প্রশ্ন: ৩২৮: সাদাক্বায়ে জারিয়া কাকে বলে ও কি কি ?

‘সদকায়ে জারিয়া’ আরবি শব্দ। সদকা শব্দের অর্থ দান আর জারিয়ার অর্থ চলমান, সদাস্থায়ী ইত্যাদি। আল্লাহ ধনীদের ওপর সম্পদের জাকাত এবং ওশর ফরজ করেছেন। সে সঙ্গে সদকার ব্যাপারেও গুরুত্ব দিয়েছেন।
‘সদকায়ে জারিয়া’ আরবি শব্দ। সদকা শব্দের অর্থ দান আর জারিয়ার অর্থ চলমান, সদাস্থায়ী ইত্যাদি। আল্লাহ ধনীদের ওপর সম্পদের জাকাত এবং ওশর ফরজ করেছেন। সে সঙ্গে সদকার ব্যাপারেও গুরুত্ব দিয়েছেন। ইসলামে জাকাত ও ওশরের পরিমাণ নির্ধারিত কিন্তু সদকার ব্যাপারে কোনো সীমা বাঁধা নেই।  উদ্দেশ্য, এর মাধ্যমে যেন মুসলিম সমাজে মজবুত অর্থনীতি গড়ে উঠতে পারে। তবে সদকার ব্যাপারে ধনী-দরিদ্রের কোনো ভেদ নেই। সবাই সদকা দিতে পারেন।
সদকায়ে জারিয়া এক ধরনের স্থায়ী ও অবিনিময়যোগ্য দান। এর অন্যতম উদ্দেশ্য পরোপকারের মাধ্যমে নিজের আধ্যাত্মিক কল্যাণ। পরোপকার সাধারণত দু ভাবে করা যায় : ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক। তবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছু করলে বৃহৎভাবে পরোপকার করা যায়। যেমন কেউ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করল আর কেউ শুধু একজন রোগীকে সেবা দিল। এক্ষেত্রে হাসপাতালের মাধ্যমে এরকম বহু রোগীর সেবা করা সম্ভব। শরিয়তের পরিভাষায় এ ধরনের সাধারণ দানকে বলা হয় সদকায়ে জারিয়া। রাসূল সা. বলেছেন, দুটি জিনিস মানুষের উন্নতির উপকরণ। একটি ‘উত্তম সন্তান’, অন্যটি ‘সাদকায়ে জারিয়া’।

হযরত আবু
হোরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত প্রিয় নবী সাঃ এরশাদ
করেছেন, মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার
আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়।
শুধু তিনটি আমল জারি থাকেঃ
(১) সদকায়ে জারিয়াহ
(২) উপকারী জ্ঞান এবং
(৩) নেক্কার সন্তান যে দোয়া করবে। (বোখারি ও মুসলিম শরিফ)
.
আল্লাহ আমাদের স্রষ্টা আমরা তার সৃষ্টি তথা
গোলাম।
আমাদের কল্যাণার্থেই তিনি পৃথিবীকে
সুন্দর সাজে সজ্জিত করেছেন।
প্রতিটি
বিধিবিধান প্রণয়ন করেছেন।
যখন সময় চলে
আসবে তখন এক এক করে সবাই পৃথিবীর মায়া
ছেড়ে অন্ধকার কবরে চলে যেতে হবে।
এ ক্ষেত্রে
রাজা-বাদশাহ, আমির-উমরাহ, ধনী-গরিব
কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
দুনিয়াতে বিভিন্ন পেশায় নির্দিষ্ট মেয়াদে
নিয়োজিত চাকরিজীবী ব্যক্তি যখন অবসর গ্রহণ
করে তখন তার পরবর্তী দুনিয়াবি জীবন
সুন্দরভাবে কাজে লাগানোর জন্য কোম্পানি বা
সরকার পেনশন এবং গ্র্যাচুইটির ব্যবস্থা রাখে।
এতে করে সে বৃদ্ধ বয়সেও ভালোভাবে দিনাতিপাত
করতে পারে।
এটা ব্যবস্থাপনার বিশেষ অনুগ্রহ।
অথচ আল্লাহতায়ালা এর চেয়ে কোটি কোটি গুণ
বেশি দয়ালু তার বান্দাদের প্রতি, যা অনেকেই
উপলব্ধি করতে সক্ষম নই।
আমাদের দৈনন্দিন
জীবনে, ওঠা-বসা, চলাফেরা, লেনদেন, বিভিন্ন
কাজে-কর্মে অনেক ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে। এর
থেকে তওবা না করে মারা গেলে নেকির পাল্লা
হালকা হয়ে বান্দা বিপদে পড়তে পারে। তাইতো
আল্লাহ বান্দার দুরবস্থা দূর করার জন্য মৃত্যুর
পরও নেকি অর্জনের ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
হাদিসে বর্ণিত, তিনটি কাজের যেকোনো একটি করে
গেলে বান্দা কবরে বসে বসে নেকি পেতেই থাকবে।
.
প্রথমত, সদকায়ে জারিয়া কী?
মহান
আল্লাহতায়ালা এবং তার প্রিয় হাবিবের সন্তুষ্টি
অর্জনের নিমিত্তে মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ,
এতিমখানা তৈরি, গরিব ছাত্রদের বৃত্তি প্রদানের
ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট ও হাসপাতাল নির্মাণ, পুকুর
খনন, নলকূপ বসানো, পাঠাগার ও সেতু নির্মাণ,
বৃক্ষরোপণ, ইসলামী পুস্তক দান, ইসলামী এ্যাপ প্রভৃতিই হলো সাদকায়ে জারিয়া।
.
মসজিদঃ
মসজিদে যত দিন মানুষ নামাজ আদায়
করবে, কুরআন হাদিসের আলোচনা করবে, জিকির-
আজকার এবং ওয়াজ মাহফিল করবে তত দিন
পর্যন্ত নির্মাণ ও সহায়তাকারী ব্যক্তি এবং
অন্য মুসল্লিরা ও কুরআন-হাদিস চর্চকারীদের
সমপরিমাণ সওয়াব কবরে বসে পেতেই থাকবে।
.
মাদ্রাসাঃ
মাদ্রাসায় যত দিন কুরআন, হাদিস ও
অন্যান্য কিতাবাদি পড়ানো হবে তত দিন শিক্ষক
ও শিক্ষার্থীদের এবং ওই মাদ্রাসা থেকে যত
আলেম তৈরি হবে সবার সমপরিমাণ সওয়াব
নির্মাণকারী, দানকারী এবং ভালো পরামর্শদাতার
আমলনামায় যোগ হতে থাকবে।
.
এতিমখানাঃ
পিতা-মাতাহীন এতিম সন্তানদের
সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য
এতিমখানা নির্মাণ।
এই প্রতিষ্ঠান থেকে যত
এতিম সন্তান লেখাপড়া করে বেরিয়ে যাবে এবং জ্ঞানের আলো অন্যের মাঝে বিলাতে থাকবে ততদিন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠাকারী সওয়াব লাভ করতে থাকবে।
এ ছাড়া গরিব মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের
জন্য বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করে যাওয়া। যে
অর্থে বহু গরিব ও অসহায় সন্তান লেখাপড়া করে
যেতে পারে।
.
পাঠাগারঃ
সমাজে বসবাসরত মানুষের মধ্যে
ইসলামী শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে পাঠাগার
প্রতিষ্ঠা করা।
এই পাঠাগার থেকে একটি বই পড়ে
কেউ যদি ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ হয় তাহলে তাদের
সবার সমপরিমাণ সওয়াব প্রতিষ্ঠাকারী,
সাহায্যকারী কবরে বসে পেতে থাকবে।
.
হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাঃ
মানব সেবায় হাসপাতাল
প্রতিষ্ঠা সর্বোত্তম কাজ।
মানুষ এখান থেকে
সেবা পায়।
রোগমুক্তি ও মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট
লাঘবের ব্যবস্থা করা হয়।
যত দিন এখানে মানব
সেবার কাজ চলতে থাকবে তত দিন পর্যন্ত
প্রতিষ্ঠাতা এর সওয়াব কবরে বসে পাবেন।
.
রাস্তাঘাট নির্মাণঃ
রাস্তাঘাট নির্মাণ একটি
জনকল্যাণ কাজ।
যত দিন পর্যন্ত এই রাস্তা
দিয়ে যত মানুষ, পশু-পাখি, জীবজন্তু চলাচল
করবে, তত দিন পর্যন্ত নির্মাতার আমলনামায়
এর সওয়াব পৌঁছতে থাকবে।
.
পুকুর খনন ও নলকূপ বসানোঃ
মানুষের মঙ্গলার্থে
পুকুর খনন ও নলকূপ বসানোর মাধ্যমে এর থেকে
যত মানুষ পানি পান করবে তার সওয়াব মালিক
লাভ করবে।
.
বৃক্ষরোপণঃ
যত দিন পর্যন্ত মানুষ, পশু-পাখি এই
গাছের ফল খাবে, ছায়ার নিচে বসে শরীর জুড়াবে,
তত দিন রোপণকারী সওয়াব পাবে।

