প্রশ্ন: ৩২১: জানাজার নামাজের নিয়ম বিধান ও দোয়া ।

মুসলিম কোনো ব্যক্তি মারা গেলে ওই এলাকার অন্যান্য মুসলিম পুরুষদের কর্তব্য হলো মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ আদায় করা। জানাজার নামাজ পড়ার মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা। তার পরকালীন মুক্তি কামনা করা। অন্যের জানাজায় উপস্থিত হলে নিজের মৃত্যুর কথাও স্মরণ হয়। স্মরণ হয় পরকালের কথা। এতে করে পরবর্তী সময়ে অন্যায় ও অপরাধের মাত্রা কমে আসে। বেশি বেশি ভালো কাজ করার ইচ্ছা জাগে। তাই আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী কিংবা অপরিচিতও যদি কেউ মারা যায়Ñ সুযোগ থাকলে তার জানাজায় স্বতঃস্ফ‚র্ত মনে উপস্থিত হওয়া চাই। নিচে জানাজার নামাজের পূর্ণ নিয়ম-কানুন তুলে ধরা হলো।

পবিত্রতা অর্জন
পবিত্র অবস্থায় জানাজা পড়তে হবে। অপবিত্র অবস্থায় জানাজা পড়লে শুদ্ধ হবে না। তাই শুরুতে অজু ও গোসল (যদি প্রয়োজন হয়) করে নেবেন। কোথাও পানির ব্যবস্থা না থাকলে এবং পানি যদি এত দূর হয় যে ওজু করে আসতে আসতে নামাজ শেষ হয়ে যাবে বলে মনে হয়Ñ তাহলে তায়াম্মুম করেও জানাজা পড়া যাবে।
জানাজার নিয়ত
জানাজার নামাজ শুরুর আগে নিয়ত করতে হবে। যারা আরবিতে নিয়ত করতে পারেন, তারা আরবিতে করাই ভালো। আরবি নিয়তটি হলোÑ ‘নাওয়াইতু আন, উয়াদ্দিয়া লিল্লাহি তায়ালা, আরবাআ তাকবিরাতি সালাতিল জানাযাতি ফারযুল কিফায়াতি, আচ্ছানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াচ্ছালাতু আলান্নাবিয়্যি, ওয়া উয়াদ্দিউ লিহাযাল মাইয়্যিতি ইকতিদাইতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।’ তবে ইমাম সাহেব ‘ইকতাদাইতু বিহাযাল ইমাম’ এর বদলে ‘আনা ইমামু লিমান হাজারা ওয়া মাইয়্যাহজুরু’ বলবেন। আর ‘লিহাযাল মাইয়্যিতি’ শব্দটি শুধু পুরুষ লাশের ক্ষেত্রে বলতে হবে। মহিলা লাশ হলে এই শব্দের স্থলে ‘লিহাযিহিল মাইয়্যিত’ বলবেন।
আর যারা আরবিতে নিয়ত করতে পারেন না, তারা মনে মনে বা উচ্চস্বরে বাংলায় বলবেনÑ ‘আমি অতিরিক্ত চার তাকবিরে ফরজে কেফায়া জানাজা নামাজ ইমামের পিছনে আদায় করার মনস্থ করলাম।’ তারপর আল্লাহু আকবার বলে ইমামের সঙ্গে হাত বাঁধবেন।

প্রথম তাকবিরের পর
জানাজার নামাজ তার তাকবিরে আদায় করতে হয়। প্রথম তাকবির বলে হাত বেঁধে ইমাম সাহেব ও মুক্তাদি সবাই ছানা পড়বেন। আরবিতে ছানা হলোÑ ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা, ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।’

দ্বিতীয় তাকবিরের পর
ছানা পড়া শেষে দ্বিতীয় তাকবির দেবেন। তারপর দরুদ শরিফ পড়বেন। আরবিতে দরুদ শরিফ হলোÑ ‘আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।’

তৃতীয় তাকবিরের পর
দরুদ শরিফ শেষে তৃতীয় তাকবির দেবেন। তারপর জানাজার দোয়া পড়বেন। প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির জন্য এই দোয়া পড়বেনÑ ‘আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহীদিনা ওয়া গায়িবিনা ও ছাগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনছা-না। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলাম, ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান, বিরাহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহীমিন।’ তবে মৃত ব্যক্তি যদি নাবালক ছেলে হয় তাহলে এই দোয়া পড়বেন ‘আল্লাহুম্মাজ আলহুলানা ফারতাঁও ওয়াজ আলহুলানা আজরাও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।’ আর যদি নাবালেগা মেয়ে হয় তবে এই দোয়া পড়বেনÑ ‘আল্লাহুম্মাজ আলহা লানা ফারতাঁও ওয়াজ আলহা লানা আজরাঁও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহা লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।’

চতুর্থ তাকবিরের পর
দোয়া শেষে চতুর্থ তাকবির দেবেন। তারপর ইমাম সাহেব ডান ও বাম পাশে সালাম ফেরাবেন। সঙ্গে মুক্তাদিগণও সালাম ফেরাবেন। সালাম ফেরানোর মধ্যে দিয়ে জানাজার নামাজ সম্পন্ন হবে। উল্লেখ, জানাজার নামাজের চারটি তাকবির ও প্রতি তাকবির শেষে যে যে দরুদ ও দোয়ার কথ উল্লেখ করা হলোÑ তা ইমাম ও মুক্তাদি সবাই পড়বেন। তবে নামাজ শেষ করেই সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে দোয়া করা মাকরূহ। কারণ জানাজার নামাজই মূলত মৃত ব্যক্তির জন্য বিশেষ দোয়া। তবে দাফন সম্পন্ন করার পর দোয়া করতে পারবেন। নবীজি (সা.) ও সাহাবাগণ এমনটা করতেন।
লেখক : আলেম ও প্রাবন্ধিক



‘প্রত্যেক প্রাণকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে।’ (সূরা: আল ইমরান, আয়াত ১৮৫)

মানুষ চিরজীবী নয়। প্রত্যেক মানুষকে একদিন পরপারে যেতে হবে। যে শিশুর আজ জন্ম হলো তাকেও একদিন না একদিন এই সুন্দর পৃথিবী ছাড়তে হবে, যেতে হবে পরপারে। এই নির্দিষ্ট সময়ের পৃথিবীটি মানুষের জন্য পরীক্ষা।
 
মৃত্যু এই চিরায়ত নিয়ম ভাঙ্গার নয়, মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা হয়, করা হয় জানাজার নামাজ, যা ফরজে কেফায়া। দাফন এবং কাফনও জানাজার নামাজের মতোই ফরজে কেফায়া। জানাজা নামাজ আদায় করা অতি সাওয়াবের কাজ। জানাজার নামাজকে আরবে ‘সালাত আল মাইয়েত’ বলা হয়, অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করে নামাজ।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে মুসলিম মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করে নাই এমন ৪০জন লোক নামাজ আদায় করবে, তবে মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে তাদের সুপারিশ আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন।’ (মুসলিম)
জানাজার জন্য লাশ কিবলার দিকে রাখতে হবে। লাশ যদি পুরুষ হয় তবে, মাথার পাশ বরাবর ইমাম সাহেব দাঁড়াবেন। আর মহিলা হলে মধ্যবর্তী স্থানে দাঁড়াবেন, এটাই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের সুন্নত।
নামাজের নিয়ম:
জানাজার নামাজ চার তাকবীরের সঙ্গে আদায় করতে হয়। ঈদের নামাজে তাকবীর দেয়ার সময় হাত তুলতে হয়, তবে জানাজার নামাজে তাকবীর দেয়ার সময় হাত তোলার প্রয়োজন পড়ে না। 
জানাজার নামাজের নিয়ত: 
نَوَيْتُ اَنْ اُؤَدِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ تَكْبِيْرَاتِ صَلَوةِ الْجَنَا زَةِ فَرْضَ الْكِفَايَةِ وَالثَّنَا ءُ لِلَّهِ تَعَا لَى وَالصَّلَوةُ  عَلَى النَّبِىِّ وَالدُّعَا ءُلِهَذَا الْمَيِّتِ اِقْتِدَتُ بِهَذَا الاِْمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ
নিয়তের বাংলা উচ্চারন:

নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহে তায়ালা আরবা আ তাকরীরাতে ছালাতিল জানাজাতে ফারজুল কেফায়াতে আচ্ছানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াচ্ছালাতু আলান্নাবীয়্যে ওয়াদ্দোয়াউ লেহাযাল মাইয়্যেতে এক্কতেদায়িতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতে আললাহু আকবার। 
এখানে নিয়তে ‘লেহাযাল মাইয়্যেতে’ পুরুষ/ছেলে লাশ হলে পড়তে হবে, আর লাশ নারী/মেয়ে হলে ‘লেহাযিহিল মাইয়্যেতে’ বলতে হবে।
নিয়ত আরবিতে করতে না পারলে বাংলায় করলেও চলবে, আমি চার তাকবিরের সহিত ফরজে কিফায়া জানাজার নামাজ  কিবলামুখী হয়ে ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে মরহুম ব্যক্তির (পুরুষ/মহিলার) জন্য দোয়া করার উদ্দেশ্যে আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।
জানাজার নামাজে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা ও রাসূলের ওপর দরুদ পাঠ করা হয়। বাংলায় নিয়ত করলে তা বাংলায় বলে অথবা মনে মনে নিয়তে আনলেও চলবে।
নিয়তে তাকবীরে তাহরিমা অর্থাৎ, আল্লাহু আকবার বলার পর হাত তুলে তারপর অন্যান্য নামাজের মতো হাত বেঁধে নিতে হবে। হাত বেধে সানা পড়তে হবে।
আরবিতে সানা:
سُبْحَا نَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَا لَى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ
বাংলা উচ্চারন:
সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা, ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
সানা পড়ার পরে তাকবীর বলে দরুদ শরীফ পড়তে হবে যেটা সাধারন নামাজে তাশাহুদের পর পড়া হয়। 
দরুদ শরীফ:
للَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَ اهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَا هِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌمَّجِيْدٌ
উচ্চারণ: 
আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদি ওয়া আলা আলি মুম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
দরুদ শরীফ পড়ার পর তৃতীয় তাকবীর আদায় করে জানাজার দোয়া পড়তে হয়।
জানাজার দোয়া:
لَّهُمَّ اغْفِرْلحَيِّنَاوَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَا نَا اَللَّهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلَى الاِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَىالاْيمَانِ بِرَحْمَتِكَ يَاَارْ حَمَالرَّحِمِيْنَ
উচ্চারণ: 
আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যেনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িইবিনা ও ছাগীরিনা ও কাবীরিনা ও যাকারিনা ও উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলামী ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান বেরাহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহীমিন।
তবে নাবালক ছেলের ক্ষেত্রে জানাজার দোয়া পড়তে হবে,
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًاوْ اَجْعَلْهُ لَنَا اَجْرً اوَذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَا فِعًة وَمُشَفَّعًا
উচ্চারন: 
আল্লাহুম্মাজ আল হুলানা ফারতাও ওয়াজ আল হুলানা আজরাও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।
নাবালক ছেলের ক্ষেত্রে জানাজার দোয়া পড়তে হবে,
للَّهُمَّ اجْعَلْهَ لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلْهَ لَنَا اَجْرً اوَذُخْرًا وَاجْعَلْهَ لَنَا شَا فِعً وَمُشَفَّعًا
উচ্চারন: 
আল্লাহুম্মাজ আলহা লানা ফারতাও ওয়াজ আলহা লানা আজরাও ওয়া যুখরাও ওয়াজ আলহা লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ ফায়ান। এরপর চতুর্থ তাকবীর দিয়ে একটু নীরব থেকে ডানে এবং বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
যদি কারো নামাজে আসতে দেরী হয়ে যায়, তবে ইমাম সাহেবকে অনুসরণ করতে হবে। সম্ভব হলে চার তাকবীর আদায় করে নিতে হবে, তা যদি সম্ভব না হয়, তবে ইমাম সাহবকে অনুসরণ করে সালাম ফিরিয়ে নিয়ে জানাজা নামাজ সম্পন্ন করবে। জানাজা নামাজ জামাতে আদায় করতে হয়,তাই এটি কাজা পড়ার সুযোগ নেই। 
ফরজে কেফায়া হওয়ার কারণে জানাজার নামাজ সমাজের কিছু মানুষ আদায় করলে দায়মুক্ত হওয়া যাবে। তবে, কেউ আদায় না করলে একসঙ্গে সবাই পাপের ভাগীদার হবে। সমস্যা থাকলে বা গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকলে একি এলাকার অন্য কেউ নামাজ পড়লে গুনাহগার হবে না।
হাদিসে আছে জানাজার নামাজে উহুদ পরিমাণ সাওয়াব আদায় হয়, তাই সুযোগ পেলে এই নামাজ ছাড়া উচিত নয়। এছাড়া একজন প্রতিবেশী হিসেবে, একজন আত্নীয় হিসেবেও এ নামাজ আদায় করা মুসলমানের দায়িত্ব এবং কর্তব্য।
ডেইলি বাংলাদেশ/আরএজে

