প্রশ্ন ৩৯২ : নামাজে তাশাহুদ পড়ার সময় আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা ।


( বি: দ্র: নামাজ সম্পর্কিত হাদীসে এ বিষয়টি আছে। তাশাহ্হুদ মূলত সাক্ষী। সাক্ষী দেওয়ার আদি বিধান হলো এ (শাহাদত) আঙ্গুল উঠিয়ে কথাটি বলা। নবী করিম সা. ও সাহাবায়ে কেরাম নামাজে এমন করতেন। এটি সর্বসম্মতিক্রমে মুস্তাহসান। সুন্নত আমল হিসাবে এর বিভিন্ন পদ্ধতি মুসলিম বিধানে রয়েছে। সবাই নিজ নিজ আস্থাভাজন মুরব্বী আলেমের কাছ থেকে এর সঠিক প্রক্রিয়াটি জেনে নিবেন।


জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামী ফিক্হ ও ফাতাওয়া বিশ্বকোষ।
আল্লামা মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভী ) 

=====================================

(বি:দ্র: তাছাড়া, নিম্নে একটি পর্যালোচনা পেশ করা হলো মাত্র: )

তাশাহুদে আঙ্গুল ইশারা করা সম্পর্কে একটি দলিলভিক্তিক পর্যালোচনা:

