প্রশ্ন: ১৪৪ : পুরুষ ও নারীর নামাজের পার্থক্য ।

পুরুষ ও নারীর নামায পদ্ধতি এক নয়

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
بسم الله الرحمن الرحيم
ভূমিকা
নারী পুরুষের শারীরিক গঠন, সক্ষমতা, নিরাপত্তা ইত্যাদী নানা বিষয়ে যেমন পার্থক্য রয়েছে, তেমনি পার্থক্য রয়েছে ইবাদতসহ শরীয়তের অনেক বিষয়ে। যেমন-
১-পুরুষ ও মহিলা উভয়ের উপরই হজ্ব ফরয। কিন্তু মহিলাদের জন্য পথ খরচ ছাড়াও হজ্বের সফরে স্বামী বা মাহরাম পুরুষের উপস্থিতি শর্ত।
২-ইহরাম অবস্থায় পুরুষের জন্য মাথা ঢাকা নিষেধ। অথচ মহিলাদের জন্য ইহরাম অবস্থায় মাথা ঢেকে রাখা ফরয।
৩-ইহরাম খোলার সময় পুরুষ মাথা মুন্ডায়। কিন্তু মহিলাদের মাথা মুন্ডানো নিষেধ।
৪-হজ্ব পালনকালে পুরুষ উচ্চ আওয়াজে তালবীয়া পাঠ করে, পক্ষান্তরে মহিলাদের জন্য নিম্ন আওয়াজে পড়া জরুরী।
৫-পুরুষের উপর জুমআ পড়া ফরয, মহিলাদের উপর নয়।
৬-নামাযে সতর্ক করার মত কোন ঘটনা ঘটলে সতর্ক করার জন্য পুরুষের তাসবীহ পড়ার হুকুম করা হয়েছে। কিন্তু মহিলাদের তাসফীক করা তথা হাতে শব্দ করার বিধান।
৭-ইমাম ও খতীব শুধু পুরুষই হতে পারে, কোন নারী হতে পারেনা।
৮-আজান শুধু পুরুষই দিবে, কোন নারীকে মুয়াজ্জিন বানানো জায়েজ নয়।
৯-পুরুষের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাআতে নামায পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। আর মহিলাদের ঘরে নামায পড়াই উত্তম বলা হয়েছে।
১০-সতর। পুরুষের সতর হল নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত। আর পরপুরুষের সামনে নারীদের সতর হল প্রায় পুরো শারীরই ঢেকে রাখা ফরয।
নারী-পুরুষের মাঝে এরকম পার্থক্যসম্বলিত ইবাদত সমূহের অন্যতম হল নামায। তাকবীরে তাহরীমার জন্য হাত উঠানো, হাত বাঁধা, রুকু, সেজদা, প্রথম ও শেষ বৈঠক ইত্যাদী ক্ষেত্রগুলোতে পুরুষের সাথে নারীর পার্থক্য রয়েছে। তাদের সতরের পরিমাণ যেহেতো বেশি তাই যেভাবে তাদের সতর বেশী রক্ষা হয় সেদিকটিও বিবেচনা করা হয়েছে ক্ষেত্রগুলিতে। মুসলিম উম্মাহর প্রায় দেড় হাজার বছরের অবিচ্ছন্ন আমলের ধারা তাই প্রমাণ করে। বিষয়টি প্রমাণিত রাসূলে কারীম সাঃ এর হাদিস, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের ফতোয়া ও আছারের মাধ্যমে।
প্রথমে আমরা সহীহ হাদিস, তারপর পর্যায়ক্রমে সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেয়ীদের ফতোয়া ও আছার উল্লেখ করছি।
হাদিস
১.
3016 – أخبرناه أبو بكر محمد بن محمد أنبأ أبو الحسين الفسوي ثنا أبو علي اللؤلؤي ثنا أبو داود ثنا سليمان بن داود أنبأ بن وهب أنبأ حيوة بن شريح عن سالم بن غيلان عن يزيد بن أبي حبيب : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم مر على امرأتين تصليان فقال إذا سجدتما فضما بعض اللحم إلى الأرض فإن المرأة ليست في ذلك كالرجل (سنن الكبرى للبيهقى، كتاب الحيض، باب ما يستحب للمرأة من ترك التجافي في الركوع والسجود، رقم الحديث-3016)
তাবেয়ী ইয়াযীদ বিন আবী হাবীব রহ. বলেন-একবার রাসূল সা. দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্য) বললেন-“যখন সেজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কেননা মহিলারা এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়। (সুনানুল বায়হাকী, হাদিস নং-৩০১৬, কিতাবুল মারাসিল লি ইমাম আবু দাউদ-৫৫, হাদিস নং-৮০)
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আলেম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ “আওনুল বারী” (১/৫২০) তে লিখেছেন-“উল্লেখিত হাদিসটি সকল ইমামদের উসুল অনুযায়ী দলীল হিসেবে পেশ করায় যোগ্য”।
মুহাদ্দিস মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল আমীর ইয়ামানী “সুবুলুস সালাম” শরহু বুলুগিল মারাম” গ্রন্থে (১/৩৫১-৩৫২) এই হাদিসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে পুরুষ ও মহিলার সেজদার পার্থক্য করেছেন।
২.
  وَالآخَرُ حَدِيثُ أَبِى مُطِيعٍ : الْحَكَمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْبَلْخِىِّ عَنْ عُمَرَ بْنِ ذَرٍّ عَنْ مُجَاهِدٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- :« إِذَا جَلَسْتِ الْمَرْأَةُ فِى الصَّلاَةِ وَضَعَتْ فَخِذَهَا عَلَى فَخِذِهَا الأُخْرَى ، وَإِذَا سَجَدْتْ أَلْصَقَتْ بَطْنَهَا فِى فَخِذَيْهَا كَأَسْتَرِ مَا يَكُونُ لَهَا ، وَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَيَقُولُ : يَا مَلاَئِكَتِى أُشْهِدُكُمْ أَنِّى قَدْ غَفَرْتُ لَهَا (السنن الكبرى، كتاب الصلاة، باب مَا يُسْتَحَبُّ لِلْمَرْأَةِ مِنْ تَرْكِ التَّجَافِى فِى الرُّكُوعِ وَالسُّجُودِ، رقم الحديث-3324) 
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত।  রাসূল সা. ইরশাদ করেছন-“মহিলা যখন নামাযের মধ্যে বসবে তখন যেন (ডান) উরু অপর উরুর উপর রাখে। আর যখন সেজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। যা তার সতরের জন্য অধিক উপযোগী। আল্লাহ তায়ালা তাকে দেখে বলেন-ওহে আমার ফেরেস্তারা! তোমরা সাক্ষী থাক। আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। (সুনানে বায়হাকী-২/২২৩, হাদিস নং-৩৩২৪)
এই হাদিসটি হাসান।
৩.
حدثنا محمد بن عبد الله الحضرمي قال حدثتني ميمونة بنت عبد الجبار بن وائل بن حجر عن أبيها عبد الجبار عن علقمة عمها عن وائل بن حجر قال : جئت النبي صلى الله عليه و سلم ………….فقال لي رسول الله صلى الله عليه و سلم : يا وائل بن حجر إذا صليت فاجعل يديك حذاء أذنيك والمرأة تجعل يديها حذاء ثدييها (المعجم الكبير، باب الواو، وائل بن حجر الحضرمي القيل، رقم الحديث-28)
হযরত ওয়াইল বিন হুজর রা. বলেন। আমি নবীজী সা. এর দরবারে হাজির হলাম। তখন তিনি আমাকে (অনেক কথার সাথে একথাও) বলেছিলেন যে, হে ওয়াইল বিন হুজর! যখন তুমি নামায শুরু করবে তখন কান বরাবর হাত উঠাবে। আর মহিলা হাত উঠাবে বুক বরাবর। (আল মুজামুল কাবীর, হাদিস নং-২৮)
এই হাদিসটিও হাসান।
উল্লেখিত হাদিসগুলি থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কিছু কিছু হুকুমের ক্ষেত্রে মহিলার নামায আদায়ের পদ্ধতি পুরুষের নামায আদায়ের পদ্ধতি থেকে ভিন্ন। বিশেষত ২ নং হাদিসটি দ্বারা একথাও বুঝা গেল যে, মহিলার নামায আদায়ের শরীয়ত নির্ধারিত ভিন্ন এই পদ্ধতির মধ্যে ওই দিকটিই বিবেচনায় রাখা হয়েছে যা তার সতরও পর্দার পক্ষে সর্বাধিক উপপোযী।
উল্লেখ্য যে, এই সব হাদিসের সমর্থনে মহিলাদের নামায আদায়ের পদ্ধতির পার্থক্য ও ভিন্নতাকে নির্দেশ করে এমন আরো কিছু হাদিস আছে। পক্ষান্তরে এগুলির সাথে বিরোধপূর্ণ একটি হাদীসও কোথাও পাওয়া যাবেনা। যাতে বলা হয়েছে যে, পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতিতে কোন পার্থক্য নেই। বরং উভয়ের নামাযই এক ও অভিন্ন। একথার পক্ষে একটি হাদীসও নেই।
সাহাবায়ে কিরামের ফতোয়া
১.
 5072 – عبد الرزاق عن إسرائيل عن أبي إسحاق عن الحارث عن علي قال إذا سجدت المرأة فلتحتفز ولتلصق فخذيها ببطنها (مصنف عبد الرزاق، كتاب الصلاة، باب تكبير المرأة بيديها وقيام المرأة و ركوعها وسجودها، رقم الحيث-5072)
হযরত আলী রা. বলেছেন-মহিলা যখন সেজদা করে তখন সে যেন খুব জড়সড় হয়ে সেজদা করে এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৮, হাদিস নং-৫০৭২, মুসান্নাফে ইবনে শাইবা-২/৩০৮, হাদিস নং-২৭৯৩, সুনানে কুবরা বায়হাকী-২/২২২)
২.
حَدَّثَنَا أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمُقْرِئ ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي أَيُّوبَ ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي حَبِيبٍ ، عَنْ بُكَيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ الأَشَجِّ ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ؛ أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ صَلاَةِ الْمَرْأَةِ ؟ فَقَالَ : تَجْتَمِعُ وَتَحْتَفِزُ. (مصنف ابن ابى شيبة، كتاب الصلاة، في المرأة كَيْفَ تَجْلِسُ فِي الصَّلاَةِ، رقم الحديث-2794)
হযরত ইবনে আব্বাস রা. কে জিজ্ঞেস করা হল-মহিলারা কিভাবে নামায আদায় করবে? তিনি বললেন-“খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৭৯৪)
উপরে মহিলাদের নামায সম্পর্কে দু’জন সাহাবীর যে মত বর্ণিত হল, আমাদের জানা মতে কোন হাদীসগন্থের কোথাও একজন সাহাবী থেকেও এর বিপরীত কিছু বিদ্যমান নেই।
রাসূল সা. থেকে সাহাবায়ে কিরাম যে, দ্বীন শিখেছেন তাদের কাছ থেকে তা শিখেছেন তাবেয়ীগণ। তাঁদের ফাতওয়া থেকেও এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে,”মহিলাদের নামায পুরুষের নামায থেকে ভিন্ন। নিম্নে তাঁদের মধ্য থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকজনের ফাতওয়া উল্লেখ করা হয়।
১.
2486- حدثنا هشيم ، قال : أخبرنا شيخ لنا ، قال : سمعت عطاء ؛ سئل عن المرأة كيف ترفع يديها في الصلاة ؟ قال : حذو ثدييها(مصنف ابن ابى شيبه، كتاب الصلاة، باب من كان يتم التكبير ولا ينقصه في كل رفع وخفض،)
 হযরত আতা বিন আবী রাবাহ কে জিজ্ঞেস করা হল-“নামাযে মহিলা কতটুকু হাত উঠাবে?” তিনি বললেন-“বুক বরাবর”। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,-১/২৭০, হাদিস নং-২৪৮৬)
২.
 2489- حدثنا محمد بن بكر ، عن ابن جريج ، قال : قلت لعطاء : تشير المرأة بيديها بالتكبير كالرجل ؟ قال : لا ترفع بذلك يديها كالرجل ، وأشار فخفض يديه جدا ، وجمعهما إليه جدا ، وقال : إن للمرأة هيئة ليست للرجل ، وإن تركت ذلك فلا حرج.
হযরত ইবনে জুরাইজ রহ. বলেন-“আমি আতা বিন আবী রাবাহকে জিজ্ঞেস করলাম-“মহিলা তাকবীরের সময় পুরুষের সমান হাত তুলবে?” তিনি বললেন-“মহিলা পুরুষের মত হাত তুলবেনা। এরপর তিনি তার উভয় হাত (পুরুষ অপেক্ষা) অনেক নিচুতে রেখে শরীরের সাথ খুব মিলিয়ে রাখলেন এবং বললেন-মহিলাদের পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন। তবে এমন না করলেও অসুবিধা নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/২৭০, হাদিস নং-২৪৮৯, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক,হাদিস নং-৫০৬৬,৬২৫১)
৩.
 2796- حدثنا جرير ، عن ليث ، عن مجاهد ؛ أنه كان يكره أن يضع الرجل بطنه على فخذيه إذا سجد كما تصنع المرأة.
হযরত মুজাহিদ বিন জাবর রহ. থেকে বর্ণিত। তিনি পুরুষের জন্য মহিলার মত উরুর সাথে পেট লাগিয়ে সেজদা করাকে অপছন্দ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৮৯৬)
৪.
 2487- حدثنا رواد بن جراح ، عن الأوزاعي ، عن الزهري ، قال : ترفع يديها حذو منكبيها.
হযরত যুহরী রহ. বলেন-“মহিলা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/২৭০, হাদীস নং-২৪৮৭)
৫.
  5068 – عبد الرزاق عن معمر عن الحسن وقتادة قالا إذا سجدت المرأة فإنها تنضم ما استطاعت ولا تتجافى لكي لا ترفع عجيزتها
হযরত হাসান বসরী ও কাতাদা রহ. বলেন-“মহিলা যখন সেজদা করবে তখন সে যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সেজদা দিবেনা যাতে কোমড় উঁচু হয়ে না থাকে”। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭, হাদিস নং-৫০৬৮, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০৩)
৬.
2795- حَدَّثَنَا أَبُو الأَحْوَصِِ ، عَنْ مُغِيرَةَ ، عَنْ إبْرَاهِيمَ ، قَالَ : إذَا سَجَدَتِ الْمَرْأَةُ فَلْتَضُمَّ فَخِذَيْهَا ، وَلْتَضَعْ بَطْنَهَا عَلَيْهِمَا.(مصنف ابن ابى شيبة، كتاب الصلاة، في المرأة كَيْفَ تَجْلِسُ فِي الصَّلاَةِ، رقم الحديث-2795)
হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. বলেন-মহিলা যখন সেজদা করবে তখন যেন সে উভয় উরু মিলিয়ে রাখে এবং পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০২, হাদিস নং-২৭৯৫)