প্রশ্ন: ৩২০ : সন্তান জন্ম হলে আজান কিভাবে দিতে হবে।

প্রশ্ন : সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ডান কানে আজান ও বাঁ কানে ইকামত দিতে হবে। আজান ও ইকামতের শব্দগুলো কি জোরে বলতে হবে, নাকি আস্তে কানের কাছে গিয়ে বলতে হবে?
উত্তর : ডান কানে আজান ও বাঁ কানে ইকামতের হাদিসটার দুর্বলতা আছে। তবে আজানটা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। এ জন্য আজান দিলেই যথেষ্ট। তবে আজানটা জোরে নয়, যেন বাচ্চার কান ফেটে যায়, বাচ্চা ভয় পায়, কান্নাকাটি আরম্ভ করে, এমনভাবে নয়।
আসলে এর উদ্দেশ্যটা আমাদের জানতে হবে। আজানের উদ্দেশ্য হচ্ছে, এই বাচ্চা দুনিয়াতে এসেছে, সে যেন ইসলামের ওপর থাকে, ফেতরাতের ওপর থাকে। এ জন্য প্রথম ধ্বনি তার কানে যেন যায়, আল্লাহু আকবার, আল্লাহ সবচেয়ে বড় এবং সর্বশেষ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, এটাও যেন তার কানে যায়। আল্লাহর শাহাদাত, তাওহিদের সাক্ষ্য, রাসুলের রিসালাতের সাক্ষ্য, সালাতের সাক্ষ্য, কল্যাণের সাক্ষ্য—এগুলো সবই যেন আপনার সন্তানের ওপর আসর করে, তার ওপর যেন প্রভাব পড়ে, এটাই শরিয়ত চায়। এটা যদি আপনি আদায় করতে পারেন। আস্তে আস্তে বলুন কানের কাছে, যেন আজানের শব্দগুলো যায়, জোরে নয়। অনেক বাড়িতে আজান দিয়ে বসে। এটা আবার ভুল কাজ। বাড়িতে আজান দেওয়াটা ঠিক নয়। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আস্তে আস্তে তার কানের কাছে আজানটা বলুন। পুরুষ-নারী যে কেউ আজান দিতে পারবেন। কারো জন্য নিষেধ নেই। তবে উত্তম হচ্ছে পুরুষ বলা, আজান যেহেতু পুরুষের কাজ।
এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে বাচ্চাকে শোনানো, নামাজের জন্য ডাকা বা আহ্বান করা নয়। বাচ্চাকে এটা শোনানোর অর্থ হচ্ছে বাচ্চা যেন তাওহিদবাদী হয়, রাসুল (সা.)-এর রিসালাতকে যেন স্বীকার করে, দ্বীনের ওপর যেন থাকে, নামাজ আদায়কারী হয়, এটাই মূল উদ্দেশ্য। রাসুল (সা.) কী উদ্দেশ্যে কোন কাজটা করেছেন, সেটা জানলে আমাদের জন্য আমল করা সহজ হবে। সুতরাং বাচ্চাকে কোলে নিয়ে ধীরে ধীরে বলবেন, খুব জোরে নয়। কারণ, এটা করতে গিয়ে বাচ্চার ওপর যেন উল্টো প্রভাব না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আর ইকামত নয়, শুধু আজানই দেবেন। তবে ডান বা বাঁ কান নির্দিষ্ট নয়। আপনি কোলে নিয়ে আস্তে আস্তে বলবেন, বাচ্চা শুনবে। এখানে কান কোনো লক্ষ্য নয়।

প্রশ্ন: ৩১৯ : ইসলামে নারীদের পর্দার বিধান।



ইসলাম বিশ্বজনীন এক ‍চিরন্তন ও শাশ্বত পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। ইসলামে রয়েছে নারীর সম্মান, মর্যাদা ও সকল অধিকারের স্বীকৃতি, রয়েছে তাদের সতীত্ব সুরক্ষা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপক কর্মসূচী। তাদের সম্মান, মর্যাদা ও সতীত্ব অক্ষুন্ন রাখতেই ইসলাম তাদের উপর আরোপ করেছে হিজাব বা পর্দা পালনের বিধান।










মূলত ‘হিজাব বা পর্দা’ নারীর সৌন্দর্য ও মর্যাদার প্রতীক। নারীর সতীত্ব ও ইজ্জত-আবরুর রক্ষাকবচ। নারী-পুরুষ উভয়ের চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার অতি সহজ ও কার্যকর উপায়।






এ বিধান অনুসরণের মাধ্যমে হৃদয়-মনের পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এ বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।’ (সূরা আহযাব: ৫৩)






ইসলাম পর্দা পালনের যে বিধান আরোপ করেছে তা মূলত অশ্লীলতা ও ব্যভিচার নিরসনের লক্ষ্যে এবং সামাজিক অনিষ্টতা ও ফেতনা-ফাসাদ থেকে বাঁচার নিমিত্তেই করেছে। নারীদের প্রতি কোনো প্রকার অবিচার কিংবা বৈষম্য সৃষ্টির জন্য করেনি।






বরং তাদের পবিত্রতা ও সতীত্ব রক্ষার্থেই তাদের উপর এ বিধানের পূর্ণ অনুসরণ অপরিহার্য করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’ (সূরা আহযাব: ৩৩)






এ জন্য পর্দা-বিধান ইসলামী শরীয়তের পক্ষ থেকে সাধারণভাবে সমাজ-ব্যবস্থার এবং বিশেষভাবে উম্মতের নারীদের জন্য অনেক বড় ইহসান। এ বিধানটি মূলত ইসলামী শরীয়তের যথার্থতা, পূর্ণাঙ্গতা ও সর্বকালের জন্য অমোঘ বিধান হওয়ার এক প্রচ্ছন্ন দলিল।






মানবসমাজকে পবিত্র ও পঙ্কিলতামুক্ত রাখতে পর্দা বিধানের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে বর্তমান সমাজের যুবক ও তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা ও নারীজাতির নিরাপত্তার জন্য পর্দা-বিধানের পূর্ণ অনুসরণ এখন সময়ের দাবি।










পর্দা-পরিচিতি: ‘পর্দা’ শব্দটি মূলত ফার্সী। যার আরবী প্রতিশব্দ ‘হিজাব’। পর্দা বা হিজাবের বাংলা অর্থ- আবৃত করা, ঢেকে রাখা, আবরণ, আড়াল, অন্তরায়, আচ্ছাদান, বস্ত্রাদি দ্বারা সৌন্দর্য ঢেকে নেয়া, আবৃত করা বা গোপন করা ইত্যাদি।






ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, নারী-পুরুষ উভয়ের চারিত্রিক পবিত্রতা অর্জনের নিমিত্তে উভয়ের মাঝে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত যে আড়াল বা আবরণ রয়েছে তাকে পর্দা বলা হয়।






আবার কেউ কেউ বলেন, নারী তার বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ রূপলাবণ্য ও সৌর্ন্দয পরপুরুষের দৃষ্টি থেকে আড়ালে রাখার যে বিশেষ ব্যবস্থা ইসলাম প্রণয়ন করেছে তাকে পর্দা বলা হয়।






মূলত হিজাব বা পর্দা অর্থ শুধু পোশাকের আবরণই নয়, বরং সামগ্রিক একটি সমাজ ব্যবস্থা, যাতে নারী-পুরুষের মধ্যে অপবিত্র ও অবৈধ সম্পর্ক এবং নারীর প্রতি পুরুষের অত্যাচারী আচরণ রোধের বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে।






পর্দার বিধান: পর্দা ইসলামের সার্বক্ষণিক পালনীয় অপরিহার্য বিধান। কোরআন-সুন্নাহর অকাট্য দলীল প্রমাণাদির ভিত্তিতে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি বিধানাবলীর মতো সুস্পষ্ট এক ফরয বিধান।






আল্লাহ তায়ালাই এ বিধানের প্রবর্তক। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন তোমরা তাদের নিকট কিছু চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এ বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ’। (সূরা আহযাব: ৫৩)






এ বিধানের প্রতি পূর্ণ সমর্পিত থাকাই ঈমানের দাবি। এ বিধানকে হালকা মনে করা কিংবা এ বিধানকে অমান্য করার কোনো অবকাশ নেই। কেননা ইসলামী শরীয়তের সুস্পষ্ট বিধানের বিরোধিতা করার অধিকার কারো নেই।






এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ এবং তার রাসূল কোনো বিষয়ের নির্দেশ দিলে কোনো মু’মিন পুরুষ কিংবা কোনো মু’মিন নারীর জন্য সে বিষয় অমান্য করার কোনো অধিকার থাকে না। আর যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করে সে অবশ্যই পথভ্রষ্ট।’ (সূরা আহযাব: ৩৬)










পর্দার গুরুত্ব: পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে নবী আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মু’মিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের একাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আহযাব: ৫৯)






এ আয়াতে পর্দার সঙ্গে চলাফেরা করার গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে যে, পর্দার সহিত চলাফেরা করলে সবাই বুঝতে পারবে তারা শরীফ ও চরিত্রবতী নারী। ফলে পর্দানশীন নারীদেরকে কেউ উত্যক্ত করার সাহস করবে না।






প্রকৃতপক্ষে যারা পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করে অধিকাংশ সময় তারাই ইভটিজিং ও ধর্ষণসহ নানা রকমের নির্যাতনের সম্মুখীন হয় এবং রাস্তাঘাটে তারাই বেশি ঝামেলার শিকার হয়। তাই নারীর সতীত্ব ও ইজ্জত-আবরু রক্ষার্থে পর্দার গুরুত্ব অপরিসীম।






হাদীস শরীফেও পর্দার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, নারী পর্দাবৃত থাকার বস্তু। যখন সে পর্দাহীন হয়ে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। (তিরমিযী: ১১৭৩)






অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, একদা তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকটে ছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সাহাবীদের উদ্দেশ্যে) বললেন, মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম বিষয় কোনটি? তারা চুপ হয়ে গেলেন। (কেউ বলতে পারলেন না)






অতপর আমি ফিরে এসে ফাতেমা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম, মহিলাদের জন্য সর্বোত্তম বিষয় কোনটি ? তিনি বললেন, কোনো পরপুরুষ তাকে দেখবে না (অর্থাৎ নারী পর্দাবৃত থাকবে)। তারপর আমি ঐ বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, নিশ্চয় ফাতেমা আমার অংশ, সে সত্য বলেছে)। (মুসনাদুল বাযযার: ৫২৬)






এতে পর্দার গুরুত্ব পরিস্ফূটিত হয়। আর পারিপার্শ্বিকতার বিবেচনায় বিবেকের দাবীও তাই। এছাড়াও পর্দা পালনের মাধ্যমে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় ও সম্মানিত হতে পারে।






কেননা হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা পর্দানশীনদের ভালোবাসেন। আর কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন ও সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন।’ (সূরা হুজুরাত: ১৩)






প্রকৃত অর্থে তাকওয়া সম্পন্ন বা মুত্তাকী হলো ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহর নির্দেশসমূহ মেনে চলে। আর সর্বসম্মতিক্রমে পর্দা আল্লাহর সুস্পষ্ট নির্দেশ। যেহেতু পর্দা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য অবশ্য পালনীয় নির্দেশ সেহেতু পর্দা পালনের মাধ্যমে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত ও মর্যাদা সম্পন্ন হতে পারে।






এছাড়াও পর্দা-বিধান সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করলে আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে, এ বিধানের পূর্ণ অনুসরণের মাধ্যমে নারী ও পুরুষের নৈতিক চরিত্রের হিফাযত হয়। পারিবারিক ব্যবস্থা সুরক্ষিত ও সুদৃঢ় হয়।






কারণ, পর্দা পালনের কারণে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে পরকিয়াবিহীন পবিত্র জীবন গঠিত হয় এবং চরিত্রহীনতা ও অবিশ্বাস তাদের থেকে বিদায় নেয়। তাই মুসলিম উম্মাহ অকপটে স্বীকার করতে বাধ্য যে, দুনিয়া ও আখিরাতে পর্দার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।






পর্দাহীনতার পরিণতি: মূলত পর্দাহীনতার কারণে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা, অপকর্ম ও ব্যভিচারের মতো নিকৃষ্ট পাপের সূচনা হয়। যার কারণে ইভটিজিং, ধর্ষণ ও যৌন সন্ত্রাস প্রকট আকার ধারণ করে। ফলে নানা অঘটনসহ ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন বিপর্যস্ত হয়। যার বাস্তব চিত্র নিত্যদিনের সংবাদপত্র খুললেই চোখে পড়ে।






এছাড়াও পর্দাহীনতার কারণে পরকিয়া ও চরিত্রহীনতার মতো ঘৃণিত কর্মের সূত্রপাত হয়। যার ফলে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস উঠে যায়। এতে পরিবারে অশান্তি ও বিপর্যয় নেমে আসে। যার বাস্তবতা আজ আমাদের নখদর্পণে।






মূলত পর্দাহীন নারীরা হচ্ছে জগতের সবচেয়ে নিকৃষ্ট নারী। তাদের ব্যাপারে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সবচে নিকৃষ্ট তারাই যারা পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করে। (বায়হাকী: ১৩২৫৬)






তাই আমরা বলতে পারি যে, সুসভ্য ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী নারী কিছুতেই পর্দাহীন হতে পারে না। এমনকী অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে রসূলুল্লাহ (রা.) তাদেরকে লা’নত দিয়েছেন।






এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) লা’নত (অভিশাপ) দিয়েছেন সেসব নারীদেরকে যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে। অর্থাৎ পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করে। (আবু দাউদ: ৪০৯৭)






এছাড়াও পর্দাহীনতার কারণে আল্লাহর বিধানকে অমান্য করা হয়। আর এ অবাধ্যতার কারণে আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।






এ প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, দুই শ্রেণীর জাহান্নামীদেরকে আমি দেখিনি (অর্থাৎ পরবর্তী সময়ে সমাজে তাদের দেখা যাবে)। এক. এমন সম্প্রদায়, যাদের হাতে গরুর লেজের মত চাবুক থাকবে, আর সেই চাবুক দিয়ে তারা (অন্যায়ভাবে) মানুষকে প্রহার করবে।






দুই. এমন নারী, যারা পোশাক পরিধান করা সত্ত্বেও নগ্ন। তারা অন্যদেরকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করে এবং নিজেরাও অন্যদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তাদের মাথা হবে উটের হেলে পড়া কুঁজের মতো। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না, অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকেও পাওয়া যায়। (মুসলিম: ৫৪৪৫)






এ হাদীসে মূলত পর্দাহীনতার ভয়াবহ পরিণতির প্রতি ইঙ্গিত করেই বলা হয়েছে যে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এমনকী জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।






এ বিষয়টি অন্যত্র আরো স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বর্ণনা করেন রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক. পিতা-মাতার অবাধ্যকারী। দুই. দাইয়ুস (অর্থাৎ এমন পুরুষ, যে তার অধীনস্ত নারীদেরকে পর্দায় রাখে না)। তিন. পুরুষের ন্যায় চলাফেরা করা নারী (অর্থাৎ বেপর্দা নারী)। (মুসতাদরাকুল হাকিম: ২৪৪)






এ হাদীস থেকে পর্দাহীনতার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে জানা যায় যে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি। তাই জান্নাত প্রত্যাশী কোনো নারী কিছুতেই পর্দাহীন হতে পারে না। এ হাদীস থেকে আরো জানা যায় যে, যেসব পুরুষ তাদের অধীনস্ত নারীদের পর্দায় রাখার চেষ্টা করে না, তাদের জন্যও অনুরূপ পরিণতি।






যেভাবে পর্দা পালন করতে হবে: একজন নারীর পর্দা পালনের তিনটি পর্যায় রয়েছে। যথা- গৃহে অবস্থানকালীন পর্দা, বাইরে গমনকালীন পর্দা এবং বৃদ্ধা অবস্থায় পর্দা।






কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেকটি পর্যায়ে পর্দা রক্ষা করে চলতে হবে। সামনে পর্দার তিনটি পর্যায় সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা করা হল।






গৃহে অবস্থানকালীন পর্দা: নারীর প্রধান আবাসস্থল হলো তার গৃহ। সাধারণত গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করা নারীর জন্য শোভনীয়। এ জন্য আল্লাহ তায়ালা নারীদেরকে তাদের গৃহাভ্যন্তরে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছেন।






এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তোমরা তোমাদের গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করো, প্রাচীন জাহেলী যুগের নারীদের ন্যায় নিজেদেরকে প্রর্দশন করো না। (সূরা আহযাব: ৩৩)






আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, নারীর প্রকৃত অবস্থানক্ষেত্র হচ্ছে তার গৃহ। নারী প্রয়োজন ব্যতীত গৃহের বাইরে যাবে না বরং গৃহেই অবস্থান করবে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৬/৪০৯)






মূলত নারী নিজেকে যত সংযত ও আবৃত রাখে আল্লাহ তায়ালার কাছে সে ততোই প্রিয় হয়ে ওঠে। ইসলামের দৃষ্টিতে তার মর্যাদা ও ব্যক্তিত্ব ততোই উচ্চতর হয়ে ওঠে।






এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, নারী তার পালনকর্তার সর্বাদিক নিকটে তখনই থাকে যখন সে তার গৃহে অবস্থান করে। (সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫৫৯৯)






তাই মু’মিন নারীদের উচিত গৃহাভ্যন্তরে এমনভাবে অবস্থান করা যাতে আত্মীয় বা অনাত্মীয় কোনো গায়রে মাহরাম বা পরপুরুষের দৃষ্টিতে সে না পড়ে। আর এভাবে গৃহে অবস্থান করার মাধ্যমেই পর্দার যথার্থতা অর্জিত হয়।






এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যখন তোমরা তাদের (নবী পত্মীদের) কাছে কিছু চাইবে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এ বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব: ৫৩)






এ আয়াতে বিশেষভাবে নবী-পত্মীদের কথা উল্লেখ থাকলেও এ বিধান সমগ্র উম্মতের জন্য ব্যাপকভাবে প্রযোজ্য।






এ বিধানের সারমর্ম এই যে, নারীদের কাছ থেকে ভিন্ন পুরুষদের কোনো ব্যবহারিক বস্তু, পাত্র, বস্ত্র ইত্যাদি নেয়া জরুরী হলে সামনে এসে নেবে না, বরং পর্দার আড়াল থেকে চেয়ে নিবে।






এ নির্দেশনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, নারীরা তাদের গৃহে অবস্থানকালীন মুহুর্তেও গায়রে মাহরাম বা পরপুরুষ, নিকটাত্মীয় হোক বা দূরাত্মীয় সকলের কাছ থেকে সম্পূর্ণ পর্দার আড়ালে অবস্থান করবে।






তবে প্রয়োজন হলে পর্দার আড়াল থেকেই কথা বলবে। আর পরপুরুষরাও পর্দার আড়াল থেকেই কথা বলতে হবে। এতে পর্দার অপরিহার্যতা পরিস্ফূটিত হয়।






আয়াতের শেষাংশে পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, পর্দার এ বিধান পুরুষ ও নারী উভয়ের অন্তরকে মানসিক কুমন্ত্রণা থেকে পবিত্র রাখার উদ্দেশ্যে দেয়া হয়েছে।






এখানে প্রণিধানযোগ্য বিষয় এই যে, এস্থলে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পুণ্যাত্মা পত্মীদেরকে পর্দার বিধান দেয়া হয়েছে, যাদের অন্তরকে পবিত্র রাখার দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা গ্রহণ করেছেন।






অপরদিকে যেসব পুরুষকে সম্বোধন করে এই বিধান দেয়া হয়েছে, তারা হলেন রাসূলে করীম (সা.) এর সাহাবায়ে কিরাম, যাদের মধ্যে অনেকের মর্যাদা ফেরেশতাগণেরও উর্ধ্বে।






কিন্তু এসব বিষয় সত্ত্বেও তাদের আন্তরিক পবিত্রতা ও মানসিক কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য পুরুষ ও নারীর মধ্যে পর্দার ব্যবস্থা করা জরুরী মনে করা হয়েছে।






(তাহলে বলুন তো ) আজ এমন ব্যক্তি কে, যে তার মনকে সাহাবায়ে কিরামের পবিত্র মন অপেক্ষা এবং তার স্ত্রীর মনকে পুণ্যাত্মা নবী-পত্মীদের মন অপেক্ষা অধিক পবিত্র হওয়ার দাবি করতে পারে। আর এটা মনে করতে পারে যে, নারীদের সাথে তাদের মেলামেশা কোন অনিষ্টের কারণ হবে না! (তাফসীরে মা’আরেফুল কুরআন: ৭/১৯৫)






বহু বিশুদ্ধ হাদীস থেকেও প্রতিভাত হয় যে, উম্মাহাতুল মু’মিনীন বা নবীপত্মীরা সাধারণত তাদের গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করার মাধ্যমেই পর্দা পালন করতেন। আল্লাহ তায়ালা মু’মিন নারীদেরকেও অনুরূপভাবে পর্দা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।






এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, (হে নবী) মু’মিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তবে যা সাধারণত (অনিচ্ছা সত্ত্বে) প্রকাশিত হয়ে যায় তা ভিন্ন। তারা যেন ওড়না দিয়ে তাদের বক্ষকে আবৃত করে রাখে।






আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া অন্য কারো কাছে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন তাদের গোপন সাজ্জসজ্জা প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার। (সূরা নূর: ৩১)










এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, নারীরা মাহরাম পুরুষ অর্থাৎ এমন পুরুষ যাদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম বা নিষিদ্ধ, তারা ব্যতীত অন্য কোনো পুরুষের সামনে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে পারবে না। এতে পর্দার অপরিহার্যতা প্রমাণিত হয়।






এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা নারীদের নিকট যাওয়া থেকে বিরত থাক। তখন এক আনসার সাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! দেবরের ব্যাপারে আপনার অভিমত কি ? তিনি বললেন, দেবর হচ্ছে মৃত্যুতুল্য। (বুখারী: ৫২৩২)






আলোচ্য হাদীসে ব্যবহৃত ‘হামউ’ শব্দের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে স্বামীর নিকটাত্মীয়। শব্দটির উদ্দেশ্য ব্যাপক। শব্দটি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, স্বামীর যেকোনো দিকের ভাই, চাচা, মামা, খালু, ফুফা এবং তাদের প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে সন্তান। যেমন: দেবর, ভাসুর, চাচা শ্বশুর, মামা শ্বশুর, তাদের প্রত্যেকের ছেলে সন্তান ইত্যাদি।






ইমাম তিরমিযী, লাইস ইবনু সা’দ, আল্লামা কাযী ইয়ায ও তাবারী সহ বহু আলেম অনুরূপ ব্যাখ্যা করেছেন। অর্থাৎ নারীর জন্য তার দেবর, ভাসুর, চাচা শ্বশুর, মামা শ্বশুর ও তাদের ছেলেদের সামনে নিজেকে প্রদর্শন করা থেকে দূরে থাকতে হবে যেভাবে মৃত্যু থেকে দূরে থাকতে চায়।






আর এ ব্যাপারে সর্বোপরি কথা হলো, নারীরা তাদের গৃহে অবস্থানকালীন মুহুর্তে মাহরাম নয় এমন সকল পুরুষ থেকে পূর্ণ পর্দা রক্ষা করে চলবে। অর্থাৎ নারীরা এমনভাবে গৃহে অবস্থান করবে যাতে নিকটাত্মীয় বা দূরাত্মীয় কোনো গায়রে মাহরাম বা বেগানা পুরুষের নজরে সে না পড়ে। গৃহে অবস্থানকালীন মুহুর্তে এভাবে পর্দাবৃত থাকা নারীর জন্য অপরিহার্য।










বাইরে গমনকালীন পর্দা: বলা বাহুল্য যে, নারীদের জন্য গৃহের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন অবশ্যম্ভাবী। এজন্য ইসলাম প্রয়োজনে নারীকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন।






এ প্রসঙ্গে সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সা.) তার স্ত্রী হযরত সাওদা (রা.) কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, প্রয়োজনে তোমাদেরকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। (বুখারী: ৪৭৯৫)






মূলত ইসলাম একটি সর্বাঙ্গীন ও পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। তাই মানব প্রয়োজনের সকল দিকই ইসলামে বিবেচিত হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে পর্দাবৃত হয়েই বাইরে বের হতে হবে। কিছুতেই পর্দাহীনভাবে বের হওয়া যাবে না।






এ প্রসঙ্গে বিশ্বনবী (সা.) বলেন, নারী পর্দাবৃত থাকার বস্তু, যখনই সে পর্দাহীনভাবে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে উঁকি মেরে তাকায়। (তিরমিযী: ১১৭৩)






আর পবিত্র কোরআনে নারীদেরকে বাইরে গমনকালীন মুহুর্তে পূর্ণ পর্দা পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালার সুস্পষ্ট নির্দেশ, ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা এবং মু’মিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন (প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার সময়) তাদের (পরিহিত) জিলবাবের একাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আহযাব: ৫৯)






এ আয়াতে নারীদেরকে বাইরে গমনের সময় তাদের পরিহিত জিলবাবের একাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।






ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন, জিলবাব হলো নারীর এমন পোশাক যা দিয়ে তারা পুরো দেহ ঢেকে রাখে। অর্থাৎ বাইরে গমনের সময় দেহের সাধারণ পোশাক- জামা, পাজামা, ওড়না ইত্যাদির উপর আলাদা যে পোশাক পরিধান করার মাধ্যমে নারীর আপাদমস্তক আবৃত করা যায় তাকে জিলবাব বলা হয়। আমাদের দেশে যা বোরকা নামে পরিচিত।






এ থেকে বুঝা যায় যে, বাইরে গমনের সময় বোরকা পরিধান করে আপাদমস্তক আবৃত করে বের হওয়া আবশ্যক। আর আয়াতে জিলবাবের একাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়ার যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মাথা ও মুখমণ্ডল ঢেকে নেয়া। যা সাহাবী, তাবেয়ী ও নির্ভরযোগ্য মুফাসসিরদের তাফসীর থেকে প্রতিভাত হয়।






এ প্রসঙ্গে আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা (এ আয়াতে) মুমিন নারীদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, প্রয়োজনে তারা যখন বাইরে যাবে তখন তারা যেন জিলবাব দিয়ে (পুরো দেহ আবৃত করার পর) তাদের মাথার উপর দিক থেকে তাদের মুখমণ্ডলও আবৃত করে নেয়। তবে তারা (চলাফেরার সুবিধার্থে) একটি চোখ খোলা রাখবে। (ইবনে কাসীর: ৬/৪৮২)






প্রখ্যাত তাবেয়ী মুহাম্মদ ইবনে সিরীন (রহ.) বলেন, আমি আবীদাহ সালামানীহকে এ আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম তখন তিনি তার মাথা ও মুখমণ্ডল ঢেকে নিলেন। অর্থাৎ তিনি বুঝিয়েছেন যে, এ আয়াতে (পুরো দেহ আবৃত করার পর) মাথা ও মুখমণ্ডল ঢেকে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (ইবনে কাসীর: ৬/৪৮২)






সাহাবী ও তাবেয়ীগণের পরবর্তী মুফাসসিরদের ব্যাখ্যার দিকে তাকালেও দেখা যায় যে, ইবনে জারীর তাবারী, ইবনে কাসীর, বায়যাবী, বাগভী, নাসাফী, সুয়ূতি, আবু বকর জাসসাস, মুফতি মুহাম্মদ শফিসহ সব তাফসীরকারকগণ এ আয়াতের অনুরূপ ব্যাখ্যাই করেছেন।






অর্থাৎ সকলে একমত পোষণ করেছেন যে, এ আয়াতে নারীদেরকে তাদের চেহারাসহ আপাদমস্তক আবৃত করে বের হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে বাইরে গমনকালীন পর্দার অপরিহার্যতা প্রমাণিত হয়।






আর এ ব্যাপারে সর্বোপরি কথা হলো, কোনো প্রয়োজনে নারীকে বাইরে যেতে হলে তখন তার জন্য আবশ্যক হচ্ছে চেহারাসহ গোটা দেহ আবৃত করে পূর্ণ পর্দার সঙ্গে বের হওয়া। যা সর্বসম্মতিক্রমে ফরয।






এক্ষেত্রে জিলবাব বা বোরকা পরিধানের মাধ্যমে আপাদমস্তক আবৃত করে নিবে। প্রয়োজনে চেহারা বা মুখমণ্ডলের জন্য আলাদা নিকাব ব্যবহার করবে। আর হাতের কব্জি ও পায়ের গোড়ালীর জন্য মোজা পরিধান করবে। তবে চলাফেরার সুবিধার্থে রাস্তা-ঘাট দেখার জন্য শুধু চোখ খোলা রাখবে।






বৃদ্ধা অবস্থায় পর্দা: বয়স্ক নারীদের জন্য পর্দা পালনের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা গ্রহণেন অবকাশ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতিশয় বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না, তাদের জন্য অপরাধ নেই, যদি তারা তাদের সৌর্ন্দয প্রদর্শন না করে তাদের অতিরিক্ত বস্ত্র খুলে রাখে। তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা নূর: ৬০)






আয়াতের নির্দেশনা হল, যে বৃদ্ধা নারীর প্রতি কেউ আকর্ষণ বোধ করে না এবং সে বিবাহেরও যোগ্য নয় তার জন্য পর্দার বিধান শিথিল করা হয়েছে। গায়রে মাহরাম ব্যক্তিও তার কাছে মাহরামমের ন্যায় হয়ে যায়। মাহরামদের কাছে যেসব অঙ্গ আবৃত করা জরুরী নয়। বৃদ্ধা নারীদের জন্য গায়রে মাহরাম পুরুষদের কাছেও সেগুলো আবৃত করা জরুরী নয়।






এরূপ বৃদ্ধা নারীর জন্য বলা হয়েছে, মাহরাম পুরুষদের সামনে যেসব অঙ্গ খুলতে পারবে, গায়রে মাহরাম পুরুষদের সামনেও সেগুলো খুলতে পারবে। (তাফসীরে মা’আরেফুল কুরআন: ৬/৪৩৯)






এ ব্যাপারে সর্বোপরি কথা হলো, চরম বার্ধক্যে পৌঁছার কারণে যেসকল নারী বিবাহের উপযুক্ত নয় এবং যাদের প্রতি কারো আকর্ষণ সৃষ্টি হয় না, এ ধরনের বৃদ্ধা নারীর জন্যই এ বিধান। তাদেরকে এই সুবিধা দেয়া হয়েছে যে, গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে অন্যান্য নারীদেরকে যেমন আপাদমস্তক ঢেকে রাখতে হয়, তাদের জন্য তা জরুরী নয়।






এ রকম বৃদ্ধা নারীগণ তা ছাড়াই পরপুরুষের সামনে যেতে পারবে। তবে শর্ত হল, তারা তাদের সামনে সেজেগুঁজে যেতে পারবে না। এর সঙ্গে স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বিধানের এ শিথিলতা কেবলই জায়েয পর্যায়ের।






সুতরাং তারা যদি বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে এবং অন্যান্য নারীদের মত তারাও পরপুরুষের সামনে পুরোপুরি পর্দা রক্ষা করে চলে তবে সেটাই তাদের জন্য উত্তম। (তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন: ২/৪৬৮)






পরিশেষে বলছি, এ বিধানের ব্যাপারে সারকথা হলো, কোরআন-সুন্নাহর আলোকে সর্বসম্মতিক্রমে হিজাব বা পর্দা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নারী জাতির জন্য এক ফরয বিধান। সর্বাবস্থায় এ বিধানের প্রতি পূর্ণ সমর্পিত থাকা অপরিহার্য।






তবে চিকিৎসা ইত্যাদি বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন মাফিক শিথিলতা গ্রহণের অবকাশও অবশ্যই রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা যথাযথভাবে এ বিধান পালনের তাওফীক দান করুক। আমিন।






লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

প্রশ্ন: ৩১৮ : মাতা-পিতার হক সম্পর্কে কুরআন ও হাদীস

সন্তানের কাছে মাতা-পিতার প্রাপ্য অধিকারই তাদের হক। সৃষ্টি জগতে মানুষের প্রতি সর্বাধিক অনুগ্রহ প্রদর্শনকারী ব্যক্তি হচ্ছে মাতা-পিতা। তাই মাতা-পিতাই তার সর্বাপেক্ষা আপনজন। মাতা-পিতার প্রতিই সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য সর্বাধিক। সন্তানের জন্য অবধারিত মাতা-পিতার প্রতি অবশ্য পালনীয় এসব দায়িত্ব কর্তব্যই মাতা-পিতার হক রূপে আখ্যায়িত হয়।
মাতা-পিতার হক সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ বলেন : ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তার সঙ্গে কোন বস্তুকে শরীক করো না এবং মাতা-পিতার প্রতি উত্তম আচরণ কর।’ (নিসা ৩৬)
‘আর তোমার প্রতিপালক এ আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাঁকে ভিন্ন অপর কারো ইবাদত করো না। আর মাতা-পিতার প্রতি উত্তম আচরণ কর। যদি তাঁদের একজন কিংবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাঁদের উদ্দেশ্যে কখনো ‘উহ’ পর্যন্ত বলবে না। তাদেরকে ধমক দিও না, বরং তাদের সঙ্গে মার্জিত ভাষায় কথা বল। আর তাদের উদ্দেশ্যে অনুগ্রহে বিনয়ের বাহু অবনমিত কর। আর বল, হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়কে অনুগ্রহ কর, যেমন তাঁরা আমাকে শৈশবে প্রতিপালন করেছেন।’ (বনী ইসরাঈল ২৩-২৪)
‘আর আমি মানুষকে তার মাতা-পিতা সম্পর্কে আদেশ করেছি। তার মাতা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভধারণ করেছেন। দুই বছর পর্যন্ত তাকে স্তন্য দান করেছেন। এ মর্মে যে, তোমরা আমার এবং তোমাদের মাতা-পিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে।’ (লোকমান ১৪)
‘আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি। আর যদি তোমার মাতা-পিতা তোমাকে আমার সঙ্গে শিরক করার জন্য পীড়াপীড়ি করে, যে সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের আনুগত্য করো না।’ (আনকাবুত ৮)
‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে মাতা-পিতা ও আমার গৃহে মুমিন হয়ে প্রবেশকারীদেরকে এবং সব ঈমানদার নর-নারীকে ক্ষমা করুন।’ (নূহ ২৮)
মাতা-পিতার হক সম্পর্কে হাদীস : হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। নবী করীম (সা.) বলেছেন, তার নাক ধূলায় মলিন হোক, তার নাক ধূলায় মলিন হোক, তার নাক ধূলায় মলিন হোক। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে হতভাগ্য ব্যক্তিটি কে? হুজুর (সা.) বললেন সে হলো সেই ব্যক্তি যে তার মাতা-পিতা উভয়কে অথবা কোন একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেয়েও বেহেশতে যেতে পারল না। (মুসলিম)
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আমার সর্বোত্তম ব্যবহারের হকদার কে? হুজুর (সা.) বললেন তোমার মা। লোকটি পুনরায় প্রশ্ন করল অতঃপর কে? হুজুর (সা.) বললেন তোমর মা। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল অতঃপর কে? হুজুর (সা.) এবার জবাব দিলেন তোমার মা। লোকটি পুনঃজিজ্ঞেস করল অতঃপর কে? এবারে নবী করীম (সা.)জওয়াব দিলেন যে, তোমার বাবা।’ (বুখারী, মুসলিম)
হযরত মুগীরা (রা.) হতে বর্ণিত নবী করীম (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা মায়েদের নাফরমানী করা, হকদারের হক না দেয়া এবং কন্যা সন্তানদের জীবন্ত কবর দেয়া, তোমাদের উপর হারাম করে দিয়েছেন। আর আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য গল্প-গুজবে মত্ত হওয়া, অতিরিক্ত সওয়াল করা এবং মাল-সম্পদ নষ্ট করাকে অপছন্দ করেছেন। (বুখারী)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন এক ব্যক্তি তার মাতা-পিতাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় ত্যাগ করে হিজরাতের উদ্দেশ্যে বায়াত করার জন্যে নবী করীম (সা.) এর খেদমতে এসে হাজির হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন ফিরে যাও তোমার মাতা-পিতার কাছে এবং তাদের খুশী করে এসো যেমনি তাদের কাঁদিয়ে এসেছিলে। (আদাবুল মুফরাদ)
==========================================

কোরআন ও হাদিসের আলোকে পিতা-মাতার মর্যাদ
জুমার খুতবা
============
৩য় জুমা, জুমাদা আল উলা, ১৪৩৯হি:, February ২০১৮ সাল

কুরআন ও হাদীসে পিতা-মাতার মর্যাদা
***********************************************
সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আয্হারী
খতিব, মুসাফিরখানা জামে মসজিদ, নন্দনকানন, চট্টগ্রাম। সহকারী অধ্যাপক, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম। #

بسم الله الرحمن الرحيم
মাতা-পিতার সাথে সন্তানের উত্তম ব্যবহার দুনিয়া ও আখেরাতের সৌভাগ্যের অন্যতম ওসীলাহ। সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আল্লাহ তাআলা এবং রাসূল হিসাবে প্রিয় নবী হযরত মুহাম¥দ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হক্ব বা অধিকারের পর মানুষের উপর সবচাইতে বড় অধিকার হল মাতা-পিতার অধিকার। পবিত্র কুরআনে আল্লাহর ইবাদাতের সাথে মাতা-পিতার অধিকারের কথা বর্ণনা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। অধিকারের পাশাপাশি পবিত্র কুরআনে পিতা-মাতার কৃতজ্ঞতা স্বীকারের নির্দেশও দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۚ إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا
“আর তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। যদি পিতা-মাতার কোনও একজন কিংবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন, তবে তুমি তাদেরকে ‘উফ’ শব্দটি পর্যন্ত বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না বরং তাদের সাথে বিনম্রভাবে সম্মাসূচক কথা বল। আর তাদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা মমতাপূর্ণ আচরণের সাথে তাদের সামনে নিজেকে বিনয়াবনত কর। আর দোয়া কর, হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি রহমতের আচরণ করুন, যেভাবে তাঁরা শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছেন (সূরা বনী ঈসরাইল আয়াত: ২৩-২৪)

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন, وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا “তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, কোন কিছুর সাথে তার শরিক করোনা এবং পিতা-মাতার সাথে উত্তম ব্যবহার কর” (সূরা নিসা ৩৬ আয়াত)।

অন্যত্র আল্লাহ বলেন, أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ‘আমার কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর এবং তোমার মাতা-পিতারও কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর’ (সূরা লোকমান আয়াত নং-১৪)।

কোরান মাজিদ বারংবার ঘোষণা করেছে যে, আল্লাহ তাআলা এবং প্রিয় নবী হযরত মুহাম¥দ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হক্ব বা অধিকারের পরেই পিতামাতার হক। যদি আমরা তাঁদের সাথে সদ্ব্যবহার করি তবে আল্লাহ তাআলার আদেশেরই আনুগত্য করি। যদি আমরা তাঁদের অসম্মান করি তবে আমরা আল্লাহর আদেশকেই অমান্য করি। অতঃপর তার ফলে পরিণামস্বরূপ জাহান্নামে যেতে হবে।

হাদিস শরীফের আলোকে মাতা-পিতা:
—————————————
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসসমূহ পিতামাতার প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বহু মূল্যবাণ উপদেশ বাণী সবিস্তারে বিবরণ প্রদান করেছে। তাতে পিতামাতার অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে পুরষ্কার এবং তাঁদের অবাধ্য হলে শাস্তির বর্ণনাও প্রদান করেছে। নিচে কিছু সংশ্লিষ্ট হাদিস পেশ করা হল:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” مَا مِنْ وَلَدٍ بَارٍّ يَنْظُرُ إِلَى وَالِدَتِهِ نَظْرَةَ رَحْمَةٍ إِلَّا كَانَ لَهُ بِكُلِّ نَظْرَةٍ حَجَّةٌ مَبْرُورَةٌ “، قَالُوا: وَإِنْ نَظَرَ إِلَيْهَا كُلَّ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ؟ قَالَ: ” نَعَمْ، اللهُ أَكْبَرُ وَأَطْيَبُ “رواه أبو بكر الإسماعيلي في “معجم أسامي الشيوخ” (৮) – ومن طريقه البيهقي في “شعب الإيمان” (১০/২৬৫) .
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আববাস রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত, হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন, যে নেক্কার ছেলে নিজ মাতা-পিতার প্রতি রহমত ও আন্তরিকতার দৃষ্টিতে একবার তাকাবে, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক দৃষ্টির বিনিময়ে তার জন্য একটি মাবরুর হজ্বের (মকবুল হজ্বের) ছওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন। সাহাবাগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি উক্ত ব্যক্তি দৈনন্দিন একশত বার তাকায়, তাহলে? তিনি উত্তরে বলেন, হ্যাঁ! আল্লাহ তায়ালা সুমহান ও বড় করুণাময়।(বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান ১০/২৬৫)

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ أَنَّ رَجُلاً أَتَاهُ فَقَالَ : إِنَّ لِيَ امْرَأَةً وَإِنَّ أُمِّي تَأْمُرُنِي بِطَلاقِهَا ، قَالَ : أَبُو الدَّرْدَاءِ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : الْوَالِدُ أَوْسَطُ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ فَإِنْ شِئْتَ فَأَضِعْ ذَلِكَ الْبَابَ أَوْ احْفَظْهُ) ] وعزاه إلى أبي داود الطيالسي ، وأحمد ، وابن ماجه ، والحاكم وصححه ، ( ووافقه الذهبي ) . ا هـ .وقد رمز له السيوطي في الجامع الصغير بالصحة ؛ كما في الفيض ( ৬ / ৩৭১ ) .قال المناوي في فيض القدير ( ৬ / ৩৭১ ) : ” الوالد أوسط أبواب الجنة ” أي : طاعته ، وعدم عقوقه مؤدٍ إلى دخول الجنة من أوسط أبوابها ، ذكره العراقي .وقال البيضاوي : أي خير الأبواب وأعلاها ، والمعنى : أنَّ أحسن ما يتوصل به إلى دخول الجنة ، ويتوصل به إلى الوصول إليها مطاوعة الوالد ، ورعاية جنابه .وقال المباركفوري في تحفة الأحوذي ( ৬ / ২৫ ) : …وقال غيره : إنَّ للجنة أبواباً ، وأحسنها دخولاً أوسطها ، وإنَّ سبب دخول ذلك الباب الأوسط هو محافظةً على حقوق الوالدين ؛ فالمراد بالوالد : الجنس ، أو إذا كان حكم الوالد هذا فحكم الوالدة أقوى . اهـ .(
পিতা মাতা জান্নাতের মাঝের দরজা। যদি চাও, দরজাটি নষ্ট করে ফেলতে পারো, নতুবা তা রক্ষা করতে পারো। [তিরমিযী, তুহফাতুল আহওয়াযী, ৬/২৫)

হিজরত ও জিহাদের চেয়েও পিতা-মাতার হক্ব অগ্রগন্য:
——————————————————
عَنْ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّ رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنِّي جِئْتُ أُبَايِعُكَ عَلَى الْهِجْرَةِ، وَلَقَدْ تَرَكْتُ أَبَوَيَّ يَبْكِيَانِ قَالَ: ্রارْجِعْ إِلَيْهِمَا فَأَضْحِكْهُمَا كَمَا أَبْكَيْتَهُمَا(سنن النسائي – البيعة (৪১৬৩) سنن أبي داود – الجهاد (২৫২৮) ( رواه أحمد ২/১৬০ وأبو داود ৩/৩৮ ))গ্ধ
“এক ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় রেখে হিজরতের উদ্দেশ্যে বাইয়াত করার জন্য নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে পৌঁছলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ফিরে যাও তোমার পিতা-মাতার কাছে এবং তাদেরকে খুশি করে এসো যেমন ভাবে তাদেরকে কাঁদিয়ে এসেছো।” (নাসায়ী-৪১৬৩, আবু দাউদ-২৫২৮, আহমদ-২/১৬০)।

أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ ، قَالَ : أَقْبَلَ رَجُلٌ إِلَى نَبِيِّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَقَالَ : أُبَايِعُكَ عَلَى الْهِجْرَةِ وَالْجِهَادِ أَبْتَغِي الأَجْرَ مِنَ اللَّهِ , قَالَ : ” فَهَلْ مِنْ وَالِدَيْكَ أَحَدٌ حَيٌّ ؟ ” قَالَ : نَعَمْ ، بَلْ كِلاهُمَا , قَالَ : ” فَتَبْتَغِي الأَجْرَ مِنَ اللَّهِ ؟ ” قَالَ : نَعَمْ ، قَالَ : ” ارْجِعْ إِلَى وَالِدَيْكَ فَأَحْسِنْ صُحْبَتَهُمَا ” ( صحيح مسلم গ্ধ كِتَاب الْبِرِّ ، وَالصِّلَةِ ، وَالْآدَابِ গ্ধ بَاب بِرِّ الْوَالِدَيْنِ وَأَنَّهُمَا أَحَقُّ بِهِ … رقم الحديث: ৪৬৩০). وهذا لفظ مسلم. وفي رِوَاية لهما: جاء رجل فاستأذنه في الجهاد فقال: أَحَيٌّ وَالِدَاكَ؟ قال: نعم. قال: فَفِيهما فَجَاهِدْ. ( رواه البخاري ৪/১৮ )
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আছ রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আগমন করল এবং বলল, আমি আপনার কাছে হিজরত ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের বায়আত হতে এসেছি। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে চাইলেন, তার পিতা-মাতা বেঁচে আছে কিনা। লোকটি উত্তর করল, হ্যাঁ, উভয়েই বেঁচে আছেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমার পিতামাতার কাছে ফিরে যাও এবং তাদের সেবা কর। (বুখারি ৪/১৮, মুসলিম-৪৬৩০)

তাঁরা আমাদের বেহেশত ও দোযখ:
———————————–
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، أَنَّ رَجُلًا قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا حَقُّ الْوَالِدَيْنِ عَلَى وَلَدِهِمَا؟ قَالَ: ্রهُمَا جَنَّتُكَ وَنَارُكَ(رواه ابن ماجه. [৪৯৪১
“হযরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আরয করলো, হে আল্লাহর রসূল! সন্তানের ওপর পিতা-মাতার হক কি আছে? তিনি বললেন, তারা তোমার বেহেশত ও দোযখ” (ইবনে মাজাহ-৪৯৪১)।

হাদিসটির মূল কথা হচ্ছে, সন্তান পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করলে বেহেশতের অধিকারী হবে এবং পিতা-মাতার অধিকারসমূহকে পদদলিত করলে, পিতা-মাতার চেয়ে অন্য কোন মানুষকে, আত্মীয়-স্বজনকে অগ্রাধিকার দিলে দোযখের অধিকারী হবে।

عَنْ سُهَيْلٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ্রرَغِمَ أَنْفُ، ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ، ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُগ্ধ، قِيلَ: مَنْ؟ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: ্রمَنْ أَدْرَكَ أَبَوَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ، أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا فَلَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَগ্ধ أخرجه مسلم، كتاب البر والصلة والآداب، باب رغم أنف من أدرك أبويه أو أحدهما عند الكبر، فلم يدخل الجنة، (৪/১৯৭৮)، برقم: ২৫৫১. مسند أحمد – باقي مسند المكثرين (২/৩৪৬)
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তার নাক ধূলায় মলিন হোক (৩ বার) সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! সেই হতভাগ্য ব্যক্তিটি কে?

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, সে হলো ঐ ব্যক্তি, যে তার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেল অথচ তাদের সেবা করে জান্নাত হাছিল করতে পারলো না” (মুসলিম-৪/১৯৭৮, হা-২৫৫১)। অর্থাৎ তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করলে সে জান্নাতে যেত। সে জান্নাত পেয়েও জান্নাতে গেল না, সে বড় হতভাগ্য।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
وعنْ عبدِ اللَّهِ بنِ عمرٍو رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُما، عن النبيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قالَ: رِضَا اللَّهِ فِي رِضَا الْوَالِدَيْنِ، وَسَخَطُ اللَّهِ فِي سَخَطِ الْوَالِدَيْنِ. (أَخْرَجَهُ التِّرمذيُّ، وصَحَّحَهُ ابنُ حِبَّانَ والحاكِمُ. أخرجه يحيى بن سلام في “تفسيره” (১/১২৭) و (২/৬৭৫ – ৬৭৬) عنه أخرجه أبو نعيم في “الحلية” (৮/২১৫) أخرجه الترمذي في “جامعه” (১৮৯৯) ،وفي “العلل الكبير” (৫৭৯) ، والبزار في “مسنده” (২৩৯৪) ، والحسن بن سفيان في “الأربعون” (৩১)– ومن طريقه ابن حبان في صحيحه (৪২৯) ، و أبو محمد البغوي في “تفسيره” (৩/১২৮) ، و في شرح السنة (৩৪২৪) ، و ابن الجوزي في “البر والصلة” (১২৮)– ، وابن شاهين في “الترغيب” (২৯৯) ، و أبي طاهر السلفي في “احاديث وحكايات” (رقم ১৯ – مخطوط)
“আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টিতে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টিতে নিহিত।” (তিরমিযি-১৮৯৯)

মাতা-পিতার দুয়া অবশ্যই কবুল হয়:
—————————————
অন্যত্র তিনি বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عَنْ أَبِي جَعْفرٍ ، أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ ، يَقُولُ : قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” ثَلَاثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ لَا شَكَّ فِيهِنَّ : دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ ، وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ ، وَدَعْوَةُ الْوَالِدَيْنِ عَلَى وَلَدِهِمَا ” . (رواه الترمذي ( ১৯০৫ ) وأبو داود ( ১৫৬৩ ) وابن ماجه ( ৩৮৬২ ) )
তিন প্রকারের দোয়া নিঃসন্দেহে কবুল হয়। পিতা-মাতার দোয়া (তার সন্তানের জন্যে), (আল্লাহর পথের) মুসাফিরের দোয়া ও মযলুমের দোয়া। (আবু দাউদ-১৫৬৩, ইবনে মাজাহ৩৮৬২, তিরমিযি১৯০৫)

পিতামাতার আনুগত্যের পুরষ্কার:
———————————————–
ﺑِﺮُّﻭْﺍ ﺁﺑَﺎﺋَﻜُﻢْ ﺗَﺒِﺮُّﻛُﻢْ ﺃَﺑْﻨَﺎﺋُﻜُﻢْ( رواه العقيلي في ” الضعفاء ” ( ২৯৯ ) ، و الحاكم ( ৪/১৫৪ ) ، و أبو نعيم (৬/৩৩৫ ) ، و الخطيب ( ৬/৩১১ ) )
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, পিতামাতার আনুগত্য কর এবং তাদের সাথে সদয় ব্যবহার কর। কেননা, যদি তুমি তেমনটি কর তবে তোমার ছেলেমেয়েরাও তোমার আনুগত্য করবে এবং তোমার সাথে সদয় ব্যবহার করবে। (হাকেম-৪/১৫৪. আবু নুয়াইম-৬/৩৩৫)

عَن عَائِشَةَ – رضي الله عنها – عَن النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلْتُ الْجَنَّةَ فَسَمِعْتُ فِيهَا قِرَاءَةً قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالُوا حَارِثَةُ بْنُ النُّعْمَانِ كَذَاكُمْ الْبِرُّ كَذَاكُمْ الْبِرُّ (رواه الإمام أحمد (৩৯/৮২ رقم ২৩৬৭৭) السلسلة الصحيحة . (২/ ৬১৬رقم৯১৩ ).)
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা বর্ণনা করেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আমি নিদ্রামগ্ন ছিলাম এবং স্বপ্নে দেখতে পেলাম যে, আমি বেহেস্তে প্রবেশ করেছি। তাতে কাউকে কোরান তেলাওয়াত করতে শুনলাম এবং আমি জানতে চাইলাম, আল্লাহর কোন বান্দা বেহেস্তের মধ্যে কোরান তেলাওয়াত করছে? আমাকে বলা হল, তিনি হচ্ছেন হারিছা ইবনে নুমান। পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, হারিছা ইবনে নুমান তার মায়ের খুব অনুগত ছিল এবং তার খুব সেবা যতœ করত। (আহমদ-৮২/৩৯, হা-২৩৬৭৭)

قال رسولُ الله – عليه الصلاة والسلام -: مَن أصْبحَ مُطيعًا لله في والِدَيه أصْبحَ له بابانِ مَفتوحانِ مِن الجنَّة، وإنْ أمسى فمِثْل ذلك، ومَن أصْبحَ عاصيًا لله في والِدَيه أصْبحَ له بابانِ مَفتوحانِ إلى النَّار، وإنْ أمْسى فمِثْل ذلك، وإنْ كان واحدًا فواحدٌ، قال رجل: وإنْ ظَلَماه؟ قال: وإنْ ظَلَماه، وإنْ ظَلَماه، وإنْ ظَلَماهما( رواه البيهقي في “شعب الإيمان” (১০/৩০৬) . تخريج الإحياء” (২/২১৬) . ورواه البخاري في “الأدب المفرد” (১৬)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, পিতা-মাতার হকের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার অনুগত হয়ে যে ব্যক্তি ভোরে ঘুম থেকে জেগে ওঠে, প্রভাতে তার জন্যে জান্নাতের দুটি দরজা খুলে যায়। আর যদি কেবল একজন বেচে থাকেন তখন তার জন্যে শুধু একটি দরজা খুলে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি পিতা-মাতার হকের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার অবাধ্য হয় তার জন্যে জাহান্নামের দুটি দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। আর যদি কেবল একজন বেঁচে থাকেন তবে শুধু একটি দরজাই খুলে দেওয়া হয়। এক ব্যক্তি জানতে চাইল, যদি পিতা-মাতা তার প্রতি নিষ্ঠুর হয়, তবুও কি এরূপ হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, যদিও পিতা-মাতা তার প্রতি নিষ্ঠুর হয়। যদিও পিতা-মাতা তার প্রতি নিষ্ঠুর হয়। যদিও পিতা-মাতা তার প্রতি নিষ্ঠুর হয়। (বায়হাকি: শুয়াবুল ঈমান- ১০/৩০৬। বুখারী: আদাবুল মুফরাদ-১৬)

আয়ু ও রিযক বৃদ্ধি পায়:
—————————–
عَنْ ثَوْبَانَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” لَا يَزِيدُ فِي الْعُمْرِ إِلَّا الْبِرُّ ، وَلَا يَرُدُّ الْقَدَرَ إِلَّا الدُّعَاءُ ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيُحْرَمُ الرِّزْقَ بِخَطِيئَةٍ يَعْمَلُهَا ” .( سنن ابن ماجه رقم الحديث: ৮৭)
হযরত ছাওবান রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, দোয়া ব্যতিত অন্য কিছুই ভাগ্যকে বদলাতে পারে না এবং পিতামাতার প্রতি সদাচার ব্যতিত অন্য কিছুই আয়ুকে প্রলম্বিত করতে পারে না। কোন ব্যক্তি তার পাপের কারণে তার রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়। (ইবনে মাজাহ-৮৭)


