তাদের সমুদয় সম্পত্তির যারা মালিক হয় তাদেরকে العَصَبَة বা অবশিষ্টভোগী বলা হয়। আসাবাদের মাঝে সম্পত্তি বণ্টনের পদ্ধতি হল الأقرب فالأقرب অর্থাৎ প্রথমে মৃতের নিকটাত্মীয়রা পাবে। এরপর অবশিষ্ট থাকলে দূরের আত্মীয়রা পাবে। তিন. أولو الأرحام বা মৃতের অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন। অর্থাৎ মৃতব্যক্তির যে সমস্ত আত্মীয়-স্বজন أَصْحَابُ الفُرُوْض কিংবা العَصَبَة হিসেবে মিরাস পায় না; বরং এই দুই শ্রেণীর কেউ যদি জীবিত না থাকে তখন যারা মিরাসের সম্পত্তি পায় তাদেরকে أوْلُوْ الأَرْحَام বলা হয়।

তথ্যসূত্র

  1.  ফাতহুল মুলহিম (আরবী)। দেওবন্দ, ইউপি, ইন্ডিয়া: ফয়সাল পাবলিকেশন্স। ১৯৯১। পৃষ্ঠা ৮ম খণ্ড (কিতাবুল ফারায়েয অধ্যায়)।
  2.  “المهذب في اختصار السنن الكبير”। পৃষ্ঠা 5/2361।
  3.  سنن ابن ماجة। পৃষ্ঠা 9/208; হাদীস নং–2719।
  4.  سنن الدارقطني। পৃষ্ঠা ৪/৬৭; হাদীস নং–১।
  5.  “نيل الأوطار”। পৃষ্ঠা ৬/৭৫।
  6.  جامع الترمذي। পৃষ্ঠা باب ما جاء في تعليم الفرائض।
  7.  تحفة الأحوذى। পৃষ্ঠা ৬/২২২।
  8.  “ইসলাম ওয়েব.নেট”
  9.  “فتح البارى شرح صحح البخاري”
  10.  فتح الملهم। পৃষ্ঠা ৮ম খণ্ড; ফারায়েয অধ্যায়।
  11.  السراجى فى الميراث
  12.  “উত্তরাধিকার আইন (বাংলাদেশ সরকারের এটুআই)”
  13.  “মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে সম্পত্তি বণ্টন (লেখক: রাইহানুল ইসলাম)”। বাংলায় আইন সেবা। ১২ নভেম্বর ২০১৮।
  14.  “সম্পত্তি বণ্টন : আসহাবুল ফারায়েজ, আসাবা ও তাসহীহ (লেখক: মওলানা সাবের চৌধূরী)”। ফেইসবুক নোট। ২৬ মার্চ ২০১৭।
  মিরাস বা ফারায়েজ সম্পর্কিত গুরুত্বপুর্ন এই প্রশ্নগুলি লিস্ট করতে হবে নিচের এই লিংকগুলি হতেঃ
  • (Www.ahlehaqmedia.com/category/%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%89%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0/ এবং
  • Www.islamic-jibon.info/%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8-%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%A8/ and
  • Www.islamqabd.com/category/bangla-questions-and-answers/%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%A6-%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%A8/ and
  • Www.quranerjyoti.com/tag/%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8/)

মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে কে কতটুকু সম্পত্তি পায়

বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) আজ থেকে ১৪শত বছর আগেই বলে গিয়েছেন, “উত্তরাধিকার আইন নিজে জানো ও অপরকে শেখাও, সকল জ্ঞানের অর্ধেক হল এই জ্ঞান”। মুসলিম হাওয়া সত্ত্বেও আমাদের অনেকেরই উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই।কিন্তু এটা প্রত্যেক মুসলিমের জানা প্রয়োজন। মুসলিম আইনে কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার ওপর ভিত্তি করে মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করা হয়ে থাকে। এভাবে বণ্টন করাকে ফারায়েজ বলা হয়।এই সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সূরা নিসাতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে। তাই এই বিষয়ে জানা উচিত। এতে কোন মুসলমান পুরুষ বা নারী উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী তাঁর ভাগে কতটুকু সম্পত্তি পাবেন সেই সম্পর্কে জানতে পারবে।এখানে শুধু আমরা স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা ও পুত্র-কন্যার উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী প্রাপ্য অংশ নিয়ে আলোচনা করব।তবে কোন মুসলমান মারা গেলে তার সম্পত্তি বণ্টনের আগে কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়। চলুন আগে জেনে নেই কী সেই সব আনুষ্ঠানিকতা।
১. মৃত ব্যক্তির পর্যাপ্ত সম্পত্তি থাকলে সেখান থেকে তার দাফন কাফনের যাবতীয় খরচ মেটাতে হবে। ২. তিনি যদি জীবিত থাকা অবস্থায় কোন ধার-দেনা করে থাকেন তবে তাও রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে পরিশোধ করে দিতে হবে। ৩. তাঁর স্ত্রী বা স্ত্রীদের দেনমোহর পরিশোধিত না হয়ে থাকলে বা আংশিক অপরিশোধিত থাকলে তা পরিশোধ করে দিতে হবে। মোট কথা স্ত্রীর সম্পূর্ণ দেনমোহর স্বামী মৃত অথবা জীবিত যাই থাকুক না কেন তা স্বামীর সম্পত্তি থেকে আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ পরিশোধ করে দিতে হবে। ৪. মৃত ব্যক্তি কোন দান কিংবা উইল করে গেলে তা প্রাপককে দিয়ে দিতে হবে। উপরের সব কাজ সম্পন্ন করার পরে মৃত ব্যক্তির অবশিষ্ট সম্পত্তি ফারায়েজ আইন অনুযায়ী তাঁর উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে। এবার জেনে নিই কি অনুপাতে বা কীভাবে এই সম্পত্তি বণ্টন হবে। ১. স্বামীর অংশ : স্বামী ২ ভাবে মৃত স্ত্রীর সম্পত্তির ভাগ পেয়ে থাকে। স্বামী কখনো তাঁর মৃত স্ত্রীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না। মৃত স্ত্রীর কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান থাকলে স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তির ১/৪ অংশ পাবে। মৃত স্ত্রীর কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান কেউই না থাকলে স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তির ১/২ অংশ পাবে। ২. স্ত্রীর অংশ : স্ত্রীও ২ ভাবে তাঁর মৃত স্বামীর সম্পত্তি পেয়ে থাকে। বিধবা স্ত্রী কোন ভাবে তাঁর স্বামীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না। মৃত স্বামীর কোন সন্তান বা তাঁদের পুত্রের সন্তান থাকলে স্ত্রী, স্বামীর সম্পত্তির ১/৮ অংশ পাবে। যদি মৃত স্বামীর কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান কেউই না থাকলে তবে স্ত্রী, স্বামীর সম্পত্তির ১/৪ অংশ পাবে। স্ত্রী একাধিক হলেও সবাই মিলে ১/৪ অংশ সমান ভাগেই পাবে। ৩. বাবার অংশ : বাবা তাঁর মৃত সন্তানের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী ৩ ভাবে হয়ে থাকে। যদি মৃত সন্তানের পুত্র, পুত্রের পুত্র বা পুত্রের পুত্রের পুত্র এভাবে যতই নিচের হোক না কেন যদি থাকে, তবে মৃত সন্তানের পিতা পাবেন সন্তানের সম্পত্তির ১/৬ অংশ। যদি মৃত সন্তানের শুধু মাত্র কন্যা সন্তান বা তাঁর পুত্রের কন্যা সন্তান থাকলে তবে পিতা সন্তানের সম্পত্তির ১/৬ অংশ পাবেন। এই ক্ষেত্রে কন্যাদের ও অন্যান্যদের দেয়ার পর অবশিষ্ট যে সম্পত্তি থাকবে তাও পিতা পাবেন। আর যদি মৃত সন্তানের কোন পুত্র-কন্যা বা পুত্রের সন্তান কিছুই না থাকে তাবে বাকী অংশীদারদের তাঁদের অংশ অনুযায়ী দেয়ার