৭.
 5071 – عبد الرزاق عن معمر والثوري عن منصور عن إبراهيم قال كانت تؤمر المرأة أن تضع ذراعها وبطنها على فخذيها إذا سجدت ولا تتجافى كما يتجافى الرجل لكي لا ترفع عجيزتها
হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহ. আরো বলেন-“মহিলাদের আদেশ করা হত তারা যেন সেজদা অবস্থায় হাত ও পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। পুরুষের মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা না রাখে। যাতে কোমড় উঁচু হয়ে না থাকে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭, হাদিস নং-৫০৭১)
৮.
2799- حَدَّثَنَا إسْمَاعِيلُ ابْنُ عُلَيَّةَ ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ ، عَنْ زُرْعَةَ بْنْ إِبْرَاهِيمَ ، عَن خَالِدِ بْنِ اللَّجْلاَجِ ، قَالَ : كُنَّ النِّسَاءُ يُؤْمَرْنَ أَنْ يَتَرَبَّعْنَ إذَا جَلَسْنَ فِي الصَّلاَةِ ، وَلاَ يَجْلِسْنَ جُلُوسَ الرِّجَالِ عَلَى أَوْرَاكِهِنَّ ، يُتَّقي ذَلِكَ عَلَى الْمَرْأَةِ ، مَخَافَةَ أَنْ يَكُونَ مِنْهَا الشَّيءُ.
হযরত খালেদ বিন লাজ্জাজ রহ. বলেন-“মহিলাদেরকে আদেশ করা হত যেন নামাযে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের উপর বসে। পুরুষদের মত না বসে। আবরণযোগ্য কোন কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় মহিলাদেরকে এমনি করতে হয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/৩০৩, হাদিস নং-২৭৯৯)
উল্লেখিত বর্ণনাগুলি ছাড়াও আয়িম্মায়ে তাবেয়ীনের আরো কিছু বর্ণনা এমন আছে যা মহিলা-পুরুষের নামাযের পার্থক্য নির্দেশ করে। পক্ষান্তরে একজন তাবেয়ী থেকেও এর বিপরীত বক্তব্য প্রমাণিত নয়।
চার ইমামের ফিক্বহের আলোকেঃ
ফিক্বহে ইসলামীর চারটি সংকলন মুসলিম উম্মাহর মাঝে প্রচলিত। যথা-
১-ফিক্বহে হানাফী
২-ফিক্বহে শাফেয়ী
৩-ফিক্বহে মালেকী
৪-ফিক্বহে হাম্বলী
এবার দেখুন এই চার ফিক্বহের ইমামদের মতামত।
১-ফ্বিকহে হানাফী
احب الينا ان تجمع رجليها من جانب ولا تنتصب انتصاب الرجل، (كتاب الآثار-1/609)
ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর অন্যতম সাগরীদ ইমাম মুহাম্মদ রহঃ বলেন-“ আমাদের নিকট পছন্দনীয় হল, মহিলারা নামাযে উভয় পা একপাশে মিলিয়ে রাখবে। পুরুষের মত এক পা দাঁড় করিয়ে রাখবেনা। {কিতাবুল আসার, ইমাম মুহাম্মদ রহঃ-১/৬০৯}
روى امامنا الأعظم عن نافع عن ابن عمر رضى الله عنهما أنه سئل كيف كان النساء يصلين على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ قال كن يتربعن أمرن أن يحتفزن،
أخرجه أبو محمد الحارثى والأشنانى وابن خسرو من طريقه عن سفيان الثورى عنه، راجع جامع الماسانيد-1/400، وهذا أقوى واحسن ما روى فى هذا الباب، ولذا احتج به امامنا وجعله مذهبه وأخذ به،
আমাদের ইমামে আজম আবু হানীফা রঃ নাফে রহঃ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-“হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ কে জিজ্ঞেস করা হল-“রাসূল সাঃ এর যুগে মহিলারা কিভাবে নামায পড়তেন?” তিনি বললেন-“আগে তারা চারজানু হয়ে বসতেন, পরে তাদেরকে জড়সড় হয়ে বসতে বলা হয়েছে”। {জামেউল মাসানিদ-১/৪০০}
উক্ত হাদিসটি এ বিষয়ে বর্ণিত সবকিছুর চেয়ে শক্তিশালী। এ কারণেই আমাদের ইমাম এর দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। এ অনুযায়ী আমল করেছেন। এবং এটিকে নিজের মাযহাব বানিয়েছেন। {কিতাবুল আসার এর টিকা-১/৬০৭}
মহিলাদের ক্ষেত্রে পার্থক্যের বর্ণনা হানাফী ফিক্বহের কিতাবে দেখুন-
১-বাদায়িউস সানায়ে-১/৪৬৬
২-হেদায়া-১/১০০-১১০
৩-আল মাবসূত লিস সারাখসী-১/৪৬৬
৪-ফাতওয়ায়ে শামী-১/৫০৪
৫-ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১/৭৩-৭৫
২-ফিক্বহে শাফেয়ী
( قال الشافعي ) وقد أدب الله تعالى النساء بالاستتار وأدبهن بذلك رسوله صلى الله عليه وسلم وأحب للمرأة في السجود أن تضم بعضها إلى بعض وتلصق بطنها بفخذيها وتسجد كأستر ما يكون لها وهكذا أحب لها في الركوع والجلوس وجميع الصلاة أن تكون فيها كأستر ما يكون لها (كتاب الأم،  باب الذكر في السجود)
ইমাম শাফেয়ী রহঃ বলেন-“আল্লাহ পাক মহিলাদেরকে পুরোপুরি আবৃত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। তার রাসূল সাঃ ও অনুরূপ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট পছন্দীয় হল-সেজদা অবস্থায় মহিলারা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গ মিলিয়ে রাখবে। পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে। আর সেজদা এমনভাবে করবে যাতে সতরের চূড়ান্ত হেফাযত হয়। অনুরূপ রুকু, বৈঠক ও গোটা নামাযে এমনভাবে থাকবে যাতে সতরের পুরোপুরি হেফাযত হয়। {কিতাবুল উম্ম-১/১৩৮)
৩-ফিক্বহে মালেকী
মালেকী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফক্বীহ ইমাম আবুল আব্বাস আল কারাফী রঃ ইমাম মালিক রহঃ এর মত উল্লেখ করেন-
وأما مساواة النساء للرجال ففي النوادر عن مالك تضع فخذها اليمنى على اليسرى وتنضم قدر طاقتها ولا تفرج في ركوع ولا سجود ولا جلوس بخلاف الرجل
নামাযে মহিলা পুরুষের মত কিনা? এ বিষয়ে ইমাম মালিক রহঃ থেকে বর্ণিত। মহিলা ডান উরু বাম উরুর উপর রাখবে এবং যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে বসবে। রুকু সেজদা ও বৈঠকে কোন সময়ই ফাঁক ফাঁক হয়ে বসবেনা। পক্ষান্তরে পুরুষের পদ্ধতি হল ভিন্ন। {আয যাখীরা-২/১৯৩}
৪-ফিক্বহে হাম্বলী
ইমাম আহমদ রহঃ এর ফাতওয়া উল্লেখ আছে ইমাম ইবনে কুদামা রহঃ এর আল মুগীনী কিতাবে।
فأما المرأة فذكر القاضي فيها روايتين عن أحمد إحداهما ترفع لما روى الخلال بإسناده عن أم الدرداء وحفصة بنت سيرين أنهما كانتا ترفعان أيديهما وهو قول طاوس ولأن من شرع في حقه التكبير شرع في حقه الرفع كالرجل فعلى هذا ترفع قليلا قال أحمد رفع دون الرفع والثانية لا يشرع لأنه في معنى التجافي ولا يشرع ذلك لها بل تجع نفسها في الركوع والسجود وسائر صلاتها
তাকবীরের সময় মহিলারা হাত উঠাবে কি উঠাবে না? এ বিষয়ে কাজী [আবু ইয়াজ] ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ থেকে দু’টি মত উল্লেখ করেছেন। প্রথম মত হল হাত উঠাবে। কেননা খাল্লাল হযরত উম্মে দারদা এবং হযরত হাফসা বিন সীরীন থেকে সনদসহ বর্ণনা করেন যে, তারা হাত উঠাতেন। ইমাম তাউসের বক্তব্যও তাই। উপরন্তু যার ব্যাপারে তাকবীর বলার নির্দেশ রয়েছে তার ব্যাপারে হাত উঠানোরও নির্দেশ রয়েছে। যেমন পুরুষ করে থাকে। এ হিসেবে মহিলারাও হাত উঠাবে। তবে সামান্য। আহমাদ রহঃ বলেন-“তুলনামূলক কম উঠাবে”।
দ্বিতীয় মত হল-“মহিলাদের জন্য হাত উঠানোরই হুকুম নাই। কেননা হাত উঠালে কোন অঙ্গকে ফাঁক করতেই হয়, অথচ মহিলাদের জন্য এর বিধান দেওয়া হয়নি। বরং তাদের জন্য নিয়ম হল রুকু সেজদাসহ পুরো নামাযে নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখবে। {আল মুগনী-২/১৩৯}
আলোচনার এই পর্যায়ে হাদীস, আসারে সাহাবা, তাবেয়ীন ও চার মাযহাবের ইমামদের ঐক্যমত্যের প্রমাণ পেশ করার পর আমরা দেখব আমাদের যে গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা মহিলাদের নামাযের ভিন্ন বিষয়টিকে উপেক্ষা করেন এবং পুরুষ ও মহিলার নামাযের অভিন্ন পদ্ধতির পক্ষে কথা বলেন, তাদের আলেমগণ এ বিষয়ে কি বলেন? তারা কি ফাতওয়া দিয়েছেন?
গায়রে মুকাল্লিদ আলেমগণের ফাতওয়া
মহিলাদের নামাযের পদ্ধতিতে ইতোপূর্বে যা কিছু উল্লেখ করা হল তথা হাদিস, আসারে সাহাবা, তাবেয়ীনদের ইজমা, এবং চার ইমামের ঐক্যমত্বের আলোকে যুগ যুগ ধরে অবিচ্ছন্ন সূত্র পরম্পরায় যেই পার্থক্যের আমল চলে আসছে, সেটাকে গায়রে মুকাল্লিদদের নেতৃস্থানীয় আলেমগণও স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং সেই আলোকে ফাতওয়া দিয়েছেন।
# মাওলানা মুহাম্মদ দাউদ গযনবী রঃ এর পিতা আল্লামা আব্দুল জাব্বার গযনবী রহঃ কে যখন জিজ্ঞেস করা হল-“মহিলাদের নামাযে জড়সড় হয়ে থাকা কি উচিত?” জবাবে তিনি একটি হাদিস উল্লেখ করার পর লেখেন-“এর উপরই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের চার মাযহাব ও অন্যান্যের মাঝে আমল চলে আসছে”।
এরপর তিনি চার মাযহাবের কিতাবের উদ্ধৃতি প্রদান করার পর লিখেন-“মোটকথা মহিলাদের জড়সড় হয়ে নামায পড়ার বিষয়টি হাদীস ও চার মাযহাবের ইমামগণ ও অন্যান্যের সর্বসম্মত আমলের আলোকে প্রমাণিত। এর অস্বিকারকারী হাদীসের কিতাবসমূহ ও উম্মতে মুসলিমার সর্বসম্মত আমল সম্পর্কে বেখবর ও অজ্ঞ”। (ফাতওয়ায়ে গযনবীয়্যা-২৭-২৮, ফাতওয়ায়ে ওলামায়ে আহলে হাদিস—৩/১৪৮-১৪৯, মাযমুয়ায়ে রাসায়েল-মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর-১-৩১০-৩১১)
মাওলানা আলী মুহাম্মদ সাঈদ সাহেব “ফাতওয়ায়ে ওলামায়ে আহলে হাদিস” এ এই পার্থক্যের কথা স্বীকার করেছেন। (মাজমুয়ায়ে রাসায়েল-১/৩০৫)
আলবানী সাহেবের অসার বক্তব্য
আশ্চর্যের কথা হল, উপরোল্লিখিত দলীলসমূহ এবং উম্মতের মাঝে নববী যুগ থেকে পর্যায়ক্রমে চলে আসা এই সর্বসম্মত আমলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আলবানী সাহেব তাঁর “সিফাতুস সালাতে” ঘোষণা দিয়ে দিলেন যে, “পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতি এক”।
কিন্তু এই দাবির পক্ষে তিনি না কোন আয়াত পেশ করেছেন, না কোন হাদিস। আর কোন সাহাবী বা তাবেয়ীর ফাতওয়া। এহেন বক্তব্যের ভিত্তি তিনি শুধু এটাকেই বানিয়েছেন যে, পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতিগত পার্থক্যের ব্যাপারে কোন সহীহ হাদিস নাই। অথচ তার এই দাবি প্রমাণ করার জন্য উচিত ছিল উপরোল্লিখিত দলিল সমূহ বিশ্লেষণ করা। কিন্তু তিনি তা না করে কেবল পার্থক্য সম্বলিত একটি হাদীসকে {যা বক্ষ্যমান নিবন্ধে উল্লেখিত হয়েছে} শুধু এ কথা বলে যয়ীফ বলে আখ্যা দিয়েছেন যে, হাদীসটি ‘মুরসাল’। আর মুরসাল হওয়ায় এটি দুর্বল। এ ছাড়া অন্য কোন আলোচনাই তিনি দলীল সম্পর্কে করেননি।
কিন্তু তার এই কথাটি এক গুয়েমি ছাড়া কিছু নয়। কারণ মুহাদ্দীসীনে কিরামের নিকট হাদিস মুরসাল হলেই তা অগ্রহণীয় হয়ে যায়না। কেননা প্রথমত আয়িম্মায়ে দ্বীনের অধিকাংশের মতে বিশেষত স্বর্ণযুগের ইমামগণের নিকট যদি প্রয়োজনীয় শর্তাবলী উপস্থিত থাকে। তাহলে মুরসাল হাদিসও সহীহ হাদিসের মত গ্রহণযোগ্য।
দ্বিতীয়ত: যে ইমামগণের নিকট ‘মুরসাল” হাদীসকে সহীহ বলার ব্যাপারে দ্বিধা রয়েছে তারাও মূলত কিছু শর্তের সাথে মুরসাল হাদীসকে দলীল হিসেবে পেশ করার উপযোগী মনে করেন। প্রবন্ধের শুরুতে বর্ণিত মুরসাল বর্ণনাটিতেও সেসব শর্ত বিদ্যমান রয়েছে। যার কারণে গায়রে মুকাল্লিদদের বিখ্যাত আলেম ও মুহাদ্দিস নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান “আউনুল বারী”-(১/৫২০ দারুর রাশীদ, হালাব সিরিয়া) তে লিখেছেন-“এই মুরসাল হাদীসটি সকল ইমামের উসূল ও মূলনীতি অনুযায়ী দলীল হওয়ার যোগ্য”। তার পূর্ণ বক্তব্যটি দেখুন আওনুল বারী-২/১৫৯,
পুরুষ মহিলার নামাযের পার্থক্য নেই প্রমাণ করতে আলবানী দ্বিতীয় যে কাজটি করেছেন তা খুবই গর্হিত। সেটা হল তিনি ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ নাকি বলেছেন-“মহিলা পুরুষের মতই নামায আদায় করবে”। এই কথাটি নাকি মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাতে আছে। অথচ সেই কিতাবের কোথাও এই উক্তিটি নাই। আল্লাহই ভাল জানেন তিনি কি করে এই কথা বলতে পারলেন!!
অথচ ইতোপূর্বে মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবার একাধিক বর্ণনা সহীহ সনদে ইবরাহীম নাখয়ী থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। যেখানে ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ স্পষ্টই মহিলা পুরুষের নামাযের পার্থক্যের কথা বলেছেন।