ইসলামী এ্যাপঃ
আপনি যদি ইসলামী এ্যাপ তৈরী, প্রচার প্রচারণা, পরিচালনা, আপডেট করা
ইত্যাদি ক্ষেত্রে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেন, তবে
এ্যাপটি যতজন লোক ডাউনলোড করে পড়বে
তার সওয়াবের একটা অংশ আপনি পেতে থাকবেন, ইনশাআল্লাহ।
আপনার মৃত্যুর পরও এ্যাপটি চলতে থাকবে ইনশাআল্লাহ এবং এই সওয়াব
আপনার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে, ইনশাআল্লাহ ।
.
দ্বিতীয়ত, উপকারী জ্ঞানঃ
যে জ্ঞান অর্জন
করার কারণে জ্ঞানী ব্যক্তি উভয় জাহানে
সাফল্যের পথে অগ্রসর হতে পারে এবং অপরকেও
অগ্রসর করতে পারে এমন জ্ঞান লাভ। এ
প্রকারের জ্ঞান কুরআন-হাদিস, বালাগাত-
মানতিক, তাফসির গ্রন্থ ও ইসলামি দর্শন
অধ্যয়ন ছাড়া লাভ হয় না। বর্তমানে ইসলামী এ্যাপ সমূহ
এ ক্ষেত্রে বিশাল জায়গা দখল করে আছে।
এ প্রসঙ্গে হযরত
উসমান ইবনে আফ্ফান রাঃ থেকে বর্ণিত; প্রিয়
নবী সাঃ এরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে ওই
ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে কুরআন শিক্ষা করে এবং
অপরকে শিক্ষা দেয়।
(বুখারি শরিফ)
.
অন্যকে
শিক্ষা দেয়ার কয়েকটি উপায় আছে।
.
যেমনঃ মক্তব
বা মাদ্রাসায় লোকজন সমবেত করে শিক্ষা,
কুরআন-হাদিসের ব্যাখ্যা সংবলিত বই লিখে এবং
ইসলামের মৌলিক বিষয়ে বই লিখে।
আর এই
উপকারী জ্ঞানার্জন করা আল্লাহর খাস রহমত
ছাড়া সম্ভব নয়।
হাদিস শরিফে মহানবী সাঃ
এরশাদ করেছেন, আল্লাহ যার মঙ্গল কামনা করেন
তাকে দীনের সঠিক বুঝ দান করেন।
.
নেক সন্তান যে দোয়া করেঃ
প্রিয় নবী সাঃ এরশাদ
করেন, কোনো পিতা তার সন্তানের জন্য সুশিক্ষা
এবং চরিত্র গঠন ব্যতিরেকে উত্তম কোনো সম্পদ
রেখে যেতে পারে না।
সন্তানকে নেক্কার না বানিয়ে
পিতা যদি লাখ লাখ টাকা রেখে যায় তবে এর
দ্বারা পিতা-পুত্র কারো বিন্দুমাত্র উপকার হবে
না।
বরঞ্চ এই সম্পদ অসৎ পথে ব্যয় করে নিজেও
ধ্বংস হবে বাপকেও কবর জগতে কঠোর শাস্তির
মুখোমুখি দাঁড় করাবে।
সুশিক্ষা আর উত্তম
চরিত্র বলে সম্পদহীন সন্তানও সমাজে মাথা উঁচু
করে দাঁড়াতে পারে।
সবার শ্রদ্ধা-সম্মান,
ভালোবাসা ও দোয়া লাভ করতে পারে।
এ ছাড়া
তার যাবতীয় ভালো কাজের সওয়াব পিতা-মাতার
আমলনামায় যেমন যোগ হবে তেমনি নেক সন্তানের
দোয়ার বরকতেও পরজগতে পিতা-মাতার গুনাহ
মাফ হবে, শাস্তি লাঘব হবে, জান্নাত নসিব হবে
এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।
তাই আদর্শ পিতা-
মাতার উচিত ছোটবেলা থেকেই সন্তানের চরিত্র
গঠনের প্রতি গভীর মনোযোগ দেয়া। তাহলে পিতা
হিসেবে সে নিজেকে পরকালীন জবাবদিহিতা থেকে
মুক্ত রাখতে পারবেন এবং সন্তান সমাজে মাথা
উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।
.
অপর দিকে কেউ যদি নেক
সন্তানের পরিবর্তে ধন-দৌলতসহ নাস্তিক,
মুরতাদ, বেনামাজি, সুদখোর, ঘুষখোর, মদখোর,
হারাম ভক্ষণকারী, জিনাকার, চরিত্রহীন সন্তান
রেখে যায় তাহলে ওই সন্তান তো জাহান্নামি
হবেই উপরন্তু পিতা-মাতাকেও জাহান্নামের পথিক
বানাবে।
কেননা পিতা-মাতা সন্তানকে শুধু
দুনিয়াবি চাকচিক্যে মত্ত রেখেছে কিন্তু চরিত্র
গঠনে উদ্বুদ্ধ করেনি।
.
এ সম্পর্কে আল্লাহ
তায়ালা বলেন, তারা বলবে (সন্তানরা), হে
আমাদের পালনকর্তা! আমরা আমাদের নেতা ও
বড়দের কথা মেনেছিলাম, অতঃপর তারা আমাদের
পথভ্রষ্ট করেছিল।
হে আমাদের পালনকর্তা!
তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদের মহা
অভিসম্পাত করুন।
(সূরা আহজাব, ২২ পারা, ৬৭
ও ৬৮ আয়াত)
.
আলোচ্য আয়াত দ্বারা এটা
সুস্পষ্ট যে, সন্তানকে চরিত্রবান হিসেবে গড়তে না
পারলে পিতা-মাতা যদি জান্নাতিও হয় তবুও
সন্তানের কারণে জাহান্নামই হবে তাদের ঠিকানা।
এ জন্য আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে এরশাদ
করেনঃ মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের
পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা করো,
যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত
আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফেরেশতাগণ
(সূরা তাহরিম, ৬ আয়াত, ২৮ পারা)
.
সাদকায়ে
জারিয়ার বিপরীতে হলো গুনাহে জারিয়া। কেউ যদি
মসজিদ, মাদ্রাসা না গড়ে সিনেমা হল প্রতিষ্ঠা,
কনসার্টের ও যাত্রাগানের আসর করে তাহলে এসব
স্থানে যত দিন গুনাহর কাজ চলতে থাকবে তত
দিন প্রতিষ্ঠাতার আমলনামায় সমপরিমাণ গুনাহ
পৌঁছতে থাকবে এবং কবরের আজাব বাড়তেই
থাকবে।
তবে এসব স্থানে যদি ইসলামি আলোকে
কোনো ভালো জিনিস দেখানো হয় বা শিক্ষা দেয়া
হয় তাহলে ফলাফলটা আবার সেই রকম হবে।
.
অতএব, প্রত্যেক বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তিরই উচিত
দুনিয়াতে বসেই পরকালের পুঁজি সংগ্রহ করা।
দুনিয়ার চাকচিক্যে নিজেকে জড়িত না রেখে, ধন-
সম্পদের মোহ ত্যাগ করে অন্ততপক্ষে
আখেরাতের সাফল্যের জন্য প্রতিনিয়ত কিছু ব্যয়
করা।
আর আখেরাতের মিজানের পাল্লা ভারী করে
আমলনামা ডান হাতে পাওয়ার প্রত্যাশায় হাদিসে
বর্ণিত তিনটি কাজের অন্ততপক্ষে যেকোনো একটি
কাজ করে মউতের সুধা পান করা।


প্রশ্ন: ৩২৭ : পুরুষ এবং মহিলাদের দায়েমি (সর্বাস্থায়) ফরজ কয়টি ও কি কি?

একজন পুরুষের দায়েমি ফরজ ৩ টি:

১। সবসময় ঈমানী হালতে থাকা।
২। সতর ঢেকে রাখা।
৩। মা-বোনকে পর্দায় রাখা।

একজন মহিলার জন্য দায়েমি ফরজ ৫ টি:
১। সবসময় ঈমানী হালতে থাকা।
২। সতর ঢেকে রাখা।
৩। পর্দা করা।
৪। ছোট আওয়াজে কথা বলা।
৫। স্বামীর সম্পদের হেফাজত করা।

পুরুষের দায়েমি সুন্নত ১০টি:
১। শুধু গোসল এবং ঘুমব্যতীত ২৪ ঘন্টা মাথায় টুপি রাখা।
২। চুল সুন্নত তরিকায় কাঁটা, (চুল কাটার সুন্নত তরিকা হলো তিনটি- ক. সমস্ত চুল ছেঁটে ফেলা। খ. পেছনে বাবরি রাখা। গ. মাথার চারপাশ থেকে সমান মাপে চুল কাটা।
৩। মোছ খাটো করা।
৪। মেসওয়াক করা।
৫। দাড়ি লম্বা রাখা।
৬। সুন্নতি পোষাক পড়া।
৭। প্রতিসপ্তাহে কম পক্ষে একবার নখ কাটা।
৮। গুপ্তস্থানের লোম পরিস্কার করা। (৪১ দিনের মধ্যে কমপক্ষে একবার কাঁটতেই হবে)
৯। পায়খানার রাস্তায় ঢিলা এবং
১০। প্রশ্রাবের রাস্তায় কুলুপ ব্যবহার করা।

একজন মহিলার জন্য দায়েমি সুন্নত ৭ টি:
১। মাথার চুল আঁছড়িয়ে সুন্দরভাবে পরিপাটি রাখা।
২। মেসওয়াক করা।
৩। সুন্নতি পোষাক পরিধান করা।
৪। সপ্তাহে কমপক্ষে একবার নখ কাঁটা।
৫। গুপ্তস্থানের লোম পরিষ্কার করা। (৪১ দিনের মধ্যে কমপক্ষে একবার কাঁটতেই হবে)
৬। পায়খানার রাস্তায় ঢিলা ব্যবহার করা।
৭। মাসিক চলাকালীন সময় পট্টি ব্যবহার করা। (সূত্র : রাহে নাজাত)



মূল লিংক

প্রশ্ন: ৩২৬ : নামাজের ফজিলত সম্পর্কে জঈফ ও জাল হাদিস

সালাত জান্নাতের চাবি কথাটি সমাজে বহুল প্রচলিত । অনেকে বুখারিতে আছে বলেও চালিয়ে দেয়াই পছন্দ করে। আসলে এর কোন ভিত্তি নাই।

হাদিস নং ১।

জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (ছা) বলেছেন, জান্নাতের চাবি হল সালাত। আর সালাতের চাবি হল পবিত্রতা।
(মুসনাদে আহমাদ হা/১৪৭০৩ তিরমিজি হা/৪ মিস্কাত হা/২৪৯ ফাজায়েলে আমাল  ৮৮ পৃ)
তাহকিকঃ
হাদিস এর প্রথম অংশ  জঈফ (জঈফুল জামে হা/৫২৬৫, সিলসিলা ই জঈফা হা/৩৬০৯) দ্বিতীয় অংশ পৃথক সনদ এ ছহিহ সুত্রে বর্ণিত আছে। (আবু দাউদ হা/৬১, তিরমিজি হা/৩)
হাদিসটির প্রথম অংশ জঈফ হবার কারন হল- উক্ত সনদ এ দুইজন দুর্বল রাবি আছে। (ক) সুলাইমান বিন করম ও (খ) আবু ইয়াহিয়া আল-কাত্তাত।
(আলবানি, মিস্কাত হা/২৯৪ এর টিকা দ্রষ্টব্য)
জ্ঞাতব্যঃ
জান্নাতের চাবি সম্পর্কে ইমাম বুখারি (রহ) একটি অনুচ্ছেদের বিষয়বস্তু আলোচনা করতে গিয়ে ওহাব ইবনু মুনাব্ববিহ (রহ) থেকে যে বর্ণনা এসেছে তা হল-
“লা ইলাহা ইল্লাল্লহ” কি জান্নাতের চাবি? তখন তিনি বলেন, হ্যাঁ। তবে প্রত্যেক চাবির দাত রয়েছে। তুমি যদি এমন চাবি নিয়ে আসো যার দাঁত রয়েছে, তাহলে তোমার জন্য জান্নাত খোলা হবে। অন্যথাই খোলা হবে না।
(বুখারি ১/১৬৫ পৃ হা/১২৩৭ এর পূর্বের আলোচনা দ্রষ্টব্য)
এছারাও আরও অন্নান্য ছহিহ হাদিস দারাও এটা প্রমানিত।
(বুখারি হা/৫৮২৭, মুসলিম হা/২৮৩, )
তাই, “লা ইলাহা ইল্লাল্লহ” হল জান্নাতের চাবি আর শরিয়াতের অন্নান্য আমল-আহাকাম অর্থাৎ সালাত, সিয়াম, হাজ, যাকাত ইত্যদি ওই চাবির দাঁত।