পর অবশিষ্ট যা থাকবে তার সবটুকুই বাবা পাবেন। তবে মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান ও বাবা কেউ না থাকলে তাঁর সম্পত্তি তাঁর জীবিত ভাই বা ভাইরা পাবে। আবার ভাই না থাকলে তাঁর ভাইয়ের সন্তানরা পাবে। ৪. মায়ের অংশ : মা তাঁর মৃত সন্তানের সম্পত্তি পেয়ে ৩ ভাবে পেয়ে থাকে। – মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি যত নিম্নেরই হোক থাকলে অথবা যদি মৃত ব্যক্তির আপন, পূর্ণ বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় ভাইবোন থাকলে তবে মাতা ছয় ভাগের এক ভাগ (১/৬) পাবেন। মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি যত নিম্নের হোক না থাকলে এবং মৃত ব্যক্তির যদি একজনের বেশি ভাই বা বোন না থাকে তবে মাতা তিন ভাগের এক ভাগ (১/৩) পাবেন। কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি যত নিম্নের হোক না থাকলে অথবা কমপক্ষে দুইজন ভাইবোন না থাকলে এবং যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রীর অংশ বাদ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে, তার তিন ভাগের এক ভাগ (১/৩) মাতা পাবেন। মৃত ব্যক্তির এক ভাই থাকলেও মাতা ১/৩ অংশ পাবেন। ৫. পুত্র সন্তানের অংশ : মৃত ব্যক্তির ছেলে বা ছেলেরা সকল ক্ষেত্রেই সম্পত্তি পায়। যেক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির ছেলে ও মেয়ে রয়েছে সেই ক্ষেত্রে ছেলে বা ছেলেরা, মেয়ে বা মেয়েদের চেয়ে দ্বিগুন সম্পত্তি পাবে। মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে মাতাপিতা ও স্বামী-স্ত্রী নির্দিষ্ট সম্পত্তি পাওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি ছেলে মেয়ের মধ্যে বন্টন করা হবে। তবে মেয়ে না থাকলে অংশীদারদের অংশ দেয়ার পর অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে বাকী সম্পূর্ণ সম্পত্তি ছেলে বা ছেলেরাই পাবে। ৬. কন্যা সন্তানের অংশ : উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে কন্যারা তিনভাবে মাতাপিতার সম্পত্তি পেতে পারে। একমাত্র কন্যা হলে তিনি রেখে যাওয়া সম্পত্তির দুই ভাগের এক ভাগ বা (১/২) অংশ পাবে। একাধিক মেয়ে হলে সবাই মিলে সমানভাগে তিন ভাগের দুই ভাগ বা (২/৩) অংশ পাবে। যদি পুত্র থাকে তবে পুত্র ও কন্যার সম্পত্তির অনুপাত হবে ২:১ অর্থাৎ এক মেয়ে এক ছেলের অর্ধেক অংশ পাবে। যাহোক কন্যা কখনো মাতাপিতার সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হয় না। পিতা মারা গেলে তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় যে সম্পত্তি পেতেন তা তাঁর মৃত্যুর পরও তাঁর উত্তরাধিকারীরা পাবে। ১৯৬১ সালের আগে এই নিয়ম ছিল না। পরে একটি আইন পাস করে এই নিয়ম চালু করা হয়। কারণ এতিমরা যাতে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত না হয় সেই সম্পর্কেও ইসলামে নির্দেশ দেয়া আছে। আবার মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে কোন সন্তানকে ত্যাজ্য বলে ধরা হয় না। ফলে সম্পত্তি থেকে তাকেও বঞ্চিত করা যায় না। তবে কোন ব্যক্তি রেজিস্ট্রিকৃতভাবে সম্পত্তি দান বা হস্তান্তর করে গেলে এবং সন্তানকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে সন্তানের অংশ উল্লেখ না করে গেলে ঐ সন্তান আর সম্পত্তি পাবে না। সৎ ছেলে-মেয়ে, সৎ বাবা বা সৎ মায়ের সম্পত্তি পায় না। একই ভাবে সৎ বাবা বা সৎ মা, সৎ ছেলে-মেয়ের সম্পত্তি পায় না। কেউ কাউকে হত্যা করলে হত্যাকারী তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় না। জীবিত থাকা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে কেউ কারো সম্পত্তি পাবে না। জারজ সন্তান তার মা ও মায়ের আত্নীয়দের থেকে সম্পত্তি সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী পাবে (মুসলিম হানাফী আইন অনুসারে)। মৃত ব্যক্তির কোন উত্তরাধিকার না থাকলে এবং তা তিনি জীবিতকালে কাউকে না দেয়ার ব্যবস্থা করে গেলে সরকার তার সম্পত্তির ওয়ারিশ হবে। উত্তরাধিকার সম্পর্কে উপরোক্ত সাধারণ কয়েকটি বিষয় মনে রাখলে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টনের জটিলতা দূর হবে। লেখক : আইন-অধিকার বিষয়ক লেখক ও গবেষক। 