আলবানী সাহেব তার নিজের দাবী প্রমাণ করার জন্য তৃতীয় আরেকটি কাজ করেছেন। সেটা হল-ইমাম বুখারী রহঃ এর রিজালশাস্ত্রেরে একটি কিতাব “তারীখে সগীর” থেকে নিম্নোক্ত বর্ণনাটি পেশ করেছেন-
عن ام الدرداء انها كانت تجلس فى الصلاة جلسة الرجل-
“উম্মে দারদা থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি নামাযে পুরুষের মত বসতেন”।
আলবানী সাহেব খেয়াল করতে পারেননি যে, এই বর্ণনাটি দ্বারা নামাযে পুরুষ ও মহিলার বসার ভিন্নতাই প্রমাণ হয়। এক হওয়া নয়। যদি উভয় বসার পদ্ধতি এক হত, তাহলে “পুরুষের মত বসা” কথাটির কোন অর্থ থাকেনা। তাই এই কথা থেকে এটি বুঝা যায় যে, সেই যমানায় পুরুষদের মত মহিলারা বসতনা। কিন্তু তিনি যেহেতো ভিন্নভাবে বসতেন তাই এটি ইতিহাসের বর্ণনায় চলে এসেছে।
আরেকটি মজার ব্যাপার হল। উম্মে দারদা হলেন একজন তাবেয়ী। তিনি ৮০ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। তাবেয়ীর বক্তব্য দ্বারা আলবানী সাহেব দলীল পেশ করলেন। অথচ তিনিই আমাদের বর্ণিত প্রথম হাদিসটি মুরসাল বলে প্রত্যাখ্যান করলেন। আশ্চর্য ব্যাপার!!
সুতরাং যদি নামাযের পদ্ধতি বর্ণনার ক্ষেত্রে তাবেয়ীর আমল দলীল হয়ে থাকে (আসলে কথা এটাই, অর্থাৎ তাবেয়ীর কথা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য) তাহলে ইতোপূর্বে বিখ্যাত একাধিক তাবেয়ী ইমামগণের উদ্ধৃতিতে মহিলাদের নামাযের পদ্ধতির ভিন্নতার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা গেছে। এবং একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, আয়িম্মায়ে তাবেয়ীদের তালীম ও শিক্ষা অনুযায়ী রুকু সেজদা, ও বৈঠকসহ অনেক ক্ষেত্রে মহিলাদের নামায পদ্ধতি পুরুষ থেকে ভিন্ন ছিল। এক্ষেত্রে শুধু একজন তাবেয়ী মহিলার ব্যক্তিগত আমলকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করাটা কিছুতেই যুক্তিযুক্ত হতে পারেনা। বিশেষ করে যখন যখন ঠিক এই বর্ণনাটির মাঝেই সুষ্পষ্ট একথার ইংগিত রয়েছে যে, এ ক্ষেত্রে এ মহিলা অন্য সাহাবী ও তাবেয়ী মহিলা থেকে সম্পুর্ণ ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছিলেন।
সুতরাং বুঝা গেল নামাযের মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে মহিলারা পুরুষদের থেকে আলাদা এটাই দলীল দ্বারা প্রমাণিত। গায়রে মুকাল্লিদ ভাইদের বক্তব্যটির কোন দলিল নেই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সত্যকে সত্য হিসেবে মেনে নেবার তৌফিক দান করুন। আমীন।
বিঃদ্রঃ উপরোক্ত লেখাটি উস্তাদে মুহতারাম আল্লামা আব্দুল মতীন দা.বা. এর অনবদ্য গ্রন্থ “দলীলসহ নামাযের মাসায়েল” নামক গ্রন্থ থেকে সংগ্রহকৃত।

প্রশ্ন: ১৪৩: হজ্ব / হজ্জ / হাজ্জ ।

হজ্জের নিয়মকানুন

এক নজরে হজ্ব ও ওমরাহ্

হজ্জের ফরজ ৩টি

১। ইহরাম বাধা ২। উ’কুফে আ’রাফা (আরাফাতের ময়দানে অবস্থান) ৩। তাওয়াফুয্ যিয়ারাত

হজ্জের ওয়াজিব ৬টি

(১) ‘সাফা ও মারওয়া’ পাহাড় দ্বয়ের মাঝে ৭ বার সায়ী করা।
(২) অকুফে মুযদালিফায় (৯ই জিলহজ্জ) অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সুর্যদয় পর্যন্ত একমুহুর্তের জন্য
হলেও অবস্থান করা।
(৩) মিনায় তিন শয়তান (জামারাত) সমূহকে পাথর নিপে করা।
(৪) ‘হজ্জে তামাত্তু’ ও ‘কি্বরান’ কারীগণ ‘হজ্জ’ সমাপনের জন্য দমে শোকর করা।
(৫) এহরাম খোলার পূর্বে মাথার চুল মুন্ডানো বা ছাটা।
(৬) মক্কার বাইরের লোকদের জন্য তাওয়াফে বিদা অর্থাৎ মক্কা থেকে বিদায়কালীন তাওয়াফ করা।
এছাড়া আর যে সমস্ত আমল রয়েছে সব সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব।