তাশাহুদে আঙ্গুল ইশারা করা সাঃ থেকে প্রমানিত। তাই এ আমলটি সুন্নত।
:
:
তাশাহুদে আঙ্গুল ইশারা করার দলিলঃ
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
:
:
১ম হাদিসঃ
:
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﻣَﻌْﻤَﺮِ ﺑْﻦِ ﺭِﺑْﻌِﻲٍّ ﺍﻟْﻘَﻴْﺴِﻲُّ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﻫِﺸَﺎﻡٍ ﺍﻟْﻤَﺨْﺰُﻭﻣِﻲُّ، ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟْﻮَﺍﺣِﺪِ، – ﻭَﻫُﻮَ ﺍﺑْﻦُ ﺯِﻳَﺎﺩٍ – ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋُﺜْﻤَﺎﻥُ ﺑْﻦُ ﺣَﻜِﻴﻢٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﻋَﺎﻣِﺮُ ﺑْﻦُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﺍﻟﺰُّﺑَﻴْﺮِ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇِﺫَﺍ ﻗَﻌَﺪَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﺟَﻌَﻞَ ﻗَﺪَﻣَﻪُ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَﻯ ﺑَﻴْﻦَ ﻓَﺨِﺬِﻩِ ﻭَﺳَﺎﻗِﻪِ ﻭَﻓَﺮَﺵَ ﻗَﺪَﻣَﻪُ ﺍﻟْﻴُﻤْﻨَﻰ ﻭَﻭَﺿَﻊَ ﻳَﺪَﻩُ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَﻯ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﻛْﺒَﺘِﻪِ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَﻯ ﻭَﻭَﺿَﻊَ ﻳَﺪَﻩُ ﺍﻟْﻴُﻤْﻨَﻰ ﻋَﻠَﻰ ﻓَﺨِﺬِﻩِ ﺍﻟْﻴُﻤْﻨَﻰ ﻭَﺃَﺷَﺎﺭَ ﺑِﺈِﺻْﺒَﻌِﻪِ
আবদুল্লাহ ইবনুুয যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে বসতেন, বাম পা-খানি বিছিয়ে দিতেন। এবং বাম হাত বাম উরুর উপর ও ডান হাত খানি ডান উরুর উপর রাখতেন, আর আঙ্গুল (তর্জনী) দ্বারা ইশারা করতেন।
(সহীহ মুসলিম-হা/১১৮৫, ১১৮৬)
:
২য় হাদিসঃ
:
ﻭَﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﺭَﺍﻓِﻊٍ، ﻭَﻋَﺒْﺪُ ﺑْﻦُ ﺣُﻤَﻴْﺪٍ، ﻗَﺎﻝَ ﻋَﺒْﺪٌ ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧَﺎ ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﺭَﺍﻓِﻊٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﺮَّﺯَّﺍﻕِ، ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧَﺎ ﻣَﻌْﻤَﺮٌ، ﻋَﻦْ ﻋُﺒَﻴْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ، ﻋَﻦْ ﻧَﺎﻓِﻊٍ، ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ، ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛَﺎﻥَ ﺇِﺫَﺍ ﺟَﻠَﺲَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻭَﺿَﻊَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﻛْﺒَﺘَﻴْﻪِ ﻭَﺭَﻓَﻊَ ﺇِﺻْﺒَﻌَﻪُ ﺍﻟْﻴُﻤْﻨَﻰ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺗَﻠِﻲ ﺍﻹِﺑْﻬَﺎﻡَ ﻓَﺪَﻋَﺎ ﺑِﻬَﺎ ﻭَﻳَﺪَﻩُ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَﻯ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﻛْﺒَﺘِﻪِ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَﻯ ﺑَﺎﺳِﻄُﻬَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে বসতেন, তখন দুই হাত দুই হাঁটুর উপর রাখতেন এবং ডান হাতের বৃদ্ধাংগুলির পাশের (শাহাদত) আঙ্গুলি উঠিয়ে তা দ্বারা (ইংগিতে) দু’আ করতেন। আর বাম হাত খানি বাম হাঁটুর উপর বিছিয়ে রাখতেন।
(সহীহ মুসলিম-হা/১১৮৭)
:
৩য় হাদিসঃ
:
ﻭَﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﺒْﺪُ ﺑْﻦُ ﺣُﻤَﻴْﺪٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻳُﻮﻧُﺲُ ﺑْﻦُ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺣَﻤَّﺎﺩُ ﺑْﻦُ ﺳَﻠَﻤَﺔَ، ﻋَﻦْ ﺃَﻳُّﻮﺏَ، ﻋَﻦْ ﻧَﺎﻓِﻊٍ، ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛَﺎﻥَ ﺇِﺫَﺍ ﻗَﻌَﺪَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺘَّﺸَﻬُّﺪِ ﻭَﺿَﻊَ ﻳَﺪَﻩُ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَﻯ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﻛْﺒَﺘِﻪِ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَﻯ ﻭَﻭَﺿَﻊَ ﻳَﺪَﻩُ ﺍﻟْﻴُﻤْﻨَﻰ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﻛْﺒَﺘِﻪِ ﺍﻟْﻴُﻤْﻨَﻰ ﻭَﻋَﻘَﺪَ ﺛَﻼَﺛَﺔً ﻭَﺧَﻤْﺴِﻴﻦَ ﻭَﺃَﺷَﺎﺭَ ﺑِﺎﻟﺴَّﺒَّﺎﺑَﺔِ
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাশাহুদ পড়ার জন্য বসতেন, তখন তার বাম হাত বাম হাঁটুর উপর এবং ডান হাত ডান হাঁটুর উপর রাখতেন। আর (ডান হাতের আঙ্গুল দ্বারা) তেপ্পান্ন বানিয়ে শাহাদাত আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করতেন।
(সহীহ মুসলিম-হা/১১৮৮, ১১৮৯)
:
৪র্থ হাদিসঃ
:
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺣْﻤَﺪُ ﺑْﻦُ ﺣَﻨْﺒَﻞٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟْﻤَﻠِﻚِ ﺑْﻦُ ﻋَﻤْﺮٍﻭ، ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧِﻲ ﻓُﻠَﻴْﺢٌ، ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﻋَﺒَّﺎﺱُ ﺑْﻦُ ﺳَﻬْﻞٍ، ﻗَﺎﻝَ ﺍﺟْﺘَﻤَﻊَ ﺃَﺑُﻮ ﺣُﻤَﻴْﺪٍ ﻭَﺃَﺑُﻮ ﺃُﺳَﻴْﺪٍ ﻭَﺳَﻬْﻞُ ﺑْﻦُ ﺳَﻌْﺪٍ ﻭَﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﻣَﺴْﻠَﻤَﺔَ ﻓَﺬَﻛَﺮُﻭﺍ ﺻَﻼَﺓَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﺣُﻤَﻴْﺪٍ ﺃَﻧَﺎ ﺃَﻋْﻠَﻤُﻜُﻢْ ﺑِﺼَﻼَﺓِ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﺬَﻛَﺮَ ﺑَﻌْﺾَ ﻫَﺬَﺍ ﻗَﺎﻝَ ﺛُﻢَّ ﺭَﻛَﻊَ ﻓَﻮَﺿَﻊَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﻛْﺒَﺘَﻴْﻪِ ﻛَﺄَﻧَّﻪُ ﻗَﺎﺑِﺾٌ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻤَﺎ ﻭَﻭَﺗَّﺮَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻓَﺘَﺠَﺎﻓَﻰ ﻋَﻦْ ﺟَﻨْﺒَﻴْﻪِ ﻗَﺎﻝَ ﺛُﻢَّ ﺳَﺠَﺪَ ﻓَﺄَﻣْﻜَﻦَ ﺃَﻧْﻔَﻪُ ﻭَﺟَﺒْﻬَﺘَﻪُ ﻭَﻧَﺤَّﻰ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻋَﻦْ ﺟَﻨْﺒَﻴْﻪِ ﻭَﻭَﺿَﻊَ ﻛَﻔَّﻴْﻪِ ﺣَﺬْﻭَ ﻣَﻨْﻜِﺒَﻴْﻪِ ﺛُﻢَّ ﺭَﻓَﻊَ ﺭَﺃْﺳَﻪُ ﺣَﺘَّﻰ ﺭَﺟَﻊَ ﻛُﻞُّ ﻋَﻈْﻢٍ ﻓِﻲ ﻣَﻮْﺿِﻌِﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﻓَﺮَﻍَ ﺛُﻢَّ ﺟَﻠَﺲَ ﻓَﺎﻓْﺘَﺮَﺵَ ﺭِﺟْﻠَﻪُ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَﻯ ﻭَﺃَﻗْﺒَﻞَ ﺑِﺼَﺪْﺭِ ﺍﻟْﻴُﻤْﻨَﻰ ﻋَﻠَﻰ ﻗِﺒْﻠَﺘِﻪِ ﻭَﻭَﺿَﻊَ ﻛَﻔَّﻪُ ﺍﻟْﻴُﻤْﻨَﻰ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﻛْﺒَﺘِﻪِ ﺍﻟْﻴُﻤْﻨَﻰ ﻭَﻛَﻔَّﻪُ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَﻯ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﻛْﺒَﺘِﻪِ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَﻯ ﻭَﺃَﺷَﺎﺭَ ﺑِﺄُﺻْﺒُﻌِﻪِ
আব্বাস হাম্বল সাহল বলেন, আবূ হুমায়েদ, আবূ উসায়েদ, সাহল ইবনু সা’দ এবং মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা (রাঃ) কোন এক মজলিসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামায আদায়ের ধরণ সম্পর্কে আলোচনা করেন। এ সময় আবূ হুমায়েদ (রাঃ) বলেন, আমি তোমাদের চাইতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামায সম্পর্কে অধিক অবহিত অতঃপর কিছু অংশ এখানে বর্ণনা করা হল। রাবী বলেন, অতঃপর নাবীরুকূ করার সময় স্বীয় হস্ত দ্বারা হাঁটু শক্তভাবে আটকিয়ে ধরতেন। অতঃপর তিনি স্বীয় হস্তদ্বয় তাঁর পার্শদেশ থেকে বিছিন্ন করে রাখতেন। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি সিজদার সময় নাক ও কপাল মাটির সাথে মিলিয়ে রাখেন এবং হস্তদ্বয় পাশ হতে দূরে সরিয়ে রাখেন। অতঃপর তিনি এমনভাবে মাথা উঠাতেন যে, শরীরের সমস্ত সংযোগ স্থান স্ব-স্ব স্থানে স্হাপিত হত। অতঃপর বসে তিনি তাঁর বাম পা বিছিয়ে দিতেন এবং ডান পায়ের সম্মুখ ভাগ কিবলামূখী করে রাখতেন এবং ডান হাতের তালু ডান পায়ের উরুর উপর রাখতেন এবং বাম হাত বাম পায়ের উপর এবং তাশাহুদ পাঠের সময় শাহাদাত আংগুল দ্বারা ইশারা করতেন।
(আবু দাউদ-হা/৭৩৪)
:
৫ম হাদিসঃ
:
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣُﺴَﺪَّﺩٌ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺑِﺸْﺮُ ﺑْﻦُ ﺍﻟْﻤُﻔَﻀَّﻞِ، ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺻِﻢِ ﺑْﻦِ ﻛُﻠَﻴْﺐٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﻋَﻦْ ﻭَﺍﺋِﻞِ ﺑْﻦِ ﺣُﺠْﺮٍ، ﻗَﺎﻝَ ﻗُﻠْﺖُ ﻷَﻧْﻈُﺮَﻥَّ ﺇِﻟَﻰ ﺻَﻼَﺓِ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛَﻴْﻒَ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﻓَﻘَﺎﻡَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﺎﺳْﺘَﻘْﺒَﻞَ ﺍﻟْﻘِﺒْﻠَﺔَ ﻓَﻜَﺒَّﺮَ ﻓَﺮَﻓَﻊَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﺣَﺎﺫَﺗَﺎ ﺑِﺄُﺫُﻧَﻴْﻪِ ﺛُﻢَّ ﺃَﺧَﺬَ ﺷِﻤَﺎﻟَﻪُ ﺑِﻴَﻤِﻴﻨِﻪِ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﺃَﻥْ ﻳَﺮْﻛَﻊَ ﺭَﻓَﻌَﻬُﻤَﺎ ﻣِﺜْﻞَ ﺫَﻟِﻚَ – ﻗَﺎﻝَ – ﺛُﻢَّ ﺟَﻠَﺲَ ﻓَﺎﻓْﺘَﺮَﺵَ ﺭِﺟْﻠَﻪُ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَﻯ ﻭَﻭَﺿَﻊَ ﻳَﺪَﻩُ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَﻯ ﻋَﻠَﻰ ﻓَﺨِﺬِﻩِ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَﻯ ﻭَﺣَﺪَّ ﻣِﺮْﻓَﻘَﻪُ ﺍﻷَﻳْﻤَﻦَ ﻋَﻠَﻰ ﻓَﺨِﺬِﻩِ ﺍﻟْﻴُﻤْﻨَﻰ ﻭَﻗَﺒَﺾَ ﺛِﻨْﺘَﻴْﻦِ ﻭَﺣَﻠَّﻖَ ﺣَﻠَﻘَﺔً ﻭَﺭَﺃَﻳْﺘُﻪُ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﻫَﻜَﺬَﺍ ﻭَﺣَﻠَّﻖَ ﺑِﺸْﺮٌ ﺍﻹِﺑْﻬَﺎﻡَ ﻭَﺍﻟْﻮُﺳْﻄَﻰ ﻭَﺃَﺷَﺎﺭَ ﺑِﺎﻟﺴَّﺒَّﺎﺑَﺔِ
ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামায আদায়ের পদ্ধতির প্রতি নজর করি। আমি দেখি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলামুখী হয়ে দণ্ডায়মান হন। অতঃপর তিনি ‘আল্লাহু আকবার’ বলে স্বীয় উভয় হস্ত কান পর্যন্ত উঠান এবং পরে ডান হাত দ্বারা বাম হাত চেপে ধরেন। পরে যখন তিনি রুকু করার ইরাদা করেন, তখন তিনি উভয় হস্ত অনুরূপভাবে উত্তোলন করেন। অতঃপর তিনি বাম পা বিছিয়ে দিয়ে, বাম হাত উক্ত পায়ের রানের উপর রাখেন এবং ডান হাতের কনুই ডান পা হতে বিচ্ছিন্নভাবে রাখেন এবং কনিষ্ঠ ও অমানিকা আংগুলীদ্বয়কে গুটিয়ে রাখেন এবং ডান বৃদ্ধাঙ্গুলিকে মধ্যমার সাথে মিশ্রিত করে বৃত্তাকার রাখেন। অতঃপর আমি তাঁকে এরূপ করতে দেখেছি। (রাবী বলেন) অতঃপর বিশর তাঁর বৃদ্ধাংগুলোকে মধ্যমার সাথে মিলিয়ে বৃত্তাকারে রাখেন এবং শাহাদাত আংগুলি দ্বারা ইশারা করেন।
(আবু দাউদ-হা/৯৫৭)
.
এ হাদীসটি নাসাঈ শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। হযরত ওয়াইল বিন হুজ্র রা. থেকে বর্ণিত এ হাদীসটির সনদে উল্লিখিত বর্ণনাকারী আসেম বিন কুলাইব-এর পিতা কুলাইব ব্যতীত অন্য রাবীগণ সকলেই বুখারী/মুসলিমের রাবী।
আর কুলাইব ﺛﻘﺔ (নির্ভরযোগ্য)।
(আল কাশেফ: ৪৬৭১)
.
সুতরাং হাদীসটির সনদ সহীহ। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (সহীহ-জঈফ আবু দাউদ: ৯৫৭)
:
৬ষ্ট হাদিসঃ
:
ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧَﺎ ﻳَﻌْﻘُﻮﺏُ ﺑْﻦُ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ، ﻗَﺎﻝَ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻳَﺤْﻴَﻰ، ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺠْﻼَﻥَ، ﻋَﻦْ ﻋَﺎﻣِﺮِ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﺍﻟﺰُّﺑَﻴْﺮِ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛَﺎﻥَ ﺇِﺫَﺍ ﻗَﻌَﺪَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺘَّﺸَﻬُّﺪِ ﻭَﺿَﻊَ ﻛَﻔَّﻪُ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَﻯ ﻋَﻠَﻰ ﻓَﺨِﺬِﻩِ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَﻯ ﻭَﺃَﺷَﺎﺭَ ﺑِﺎﻟﺴَّﺒَّﺎﺑَﺔِ ﻻَ ﻳُﺠَﺎﻭِﺯُ ﺑَﺼَﺮُﻩُ ﺇِﺷَﺎﺭَﺗَﻪُ
আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাশাহুদ আদায় করতে বসতেন তখন তার বাম হাত তাঁর বাম উরুর উপর রাখতেন এবং তর্জনি দ্বারা ইশারা করতেন। আর দৃষ্টি তাঁর ইশারা অতিক্রম করত না।
(সুনানে নাসাঈ-হা/১২৭৮)
:
৭ম হাদিসঃ
:
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺑُﻨْﺪَﺍﺭٌ، ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﺑَﺸَّﺎﺭٍ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﻋَﺎﻣِﺮٍ ﺍﻟْﻌَﻘَﺪِﻱُّ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻓُﻠَﻴْﺢُ ﺑْﻦُ ﺳُﻠَﻴْﻤَﺎﻥَ ﺍﻟْﻤَﺪَﻧِﻲُّ، ﺣَﺪَّﺛَﻨِﻲ ﻋَﺒَّﺎﺱُ ﺑْﻦُ ﺳَﻬْﻞٍ ﺍﻟﺴَّﺎﻋِﺪِﻱُّ، ﻗَﺎﻝَ ﺍﺟْﺘَﻤَﻊَ ﺃَﺑُﻮ ﺣُﻤَﻴْﺪٍ ﻭَﺃَﺑُﻮ ﺃُﺳَﻴْﺪٍ ﻭَﺳَﻬْﻞُ ﺑْﻦُ ﺳَﻌْﺪٍ ﻭَﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﻣَﺴْﻠَﻤَﺔَ ﻓَﺬَﻛَﺮُﻭﺍ ﺻَﻼَﺓَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ . ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﺣُﻤَﻴْﺪٍ ﺃَﻧَﺎ ﺃَﻋْﻠَﻤُﻜُﻢْ ﺑِﺼَﻼَﺓِ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇِﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺟَﻠَﺲَ – ﻳَﻌْﻨِﻲ – ﻟِﻠﺘَّﺸَﻬُّﺪِ ﻓَﺎﻓْﺘَﺮَﺵَ ﺭِﺟْﻠَﻪُ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَﻯ ﻭَﺃَﻗْﺒَﻞَ ﺑِﺼَﺪْﺭِ ﺍﻟْﻴُﻤْﻨَﻰ ﻋَﻠَﻰ ﻗِﺒْﻠَﺘِﻪِ ﻭَﻭَﺿَﻊَ ﻛَﻔَّﻪُ ﺍﻟْﻴُﻤْﻨَﻰ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﻛْﺒَﺘِﻪِ ﺍﻟْﻴُﻤْﻨَﻰ ﻭَﻛَﻔَّﻪُ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَﻯ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﻛْﺒَﺘِﻪِ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَﻯ ﻭَﺃَﺷَﺎﺭَ ﺑِﺄُﺻْﺒَﻌِﻪِ ﻳَﻌْﻨِﻲ ﺍﻟﺴَّﺒَّﺎﺑَﺔَ . ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻋِﻴﺴَﻰ ﻭَﻫَﺬَﺍ ﺣَﺪِﻳﺚٌ ﺣَﺴَﻦٌ ﺻَﺤِﻴﺢٌ . ﻭَﺑِﻪِ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺑَﻌْﺾُ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢِ ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﻮْﻝُ ﺍﻟﺸَّﺎﻓِﻌِﻲِّ ﻭَﺃَﺣْﻤَﺪَ ﻭَﺇِﺳْﺤَﺎﻕَ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻳَﻘْﻌُﺪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺘَّﺸَﻬُّﺪِ ﺍﻵﺧِﺮِ ﻋَﻠَﻰ ﻭَﺭِﻛِﻪِ ﻭَﺍﺣْﺘَﺠُّﻮﺍ ﺑِﺤَﺪِﻳﺚِ ﺃَﺑِﻲ ﺣُﻤَﻴْﺪٍ ﻭَﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻳَﻘْﻌُﺪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺘَّﺸَﻬُّﺪِ ﺍﻷَﻭَّﻝِ ﻋَﻠَﻰ ﺭِﺟْﻠِﻪِ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَﻯ ﻭَﻳَﻨْﺼِﺐُ ﺍﻟْﻴُﻤْﻨَﻰ
আব্বাস ইবনু সাহল আস-সায়িদী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বললেন, একবার আবূ হুমায়দ, আবূ উসায়দ, সাহল ইবনু সা’দ এবং মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামা একত্রিত হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। তখন আবূ হুমায়দ বললেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত সম্পর্কে আমি সবচেয়ে ভাল জ্ঞাত আছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাশাহ্হুদের জন্য বসেছিলেন তখন বাম পা বিছিয়ে দিয়েছিলেন এবং ডান পায়ের অগ্রভাগ (আঙ্গুলিসমূহ) কিবলার দিকে স্থাপন করেছিলেন। ডান হাতের তালু ডান হাঁটুতে এবং বাম হাতের তালু বাম হাঁটুতে স্থাপন করেছিলেন আর শাহাদাত আঙ্গুলির মাধ্যমে ইশারা করেছিলেন।
(তিরমীজি-হা/২৯৩)
:
৮ম হাদিসঃ
:
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣَﺤْﻤُﻮﺩُ ﺑْﻦُ ﻏَﻴْﻼَﻥَ، ﻭَﻳَﺤْﻴَﻰ ﺑْﻦُ ﻣُﻮﺳَﻰ، ﻭَﻏَﻴْﺮُ، ﻭَﺍﺣِﺪٍ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﺮَّﺯَّﺍﻕِ، ﻋَﻦْ ﻣَﻌْﻤَﺮٍ، ﻋَﻦْ ﻋُﺒَﻴْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ، ﻋَﻦْ ﻧَﺎﻓِﻊٍ، ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ، ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛَﺎﻥَ ﺇِﺫَﺍ ﺟَﻠَﺲَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻭَﺿَﻊَ ﻳَﺪَﻩُ ﺍﻟْﻴُﻤْﻨَﻰ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﻛْﺒَﺘِﻪِ ﻭَﺭَﻓَﻊَ ﺇِﺻْﺒَﻌَﻪُ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺗَﻠِﻲ ﺍﻹِﺑْﻬَﺎﻡَ ﺍﻟْﻴُﻤْﻨَﻰ ﻳَﺪْﻋُﻮ ﺑِﻬَﺎ ﻭَﻳَﺪُﻩُ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَﻯ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﻛْﺒَﺘِﻪِ ﺑَﺎﺳِﻄَﻬَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻪِ . ﻗَﺎﻝَ ﻭَﻓِﻲ ﺍﻟْﺒَﺎﺏِ ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﺍﻟﺰُّﺑَﻴْﺮِ ﻭَﻧُﻤَﻴْﺮٍ ﺍﻟْﺨُﺰَﺍﻋِﻲِّ ﻭَﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻭَﺃَﺑِﻲ ﺣُﻤَﻴْﺪٍ ﻭَﻭَﺍﺋِﻞِ ﺑْﻦِ ﺣُﺠْﺮٍ . ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻋِﻴﺴَﻰ ﺣَﺪِﻳﺚُ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﺣَﺪِﻳﺚٌ ﺣَﺴَﻦٌ ﻏَﺮِﻳﺐٌ ﻻَ ﻧَﻌْﺮِﻓُﻪُ ﻣِﻦْ ﺣَﺪِﻳﺚِ ﻋُﺒَﻴْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﺇِﻻَّ ﻣِﻦْ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﻮَﺟْﻪِ . ﻭَﺍﻟْﻌَﻤَﻞُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻋِﻨْﺪَ ﺑَﻌْﺾِ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢِ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭَﺍﻟﺘَّﺎﺑِﻌِﻴﻦَ ﻳَﺨْﺘَﺎﺭُﻭﻥَ ﺍﻹِﺷَﺎﺭَﺓَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺘَّﺸَﻬُّﺪِ ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﻮْﻝُ ﺃَﺻْﺤَﺎﺑِﻨَﺎ
ইবনু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতের মাঝে বসতেন তখন ডান হাত হাঁটুতে রাখতেন এবং বৃদ্ধাঙ্গুলির পার্শ্ববর্তী অঙ্গুলিটি উঠিয়ে ইশারা করতেন আর তাঁর বাম হাতটি (বাম) হাঁটুতে বিছিয়ে রাখতেন।