প্রশ্ন: ৪৬১ : সাদকাতুল ফিতর কী, কার উপর ওয়াজিব

 নাজাতের মাস আজ মাহে রমজানের আজ ২৮ তম দিন। দেখতে দেখতে আমরা রোজার একেবারে শেষ দিকে চলে এসেছি। আজকের পরেই বলতে হবে আল বিদা মাহে রমজান।

ইসলামে সদকায়ে ফিতরের গুরুত্ব অপরিসীম। মহান আল্লাহ পাক কোরআন মজিদে একাধিকবার তার নির্দেশিত পথে বান্দাকে ব্যয় করতে বলেছেন। এতে তার পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদানের কথা বলা হয়েছে।

ঈদ উল ফিতরের দিন সদকায়ে ফিতর আদায় করার ব্যাপারে প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য হাদিস রয়েছে। তিনি বিধান অনুযায়ী ঈমানদারদের সদকায়ে ফিতর আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।

এক হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিলেন যেন মক্কার অলিগলিতে এ ঘোষণা দেয় ‘সদকাই ফিতর ওয়াজিব’। (তিরমিজি ২য় খণ্ড ১৫১ পৃষ্ঠা)।

ইসলামে সদকায়ে ফিতরের অনেক ফজিলত রয়েছে। সদকায়ে ফিতর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পছন্দনীয় আমলের মধ্যে একটি। সদকায়ে ফিতরের মাধ্যমে একমাস সিয়াম সাধণা মাহে রমজানের রোজা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়।

হাদিসে আছে হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, হুজুরে আনোয়ার (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত সদকায়ে ফিতর আদায় করা হয় না, ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার রোজা জমিন ও আসমানের মাঝখানে ঝুলন্ত থাকে।’’(কানযুল উম্মাল, ৮ম খণ্ড)।

আরেক হাদিসে আছে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘‘রাসূলে আকরাম (সা.) সদকায়ে ফিতর নির্ধারণ করেছেন, যাতে অনর্থক কথাবার্তা থেকে রোজাগুলোর পবিত্রতা অর্জিত হয়, অনুরূপভাবে মিসকিনদের খাবারের ব্যবস্থা হয়ে যায়।’’ (সুনানে আবু দাউদ, ২য় খণ্ড)।

সদকাতুল ফিতর কী, কার উপর?

