প্রশ্ন: ৩২৯: ইসলামী মীরাস বন্টন তথা ফারায়েয এর সূত্র জানতে চাই ।

ফরায়েয

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পরিভ্রমণে ঝাঁপ দিনঅনুসন্ধানে ঝাঁপ দিন
ফারায়েয (আরবি: فَرَائِضُ) হচ্ছে ইসলামী উত্তরাধিকার আইন। এটি ইসলামী ফিকহ শাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

ফারায়েয-এর পরিচয়[সম্পাদনা]

ফরায়েয (فَرَائِضُ) শব্দটি আরবি فَرِيْضَةٌ এর বহুবচন। শাব্দিক অর্থ হচ্ছে: ফরয করা হয়েছে এমন বিষয়, আবশ্যকীয় বিষয়, অকাট্যভাবে প্রমাণিত বিষয়। ইসলামী পরিভাষায় فَرَائِض বলা হয়, মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার সম্পত্তিকে। আর যে বণ্টন পদ্ধতির আলোকে উত্তারাধিকার সম্পত্তি বণ্টন করা হয় তাকে শরীয়তের পরিভাষায় عِلْمُ الْفَرَائِض বলা হয়।
আল্লামা আইনি রহ. বলেন, উত্তরাধিকার সম্পত্তিকে ইসলামে فَرَائِض নামে নামকরণ করার কারণ হল, শরীয়তে উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন নীতি আল্লাহ তা’লা বিশেষভাবে ফরয করেছেন এবং প্রত্যকের অংশ কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত এবং এর মাঝে কমবেশি করার কোন সুযোগ নেই। তাই উত্তরাধিকার সম্পত্তিকে শরীয়তে فَرَائِض বলা হয়।[১][২]

ফারায়েয শাস্ত্রের গুরুত্ব ও ফযীলত[সম্পাদনা]

ইসলামী শরীয়তে উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন পদ্ধতিকে পরিভাষায় عِلْمُ الْفَرَائِض বা ফারায়েয শাস্ত্র বলা হয়। শরীয়তে عِلْمُ الْفَرَائِض একটি স্বতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্র। এ কারণেই عِلْمُ الْفَرَائِض নিজে শেখা এবং অন্যকে শেখানোর গুরুত্ব যেমন আছে; তেমনিভাবে এর অনেক ফযীলতও রয়েছে। নিম্নে عِلْمُ الْفَرَائِض এর গুরুত্ব এবং ফযীলত সংক্রান্ত কিছু হাদীস উল্লেখ করা হল:
(১) ইবনে মাজাহ এবং ইমাম দারে ক্বুতনী রহ. হযরত আবু হুরায়রা রা. এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে,
عن أبى هريرة رضـ أنَّ النبي صلى الله عليه و سلم قال: تَعَلَّمُوا الْفَرَائِضَ وَعَلِّمُوهَ النَّاسَ فَإِنَّهُ نِصْفُ الْعِلْمِ وَهُوَ أَوَّلُ شَيْءٍ يُنْسَى وَهُوَ أَوَّلُ شَيْءٍ يُنْتَزَعُ مِنْ أُمَّتِي.
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. ইরশাদ করেছন, তোমরা নিজের عِلْمُ الْفَرَائِض শেখো এবং লোকদেরকেও শেখাও। কারণ তা জ্ঞানের অর্ধেক। আর এই জ্ঞানকেই সর্বপ্রথম বিস্মৃত করে দেয়া হবে এবং একেই সর্বপ্রথম (মানুষের মন থেকে) উঠিয়ে নেয়া হবে।[৩][৪][৫]
(২) ইমাম তিরমিযি, ইমাম নাসাঈ, ইমাম আহমাদ, ইমাম হাকিম রহ. সহ অনেকেই ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণনা করেন যে,
عن ابن مسعودٍ رضـ عن النبي صلى الله عليه و سلم قال: تَعَلَّمُوا الْفَرَائِضَ وَعَلِّمُوهَا النَّاسَ فَإِنِّي امْرُؤٌ مَقْبُوضٌ ، وَإِنَّ الْعِلْمَ سَيُقْبَضُ و تَظْهَرُ الفِتَنُ حَتَّى يَخْتَلِفَ الِاثْنَانِ فِي الْفَرِيضَةِ لَا يَجِدَانِ مَنْ يَقْضِيْهَا.
অর্থ: রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, তোমরা নিজের عِلْمُ الْفَرَائِض শেখো এবং লোকদেরকেও শেখাও। কারণ আমাকে অচিরেই উঠিয়ে নেয়া হবে। আর একসময় ইলমকেও উঠিয়ে নেয়া হবে এবং বিভিন্ন ফেতনার আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তখন দুই ব্যক্তি তাদের উত্তরাধিকার সম্পদ নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হবে কিন্তু তারা এ বিষয়ে শরয়ী সমাধান দেয়ার মত লোক খোঁজে পাবে না। [৬][৭][৮]
(৩) ইমাম ত্ববরানী রহ. আবু বাকরাহ রা. এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে,
مَا رَوَاهُ أبو بَكْرَةَ مَرْفُوعًا: تَعَلَّمُوا الْقُرْآنَ وَالْفَرَائِضَ وَعَلِّمُوهَا النَّاسَ ، أَوْشَكَ أَنْ يَأْتِيَ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَخْتَصِمُ الرَّجُلَانِ فِي الْفَرِيضَةِ فَلَا يَجِدَانِ مَنْ يَفْصِلُ بَيْنَهُمَا.
অর্থ: রাসূল সা. ইরশাদ করেছন, তোমরা কোরআন এবং عِلْمُ الْفَرَائِض নিজে শিখ এবং লোকদেরকে শেখাও। অদূর ভবিষ্যতে লোকদের কাছে এমন এক সময় আসবে যখন দুই ব্যক্তি তাদের উত্তরাধিকার সম্পদ নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হবে কিন্তু তারা এ বিষয়ে শরয়ী সমাধান দেয়ার মত লোক খোঁজে পাবে না। [৯]