ওমরাহর ফরজ, ওয়াজিব

দুইটি ফরজ: (১) ইহরাম পরিধান করা (২) তাওয়াফ
দুইটি ওয়াজিব: (১) সাফা ও মারওয়া মধ্যবর্তী (সবুজ বাতি) স্থানে সাতবার সায়ী করা (২) মাথার চুল
মুন্ডানো বা ছাটা।

তালবিয়া

”লাব্বাঈক আল্লাহুম্মা লাব্বাঈক, লাব্বাঈক, লা-শারীকা-লাকা লাব্বাঈক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি’মাতা লাকা ওয়াল-মুল্ক, লা শারীকালাক।”
অর্থ: আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত! আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোন অংশীদার নেই। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার।
আপনার কোন অংশীদার নেই।

ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ

(১) সেলাইযুক্ত যে কোন কাপড় বা জুতা ব্যবহার, এক্ষেত্রে স্পঞ্জ সেন্ডেলের ব্যবহার করা।
(২) মস্তক ও মুখমন্ডল (ইহরামের কাপড়সহ যে কোন কাপড় দ্বারা) ঢাকা,
(৩) পায়ের পিঠ ঢেকে যায় এমন জুতা পরা।
(৪) চুলকাটা বা ছিড়ে ফেলা,
(৫) নখকাটা,
(৬) ঘ্রানযুক্ত তৈল বা আতর লাগানো।
(৭) স্ত্রীর সঙ্গে সংগম করা।
(৮) যৌন উত্তেজনামূলক কোন আচরণ বা কোন কথা বলা।
(৯) শিকার করা।
(১০) ঝগড়া বিবাদ বা যুদ্ধ করা।
(১১) চুল দাড়িতে চিরুনী বা আঙ্গুলী চালনা করা, যাতে ছিড়ার আশংকা থাকে।
(১২) শরীরে সাবান লাগানো।
(১৩) উকুন, ছারপোকা, মশা ও মাছিসহ কোন জীবজন্তু হত্যা করা বা মারা।
(১৪) কোন গুনাহের কাজ করা, ইত্যাদি।

হজ্জের প্রকার ও নিয়তসমূহ

প্রথম প্রকার হজ্জে ইফরাদ

বর্ণনা: ওমরাহ্ ব্যতিত শুধু হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধা এবং হজ্জের সাথে ওমরাহকে না মিলানো। (বদলী হজ্জের জন্যও এই হজ্জ)।
নিয়্যাত: আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল হাজ্জা ফায়াসছির হুলিওয়াতা কাব্বালহুমিনি্ন। (বাংলা নিয়ত- আল্লাহ আমি ইফরাদ হজ্জের উদ্দেশ্যে আপনার সন্তুষ্টির জন্য ইহরাম বাধলাম। তা সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন)।

দ্বিতীয় প্রকার হজ্জে কি্বরান

বর্ণনা: একত্রে একই স্থান থেকে হজ্জ ও ওমরার নিয়্যাত করে হজ্জের সাথে ওমরাহকে মিলানো এবং একই ইহ্রামে উভয়টি আদায় করা।
নিয়্যাত: আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল উ’মরাতা ফায়াচ্ছির লী-ওয়াতাক্াব্বাল মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি আপনার উদ্দেশ্যে হজ্জে কি্বরানের জন্য ইহরাম বাধলাম তা সহজ করে দিন ও কবুল করে নিন।

তৃতীয় প্রকার হজ্জে তামাত্তু

বর্ণনা: একই সফরে পৃথক পৃথক ভাবে ‘ইহরাম’ পরিধান করে ‘হজ্জ ও ওমরাহ’ আদায় করা। প্রথম ইহ্রামে ওমরাহর নিয়্যাত করে তা পালন শেষে চুল কেটে ‘ইহরাম’ খুলে হালাল হয়ে দ্বিতীয় বার নতুন করে হজ্জের নিয়্যাতে ৮ই জিলহজ্জ ‘মক্ক শরীফ’ থেকে হজ্জের জন্য ইহরাম বাধা। তামাত্তু করার ইচ্ছা থাকলে প্রথমে ওমরার নিয়্যাত করে এহরাম বাঁধুন।

শুধু ওমরাহর নিয়্যাত

আল্লাহুমা ইন্নী উরীদুল উম’রাতা ফায়াচ্ছির লী-ওয়াতাক্াব্বাল মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি ওমরাহ্ পালনের জন্য ইহরাম বাধলাম তা সহজ করে দিন এবং কবুল করে নিন।

শুধু হজ্জের নিয়্যাত

আল্লাহুম্মা ইন্নী উরীদুল হাজ্জা ফায়াচ্ছিরহু-লী অ-তাকাব্বালহু মিন্নী। বাংলা নিয়ত- হে আল্লাহ আমি পবিত্র হজ্জ পালনের জন্য ইহরাম বেধে নিয়ত করলাম তা সহজ করে দিন এবং কবুল করে নিন।

তাওয়াফের বিবরণ

হাজীদের সর্বপ্রথম কাজই হলো (তামাত্তু ও ক্বেরান কারীগণ) নিজের মালছামানগুছিয়ে রেখে পাকপবিত্র হয়ে মোটেই দেরী না করে ‘হারাম শরীফে’ হাজিরা দেওয়া এবং ‘তাওয়াফ’ করা। ওমরাহ এবং হজ্জের তাওয়াফ ব্যাতিত নফল তাওয়াফ ও করা যায়। যেমন: রাসূল (দঃ), সাহাবা-আওলিয়া, আহ্লে বাইত, মা-বাবা, পীর-উস্তাদ ও অন্যান্য মুরুব্বী বা সন্তানদের স্মরনে বা তাঁদের নামে তাওয়াফ করা।

তাওয়াফের ওয়াজিব সমূহ

(১) শরীর পাক-সাফ রাখা, ওজু করা। মহিলাদের হায়েজ নেফাছ অবস্থায় তাওয়াফ করা জায়েজ নাই।
(২) ছতর ঢাকা। অর্থাৎ যেটুকু ঢাকা প্রত্যেক পুরুষ-নারীর জন্য ফরজ।
(৩) ‘হাতীমে কা’বার’ বাইরে থেকে ‘তাওয়াফ’ করা।
(৪) পায়ে হেঁটে ‘তাওয়াফ’ করা। অম ব্যক্তি খাটিয়ার মাধ্যমে ‘তাওয়াফ’ করতে পারেন।
(৫) ‘হাজ্রে আস্ওয়াদ’ থেকে শুরু করে ডানদিক দিয়ে ‘তাওয়াফ’ শুরু করা।
(৬) এক নাগাড়ে বিরতিহীন ভাবে ‘সাতবার চক্কর’ দিয়ে ‘তাওয়াফ’ পূর্ণ করা।
(৭) ‘সাত চক্করে’ এক ‘তাওয়াফ’, এটা পূর্ণ হলেই ‘তাওয়াফের’ নামাজ পড়া।

তাওয়াফের সুন্নত কার্যাবলী

(১) ‘তাওয়াফে’র শুরুতে ‘হাজারে আসওয়াদ’ এর দিকে মুখ করা।
(২) সম্ভব হলে ‘হাজ্রে আস্ওয়াদ’ চুম্বন করা। নতুবা হাত দ্বারা দূর থেকে ইশারা করা, এবং মুখে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আক্বার ওয়ালিল্লাহিল হ্ামদ’ বলা।
(৩) ‘হা্জ্রে অস্ওয়াদ’ বরাবর দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরিমা’র ন্যায় উভয় হাত সিনা পর্যন্ত উঠান।
(৪) যে ‘তাওয়াফে’র পরে ‘সাঈ’ আছে তাতে ‘এযতেবা’ করা। অর্থাৎ ইহরামের চাদরের (উপরের অংশের) দুই মাথা ডান বগলের নিচ দিয়ে বাম কাঁধের উপর ফেলে দেওয়া।
(৫) ‘সাঈ’ যুক্ত ‘তাওয়াফে’র প্রথম তিন চক্করে ‘রমল’ করা। অথর্াৎ বীরের মত হেলে দুলে জোর ক্বদমে (একের পর এক পা ফেলে) চলা।
(৬) বাকী চার চক্কর সাধারণ গতিতে (ধীরে ধীরে) সম্পন্ন করা।
(৭) প্রত্যেক চক্কর তাওয়াফ শেষ করে এবং শেষ চক্করেরও পরে ‘হাজ্রে অস্ওয়াদ’কে চুম্বন করা।
সম্ভব না হলে দূর থেকে ইশারা করে বিসমিল্লাহে আল্লাহ আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ্”দোয়াটি পাঠ করা এবং ৩ নং নিয়মের ন্যায় দাড়িয়ে ইশারা করে ‘তাওয়াফ’ শেষ করা।

তাওয়াফের নিয়্যাত

আল্লাহুম্মা ইন্নী উরীদু তাওয়াফা বাইতিকাল হারাম ফায়াচ্ছিরহু-লী, ওয়া তাক্বাব্বাল-হু-মিন্নী, সাবাআ’তা আশ্ওয়াতি্বন লিল্লাহি তায়া’লা। বাংলায় নিয়ত- হে আল্লাহ আমি তাওয়াফ পালনের জন্য নিয়ত করলাম।

সায়ীর নিয়ম

‘হজ্জ ও ওমরাহ’ ছাড়া নফল ‘তাওয়াফে’র কোন সায়ী নাই। কারো নামে ওমরাহ করতে হলেও সায়ী করতে হবে। সায়ী অর্থ দৌড়ানো। এটা ‘ছাফা’ পাহাড় থেকে প্রথমে শুরু করতে হবে। ছাফা থেকে মারওয়া।মারওয়া থেকে ছাফায়। এভাবে সাতবার সায়ীর সময় প্রথম তিন চক্কর সবুজ বাতির মাঝের অংশটুকু দৌড়ে দৌড়ে হেলে দুলে যাওয়া সুন্নাত (পুরুষদের জন্য)। পরের চার চক্কর সাধারণ গতিতে সম্পন্ন করতে হবে।

সায়ীর সহজ দোয়া

সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া লা-হাওলা, ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আ’লিয়্যিল আ’যীম, রাবি্বগফির ওয়ারহাম ওয়াআনতাল আ-আজ্জুল আকরাম।

সায়ীর কুরআনী দোয়া

‘ইন্নাছ্ ছাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন্ শাআ’ইরিল্লাহ্ ফামান হাজ্জাল বাইতা আও-ই’ তামারা ফালা জুনাহা আ’লাইহি আইয়াত্ত্বাওয়াফা বিহিমা ওমান তাত্বাওয়াআ খাইরান ফা-ইন্নাল্লাহা শাকিরুণ আ’লীম।” উপরোক্ত দুই দোয়া সাতবার চক্করের সময় হাটতে চলতে পড়তে হবে। পরেরটি না পারলে উপরেরটিই যথেষ্ট হবে।

