গীতসংহিতা ১০৬: ৩৪-৪১



প্রভু পরমেশ্বরের অবিচল প্রেম
 
1প্রভু পরমেশ্বরের প্রশংসা কর!
ধন্যবাদ কর তাঁর কারণ তিনি মঙ্গলময়,
নিত্যস্থায়ী তাঁর অবিচল প্রেম।১ বংশা 16:34; ২ বংশা 5:13; 7:3; ইষ্রা 3:11; গীত 100:5; 107:1; 118:1; 136:1; যির 33:11
2কে পারে বর্ণনা করতে প্রভু পরমেশ্বরের মহান কীর্তিরাজি?
অথবা কে পারে নিবেদন করতে তাঁর যথাযোগ্য প্রসংসার অর্ঘ্য?
3ধন্য তারাই, যারা ন্যায়নিষ্ঠ,
যারা সতত পালন করে তোমার অনুশাসন
4হে প্রভু পরমেশ্বর তোমার প্রজাদের যখন তুমি অনুগ্রহ করবে তখন আমাকেও করো স্মরণ,
যখন তুমি উদ্ধার করবে তাদের তখন আমাকেও রেখো তাদের দলে।
5যেন আমি দেখতে পাই তোমার প্রজাদের সমৃদ্ধি,
যেন আনন্দিত হতে পারি তোমার প্রিয় জাতির আনন্দে যেন যাদের উপর তোমার একান্ত অধিকার
তাদের সাথে গর্বিত হতে পারি তোমার গৌরবে।
6পিতৃপুরুষদের মত আমরাও পাপ করেছি,
করেছি অধর্মাচরণ, আমরাও করেছি দুষ্কর্ম।
7আমাদের পিতৃপুরুষেরা পারেনি বুঝতে মিশরে তোমার অলৌকিক ক্রিয়ার মর্ম,
স্মরণে রাখেনি তোমার বহুবিচিত্র করুণার কথা,
পরিবর্তে বিদ্রোহ ঘোষণা করল তারা লোহিত সাগরতীরে।যাত্রা 14:10-12
8তবুও তিনি আপনার গুণে,
তাদের করলেন উদ্ধার যেন বিদিত হয় তাঁর মহাপরাক্রম।
9তিনি আদেশ দিলেন লোহিত সাগরকে,
শুষ্ক হল সাগর বক্ষ,
সেই শুষ্কভূমির উপর দিয়ে তিনি পরিচালনা করে নিয়ে গেলেন তাদের।
10বিদ্বেষীদের হাত থেকে তিনি উদ্ধার করলেন তাদের,
মুক্ত করলেন শত্রুদের কবল থেকে।
11সমুদ্র গ্রাস করল তাদের শত্রুদের,
রইল না কেউ অবশিষ্ট।
12তখন তারা বিশ্বাস করল তাঁর প্রতিশ্রুতিতে,
গাইল তাঁর যশোগীতিযাত্রা 15:1-21যাত্রা 14:21-31
13কিন্তু অচিরেই তারা ভুলে গেল তাঁর সকল কীর্তি,
রইল না তারা তাঁর নির্দেশের অপেক্ষায়।
14প্রান্তরে তীব্র বাসনায় আসক্ত হল তারা,
মরুভূমিতে পরীক্ষা করল ঈশ্বরের ক্ষমতা।
15তাদের ঈপ্সিত বস্তু দিলেন তিনি,
সেই সঙ্গে দিলেন তাদের মারাত্মক ব্যাধি।গণনা 11:4-34
16মরুপ্রান্তরে তারা ঈর্ষান্বিত হয়েছিল মোশির বিরুদ্ধে,
প্রভুর পুরোহিত হারোণের বিরুদ্ধে।
17ধরণী দ্বিধা হয়ে দাথনকে করল গ্রাস,
অবীরাম-এর সঙ্গীসাথীদের করল আবৃত।
18অগ্নি প্রজ্বলিত হল তাদের সমাবেশে,
দুষ্টেরা দগ্ধ হল সেই অনল শিখায়।গণনা 16:1-35
19হোরেব-এ তারা নির্মাণ করেছিল একটি স্বর্ণ-গো-বৎস,
সেই মূর্তির আরাধনা করেছিল তারা।
20এভাবে তারা তাদের আরাধ্য ঈশ্বরের স্থানে
বসাল তৃণভোজী এক বৃষের মূর্তিকে,
21ভুলে গেল তাদের পরিত্রাতা ঈশ্বরকে,
যিনি মিশরে সাধন করেছিলেন নানা মহৎ কার্য।
22ভুলে গেল সেখানে তাঁর পরমাশ্চর্য কার্যকলাপ,
লোহিত সাগর তীরে তাঁর ভয়াবহ কীর্তিসমূহ।
23তাই তিনি তাদের সকলকে সংহার করতে মনস্থ করলেন।
কিন্তু তাঁর মনোনীত সেবক মোশি এসে দাঁড়ালেন তাঁর মুখোমুখি,
তাঁর বিধ্বংসী ক্রোধ নিবারণের আবেদন নিয়ে।যাত্রা 32:1-14
24তারপর তারা অবজ্ঞা করল সেই মনোরম দেশ,
তারা বিশ্বাস করল না ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতিতে।
25নিজেদের শিবিরে তারা শুরু করল বচসা