(তিরমীজি-হা/২৯৪)
:
৯ম হাদিসঃ
:
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﺑَﺸَّﺎﺭٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺻَﻔْﻮَﺍﻥُ ﺑْﻦُ ﻋِﻴﺴَﻰ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﻋَﺠْﻼَﻥَ، ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻘَﻌْﻘَﺎﻉِ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺻَﺎﻟِﺢٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺟُﻼً، ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺪْﻋُﻮ ﺑِﺄُﺻْﺒُﻌَﻴْﻪِ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ “ ﺃَﺣِّﺪْ ﺃَﺣِّﺪْ ” . ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﻋِﻴﺴَﻰ ﻫَﺬَﺍ ﺣَﺪِﻳﺚٌ ﺣَﺴَﻦٌ ﺻَﺤِﻴﺢٌ ﻏَﺮِﻳﺐٌ . ﻭَﻣَﻌْﻨَﻰ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺷَﺎﺭَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺑِﺄُﺻْﺒُﻌَﻴْﻪِ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻋَﺎﺀِ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﺸَّﻬَﺎﺩَﺓِ ﻻَ ﻳُﺸِﻴﺮُ ﺇِﻻَّ ﺑِﺄُﺻْﺒُﻊٍ ﻭَﺍﺣِﺪَﺓٍ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ জনৈক ব্যক্তি দুই আঙ্গুলে (তাশাহহুদে) ইশারা করত। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ একটা দ্বারা, একটা দ্বারা।
(তিরমীজি-হা/৩৫৫৭)
:
১০ম হাদিসঃ
:
ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧَﺎ ﺯَﻛَﺮِﻳَّﺎ ﺑْﻦُ ﻳَﺤْﻴَﻰ ﺍﻟﺴِّﺠْﺰِﻱُّ، – ﻳُﻌْﺮَﻑُ ﺑِﺨَﻴَّﺎﻁِ ﺍﻟﺴُّﻨَّﺔِ ﻧَﺰَﻝَ ﺑِﺪِﻣَﺸْﻖَ ﺃَﺣَﺪُ ﺍﻟﺜِّﻘَﺎﺕِ – ﻗَﺎﻝَ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺍﻟْﺤَﺴَﻦُ ﺑْﻦُ ﻋِﻴﺴَﻰ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﻧْﺒَﺄَﻧَﺎ ﺍﺑْﻦُ ﺍﻟْﻤُﺒَﺎﺭَﻙِ ﻗَﺎﻝَ ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣَﺨْﺮَﻣَﺔُ ﺑْﻦُ ﺑُﻜَﻴْﺮٍ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﻧْﺒَﺄَﻧَﺎ ﻋَﺎﻣِﺮُ ﺑْﻦُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﺍﻟﺰُّﺑَﻴْﺮِ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇِﺫَﺍ ﺟَﻠَﺲَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺜِّﻨْﺘَﻴْﻦِ ﺃَﻭْ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺑَﻊِ ﻳَﻀَﻊُ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﻛْﺒَﺘَﻴْﻪِ ﺛُﻢَّ ﺃَﺷَﺎﺭَ ﺑِﺄُﺻْﺒُﻌِﻪِ
আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দুই অথবা চার রাকাতে বসতেন। তাঁর উভয় হাত উভয় উরুর উপর রাখতেন। তার পর তাঁর আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন।
(সূনানে নাসাঈ-হা/১১৬৪, ১১৬৩, ১২৬৬-১২৭২)
:
১১তম হাদিসঃ
:
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﺑَﻜْﺮِ ﺑْﻦُ ﺃَﺑِﻲ ﺷَﻴْﺒَﺔَ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻭَﻛِﻴﻊٌ، ﻋَﻦْ ﻋِﺼَﺎﻡِ ﺑْﻦِ ﻗُﺪَﺍﻣَﺔَ، ﻋَﻦْ ﻣَﺎﻟِﻚِ ﺑْﻦِ ﻧُﻤَﻴْﺮٍ ﺍﻟْﺨُﺰَﺍﻋِﻲِّ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ـ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ـ ﻭَﺍﺿِﻌًﺎ ﻳَﺪَﻩُ ﺍﻟْﻴُﻤْﻨَﻰ ﻋَﻠَﻰ ﻓَﺨِﺬِﻩِ ﺍﻟْﻴُﻤْﻨَﻰ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻭَﻳُﺸِﻴﺮُ ﺑَﺈِﺻْﺒَﻌِﻪِ
নুমাইর আল-খুযাঈ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাতের মধ্যে তাঁর ডান হাত তাঁর ডান ঊরুর উপর রাখতে এবং তাঁর আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতে দেখেছি।
(ইবনে মাজাহ-হা/৯১১, ৯১২, ৯১৩)
:
১২তম হাদিসঃ
:
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﷺ ﺇِﺫَﺍ ﻗَﻌَﺪَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺘَّﺸَﻬُّﺪِ ﻭَﺿَﻊَ ﻳَﺪَﻩُ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮﻯ ﻋَﻠﻰ ﺭُﻛْﺒَﺘِﻪِ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮﻯ ﻭَﻭَﺿَﻊَ ﻳَﺪَﻩُ ﺍﻟْﻴُﻤْﻨﻰ ﻋَﻠﻰ ﺭُﻛْﺒَﺘِﻪِ ﺍﻟْﻴُﻤْﻨﻰ ﻭَﻋَﻘَﺪَ ﺛَﻠَﺎﺛَﺔً ﻭَﺧَﻤْﺴِﻴْﻦَ ﻭَﺃَﺷَﺎﺭَ ﺑِﺎﻟﺴَّﺒَّﺎﺑَﺔِ . ﺭَﻭَﺍﻩُ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশাহুদ পড়ার জন্য বসলে তাঁর বাম হাত বাম পায়ের হাঁটুর উপর এবং ডান হাত ডান হাঁটুর উপর রাখতেন। এ সময় তিনি তিপ্পান্নের মতো করার জন্য আঙ্গুল বন্ধ করে রাখতেন, তর্জনী দিয়ে (শাহাদাত) ইশারা করতেন।
(মিশকাতুল মাসাবীহ-হা/৯০৬, ৯০৭, ৯০৮, ৯১১, ৯১২)
:
উল্লেখিত হাদীসমূহে শুধুমাত্র আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করার কথা এসেছে। আঙ্গুল নাড়ানোর কথা আসেনি। কিন্তু আঙ্গুল নাড়বে কি না? এ ব্যাপারে কোন স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। অন্য হাদীসে তাও স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে।
যেমন-
.
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢُ ﺑْﻦُ ﺍﻟْﺤَﺴَﻦِ ﺍﻟْﻤِﺼِّﻴﺼِﻲُّ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺣَﺠَّﺎﺝٌ، ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﺟُﺮَﻳْﺞٍ، ﻋَﻦْ ﺯِﻳَﺎﺩٍ، ﻋَﻦْ ﻣُﺤَﻤَّﺪِ ﺑْﻦِ ﻋَﺠْﻼَﻥَ، ﻋَﻦْ ﻋَﺎﻣِﺮِ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﺍﻟﺰُّﺑَﻴْﺮِ، ﺃَﻧَّﻪُ ﺫَﻛَﺮَ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺸِﻴﺮُ ﺑِﺄُﺻْﺒُﻌِﻪِ ﺇِﺫَﺍ ﺩَﻋَﺎ ﻭَﻻَ ﻳُﺤَﺮِّﻛُﻬَﺎ . ﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﺟُﺮَﻳْﺞٍ ﻭَﺯَﺍﺩَ ﻋَﻤْﺮُﻭ ﺑْﻦُ ﺩِﻳﻨَﺎﺭٍ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧِﻲ ﻋَﺎﻣِﺮٌ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ ﺃَﻧَّﻪُ ﺭَﺃَﻯ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳَﺪْﻋُﻮ ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻭَﻳَﺘَﺤَﺎﻣَﻞُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَﻯ ﻋَﻠَﻰ ﻓَﺨِﺬِﻩِ ﺍﻟْﻴُﺴْﺮَﻯ
আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাহাদাত আংগুল দ্বারা ইশারা করতেন বলে উল্লেখ আছে, যখন তিনি তাশাহ্হুদ পাঠ করতেন এবং এ সময় তিনি আঙ্গুল হেলাতেন না।
অপর বর্ণনায় আছে যে, আমের (রহঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে শাহাদাত আংগুল দ্বারা ইশারা করতে দেখেছেন এবং নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাম হাত দ্বারা বাম পায়ের রান ধরতেন।
(আবু দাউদ-হা/৯৮৯; সুনানে নাসায়ী কুবরা-হা/১১৯৩, মুসনাদে আবী আওয়ানা-হা/১৫৯৪)
:
হাদীসটি সম্পর্কে মুহাদ্দিসদের মন্তব্যঃ
:
১-
:
ইমাম আব দাউদ উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করার পর কোন মন্তব্য করেননি। আর মুহাদ্দিসদের কাছে এটি প্রসিদ্ধ যে, ইমাম আবু দাউদ কোন হাদীস বর্ণনা করার পর তার ব্যাপারে কোন মন্তব্য না করার মানেই হল, উক্ত হাদীসটি তার কাছে সহীহ।
:
:
ইমাম নববী রহঃ বলেন- হাদীসটির সনদ সহীহ। {আলখুলাসা-১/৪২৮, আলমাজমূ-৩/৪৫৪}
:
:
মুহাদ্দিস আব্দুল হক শিবলী রহঃ বলেন- হাদীসটির সনদ সহীহ। {আলআহকামুস সুগরা-২৪৯}
:
:
ইবনে দাকীকুল ঈদ রহঃ বলেন- কতিপয় মুহাদ্দিসদের বক্তব্য অনুপাতে হাদীসটি সহীহ। {আলইলমাম ফি বিআহাদীসিল আহকাম-১/১৭৫}
:
:
আল্লামা ইবনুল মুলাক্কিন রহঃ বলেন- হাদীসটি সহীহ। {খুলাসাতুল বদরুল মুনীর-১/১৩৯, আলবাদরুল মুনীর-৪/১১, তুহফাতুল মুহতাজ-১/৩২৩}
:
:
শায়েখ হায়সামী রহঃ বলেন- সনদের রাবীগণ সিক্বা। {মাযমাউজ জাওয়ায়িদ-২/১৪৩}
:
:
ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন- হাদীসটি হাসান। {তাখরীজে মিশকাতুল মাসাবীহ-১/৪১১}
:
উক্ত সহীহ হাদীস দ্বারা একথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, রাসূল সাঃ তাশাহুদের সময় শুধুমাত্র আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন, আঙ্গুল নাড়াতেই থাকতেন না।
:
তবে অপর একটি হাদীসের বাহ্যিক শব্দ দ্বারা ধারণা হয় যে, রাসূল সাঃ আঙ্গুল নাড়াতে থাকতেন। হাদীসটি ওয়ায়েল বিন হুজুর রাঃ থেকে বর্ণিত। হাদীসটির শব্দ হল-
:
ﺛﻢ ﺭﻓﻊ ﺃﺻﺒﻌﻪ ﻓﺮﺃﻳﺘﻪ ﻳﺤﺮﻛﻬﺎ
:
তারপর তিনি আঙ্গুল উঠালেন, তারপর আমি দেখলাম তিনি তা নাড়াচ্ছেন। {সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-১১৯১, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৩৫৭}
:
হাদীসটি সম্পর্কে মুহাদ্দিসদের মন্তব্যঃ
:
আল্লামা ওয়াদেয়ী রহঃ বলেনঃ বাহ্যিকভাবে বুঝা যায় হাদীসটি হাসান। কিন্তু তাতে শাজ শব্দ আছে। সেটি হল আঙ্গুল নাড়ানোর বিষয়টি। {আহাদীসে মুআল্লাহ-৩৮৯}
:
তবে অন্যান্য মুহাদ্দিসীনে কেরাম, যেমন ইবনে হাজার আসকালানী, ইমাম নববী রহঃ, ইবনুল মুলাক্কিন রহঃ প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ হাদীসটির সনদকে সহীহ বলেছেন।