হজ্জ ও ওমরাহর করনীয়

একনজরে তিন প্রকার হজ্জের জরুরী কাজ, হুকুম ও তারিখ সমূহ।

১ম প্রকার হজ্জে ইফরাদের ১১টি জরুরী কাজ

২য় প্রকার হজ্জে কেরানের জরুরী কাজ

৩য় প্রকার হজ্জে তামাত্তুর ১৫টি জরুরী কাজফরজ

৩টি ফরজ(১) ইহরাম (শুধু হজ্জের জন্য)।
(২) ৯ই জিলহজ্জ উ’কুফে আ’রাফা (সূর্য হেলার পর থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত)।
(৩) ১০ থেকে ১২ই জিলহজ্জ তাওয়াফে যিয়ারাত তবে ১০ই জি্বলহজ্ব তারিখই উত্তম।
(৪) অকুফে মুযদালেফায় ১০ই জিলহজ্জ সুবহে সাদেক সূর্য উদয় পর্যন্ত।
(৫) ১০ই জিলহজ্জ বড় শয়তানকে (জামারাতে আক্কাবায়) ৭টি কঙ্কর মারা। সুর্য হেলার পূর্বে দুপুর ১২টার আগে সুন্নত।
(৬) মাথা মুন্ডানো তবে দম দিতে হবে।
(৭) সায়ী ৯ তারিখের পূর্বে বা পরে) করে দিবেন।
(৮) ১১ তারিখে তিন শয়তানকে (প্রথম ছোট/মেঝ ও পড়ে বড়) ৭ক্ম৩=২১টি পাথর মারা।
(৯) ১২ তারিখে অনুরূপ তিন শয়তানকে ৭ক্ম৩= ২১টি পাথর মারা। সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি কঙ্কর মারা।
(১০) ‘বিদায়ী তাওয়াফে’ (মক্কার বাইরের লোকদের জন্য) বিদায়ের পূর্বে। এটি ওয়াজিব।
(১১) তাওয়াফে কুদুম করা। (মক্কায় গিয়ে সর্বপ্রথম)
৩টি ফরজ
(১) ইহরাম (হজ্জ ও ওমরাহর জন্য)
(২) আরাফাতে অবস্থান।
(৩) তাওয়াফুয যিয়ারাত।১০টি ওয়াজিব
(৪) ওমরাহর তাওয়াফ
(৫) ওমরাহর সায়ী
(৬) হজ্জের সায়ী
(৭) অকুফে মুযদালিফায়
(৮) ১০ই জিলহজ্ব তারিখে বড় শয়তানকে ৭টি পাথর মারা (দুপুর ১২টার পূর্বে) সুন্নত।
(৯) দম দিতে হবে।
(১০) মাথা মুন্ডানো।
(১১) ১১ই জিলহজ্ব তারিখে তিন শয়তানকে পাথর মারা
(১২) ১২ তারিখে তিন শয়তানকে পূর্বের ছকের নিয়মে পৃথক পৃথক ভাবে সূর্য হেলার পরে নিয়ম অনুযায়ী পাথর মারা।
(১৩) বিদায়ী তাওয়াফ।
৪টি ফরজ
(১) ওমরাহর ইহরাম (বাংলাদেশ)।
(২) হজ্জের ইহরাম (৮ তারিখ মক্কায়)
(৩) উ,কুফে আরাফা (৯ই জিলহজ্জ সূর্য হেলার পর থেকে সুর্যস্তের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত)।
(৪) তাওয়াফে জিয়ারত (১০ তারিখ অথবা ১১, ১২ তারিখ)১১টি ওয়াজিব
(৫) তাওয়াফে ওমরাহ (মক্কায় গিয়েই)
(৬) ওমরাহর সায়ী (ওমরাহ তাওয়াফের পরই)
(৭) মাথা মুন্ডানো (ওমরাহর পর)।
(৮) হজ্জের সায়ী
(৯) বড় শয়তানকে ৭টি পাথর মারা ( ১০ই জিলহজ্ব তারিখ সুর্য হেলার বা ১২টা পূর্বে) সুন্নত।
(১০) কুরবানী করা (পাথর মেরে ১০ তারিখ)।
(১১) মাথা মুন্ডানো দম দিতে হবে।
(১২) ১১ তারিখ তিন শয়তানকে ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারা।
(১৩) ১২ তারিখে তিন শয়তানকে ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারা (সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি পাথর মারতে হবে)।
(১৪) বিদায়ী তাওয়াফ।

১ম দিন ৮ই জিলহজ্জ

ইহরাম অবস্থায় (ফরয) মক্কা থেকে হজ্জের নিয়্যাতে মিনায় রওয়ানা হোন।
এ দিনের কাজ দু’টি
(১) ইহরাম (ফরজ) (২) ৫ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করা (সুন্নাত)।
যোহর, আছর, মাগরিব, এশা ও ৯ তারিখ ফজর সর্বমোট ৫ ওয়াক্ত

২য় দিন ৯ই জিলহজ্জ

১। আরাফাতে অবস্থান (ফরজ)। ২। অকুফে মুযদালিফায় (ওয়াজিব)

আরাফাতে অবস্থান

–  ফজরের নামাজ মিনায় পড়ে আরাফাতের ময়দানের দিকে রওয়ানা হোন।
–  আরাফাতে সূর্য হেলার পর অর্থাৎ ১২টার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা হজ্জের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ।
–  ওয়াক্ত মত তাবুতে (মসজিদে নামেরায় না গেলে) বা আরাফার ময়দানে যে কোন স্থানে জোহরের সময় জোহর নামাজ আদায় করুন।
–  আসরের নামাজ আসরের সময় আদায় করুন, নির্দিষ্ট সময় বা আগে পরে, পৃথক পৃথক ভাবে।
–  উল্লেখ্য: ‘মসজিদে নামেরায়’ জোহর ও আসরের জামাত এক আযান দুই ইকামাতে একত্রে আদায় করলে একত্রে দুই ওয়াক্ত আদায় করতে হয়, ওটার নাম ‘জমে তাক্বদীম’। কিন্তু তাবুতে বা অন্য কোন স্থানে একত্রে নয়। ভিন্ন সময় ভিন্ন ভাবে ওয়াক্ত মত আদায় করতে হবে।)

অকুফে মুযদালিফায় (ওয়াজিব)

–  সূর্যাস্তের পর সাথে সাথে মাগরিব না পড়ে মুযদালিফায় রওয়ানা হোন।
–  মুযদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ এক আযান দুই এক্বামাতে একত্রে আদায় করুন। এটা ওয়াজিব এটার নাম ‘জামে তাখীর জামাতে পড়া উত্তম। মুযদালিফায় অবস্থান (ওয়াজিব) মুযদালিফায় থাকাকালীন পাহাড়ে অথবা তার পাদদেশে যে কোন ঘাস দুবলা থেকে খুঁজে খুঁজে পাথর মারার জন্য ৭২টি (চানাবুটের ন্যায় কঙ্কর) ছোট ছোট পাথর সংগ্রহ করে ইহরামের কাপড়ে বেঁধে নিন।
১০/১১/১২ তিন দিনে (৪৯টি পাথর) তিন শয়তানকে মারতে হবে।
–  ১ম দিন ৭টি
–  ২য় দিন ২১টি
–  ৩য় দিন ২১টি
(সর্বমোট তিন দিনে ৭+২১+২১=৪৯টি )। তবে মিসিং হতে পারে বলে বেশী (৭২) নেওয়া সুন্নাত।

৩য় দিন ১০ই জিলহজ্জ

এ দিনের মোট কাজ ৪টি (১) বড় শয়তানকে পাথর মারা (২) কুরবানী (৩) মাথা মুন্ডানো (৪) তাওয়াফে যিয়ারাত করা
–  মুযদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে সূর্য উদয়ের আগ পর্যন্ত অবস্থান করুন (ওয়াজিব)।
–  মিনায় পৌছে বড় শয়তানকে ৭টি পাথর সূর্য হেলার আগে (১২টার পূর্বেই) মারুন। (সুন্নাত)।
–  তারপর তামাত্তু ও কি্বরান হজ্জকারীগণ কুরবানী করুন (ওয়াজিব)।
–  এরপর ইহরাম খুলে হালাল হয়ে স্বাভাবিক পোষাক পরিধান করুন। কিন্তু কোরবানী পূর্বে নয়। (তবে ইফরাদ হজ্জকারী কুরবানী না করলেও চলবে)।
–  চুল ছাড়া বা মুন্ডানোর পর মক্কায় গিয়ে (সম্ভব হলে উত্তম) আজই তাওয়াফে যিয়ারত করুন। আজ করা সর্বোত্তম। (এটা ফরজ)।
–  তাওয়াফ শেষে মিনায় এসে রাত্রি যাপন করুন সুন্নাত।

৪র্থ দিন ১১ই জিলহজ্জ

–  ১০ তারিখে কুরবানী, চুল ছাটা ও তাওয়াফে যিয়ারত না করে থাকলে আজ করুন।
–  সূর্য হেলার পর থেকে (১২টার পর) মিনায় তিন শয়তানকে সূর্যাস্তের পূর্বে (প্রথম ছোট, তারপর মেজ অতঃপর বড়) ৭+৭+৭=২১টি পাথর মারুন (ওয়াজিব)। মিনায় রাত্রি যাপন করুন (সুন্নাত)।

৫ম দিন ১২ই জিলহজ্জ

–  তাওয়াফে যিয়ারত ১০/১১ তারিখে না করে থাকলে আজ সূর্যাস্তের পূর্বে অবশ্যই করুন।
–  মিনায় সূর্য হেলার পর থেকে (সুন্নাত সময় হল) সূর্যাস্তের পূর্বে ৭+৭+৭=২১টি পাথর (ছোট, মেজ ও বড় ) শয়তানকে মেরে সূর্যাস্তের পূর্বে) মক্কায় রওয়ানার চেষ্টা করুন।

জরুরী কথা

(১) তবে ১১/১২ তারিখ সূর্য হেলার পূর্বে পাথর মারলে আদায় হবে না। পূণরায় মারতে হবে। নতুবা  দম দিতে হবে।
(২) যদি ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে মীনা ত্যাগ করে মক্কায় রওয়ানা না হন তবে ১৩ তারিখ পূনরায় তিন  শয়তানকে ৭+৭+৭=২১টি
পাথর (ছোট, মেজ ও বড় ) মেরে (পূর্বের নিয়মে) তারপর মক্কায় আসতে হবে।
(৩) তাওয়াফে যিয়ারতের উত্তম সময় ১০ই জিলহজ্জ (তবে ৩ দিন, এর সব মোট সময়) শেষ সময়  ১২ই জিলহজ্জ সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
(৪) মক্কা থেকে মিনায় রওয়ানার পূর্বে যদি নফল তাওয়াফ করে হজ্জের নিয়্যাত সায়ী না করে থাকেন  (বা মিনায় আসেন) তাহলে হজ্জের পরে তাওয়াফে যিয়ারতের পর অবশ্যই হজ্জের সায়ী করুন।
(ওয়াজিব)।

যিয়ারাতে মদীনাহ

হজ্জের পূর্বে অথবা পরে (সুবিধামত) সময়ে হাজীদল তথা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (দঃ) এর পাগলপাড়া উম্মতগণ এক মূহুর্তে একদিন/তথা ৮ দিনের জন্য (সম্ভব হলে) নতুবা এক রাত হলেও মদীনা শরীফে যান এবং রাসূলে পাক (দঃ) এর রওজা মোবারক যিয়ারত, রিয়াদুল জান্নাতে বসা (নামাজ আদায় করা) জান্নাতুল বাকী যিয়ারত করা এবং বিশেষতঃ ৮ দিনে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করাসহ বহু ঐতিহাসিক স্থান তথা উহুদ পাহাড় ও বদর প্রান্তর দেখার সৌভাগ্য অর্জন করে থাকেন। এছাড়া মদীনা শরীফে আর কোন কাজ নেই। মূলতঃ মদীনা শরীফে মাসজি দে নববীতে নামাজ ও রাসূলের পাক (দঃ) এর রওজা শরীফ যিয়ারতই হল প্রধান কাজ। যদি সম্ভব হয় বা সময় সূযোগ থাকে তাহলে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ (সুন্নাত) রয়েছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, ৮দিন=৪০ ওয়াক্ত থাকতেই হবে। এটা ফরজ বা ওয়াজিব নয়। আসলে এটা সুন্নাত এবং হজ্জের অংশ নয়। মূলতঃ আশেকে রাসূল (দঃ) দের জন্য রাসূলে পাক (দঃ) এর রওজা মোবারক যিয়ারতের নিয়্যাতে যাওয়াই হল মূল।

