কোরহ্ ও তার দলের বিদ্রোহ, বিচার ও বিনাশ
1লেবির পুত্র কোহাৎ,কোহাৎ-এর পুত্র যিষ্হর, যিষ্হরের পুত্র কোরহ্। কোরহ্ এবং রূবেণ বংশীয়দের মধ্যে ইলিয়াবের পুত্র দাথন ও অবীরাম এবং পেলৎ-এর পুত্র ওন, এরা কয়জন মিলে একজোট হল। 2এদের সঙ্গে দুশো পঞ্চাশ জন ইসরায়েলী মোশির বিরুদ্ধে দাঁড়াল। এরা সকলেই ছিল জনমণ্ডলীর নেতা, সমাজের মান্যগণ্য ব্যক্তি। 3এরা মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে জোট বেঁধে তাঁদের বলল, তোমরা খুব বাড়াবাড়ি করছ, মণ্ডলীর সকল লোকই পবিত্র এবং প্রভু পরমেশ্বর তাদের মাঝে রয়েছেন, তবে প্রভু পরমেশ্বরের এই প্রজামণ্ডলীর উপরে তোমরাই শুধু কর্তৃত্ব করছ কেন?
4ঐ কথা শুনে মোশি মাথা নত করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। 5তিনি কোরহ্ এবং তাঁর দলের লোকদের বললেন, কাল সকালেই প্রভু পরমেশ্বর জানিয়ে দেবেন কে তাঁর লোক, কেই বা পবিত্র এবং কাকে তিনি নিজের সান্নিধ্যে যেতে দেবেন। তিনি যাকে মনোনীত করবেন, সে-ই তাঁর কাছে যাবে। 6কোরহ্, তুমি ও তোমার দলের লোকেরা বরং এক কাজ কর, 7কাল সকালে তোমরা ধূপদানিগুলো নিয়ে সেগুলিতে আগুন দেবে এবং প্রভু পরমেশ্বরের সম্মুখে তার উপরে ধূপ ছড়িয়ে দেবে, তখন প্রভু পরমেশ্বর যাকে মনোনীত করবেন, সেই হবে পবিত্র ব্যক্তি। ওহে লেবির বংশ, তোমাদের খুব স্পর্ধা বেড়েছে। 8কোরহকে উদ্দেশ্য করে মোশি বললেন, ওহে লেবির বংশধর, দয়া করে আমার কথা শোন। 9ইসরায়েল কুলের ঈশ্বর যে ইসরায়েলী সমাজ থেকে তোমাদের পৃথক করে প্রভু পরমেশ্বরের শিবিরে পরিচর্যা এবং জনমণ্ডলীর সম্মুখে দাঁড়িয়ে তাঁদের সেবা করার জন্য তোমাদের নিযুক্ত করেছেন এবং 10তিনি যে তোমাকে ও তোমার জ্ঞাতিভাই লেবি গোষ্ঠীর লোকদের নিজের সান্নিধ্যে এনেছেন তা-ই কি তোমাদের পক্ষে যথেষ্ট নয়? তোমরা কি এখন আবার পুরোহিত হতে চাইছ? 11সেই জন্যই কি তুমি ও তোমার দলবল প্রভু পরমেশ্বরের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছ? হারোণ কে, যে তোমরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছ?