হাদিস নং ২।  

সালাত হল দিনের খুঁটি। সুতারাং যে ব্যাক্তি সালাত কায়েম করলো সে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করলো। আর যে ব্যাক্তি সালাত ছেড়ে দিল সে দ্বীনকে ধ্বংস করল।
(কাশফুল খাফা ২/৩২ পৃ, তাযকিরাতুল  মউজুয়াত পৃ ৩৮, ফাজায়েলে আমাল  ২৯ পৃ)
তাহকিকঃ
সমাজে হাদিসটির সমাধিক প্রসার থাকলেও হাদিসটি গ্রহন যোগ্য নয়। ইমাম নাবাবি (রহ) বলেন, এটি বাতিল ও মুনকার।
(কাশফুল খাফা ২/৩১ পৃ,)

হাদিস নং ৩।

রসুল (সা) বলেছেন, সালাত মুমিনের মিরাজ।
(তাফসিরে রাযি ১/২১৮ পৃ, তাফসিরে হাক্কি ৮/৪৫৩ পৃ, মিরকাতুল মাফাতিহ ১/১৩৪ পৃ, “ইমান” অধ্যায়)
তাহকিকঃ
উক্ত বর্ণনার কোন সনদ নাই। এটি ভিত্তিহিন ও বানোয়াট।

হাদিস নং ৪।

আনাস (রা) বলেন, রসুল (সা) বলেছেন, “সালাত মুমিনের নুর”
(মুসনাদে আবি ইয়ালা হা/৩৬৫৫, ফাজায়েলে আমাল  ২৯ পৃ)
তাহকিকঃ
বর্ণনাটি জইফ। মুহাদ্দিস হুসাইন সালিম আসাদ (রহ) বলেন, উক্ত হাদিসের সনদ অত্যন্ত দুর্বল।
(তাহকিক মুসনাদে আবি ইয়ালা হা/৩৬৫৫,)
উক্ত হাদিসের সনদে ইসা ইবনু মাইসারা নামে একজন দুর্বল রাবি আছে।
(সিলসিলাই জইফা হা/১৬৬০)
উল্লেখ্য, ছলাত নুর, সাদাকা দলিল মর্মে মুসলিমে যে হাদিস বর্ণিত হয়েছে তা ছহিহ।
(মুসলিম হা/৫৫৬, মিস্কাত হা/২৮১)

হাদিস নং ৫।

যে বাক্তি জামাতের সাথে ফজরের সালাত আদায় করে সে যেন আদম (আ) এর সাথে পঞ্চাশ বার হজ করে এবং যে বাক্তি জামাতের সাথে যোহরের সালাত আদায় করে সে যেন নুহ (আ) এর সাথে চল্লিশ কিংবা ত্রিশ বার হজ করে। এভাবেই অনন্যা ওয়াক্ত সে আদায় করে।
(হাসান ইবনু মুহাম্মাদ আস-ছাগানি, আল-মউজুয়াত হা/৪৮ পৃঃ ৪২)
তাহকিকঃ
বর্ণনাটি জাল ও মিথ্যা।
(আল-মউজুয়াত হা/৪৮ পৃঃ ৪২)

হাদিস নং ৬।

সালমান ফারসি (রা) বলেন, আমি রাসুল (সা) কে বলতে শুনেছি, যে বাক্তি ভোরে ফজরের ছালাতের দিকে আগিয়ে গেলো সে ইমানের পতাকা নিয়ে গেলো। আর যে বাক্তি ভোরে (ফজরের সালাত আদায় না কওরে) বাজারের দিকে  আগিয়ে গেলো সে শয়তানের পতাকা নিয়ে গেলো।
(ইবনু মাজাহ হা/২২৩৪, বঙ্গানুবাদ মিস্কাত হা/৫৮৯)
তাহকিকঃ
উক্ত হাদিসের সনদ অত্যন্ত দুর্বল। এর সনদে উবাইস ইবনু মাইমুন নামক রাবি রয়েছে। ইমাম বুখারি (রহ) সহ অন্যান্য মুহাদ্দিছ গন তাকে মুনকার বলে অভিযোগ করেছে। ইবনু হিব্বান (রহ) বলেন, সে নির্ভরশীল বাক্তির নাম দিয়ে ধারনা পূর্বক বহু জাল হাদিস বর্ণনা করেছে।
(আলবানি, জইফ ইবনু মাজাহ হা/২২৩৪, মিস্কাত হা/৬৪০ টিকা দ্রষ্টব্য)

হাদিস নং ৭।

ইমরান ইবনু হুসাইন (রা) বলেন, রাসুল (সা) কে একদা জিজ্ঞাস করা হল, আল্লাহর এই বানি সম্পর্কে-“নিশ্চয়ই সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে” তখন তিনি বললেন, যাকে তার সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে না “তার সালাত হয় না”।
(তাফসির ইবনে কাসির; সিলসিলা ই জইফা হা/৯৮৫, ফাজায়েল এ আমাল পৃঃ ১৭২)
তাহকিকঃ
হাদিসটি জইফ। উক্ত বর্ণনার সনদে ইবনু জুনাইদ নামে একজন মিথ্যুক রাবি রয়েছে। মুহাদ্দিসগণ বর্ণনাটিকে মুনকার বলেছেন।
(সিলসিলা ই জইফা হা/৯৮৫৫)

হাদিস নং ৮।

ইবনু আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা) বলেন, যার সালাত তকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে না তাকে উহা ইসলাম থেকে দূরে সরে দেয়া ছারা আর কিছুই বৃদ্ধি করে না।
(ফাজায়েল এ আমাল পৃঃ ১৭৩, তাবারানি, আল-মুজামুল কাবির হা/১০৮৬২)
তাহকিকঃ
বর্ণনাটি বাতিল বা মিথ্যা। এর সনদে লইস ইবনু আবি সালিম নামক ত্রুতিপূর্ণ  রাবি রয়েছে।
(সিলসিলা ই জইফা হা/২)
জ্ঞাতব্যঃ
উক্ত বর্ণনা প্রমান করে ত্রুটিপূর্ণ কোন বাক্তি সালাত আদায় করলে সালাত কবুল হয়না। সুতারাং সালাত আদায় করে কোন লাভ নাই। কিন্তু উক্ত ধারনা সঠিক নয়। বরং সালাত আদায়ের মাধ্যমে এক সময় সে আল্লাহর অনুগ্রহে পাপ কাজ ছেড়ে দিবে। ছহিহ হাদিসে বর্ণিত হইছে,
আবু হুরাইরা (রা) বলেন, জনৈক বাক্তি রাসুল (সা) এর নিকটে এসে বললেন, অমুক বাক্তি রাতে সালাত আদায় করে আর সকাল হলে চুরি করে। তিনি উত্তরে বললেন, সালাত তাকে অচিরেই তা থেকে বিরত রাখবে।
(আহামাদ হা/৯৭৭৭, মিস্কাত হা/১২৩৭, সনদ ছহিহ)
চলবে……


প্রশ্ন: ৩২৫ : কুরবানীর ইতিহাস ।

কুরবানীর ইতিহাস (প্রাচীন)।

সেই আদি পিতা আদম (আ.) এর যুগ থেকেই কুরবানীর বিধান চলে আসছে। আদম (আ.) এর দুই ছেলে হাবীল ও কাবীলের কুরবানী পেশ করার কথা আমরা মহাগ্রন্থ আল-কুরআন থেকে জানতে পারি। মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা বলেন

, ۞ ﻭَﭐﺗۡﻞُ ﻋَﻠَﻴۡﻬِﻢۡ ﻧَﺒَﺄَ ﭐﺑۡﻨَﻲۡ ﺀَﺍﺩَﻡَ ﺑِﭑﻟۡﺤَﻖِّ ﺇِﺫۡ ﻗَﺮَّﺑَﺎ ﻗُﺮۡﺑَﺎﻧٗﺎ ﻓَﺘُﻘُﺒِّﻞَ ﻣِﻦۡ ﺃَﺣَﺪِﻫِﻤَﺎ ﻭَﻟَﻢۡ ﻳُﺘَﻘَﺒَّﻞۡ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﺄٓﺧَﺮِ ﻗَﺎﻝَ ﻟَﺄَﻗۡﺘُﻠَﻨَّﻚَۖ ﻗَﺎﻝَ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳَﺘَﻘَﺒَّﻞُ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ ٢٧ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٢٧ ] 

অর্থাৎ, আদমের দুই পুত্রের (হাবিল ও কাবিলের) বৃত্তান্ত তুমি তাদেরকে যথাযথভাবে শুনিয়ে দাও, যখন তারা উভয়ে কুরবানী করেছিল, তখন একজনের কুরবানী কবুল হলো এবং অন্যজনের কুরবানী কবুল হলো না। তাদের একজন বলল, ‘আমি তোমাকে অবশ্যই হত্যা করব। অপরজন বলল, ‘আল্লাহ তো সংযমীদের কুরবানীই কবূল করে থাকেন।[সূরা মায়িদা (৫):২৭]। 