ফরায়েয শাস্ত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

প্রতিটি ধর্ম এবং সমাজ ব্যবস্থায় উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই ইসলামী শরীয়তে উত্তারাধিকার সম্পত্তির বণ্টন পদ্ধতির বিষয়টি বেশ গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়েছে। আত্মীয়দের মাঝে এই সম্পত্তি কিভাবে বণ্টন হবে এবং কার অংশ কতটুকু হবে তার মৌলিক আলোচনা আল্লাহ তা’লা স্বয়ং কুরআনে অবতীর্ণ করেছেন এবং রাসূল সা. প্রতিটি বিষয়ে বিশদ বিবরণ হাদীসে উল্লেখ করেছেন। ফলে ইসলামী শরীয়তে عِلْمُ الْفَرَائِض বা উত্তরাধিকার সম্পদ বণ্টন পদ্ধতি পৃথিবীর অন্য সকল ধর্ম এবং মতবাদের বণ্টন পদ্ধতি থেকে সবদিকে থেকে মানুষের জন্য উপযোগী এবং সমতাভিত্তিক ও ভারসাম্যপূর্ণ একটি পদ্ধতি। নিচে ইসলামী শরীয়তের উত্তরাধিকার সম্পদের বণ্টন পদ্ধতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হল:
১ম বৈশিষ্ট্য : মৃত ব্যক্তির সকল সম্পদই উত্তরাধিকার সম্পত্তি।
ইসলামী উত্তরাধিকা বণ্টন পদ্ধতির প্রথম এবং অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল: মৃত ব্যক্তি যত ধরনের সম্পদ রেখে গিয়েছে সকল সম্পদই ইসলামী শরীয়তে মিরাসের সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়। চাই সেটা মৃত ব্যক্তি ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিসপত্র হোক; যেমন: মৃতের ব্যবহারে পোশাক-আশাক ইত্যাদি, অথবা লাভজনক কোন ব্যবসায়িক সম্পদ হোক; যেমন: জমি, বাড়ি, বাগান, অর্থ-সম্পদ ইত্যাদি। ইসলামী শরীয়তে এই ধরনের সকল সম্পদই উত্তরাধিকা সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়।
কিন্তু ইসলামের পূর্ব থেকেই এমন অনেক ধর্ম এবং মতবাদ আছে যেখানে মৃত ব্যক্তির ব্যক্তিগত জিনিসপত্রকে মিরাসের সম্পদ হিসেবে গণ্য করে না। তারা এগুলোকে হয়ত কবরের সাথে দাফন করে দেয় কিংবা স্মৃতি হিসেবে রেখে দেয়। ফলে এতে অনেক সময় ওয়ারিশরা বিপুল পরিমাণ সম্পদ থেকে বঞ্চিত হয়।
২য় বৈশিষ্ট্য : উত্তরাধিকার সম্পদ শুধুমাত্র আত্মীয়দের মাঝে বণ্টিত হবে; অনাত্মীয়দের মাঝে নয়।
ইসলামী উত্তরাধিকা বণ্টন পদ্ধতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল: শরীয়তে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে শুধুমাত্র আত্মীয়দের অংশ আছে এবং আত্মীয়রা যতক্ষণ জীবিত আছে ততক্ষণ অনাত্মীয় কোন ব্যক্তি মৃতের যতই কাছের হোক তাদের জন্য উত্তরাধিকার সম্পদে কোন অংশ থাকবে না। কিন্তু অনেক ধর্ম এবং মতবাদ এমন আছে যারা মৃতের প্রতিবেশী এবং ঘনিষ্ট বন্ধু-বান্ধবের জন্যও মিরাসের সম্পদের একটি অংশ নির্ধারণ করে থাকে। ফলে প্রকৃত হকদার অনেক আত্মীয়-স্বজন উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
৩য় বৈশিষ্ট্য : উত্তরাধিকার সম্পদে নারী-পুরুষ, বড়-ছোট সকলের অংশই নির্ধারিত।
ইসলামী উত্তরাধিকা বণ্টন পদ্ধতির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল: শরীয়তে নারী-পুরুষ, বড়-ছোট সকলের জন্যই তাদের অংশ অনুপাতে উত্তরাধিকার সম্পদ নির্ধারণ করেছে। তাই শরীয়তে শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণে কিংবা ছোট হওয়ার কারণে তাদের প্রাপ্য অংশ থেকে বঞ্চিত করা কিংবা তাদেরকে কম দেয়ার কোন সুযোগ নেই।
কিন্তু ইসলামের আগমনের পূর্বে জাহেলী সমাজে নারী এবং ছোট সন্তানের জন্য উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে কোন অংশ ছিল না। তাদেরকে উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হত।
৪র্থ বৈশিষ্ট্য : উত্তরাধিকার সম্পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের মাপকাঠি হল নিকটাত্মীয়তা; বয়সে বড় হওয়া নয়।
ইসলামী উত্তরাধিকা বণ্টন পদ্ধতির আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল: শরীয়তে কে কতটুকু অংশ পাবে তার মাপকাঠি হল মৃতের নিকটাত্মীয়তা। অর্থাৎ যে মৃতব্যক্তির যতবেশি নিকটাত্মীয় হবে সে ততবেশী মিরাস পাবে। এক্ষেত্রে বয়সে বড়-ছোট হওয়ার মাঝে শরীয়ত কোন তারতম্য করে নি।
কিন্তু খৃষ্টধর্মের বণ্টন পদ্ধতিতে বড়-ছোটর মাঝে তারতম্য করা হয়ে থাকে। এতে অনেক সময় মৃতের দূরের আত্মীয়রা শুধুমাত্র বয়সে বড় হওয়ার কারণে বেশি পরিমাণ মিরাস পায় আর নিকটাত্মীয় হওয়া সত্ত্বেও বয়সে ছোট হওয়ার কারণে সম্পদ কম পায়।
৫ম বৈশিষ্ট্য : উত্তরাধিকার সম্পত্তি সম্পূর্ণরূপে বণ্টন করা; শরীকানাধীন কোন সম্পদ না রাখা।
ইসলামী উত্তরাধিকা বণ্টন পদ্ধতির আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল: শরীয়তে মৃতের সকল সম্পদই ওয়ারিশেদর মাঝে সম্পূর্ণরূপে বণ্টন করে দেয়া হবে। কোন সম্পত্তিই শরিকানাধীন রাখা হবে না।
কিন্তু হিন্দু ধর্ম এবং প্রাচীন রোমক এবং গ্রীক সমাজে সকল সম্পত্তিকে সম্পূর্ণরূপে বণ্টন করা হত না। বরং জমি এবং বসবাসের বাড়ি ইত্যাদি সকলে ওয়ারিশদের মাঝে শরিকানাধীন রেখে দেয়া হত। ফলে পরবর্তীতে এগুলো নিয়ে বিভিন্ন ঝগড়া-বিবাদ, মামলা-মুকাদ্দামা ইত্যাদির সূচনা হত। তাই ইসলাম এই প্রথাকে বিলুপ্ত করে দিয়েছে।[১০]