12পরে মোশি ইলিয়াবের পুত্র দাথন ও অবীরামকে ডেকে পাঠালেন,কিন্তু তারা বলল, আমরা যাব না। 13এই প্রান্তরে এনে মেরে ফেলার জন্য তুমি শস্য শ্যামলা দেশ থেকে আমাদের বার করে এনেছ, এটাই কি যথেষ্ট নয়? এর পরেও কি তুমি আমাদের উপর কর্তৃত্ব করতে চাও? 14সুজলা সুফলা কোনও দেশও তুমি আমাদের আনতে পার নি কিংবা শস্যক্ষেত্র কি দ্রাক্ষাকুঞ্জের কোন উত্তরাধিকারও আমাদের দাও নি। এখনও তুমি আমাদের প্রতারণা করার চেষ্টা করছ? 15এ কথা শুনে মোশির খুব রাগ হল। তিনি প্রভু পরমেশ্বরকে বললেন, তুমি এদের নৈবেদ্য গ্রাহ্য করো না। আমি ওদের কাছ থেকে একটি গাধাও নিই নি কিংবা ওদের কারও বিরুদ্ধে কোন অন্যায়ও করি নি।
16পরে মোশি কোরহকে বললেন, তুমি তোমার দলের সকলকে নিয়ে কাল প্রভু পরমেশ্বরের সম্মুখে উপস্থিত হবে। সেখানে উপস্থিত থাকবে তুমি, তোমার দলের লোক ও হারোণ। 17তোমার দলের প্রত্যেক ধূপদানি নিয়ে তার উপর ধূপ ছড়িয়ে দিয়ে তাদের সেই দুশো পঞ্চাশটি ধূপদানি প্রভু পরমেশ্বরের সম্মুখে স্থাপন করবে। তুমি এবং হারোণও নিজ নিজ ধূপদানি নিয়ে যাবে।
18পরদিন প্রত্যেকে তার নিজের নিজের ধূপদানিতে আগুন ও ধূপ দিয়ে প্রস্তুত হল। তারপর মোশি ও হারোণ সম্মিলন শিবিরের দ্বারে গিয়ে দাঁড়াল। 19কোরহ তাঁদের মুখোমুখি সমগ্র জনমণ্ডলীকে সম্মিলন শিবিরের দ্বারে একত্র করল। তখন সমগ্র জনতার সামনে হঠাৎ প্রভু পরমেশ্বরের অগ্নিময় প্রতাপ দৃশ্যমান হল।
20প্রভু পরমেশ্বর মোশি ও হারোণকে বললেন, 21তোমরা এই জনমণ্ডলীর সামনে থেকে সরে দাঁড়াও। আমি মুহূর্তের মধ্যে এদের ধ্বংস করব। 22তাঁরা তখন মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে বললেন, হে ঈশ্বর, সর্বজীবের জীবনেশ্বর তুমি, একজনের পাপের জন্য তুমি কি সমগ্র জনমণ্ডলীর উপর ক্রুদ্ধ হবে? 23প্রভু পরমেশ্বর তখন মোশিকে বললেন, 24তুমি জনমণ্ডলীকে বল, তারা যেন কেরহ্, দাথন ও অবীরামের তাঁবুর কাছ থেকে দূরে সরে যায়। 25মোশি তখন উঠে দাথন ও অবীরামের কাছে গেলেন। ইসরায়েলীদের নেতৃস্থানীয় প্রবীণেরা তাঁর পিছনে গেলেন। 26তিনি জনমণ্ডলীকে উদ্দেশ করে বললেন, তোমরা এই দুষ্ট লোকদের তাঁবুর কাছ থেকে দূরে সরে যাও, ওদের কোন জিনিস স্পর্শ করো না, তাহলে এদের পাপে তোমরাও ধ্বংস হয়ে যাবে। 27তখন তারা কোরহ্, দাথন ও অবীরামের তাঁবুর চারপাশ থেকে দূরে সরে গেল। দাথন ও অবীরাম তাদের স্ত্রী ও সন্তান সন্ততিদের নিয়ে তাদের তাঁবুর দ্বারে এসে দাঁড়াল। 28তখন মোশি বললেন, প্রভু পরমেশ্বরই যে আমাকে এই সব কাজ করার জন্য পাঠিয়েছেন এবং আমি যে নিজের ইচ্ছায় কিছুই করি নি, তা তোমরা এর দ্বারাই জানতে পারবে: 29মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যু যেভাবে হয় সেইভাবে যদি এরা মরে কিংবা সাধারণ মানুষের মত যদি এদের দণ্ড হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে প্রভু পরমেশ্বর আমাকে পাঠান নি। 30কিন্তু প্রভু পরমেশ্বর যদি নতুন কিছু করেন, যদি পৃথিবী সর্বস্বসহ এদের গ্রাস করে, এরা যদি জীবিত অবস্থায় পাতালে প্রবেশ করে, তাহলেই জানবে যে এরা প্রভু পরমেশ্বরকে অবজ্ঞা করেছে।