মূল ঘটনা হলো: যখন আদম ও হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং তাদের সন্তান প্রজনন ও বংশ বিস্তার আরম্ভ হয়, তখন হাওয়া (আ.) এর প্রতি গর্ভ থেকে জোড়া জোড়া (জময) অর্থাৎ একসাথে একটি পুত্র ও একটি কন্যা এরূপ জময সন্তান জন্মগ্রহণ করত। কেবল শীস (আ.) ব্যতিরেকে। কারণ, তিনি একা ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন। তখন ভাই-বোন ছাড়া আদম (আ.) এর আর কোন সন্তান ছিল না। অথচ ভাই-বোন পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা উপস্থিত প্রয়োজনের খাতিরে আদম (আ.) এর শরীয়তে বিশেষভাবে এ নির্দেশ জারি করেন যে, একই গর্ভ থেকে যে যমজ পুত্র ও কন্যা জন্মগ্রহণ করবে, তারা পরস্পর সহোদর ভাই-বোন হিসেবে গণ্য হবে। তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম। কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্মগ্রহনকারী পুত্রের জন্য প্রথম গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারীনি কন্যা সহোদরা বোন হিসেবে গণ্য হবে না। তাদের মধ্যে পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ। সুতরাং সে সময় আদম (আ.) একটি জোড়ার মেয়ের সাথে অন্য জোড়ার ছেলের বিয়ে দিতেন। ঘটনাক্রমে কাবীলের সাথে যে সহোদরা জন্ম নিয়েছিল সে ছিল পরমা সুন্দরী। তার নাম ছিল আকলিমা। কিন্তু হাবিলের সাথে যে সহোদরা জন্ম নিয়েছিল সে দেখতে অতটা সুন্দরী ছিল না। সে ছিল কুশ্রী ও কদাকার। তার নাম ছিল লিওযা। বিবাহের সময় হলে শরয়ী ‘নিয়মানুযায়ী হাবীলের সহোদরা কুশ্রী বোন কাবীলের ভাগে পড়ল। ফলে আদম (আ.) তৎকালীন শরীয়তের আইনের পরিপ্রেক্ষি তে কাবীলের আবদার প্রত্যাখ্যান করলেন এবং তাকে তার নির্দেশ মানতে বললেন। কিন্তু সে মানল না। এবার তিনি তাকে বকাঝকা করলেন। তবুও সে ঐ বকাঝকায় কান দিল না। অবশেষে আদম (আ.) তার এ দু‘সস্তান হাবীল ও কাবীলের মতভেদ দূর করার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী পেশ কর, যার কুরবানী গৃহীত হবে, তার সাথেই আকলিমার বিয়ে দেয়া হবে।’ সে সময় কুরবানী গৃহীত হওয়ার একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন ছিল যে, আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে সে কুরবানীকে ভষ্মীভূত করে ফেলত। আর যার কুরবানী কবূল হতো না তারটা পড়ে থকত। যাহোক, তাদের কুরবানীর পদ্ধতি সম্পর্কে যা জানা যায় তা হলো- কাবীল ছিল চাষী। তাই তিনি গমের শীষ থেকে ভাল ভাল মালগুলোবের করে নিয়ে বাজে মালগুলোর একটি আটি কুরবানীর জন্য পেশ করল। আর হাবীল ছিল পশুপালনকারী। তাই সে তার জন্তুর মধ্যে থেকে সবচেয়ে সেরা একটি দুম্বা কুরবানীর জন্য পেশ করল। এরপর নিয়মানুযায়ী আকাশ থেকে অগ্নিশিখা এসে হাবীলের কুরবানীটি ভষ্মীভুত করে দিল। [ফতহুল ক্বাদীরের বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, হাবীলের পেশকৃত দুম্বাটি জান্নাতে উঠিয়ে নেয়া হয় এবং তা জান্নাতে বিচরণ করতে থাকে।অবশেষে ইসমাঈল যাবিহুল্লাহ (আ.) কে ঐ দুম্বাটি পাঠিয়ে বাঁচিয়ে দেয়া হয়।] আর কাবীলের কুরবানী যথাস্থানেই পড়ে থাকল। অর্থাৎ হাবীলেরটি গৃহীত হলো আর কাবীলেরটি হলো না। কিন্তু কাবীল এ আসমানী সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারল না। এ অকৃতকার্যতায় কাবীলের দুঃখ ও ক্ষোভ আরো বেড়ে গেল। সে আত্মসংবরণ করতে পারল না এবং প্রকাশ্যে তার ভাইকে বলল, ‘আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। হাবিল তখন ক্রোধের জবাবে ক্রোধ প্রদর্শন না করে একটি মার্জিত ও নীতিগত বাক্য উচ্চারণ করল, এতে কাবীলের প্রতি তার সহানুভূতি ও শুভেচ্ছা ফুটে উঠেছিল। হাবীল বলেছিল, ‘ তিনি মুত্তাক্বীর কর্মই গ্রহণ করেন। সুতরাং তুমি তাক্বওয়ার কর্মই গ্রহণ করো। তুমি তাক্বওয়া অবলম্বন করলে তোমার কুরবানীও গৃহীত হতো। তুমি তা করোনি, তাই তোমার কুরবানী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এতে আমার দোষ কোথায়?.....তবুও এক পর্যায়ে কাবীল হাবীল কে হত্যা করে ফেলল। (তাফসীর ইবনু কাসীর, দুররে মনসূর, ফতহুল বায়ান, ৩/৪৫ ও ফতহুল ক্বাদীর, ২/২৮-২৯) কুরআনে বর্ণিত হাবীল ও কাবীল কর্তৃক সম্পাদিত কুরবানীর এ ঘটনা থেকেই মূলত কুরবানীর ইতিহাসের গোড়াপত্তন হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা দেখতে পেলাম যে, কুরবানী দাতা ‘হাবীল’, যিনি মনের ঐকান্তিক আগ্রহ সহকারে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের জন্যে একটি সুন্দর দুম্বা কুরবানী হিসেবে পেশ করেন। ফলে তার কুরবানী কবূল হয়। পক্ষান্তরে কাবীল, সে অমনোযোগী অবস্থায় কিছু খাদ্যশস্য কুরবানী হিসেবে পেশ করে। ফলে তার কুরবানী কবূল হয়নি।

 সুতরাং প্রমাণিত হলো কুরবানী মনের ঐকান্তিক আগ্রহ ছাড়া কবূল হয় না। তারপর থেকে বিগত সকল উম্মতের উপরে এটা জারি ছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

 ﴿ ﻭَﻟِﻜُﻞِّ ﺃُﻣَّﺔٖ ﺟَﻌَﻠۡﻨَﺎ ﻣَﻨﺴَﻜٗﺎ ﻟِّﻴَﺬۡﻛُﺮُﻭﺍْ ﭐﺳۡﻢَ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻠَﻰٰ ﻣَﺎ ﺭَﺯَﻗَﻬُﻢ ﻣِّﻦۢ ﺑَﻬِﻴﻤَﺔِ ﭐﻟۡﺄَﻧۡﻌَٰﻢِۗ ﻓَﺈِﻟَٰﻬُﻜُﻢۡ ﺇِﻟَٰﻪٞ ﻭَٰﺣِﺪٞ ﻓَﻠَﻪُۥٓ ﺃَﺳۡﻠِﻤُﻮﺍْۗ ﻭَﺑَﺸِّﺮِ ﭐﻟۡﻤُﺨۡﺒِﺘِﻴﻦَ ٣٤ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺤﺞ : ٣٤ ] 

অর্থাৎ প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কুরবানীর বিধান রেখেছিলাম, যাতে তারা উক্ত পশু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে এ জন্য যে, তিনি চতুষ্পদ জন্তু থেকে তাদের জন্য রিযিক নির্ধারণ করেছেন। [সূরা হাজ্জ (২২):৩৪]। 

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা নাসাফী ও যামাখশারী বলেন, ‘আদম (আ.) থেকে মুহাম্মাদ (সা.) পর্যন্ত প্রত্যেক জাতিকে আল্লাহ তা‘আলা তার নৈকট্য লাভের জন্য কুরবানীর বিধান দিয়েছেন। (তাফসীরে নাসাফী ৩/৭৯; কাশশাফ, ২/৩৩)। আদম (আ.) এর যুগে তারই পুত্র কাবীল ও হাবীলের কুরবানীর পর থেকে ইবরাহীম (আ.) পর্যন্ত কুরবানী চলতে থাকে। প্রকৃতপক্ষে কুরবানীর ইতিহার ততটা প্রাচীন যতটা প্রাচীন দ্বীন-ধর্ম অথবা মানবজাতির ইতিহার। মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে যত শরীয়ত নাযিল হয়েছে, প্রত্যেক শরীয়তের মধ্যে কুরবানী করার বিধান জারি ছিল। প্রত্যেক উম্মতের ইবাদতের এ ছিল একটা অপরিহার্য অংশ। তবে ঐসব কুরবানীর কোন বর্ণনা কোন গ্রন্থে পাওয়া যায় না। মূলত সেসব কুরবানীর নিয়ম-কানুন আমাদেরকে জানানো হয়নি।
বর্তমান কুরবানীর ইতিহাস :
পবিএ কুরআনে এসেছে-

 ﴿ ﺭَﺏِّ ﻫَﺐۡ ﻟِﻲ ﻣِﻦَ ﭐﻟﺼَّٰﻠِﺤِﻴﻦَ ١٠٠ ﻓَﺒَﺸَّﺮۡﻧَٰﻪُ ﺑِﻐُﻠَٰﻢٍ ﺣَﻠِﻴﻢٖ ١٠١ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺑَﻠَﻎَ ﻣَﻌَﻪُ ﭐﻟﺴَّﻌۡﻲَ ﻗَﺎﻝَ ﻳَٰﺒُﻨَﻲَّ ﺇِﻧِّﻲٓ ﺃَﺭَﻯٰ ﻓِﻲ ﭐﻟۡﻤَﻨَﺎﻡِ ﺃَﻧِّﻲٓ ﺃَﺫۡﺑَﺤُﻚَ ﻓَﭑﻧﻈُﺮۡ ﻣَﺎﺫَﺍ ﺗَﺮَﻯٰۚ ﻗَﺎﻝَ ﻳَٰٓﺄَﺑَﺖِ ﭐﻓۡﻌَﻞۡ ﻣَﺎ ﺗُﺆۡﻣَﺮُۖ ﺳَﺘَﺠِﺪُﻧِﻲٓ ﺇِﻥ ﺷَﺂﺀَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻦَ ﭐﻟﺼَّٰﺒِﺮِﻳﻦَ ١٠٢ ﻓَﻠَﻤَّﺂ ﺃَﺳۡﻠَﻤَﺎ ﻭَﺗَﻠَّﻪُۥ ﻟِﻠۡﺠَﺒِﻴﻦِ ١٠٣ ﻭَﻧَٰﺪَﻳۡﻨَٰﻪُ ﺃَﻥ ﻳَٰٓﺈِﺑۡﺮَٰﻫِﻴﻢُ ١٠٤ ﻗَﺪۡ ﺻَﺪَّﻗۡﺖَ ﭐﻟﺮُّﺀۡﻳَﺂۚ ﺇِﻧَّﺎ ﻛَﺬَٰﻟِﻚَ ﻧَﺠۡﺰِﻱ ﭐﻟۡﻤُﺤۡﺴِﻨِﻴﻦَ ١٠٥ ﺇِﻥَّ ﻫَٰﺬَﺍ ﻟَﻬُﻮَ ﭐﻟۡﺒَﻠَٰٓﺆُﺍْ ﭐﻟۡﻤُﺒِﻴﻦُ ١٠٦ ﻭَﻓَﺪَﻳۡﻨَٰﻪُ ﺑِﺬِﺑۡﺢٍ ﻋَﻈِﻴﻢٖ ١٠٧ ﻭَﺗَﺮَﻛۡﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴۡﻪِ ﻓِﻲ ﭐﻟۡﺄٓﺧِﺮِﻳﻦَ ١٠٨ ﺳَﻠَٰﻢٌ ﻋَﻠَﻰٰٓ ﺇِﺑۡﺮَٰﻫِﻴﻢَ ١٠٩ ﻛَﺬَٰﻟِﻚَ ﻧَﺠۡﺰِﻱ ﭐﻟۡﻤُﺤۡﺴِﻨِﻴﻦَ ١١٠ ﺇِﻧَّﻪُۥ ﻣِﻦۡ ﻋِﺒَﺎﺩِﻧَﺎ ﭐﻟۡﻤُﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ١١١ ﴾ ‏[ﺍﻟﺼﺎﻓﺎﺕ : ١٠٠، ١١١ ]