ফারায়েযের বণ্টন-পদ্ধতি[সম্পাদনা]

ইসলামী শরীয়তে মৃত ব্যক্তির সকল ওয়ারিশদেরকে তিনভাগে ভাগ করা হয়:
(‌ক) أَصْحَابُ الفُرُوْض বা নির্ধারিত অংশের হকদার।
(খ) العَصَبَة বা অবশিষ্টভোগী।
(গ) أوْلُوْ الأَرْحَام বা মৃতের অন্যান্য নিকটাত্মীয়।
নিচে ধারাবাহিকভাবে এই তিন শ্রেণী ওয়ারিশদের পরিচয় এবং তাদের মাঝে উত্তরাধিকার সম্মত্তি বণ্টনের প্রক্রিয়া উল্লেখ করা হল:
এক. أصحاب الفروض বা নির্ধারিত অংশের হকদার: কুরআনে কারীমে যে সকল ওয়ারিশদের জন্য মিরাসের অংশ নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে তাদেরকে أَصْحَابُ الفُرُوْض বলা হয়। মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন, ঋণ পরিশোধ এবং ওসিয়ত পূরণের পর যে সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকবে তা সর্বপ্রথম أَصْحَابُ الفُرُوْض এর মাঝে তাদের নির্দিষ্ট অংশ অনুযায়ী বণ্টন করা হবে। এরপর যদি কোন সম্পদ অবশিষ্ট থাকে তাহলে পরবর্তী দু শ্রেণী পর্যায়ক্রমে পাবে।
أَصْحَابُ الفُرُوْض হল মোট ১২ জন। তন্মধ্যে ৪ জন পুরুষ এবং ৮ জন মহিলা। পুরুষ ৪ জন হল:
১. পিতা। 
২. স্বামী।
৩. দাদা (দাদার পিতা, তার পিতা এভাবে ঊর্ধ্বতন পুরষ দাদার অন্তর্ভুক্ত)।
৪. বৈপিত্রেয় ভাই।
আর নারী ৮ জন হল:
১. মা। 
২. স্ত্রী।
৩. আপন কন্যা। 
৪. পুত্রের কন্যা (পুত্রের পুত্রের কন্যা- এভাবে পুরুষযোগে অধস্তন সকল মেয়েই পুত্রের কন্যার অন্তর্ভুক্ত)।
৫. আপন বোন। 
৬. বৈমাত্রেয় বোন।
৭. বৈপিত্রেয় বোন।
৮. দাদী ও নানী (পিতার মা, পিতামহের মা- এভাবে পুরুষযোগে ঊর্ধ্বতন সকল দাদী এবং মাতার মা, মাতার নানী- এভাবে নারীযোগে ঊর্ধ্বতন সকল নানী যথাক্রমে দাদী এবং নানীর অন্তর্ভুক্ত) ।
নিম্নে أَصْحَابُ الفُرُوْض এর প্রত্যেকের সম্পত্তির পরিমাণ এবং কোন অবস্থায় কতটুকু পাবে তা উল্লেখ্য করা হলো:
১। স্বামীঃ স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামীর দুই অবস্থা হতে পারে:
(ক) যদি স্ত্রীর পক্ষ থেকে তার কোন ঔরষজাত সন্তান না থাকে তাহলে সম্পত্তির ১/২ অংশ (অর্ধেক) পাবেন।
(খ) আর যদি ঔরষজাত কোন সন্তান থাকে তাহলে ১/৪ অংশ (এক চতুর্থাংশ) পাবেন।
৪। পিতাঃ সন্তান মারা গেলে পিতার তিন অবস্থা:
(ক) যদি মৃত সন্তানের কোন পুত্র (আপন পুত্র বা পুত্রের পুত্র- এভাবে অধস্তন কোন পুরুষ) থাকে তাহলে পিতা সম্পত্তির ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবেন।
(খ) যদি মৃত সন্তানের কোন পুত্র (আপন পুত্র বা পুত্রের পুত্র- এভাবে অধস্তন কোন পুরুষ) না থাকে কিন্তু তার কোন কন্যা (আপন কন্যা বা কন্যার কন্যা- এভাবে অধস্তন কোন নারী) থাকে তাহলে পিতা أَصْحَابُ الفُرُوْض হিসেবে ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবে এবং العَصَبَة হিসেবে অবশিষ্ট অংশ পাবেন।
(গ) যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তানই না থাকে (চাই তা যত অধস্তনই হোক না কেন) তাহলে পিতা শুধুমাত্র العَصَبَة হিসেবে অবশিষ্ট সকল অংশ পাবেন।
৩। দাদাঃ দাদা দ্বারা উদ্দেশ্য হল পিতার বাবা, পিতামহের বাবা, প্রপিতামহের বাবা এভাবে পুরুষযোগে ঊর্ধ্বতন সকলেই দাদার হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। যদি মৃত ব্যক্তির পিতা জীবিত থাকে তাহলে দাদা বঞ্চিত হবে। তবে মৃত ব্যক্তির পিতা যদি জীবিত না থাকে তাহলেই শুধুমাত্র দাদা মিরাসের সম্পত্তি পাবে। আর দাদার মিরাসের সম্পত্তির ক্ষেত্রে পিতার ন্যায়। অর্থাৎ পিতা যে অবস্থায় যতটুকু পেয়েছে দাদা সে অবস্থায় ততটুকু পাবে।
৪। বৈপিত্রেয় ভাইঃ বেপিত্রেয় ভাই দ্বারা উদ্দেশ্য হল মৃত ব্যক্তির মায়ের গর্ভজাত ভাই কিন্তু পিতা ভিন্ন। বৈপিত্রেয় ভাইয়ের তিন অবস্থা হতে পারে:
(ক) যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র, কন্যা, নাতি-নাতনী বা অধস্তন কেউ কিংবা পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ বা ঊর্ধতন কোন পুরষ না থাকে এবং শুধুমাত্র একজন বৈপিত্রেয় ভাই থাকে তাহলে সে সম্পত্তির ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবে।
(খ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির একাধিক বৈপিত্রেয় ভাই থাকে তাহলে সবাই মিলে সম্পত্তির ১/৩ অংশ (এক তৃতীয়াংশ) পাবে।
(গ) আর যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র, কন্যা, নাতি-নাতনী বা অধস্তন কেউ কিংবা পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ বা ঊর্ধতন কেউ জীবিত থাকে তাহলে বৈপিত্রেয় ভাইয়েরা বঞ্চিত হবে।