31মোশির কথা শেষ হতেই তাদের পায়ের নীচের মাটি দুভাগ হয়ে গেল 32আর পৃথিবী শিবির ও জিনিসপত্রসমেত কোরহ্ ও তার অনুগামী সকলকেই গ্রাস করল। 33তারা ও তাদের আত্মীয়পরিজন সকলেই জীবন্ত পাতালে প্রবেশ করল এবং তাদের উপরে মাটি আবার জোড়া লেগে গেল। এইভাবেই তারা সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেল। 34তাদের আর্তনাদ শুনে আশেপাশের ইসরায়েলীরা সকলে পালিয়ে গেল। তারা বলতে লাগল, পৃথিবী হয়তো আমাদেরও গ্রাস করবে। 35এরপর প্রভু পরমেশ্বরের কাছ থেকে অগ্নিশিখা নির্গত হয়ে সেই দুশো পঞ্চাশ জন লোক, যারা ধূপ উৎসর্গ করেছিল, তাদের সকলকে গ্রাস করল।
36প্রভু পরমেশ্বর তখন মোশিকে বললেন, 37তুমি পুরোহিত হারোণের পুত্র ইলিয়াসরকে বল, সে যেন দগ্ধাবশেষের মধ্য থেকে ঐ ধূপদানিগুলি তুলে নেয় এবং সেগুলির আগুন দূরে নিয়ে গিয়ে ঝেড়ে ফেলে, কারণ সেগুলি পবিত্র। 38এই পাপিষ্ঠেরা তাদের পাপের জন্য জীবন দিয়েছে, এদের ধূপদানিগুলি পিটিয়ে পাত তৈরী করে তা দিয়ে বেদীটির জন্য আবরণ তৈরী করা হোক। এগুলি পবিত্র কারণ ওরা প্রভু পরমেশ্বরের সম্মুখে এগুলি উৎসর্গ করেছিল। এগুলি ইসরায়েলীদের কাছে নিদর্শনস্বরূপ।
মহামারী নিবারণে হারোণের প্রায়শ্চিত্ত
39যারা পুড়ে মারা গিয়েছিল তাদের নিবেদিত পিতলের ধূপদানিগুলি পুরোহিত ইলিয়াসর সংগ্রহ করলেন। সেগুলি পেটাই করে বেদীর আবরণের জন্য পাত তৈরী করা হল। 40এগুলি ইসরায়েলীদের কাছে স্মারক চিহ্ন স্বরূপ যেন হারোণের বংশধর ছাড়া অনধিকারী অন্য কোন লোক প্রভু পরমেশ্বরের সম্মুখে ধূপ উৎসর্গ করতে না যায় এবং তার দশা কোরহ্ এবং তার দলের মত না হয়। মোশির মাধ্যমে প্রভু পরমেশ্বর ইলিয়াসরকে এই নির্দেশ দিয়েছিলেন।
41পরের দিন সমগ্র ইসরায়েলী জনমণ্ডলী মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানিয়ে বলল, প্রভু পরমেশ্বরের প্রজাদের তোমরাই হত্যা করেছ। 42মোশি হারোণের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ জনতা তখন সম্মিলন শিবিরের দিকে তাকাল, দেখল, সম্মিলন শিবির মেঘাবৃত হয়েছে এবং সেখানে প্রভু পরমেশ্বরের গৌরবজোতি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। 43মোশি ও হারোণ তখন সম্মিলন শিবিরের সম্মুখে উপস্থিত হলেন। 44প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, 45তোমরা এই জনমণ্ডলীর মধ্য থেকে বেরিয়ে যাও, আমি এই জনমণ্ডলীর মধ্য থেকে বেরিয়ে যাও, আমি এই মুহূর্তে এদের ধ্বংস করব।
46তাঁরা তখন মাটিতে উবুড় হয়ে পড়লেন। মোশি হারোণকে বললেন, তোমরা ধূপদানিটি নাও এবং বেদীর উপর থেকে আগুন নিয়ে তার মধ্যে রাখ ও তাতে ধূপ ছড়িয়ে শিগগির জনতার কাছে গিয়ে তাদের জন্য প্রায়শ্চিত্ত কর, কারণ প্রভুর ক্রোধ প্রজ্বলিত হয়েছে এবং মহামারী শুরু হয়েছে। 47মোশির কথামত হারোণ তক্ষুণি ধূপদানি নিয়ে জনতার দিকে দৌড়ে গেলেন। ওদিকে তখন তাদরে মধ্যে মহামারী শুরু হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তিনি ধূপদানিতে ধূপ উৎসর্গ করে জনতার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করলেন। 48তারপর তিনি জীবিত ও মৃতদের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালেন, মহামারী নিবৃত্ত হল। 49কোরহের ঘটনায় যারা মারা গিয়েছিল তারা ছাড়াও চৌদ্দ হাজার সাতশো লোক এই মহামারীতে মারা পড়ল। 50মহামারী নিবৃত্ত হওয়ার পর হারোণ সম্মিলন শিবিরের দ্বারে মোশির কাছে ফিরে এলেন।