:
দুই হাদীসের মাঝে বৈপরীত্বের সমাধান কি?
:
আল্লামা ইমাম বায়হাকী রহঃ উভয় হাদীসের বাহ্যিক এ বৈপরীত্ব নিরসন করে বলেনঃ
:
ﻓﻴﺤﺘﻤﻞ ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﺍﻟﻤﺮﺍﺩ ﺑﺎﻟﺘﺤﺮﻳﻚ ﺍﻹﺷﺎﺭﺓ ﺑﻬﺎ ﻻ ﺗﻜﺮﻳﺮ ﺗﺤﺮﻳﻜﻬﺎ ﻓﻴﻜﻮﻥ ﻣﻮﺍﻓﻘﺎ ﻟﺮﻭﺍﻳﺔ ﺑﻦ ﺍﻟﺰﺑﻴﺮ ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺃﻋﻠﻢ
আঙ্গুল নাড়াতে থাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ইশারা করা। আঙ্গুল নাড়াতেই থাকা উদ্দেশ্য নয়। এ অর্থ নিলে এ হাদীসটি আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের রাঃ এর বর্ণনার সাথে মিলে যায়। {সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২৬১৫}
:
ইমাম বায়হাকী রহঃ যে সমাধান দিয়েছেন এটিই এ দুই হাদীসের মাঝের বাহ্যিক বৈপরীত্ব নিরসনের প্রকৃত সমাধান। অর্থাৎ ওয়ায়েল বিন হুজুর রাঃ এর হাদীস দ্বারা যে বুঝা যাচ্ছে যে, আঙ্গুল নাড়াতে ছিলেন। এর মানে হল, আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতে ছিলেন। নাড়াতেই ছিলেন উদ্দেশ্য নয়। এ ব্যাখ্যা নিলে ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ এর হাদীস এবং আব্দুল্লা বিন জুবায়ের রাঃ থেকে বর্ণিত হাদীস একই অর্থবোধক হয়ে যায়, কোন বৈপরীত্ব আর বাকি থাকে না।{বাজলুল মাযহুদ-২/১২৭}
:
স্বাভাবিক যুক্তিও একথা বলে যে, তাশাহুদের সময় বসে বসে আঙ্গুল নাড়াতে থাকবে না। কারণ এটি নামাযের খুশু খুজুর খেলাফ। তাছাড়া এভাবে আঙ্গুল নাড়াতে থাকলে পাশের জনের নামাযে মনযোগের মাঝে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। তাই একটি সুষ্পষ্ট সহীহ হাদীসের উপর আমল ছেড়ে দিয়ে একটি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ্য হাদীসের উপর আন্দাজের উপর আমল করে আঙ্গুল নাড়াতেই থাকা কোন বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
:
:
আঙ্গুল কখন ইশারা করতে হয়ঃ
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
:
১// তাশাহহুদের সময়ে ইশারা ইশারা কখন করতে হবে এ ব্যাপারে আল্লামা নববী রহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন:
.
ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺍﻟْﺈِﺷَﺎﺭَﺓُ ﺑِﺎﻟْﻤُﺴَﺒِّﺤَﺔِ ﻓَﻤُﺴْﺘَﺤَﺒَّﺔٌ ﻋِﻨْﺪَﻧَﺎ ﻟِﻠْﺄَﺣَﺎﺩِﻳﺚِ ﺍﻟﺼَّﺤِﻴﺤَﺔِ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺻْﺤَﺎﺑُﻨَﺎ ﻳُﺸِﻴﺮُ ﻋِﻨْﺪَ ﻗَﻮْﻟِﻪِ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺸَّﻬَﺎﺩَﺓِ ﻭَﻳُﺸِﻴﺮُ ﺑِﻤُﺴَﺒِّﺤَﺔِ ﺍﻟْﻴُﻤْﻨَﻰ ﻟَﺎ ﻏَﻴْﺮ
“সহীহ হাদীসের কারণে আমাদের নিকটে শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা মুস্তাহাব। আমাদের ইমামগণ বলেছেন: তাশাহহুদের মধ্যে ‘ইল্লাল্লাহ’ বলার সময়ে শুধু ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করবে; অন্য কোন আঙ্গুল দ্বারা নয়”।
(আল-মিনহায শরহুল মুসলিম: ১/২১৬, হা/২৮১৭ এর ব্যাখ্যায়, ‘বৈঠক এবং রানের ওপর হাত রাখার পদ্ধতি’ অধ্যায়)
.
উপরোক্ত হাদীস এবং আল্লামা নববী রহ.-এর ব্যাখ্যা থেকে প্রমাণিত হলো যে,
তাশাহহুদ পাঠের সময়ে ﻟَﺎﺇﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ বলার মুহূর্তে ইশারা করবে।
.
২// ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺍﻟْﺤَﻀْﺮَﻣِﻲُّ، ﺛﻨﺎ ﻋُﺒَﻴْﺪُ ﺑْﻦُ ﻳَﻌِﻴﺶَ، ﺛﻨﺎ ﻳُﻮﻧُﺲُ ﺑْﻦُ ﺑُﻜَﻴْﺮٍ، ﻋَﻦْ ﻣُﺤَﻤَّﺪِ ﺑْﻦِ ﺇِﺳْﺤَﺎﻕَ، ﻋَﻦْ ﻋِﻤْﺮَﺍﻥَ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﺃَﻧَﺲٍ، ﻋَﻦْ ﻣِﻘْﺴَﻢٍ، ﻋَﻦْ ﺧُﻔَﺎﻑِ ﺑْﻦِ ﺇِﻳﻤَﺎﺀَ ﺑْﻦِ ﺭَﺣَﻀَﺔَ ﺍﻟْﻐِﻔَﺎﺭِﻱِّ، ﻗَﺎﻝَ : ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ “ : ﺇِﺫَﺍ ﺟَﻠَﺲَ ﻓِﻲ ﺁﺧِﺮِ ﺻَﻠَﺎﺗِﻪِ ﻳُﺸِﻴﺮُ ﺑِﺄُﺻْﺒُﻌِﻪِ ﺍﻟﺴَّﺒَّﺎﺑَﺔِ ” ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛُﻮﻥَ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﻳَﺴْﺤَﺮُ ﺑِﻬَﺎ ﻭَﻛَﺬَﺑُﻮﺍ، ﻭَﻟَﻜِﻨَّﻪُ ﺍﻟﺘَّﻮْﺣِﻴﺪُ
হযরত খিফাফ বিন ঈমা রা. বলেন: রসূলুল্লাহ ﷺ যখন নামাযের শেষ বৈঠকে বসতেন তখন শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেন। মুশরিকরা বলত: সে তা দিয়ে যাদু করে। তবে মুশরিকরা এ কথা মিথ্যা বলেছে।
মূলতঃ এটা তাওহীদ।
(তবরানী কাবীর-হা/৪১৭৬; মুসনাদে আহমাদ-হা/৭১৬)
.
আল্লামা হাইসামী রহ. বলেন, ইমাম আহমদ রহ. হাদীসটি বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। তবরানী তাঁর মু’জামে কাবীরেও বর্ণনা করেছেন। আর এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই ﺛﻘﺔٌ (নির্ভরযোগ্য)
(মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ২৮৪৩, পৃষ্ঠা: ২/৩৩৩)
.
উপরুক্ত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, শেষ বৈঠকে শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করাকে রাসূলুল্লাহ স. তাওহীদ বলেছেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, তাশাহহুদের মধ্যে ইশারা ওই সময়ে করতে হয় যখন তাওহীদের কালিমা তথা ﻟَﺎﺇﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ পাঠ করা হয়।
.
৩// সাদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমার কাছ দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতিক্রম করেন, আমি তখন আমার আঙ্গুলিসমূহ দ্বারা দো‘আ করতে ছিলাম, তিনি বলেন এক আঙ্গুল দ্বারা, এক আঙ্গুল দ্বারা, তিনি শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করলেন। শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করার হিকমত হচ্ছে আল্লাহ এক, ইশারার সময় তাওহিদ ও তার ইখলাসের নিয়ত করবে, তাহলে কথা, কর্ম ও বিশ্বাসে তাওহিদের বর্হিঃপ্রকাশ ঘটবে।
(নাইলুল আওতার-২/৬৮)
.
৪// হাদিসে এসেছে,
.
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺧَﻠَﻒُ ﺑْﻦُ ﻫِﺸَﺎﻡٍ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺣَﻤَّﺎﺩُ ﺑْﻦُ ﺯَﻳْﺪٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺟَﻤْﺮَﺓَ، ﻗَﺎﻝَ ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺍﺑْﻦَ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﺡ ﻭَﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻳَﺤْﻴَﻰ ﺑْﻦُ ﻳَﺤْﻴَﻰ، – ﻭَﺍﻟﻠَّﻔْﻆُ ﻟَﻪُ – ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧَﺎ ﻋَﺒَّﺎﺩُ ﺑْﻦُ ﻋَﺒَّﺎﺩٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺟَﻤْﺮَﺓَ، ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺪِﻡَ ﻭَﻓْﺪُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟْﻘَﻴْﺲِ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻧَّﺎ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺤَﻰَّ ﻣِﻦْ ﺭَﺑِﻴﻌَﺔَ ﻭَﻗَﺪْ ﺣَﺎﻟَﺖْ ﺑَﻴْﻨَﻨَﺎ ﻭَﺑَﻴْﻨَﻚَ ﻛُﻔَّﺎﺭُ ﻣُﻀَﺮَ ﻓَﻼَ ﻧَﺨْﻠُﺺُ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﺇِﻻَّ ﻓِﻲ ﺷَﻬْﺮِ ﺍﻟْﺤَﺮَﺍﻡِ ﻓَﻤُﺮْﻧَﺎ ﺑِﺄَﻣْﺮٍ ﻧَﻌْﻤَﻞُ ﺑِﻪِ ﻭَﻧَﺪْﻋُﻮ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻣَﻦْ ﻭَﺭَﺍﺀَﻧَﺎ . ﻗَﺎﻝَ ” ﺁﻣُﺮُﻛُﻢْ ﺑِﺄَﺭْﺑَﻊٍ ﻭَﺃَﻧْﻬَﺎﻛُﻢْ ﻋَﻦْ ﺃَﺭْﺑَﻊٍ ﺍﻹِﻳﻤَﺎﻥِ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ – ﺛُﻢَّ ﻓَﺴَّﺮَﻫَﺎ ﻟَﻬُﻢْ ﻓَﻘَﺎﻝَ – ﺷَﻬَﺎﺩَﺓِ ﺃَﻥْ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺃَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺇِﻗَﺎﻡِ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻭَﺇِﻳﺘَﺎﺀِ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓِ ﻭَﺃَﻥْ ﺗُﺆَﺩُّﻭﺍ ﺧُﻤُﺲَ ﻣَﺎ ﻏَﻨِﻤْﺘُﻢْ ﻭَﺃَﻧْﻬَﺎﻛُﻢْ ﻋَﻦِ ﺍﻟﺪُّﺑَّﺎﺀِ ﻭَﺍﻟْﺤَﻨْﺘَﻢِ ﻭَﺍﻟﻨَّﻘِﻴﺮِ ﻭَﺍﻟْﻤُﻘَﻴَّﺮِ ” . ﺯَﺍﺩَ ﺧَﻠَﻒٌ ﻓِﻲ ﺭِﻭَﺍﻳَﺘِﻪِ ” ﺷَﻬَﺎﺩَﺓِ ﺃَﻥْ ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ” . ﻭَﻋَﻘَﺪَ ﻭَﺍﺣِﺪَﺓً
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবদুল কায়সের (গোত্রের) একটি প্রতিনিধি দল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খিদমতে হাযির হয়ে আরয করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা রাবী’আ গোত্রের লোক। আমাদের এবং আপনার মধ্যে কাফির মুযার গোত্র বিদ্যমান। আমরা শাহরুল হারাম ব্যতীত আপনার কাছে নিরাপদে পৌছতে পারি না। কাজেই আপনি আমাদের এমন কিছু -আদেশ দিন আমরা যে সবের আমল করতে পারি এবং আমাদের অন্যদের তৎপ্রতি আহবান জানাতে পারি।
.
রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমাদের আমি চারটি বিষয় পালনের আদেশ করছি এবং চারটি বিষয়ে নিষেধ করছি। তারপর তিনি তাদের এ সমন্ধে বর্ণনা দিলেন এবং বললেন, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। অতঃপর এর ব্যাখ্যায় তাদেরকে বললেন, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল-এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া, সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করা, যাকাত দেওয়া এবং তোমাদের গনীমতলব্ধ সামগ্রীর এক-পঞ্চমাংশ আদায় করা। আর আমি তোমাদের নিষেধ করছি দূব্বা, হানতাম, নাকীর, মুকায়্যার থেকে।
খানাফ তাঁর বর্ণনায় আরও উল্লেখ করেছেন, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি আঙ্গুল বন্ধ করেন।
(সহীহ মুসলিম-হা/২৩)
.
এ হাদিসের শেষের অংশ দ্বারা প্রমানিত হয় যে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলার পর আঙ্গুল নামিয়ে ফেলারই নিয়ম।
:
:
:
তাশাহহুদের সময় আঙ্গুল নাড়াচাড়া না করাঃ
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
আংগুল নাড়াছাড়া করা বিষয়ে আহলে হাদিসদের দলিল খন্ডনঃ
.
সূওয়ায়দ ইবনুূ নাসর (রহঃ) ওয়াইল ইবনুূ হুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (মনে মনে ) বললাম যে, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাতের প্রতি লক্ষ্য রাখব যে, তিনি কিভাবে সালাত আদায় করেন। অতএব, আমি তাঁর প্রতি লক্ষ্য বাখতে বললাম। পরে তিনি বর্ণনা করে বলেন, তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে) বসলেন এবং তাঁর বাম পা বিছিয়ে দিলেন ও তাঁর বাম হাত তাঁর উরু ও বাম হাটূর উপর রাখলেন আর তাঁর ডান উরুর উপর ডান কনুই খাড়া রাখলেন এবং তাঁর দু’টি অঙ্গুলি বন্ধ রাখলেন ও (অন্য দুটি দ্বারা) গোলাকার বৃত্ত বানালেন তারপর একটি অঙ্গূলি উঠালেন। আমি তাঁকে দেখলাম যে, তিনি সেই অঙ্গুটি নাড়াচ্ছেন আর তদ্দারা ইশারা করছেন।
(নাসাঈ হা- ১২৭১)
এই হাদিসের যে ব্যাখ্যা আহলে হাদিসরা করে এবং বাহ্যিক যে অর্থ করে তার উপর বিভিন্ন কারনে আমল করা যাবে না,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
.
প্রথমতঃ
.
এই হাদিসটি শায। তার দুটি দলিল নিম্নে দিলাম।
.
দলিল (১)
.
শায়খ শুআইব আরনাউত মুসনাদে আহমাদের তাহকীকে ওয়াইল বিন হুজর রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে আঙ্গুল নাড়াচাড়া করার অংশটিকেই বরং শাজ অভিহিত করে বলেছেন,
ﺣﺪﻳﺚ ﺻﺤﻴﺢ ﺩﻭﻥ
ﻗﻮﻟﻪ ” : ﻓﺮﺃﻳﺘﻪ ﻳﺤﺮﻛﻬﺎ ﻳﺪﻋﻮ ﺑﻬﺎ ” ﻓﻬﻮ ﺷﺎﺫ ﺍﻧﻔﺮﺩ ﺑﻪ
ﺯﺍﺋﺪﺓ – ﻭﻫﻮ ﺍﺑﻦ ﻗﺪﺍﻣﺔ – ﻣﻦ ﺑﻴﻦ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﻋﺎﺻﻢ ﺑﻦ
ﻛﻠﻴﺐ
অর্থাৎ ওয়াইল বিন হুজর রা.-এর হাদীসটি সহীহ। তবে আঙ্গুল নাড়াচাড়া করার অংশটি শাজ। কেননা আছেম বিন কুলাইবের ছাত্রদের মধ্যে যায়েদা বিন কুদামা ব্যতীত আর কেউ এ অংশটি বর্ণনা করেনি। (মুসনাদে আহমাদ-১৮৮৭০)
.
দলিল (২)
.
আল্লামা ওয়াদেয়ী রহঃ বলেনঃ বাহ্যিকভাবে বুঝা যায় হাদীসটি হাসান। কিন্তু তাতে শাজ শব্দ আছে। সেটি হল আঙ্গুল নাড়ানোর বিষয়টি।
{আহাদীসে মুআল্লাহ-৩৮৯}
দ্বিতীয়তঃ
এই হাদীসের ব্যাপারে আল্লামা ইবনে খুযাইমা রহ. সহীহ ইবনে খুযাইমা ৭১৪ নম্বর হাদীসের আলোচনায় বলেন, শুধু এই হাদীসটি ব্যতীত কোন হাদীসের মধ্যে আঙ্গুল নাড়াচাড়া করার অংশটি নেই। এটা এ হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে।
.
ইমাম বায়হাকী রহ. বলেন, আঙ্গুল নাড়াতে থাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ইশারা করা। আঙ্গুল নাড়াতেই থাকা উদ্দেশ্য নয়। এ অর্থ নিলে এ হাদীসটি আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রাযি. এর বর্ণনার সাথে মিলে যায়।
(সুনানে বায়হাকী কুবরা ২৬১৫)
.
শায়খ শুআইব আরনাউত মুসনাদে আহমাদ ১৮৮৭০ নম্বর হাদীসের আলোচনায় বলেন,
ওয়াইল বিন হুজর রাযি.-এর হাদীসটি সহীহ। তবে আঙ্গুল নাড়াচাড়া করার অংশটি শাজ (বিরল)। কেননা, আছেম বিন কুলাইবের ছাত্রদের মধ্যে যায়েদা বিন কুদামা ব্যতীত আর কেউ এঅংশটি বর্ণনা করেন নি।
.
আল্লামা ইবনে খুযাইমা রহ. ইমাম বায়হাকী রহ. এবং শায়খ শুআইব আরনাউতের মন্তব্য থেকে প্রমাণিত হলো যে, এ হাদীসে আঙ্গুল নাড়াচাড়া করার অংশটি সহীহ নয়। অথবা ওই বাক্য দ্বারা একবার নেড়ে ইশারা করা উদ্দেশ্য; বারবার নাড়াচাড়া করা উদ্দেশ্য নয়।
.
তৃতীয়তঃ
.
রাসুল (সা) ইশারার জন্য আংগুল উঠাতেন কিন্তু নাড়াতেন না তার আরেকটা দলিল।
.
মুহাম্মাদ ইবনুূু রাফি ও ইবনুূু হুমায়দ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনুূু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে বসতেন, তখন দু হাত দুই হাঁটুর উপর রাখতেন এবং ডান হাতের বৃদ্ধাংগুলির পাশের (শাহাদত) আংগুলি উঠাতেন এবং তা দ্বারা (ইংগিতে) দুঁআ করতেন। আর বাম হাত খানি বাম হাঁটুর উপর বিছিয়ে রাখতেন।
(মুসলিম১১৮৭)
.
এই হাদিসে স্পষ্ট যে রাসুল (সা) কেবল দুয়া করার জন্য আংগুল ঊটাতেন কিন্তু নাড়াতেন না।
.
বরং অন্য হাদিসে আছে তা অর্ধনমিত অবস্থায় উচিয়ে রাখতেন। তা নিম্নের হাদিস দ্বারা প্রমানিত।
.
আবদুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ (রহঃ) হযরত মালিক ইবন নুমায়ের খুযায়ী (রহঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ আমি নবী করীম (সাঃ) কে তাঁর ডান হাত ডান পায়ের রানের উপর রাখতে দেখেছি এবং এ সময় তিনি তাঁর শাহাদাত আংগুলি অর্ধনমিত অবস্থায় উচিয়ে রাখেন। (মুসনাদে আহমাদ হা নং ৭৪৪)
মুসনাদে আহমাদে এই হাদিসটি বর্নিত হওয়ার পরে নিচে লিখা আছে এই হাদিসটি সহিহ এবং ইবনে মাযাহ, নাসাঈ ও আবু দাউদের কাছেও হাদিসটি সহিহ।
.
চতুর্থতঃ
.
উপরিউক্ত হাদিসটিতে কেবল নাড়ানোর মুহুর্তটা তুলে ধরা হয়েছে। সর্বাবস্থায় নাড়াতেন তা নয়।
আমরা আহলে হাদিস ভাইদের দলিলের শেষ অংশটা খেয়াল করি
তাহলেই তা স্পস্ট হয়ে যাবে ইংশায়াল্লাহ।
.
“আমি তাঁকে দেখলাম যে, তিনি সেই অঙ্গুটি নাড়াচ্ছেন আর তদ্দারা ইশারা করছেন।”
(নাসাঈ ১২৭১)
যারা ব্যাকরণ ভাল জানেন, আশা করি তারা এখান থেকে স্পষ্ট বুজেছেন যে , এই বাক্যটা দিয়ে কেবল ইশারা (বা দোয়া) করার জন্য আংগুল ঊটানোর মুহুর্তটা তুলে ধরা হয়েছে। বার বার ইশারা করা নয়।
.
নিচের হাদিসটিও এদিকেই ইংগিত করে
.
মুহাম্মাদ ইবনুূ আব্দুল্লাহ ইবনুূ মুবারক মুখাররামি (রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদিন) আমার কাছ দিয়ে গেলেন। তখন আমি আমার সমুদয় অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, তুমি এক অঙ্গূলি দ্বারা ইশারা করবে, এক অঙ্গূলি দ্বারা ইশারা করবে এবং তিনি তর্জনি দ্বারা ইশারা করলেন।
( নাসাঈ ১২৭৬)
এখানে” ইশারা করছিলাম” দ্বারা কেবল ঊঠানোর মুহুর্তটা বুজাচ্ছি সর্বাবস্থায় এমন করছিলেন তা নয়,। এবং রাসুল (সা) শিখিয়ে দিলেন এক আংগুল দ্বারা ইশারা করবে,,,,,, করতেই থাকবে না।
.
আর এই ব্যাখ্যা আমি নয় স্বয়ং বাইহাকি (রহ) করে গেছেন।
.
বাইহাকি (রহ) বলেন,,
নাসায়ি: (১২৭১), আবু দাউদ: (৯৮৯) | দুই হাদিসের মধ্যে কোন বৈপরিত্ব নেই। কারণ না নাড়ানোর অর্থ হচ্ছে সর্বদা নাড়াতেন না, আবার নাড়ানোর অর্থ হচ্ছে দো‘আর সময় নাড়াতেন।
বায়হাকি: (২/১৩২ , হাদীস নং-২৬১৫}
.
বাজলুল মাযহুদ এ আছে,,
ওয়ায়েল বিন হুজুর রাঃ এর হাদীস দ্বারা যে বুঝা যাচ্ছে যে, আঙ্গুল নাড়াতে ছিলেন। এর মানে হল, আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতে ছিলেন। নাড়াতেই ছিলেন উদ্দেশ্য নয়। এ ব্যাখ্যা নিলে ওয়াইল বিন হুজুর রাঃ এর হাদীস এবং আব্দুল্লা বিন জুবায়ের রাঃ থেকে বর্ণিত হাদীস একই অর্থবোধক হয়ে যায়, কোন বৈপরীত্ব আর বাকি থাকে না।{বাজলুল মাযহুদ-২/১২৭}
.
পঞ্চমতঃ
.
নামাজের মধ্যে একাগ্রতা নষ্ট হয়। কেননা একজনের পাশে আরেকজন জন যখন আংগুল দিয়ে কিলবিল করে up and down করবে তখন নিঃসন্দেহে পাশের জনের মনোযোগ ওই ব্যাক্তির দিকে চলে যাবে। অথচ সহিহ হাদিসে বলা হয়েছে দৃষ্টি যেন নিজের আংগুলের (ইশারার) বাইরে না যায়।
.
সর্বশেষ কথা হল, একটা অস্পষ্ট হাদিসকে কেন্দ্র করে সমস্ত সহিহ হাদিসের বিরোধিতা করা চরম পর্যায়ের ফেতনাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়।
:
:
:
তাশাহুদে আঙ্গুল ইশারা করার সময় দৃষ্টি থাকবে আঙ্গুলের দিকে
÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷÷
.
সলাতের সময় দৃষ্টি সিজদার স্থানে থাকবে। তবে তাশাহহুদে বসা অবস্থায় যখন ইশারা করতে হবে তখন দৃষ্টি রাখতে হবে আঙ্গুলের ইশারার দিকে।
.
১ম দলিলঃ
.
রাসূল (ছাঃ) যখন তাশাহহুদে বসতেন, তখন …তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন এবং তাঁর দৃষ্টি আঙ্গুলের ইশারা বরাবর থাকত তার বাইরে যেত না।
(আবু দাউদ হা/৯৮৮, ৯৯০;