৫। মাতাঃ সন্তান মারা গেলে মায়ের তিন অবস্থা হতে পারে:
(ক) যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান থাকে কিংবা একাধিক ভাইবোন থাকে তাহলে মা সমুদয় সম্পত্তির ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবেন।
(খ) যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রীর সাথে পিতা মাতা উভয়ে থাকে তাহলে সম্পত্তি থেকে স্বামী বা স্ত্রীর অংশ দেয়ার পর মা বাকি সম্পত্তির ১/৩ অংশ (এক তৃতীয়াংশ) পবেন।
(গ) যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকে বা ভাইবোন ২ জনের কম থাকে এবং স্ত্রী কিংবা স্বামী জীবিত না থাকে তাহলে মা সমুদয় সম্পত্তির ১/৩ অংশ (এক তৃতীয়াংশ) পাবেন।
৬। স্ত্রীঃ স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর দুই ধরনের অবস্থা হতে পারে:
(ক) যদি মৃত স্বামীর কোন সন্তান না থাকে তাহলে ১/৪ অংশ (এক চতুর্থাংশ) পাবেন।
(খ) আর যদি কোন সন্তান থাকে তাহলে ১/৮ অংশ (এক অষ্টমাংশ) পাবেন।
উল্লেখ্য যে, একাধিক স্ত্রী জীবিত থাকলেও সবাই মিলে এক স্ত্রীর প্র‍্যাপ্য অংশ পাবেন এবং এক স্ত্রীর প্র‍্যাপ্য অংশ সবাই নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিবেন।
৭। কন্যাঃ বাবার মৃত্যুর পর কন্যার তিন অবস্থা হতে পারে:
(ক) যদি শুধুমাত্র একজন কন্যা থাকে এবং কোন পুত্র না থাকে তাহলে সে সম্পত্তির ১/২ অংশ (অর্ধেক) পাবে।
(খ) আর কন্যা যদি একাধিক থাকে এবং কোন পুত্র না থাকে তাহলে সবাই ২/৩ অংশ (দুই তৃতীয়াংশ) পাবে।
(গ) আর যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র এবং কন্যা একসাথে থাকে তাহলে পুত্র-কন্যা ২:১ অনুপাতে পাবে।
৮। পৌত্রীগণঃ পুত্রের কন্যা দ্বারা উদ্দেশ্য হল আপন পুত্রের কন্যা, পৌত্রের কন্যা, প্রপৌত্রের কন্যা এভাবে অধস্তন সকল পুত্রের কন্যা। তারা একে অপরের অবর্তমানে দাদার সম্পত্তি থেকে মিরাস লাভ করবে। এদের মিরাস পাওয়ার জন্য শর্ত হল মৃত ব্যক্তির কোন পুত্র কিংবা একাধিক কন্যা জীবিত না থাকা। পুত্রের কন্যাদের ছয়টি অবস্থা হতে পারে:
(ক) যদি মৃত ব্যক্তির কোন পুত্র-কন্যা না থাকে এবং শুধুমাত্র একজন পৌত্রী থাকে তাহলে সে সম্পত্তির ১/২ অংশ (অর্ধেক) পাবে।
(খ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির একাধিক পৌত্রী থাকে তাহলে সবাই মিলে সম্পত্তির ২/৩ অংশ (দুই তৃতীয়াংশ) পাবে।
(গ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির কোন পৌত্র থাকে এবং সাথে এক বা একাধিক পৌত্রী থাকে তাহলে পৌত্রীগণ আসাবা হয়ে যাবে এবং আসহাবুল ফুরুযকে তাদের অংশ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তা পৌত্র এবং পৌত্রীগণ ১:২ অনুপাতে পাবে।
(ঘ) যদি মৃত্যু ব্যক্তির কোন পুত্র না থাকে কিন্তু একজন মাত্র কন্যা থাকে এবং সাথে এক বা একাধিক পৌত্রী থাকে তাহলে পৌত্রীগণ সবাই মিলে সম্পত্তির ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবে।
(ঙ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির একাধিক কন্যা থাকে তাহলে পৌত্রীগণ বঞ্ছিত হবে।
(চ) আর যদি মৃত্যু ব্যক্তির কোন পুত্র থাকে তাহলেও পৌত্রীণন বঞ্ছিত হবে।
৯। আপন বোনঃ আপন বোনের পাঁচ অবস্থা হতে পারে:
(ক) যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা, পিতা-ভাই কেউ জীবিত না থাকে এবং আপন বোন শুধুমাত্র একজন থাকে তাহলে বোন আসহাবুল ফুরুয হিসেবে সম্পত্তির  ১/২ অংশ (অর্ধেক) পাবে।
(খ) যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা, পিতা-ভাই কেউ জীবিত না থাকে এবং আপন বোন একের অধিক থাকে তাহলে তারা সবাই মিলে সম্পত্তির   থাকলে ২/৩ অংশ (দুই তৃতীয়াংশ) পাবে।
(গ) যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা এবং পিতা জীবিত না থাকে এবং আপন বোনের সাথে আপন ভাই জীবিত থাকে তাহলে বোনেরা ভাইয়ের কারণে আসাবা হয়ে যাবে। তখন আসহাবুল ফুরুযের অংশ বণ্টনের পর অবশিষ্ট অংশ আসবা হিসেবে ভাই-বোন ২:১ অনুপাতে পাবে।
(ঘ) যদি মৃত্যু ব্যক্তির আপন ভাই না থাকে কিন্তু একজন মাত্র কন্যা থাকে তাহলে আপন বোনেরা ১/৬ অংশ পাবেন। আর একাধিক কন্যা থাকলে এবং অন্য কোন ওয়ারিশ না থাকলে আপন কন্যাকে দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে বোনেরা তা আসাবা হিসেবে পাবে।
(ঙ) যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র কিংবা পিতা কেউ জীবিত থাকে তাহলে আপন বোনেরা বঞ্ছিত হবে।