পিতামাতার অবাধ্যতার শাস্তি দুনিয়াতেই:
————————————————-
عن أبي بكرة ، رضي الله عنه قال : سمعت رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم يقول : ” كل الذنوب يؤخر الله ما شاء منها إلى يوم القيامة إلا عقوق الوالدين فإن الله تعالى يعجله لصاحبه في الحياة قبل الممات ” ( المستدرك على الصحيحين গ্ধ كتاب الأطعمة গ্ধ كل الذنوب يؤخر الله ما شاء منها إلا عقوق الوالدين.رقم الحديث- ৭৩৪৫)
হযরত আবু বারকাহ রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করলে সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন, পিতা-মাতার নাফরমানী ব্যতিত। আর তিনি পিতা-মাতার অবাধ্যতার শাস্তি মৃত্যুর পূর্বে দুনিয়াতেই দিয়ে দেন। (মুসতাদরাক-৭৩৪৫)

দুধ মাতার সাথেও সদ্ব্যবহার করতে হবে:
——————————————-
عنْ أَبِي الطُّفَيْلِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ، يَقْسِمُ لَحْمًا بِالْجِعْرَانَةِ فَجَاءَتْهُ امْرَأَةٌ بَدْوِيَّةٌ فَبَسَطَ لَهَا رِدَاءَهُ، فَقُلْتُ: مَنْ هَذِهِ؟ قَالُوا: هَذِهِ أُمُّهُ الَّتِي كَانَتْ تُرْضِعُهُ ( أخرجه البيهقي في دلائل النبوة ح১৯৫৬-৫/২৭১ . مسند البزار (২৭৮১))
“হযরত আবু তোফায়েল থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জায়রানা নামক স্থানে গোশত বন্টন করতে দেখলাম। এমন সময় জনৈক এক মহিলা এসে তাঁর সামনে হাজির হলো। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের চাদর মুবারক বিছিয়ে দিলে মহিলা সেই চাদরের ওপর বসলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, উনি কে? লোকেরা বললো, উনি হলেন তাঁর দুধ মাতা হালিমা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা। যিনি তাঁকে দুধ পান করিয়েছেন” (বায়তাকী: ;দালায়েল-১৯৫৬)।

পিতা-মাতার ইন্তিকালের পর আমাদের করণীয়:
————————————————————-
ইসলামে পিতামাতার অধিকার এতই স্বতন্ত্র ও গুরুত্বপূর্ণ যে, তা কখনো শেষ হয় না, এমনকি তাদের মৃত্যুর পরও। এই হাদিস আমাদের উপর তাঁদের মৃত্যু পরবর্তী কিছু অধিকারের কথা তুলে ধরে।
عَنْ أَبِي أُسَيْدٍ مَالِكِ بْنِ رَبِيعَةَ السَّاعِدِيِّ قَالَ: بَيْنَا نَحْنُ جلوس عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ, إِذْ جَاءَهُ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلَمَةَ, فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ, هَلْ بَقِيَ مِنْ بِرِّ أَبَوَيَّ شَيْءٌ أَبَرُّهُمَا بِهِ بَعْدَ مَوْتِهِمَا؟ فقَالَ: نَعَمْ، الصَّلَاةُ عَلَيْهِمَا، وَالِاسْتِغْفَارُ لَهُمَا, وَصِلَةُ الرَّحِمِ الَّتِي لَا تُوصَلُ إِلَّا بِهِمَا، وَإِكْرَامُ صَدِيقِهِمَا( رواه أبو داود في الأدب برقم ৪৪৭৬، وأحمد في مسند المكيين برقم ১৫৪৭৯.)
হযারত আবু উসাইদ মালিক ইবনু রাবীআহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, কোনো এক দিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে বসা ছিলাম। এমন সময় বানী সালামা সম্প্রদায়ের জনৈক ব্যক্তি এসে আরয করল, হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! পিতা-মাতার মারা যাবার পরও আমার উপর তাদের প্রতি সদাচারণ করার দায়িত্ব আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি তাদের জন্য দুআ করবে, তাদের গুনাহের মাগফিরাত প্রার্থনা করবে, তাদের কৃত ওয়াদা পূর্ণ করবে, তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে এ জন্যে উত্তম ব্যবহার করবে যে, এরা তাদেরই আত্মীয় বন্ধু-বান্ধব এবং তাদের বন্ধু-বান্ধবকে সম্মান দেখাবে। [আবু দাউদ, হাঃ ৫১৪২, ইবন মাজাহ, হাঃ ৩৬৬৪, মিশকাত, হাঃ ৪৯৩৬]

ابن عمر -رضي الله تعالى عنهما- أن النبي -صلى الله عليه وسلم- قال: “إِنّ مِنْ أَبَرِّ البِرِّ أَنْ يَصِلَ الرَّجُلُ أَهْلَ وُدِّ أَبِيهِ بَعْد أَنْ يُولِّي”( أخرجه مسلم، كتاب البر والصلة والآداب، باب صلة أصدقاء الأب والأم، ونحوهما، (৪/১৯৭৯)، رقم: (২৫৫২).)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, পিতা-মাতার প্রতি সর্বাধিক উত্তম আনুগত্য হল তাদের মৃতুর পর তাদের সঙ্গী সাথীদের সাথে সদ্ব্যবহার করা। (মুসলিম-২৫৫২)

وعن عبدِ اللَّهِ بن دينارٍ عن عبد اللَّه بن عمر رضي اللَّه عنهما أَنَّ رجُلاً مِنَ الأَعْرابِ لقِيهُ بِطرِيق مكَّة، فَسلَّم عَليْهِ عَبْدُ اللَّه بْنُ عُمرَ، وحملهُ عَلَى حمارٍ كَانَ يرْكَبُهُ، وأَعْطَاهُ عِمامةً كانتْ عَلَى رأْسِهِ، قَالَ ابنُ دِينَارٍ: فقُلنا لهُ: أَصْلَحكَ اللَّه إِنَّهمْ الأَعْرابُ وهُمْ يرْضَوْنَ بِاليسِيرِ. فَقَالَ عبدُ اللَّه بنُ عمر: إِنَّ أَبَا هَذَا كَان وُدّاً لِعُمَرَ بنِ الخطاب رضي اللَّه عنه، وإِنِّي سمِعْتُ رَسُول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يقول:”إِنَّ أَبرَّ البِرِّ صِلةُ الرَّجُلِ أَهْلَ وُدِّ أَبِيهِ وفي روايةٍ عن ابن دينار عن ابن عُمَر أَنَّهُ كَانَ إِذا خَرَجَ إِلَى مَكَّةَ كَانَ لَهُ حِمارٌ يَتَروَّحُ عليْهِ إِذَا ملَّ رُكُوب الرَّاحِلَةِ، وعِمامةٌ يشُدُّ بِها رأْسهُ، فَبيْنَا هُو يوْما عَلَى ذلِكَ الحِمَارِ إذْ مَرَّ بِهِ أَعْرابيٌّ، فَقَالَ: أَلَسْتَ فُلانَ بْنَ فُلانٍ؟ قَالَ: بلَى: فَأَعْطَاهُ الحِمَارَ، فَقَالَ: ارْكَبْ هَذَا، وأَعْطاهُ العِمامةَ وَقالَ: اشْدُدْ بِهَا رأْسَكَ، فَقَالَ لَهُ بَعْضُ أَصْحابِهِ: غَفَر اللَّه لَكَ، أَعْطَيْتَ هذَا الأَعْرابيِّ حِماراً كنْتَ تَروَّحُ عليْهِ، وعِمامَةً كُنْتَ تشُدُّ بِهَا رأْسَكَ؟ فَقَالَ: إِنِّي سَمِعْتُ رسولَ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يُقولُ: “إِنْ مِنْ أَبَرِّ البِرِّ أَنْ يَصِلَ الرَّجُلُ أَهْلَ وُدِّ أَبِيهِ بَعْد أَنْ يُولِّي” وإِنَّ أَبَاهُ كَانَ صَدِيقاً لِعُمر رضي اللَّه عنه،( رواه مسلم (২৫৫২)، وأبو داود (৫১৪৩.)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা মক্কার পথে এক বেদুঈনের সাক্ষাত পেলেন। তিনি তাকে সালাম দিলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি অমুকের পুত্র অমুক? লোকটি উত্তর করল, হ্যাঁ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা তাকে তার আরোহনের একমাত্র গাধাটি দিয়ে দিলেন এবং এতে আরোহন করতে বললেন। তিনি তাকে তাঁর পাগড়িটিও দিয়ে দিলেন এবং তা মাথায় পরে নিতে বললেন। তাঁর কিছু সহচর বলল, আল্লাহ আপনার কল্যাণ করুন! সে তো কেবলই একজন বেদুঈন। আর বেদুঈনরা সামান্যতেই তুষ্ট হয়ে থাকে। আপনি তাকে আপনার গাধা ও পাগড়ি দিয়ে দিলেন? অথচ এ সবে আপনার নিজেরও প্রয়োজন রয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা উত্তর দিলেন, তার পিতা ছিলেন আমার পিতার (হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) বন্ধু এবং আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, একটি বড় পূণ্যের কাজ হল, পিতার বন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে উত্তম আচরণ করা। (মুসলিম-২৫৫২, আবু দাউদ-৫১৪৩)

তাঁদের জন্য ইছালে ছাওয়াব করা:
——————————————
মৃতের জন্যে জীবিতের পক্ষ থেকে উত্তম হাদিয়া হলো ইছালে সওয়াব। সন্তানের উপর পিতা-মাতার জন্যে ইছালে সওয়াব করা অপরিহার্য, এক মুসলমানের উপর অপরাপর মুসলিম ভাইয়ের জন্যে ইছালে সওয়াব করা উত্তম।
قال النَّبيّ الكريمُ صلّى الله تعالى عليه وآله وسلّم: ্রما الْمَيّتُ في القَبْرِ إلاّ كالْغَرِيْق الْمُتَغَوِّثِ يَنتَظِرُ دَعْوَةً تَلحَقُه مِن أبٍ أوْ أُمٍّ أوْ أخٍ أوْ صَدِيقٍ فإذا لَحِقَتْه كانَتْ أحَبَّ إليه مِن الدُّنيا ومَا فيها وإنَّ اللهَ عزّ وجلّ لَيُدخِلُ على أهْلِ القُبُورِ مِن دُعاءِ أهْلِ الأَرْضِ أمْثَالَ الجِبالِ وإنَّ هَديَّةَ الأَحْيَاءِ إلى الأَمْوَاتِ الاِسْتِغفارُ لهم ( هذا الحديث أخرجه البيهقي في “شعب الإيمان”، ٦/٢٠٣، (٧٩٠٥). أخرجه أبوعبدالله الحافظ في ” فوائد الشيخ ـ كما في الشعب ” , ومن طريقه البيهقي في ” الشعب ” ১০ : ৭৫২৭ و ১১ : ৮৮৫৫ , والديلمي في ” مسنده ـ زهر الفردوس ” ج৫ : ل ২৪ : أ ـ ب , من طريق الفضل بن محمد الباهلي , ثنا عبدالله بن المبارك , ثنا يعقوب بن القعقاع , عن مجاهد , عن ابن عباس به مرفوعاً . وأورد هذا الحديث الذهبي في ” الميزان ” ৪ : ৪১৬ , و تبعه الحافظ في ” اللسان ” ৫ : ৯৯ )
বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা থেকে বর্নিত রসুল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ডুবন্ত ত্রানপ্রার্থী ব্যক্তির যে অব¯হা , অবিকল সেই অব¯হা হলো কবরে শায়িত মৃতু ব্যক্তির। সে দু‘আর অপেক্ষায় থাকে, যে দু‘আ পিতা-মাতা, ভাই-বন্ধুদের পক্ষ থেকে তার কাছে পৌছবে। যখন এরূপ কোন দু‘আ তার কাছে পৌছে তখন তা তার কাছে দুনিয়া ও দুনিয়ার সকল সম্পদ অপেক্ষা প্রিয়তর মনে হয় (বায়হাকী: ৬/২০৩)।