প্রভু পরমেশ্বরের কথায় করল না কর্ণপাত।
26তাই তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে শপথ করলেন,
এই প্রান্তরেই ইসরায়েলীদের নিপাত করবেন,গণনা 14:1-35
27তাদের সন্তানদের বিভিন্ন জাতির মাঝে
ছড়িয়ে দেবেন বিভিন্ন দেশে তাদের করবেন বিক্ষিপ্ত।লেবীয় 26:33
28তারপর তারা পিওর-এর বেল দেবতার প্রতি আসক্ত হল,
ভোজন করল নিষ্প্রাণ দেবদেবীর উদ্দেশে উৎসর্গিত বলি।
29তাদের ক্রিয়াকলাপ প্রজ্বলিত করল প্রভুর ক্রোধ,
ফলে মহামারীর প্রাদুর্ভাব হল তাদের মাঝে।
30তখন পুরোহিত পিনহস তাদের
উপযুক্ত শাস্তি বিধান করলেন,
31তাঁর এ কাজ পরিগণিত হল ধার্মিকতা রূপে,
পুরুষানুক্রমে চিরকালের জন্য গণিত হল।গণনা 25:1-13
32মরিবার জলকুণ্ডের কাছেও তারা প্রজ্বলিত করেছিল তাঁর ক্রোধ
তাদের জন্য হয়েছিল মোশির অনিষ্ট।
33কারণ তারা মোশির অন্তর তিক্ত-বিরক্ত করে তুলেছিল,
তাই তাঁর মুখে উচ্চারিত হয়েছিল অনুচিত বাক্য।গণনা 20:2-13
34তারা প্রভু পরমেশ্বরের নির্দেশ অনুযায়ী
সেই দেশের জাতিসমূহকে সংহার করেনি,
35বরং বিধর্মীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে
তারা শিখেছিল তাদেরই কার্যকলাপ।
36তারা তাদের প্রতিমাগুলি ভজনা করল,
আর সেগুলিই হল তাদের ফাঁদ স্বরূপ।বিচার 2:1-3; 3:5-6
37তারার অপদেবতাদের উদ্দেশে
নিজেদের পুত্রকন্যাদের বলিদান করল।২ রাজা 17:17
38নির্দোষের রক্তপাত করল তারা,
রক্তপাত করল আপন আপন পুত্র কন্যাদের।
তাদের বলিদান করল কনান দেশের প্রতিমাগুলির উদ্দেশে,
এই রক্তপাতের ফলে দেশ হল অপবিত্র।গণনা 35:33
39এভাবেই নিজেদের কর্মদোষে তারা হল অশুচি,
নিজেদের কার্যকলাপে তারা ঈশ্বরের প্রতি করল বিশ্বাসঘাতকতা।
40তখন আপন প্রজাদের বিরুদ্ধে প্রভু পরমেশ্বরের ক্রোধ হল প্রজ্বলিত,
আপন প্রজাদের প্রতি উদ্রিক্ত হল তাঁর ঘৃণা।
41তাদের তিনি সমর্পণ করলেন অন্য জাতির অধীনে,
বিদ্বেষীরা তাদের উপর করল কর্তৃত্ব।
42শত্রুরা তাদের করল নির্যাতন,
তারা হল ওদের পদানত।
43বহুবার তিনি তাদের উদ্ধার করলেন,
কিন্তু তারা স্বেচ্ছাচারী হয়ে বিদ্রোহ করল তাঁর বিরুদ্ধে,
নিজেদের অধর্মের ফলে হল বিপর্যস্ত।
44তবুও তিনি তাদের কাতরোক্তি শুনে
তাদের দুর্দশার প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন।
45তাদের স্বার্থেই তিনি স্মরণ করলেন তাদের সঙ্গে স্থাপিত তাঁর সন্ধিচুক্তির শর্ত,
অবিচল প্রেমের মাহাত্ম্যে তিনি পরিবর্তন করলেন তাঁর সঙ্কল্প।
46যারা তাদের বন্দী করেছিল তাদের অন্তরে তিনি করুণার সঞ্চার করলেন তাদের জন্য।বিচার 2:14-18
47হে প্রভু পরমেশ্বর আমাদের আরাধ্য ঈশ্বর,
উদ্ধার কর আমাদের,
জাতিবৃন্দের মধ্য থেকে আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাও,
যেন আমরা তোমার পবিত্র নামের ধন্যবাদ করতে পারি, যেন মুখর হতে পারি তোমার প্রশংসায়।
48ধন্য প্রভু পরমেশ্বর ইসরায়েলের আরাধ্য ঈশ্বর,
অনাদিকাল থেকে অনন্তকাল অবধি তুমি ধন্য
‘আমেন’–বলুক সর্বজন।১ বংশা 16:35-36
প্রভু পরমেশ্বরের প্রশংসা কর তোমরা।
 