[ইব্রাহীম (আ.) যখন আমার কাছে দু‘আ করল] হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে এক সৎকর্মশীল পুত্র সন্তান দান কর। অতঃপর আমি তাকে এক অতি ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। অতঃপর সে যখন তার পিতার সাথে চলাফিরা করার বয়সে পৌঁছল, তখন ইবরাহীম বলল, ‘বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবহ করছি, এখন বল, তোমার অভিমত কী? সে বলল, ‘হে পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তাই করুন, আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীলই পাবেন। দু‘জনেই যখন আনুগত্যে মাথা নুইয়ে দিল আর ইবরাহীম তাকে কাত ক‘রে শুইয়ে দিল। তখন আমি তাকে ডাক দিলাম, ‘হে ইবরাহীম! স্বপ্নে দেয়া আদেশ তুমি সত্যে পরিণত করেই ছাড়লে। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। অবশ্যই এটা ছিল একটি সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি এক মহান কুরবাণীর বিনিময়ে পুত্রটিকে ছাড়িয়ে নিলাম। আর আমি তাঁকে পরবর্তীদের মাঝে স্মরণীয় করে রাখলাম। ইবরাহীমের উপর শান্তি বর্ষিত হোক! সৎকর্মশীলদেরকে আমি এভাবেই প্রতিদান দিয়ে থাকি। সে ছিল আমার মু‘মিন বান্দাহদের অন্তর্ভুক্ত। [সূরা আস- সাফফাত:১০০-১১১] । ইবনে কাসীর (রাহ.) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জানান যে, তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইব্রাহীম (আ.) যখন তার পিতৃভুমি থেকে হিজরত করলেন, তখন তিনি তার প্রভুর কাছে চেয়েছিলেন যে, তিনি যেন তাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করেন। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাকে একজন ধৈর্যশীল পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। এটা ছিল ইসমাঈলের (আ.) ব্যাপারে, কেননা তিনি ছিলেন ইব্রাহীমের (আ.) ঔরসে জন্ম নেয়া প্রথম সন্তান। এ ব্যাপারে বিভিন্ন দ্বীনের (ইহুদী, খ্রিস্টান ও মুসলিম) অনুসারীদের মধ্যে কোন মতভেদ নেই যে ইব্রাহীমের ঘরে ইসমাঈলই প্রথম জন্মগ্রহণ করেছিলেন। (ইবনে কাসীরের আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১/১৫৭-১৫৮) ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺑَﻠَﻎَ ﻣَﻌَﻪُ ﭐﻟﺴَّﻌۡﻲَ অর্থাৎ ‘এবং যখন সে তার সাথে হাটার মত বড় হলো’- এর অর্থ হচ্ছে, যখন সে বড় হয়েছিল এবং তার বাবার মতই নিজেই নিজের দেখাশোনা করতে পারত। মুজাহিদ (রাহ.) বলেন, ‘এবং যখন সে তার সাথে হাঁটার মত বড় হলো’ এর অর্থ হচ্ছে, যখন সে বড় হয়ে উঠেছিল এবং বাহনে চড়তে পারত, হাঁটতে পারত এবং তার বাবার মত কাজ করতে পারত। ফার্রা বলেন, যবহের সময় ইসমাঈলের বয়স ছিল ১৩ বছর। ইবনু আববাস (রা.) বলেন, ঐ সময় তিনি কেবল সাবলকত্বে উপনীত হয়েছিলেন। (তাফসীর কুরতুবী, ১৫/৯৯) এ রকম একটা অবস্থা যখন আসল, তখন ইব্রাহীম (আ.) স্বপ্নে দেখলেন যে, তাঁকে তার ছেলেকে কুরবানী করার আদেশ দেয়া হচ্ছে। নবীদের স্বপ্ন হচ্ছে ওহী। তাদের চক্ষু মুদিত থাকলেও অন্তরচক্ষু খোলা থাকে। সুতরাং আল্লাহ তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে, তার প্রিয়পুত্রকে কুরবানী করার আদেশ দিয়ে পরীক্ষা করছিলেন, যে পুত্রকে তিনি তার বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েছিলেন এবং তারপর শিশু অবস্থায় তাকে এবং তার মাকে মরুভুমিতে রেখে আসার আদেশ পেয়েছিলেন, এমন একটা উপত্যকায় যেখানে কোন জনপ্রাণীর সাড়াশব্দ ছিল না, কোন মানুষজন ছিল না, কোন বৃক্ষরাজি ছিল না এবং কোন পাখ-পাখালী বা পশুও ছিল না। ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহর আদেশ পালন করলেন এবং আল্লাহর উপর
ভরসা করে তাদের সেখানে রেখে আসলেন। আর আল্লাহ তাদের জন্য অপ্রত্যাশিত উৎস থেকে রিযিক পাঠালেন। এত কিছুর পরেও, তার ঘরে প্রথম জন্ম নেয়া ও তার একমাত্র পুত্রকে কুরবানী করার জন্য যখন আদেশ করা হলো, তিনি তখন তাঁর প্রভুর ডাকে সাড়া দিলেন এবং তার প্রভুর আদেশ মেনে, তিনি যা চেয়েছিলেন, তা করতে উদ্যত হলেন। তাই তিনি তার পুত্রকে ব্যাপারটা সম্বন্ধে বললেন- যেন সে শান্ত থাকে এবং জোর করে তাকে কুরবানী
করতে না হয়। ‘হে আমার পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে জবাই করছি (আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য কুরবানী করছি)। তাহলে, তুমি কি মনে কর!’ ধৈর্যশীল ছেলেটি সাথে সাথেই জবাব দিল, ‘সে বলল, হে আমার পিতা! আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে, আপনি তা-ই করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন। সে সবচেয়ে উত্তম জবাব দিল, এটাই ছিল তার পিতার প্রতি এবং মানব কুলের প্রভুর প্রতি বাধ্যতার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আল্লাহ বলেন, ﻓَﻠَﻤَّﺂ ﺃَﺳۡﻠَﻤَﺎ ﻭَﺗَﻠَّﻪُۥ ﻟِﻠۡﺠَﺒِﻴﻦِ ‘তারপর তারা উভয়ে নিজেদেরকে (আল্লাহর ইচ্ছার কাছে) সমর্পণ করল, এবং সে তাকে তার পার্শ্বে উপর কাত
অবস্থায় শুইয়ে দিল’ এখানে বলা হয়েছে, ‘যখন তারা উভয়ে নিজেদেরকে সমর্পণ করল’- অর্থ হচ্ছে তারা দু‘জনে যখন নিজেদেরকে আল্লাহর আদেশের কাছে সমর্পণ করল। ‘এবং সে তাকে শুইয়ে দিল’- এর অর্থ হচ্ছে তিনি, তাকে ছেলেকে) মাটির দিকে মুখ করে রাখলেন। এখানে বলা হলো যে, তিনি তাকে পেছন থেকে যবেহ করতে চাইলেন, যেন তিনি যবেহ করার সময় তার মুখটা দেখতে না পান। এটা ছিল ইবনে আববাস (রা.), মুজাহিদ (রাহ.) এর মত। ‘তারা উভয়ে নিজেদের সমর্পণ করল’ এর অর্থ হচ্ছে ইব্রাহীম (আ.) বললেন, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ এবং ‘আল্লাহু আকবার’ আর ছেলেটি বলল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ - কেননা সে মৃত্যুবরণ করতে যাচ্ছিল। আস সুদ্দী এবং অন্যান্যরা বলেন যে, ইব্রাহীম (আ.) ছেলেটির গলদেশে ছুরি চালান, কিন্তু তা তাকে কাটেনি। এটা বলা হয়ে থাকে যে, ছুরি ও তার গলার মাঝখানে একটা তামার পাত রাখা হয়েছিল ( এবং আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।) তারপর তা প্রত্যাহার করা হয়েছিল যখন আল্লাহ বললেন


, ﴿ ﻗَﺪۡ ﺻَﺪَّﻗۡﺖَ ﭐﻟﺮُّﺀۡﻳَﺂۚ ١٠٥ ﴾ ‏[ﺍﻟﺼﺎﻓﺎﺕ : ١٠٥ ]

 ‘হে ইব্রাহীম! তুমি তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছ!’- এর অর্থ হচ্ছে উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে, তোমাকে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তোমার প্রভু তোমাকে যে আদেশ করেছেন, তা পালন করার ব্যাপারে তোমার ইচ্ছা ও আনুগত্য প্রমাণিত হয়েছে। তোমার পুত্রের পরিবর্তে বিকল্প কুরবানীর ব্যবস্থা করা হবে- যেমন ভাবে তুমি তোমার নিজের শরীরকে আগুনের শিখায় সমর্পণ করেছিলে এবং তোমার অতিথিদের সম্মান জানাতে তোমার সম্পদ খরচ করেছিলে, তা স্মরণ রেখে। তাই আল্লাহ বলেন

, ﴿ ﺇِﻥَّ ﻫَٰﺬَﺍ ﻟَﻬُﻮَ ﭐﻟۡﺒَﻠَٰٓﺆُﺍْ ﭐﻟۡﻤُﺒِﻴﻦُ ١٠٦ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺼﺎﻓﺎﺕ : ١٠٦ ]

 ‘নিশ্চয় এটা ছিল স্পষ্ট পরীক্ষা’- অর্থাৎ এটা যে একটা পরীক্ষা ছিল তা পুরোপুরি স্পষ্ট। নিঃসন্দেহে এখানে মূল উদ্দেশ্য যবেহ ছিল না, বরং উদ্দেশ্য ছিল পিতা-পুত্রের আনুগত্য ও তাক্বওয়ার পরীক্ষা নেওয়া। সে পরীক্ষায় উভয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন পিতার পূর্ণ প্রস্ত্ততি এবং পুত্রের স্বতঃস্ফুর্ত সম্মতি ও আনুগত্যের মাধ্যমে।

﴿ ﻭَﻓَﺪَﻳۡﻨَٰﻪُ ﺑِﺬِﺑۡﺢٍ ﻋَﻈِﻴﻢٖ ١٠٧ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺼﺎﻓﺎﺕ : ١٠٧ ] 

‘আমরা তাকে একটা বড় কুরবানী দিয়ে মুক্ত করলাম’- এর অর্থ হচ্ছে আমরা তার ছেলের মুক্তিপণের ব্যবস্থা করলাম, তার পরিবর্তে যবেহ করার জন্য বিকল্প হিসেবে । বেশিরভাগ আলিমের মতে, এটা ছিল শিং বিশিষ্ট খুব সুন্দর সাদা একাটা ভেড়া। ইবনে আববাস (রা.) থেকে আস-সাওরী আব্দুল্লাহ ইবনে উসমান ইবনে খাইসাম, সাঈদ ইবনে জুবায়ের বর্ণনা করেন যে, ‘এটা ছিল এমন একটা ভেড়া যা চল্লিশ বছর ধরে জান্নাতে বেড়িয়েছে।’ইবনে আববাস (রা.) থেকে এ রকম বর্ণনাও এসেছে যে, ঐ ভেড়ার শুকনো মাথাটা এখনই কা‘বা শরীফের দাদের [পানি নির্গমনের] পাইপ থেকে ঝুলে রয়েছে। কেবল এটা থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যাকে কুরবানী করার কথা ছিল, তিনি ছিলেন ইসমাঈল (আ.)- কেননা তিনি মক্কায় বসবাস করতেন এবং আমরা এমন কখনো শুনিনি যে ইসহাক (আ.) তার ছেলেবেলায় কখনো মক্কায় এসেছিলেন, আর আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানে। (ইবনে কাসীরের আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১/১৫৭-১৫৮)। যাকে কুরবানী করার কথা ছিল তিনি ইসহাক্ব (আ.) নন; বরং তিনি ছিলেন ইসমাঈল (আ.), তার কারণগুলো উপরে বর্ণনা করা হয়েছে। ইবনে কাসীর তার তাফসীর গ্রন্থে এ সকল আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বেশ কিছু বিষয়ের উল্লেখ করেন যা নিশ্চিতভাবেই প্রমাণ করে যে, ইসমাঈল (আ.) এরই কুরবানী হওয়ার কথা ছিল। সেই বিষয়গুলো এ রকম: • ইসমাঈল (আ.) ছিলেন তার প্রথম সন্তান, যার ব্যপারে ইব্রাহীম (আ.) - কে সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল। মুসলিম ও আহলে কিতাবগণের ইজমা (ঐক্যমত্য) অনুসারে তিনি হলেন ইসহাক্ব (আ.)- এর চেয়ে বড়। আহলে কিতাবগণের কিতাবসমূহে এটা বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা ইব্রাহীমকে (আ.) তার একমাত্র পুত্র কুরবানী দিতে আদেশ দিয়েছিলেন। এবং কোন কোন নথিতে আছে যে, তাকে তার প্রথম জন্ম নেয়া ছেলেকে কুরবানী দিতে বলা হয়েছিল। • সাধারণত প্রথম ছেলে অন্যদের চেয়ে বেশী প্রিয় হয়ে থাকে, আর তাই তাকে কুরবানী করা আদেশ পরীক্ষার জন্য অধিকতর উপযোগী। • এটা উল্লিখিত রয়েছে যে, এক ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল এবং তাকেই কুরবানী করার আদেশ পরীক্ষার জন্য অধিকতর উপযোগী। • এটা উল্লিখিত রয়েছে যে, এক ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল এবং তাকেই কুরবানী করার কথা ছিল। এর পরে একই সূরায় ফেরেশতারা ইব্রাহীমের (আ.) কাছে ইসহাক্বের সুসংবাদ নিয়ে আসলেন, তারা বললেন,