প্রশ্ন: ৩৯১ : মূর্তি ও ভাস্কর্য্য এর সাদৃশ্য এবং পার্থক্য ।

 উত্তর :

গাঠনিক দিক থেকে এদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু, বলা হয়ে থাকে, উদ্দেশ্যের দিক থেকে পার্থক্য আছে। তবে গভীর ভাবে উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ করলে আসলে পার্থক্য বের করাটা শেষ পর্যন্ত মুশকিল হয়ে পড়ে। মূর্তি বানানো হয় পূজার উদ্দেশ্যে । আর ভাস্কর্য বানানো হয়, শ্রদ্ধা সম্মান থেকে। প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি যার ভাস্কর্য বাানাচ্ছেন, তাকে সম্মানের যোগ্য শ্রদ্ধার যোগ্য মনে করছেন, কিন্তু আশংকা হচ্ছে, এই শ্রদ্ধা, সম্মান আপনার অবচেতন মনে কখন পূজায় রূপান্তরিত হয়ে গেছে আপনি টের পাবেন না। আরো অগ্রসর হয়ে হয়তো কেউ বলে দিতে পারে, যিনি সম্মানের যোগ্য, যিনি শ্রদ্ধার যোগ্য, তিনি পূজনীয় হবেন না কেন ? অতএব, কেউ এরূপ প্রশ্ন করলে তখন কি করবেন ? কুরআনে এসেছে, তোমরা ব্যাভিচার এর নিকটবর্তী হয়ো না। অর্থাৎ, ব্যভিচার যেমন হারাম তেমনি ব্যাভিচার এর নিকবর্তী হওয়াও হারাম। কারণ, আপনি যখন ব্যাভিচারের নিকটবর্তী হবেন, তখন তাতে জড়িয়ে পড়ার প্রবল আশংকা রয়েছে। তেমনি মূর্তি পূজার প্রাথমিক ধাপ এবং প্রধান উপকরণ - - ভাস্কর্য ও শ্রদ্ধার পাত্র হওয়া -- এই দুটি উপাদান তো বিদ্যমান হয়েই গেল, শুধু বাকী রয়ে গেল পূজা। কিন্তু, অসম্ভব নয় যে , এই শ্রদ্ধা কখন পূজায় রূপান্তরিত হয়ে গেছে আপনি টের পাননি। অতএব, উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে পার্থক্য আছে -- এরূপ কথা যতই বলা হোক না কেন, সেসব যুক্তি আমলে নেওয়ার কোন অবকাশ নেই, বরং, উভয়ই পরিত্যাজ্য। আরো কথা হলো, সাদৃশ্য , মূর্তি ইত্যাদি তৈরী করার ব্যাপারে ইসলামে আলাদাভাবে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আছে।


فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْاَوْثَانِ وَ اجْتَنِبُوْا قَوْلَ الزُّوْرِۙ۝۳۰

তোমরা পরিহার কর অপবিত্র বস্ত্ত অর্থাৎ মূর্তিসমূহ এবং পরিহার কর মিথ্যাকথন। -সূরা হজ্জ : ৩০


وَ قَالُوْا لَا تَذَرُنَّ اٰلِهَتَكُمْ وَ لَا تَذَرُنَّ وَدًّا وَّ لَا سُوَاعًا ۙ۬ وَّ لَا یَغُوْثَ وَ یَعُوْقَ وَ نَسْرًاۚ۝۲۳

এবং তারা বলেছিল, তোমরা কখনো পরিত্যাগ করো না তোমাদের উপাস্যদেরকে এবং কখনো পরিত্যাগ করো না ওয়াদ্দ, সুওয়া, ইয়াগূছ, ইয়াঊক ও নাসরকে। -সূরা নূহ : ২৩