১০। বৈপিত্রেয় বোন। বৈপিত্রেয় বোন বলতে এমন বোনকে বোঝায় যা মৃত ব্যক্তির সহাদোরা অর্থাৎ একই মায়ের সন্তান কিন্তু বাবা ভিন্ন। বৈপিত্রেয় বোন মিরাসের সম্পত্তি লাভের জন্য শর্ত হল মৃত ব্যক্তির পুত্র, পুত্রের পুত্র কিংবা কন্যা, কন্যার কন্যা- এভাবে অধস্তন কেউ কিংবা পিতা, দাদা এভাবে ঊর্ধ্বতন কেউ জীবিত না থাকা। বৈপিত্রেয় বোনের তিন অবস্থা হতে পারে:
(ক) যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা কিংবা অধস্তন কেউ অথবা পিতা-দাদা উর্ধ্বতন কেউ না থাকে আর বৈপিত্রেয় বোন শুধুমাত্র একজন থাকে তাহলে সম্পত্তির ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবে।
(খ) আর উল্লেখিত অবস্থায় যদি বৈপিত্রেয় বোন একাধিক থাকলে তাহলে সবাই মিলে সম্পত্তির ১/৩ অংশ (এক তৃতীয়াংশ) পাবে।
(গ) যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা বা অধস্তন কেউ এবং পিতা-দাদা বা উর্ধ্বতন কেউ জীবিত থাকে তাহলে বৈপিত্রেয় বোনেরা বঞ্ছিত হবে।
১১। বৈমাত্রেয় বোনঃ বৈমাত্রেয় বোন বলা হয় যাদের বাবা এক কিন্তু মা ভিন্ন। বৈমাত্রে বোনের সাত অবস্থা হতে পারে:
(ক) যদি মৃত্যু ব্যক্তির পুত্র, পুত্রের পুত্র বা অধস্তন কেউ, পিতা, দাদা বা ঊর্ধতন কেউ, আপন ভাই, একাধিক আপন বোন কিংবা একজন আপন বোন; সাথে কন্যা, কন্যার কন্যা বা অধস্তন কেউ যদি জীবিত না থাকে আর বৈমাত্রিয় বোন শুধুমাত্র একজন থাকে তাহলে সে আসহাবুল ফুরুয হিসেবে সম্পত্তির ১/২ অংশ (অর্ধেক) পাবে।
(খ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় বৈমাত্রেয় বোন একাধিক থাকে তাহলে তারা সবাই মিলে সম্পত্তির ২/৩ অংশ (দুই তৃতীয়াংশ) পাবে।
(গ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির একজন মাত্র আপন বোন থাকে তাহলে বৈমাত্রেয় বোন ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবে।
(ঘ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির একাধিক আপন বোন থাকে তাহলে বৈমাত্রেয় বোনেরা বঞ্ছিত হবে।
(ঙ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির একাধিক আপন বোন থাকে এবং বৈমাত্রেয় বোনের সাথে বৈমাত্রেয় ভাইও থাকে তাহলে ভাইয়ের কারণে বোনেরা আসাবা হয়ে যাবে। তখন আসহাবুল ফুরুযের অংশ বণ্টনের পর অবশিষ্ট যা থাকবে তা বৈমাত্রেয় ভাই-বোন ২:১ অনুপাতে পাবে।
(চ) যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির কোন কন্যা, কন্যার কন্যা বা অধস্তন কেউ থাকে এবং আপন বোন না থাকে তাহলে বৈমাত্রিয় বোন আসাবা হয়ে যাবে। তখন আসহাবুল ফুরুযকে দেয়ারপর যা অবশিষ্ট থাকবে তার পুরটাই বৈমাত্রেয় বোন আসাবা হিসেবে পাবে।
(ছ) আর যদি উল্লেখিত অবস্থায় মৃত ব্যক্তির কোন পুরুষ ওয়ারিশ জীবিত থাকে তাহলে বৈমাত্রিয় বোনেরা বঞ্ছিত হবে।
১২। দাদী বা নানীঃ দাদী দ্বারা উদ্দেশ্য হল পিতার মা, পিতামহের মা, পিতা মহীর মা, প্রপিতামহের মা, প্রপিতামহীর মা এভাবে ঊর্ধতন সকলেই দাদীর হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপভাবে নানী দ্বারা উদ্দেশ্য মায়ের মা, নানীর মা, নানীর নানী এভাবে ঊর্ধ্বতন সকলেই নানীর হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। দাদী ও নানীর তিন অবস্থা হতে পারে:
(ক)  যদি মৃত ব্যক্তির পিতা-মাতা, দাদা বা ঊর্ধ্বতন কেউ যদি জীবিত না থাকে তাহলে দাদী এবং নানী উভয়ে সম্পত্তির ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবে।
(ক) যদি মৃত ব্যক্তির মা জীবিত থাকে তাহলে দাদী এবং নানী উভয়ে বঞ্চিত হবে।
(খ) আর যদি মৃত ব্যক্তির পিতা জীবিত থাকে তাহলে দাদী বঞ্চিত হবে কিন্তু নানী যথারীতি ১/৬ অংশ (এক ষষ্ঠাংশ) পাবে।
দুই. العَصَبَة বা অবশিষ্টভোগী। মৃত ব্যক্তির এমন আত্মীয়-স্বজন যাদের কোন অংশ শরীয়ত কর্তৃক নির্দিষ্ট করা হয় নি। তবে أَصْحَابُ الفُرُوْض তাদের নির্দিষ্ট অংশ পাওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে কিংবা أصحاب الفروض এর অবর্তমানে তাদের সমুদয় সম্পত্তির যারা মালিক হয় তাদেরকে العَصَبَة বা অবশিষ্টভোগী বলা হয়। আসাবাদের মাঝে সম্পত্তি বণ্টনের পদ্ধতি হল الأقرب فالأقرب অর্থাৎ প্রথমে মৃতের নিকটাত্মীয়রা পাবে। এরপর অবশিষ্ট থাকলে দূরের আত্মীয়রা পাবে।
তিন. أولو الأرحام বা মৃতের অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন। অর্থাৎ মৃতব্যক্তির যে সমস্ত আত্মীয়-স্বজন أَصْحَابُ الفُرُوْض কিংবা العَصَبَة হিসেবে মিরাস পায় না; বরং এই দুই শ্রেণীর কেউ যদি জীবিত না থাকে তখন যারা মিরাসের সম্পত্তি পায় তাদেরকে أوْلُوْ الأَرْحَام বলা হয়।[১১][১২][১৩][১৪]