 ﴿ ﻗَﺎﻟُﻮﺍْ ﻟَﺎ ﺗَﻮۡﺟَﻞۡ ﺇِﻧَّﺎ ﻧُﺒَﺸِّﺮُﻙَ ﺑِﻐُﻠَٰﻢٍ ﻋَﻠِﻴﻢٖ ٥٣ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺤﺠﺮ : ٥٣ ] 

‘আমরা আপনাকে একটি পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি যার অনেক জ্ঞান ও প্রজ্ঞা থাকবে।’ [সূরা হিজর: ৫৩]। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন

, ﴿ ﻭَﭐﻣۡﺮَﺃَﺗُﻪُۥ ﻗَﺂﺋِﻤَﺔٞ ﻓَﻀَﺤِﻜَﺖۡ ﻓَﺒَﺸَّﺮۡﻧَٰﻬَﺎ ﺑِﺈِﺳۡﺤَٰﻖَ ﻭَﻣِﻦ ﻭَﺭَﺁﺀِ ﺇِﺳۡﺤَٰﻖَ ﻳَﻌۡﻘُﻮﺏَ ٧١ ﴾ ‏[ ﻫﻮﺩ : ٧١ ] 

আমরা তাকে (সারাকে) ইসহাক্বের সুসংবাদ দিলাম এবং তার পরে ইয়া‘কূবের সুসংবাদ দিলাম।’ [সূরা হুদ (১১):৭১] এ আয়াতের অর্থ হচ্ছে, ইয়া‘কূব বলে একজন শিশুর জন্ম হবে তাদের (সারা এবং ইসহাক্বের) জীবদ্দশায় এবং তার থেকে অনেক বংশ বিস্তার লাভ করবে এবং এটা সঠিক শোনায় না যে, ইব্রাহীমকে সেই ইসহাক্বকেই কুরবানী করতে বলা হবে যখন তিনি ছোট ছিলেন তখন, কেননা আল্লাহ অঙ্গীকার করেছেন যে তার অনেক বংশধর থাকবে। • ইবরাহীম (আ.) এর বয়স যখন ৮৬ বৎসর তখন ইসমাঈল বিবি হাজেরার গর্ভে এবং যখন ৯৯ তখন বিবি সারার গর্ভে ইসহাক্ব জন্মগ্রহণ করেন। ইবরাহীম (আ.) সর্বমোট ২০০ বছর বেঁচে ছিলেন। (তাফসীর ইবনে কাসীর, ৪/১৬, মুয়াত্তা, তাফসীরে কুরতুবী, ২/৯৮-৯৯)। • এখানে সূরা সাফফাতে ইসমাঈলকে ধৈর্যশীল বলে বর্ণনা করা হয়েছে, যা এই পটভুমিতে যথার্থ। (তাফসীর ইবনে কাসীর, ৪/১৫) আর আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন। রাসূল (সা.) এর নবূয়্যতের সমসাময়িক সময়ের ইয়াহুদীরা জানত যে, আরব ভুমিতে একজন নবী আসছেন এবং তারা তার জন্য রীতিমত অপেক্ষা করেছিল। কিন্তু তিনি যেহেতু ইসহাক্ব (আ.) থেকে বিস্তৃত বণী ইসরায়েলের বংশধারায় জন্মগ্রহণ না করে, ইসমাঈল (আ.) এর বংশধারায় জন্মগ্রহণ

প্রশ্ন: ৩২৪ : দাব্বাতুল আরদ কী ?

আখেরী জামানায় কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে জমিন থেকে দাব্বাতুল আরদ নামক এক অদ্ভুত জন্তু বের হবে। জন্তুটি মানুষের সঙ্গে কথা বলবে। এটি হবে কেয়ামতের নিকটবর্তী হওয়ার অন্যতম সর্বশেষ ভয়াবহ আলামত। 

পশ্চিম আকাশে সূর্য উদিত হওয়ার পর তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে গেলে এটি বের হবে। সহিহ হাদিস থেকে জানা যায় যে, পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠার কিছুক্ষণ পরই জমিন থেকে এই অদ্ভুত জানোয়ারটি বের হবে। তাওবার দরজা যে একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে- এ কথাটিকে চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করার জন্য সে মুমিনদেরকে কাফির থেকে নির্দিষ্ট চিন্হের মাধ্যমে আলাদা করে ফেলবে। মু‘মিনের কপালে লিখে দেবে ‘মুমিন’ এবং কাফিরের কপালে লিখে দেবে ‘কাফির’। এ ব্যাপারে কোরআন থেকে যা জানা যায়-
পবিত্র কোরআনুল কারিমে সূরা আন নামলের ৮২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَإِذَا وَقَعَ الْقَوْلُ عَلَيْهِمْ أَخْرَجْنَا لَهُمْ دَابَّةً مِّنَ الْأَرْضِ تُكَلِّمُهُمْ أَنَّ النَّاسَ كَانُوا بِآيَاتِنَا لَا يُوقِنُونَ
‘যখন প্রতিশ্রুতি (কেয়ামত) সমাগত হবে, তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি জীব নির্গত করব। সে মানুষের সঙ্গে কথা বলবে। এ কারণে যে মানুষ আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করত না।’ (সূরা: নামল, আয়াত: ৮২)।
ইবনু কাসীর বলেন, আখেরী জামানায় মানুষ যখন নানা পাপাচারে লিপ্ত হবে, মহান আল্লাহর আদেশ পালন বর্জন করবে এবং দ্বীনকে পরিবর্তন করবে তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের সামনে এই জন্তুটি বের করবেন।’ (তাফসীরে ইবনু কাসীর-৩/৩৫১)।
ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, ‘জন্তুটি মানুষের মতই কথা বলবে।’(পূর্বোক্ত উৎস)।
প্রাণীটির কাজ কি হবে এবং কি বিষয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলবে-এ ব্যাপারে আল্লামা আলূসী বলেন, আয়াতে উল্লেখিত কোরআনের বাণীটিই হবে তার কথা।
অর্থাৎ- أَنَّ النَّاسَ كَانُوا بِآيَاتِنَا لَا يُوقِنُونَ 
এই বাক্যটি সে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে শুনাবে। মর্ম এই যে, আজকের পূর্বে অনেক মানুষই মহান আল্লাহর আয়াত ও নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করেনি। বিশেষ করে কেয়ামতের আলামত ও তা সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে এমনকি আমার আগমনের বিষয়েও অনেক মানুষ বিশ্বাসকরত না। এখন সে সময় এস গেছে এবং আমিও বের হয়ে এসেছি।
দাব্বাতুল আরদ সম্পর্কে হাদিস থেকে যা অবগত হওয়া যায়:
(১) সহিহ মুসলিম- এ হুযাইফাহ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন,
একদা রাসূল (সা.) আমাদের নিকট আগমন করলেন। আমরা তখন কিছু আলোচনা করছিলাম, তখন রাসূল (সা.) বলল, তোমরা কি বিষয়ে আলোচনা করছ? তারা বলল, আমরা কেয়ামতের আলামত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন, যতদিন তোমরা দশটি আলামত না দেখবে ততদিন কেয়ামত হবে না।
(১ ) ধোঁয়া, (২) দাজ্জালের আগমন, (৩) ভূগর্ত থেকে নিগর্ত দাব্বাতুল/দাব্বাতুল আরদ নামক অদ্ভুত এক জানোয়ারের আগমন,(৪) পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়, (৫)‘ঈসা ইবনু মারইয়ামের আগমন,(৬) ইয়াজুয-মা‘জুযের আবর্ভাব, (৭) পূর্বে ভূমিধ্বস, (৮) পশ্চিমে ভূমিধ্বস, (৯) আরব উপদ্বীপে ভূমিধ্বস, (১০) সর্বশেষে ইয়ামান থেকে একটি আগুন বের হয়ে মানুষকে সিরিয়ার দিকে হাঁকিয়ে নেবে।
(২) রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
‘দাববাতুল/দাব্বাতুল আরদ নামক একটি প্রাণী বের হবে এবং মানুষের নাকে চিহ্ন দেবে। অতঃপর মানুষেরা পৃথিবীতে জীবন-যাপন করবে। প্রাণীটি সব মানুষের নাকেই দাগ লাগিয়ে দেবে। এমনকি উট ক্রয়কারীকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তুমি এটি কার কাছ থেকে ক্রয় করেছ? সে বলবে, আমি এটি নাকে দাগওয়ালা একজন ব্যক্তির নিকট থেকে ক্রয় করেছি।’ (মুসনাদে আহমাদ। সিলসিলায়ে সগিহ-হা: ৩২২)।
(৩) নবী (সা.) আরো বলেন,
‘দাব্বাতুল আরদ বের হবে। তার সঙ্গে থাকবে মূসা (আ.) এর লাঠি এবং সুলায়মান (আ.) এর আংটি। কাফিরের নাকে সুলায়মান (আ.) এর আংটি দিয়ে দাগ লাগাবে এবং মূসা (আ.) এর লাঠি দিয়ে মুমিনের চেহারাকে উজ্জল করে দেবে। লোকেরা খানার টেবিল ও দস্তরখানায় বসেও একে অপরকে বলবে, হে মুমিন! হে কাফির! (আহমাদ-আহমাদ শাকের সহিহ বলেছেন, হা: ৭৯২৪)।
প্রাণীটির ধরণ?
প্রাণীটি হবে মানব জাতির কাছে পরিচিত চতুষ্পদ জন্তুসমূহের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। সেটি মানুষের সঙ্গে কথা বলবে। প্রাণীটি কোন শ্রেণীর হবে- এনিয়ে আলেমরা মতভেদ করেছেন।
(১) ইমাম কুরতুবী বলেন, এটি হবে সালেহ (আ.) এর উটনীর বাছুর। যখন কাফিরেরা উটনীকে হত্যা করে ফেলল তখন বাছুরটি পাথরের মাঝে ঢুকে পড়েছিল। এটি আল্লহ তায়ালার অনুমতিক্রমে কেয়ামতের পূর্বে বের হয়ে আসবে। ইমাম কুরতুবী বলেন, এটিই বিশুদ্ধ মত।
তার একথা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তিনি যে হাদিস দিয়ে দলিল গ্রহণ করেছেন তার সনদে এমন একজন রাবী (বর্ণনাকারী) আছেন যার বর্ণনা গ্রহনযোগ্য নয়।
(২) কেউ কেউ বলেছেন, এটি হবে দাজ্জালের হাদিসে বর্ণিত জাস্সাসা (গোয়েন্দা)। এ মতটিও গ্রহনযোগ্য নয়। কারণ দাজ্জালের হাদিসে যে প্রাণীর কথা এসেছে তার নাম জাস্সাসা। আর কেয়ামতের পূর্বে যে প্রাণীটি বের হবে তার নাম দাব্বাতুল আরদ যা কোরআনে সুস্টষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
(৩) কেউ কেউ বলেছেন, এটি হলো সেই সাপ যা পবিত্র কাবার দেয়ালে ছিল। কুরাইশরা যখন কাবা ঘর নির্মাণ করার ইচ্ছা পোষণ করল তখন সাপটিই তাদের নির্মাণ কাজ শুরু করতে মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেল। একটি পাখি এসে সাপটিকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেলে নির্মাণ কাজের বাধা দূর হয়ে যায়। কিন্তু এ কথার পক্ষেও কোনো দলিল নেই। এমনি আরো অনেক কথা বর্ণিত আছে। এগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ কোনো একটি মতের স্বপক্ষে সহিহ কোনো দলীল পাওয়া যায় না।
শাইখ আহমাদ শাকের মুসনাদে আহমাদের ব্যাখ্যায় বলেন, কোরআনের আয়াতে সুস্পষ্ট আরবি ভাষায় বলা আছে এটি হলো দাব্বাতুল আরদ। দাব্বা অর্থ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। কোনো প্রকার ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই; বরং আমরা বিশ্বাস করি আখেরী জামানায় একটি অদ্ভুত ধরনের জন্তু বের হবে। সে মানুষের সাঙ্গে কথা বলবে। কোরআন ও সহিহ হাদিসে তার গুণাগুণ ও বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হযেছে। আমরা তাতে বিশ্বাস করি।
পৃথিবীর কোন জায়গা থেকে প্রাণীটি বের হবে?
(১) এটি বের হবে পৃথিবীর সর্বর্শ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে সম্মানিত মসজিদ থেকে। ইবনু‘উমার (রা.) বলেন, সাফা পাহাড় ফেটে প্রাণীটি বের হবে। তিনি বলেন, আমি যদি চাইতাম তাহলে যে স্থানটি থেকে বের হবে তাতে পা রেখে দেখাতে পারতাম।’ (তাফসীরে কুরতুবী-১৩/২৬৩, তাবারানী ফিল আওসাত-২/১৭৬)।
(২) জন্তুটি তিনবার বের হবে। প্রথমে বের হবে কাবা ঘর হতে দূরবর্তী একটি গ্রাম থেকে। অতঃপর কিছু দিন লুকিয়ে থাকার পর আবার বের হবে। পরিশেষে কাবা ঘর থেকে বের হবে।
এ ব্যাপারে  আরো কথা বর্ণিত আছে। সব মিলিয়ে আমরা বলব, মক্কা থেকে দাব্বাতুল আরদ বের হবে। অতঃপর সমগ্র পৃথিবীতে ভ্রমণ করবে।