ইসলামী বিধান অনুযায়ী সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব (ফরজের কাছাকাছি)। মৌলিক চাহিদার অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে এক সা পরিমাণ যব, খেজুর, পনির কিংবা কিসমিস কিংবা এর সমপরিমাণ টাকা আদায় করতে হবে। সদকায়ে ফিতর আদায় করা না হলে বড় গুনাহগার হবেন।

সদকায়ে ফিতর আদায়ের পরিমাণ উল্লেখ করে এ সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস রয়েছে।

হযরত ইবনে ‍উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, প্রত্যেক গোলাম, আযাদ, পুরুষ-নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর রাসূলুল্লাহ (সা.) সদকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর হোক যব হোক এক সা পরিমাণ আদায় করা ফরজ করেছেন। লোকজনদের ঈদের সালাতে বের হওয়ার আগেই তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারী)।

রাসূলের যুগে সাহাবিগণও এ পরিমাণ সদকায়ে ফিতর আদায় করেছেন।

এ প্রসঙ্গে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে তিনি বলেন, আমরা এক সা পরিমাণ খাদ্য, এক সা পরিমাণ যব অথবা এক সা পরিমাণ খেজুর অথবা এক সা পরিমাণ পনির, অথবা এক সা পরিমাণ কিসমিস দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম। (সহিহ বুখারী)।

ফিতরা জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৬৫ টাকা, চাইলে বেশি দেওয়া যাবেঃ

গম কিংবা আটার বাজারমূল্য হিসাব করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবার ফিতরার পরিমাণ নির্ধারণ করেছে জনপ্রতি কমপক্ষে ৬৫ টাকা। তবে চাইলে যে কেউ এর বেশি দিতে পারবেন (খেজুর কিংবা কিসমিদের দাম দিতে পারবেন)।

১ কেজি ৬৫০ গ্রাম গম বা আটা অথবা খেঁজুর, কিসমিস, পনির বা যবের মধ্যে যে কোনো একটি পণ্যের ৩ কেজি ৩০০ গ্রামের বাজার মূল্য ফিতরা হিসেবে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা যায়। এই হিসাবে এবার সর্বনিম্ন ৬৫ টাকা থেকে ১ হাজার ৬৫০ টাকা ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সদকায়ে ফিতর কখন আদায় করবেনঃ

ইসলামী শরীয়তের বিধান অনুযায়ী- ঈদুল ফিতরের নামাজের আগেই প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। নাবালক ছেলেমেয়ের পক্ষ থেকে বাবাকে ফিতরা আদায় করতে হয়।

প্রসিদ্ধ ফতোয়াগ্রন্থ ‘ফতোয়া আলমগীরী’ এর প্রথম খণ্ডে উল্লেখ আছে, মৌলিক চাহিদার অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ (সাড়ে সাতভরি স্বর্ণ কিংবা সাড়ে ৫২ ভরি রূপা) সম্পদের অধিকারি প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব।

এতে আরো বলা হয়েছে, সদকায়ে ফিতর আদায়ের উত্তম সময় হচ্ছে ঈদের দিন সুবহে সাদিকের পর থেকে ঈদের নামাজ আদায় করার পূর্ব পর্যন্ত। যদি চাঁদ রাত কিংবা রমজানের কোনো একদিন বরং রমজানের আগেও যদি কেউ আদায় করে থাকে তাহলে তার ফিতরা আদায় হয়ে যাবে।

সদকায়ে ফিতর তাকে দিতে হবে যে জাকাতের উপযোগী। যাকে জাকাত দেওয়া যায় না তাকে ফিতরাও দেওয়া যায় না। (ফতোয়া আলমগীরী, ১ম খণ্ড, ১৯৪ পৃষ্ঠা)।

সদকায়ে ফিতর ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বংশধররা কখনো নিতে পারেন না। অর্থাৎ তাদের সদকায়ে ফিতর দেওয়া যাবে না। (ফতোয়া আলমগীরী)।