বদলী হজ্জ

যে সকল মুসলিম নর-নারীর উপর হজ্জ ফরজ ছিল, তাঁদের মধ্যে যদি কেউ মৃতু্যবরণ করে অথবা জীবিত কিন্তু শারিরীক দুর্বলতা ও অসুস্থতা ও অমতার কারণে হজ্জ করতে অপারগ হয়, তাহলে অন্য কাউকে দিয়ে বিশেষ করে বিজ্ঞ আলেম বা হজ্জে পারদশর্ী ব্যক্তি দ্বারা তাঁর বদলী হজ্জ করাতে পারবে। অথর্াৎ যাঁর জন্য বদলী হজ্জ করা হবে তাঁরই নামে ইহরাম পরিধান ও নিয়্যাত করে অন্য একজন হজ্জ আদায়
করতে পারবে।
সংকলনে: মাওলানা মুহাম্মদ আমিনুল হক
সূত্র: www.haab-bd.com


প্রশ্ন

প্রশ্ন: আমি হজ্ব আদায়ের পদ্ধতি বিস্তারিত জানতে চাই।
আলহামদুলিল্লাহ।
হজ্ব একটি উত্তম ও মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। এটি ইসলামের পঞ্চখুঁটির অন্যতম। যে ইসলাম দিয়ে আল্লাহ তাআলা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠিয়েছেন। যে খুঁটিগুলো ব্যতীত কোন ব্যক্তির দ্বীনদারি পূর্ণতা পেতে পারে না। যে কোন ইবাদত দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাছিল হতে হলে ও ইবাদত কবুল হতে হলে দুইটি বিষয় আবশ্যক:
এক. আল্লাহর জন্য মুখলিস বা একনিষ্ঠ হওয়া। অর্থাৎ সে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের কল্যাণকে উদ্দেশ্য করা; প্রদর্শনেচ্ছা, প্রচারপ্রিয়তার উদ্দেশ্যেনা করা অথবা অন্য কোন দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে না-করা। দুই. কথা ও কাজে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ জানা ছাড়া তাঁকে অনুসরণ করা সম্ভব নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি হজ্ব পালনের মাধ্যমে অথবা অন্যকোন ইবাদত পালনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চায় তার কর্তব্য হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ জেনে নেয়া। নিম্নে আমরা সুন্নাহ মোতাবেক হজ্ব আদায় করার পদ্ধতি সংক্ষেপে তুলে ধরব। ইতিপূর্বে আমরা উমরা আদায় করার পদ্ধতি 31819 নং প্রশ্নের জবাবে তুলে ধরেছি। উমরাআদায় করার পদ্ধতি সে প্রশ্নের উত্তর থেকে জেনে নেয়া যেতে পারে। হজ্বের প্রকারভেদ:
হজ্ব তিন প্রকার: তামাত্তু, ইফরাদ ও ক্বিরান।
তামাত্তু হজ্ব: হজ্বের মাসসমূহে (হজ্বের মাস হচ্ছে- শাওয়াল, জ্বিলক্বদ, জ্বিলহজ্ব দেখুন আল-শারহুল মুমতি ৭/৬২) এককভাবে উমরার ইহরামবাঁধা, মক্কায় পৌঁছে তওয়াফ করা, উমরার সায়ী করা, মাথা মুণ্ডন করা অথবা চুল ছাটাই করে উমরা থেকে হালাল হয়ে যাওয়া। এরপর তারবিয়ার দিন অর্থাৎ ৮ জ্বিলহজ্ব এককভাবে হজ্বের ইহরাম বাঁধা এবং হজ্বের যাবতীয় কার্যাবলী শেষ করা। অতএব, তামাত্তু হজ্বকারী পরিপূর্ণ একটি উমরা পালন করেন এবং পরিপূর্ণ একটি হজ্ব পালন করেন। ইফরাদ হজ্ব: এককভাবে হজ্বের ইহরাম বাঁধা, মক্কায় পৌঁছে তাওয়াফে কুদুম করা, হজ্বের সায়ী করা, মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট না করে তথা ইহরাম থেকে হালাল না হয়ে ইহরাম অবস্থায় থেকে যাওয়া এবং ঈদের দিন জমরা আকাবাতে কংকর নিক্ষেপের পর ইহরাম থেকে হালাল হওয়া। আর যদি হজ্বের সায়ীকে হজ্বের তওয়াফের পরে আদায় করতে চায় সেটাতেও কোন অসুবিধা নেই। ক্বিরান হজ্ব: উমরা ও হজ্বের জন্য একত্রে ইহরাম বাঁধা অথবা প্রথমে উমরার ইহরাম বাঁধা এরপর তওয়াফ শুরু করার আগে হজ্বকে উমরার সাথে সম্পৃক্ত করা (অর্থাৎ তওয়াফ ও সায়ীকে হজ্ব ও উমরার সায়ী হিসেবে নিয়ত করা)।ক্বিরান হজ্বকারীর আমলগুলো ইফরাদ হজ্বকারীর আমলের মত। তবে ক্বিরান হজ্বকারীর উপর হাদি আছে; ইফরাদ হজ্বকারীর উপর হাদি নেই। হজ্বের প্রকারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে- তামাত্তু হজ্ব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীগণকে এই হজ্ব আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং এই হজ্ব আদায় করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। এমনকি যদি কেউ ক্বিরান হজ্ব বা ইফরাদ হজ্বের নিয়ত করেফেলেতিনিতার ইহরামকে উমরার ইহরামে পরিবর্তন করে হালাল হয়ে যাওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। যাতে করে সে ব্যক্তি তামাত্তু হজ্ব পালনকারী হতে পারেন। এমনকি সেটা তাওয়াফে কুদুম ও সায়ীর পরও হতে পারে। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি তাঁর বিদায়ী হজ্বে তওয়াফ ও সায়ী করার পর তাঁর সাহাবীগণকে নির্দেশ দেন- তোমাদের মধ্যে যার যার সাথে হাদি নেই সে যেন তার ইহরামকে উমরার ইহরামে পরিবর্তন করে মাথার চুল ছোট করে হালাল হয়ে যায়। তিনি আরো বলেন: আমি যদি হাদি না নিয়ে আসতাম তাহলে তোমাদেরকে যে নির্দেশ দিচ্ছি আমিও সেটা পালন করতাম। ইহরাম:একটু আগে যে প্রশ্নের রেফারেন্স দেয়া হয়েছে সে প্রশ্নের উত্তরে ইহরামের সুন্নতগুলো যেমন- গোসল করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, নামায পড়া ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়েছে। ইহরামের আগে সে সুন্নতগুলো পালন করতে হবে। এরপর নামায শেষ করার পর অথবা নিজ বাহনে আরোহণ করার পর ইহরাম বাঁধবে। যদি তামাত্তু হজ্বকারী হয় তাহলে বলবে:
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ بِعُمْرَةٍ
লাব্বাইকাল্লাহুম্মা বি উমরাতিন (অর্থ- হে আল্লাহ! উমরাকারী হিসেবে আপনার দরবারে হাজির)।
আর যদি ক্বিরান হজ্ব আদায়কারী হয় তাহলে বলবে:
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ بِحَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ
লাব্বাইকাল্লাহুম্মা বি হাজ্জাতিন ওয়া উমরাতিন (হে আল্লাহ! হজ্ব ও উমরাকারী হিসেবে আপনার দরবারে হাজির)
আর যদি ইফরাদ হজ্বকারী হয় তাহলে বলবে:
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ حَجًّا
লাব্বাইকাল্লাহুম্মা হাজ্জান (হে আল্লাহ! হজ্বকারী হিসেবে আপনার দরবারে হাজির)।
এরপর বলবেন: اللهم هذه حجة لا رياء فيها ولا سمعةআল্লাহুম্মা হাযিহি হাজ্জাতুন লা রিয়াআ ফি-হা ওয়ালা সুমআ (হে আল্লাহ! এ হজ্বকে এমন হজ্ব হিসেবে কবুল করুন যার মধ্যে লৌকিকতা ও প্রচারপ্রিয়তা নেই)। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে তালবিয়া পড়েছেন সেভাবে তালবিয়া পড়বে। সেই তালবিয়া হচ্ছে-
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ ، لَبَّيْكَ لا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لا شَرِيكَ لَكَ
লাব্বাইকাল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারিকা লাক।
(অর্থ- হে আল্লাহ! আমি আপনার দরবারে হাজির। আমি আপনার দরবারে হাজির। আমি আপনার দরবারে হাজির। আপনি নিরঙ্কুশ। আমি আপনার দরবারে হাজির। নিশ্চয় যাবতীয় প্রশংসা, যাবতীয় নেয়ামত আপনার-ই জন্য এবং রাজত্ব আপনার-ই জন্য। আপনি নিরঙ্কুশ।)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও একটি তালবিয়া পড়তেন সেটা হচ্ছে-
لَبَّيْكَ إِلَهَ الْحَقِّ
লাব্বাইকা ইলাহাল হাক্ব (অর্থ- ওগো সত্য উপাস্য! আপনার দরবারে হাজির)।
ইবনে উমর (রাঃ) আরেকটু বাড়িয়ে বলতেন:
لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ بِيَدَيْكَ وَالرَّغْبَاءُ إِلَيْكَ وَالْعَمَلُ
লাব্বাইকা ওয়া সাদাইক। ওয়াল খাইরু বি ইয়াদাইক। ওয়ার রাগবাউ ইলাইকা ওয়াল আমাল। (অর্থ- আমি আপনার দরবারে হাজির, আমি আপনার সৌজন্যে উপস্থিত। কল্যাণ আপনার-ই হাতে। আকাঙ্ক্ষা ও আমল আপনার প্রতি নিবেদিত)। পুরুষেরা উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়বে।আর নারীরা এভাবে পড়বে যেন পাশের লোক শুনতে পায়। যদি পাশে বেগানা পুরুষ থাকে তাহলে গোপনে তালবিয়া পড়বেন।
ইহরামকারী যদি কোন প্রতিবন্ধকতার আশংকা করেন যেমন রোগ, শত্রু বা গ্রেফতার ইত্যাদি তাহলে ইহরামকালে শর্ত করে নেয়া ভাল। ইহরামকালে তিনি বলবেন:
إِنْ حَبَسَنِيْ حَابِسٌ فَمَحِلِّيْ حَيْثُ حَبَسْتَنِيْ
ইন হাবাসানি হাবেস ফা মাহিল্লি হাইসু হাবাসতানি (অর্থ- যদি কোন প্রতিবন্ধকতা - যেমন রোগ, বিলম্ব ইত্যাদি আমার হজ্ব পালনে- বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে আমি যেখানেপ্রতিবন্ধকতার শিকার হই সেখানে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাব)।কেননা দুবাআ বিনতে যুবাইর (রাঃ) অসুস্থ থাকায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহরাম করাকালে তাকে শর্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন: “তুমি যে শর্ত করেছ সেটা তোমার রবের নিকট গ্রহণযোগ্য।”[সহিহ বুখারি (৫০৮৯) ও সহিহ মুসলিম (১২০৭)] যদি ইহরামকারী শর্ত করে থাকে এবং নুসুক পালনে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয় তাহলে সে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবে। এতে করে তার উপর অন্য কোন দায়িত্ব আসবে না। আর যদি প্রতিবন্ধকতার কোন আশংকা না থাকে তাহলে শর্ত না করাই বাঞ্ছনীয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শর্ত করেননি এবং সাধারণভাবে সবাইকে শর্ত করার নির্দেশও দেননি। দুবাআ বিনতে যুবাইর (রাঃ) অসুস্থ থাকায় তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। ইহরামকারীর উচিত অধিক তালবিয়া পাঠ করা। বিশেষতঃ সময় ও অবস্থার পরিবর্তনগুলোতে। যেমন উঁচুতে উঠার সময়। নীচুতে নামার সময়। রাত বা দিনের আগমনকালে। তালবিয়া পাঠের পর আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত প্রার্থনা করা এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত।