প্রশ্ন: ৩২৮: সাদাক্বায়ে জারিয়া কাকে বলে ও কি কি ?

‘সদকায়ে জারিয়া’ আরবি শব্দ। সদকা শব্দের অর্থ দান আর জারিয়ার অর্থ চলমান, সদাস্থায়ী ইত্যাদি। আল্লাহ ধনীদের ওপর সম্পদের জাকাত এবং ওশর ফরজ করেছেন। সে সঙ্গে সদকার ব্যাপারেও গুরুত্ব দিয়েছেন।
‘সদকায়ে জারিয়া’ আরবি শব্দ। সদকা শব্দের অর্থ দান আর জারিয়ার অর্থ চলমান, সদাস্থায়ী ইত্যাদি। আল্লাহ ধনীদের ওপর সম্পদের জাকাত এবং ওশর ফরজ করেছেন। সে সঙ্গে সদকার ব্যাপারেও গুরুত্ব দিয়েছেন। ইসলামে জাকাত ও ওশরের পরিমাণ নির্ধারিত কিন্তু সদকার ব্যাপারে কোনো সীমা বাঁধা নেই।  উদ্দেশ্য, এর মাধ্যমে যেন মুসলিম সমাজে মজবুত অর্থনীতি গড়ে উঠতে পারে। তবে সদকার ব্যাপারে ধনী-দরিদ্রের কোনো ভেদ নেই। সবাই সদকা দিতে পারেন।
সদকায়ে জারিয়া এক ধরনের স্থায়ী ও অবিনিময়যোগ্য দান। এর অন্যতম উদ্দেশ্য পরোপকারের মাধ্যমে নিজের আধ্যাত্মিক কল্যাণ। পরোপকার সাধারণত দু ভাবে করা যায় : ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক। তবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছু করলে বৃহৎভাবে পরোপকার করা যায়। যেমন কেউ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করল আর কেউ শুধু একজন রোগীকে সেবা দিল। এক্ষেত্রে হাসপাতালের মাধ্যমে এরকম বহু রোগীর সেবা করা সম্ভব। শরিয়তের পরিভাষায় এ ধরনের সাধারণ দানকে বলা হয় সদকায়ে জারিয়া। রাসূল সা. বলেছেন, দুটি জিনিস মানুষের উন্নতির উপকরণ। একটি ‘উত্তম সন্তান’, অন্যটি ‘সাদকায়ে জারিয়া’।

হযরত আবু
হোরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত প্রিয় নবী সাঃ এরশাদ
করেছেন, মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার
আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়।
শুধু তিনটি আমল জারি থাকেঃ
(১) সদকায়ে জারিয়াহ
(২) উপকারী জ্ঞান এবং
(৩) নেক্কার সন্তান যে দোয়া করবে। (বোখারি ও মুসলিম শরিফ)
.
আল্লাহ আমাদের স্রষ্টা আমরা তার সৃষ্টি তথা
গোলাম।
আমাদের কল্যাণার্থেই তিনি পৃথিবীকে
সুন্দর সাজে সজ্জিত করেছেন।
প্রতিটি
বিধিবিধান প্রণয়ন করেছেন।
যখন সময় চলে
আসবে তখন এক এক করে সবাই পৃথিবীর মায়া
ছেড়ে অন্ধকার কবরে চলে যেতে হবে।
এ ক্ষেত্রে
রাজা-বাদশাহ, আমির-উমরাহ, ধনী-গরিব
কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
দুনিয়াতে বিভিন্ন পেশায় নির্দিষ্ট মেয়াদে
নিয়োজিত চাকরিজীবী ব্যক্তি যখন অবসর গ্রহণ
করে তখন তার পরবর্তী দুনিয়াবি জীবন
সুন্দরভাবে কাজে লাগানোর জন্য কোম্পানি বা
সরকার পেনশন এবং গ্র্যাচুইটির ব্যবস্থা রাখে।
এতে করে সে বৃদ্ধ বয়সেও ভালোভাবে দিনাতিপাত
করতে পারে।
এটা ব্যবস্থাপনার বিশেষ অনুগ্রহ।
অথচ আল্লাহতায়ালা এর চেয়ে কোটি কোটি গুণ
বেশি দয়ালু তার বান্দাদের প্রতি, যা অনেকেই
উপলব্ধি করতে সক্ষম নই।
আমাদের দৈনন্দিন
জীবনে, ওঠা-বসা, চলাফেরা, লেনদেন, বিভিন্ন
কাজে-কর্মে অনেক ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে। এর
থেকে তওবা না করে মারা গেলে নেকির পাল্লা
হালকা হয়ে বান্দা বিপদে পড়তে পারে। তাইতো
আল্লাহ বান্দার দুরবস্থা দূর করার জন্য মৃত্যুর
পরও নেকি অর্জনের ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
হাদিসে বর্ণিত, তিনটি কাজের যেকোনো একটি করে
গেলে বান্দা কবরে বসে বসে নেকি পেতেই থাকবে।
.
প্রথমত, সদকায়ে জারিয়া কী?
মহান
আল্লাহতায়ালা এবং তার প্রিয় হাবিবের সন্তুষ্টি
অর্জনের নিমিত্তে মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ,
এতিমখানা তৈরি, গরিব ছাত্রদের বৃত্তি প্রদানের
ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট ও হাসপাতাল নির্মাণ, পুকুর
খনন, নলকূপ বসানো, পাঠাগার ও সেতু নির্মাণ,
বৃক্ষরোপণ, ইসলামী পুস্তক দান, ইসলামী এ্যাপ প্রভৃতিই হলো সাদকায়ে জারিয়া।
.
মসজিদঃ
মসজিদে যত দিন মানুষ নামাজ আদায়
করবে, কুরআন হাদিসের আলোচনা করবে, জিকির-
আজকার এবং ওয়াজ মাহফিল করবে তত দিন
পর্যন্ত নির্মাণ ও সহায়তাকারী ব্যক্তি এবং
অন্য মুসল্লিরা ও কুরআন-হাদিস চর্চকারীদের
সমপরিমাণ সওয়াব কবরে বসে পেতেই থাকবে।
.
মাদ্রাসাঃ
মাদ্রাসায় যত দিন কুরআন, হাদিস ও
অন্যান্য কিতাবাদি পড়ানো হবে তত দিন শিক্ষক
ও শিক্ষার্থীদের এবং ওই মাদ্রাসা থেকে যত
আলেম তৈরি হবে সবার সমপরিমাণ সওয়াব
নির্মাণকারী, দানকারী এবং ভালো পরামর্শদাতার
আমলনামায় যোগ হতে থাকবে।
.
এতিমখানাঃ
পিতা-মাতাহীন এতিম সন্তানদের
সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য
এতিমখানা নির্মাণ।
এই প্রতিষ্ঠান থেকে যত
এতিম সন্তান লেখাপড়া করে বেরিয়ে যাবে এবং জ্ঞানের আলো অন্যের মাঝে বিলাতে থাকবে ততদিন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠাকারী সওয়াব লাভ করতে থাকবে।
এ ছাড়া গরিব মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের
জন্য বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করে যাওয়া। যে
অর্থে বহু গরিব ও অসহায় সন্তান লেখাপড়া করে
যেতে পারে।
.
পাঠাগারঃ
সমাজে বসবাসরত মানুষের মধ্যে
ইসলামী শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে পাঠাগার
প্রতিষ্ঠা করা।
এই পাঠাগার থেকে একটি বই পড়ে
কেউ যদি ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ হয় তাহলে তাদের
সবার সমপরিমাণ সওয়াব প্রতিষ্ঠাকারী,
সাহায্যকারী কবরে বসে পেতে থাকবে।
.
হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাঃ
মানব সেবায় হাসপাতাল
প্রতিষ্ঠা সর্বোত্তম কাজ।
মানুষ এখান থেকে
সেবা পায়।
রোগমুক্তি ও মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট
লাঘবের ব্যবস্থা করা হয়।
যত দিন এখানে মানব
সেবার কাজ চলতে থাকবে তত দিন পর্যন্ত
প্রতিষ্ঠাতা এর সওয়াব কবরে বসে পাবেন।
.
রাস্তাঘাট নির্মাণঃ
রাস্তাঘাট নির্মাণ একটি
জনকল্যাণ কাজ।
যত দিন পর্যন্ত এই রাস্তা
দিয়ে যত মানুষ, পশু-পাখি, জীবজন্তু চলাচল
করবে, তত দিন পর্যন্ত নির্মাতার আমলনামায়
এর সওয়াব পৌঁছতে থাকবে।
.
পুকুর খনন ও নলকূপ বসানোঃ
মানুষের মঙ্গলার্থে
পুকুর খনন ও নলকূপ বসানোর মাধ্যমে এর থেকে
যত মানুষ পানি পান করবে তার সওয়াব মালিক
লাভ করবে।
.
বৃক্ষরোপণঃ
যত দিন পর্যন্ত মানুষ, পশু-পাখি এই
গাছের ফল খাবে, ছায়ার নিচে বসে শরীর জুড়াবে,
তত দিন রোপণকারী সওয়াব পাবে।