ঈদ উল ফিতরের আগেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উচিত সদকায়ে ফিতর আদায় করা। আল্লাহ আমাদের আল্লাহর নির্দেশিত পথে সদকায়ে ফিতর আদায় করার তওফিক দিন। আমীন।


মূল লিংক

প্রশ্ন: ৪৬০: সুদের বিরুদ্ধে কোরআনের আয়াত ও হাদীস ।

 আসুন সুদ থেকে বিরত থাকি


সুদ একটি হারাম এবং চরম ঘৃণিত কাজ। যা কোরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।আসুন সুদ ভিত্তিক ব্যাংক-বীমা, সমিতি ও লেনদেন থেকে বিরত থাকি।

সুদের বিরুদ্ধে কোরআনের অবস্থান/আয়াতঃ

যারা সুদ খায় তাদের অবস্থা হয় ঠিক সেই লোকটির মতো যাকে শয়তানস্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে৷ তাদের এই অবস্থায় উপনীত হবার কারণ হচ্ছেএই যেতারা বলেঃ “ ব্যবসা তো সুদেরই মতো ” অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালালকরে দিয়েছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম  কাজেই যে ব্যক্তির কাছে তাররবের পক্ষ থেকে এই নসীহত পৌছে যায় এবং ভবিষ্যতে সুদখোরী থেকে সেবিরত হয়সে ক্ষেত্রে যা কিছু সে খেয়েছে তাতো খেয়ে ফেলেছেই এবং ব্যাপারটি আল্লাহর কাছে সোপর্দ হয়ে গেছে  আর এই নির্দেশের পরও যে ব্যক্তিআবার এই কাজ করে , সে জাহান্নামের অধিবাসী  সেখানে সে থাকবে চিরকাল(আল বাকারাহ,আয়াতঃ২৭৫)

আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত  বিকশিত করেন  আরআল্লাহ অকৃতজ্ঞ দুষ্কৃতকারীকে পছন্দ করেন না (আল বাকারাহ,আয়াতঃ২৭৬)

হে ঈমানদারগণ ! আল্লাহকে ভয় করো এবং লোকদের কাছে তোমাদের যেসুদ বাকি রয়ে গেছে তা ছেড়ে দাও , যদি যথার্থই তোমরা ঈমান এনে থাকো(আল বাকারাহ,আয়াতঃ২৭৮)

কিন্তু যদি তোমরা এমনটি না করো তাহলে জেনে রাখোএটা আল্লাহ  তাঁররসূলের পক্ষ থেকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা  এখনো তাওবা করে নাও (এবং সুদ ছেড়ে দাও ) তাহলে তোমরা আসল মূলধনের অধিকারী হবে  তোমরাজুলুম করবে না এবং তোমাদের ওপর জুলুম করাও হবে না (আলবাকারাহ,আয়াতঃ২৭৯)

হে ঈমানদারগণ ! চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খাওয়া বন্ধ করো এবং আল্লাহকে ভয়করোআশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে (আলে ইমরান,আয়াতঃ ১৩০)

সুদ গ্রহণ করার জন্য যা গ্রহণ করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল এবংঅন্যায়ভাবে লোকদের ধন-সম্পদ গ্রাস করার জন্যআমি এমন অনেক পাক-পবিত্র জিনিস তাদের জন্য হারাম করে দিয়েছিযা পূর্বে তাদের জন্য হালালছিল৷ আর তাদের মধ্য থেকে যারা কাফের তাদের জন্য কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিতৈরী করে রেখেছি৷ (আন নেসা,আয়াতঃ ১৬১)

যে সূদ তোমরা দিয়ে থাকোযাতে মানুষের সম্পদের সাথে মিশে তা বেড়েযায়আল্লাহর কাছে তা বাড়ে না   আর যে যাকাত তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টিঅর্জনের উদ্দেশ্যে দিয়ে থাকোতা প্রদানকারী আসলে নিজের সম্পদ বৃদ্ধিকরে৷(আর রূম,আয়াতঃ ৩৯)