উমরার ইহরামের ক্ষেত্রে ইহরামের শুরু থেকে তওয়াফ শুরু করার আগ পর্যন্ত তালবিয়া পড়ার বিধান রয়েছে। আর হজ্বের ক্ষেত্রে ইহরাম করার পর হতে ঈদের দিন জমরা আকাবাতে কংকর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়া পড়ার বিধান।
মক্কায় প্রবেশের জন্য গোসল: মক্কারকাছাকাছি পৌঁছলে সম্ভব হলে মক্কায় প্রবেশের জন্য গোসল করে নিবে। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা প্রবেশের সময় গোসল করেছিলেন।[সহিহ মুসলিম (১২৫৯)]
এরপর মসজিদে হারামে প্রবেশের সময় ডান পা আগে দিবে এবং বলবে:
بِسْمِ اللهِ والصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ الَّلهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوْبِيْ وافْتَحْ لِى أَبْوَابَ رَحْمَتِكَأَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
(অর্থ- আল্লাহর নামে শুরু করছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ! আমার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিন। আমার জন্য আপনার রহমতের দুয়ারগুলো খুলে দিন। আমি বিতাড়িত শয়তান হতে মহান আল্লাহর কাছে তাঁর মহান চেহারার মাধ্যমে, তাঁর অনাদি রাজত্বেরমাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।)
এরপর তওয়াফ শুরু করার জন্য হাজারে আসওয়াদের দিকে এগিয়ে যাবে। তওয়াফ করার পদ্ধতি ইতিপূর্বে (31819) নং প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করা হয়েছে।
তওয়াফের পর ও তওয়াফের দুই রাকাত নফল নামাযের পর মাসআ (সায়ী করার স্থান) এর দিকে এগিয়ে যাবে এবং সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝখানে সায়ী (প্রদক্ষিণ) করবে। (31819) নং প্রশ্নের জবাবে সায়ীর বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে
তামাত্তু হজ্বকারী উমরার সায়ী করবেন। আর ইফরাদ ও ক্বিরান হজ্বকারী হজ্বের সায়ী করবেন এবং ইচ্ছা করলে সায়ীটি হজ্বের ফরজ তওয়াফের পরেও আদায় করতে পারেন।
মাথা মুণ্ডন করা বা চুল ছোট করা:
তামাত্তু হজ্বকারী যখন সায়ীর সাত চক্কর শেষ করবেন তখন তিনি পুরুষ হলে মাথা মুণ্ডন করতে পারেন অথবা চুল ছোট করতে পারেন। যদি মাথা মুণ্ডন করলে মাথার সর্বাংশমুণ্ডন করতে হবে। অনুরূপভাবে চুল ছোট করলেও মাথার সর্বাংশের চুল ছোট করতে হবে। চুল ছোট করার চেয়ে মাথা মুণ্ডন করা উত্তম। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাথা মুণ্ডনকারীদের জন্য তিনবার দুআ করেছেন। আর চুল ছোটকারীদের জন্য একবার দুআ করেছেন।[সহিহ মুসলিম (১৩০৩)]তবে হজ্বের সময় যদি অতি নিকটবর্তী হয় এবং নতুন চুল গজাবার মত সময় না থাকে তাহলে চুল ছোট করা উত্তম; যাতে হজ্বের সময় মাথা মুণ্ডন করতে পারেন। দলিল হচ্ছে- বিদায় হজ্বকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীগণকে উমরার জন্য মাথার চুল ছোট করার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ তাঁরা জ্বিলহজ্ব মাসের ৪ তারিখ সকাল বেলায় মক্কা পৌঁছেছিলেন। আর নারীরা আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ চুল কেটে নিবে। এর মাধ্যমে তামাত্তু হজ্বকারীর উমরার কাজ শেষ হলো এবং তামাত্তু হজ্বকারী সম্পূর্ণরূপে হালাল হয়ে গেলেন। অর্থাৎ হালাল অবস্থায় একজন মানুষ যা যা করতে পারে (যেমন- সেলাইকৃত পোশাক পরা, সুগন্ধি লাগানো, স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি)এখন তামাত্তু হজ্বকারীও সেসব পারবেন।
পক্ষান্তরে ইফরাদ ও ক্বিরান হজ্বকারী মাথা মুণ্ডন করবেন না; কিংবা মাথার চুল ছোট করবেন না; তারা ইহরাম থেকে হালাল হবেন না। বরং ইহরাম অবস্থায় থাকবেন এবং ঈদের দিন জমরা আকাবাতে কংকর নিক্ষেপ করার পর মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাটাই এর মাধ্যমে হালাল হবেন।
তারবিয়ার দিন তথা জ্বিলহজ্বের ৮ তারিখে তামাত্তু হজ্বকারী মক্কায় তার অবস্থানস্থল থেকে ইহরাম বাঁধবে। উমরার ইহরামকালে যা যা করা মুস্তাহাব ছিল হজ্বের ইহরামের সময়ও তা তা করা (যেমন- গোসল, সুগন্ধি লাগানো, নামায ইত্যাদি)মুস্তাহাব। এই ইহরামের সময় হজ্বের নিয়ত করবেন, তালবিয়া পড়বেন এবং মুখে বলবেন: لبيك اللهم حجاً(হে আল্লাহ! হজ্বকারী হিসেবে আপনার দরবারে হাজির)। যদি হজ্ব সমাপ্তকরণে কোন প্রতিবন্ধকতার আশংকা করে তবে শর্ত করে নিবে। وإن حبسني حابس فمحلي حيث حبستني(অর্থ- যদি কোন প্রতিবন্ধকতা আমাকে আটক করে তাহলে আমি যেখানে আটক হই সেখানে হালাল হয়ে যাব)। আর যদি এমন কোন আশংকা না থাকে তাহলে শর্ত করবে না। হাজ্বীর জন্য মুস্তাহাব হলো ঈদের দিন জমরা আকাবাতে কংকর নিক্ষেপের পূর্ব পর্যন্ত উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করা।
মীনায় গমন:
এরপর মীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। সেখানে পৌঁছে জোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরের নামায কসর (৪ রাকাতের স্থলে ২ রাকাত) করে ঠিক ঠিক ওয়াক্তে আদায় করবে। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মীনাতে নামাযগুলো কসর করতেন; কিন্তু একত্রে আদায় করতেন না।
কসর: ৪রাকাত বিশিষ্ট নামাযগুলো ২ রাকাত করে আদায় করা। মক্কাবাসী এবং অন্য সকলে মীনা, আরাফা ও মুজদালিফাতে নামায কসর করবেন। দলিল হচ্ছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্ব আদায়কালে লোকদের নিয়ে নামায আদায় করতেন। তাঁর সাথে মক্কাবাসীরাও ছিল। কিন্তু তিনি তাদেরকে পরিপূর্ণ নামায পড়ার নির্দেশ দেননি। যদি তা ফরজ হতো তাহলে তিনি তাদেরকে সে নির্দেশ দিতেন যেভাবে মক্কা বিজয়ের বছর নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু মক্কার দালানকোঠা প্রসারিত হতে হতে মীনা মক্কার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। যেন মীনা মক্কারই একটি মহল্লা। তাই মক্কাবাসীরা সেখানে কসর করবে না। আরাফায় গমন:
আরাফার দিন সূর্যোদয়ের পর মীনা থেকে আরাফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবে। সম্ভব হলে জোহরের পূর্ব পর্যন্ত নামিরাতে অবস্থান করবে (নামিরা হচ্ছে- আরাফার সম্মুখভাগের একটি স্থান)। আর যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে কোন অসুবিধা নেই। কারণ নামিরাতে অবস্থান করা সুন্নত; ওয়াজিব নয়। সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর (অর্থাৎ জোহরের ওয়াক্ত হওয়ার পর) জোহর ও আসর উভয় নামায একত্রে জোহরের ওয়াক্তে দুই রাকাত দুই রাকাত করে আদায় করে নিবে; ঠিক যেভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদায় করেছিলেন যাতে করে আরাফার মাঠে লম্বা সময় অবস্থান করে দুআ করতে পারেন। নামাযের পর আল্লাহর যিকির ও দুআতে মশগুল হবে। আল্লাহর কাছে রোনাজারি করবে, দু হাত তুলে কিবলামুখি হয়ে যা ইচ্ছা দুআ করবে। যদি কিবলামুখি হতে গিয়ে জাবালে আরাফা পিছনে পড়ে যায় কোন অসুবিধা নেই। যেহেতু দুআর ক্ষেত্রে সুন্নত হচ্ছে- কিবলামুখি হওয়া; পাহাড়মুখি হওয়া নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাহাড়ের নিকটে অবস্থান করেছেন এবং বলেছেন: “আমি এখানে অবস্থান করলাম; আরাফার ময়দানের সর্বাংশঅবস্থানস্থল।”সেই মহান দিনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দুআটি সবচেয়ে বেশি করেছেন সেটা হচ্ছে-
لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ، وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ ، وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহুলা শরিকা লাহ। লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু। ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদির। (অর্থ- এক আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। তিনি নিরঙ্কুশ। রাজত্ব তাঁর-ই জন্য। প্রশংসা তাঁর-ই জন্য। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান)। যদি কিছুটা একগেঁয়েমিএসে যায় এবং সঙ্গি-সাথীদের কথাবার্তা বলে কিছুটা সতেজ হতে চায় তাহলে ভাল কথা বলবে এবং ভাল কোন বই পড়বে। বিশেষতঃ আল্লাহ তাআলার বদান্যতা, তাঁর মহান অনুগ্রহ বিষয়ক কোন বই পড়বে। যাতে সে মহান দিনে আল্লাহর প্রতি আশার দিকটা ভারী থাকে। এরপর পুনরায় আল্লাহর কাছে রোনাজারি ও দুআতে ফিরে আসবে এবং দিনের শেষভাগকে কাজে লাগাতে সচেষ্ট হবে। কেননা সবচেয়ে উত্তম দুআ হচ্ছে- আরাফা দিবসের দুআ।
মুজদালিফাতে গমনঃ
সূর্য ডোবার পরে মুজদালিফাতে গমন করবে। মুজদালিফাতে পৌঁছে মাগরিব ও এশার নামায এক আযান দুই ইকামতে আদায় করবে। যদি এই আশংকা হয় যে, মুজদালিফাতে পৌঁছতে পৌঁছতে মধ্যরাত পার হয়ে যাবে সেক্ষেত্রে রাস্তায় নামায আদায় করে নিবে। কারণ নামাযকে মধ্যরাতের বেশি বিলম্ব করে পড়া জায়েয হবে না। মুজদালিফাতে এসে রাত্রি যাপন করবে। ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পরবিলম্ব না করে এক আযান ও এক ইকামতে ফজরের নামায পড়ে নিবে। এরপর আল-মাশআর আল-হারামের দিকে এগিয়ে যাবে (বর্তমানে মুজদালিফাতে মসজিদটি যে স্থানে রয়েছে এটি সেই জায়গা)। সেখানে গিয়ে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দিবে, আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করবে তথা তাকবীর বলবে এবং ইসফার (ইসফার মানে- সূর্যোদয়ের আগেপূবদিক ফর্সা হয়ে উঠা) হওয়া পর্যন্ত যা খুশি দুআ করবে। যদি আল-মাশআর আল-হারামে যাওয়া সম্ভব না হয় তাহলে নিজ স্থানে অবস্থান করে দুআ করবে। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “আমি এ স্থানে অবস্থান করলাম। জাম্মতথা গোটা মুজদালিফাই অবস্থানস্থল।”হাত উঁচু করে কিবলামুখি হয়ে দুআ ও যিকির করবে।