ইসলামী এ্যাপঃ
আপনি যদি ইসলামী এ্যাপ তৈরী, প্রচার প্রচারণা, পরিচালনা, আপডেট করা
ইত্যাদি ক্ষেত্রে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেন, তবে
এ্যাপটি যতজন লোক ডাউনলোড করে পড়বে
তার সওয়াবের একটা অংশ আপনি পেতে থাকবেন, ইনশাআল্লাহ।
আপনার মৃত্যুর পরও এ্যাপটি চলতে থাকবে ইনশাআল্লাহ এবং এই সওয়াব
আপনার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে, ইনশাআল্লাহ ।
.
দ্বিতীয়ত, উপকারী জ্ঞানঃ
যে জ্ঞান অর্জন
করার কারণে জ্ঞানী ব্যক্তি উভয় জাহানে
সাফল্যের পথে অগ্রসর হতে পারে এবং অপরকেও
অগ্রসর করতে পারে এমন জ্ঞান লাভ। এ
প্রকারের জ্ঞান কুরআন-হাদিস, বালাগাত-
মানতিক, তাফসির গ্রন্থ ও ইসলামি দর্শন
অধ্যয়ন ছাড়া লাভ হয় না। বর্তমানে ইসলামী এ্যাপ সমূহ
এ ক্ষেত্রে বিশাল জায়গা দখল করে আছে।
এ প্রসঙ্গে হযরত
উসমান ইবনে আফ্ফান রাঃ থেকে বর্ণিত; প্রিয়
নবী সাঃ এরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে ওই
ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে কুরআন শিক্ষা করে এবং
অপরকে শিক্ষা দেয়।
(বুখারি শরিফ)
.
অন্যকে
শিক্ষা দেয়ার কয়েকটি উপায় আছে।
.
যেমনঃ মক্তব
বা মাদ্রাসায় লোকজন সমবেত করে শিক্ষা,
কুরআন-হাদিসের ব্যাখ্যা সংবলিত বই লিখে এবং
ইসলামের মৌলিক বিষয়ে বই লিখে।
আর এই
উপকারী জ্ঞানার্জন করা আল্লাহর খাস রহমত
ছাড়া সম্ভব নয়।
হাদিস শরিফে মহানবী সাঃ
এরশাদ করেছেন, আল্লাহ যার মঙ্গল কামনা করেন
তাকে দীনের সঠিক বুঝ দান করেন।
.
নেক সন্তান যে দোয়া করেঃ
প্রিয় নবী সাঃ এরশাদ
করেন, কোনো পিতা তার সন্তানের জন্য সুশিক্ষা
এবং চরিত্র গঠন ব্যতিরেকে উত্তম কোনো সম্পদ
রেখে যেতে পারে না।
সন্তানকে নেক্কার না বানিয়ে
পিতা যদি লাখ লাখ টাকা রেখে যায় তবে এর
দ্বারা পিতা-পুত্র কারো বিন্দুমাত্র উপকার হবে
না।
বরঞ্চ এই সম্পদ অসৎ পথে ব্যয় করে নিজেও
ধ্বংস হবে বাপকেও কবর জগতে কঠোর শাস্তির
মুখোমুখি দাঁড় করাবে।
সুশিক্ষা আর উত্তম
চরিত্র বলে সম্পদহীন সন্তানও সমাজে মাথা উঁচু
করে দাঁড়াতে পারে।
সবার শ্রদ্ধা-সম্মান,
ভালোবাসা ও দোয়া লাভ করতে পারে।
এ ছাড়া
তার যাবতীয় ভালো কাজের সওয়াব পিতা-মাতার
আমলনামায় যেমন যোগ হবে তেমনি নেক সন্তানের
দোয়ার বরকতেও পরজগতে পিতা-মাতার গুনাহ
মাফ হবে, শাস্তি লাঘব হবে, জান্নাত নসিব হবে
এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।
তাই আদর্শ পিতা-
মাতার উচিত ছোটবেলা থেকেই সন্তানের চরিত্র
গঠনের প্রতি গভীর মনোযোগ দেয়া। তাহলে পিতা
হিসেবে সে নিজেকে পরকালীন জবাবদিহিতা থেকে
মুক্ত রাখতে পারবেন এবং সন্তান সমাজে মাথা
উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।
.
অপর দিকে কেউ যদি নেক
সন্তানের পরিবর্তে ধন-দৌলতসহ নাস্তিক,
মুরতাদ, বেনামাজি, সুদখোর, ঘুষখোর, মদখোর,
হারাম ভক্ষণকারী, জিনাকার, চরিত্রহীন সন্তান
রেখে যায় তাহলে ওই সন্তান তো জাহান্নামি
হবেই উপরন্তু পিতা-মাতাকেও জাহান্নামের পথিক
বানাবে।
কেননা পিতা-মাতা সন্তানকে শুধু
দুনিয়াবি চাকচিক্যে মত্ত রেখেছে কিন্তু চরিত্র
গঠনে উদ্বুদ্ধ করেনি।
.
এ সম্পর্কে আল্লাহ
তায়ালা বলেন, তারা বলবে (সন্তানরা), হে
আমাদের পালনকর্তা! আমরা আমাদের নেতা ও
বড়দের কথা মেনেছিলাম, অতঃপর তারা আমাদের
পথভ্রষ্ট করেছিল।
হে আমাদের পালনকর্তা!
তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদের মহা
অভিসম্পাত করুন।
(সূরা আহজাব, ২২ পারা, ৬৭
ও ৬৮ আয়াত)
.
আলোচ্য আয়াত দ্বারা এটা
সুস্পষ্ট যে, সন্তানকে চরিত্রবান হিসেবে গড়তে না
পারলে পিতা-মাতা যদি জান্নাতিও হয় তবুও
সন্তানের কারণে জাহান্নামই হবে তাদের ঠিকানা।
এ জন্য আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে এরশাদ
করেনঃ মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের
পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা করো,
যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত
আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফেরেশতাগণ
(সূরা তাহরিম, ৬ আয়াত, ২৮ পারা)
.
সাদকায়ে
জারিয়ার বিপরীতে হলো গুনাহে জারিয়া। কেউ যদি
মসজিদ, মাদ্রাসা না গড়ে সিনেমা হল প্রতিষ্ঠা,
কনসার্টের ও যাত্রাগানের আসর করে তাহলে এসব
স্থানে যত দিন গুনাহর কাজ চলতে থাকবে তত
দিন প্রতিষ্ঠাতার আমলনামায় সমপরিমাণ গুনাহ
পৌঁছতে থাকবে এবং কবরের আজাব বাড়তেই
থাকবে।
তবে এসব স্থানে যদি ইসলামি আলোকে
কোনো ভালো জিনিস দেখানো হয় বা শিক্ষা দেয়া
হয় তাহলে ফলাফলটা আবার সেই রকম হবে।
.
অতএব, প্রত্যেক বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তিরই উচিত
দুনিয়াতে বসেই পরকালের পুঁজি সংগ্রহ করা।
দুনিয়ার চাকচিক্যে নিজেকে জড়িত না রেখে, ধন-
সম্পদের মোহ ত্যাগ করে অন্ততপক্ষে
আখেরাতের সাফল্যের জন্য প্রতিনিয়ত কিছু ব্যয়
করা।
আর আখেরাতের মিজানের পাল্লা ভারী করে
আমলনামা ডান হাতে পাওয়ার প্রত্যাশায় হাদিসে
বর্ণিত তিনটি কাজের অন্ততপক্ষে যেকোনো একটি
কাজ করে মউতের সুধা পান করা।