ইমাম বোখারী ও ইমাম মুসলিম লেখেন:
————————————-
عنْ مَالِكٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ شُرَحْبِيلَ بْنِ سَعِيدِ بْنِ سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ: خَرَجَ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَعْضِ مَغَازِيهِ، وَحَضَرَتْ أُمَّهُ الْوَفَاةُ بِالْمَدِينَةِ، فَقِيلَ لَهَا: أَوْصِي، فَقَالَتْ: فِيمَ أُوصِي؟ الْمَالُ مَالُ سَعْدٍ، فَتُوُفِّيَتْ قَبْلَ أَنْ يَقْدَمَ سَعْدٌ، فَلَمَّا قَدِمَ سَعْدٌ ذُكِرَ ذَلِكَ لَهُ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَلْ يَنْفَعُهَا أَنْ أَتَصَدَّقَ عَنْهَا؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রنَعَمْগ্ধ، فَقَالَ سَعْدٌ: حَائِطُ كَذَا وَكَذَا صَدَقَةٌ عَنْهَا، لِحَائِطٍ سَمَّاهُ(سنن النسائي – الوصايا (৩৬৫০) ) (س) ৩৬৬৪ , (د) ১৬৭৯ , (جة) ৩৬৮৪ , (حم) ২২৫১২ (২) (د) ১৬৮১ , انظر صحيح الترغيب والترهيب: ৯৬২عن ابْن عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا : (أَنَّ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ تُوُفِّيَتْ أُمُّهُ وَهُوَ غَائِبٌ عَنْهَا ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِنَّ أُمِّي تُوُفِّيَتْ وَأَنَا غَائِبٌ عَنْهَا ، أَيَنْفَعُهَا شَيْءٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ بِهِ عَنْهَا؟قَالَ : نَعَمْ .قَالَ : فَإِنِّي أُشْهِدُكَ أَنَّ حَائِطِيَ الْمِخْرَافَ صَدَقَةٌ عَلَيْهَا) رواه البخاري (২৭৫৬) ، ومسلم (১০০৪). عَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ، أَنَّهُ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ أُمَّ سَعْدٍ مَاتَتْ، فَأَيُّ الصَّدَقَةِ أَفْضَلُ؟، قَالَ: ্রالْمَاءُগ্ধ، قَالَ: فَحَفَرَ بِئْرًا، وَقَالَ: هَذِهِ لِأُمِّ سَعْدٍ(سنن النسائي – الوصايا (৩৬৬৪) سنن النسائي – الوصايا (৩৬৬৫) سنن النسائي – الوصايا (৩৬৬৬) سنن أبي داود – الزكاة (১৬৮১))
“এক ব্যক্তি (ছাদ বিন ওবাদা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে আরয করেন, ‘(হে আল্লাহর রাসূল) আমার মা অকস্মাৎ ইন্তেকাল করেছেন এবং তিনি কোনো অসিয়ত করে যাননি। তবে আমার মনে উদয় হয়েছে, তিনি তা চাইলে হয়তো কোনো দান-সদকা করার কথা আমাকে বলতেন। এক্ষণে আমি তাঁর পক্ষ থেকে কোনো দান-সদকাহ করলে তিনি কি এর সওয়াব পাবেন? মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে এরশাদ করেন, ‘হ্যাঁ।’ এমতাবস্থায় ওই ব্যক্তি বলেন, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আপনাকে আমার (খেজুর) ফলে পরিপূর্ণ বাগানটি সদকাহ হিসেবে দানের ব্যাপারে সাক্ষী করলাম’ তিনি বললেন হ্যাঁ। অন্য বর্ণনায়- আমি বললাম কি ছদকা দেবো? উত্তরে বললেন, পানি পান করার ব্যবস্থা কর। (অর্থাৎ কূপ খনন করে দাও)। হযরত সা’আদ রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু একটি কূপ খনন করে বলেছিলেন “এটা সা’দের মায়ের নামে উৎসর্গীত হল।” (আল-বোখারী, ‘অসিয়ত’ অধ্যায়, ৪র্থ খ-, বাব নং ৫১, হাদীস নং ১৯. মুসলিম, ‘অসিয়ত‘ অধ্যায়, বাব নং ১৩, হাদীস নং ৪০০৩)

যারা তাঁদের জীবদ্দশায় যথাযথ সেবা যতœ করতে পারে নি তাদের জন্য করণীয়:
——————————————————————————-
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” إِنَّ الرَّجُلَ لَيَمُوتُ وَالِدَاهُ وَهُوَ عَاقٌّ لَهُمَا ، فَيَدْعُو لَهُمَا مِنْ بَعْدِ مَمَاتِهِمَا فَيَكْتُبَهُ اللَّهُ مِنَ الْبَارِّينَ ” (شعب الإيمان للبيهقي গ্ধ الْخامسُ وَالْخَمْسُونَ مِنْ شُعَبِ الإِيمَانِ وهو … গ্ধ فَصْلٌ فِي حِفْظِ حَقِّ الْوَالِدَيْنِ بَعْدَ مَوْتِهِمَا … رقم الحديث: ৭৪০৪ [مشكاة المصابيح جـ ৩ رقم ৪৯৪২].)
হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, প্রায়ই এমনটি হয়ে থাকে যে, কোন ব্যক্তির পিতামাতার একজন কিংবা উভয়েই মৃত্যুবরণ করে, কিন্তু সে তাদের জীবদ্দশায় যথাযথ সেবা যতœ করতে পারে নি। এভাবে নিজেকে তাদের সন্তুষ্টি অর্জন থেকে বঞ্চিত করে। অতঃপর সে তার দোয়ার মধ্যে তাদেরকে স্মরণ করে এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। তখন আল্লাহ তাআলা তার নাম মাতা-পিতার নাফরমানদের তালিকা থেকে পরিবর্তন করে অনুগতশীলদের তালিকাভুক্ত করে নেন। (বায়হাকি-৭৪০৪)

এই হাদিসটি তাদের জন্যে শুভ সংবাদ বহন করে যারা পিতামাতার উভয়কে কিংবা তাদের একজনকে হারিয়েছে। কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না যে, সে তার পিতামাতার প্রতি যথাযথ হক আদায় করেছে। অতএব, আমাদের উচিৎ হবে তাঁদের জীবদ্দশায় সাধ্যমত তাঁদের হক আদায় করার চেষ্টা করা এবং মৃত্যুর পরে তাঁদেরকে আমাদের দোয়ায় স্মরণ করা ও তাঁদের জন্য দান-খায়রাত করা। তা কেবল তাঁদের জন্যেই উপকারী হবে না, বরং তাদের জীবদ্দশায় তাদের সেবা যতœ করার ক্ষেত্রে আমাদের ত্রুটি ও দুর্বলতাকেও মোচন করে দেবে।

অন্যদের পিতামাতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন:
———————————————————-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: ্রإِنَّ مِنْ أَكْبَرِ الْكَبَائِرِ أَنْ يَلْعَنَ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِগ্ধ. قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ يَلْعَنُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ قَالَ: ্রيَسُبُّ الرَّجُلُ أَبَا الرَّجُلِ، فَيَسُبُّ أَبَاهُ، وَيَسُبُّ أَمَّهُগ্ধ( رواه البخاري- كتاب الأدب، باب لا يسب الرجل والديه- حديث: ‏৫৬৩৬‏، ومسلم- كتاب الإيمان، باب بيان الكبائر وأكبرها- حديث:‏১৫৫‏)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একটি বড় পাপ হল, কোন ব্যক্তির তার পিতামাতাকে অভিশাপ দেয়া। তারা জানতে চাইলেন, কেউ কি তার পিতামাতাকে অভিশাপ দেয়? তিনি উত্তরে এরশাদ করলেন, কোন ব্যক্তি অন্যের পিতাকে অভিশাপ দেয়। ফলে সেও তার পিতাকে অভিশাপ দেয় এবং সে অন্যের মাকে অভিশাপ দেয়, তখন সেও তার মাকে অভিশাপ দেয়। (বুখারি-৫৬৩৬, মুসলিম-১৫৫)

এটি ইসলামের সৌন্দর্য ও মহত্ত যে, তা কেবল নিজের পিতা মাতাকেই ভালবাসতে ও সম্মান জানাতে শিক্ষা দেয় না, বরং অন্যদের পিতামাতার সাথেও অনুরূপ আচরণ করতে শিক্ষা দেয়।

পিতা-মাতার হক্ব আদায় করা কখনও সম্ভব নয়:
———————————————————————
عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ بُرَيْدَةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، أَنَّ رَجُلا كَانَ فِي الطَّوَافِ حَامِلا أُمَّهُ يَطُوفُ بِهَا ، فَسَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، هَلْ أَدَّيْتُ حَقَّهَا ؟ قَالَ : لا ، وَلا بِزَفْرَةٍ وَاحِدَةٍ . (البحر الزخار بمسند البزار ১০-১৩ গ্ধ مُسْنَدُ بُرَيْدَةَ بْنِ الْحُصَيْبِ رَضِيَ اللَّهُ … গ্ধ حَدِيثُ بُرَيْدَةَ بْنِ الْحُصَيْبِ رقم الحديث: ২৬৬ صحيح الأدب المفرد:৯)، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ وَاقِدٍ، نا فَرَجُ بْنُ فَضَالَةَ، نا مُعَاوِيَةُ بْنُ صَالِحٍ، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَقَالَ: يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ، أُمِّي عَجُوزٌ كَبِيرَةٌ، أَنَا مَطِيَّتُهَا، أَجْعَلُهَا عَلَى ظَهْرِي، وَأَنْحَنِي عَلَيْهَا بِيَدِي، وَأَلِي مِنْهَا مِثْلَ مَا كَانَتْ تَلِي مِنِّي، أَوَ أَدَّيْتُ شُكْرَهَا؟ قَالَ: ্রلَاগ্ধ ، قَالَ: لِمَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ؟ قَالَ: ্রإِنَّكَ تَفْعَلُ ذَلِكَ بِهَا وَأَنْتَ تَدْعُو اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ يُمِيتُهَا، وَكَانَتْ تَفْعَلُ ذَلِكَ بِكَ وَهِيَ تَدْعُو اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ يُطِيلَ عُمْرَكَগ্ধ اخرجه ابن أبي الدنيا في مكارم الأخلاق ص৭৫
বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি তার বৃদ্ধ মাতাকে কাবা শরীফে নিয়ে আসে। সে তাকে তার কাঁধে নিয়ে কাবা শরীফের চারপাশে তাওয়াফ করতে থাকে। সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করল, আমি কি এখন আমার মায়ের প্রতি কর্তব্য পালন করেছি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উত্তর দিলেন, তুমি তোমার মায়ের একটি শ্বাস-প্রশ্বাসের হকও আদায় করনি। (বুখারী: আদাবুল মুফরাদ-০৯ বায্যার ১০/১৩, হা- ২৬৬ইবনে কাসীর, ৩য় খন্ড)






Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...