প্রশ্ন: ৩২৩ : মানুষের জন্য নির্ধারিত রিজিক্ব বলতে কি বুঝায় ?

৬. ...তিনি তাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী আবাসস্থল সম্পর্কে অবগত। সুস্পষ্ট কিতাবে (লওহে মাহফুজে) সব কিছুই (উল্লেখ) আছে। [সুরা : হুদ, আয়াত : ৬ (শেষ অংশ)]
তাফসির : এই আয়াতের প্রথম অংশে বলা হয়েছিল, ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল সবার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর। আয়াতের এই অংশে বলা হয়েছে, দুনিয়ার রিজিক নির্ধারিত সময়ের জন্য। মানুষের স্থায়ী ও অস্থায়ী একাধিক আবাসস্থল আছে। দুনিয়া অস্থায়ী আবাসস্থল আর আখিরাত স্থায়ী আবাসস্থল। উভয়ের অধিবাসীদের সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।
আল্লাহ তাআলাই রিজিকদাতা—এ কথা ধার্মিক মানুষ মাত্রই বিশ্বাস করে। আল্লাহ প্রদত্ত রিজিক মানুষ লাভ করে বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে। এই রিজিক তিনি দান করেন নিজ অনুগ্রহে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অতি দয়ালু। তিনি যাকে ইচ্ছা রিজিক দান করেন। তিনি প্রবল পরাক্রমশালী।’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ১৯)
রিজিক কমবেশি হওয়ার কারণ কী? এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘যদি আল্লাহ তাঁর সব বান্দাকে প্রচুর রিজিক দিতেন, তাহলে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত। কিন্তু তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছা, সেই পরিমাণ (রিজিক) অবতীর্ণ করেন।’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ২৭)
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘তারা কি তোমার পালনকর্তার অনুগ্রহ বণ্টন করে? আমিই তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করি পার্থিব জীবনে এবং তাদের একজনের মর্যাদা অন্যজনের ওপর উন্নীত করেছি, যাতে তারা একে অন্যকে সেবকরূপে গ্রহণ করতে পারে।’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৩২)
সাধারণ মানুষ মনে করে, রিজিক বা জীবিকা আসে চাকরি, ব্যবসা বা চাষাবাদের মাধ্যমে। কিন্তু কোরআনের ঘোষণা হলো, রিজিকের সিদ্ধান্ত হয় আসমানে। আল্লাহ বলেন, ‘আকাশে রয়েছে তোমাদের রিজিক ও প্রতিশ্রুত সব কিছু।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ২২)
আল্লাহ তাআলা নিজ বান্দাদের পরীক্ষা করার জন্য রিজিক বৃদ্ধি বা হ্রাস করেন। রিজিক বৃদ্ধি আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রমাণ নয়, অনুরূপ রিজিকের সংকীর্ণতাও তাঁর অসন্তুষ্টির কারণ নয়। অধিকাংশ মানুষ এ বিষয় জানে না। দুনিয়ার সচ্ছলতা কারো শুভ লক্ষণের দলিল নয়। কেননা আখিরাতের সাফল্য নির্ভর করে নেক আমলের ওপর। দুনিয়ায় আল্লাহ কখনো অবাধ্যকে দেন সচ্ছলতা, অনুগতকে দেন সংকীর্ণতা। আবার কখনো এর বিপরীত করেন। কখনো উভয়কে সচ্ছলতা দেন, কখনো দেন সংকীর্ণতা। কখনো অবাধ্য বা অনুগত ব্যক্তিকে এক সময় দেন সচ্ছলতা, অন্য সময় দেন অসচ্ছলতা। এসব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন আল্লাহ তাআলা নিজ প্রজ্ঞা ও হিকমতের ভিত্তিতে। রিজিকের এই হ্রাস-বৃদ্ধি পরীক্ষাস্বরূপ। আল্লাহ বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব, কখনো ভয়ভীতি, কখনো অনাহার দিয়ে, কখনো তোমাদের জানমাল ও ফসলাদির ক্ষতির মাধ্যমে। (এমন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করতে হবে) তুমি ধৈর্যশীলদের (জান্নাতের) সুসংবাদ দান করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৫)
স্বভাবগতভাবে মানুষের মধ্যে তাড়াহুড়া করার প্রবণতা আছে। সে দ্রুত সব কিছু পেতে চায়। সব কিছু ভোগ করতে চায়। কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম হলো, নির্ধারিত সময়ে ধীরে ধীরে জীবনোপকরণ হাতে আসে। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, নির্ধারিত জীবিকা আসবেই। কেউ তার রিজিক ভোগ না করে মৃত্যুবরণ করবে না। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘হে মানুষ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। ধনসম্পদ সংগ্রহে উত্তম পন্থা অবলম্বন করো। কেননা কেউ তার রিজিক পরিপূর্ণ না করে মৃত্যুবরণ করবে না, যদিও তা অর্জনে বিলম্ব হোক না কেন।’ (ইবনে মাজাহ)
গ্রন্থনা : মাওলানা কাসেম শরীফ

প্রশ্ন: ৩২২ : পবিত্র কুরআনে বর্ণিত নবীগণের নাম।

হজরত আবু জর গিফারি রাযিয়াল্লাহু আনহু প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! নবীদের সংখ্যা কত? তিনি জবাব দিলেন, ১ লাখ ২৪ হাজার। তাদের মধ্যে ৩১৫ জন হচ্ছেন রাসূল।
তাদের কারও কারও আলোচনা বিভিন্ন সূরায় একাধিক জায়গায় স্থান পেয়েছে। আবার কারও কারও নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে। এর সংখ্যা মাত্র ৫টি।

কোরআনে কারিম যেহেতু হেদায়েতের বাণী ও উপদেশগ্রন্থ, তাই অতীতকালের জাতি ও সম্প্রদায়ের ঘটনাবলি, তাদের ভালো-মন্দ আমল ও তার পরিণতি বর্ণনার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ধারা বর্ণনাপদ্ধতি অবলম্বন করা হয়নি। বরং সত্য প্রচারের লক্ষ্যে দাওয়াত প্রদানের মুখ্যতম পন্থাই গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে প্রাচীনকালের সম্প্রদায় ও তাদের প্রতি প্রেরিত পয়গম্বরদের আলোচনা বারবার শ্রবণ করার ফলে শ্রোতাদের অন্তরে দৃঢ়ভাবে গেঁথে যেতে পারে এবং তা শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশ উপযোগীও বটে। কোরআনে কারিমে বর্ণিত ২৫ জন নবীর নাম হলো-

১. হজরত আদম আলাইহিস সালাম। মোট ৯টি সূরার ২৫ জায়গায় তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি সর্বপ্রথম মানুষ ও নবী ছিলেন।

২. হজরত ইদরিস আলাইহিস সালাম। কোরআনের দু’টি সূরায় দু’বার উল্লেখ হয়েছে তার নাম। তিনি সর্বপ্রথম কলম দ্বারা লিখেছেন। আল্লাহতায়ালা তাকে সিদ্দিক হিসেবে কোরআনে আখ্যা দিয়েছেন এবং তিনি সর্বপ্রথম কাপড় সেলাই করে পরিধান করা শুরু করেন।