প্রশ্ন: ৩২৭ : পুরুষ এবং মহিলাদের দায়েমি (সর্বাস্থায়) ফরজ কয়টি ও কি কি?

একজন পুরুষের দায়েমি ফরজ ৩ টি:

১। সবসময় ঈমানী হালতে থাকা।
২। সতর ঢেকে রাখা।
৩। মা-বোনকে পর্দায় রাখা।

একজন মহিলার জন্য দায়েমি ফরজ ৫ টি:
১। সবসময় ঈমানী হালতে থাকা।
২। সতর ঢেকে রাখা।
৩। পর্দা করা।
৪। ছোট আওয়াজে কথা বলা।
৫। স্বামীর সম্পদের হেফাজত করা।

পুরুষের দায়েমি সুন্নত ১০টি:
১। শুধু গোসল এবং ঘুমব্যতীত ২৪ ঘন্টা মাথায় টুপি রাখা।
২। চুল সুন্নত তরিকায় কাঁটা, (চুল কাটার সুন্নত তরিকা হলো তিনটি- ক. সমস্ত চুল ছেঁটে ফেলা। খ. পেছনে বাবরি রাখা। গ. মাথার চারপাশ থেকে সমান মাপে চুল কাটা।
৩। মোছ খাটো করা।
৪। মেসওয়াক করা।
৫। দাড়ি লম্বা রাখা।
৬। সুন্নতি পোষাক পড়া।
৭। প্রতিসপ্তাহে কম পক্ষে একবার নখ কাটা।
৮। গুপ্তস্থানের লোম পরিস্কার করা। (৪১ দিনের মধ্যে কমপক্ষে একবার কাঁটতেই হবে)
৯। পায়খানার রাস্তায় ঢিলা এবং
১০। প্রশ্রাবের রাস্তায় কুলুপ ব্যবহার করা।

একজন মহিলার জন্য দায়েমি সুন্নত ৭ টি:
১। মাথার চুল আঁছড়িয়ে সুন্দরভাবে পরিপাটি রাখা।
২। মেসওয়াক করা।
৩। সুন্নতি পোষাক পরিধান করা।
৪। সপ্তাহে কমপক্ষে একবার নখ কাঁটা।
৫। গুপ্তস্থানের লোম পরিষ্কার করা। (৪১ দিনের মধ্যে কমপক্ষে একবার কাঁটতেই হবে)
৬। পায়খানার রাস্তায় ঢিলা ব্যবহার করা।
৭। মাসিক চলাকালীন সময় পট্টি ব্যবহার করা। (সূত্র : রাহে নাজাত)



মূল লিংক

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...