সুদের বিরুদ্ধে হাদীসঃ

হযরত মূসা ইবনে ইসমাঈল (রঃ)......সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আজ রাতে আমি স্বপ্ন দেখেছি যে, দু’ব্যক্তি আমার নিকট এসে আমাকে এক পবিত্র ভূমিতে নিয়ে গেল। আমরা চলতে চলতে এক রক্তের নদীর কাছে পৌছলাম। নদীর মাঝখানে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে এবং আরেক ব্যক্তি নদীর তীরে, তার সামনে পাথর পড়ে রয়েছে। নদীর মাঝখানের লোকটি যখন বের হয়ে আসতে চায়, তখন তীরের লোকটি তার মুখে পাথর খন্ড নিক্ষেপ করে তাকে স্বস্থানে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এভাবে সে যতবার বেরিয়ে আসতে চায়,ততবারই তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করছে আর সে স্বস্থানে ফিরে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ কে? সে বলল, যাকে আপনি রক্তের নদীতে দেখছেন, সে হল সূদখোর। (বুখারীঃঅধ্যায়ঃ ক্রয়-বিক্রয়ঃ ১৯৫৫)

হযরত  আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী জিনিস থেকে বিরত থাক। জিজ্ঞেস করা হল,হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ), সে গুলো কি কি? তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে শরীক করা, যাদু টোনা করা, আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন এমন প্রাণীকে অকারণে হত্যা করা, এতীমের মাল আত্মসাত করা,সুদ খাওয়া,জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং সতী সাধ্বী নিষ্কলুষ মুমিন মহিলার উপর ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা। (মুসলিম, কিতাবুল ইমানঃ১৭০)

হযরত  আহমদ ইবনে ইউনুস(রঃ).....আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) সূদখোর, সূদ দাতা,এর সাক্ষী এবং সুদের হিসাব/দলীল লেখক—সকল কে অভিশাপ দিয়েছেন। আর তিনি এদের সবাই কে সমান অপরাধী বলেছেন।(আবু দাউদ,অধ্যায়ঃ ক্রয়-বিক্রয়ঃ ৩৩০০)

হযরত  আব্দুল্লাহ ইবনে সাঈদ (রঃ).....আবু হুরাইরাহ (রাঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, সুদের সত্তরটি স্তর রয়েছে। সবচেয়ে নিম্নটি হল-নিজ মায়ের সাথে ব্যভিচার করা (ইবনে মাজাহ,অধ্যায়ঃ ব্যবসাঃসুদঃ ২২৭৪)

হযরত  আবু হুরাইরাহ (রাঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, মিরাজের রাতে আমি এমন এক গোত্রের পাশ দিয়ে গমন করি,যাদের পেট ছিল ঘরের মত বড়, যার মধ্যে বিভিন্ন রকম সাপ বাহির থেকে দেখা যাচ্ছিল। আমি জিবরাঈলকে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা হল সুদখোর।(ইবনে মাজাহ,অধ্যায়ঃ ব্যবসাঃসুদঃ ২২৭৩)

হযরত  আব্বাস ইবনে জাফর(রঃ).....ইবনে মাসউদ (রাঃ) সুত্রে রাসূল (সাঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে বেশী সুদ খাবে, পরিনামে তার সম্পদ কম হয়ে যাবে। (ইবনে মাজাহ,অধ্যায়ঃ ব্যবসাঃসুদঃ ২২৭৯)

হযরত  আব্দুল্লাহ ইবনে হানযালাহ(রাঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, জেনেশুনে এক দিরহাম পরিমান সুদ খাওয়া আল্লাহর নিকট ছত্রিশ বার ব্যভিচারের চাইতেও অধিক গুনাহের কাজ। (মুসনাদে আহমদঃ১০৩৩)

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...