৩. হজরত নুহ আলাইহিস সালাম। ২৮টি সূরায় ৪৩ বার উল্লেখ করা হয়েছে এই নবীর নাম। তিনি নিজ জাতিকে সাড়ে ৯শ’ বছর দাওয়াত দিয়েছেন। তার ছেলে কেনানকে কুফরির কারণে আল্লাহতায়ালা মহাপ্লাবনে ডুবিয়ে মেরেছিলেন।

৪. হজরত হুদ আলাইহিস সালামের নাম তিনটি সূরায় সাতবার উল্লেখিত হয়েছে। তাকে আদ জাতির নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল। নূহ (আ.)-এর সম্প্রদায়কে প্লাবন দ্বারা ধ্বংস করার পর সর্বপ্রথম তার সম্প্রদায়ের লোকেরা মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয় এবং আল্লাহ তাদেরকে প্রচন্ড ঝড় দ্বারা ধ্বংস করে দেন।

৫. হজরত সালেহ আলাইহিস সালামের নাম চারটি সূরায় ৯ স্থানে উল্লেখ আছে। তাকে ছামূদ জাতির নিকট প্রেরণ করা হয়। সালেহ (আ.)-এর মুজেযা ছিল উটনি।
 
৬. হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের নাম ২৫ সূরায় ৬৯ বার উল্লেখ হয়েছে। তিনি ইরাকে জন্মগ্রহণ করেন ও ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপন করেন। পরে আল্লাহতায়ালার হুকুমে স্ত্রী ও শিশু সন্তান ইসমাঈলকে জনমানবহীন মক্কায় রেখে আসেন।

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে আবুল আম্বিয়া বা নবীদের পিতা বলা হয়। তিনি ছেলে ইসমাঈলকে সঙ্গে নিয়ে কাবা ঘর নির্মাণ করেন ও সর্বপ্রথম মানুষকে বায়তুল্লাহর হজ করার জন্য আহবান করেন।

৭. হজরত লুত আলাইহিস সালাম। চৌদ্দটি সূরায় ২৭ বার উল্লেখ করা হয়েছে তার নাম। তার স্ত্রী কাফের ছিল। তার সম্প্রদায়ের লোকেরা সমকামিতার মতো পাপে লিপ্ত ছিলো। ফলে আল্লাহতায়ালা তাদের কঠোর শাস্তি প্রদান করেন।

৮. হজরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম। আট সূরায় ১২ জায়গায় উল্লেখ হয়েছে এই নবীর নাম। জন্মের পূর্বেই তাকে বিজ্ঞ বলে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছিল।

৯. হজরত ইসহাক আলাইহিস সালাম। কোরআনের ১২টি সূরায় মোট ১৭ বার আলোচিত হয়েছে তার নাম। তিনি ও ইসমাঈল (আ.) সম্পর্কে ভাই ছিলেন।

১০. হজরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম। ১০টি সূরায় ১৬ বার আলোচিত হয়েছে তার নাম। তার আরেক নাম হলো- ইসরাইল। তার নামানুসারে বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের নামকরণ করা হয়েছে।

১১. হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম। তিনটি সূরায় ২৭ বার উল্লেখ হয়েছে তার নাম। এ ছাড়া সূরা ইউসুফ নামে হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের ঘটনা সম্বলিত একটি স্বতন্ত্র সূরা রয়েছে কোরআনে। তিনি নিজে নবী ছিলেন এবং তার পিতা ইয়াকুব (আ.), তার দাদা ইসহাক (আ.)  ও পরদাদা ইবরাহীম (আ) নবী ছিলেন।

১২. হজরত শোয়াইব আলাইহিস সালাম। চার সূরায় ১১ বার উল্লেখ করা হয়েছে তার নাম। তার সম্প্রদায়ের লোকেরা মাপে বা ওজনে কম দেওয়ার প্রেক্ষিতে আজাবপ্রাপ্ত হয়েছিল।

১৩. হজরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম। চারটি সূরার চার জায়গায় আলোচিত হয়েছে তার নাম। আল্লাহতায়ালা তাকে দীর্ঘকাল কঠিন অসুখ দিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন। কিন্তু তিনি ধৈর্যধারণ করে ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।

১৪. হজরত যুলকিফল আলাইহিস সালাম। দু‍’টি সূরায় দু’বার আলোচিত হয়েছে তার নাম।

১৫. হজরত মুসা আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে সবচেয়ে বেশি বার তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ৩৪টি সূরায় ১৩৭ বার আলোচিত হয়েছেন তিনি। বনী ইসরাঈলের প্রথম নবী ছিলেন তিনি। জন্মের পর মুসা আলাইহিস সালামকে তার মা বাক্সে ভরে নীল নদে ভাসিয়ে দেন। আল্লাহর কুদরত হিসেবে পরে তিনি জালেম বাদশা ফেরাউনের বাড়ীতে লালিত-পালিত হন। নবী মূসাকে আল্লাহতায়ালা অনেকগুলো মুজেযা দিয়েছিলেন। তন্মধ্যে একটি হলো- মূসা (আ.) তার হাতের লাঠি মাটিতে রেখে দিলে তা বিশাল বড় সাপে পরিণত হতো। পরে তিনি সেটা হাতে নিলে আবার লাঠি হয়ে যেত।

১৬. হজরত হারুন আলাইহিস সালাম। ১৩টি সূরায় ২০ বার আলোচিত হয়েছেন তিনি। তিনি নবী মূসা (আ.)-এর ভাই ছিলেন। বাগ্মীতার পারদর্শী ছিলেন তিনি।

১৭. হজরত দাউদ আলাইহিস সালাম। ৯টি সূরায় ১৬ বার উল্লেখ হয়েছে তার নাম। তিনি নিজে রোজগার করে সংসার চালাতেন। তাকে যাবুর কিতাব প্রদান করা হয়েছিল। তিনি একদিন রোজা রাখতেন, আরেকদিন রাখতেন না।

১৮. হজরত সোলায়মান আলাইহিস সালাম। সাতটি সূরায় ১৭ বার উল্লেখ হয়েছে তার নাম। তিনি সারা পৃথিবীর বাদশাহ ছিলেন। পশু-পাখীদের ভাষা বুঝাসহ মুজেযাস্বরূপ বাতাস নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা পেয়েছিলেন তিনি।

১৯. হজরত ইলিয়াস আলাইহিস সালাম। দু’টি সূরায় তিনবার উল্লেখ করা হয়েছে তার নাম।

২০. হজরত ইয়াসা আলাইহিস সালাম। কোরআনে কারিমের দু’টি সূরায় দু’বার অালোচনা করা হয়েছে তার প্রসঙ্গ।

২১. হজরত ইউনুস আলাইহিস সালাম। দু’টি সূরায় দু’বার উল্লেখ হয়েছে তার নাম। তাকে মাছে গিলে ফেলেছিল। পরে তিনি দোয়া করার পর আল্লাহতায়ালা তাকে মুক্তি দিয়েছেন। তিনি নিনুওয়া এলাকার লোকদের নিকট প্রেরিত হয়েছিলেন। পূর্ববর্তী সমস্ত নবীর অধিকাংশ উম্মত তাদের সঙ্গে কুফরি করলেও ইউনুস (আ.)-এর সম্প্রদায়ের সবাই তার প্রতি ঈমান এনেছিলেন।

২২. হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম। চারটি সূরায় সাতবার উল্লেখ হয়েছে পেশায় কাঠুরে এই নবীর নাম।

২৩. হজরত ইয়াইয়া আলাইহিম সালাম। চারটি সূরায় পাঁচবার উল্লেখ হয়েছে তার প্রসঙ্গ। তাকে কিশোর অবস্থাতেই আল্লাহ জ্ঞানী করেছিলেন এবং তাকে তাওরাতের শিক্ষা দিয়েছিলেন।

২৪. হজরত ঈসা আলাইহি সালাম। ১১টি সূরায় ২৫ বার উল্লেখ হয়েছে তার প্রসঙ্গে। তিনি বনী ইসরাইল সম্প্রদায়ের সর্বশেষ নবী। তার আরেক নাম মাসিহ।

২৫. হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। চারটি সূরায় মাত্র চার জায়গায় তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যান্য স্থানে তার গুণবাচক নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অথবা আইয়ুহান নবী কিংবা আইয়ুহার রাসূল বলে সম্বোধন করা হয়েছে। এটা বিশ্বনবীর সম্মান ও মর্যাদার পরিচয় বহন করে।

মূল লিংক 

প্রশ্ন: ৩২১ : ফেরাউন কাদের বলা হয়।

ফেরাউন মূলত কারো নাম নয়। বনি ইসরাইলিদের যুগের ধর্ম যাজক, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের কর্তা ব্যক্তিদের উপাধি। পরবর্তীতে বনি ইসরাইলিরা যখন রাজ্য শাসনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন যারা ঐ অঞ্চলের রাজা হতো তাদেরকে ফেরাউন বলে সম্বোধন করা হতো। এখানে সংক্ষেপে ফেরাউনদের পরিচয় তুলে ধরা হলো-

ক. আমালেকা জাতির রাজার খেতাব ছিল ফেরাউন।

খ. মিশরের অধিবাসী কিবতীদের রাজার খেতাবও ছিল ফেরাউন।

গ. হজরত মুসা আলাইহিস সালামের সময়ের (কিবতীদের শাসক) ফিরাউনের নাম নিয়ে মতভেদ রয়েছে-

১. হজরত মুসা আলাইহিস সালাম এমন এক ফেরাউনের আমলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন- যিনি রামেসিস ও পিথম নগরী নির্মাণ করেন। সে-ই হচ্ছেন দ্বিতীয় রামেসিস।

২. কেউ কেউ বলেন হজরত মুসা আলাইহিস সালাম মাদিয়ানে অবস্থানকালে ক্ষমতাসীন ফেরাউনের (অর্থাৎ দ্বিতীয় রামেসিসের) মৃত্যু ঘটে এবং হযরত মুসার জীবনের পরবর্তী ঘটনাবলী সংঘটিত হয় দ্বিতীয় রামেসিসের উত্তরাধিকারী মারনেপতাহর রাজত্বকালে।

৩. কেউ কেউ বলেন, হজরত মুসা আলাইহিস সালামের যুগের ফেরাউনের নাম ছিল ওলীদ ইবনে মাসআব ইবনে রাইয়ান। তার বয়স হয়েছিল চারশত বছরেরও অধিক। হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের যুগের ফেরাউনের নাম ছিল রাইয়ান। এ দুই ফেরাউনের মধ্যে ৪০০ বছর সময়ের ব্যবধান ছিল।

সুতরাং ফেরাউনদের নাম যাই হোক, তৎকালীন শাসকদের খেতাব ছিল ফেরাউন। ইতিহাসে এ সকল শাসকরা ফিরাউন নামে পরিচিতি লাভ করেছে। সর্বশেষ ফেরাউনের লাশ এখনো বিনা প্রক্রিয়া আল্লাহ তাআলা নির্দশন স্বরূপ অবিকল সংরক্ষণ করেছেন। যা মিসরের মিউজিয়ামে রয়েছে।

এমএমএস/এমএস

মূল লিংক 

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...