মীনায় গমনঃ
সূর্যোদয়ের পূর্বে আকাশ ভালভাবে ফর্সা হয়ে উঠলে মীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবে। ওয়াদি মুহাসসার (মুজদালিফা ও মীনার মধ্যবর্তী একটি উপত্যকা) দ্রুত পার হবে। মীনায় পৌঁছে অপেক্ষাকৃত মক্কার নিকটবর্তী‘আকাবা’ নামক জমরাতেএকটির পর একটি করে মোট৭টি কংকর নিক্ষেপ করবে। প্রতিটি কংকরের আকার হবে প্রায় ছোলার সম-পরিমান। প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলবে। জমরা আকাবাতে কংকর নিক্ষেপ করার সুন্নত পদ্ধতি হলো- জমরাকে সামনে রাখবে, মক্কাকে বামে রাখবে এবং মীনাকে ডানে রাখবে। কংকর নিক্ষেপ সম্পন্ন করার পর হাদি যবেহ করবে। এরপর পুরুষ হলে মাথা মুণ্ডন করবে অথবা মাথার চুল ছোট করবে। আর মহিলা হলে আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ চুল কাটবে। (এর মাধ্যমে ইহরাম থেকে প্রাথমিক হালাল অর্জিত হবে; অর্থাৎ এ হালাল হওয়ার মাধ্যমে স্ত্রী সহবাস ছাড়া আর সবকিছু হাজী সাহেবের জন্য হালাল হলো।)এরপর মক্কা গমন করে হজ্বের তওয়াফ ও সায়ী করবে। (এর মাধ্যমে হাজী সাহেব দ্বিতীয় হালাল হবে। এ হালালের মাধ্যমে ইহরামের কারণে যা কিছু হারাম হয়েছিল সবকিছু হাজীর জন্য হালাল হবে)। কংকর নিক্ষেপ ও মাথা মুণ্ডনের পর তওয়াফ করার জন্য মক্কায় যেতে চাইলে সুন্নত হচ্ছে- সুগন্ধি লাগানো। দলিল হচ্ছে আয়েশা (রাঃ) এর হাদিস “আমি ইহরাম করার আগে ইহরামের জন্য এবং হালাল হওয়ার পর তওয়াফের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সুগন্ধি লাগিয়ে দিতাম।” [সহিহ বুখারি (১৫৩৯) ও সহিহ মুসলিম (১১৮৯)]। এরপর তওয়াফ ও সায়ী করার পর মীনাতে ফিরে আসবে। জ্বিলহজ্বের একাদশ ও দ্বাদশ রজনী মীনাতে কাটাবে এবং সে দু’দিন সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর তিনটি জমরাতে কংকর নিক্ষেপ করবে। উত্তম হচ্ছে- কংকর নিক্ষেপের জন্য হেঁটে যাওয়া। বাহনে চড়ে গেলেও অসুবিধা নেই। প্রথমে প্রথম জমরাতে এক এক করে পরপর ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবে। এই জমরাটি মক্কা থেকে অপেক্ষাকৃত দূরে ও মসজিদে খাইফের নিকটে। প্রতিটি কংকর নিক্ষেপকালে তাকবীর বলবে। এরপর একটু অগ্রসর হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে যা ইচ্ছা দুআ করবে। যদি দীর্ঘ সময় দাঁড়ানো ও দুআ করা কারো জন্য কষ্টকর হয় তাহলে সাধ্যানুযায়ী অল্প সময়ের জন্য হলেও দুআ করবে; যেন সুন্নত পালন হয়। এরপর মধ্যবর্তী জমরাতে একের পর এক মোট ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবে। প্রতিটি কংকরের সাথে তাকবীর বলবে। এরপর সামান্য বামে সরে গিয়ে কিবলামুখি হয়ে দাঁড়াবে এবং হাত উঁচু করে সম্ভব হলে লম্বা সময় ধরে দুআ করবে। লম্বা সময় দুআ করা সম্ভব না হলে সামান্য সময়ের জন্য হলেও দাঁড়িয়ে দুআ করবে। এই দুআটি ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। যেহেতু এটি সুন্নত। অনেক মানুষ না জানার কারণে অথবা অবহেলা করে এ সুন্নতটি ছেড়ে দেয়। কখনো কোন সুন্নত যদি অপ্রচলিত হয়ে পড়ে তখন সে সুন্নতের উপর আমল করা ও মানুষের মাঝে এর প্রসার করাঅধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। যেন এ সুন্নতটি একেবারে মিটে না যায়।
এরপর জমরা আকাবাতে একের পর এক মোট ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবে। প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলবে। এই জমরাতে কংকর নিক্ষেপ করার পর দাঁড়াবে না ও দুআ করবে না। এভাবে ১২ই জ্বিলহজ্ব ৩টি জমরাতে কংকর নিক্ষেপ করার পর ইচ্ছা করলে দেরী না করে সেদিনই মীনা ত্যাগ করে চলে আসতে পারে। আর চাইলে ১৩ই জ্বিলহজ্ব রাত্রি মীনাতে অবস্থান করে পরদিন সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর ৩টি জমরাতে কংকর নিক্ষেপ করে মীনা ত্যাগ করতে পারে। একদিন দেরী করে মীনা ত্যাগ করাটা উত্তম; তবে ওয়াজিব নয়। কিন্তু ১২ ই জ্বিলহজ্ব সূর্যোদয়ের সময়েও কেউ যদি মীনাতে অবস্থান করে তাহলে তার জন্য ১৩ ই জ্বিলহজ্ব রাত্রি মীনাতে কাটানো ও পরদিন ৩টি জমরাতে কংকর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। তবে মীনাতে সূর্য ডুবে যাওয়া যদি তার এখতিয়ারের বাইরের কোন কারণে হয় যেমন কেউ তাবু ত্যাগ করে গাড়ীতে চড়েছে কিন্তু রাস্তায় জ্যাম বা এ জাতীয় কোন কারণে আটকা পড়ে যায় তাহলে ১৩ তারিখ পর্যন্ত দেরি করা তার উপর ওয়াজিব হবে না। কারণ এ বিলম্বটা তার এখতিয়ারভুক্ত নয়। অতঃপর যখন মক্কা ত্যাগ করে নিজ দেশে চলে যাওয়ার ইচ্ছা করবে তখন বিদায়ী তওয়াফ না করে মক্কা ত্যাগ করবে না। দলিল হচ্ছে- “তোমাদের কেউ প্রস্থান করবে নাযতক্ষণ না সে শেষ কাজ বায়তুল্লাহতে (তওয়াফ) না করে।”[সহিহ মুসলিম (১৩২৭)] অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে- “লোকদেরকে আদেশ করা হয়েছে- তাদের সর্বশেষ আমল যেন হয় বায়তুল্লাহতে (তওয়াফ)। তবে হায়েযগ্রস্ত নারীকে এ ব্যাপারে ছাড় দেয়া হয়েছে।”[সহিহ বুখারি (১৭৫৫) ও সহিহ মুসলিম (১৩২৮)] হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারীদের উপর বিদায়ী তওয়াফ নেই এবং তাদের জন্য মসজিদে হারামের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বিদায় জানানোটাও উচিত নয়। কারণ এ ধরনের পদ্ধতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত হয়নি। যখন দেশে চলে যাওয়ার ইচ্ছা করবে তখন হাজী সাহেবের সর্বশেষ কাজ হবে তওয়াফ। যদি বিদায়ী তওয়াফ করার পর সঙ্গিদের অপেক্ষা করতে হয় অথবা মালপত্র বাহনে উঠানোর জন্য অপেক্ষা করতে হয় অথবা পথের সম্বল হিসেবে কিছু কিনতে হয় এতে কোন অসুবিধা নেই। এর জন্য পুনরায় তওয়াফ করতে হবে না। তবে যদি সফর বিলম্বের নিয়ত করতে হয় (উদাহরণতঃ সফর ছিল দিনের পূর্বাহ্ণে এবং বিদায়ী তওয়াফ করে নিয়েছে কিন্তু পরে যদি সফর দিনের অপরাহ্ণে) করতে হয় তাহলে পুনরায় বিদায়ী তওয়াফ করে নেয়া ওয়াজিব; যাতে সর্বশেষ আমলটা তওয়াফ হয়। হজ্ব বা উমরার ইহরাম বাঁধার পর ইহরামকারীর উপর নিম্নোক্ত বিষয়গুলো ওয়াজিবঃ
১. ইসলামী যাবতীয় অনুশাসন পরিপূর্ণভাবে মেনে চলা। যেমন- ঠিক সময়ে নামাযগুলো আদায় করা।
২. আল্লাহ যা যা নিষেধ করেছেন যেমন পাপ কথা, পাপ কাজ ও অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকা। দলিল হচ্ছে আল্লাহ তাআলার বাণী:“অতএব, এই মাসসমূহে যে ব্যক্তি নিজের উপর হজ্বকে আবশ্যক করে নিল তার জন্য হজ্বে অশ্লীল ও পাপ কাজ এবং ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৯৭]
৩. পবিত্র স্থানগুলোর ভিতরে অথবা বাইরে কথা বা কাজের মাধ্যমে মুসলমানকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা।
৪. ইহরামঅবস্থায় যা যা নিষিদ্ধ সেগুলো থেকে বিরত থাকা:
ক. চুল বা নখ না কাটা।তবে কাঁটা বা এ জাতীয় কিছু তুলে ফেললে রক্ত বের হলেও গুনাহ হবে না।
খ. ইহরাম বাঁধার পর শরীরে, পরিধেয় পোশাকেবা খাবার-দাবারে সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। সুগন্ধিযুক্ত সাবান ব্যবহার করবে না। তবে ইহরামের আগে ব্যবহারকৃত সুগন্ধির কোন আলামত যদি থেকে যায় এতে কোন অসুবিধা নেই।
গ. শিকার করবে না।
ঘ. স্ত্রী সহবাস করবে না।
ঙ. উত্তেজনাসহ স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরবে না, চুমু খাবে না বা এ জাতীয় কিছু করবে না।
চ. নিজে বিয়ের চুক্তি করবে না অথবা অন্য কারো বিয়ের আকদ পড়াবে না অথবা কোন নারীকে নিজের জন্য অথবা অন্য কারো জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিবে না।
ছ. হাতমোজা পরবে না। তবে কোন ন্যাকড়া দিয়ে হাত পেঁচালে গুনাহ হবে না।
এই সাতটি নিষিদ্ধ কাজের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ে সমান। তবে বিশেষভাবে পুরুষের জন্য কাজগুলো হচ্ছে-
-এঁটে থাকা কোন কিছু দিয়ে মাথা ঢাকবে না। তবে ছাতা দিয়ে, গাড়ীর ছাদের আড়ালে, তাবুর আড়ালে ছায়া নিতে অথবা মাথায় বোঝা বহন করতে কোন দোষ নেই।
-সেলাইকৃত জামা, পাগড়ী, টুপি, পায়জামা, মোজা পরা যাবে না। তবে লুঙ্গি না পেলে পায়জামা পরবে। জুতা না পেলে মোজা পরবে।
-ইতিপূর্বে উল্লেখিত পোশাকগুলোর স্থলাভিষিক্ত কোন পোশাকও পরা যাবে না। যেমন- জুব্বা, ক্যাপ, টুপি, গেঞ্জি ইত্যাদি।
-জুতা, আংটি, চশমা, হেডফোন ইত্যাদি পরা যাবে। হাতে ঘড়ি পরা যাবে, গলায় হার পরা যাবে। টাকা-পয়সা রাখার জন্য বেল্ট পরা যাবে।
-সুগন্ধিহীন কিছু দিয়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া যাবে। মাথা ও শরীর ধোয়া যাবে ও চুলকানো যাবে। এতে করে অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন চুল পড়ে গেলে তাতে কোন দোষ নেই।
নারীরা নেকাব পরবে না। নেকাব হচ্ছে- এমন কাপড় যা দিয়ে নারীরা তাদের মুখ ঢেকে রাখে; শুধু চোখ দুটি দেখা যায়। নারীদের জন্য সুন্নত হচ্ছে- মুখ ঢেকে রাখা। তবে যদি বেগানা পুরুষদের দৃষ্টি পড়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে ইহরাম অবস্থায় অথবা ইহরামের বাইরে মুখ ঢেকে রাখা ওয়াজিব।
দেখুন: আলবানীর “মানাসিকুল হজ্জ ওয়ার উমরাহ” এবং শাইখ উছাইমীনের “সিফাতুল হজ্ব ওয়াল উমরা” ও “আল-মানহাজ লি মুরিদিল উমরা ওয়াল হাজ্জ”

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...