কুরআন মজীদে মূর্তি ও ভাস্কর্যকে পথভ্রষ্টতার কারণ হিসেবে চিহ্ণিত করা হয়েছে। এক আয়াতে এসেছে-

رَبِّ اِنَّهُنَّ اَضْلَلْنَ كَثِیْرًا مِّنَ النَّاسِ ۚ

ইয়া রব, এরা (মূর্তি ও ভাস্কর্য) অসংখ্য মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে! -সূরা ইবরাহীম : ৩৬


কুরআনের ভাষায় মূর্তি হল বহুবিধ মিথ্যার উৎস। ইরশাদ হয়েছে-

اِنَّمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ اَوْثَانًا وَّ تَخْلُقُوْنَ اِفْكًا ؕ

তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে উপাসনা কর (অসার) মূর্তির এবং তোমরা নির্মাণ কর মিথ্যা। -সূরা আনকাবুত : ১৭


দীস শরীফেও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূর্তি ও ভাস্কর্য সম্পর্কে পরিষ্কার বিধান দান করেছেন।

১. হযরত আমর ইবনে আবাসা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন আল্লাহ তাআলা আমাকে প্রেরণ করেছেন আত্মীয়তার সর্ম্পক বজায় রাখার, মূর্তিসমূহ ভেঙ্গে ফেলার, এবং এক আল্লাহর ইবাদত করার ও তাঁর সঙ্গে অন্য কোনো কিছুকে শরীক না করার বিধান দিয়ে। -সহীহ মুসলিম হা. ৮৩২

২. আবুল হাইয়াজ আসাদী বলেন, আলী ইবনে আবী তালেব রা. আমাকে বললেন, আমি কি তোমাকে ওই কাজের দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করব না, যে কাজের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রেরণ করেছিলেন? তা এই যে, তুমি সকল প্রাণীর মূর্তি বিলুপ্ত করবে এবং সকল সমাধি-সৌধ ভূমিসাৎ করে দিবে। অন্য বর্ণনায় এসেছে,... এবং সকল চিত্র মুছে ফেলবে। -সহীহ মুসলিম হা. ৯৬৯

৩. আলী ইবনে আবী তালেব রা. বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি জানাযায় উপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আছে, যে মদীনায় যাবে এবং যেখানেই কোনো প্রাণীর মূর্তি পাবে তা ভেঙ্গে ফেলবে, যেখানেই কোনো সমাধি-সৌধ পাবে তা ভূমিসাৎ করে দিবে এবং যেখানেই কোনো চিত্র পাবে তা মুছে দিবে? আলী রা. এই দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্ত্তত হলেন। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে কেউ পুনরায় উপরোক্ত কোনো কিছু তৈরী করতে প্রবৃত্ত হবে সে মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি নাযিলকৃত দ্বীনকে অস্বীকারকারী। -মুসনাদে আহমাদ হা. ৬৫৭

এই হাদীসগুলো থেকে স্পষ্ট জানা যাচ্ছে যে, যে কোনো প্রাণী মূর্তিই ইসলামে পরিত্যাজ্য এবং তা বিলুপ্ত করাই হল ইসলামের বিধান। আর এগুলো নির্মাণ করা ইসলামকে অস্বীকারকারী সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্য।

৪. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-

إِنَّ مِنْ أَشَدِّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمُصَوِّرُوْنَ.

প্রতিকৃতি তৈরিকারী (ভাস্কর, চিত্রকর) শ্রেণী হল ওইসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে কিয়ামত-দিবসে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে। -সহীহ বুখারী হা. ৫৯৫০

৫. আবু হুরায়রা রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন-

إِنَّ أَصْحَابَ هَذِهِ الصُّوَرِ يُعَذَّبُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَيُقَالُ لَهُمْ : أَحْيُوْا مَا خَلَقْتُمْ.

ওই লোকের চেয়ে বড় জালেম আর কে যে আমার সৃষ্টির মতো সৃষ্টি করার ইচ্ছা করে। তাদের যদি সামর্থ্য থাকে তবে তারা সৃজন করুক একটি কণা এবং একটি শষ্য কিংবা একটি যব! -সহীহ বুখারী হা. ৫৯৫৩

এই হাদীসটি বর্তমান সময়ের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, যখন ভাস্কর-চিত্রকর, এমনকি গল্পকার ও ঔপন্যাসিকদেরকে পর্যন্ত স্রষ্টা বলতে এবং তাদের কর্মকান্ডকে সৃষ্টি বলতে সামান্যতমও দ্বিধাবোধ করা হয় না। কোনো কোনো আলোচকের আলোচনা থেকে এতটা ঔদ্ধত্যও প্রকাশিত হয় যে, যেন তারা সত্যি সত্যিই স্রষ্টার আসনে আসীন হয়ে গিয়েছেন!

সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার হাফেয ইবনে হাজার আসকানী রাহ. লেখেন- এই ভাস্কর ও চিত্রকর সর্বাবস্থাতেই হারাম কাজের মধ্যে লিপ্ত। আর যে এমন কিছু নির্মাণ করে যার পূজা করা হয় তার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। আর যে স্রষ্টার সামঞ্জস্য গ্রহণের মানসিকতা পোষণ করে সে কাফের । -ফতহুল বারী ১০/৩৯৭

৬. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. ও আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ خَلْقًا كَخَلْقِيْ؟ فَلْيَخْلُقُوْا ذَرَّةً وَلْيَخْلُقُوْا حَبَّةً أَوْ لِيَخْلُقُوْا شَعِيْرَةً.

এই প্রতিকৃতি নির্মাতাদের (ভাস্কর, চিত্রকরদের) কিয়ামত-দিবসে আযাবে নিক্ষেপ করা হবে এবং তাদেরকে সম্বোধন করে বলা হবে, যা তোমরা সৃষ্টি করেছিলে তাতে প্রাণসঞ্চার কর!

-সহীহ বুখারী হা. ৭৫৫৭, ৭৫৫৮;

৭. আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে কেউ দুনিয়াতে কোনো প্রতিকৃতি তৈরি করে কিয়ামত-দিবসে তাকে আদেশ করা হবে সে যেন তাতে প্রাণসঞ্চার করে অথচ সে তা করতে সক্ষম হবে না। -সহীহ বুখারী হা. ৫৯৬৩

৮. আউন ইবনে আবু জুহাইফা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদ ভক্ষণকারী ও সুদ প্রদানকারী, উল্কি অঙ্কণকারী ও উল্কি গ্রহণকারী এবং প্রতিকৃতি প্রস্ত্ততকারীদের (ভাস্কর, চিত্রকরদের) উপর লানত করেছেন। -সহীহ বুখারী হা. ৫৯৬২

এই হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে,ভাস্কর্য নির্মাণ অত্যন্ত কঠিন কবীরা গুনাহ। আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা কুফরীরও পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

মূর্তি ও ভাস্কর্যের বেচাকেনাও হাদীস শরীফে সম্পূর্ণ হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে।

৯. হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের সময় মক্কায় থাকা অবস্থায় এই ঘোষণা দিয়েছেন যে, আল্লাহ ও তার রাসূল মদ ও মূর্তি এবং শুকর ও মৃত প্রাণী বিক্রি করা হারাম করেছেন। -সহীহ বুখারী হা. ২২৩৬

১০. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসুস্থতার সময় তাঁর জনৈকা স্ত্রী একটি গির্জার কথা উল্লেখ করলেন। গির্জাটির নাম ছিল মারিয়া। উম্মে সালামা ও উম্মে হাবীবা ইতোপূর্বে হাবাশায় গিয়েছিলেন। তারা গির্জাটির কারুকাজ ও তাতে বিদ্যমান প্রতিকৃতিসমূহের কথা আলোচনা করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শয্যা থেকে মাথা তুলে বললেন, ওই জাতির কোনো পুণ্যবান লোক যখন মারা যেত তখন তারা তার কবরের উপর ইবাদতখানা নির্মাণ করত এবং তাতে প্রতিকৃতি স্থাপন করত। এরা হচ্ছে আল্লাহর নিকৃষ্টতম সৃষ্টি।-সহীহ বুখারী  হা. ১৩৪১ সহীহ মুসলিম হা. ৫২৮ নাসায়ী হা. ৭০৪

১১. আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, (ফতহে মক্কার সময়) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বায়তুল্লাহয় বিভিন্ন প্রতিকৃতি দেখলেন তখন তা মুছে ফেলার আদেশ দিলেন। প্রতিকৃতিগুলো মুছে ফেলার আগ পর্যন্ত তিনি তাতে প্রবেশ করেননি। -সহীহ বুখারী হা. ৩৩৫২

দৃষ্টান্তস্বরূপ এগারোটি হাদীস পেশ করা হল। আলোচিত প্রসঙ্গে ইসলামী বিধান বোঝার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। কুরআন মজীদে যে কোনো ধরনের মূর্তির সংশ্রব ও সংশ্লিষ্টতা পরিহারের যে আদেশ মুমিনদেরকে করা হয়েছে সে সম্পর্কে একটা বিস্তারিত ধারণাও উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে জানা গেল।

কুরআন ও সুন্নাহর এই সুস্পষ্ট বিধানের কারণে মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ, সংগ্রহ, সংরক্ষণ ইত্যাদি সকল বিষয়ের অবৈধতার উপর গোটা মুসলিম উম্মাহর ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

দেখুন : উমদাতুল কারী ১০/৩০৯; ফাতহুল বারী ১০/৪০১; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম : ৪/১৫৯ #

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...