যিরমিয় ১৭: ২১-২৭ এবং যিহিষ্কেল ২০: ১২-২৪

যিরমিয় ১৭: ২১-২৭

বিশ্রামবার পালন
 
19জনসাধারণের যে দরজা দিয়ে এহুদার বাদশাহ্‌রা আসা-যাওয়া করে মাবুদ আমাকে সেই দরজায় এবং জেরুজালেমের অন্যান্য সব দরজায়ও গিয়ে দাঁড়াতে বললেন। 20তিনি আমাকে এই কথা বলতে বললেন, “হে এহুদার বাদশাহ্‌রা ও সমস্ত লোকেরা এবং জেরুজালেমে বাসকারী সকলে, তোমরা যারা এই সব দরজা দিয়ে ভিতরে যাওয়া-আসা করে থাক, তোমরা মাবুদের কালাম শোন। 21মাবুদ বলছেন, ‘তোমরা সাবধান হও; বিশ্রামবারে কোন বোঝা বইবে না কিংবা জেরুজালেমের দরজা দিয়ে তা ভিতরে আনবে না। 22আমি যেমন তোমাদের পূর্বপুরুষদের হুকুম দিয়েছিলাম সেই মত বিশ্রামবারে তোমরা তোমাদের বাড়ী থেকে কোন বোঝা বের করে আনবে না বা কোন কাজ করবে না, বরং বিশ্রামবার পবিত্র করে রাখবে। 23তোমাদের পূর্বপুরুষেরা সেই কথা শোনেও নি, তাতে মনোযোগও দেয় নি। তারা তাদের ঘাড় শক্ত করেছিল; তারা আমার কথা শুনতে ও আমার শাসন মেনে নিতে অস্বীকার করেছিল। 24কিন্তু যদি তোমরা সতর্ক হয়ে আমার কথামত চল এবং বিশ্রামবারে শহরের দরজা দিয়ে কোন বোঝা না আন বরং বিশ্রামবারে কোন কাজ না করে দিনটা পবিত্র করে রাখ, 25তাহলে তোমাদের বাদশাহ্‌রা দাউদের সিংহাসনে বসে রাজত্ব করবে। তারা, তাদের রাজকর্মচারীরা এবং এহুদার লোকেরা ও জেরুজালেমের বাসিন্দারা রথে ও ঘোড়ায় চড়ে শহরের দরজা দিয়ে যাওয়া-আসা করবে; এই শহর কখনও জনশূন্য হবে না। 26এহুদার শহরগুলো ও জেরুজালেমের আশেপাশের গ্রামগুলো থেকে বিন্‌ইয়ামীন এলাকা এবং উঁচু ও নীচু পাহাড়ী এলাকা থেকে আর নেগেভ থেকে লোকেরা আসবে এবং মাবুদের ঘরে পোড়ানো-কোরবানী, পশু-কোরবানী, শস্য-কোরবানী, ধূপ ও শুকরিয়া-কোরবানীর জিনিস আনবে। 27কিন্তু যদি তোমরা আমার কথা না শোন এবং বিশ্রামবার পবিত্র করে না রাখ আর সেই দিনে বোঝা নিয়ে জেরুজালেমের দরজার মধ্য দিয়ে ঢোক, তবে জেরুজালেমের সমস্ত দরজায় আমি আগুন জ্বালাব আর তা তার কেল্লাগুলো পুড়িয়ে ফেলবে। সেই আগুন কেউ নিভাতে পারবে না।’ ”
 

 
 
 
যিহিষ্কেল ২০: ১২-২৪

12আমার ও তাদের মধ্যে চিহ্ন হিসাবে বিশ্রাম দিনগুলোও তাদের দিলাম যাতে তারা জানতে পারে যে, আমি মাবুদই তাদের পবিত্র করলাম।
13“ ‘কিন্তু ইসরাইলের লোকেরা মরুভূমিতে আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল। তারা আমার নিয়মগুলো পালন করল না এবং আমার যে শরীয়ত পালন করলে মানুষ জীবন পায় তা তারা অগ্রাহ্য করল; তারা আমার দেওয়া বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করল না। কাজেই আমি বললাম, আমি তাদের উপর আমার গজব ঢেলে দিয়ে মরুভূমিতেই তাদের ধ্বংস করে ফেলব। 14কিন্তু আমার সুনাম রক্ষার জন্য আমি তা করি নি, যাতে যে জাতিদের সামনে আমি তাদের বের করে এনেছিলাম তাদের কাছে আমার নাম অপবিত্র না হয়। 15এছাড়া সেই মরুভূমিতেই তাদের কাছে আমি কসম খেলাম যে, আমার দেওয়া দেশ- যে দেশে দুধ, মধু আর কোন কিছুর অভাব নেই, যে দেশ সব দেশের মধ্যে সেরা- সেই দেশে আমি তাদের নিয়ে যাব না। 16তারা আমার শরীয়ত অগ্রাহ্য করেছে ও আমার নিয়মগুলো অমান্য করেছে এবং আমার দেওয়া বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করে নি, কারণ তাদের অন্তরের টান ছিল মূর্তিপূজার দিকে। 17তবুও আমি তাদের মমতার চোখে দেখে মরুভূমিতে তাদের একেবারে ধ্বংস করি নি। 18সেখানে তাদের ছেলেমেয়েদের আমি বললাম যে, তারা যেন তাদের পূর্বপুরুষদের মত কাজ না করে, তাদের আচার-ব্যবহার অনুসারে না চলে এবং তাদের মূর্তিগুলো দিয়ে নিজেদের নাপাক না করে। 19আমি তাদের আরও বললাম যে, আমিই তাদের মাবুদ আল্লাহ্‌, তাই আমার নিয়মগুলো যেন তারা পালন করে এবং আমার শরীয়ত মেনে চলে। 20তারা যেন আমার দেওয়া বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করে; তাতে আমার ও তাদের মধ্যে তা একটা চিহ্ন হয়ে থাকবে, আর তারা জানতে পারবে যে, আমিই তাদের মাবুদ আল্লাহ্‌।
21“ ‘কিন্তু সেই ছেলেমেয়েরা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল। তারা আমার নিয়মগুলো পালন করল না এবং যে শরীয়ত পালন করলে মানুষ জীবন পায় তারা আমার সেই শরীয়ত মেনে চলবার দিকে মনোযোগ দিল না; তারা আমার দেওয়া বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করল না। তাই আমি বললাম মরুভূমিতে আমি তাদের উপর আমার রাগ ও গজব সম্পূর্ণভাবে ঢেলে দেব। 22কিন্তু আমার হাত আমি সরিয়ে রাখলাম এবং আমার সুনাম রক্ষার জন্য আমি তা করি নি যাতে যে সব জাতিদের সামনে আমি তাদের বের করে এনেছিলাম তাদের কাছে আমার নাম অপবিত্র না হয়। 23তা ছাড়া মরুভূমিতে আমি তাদের কাছে কসম খেয়েছিলাম যে, নানা জাতি ও দেশের মধ্যে আমি তাদের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেব, 24কারণ তারা আমার শরীয়ত পালন করে নি, আমার নিয়মগুলো অগ্রাহ্য করেছে, আমার দেওয়া বিশ্রাম দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষা করে নি, আর তাদের পূর্বপুরুষদের মূর্তিগুলো তাদের কাছে ভাল লেগেছে।
 

যাত্রা পুস্তক ২০: ৮-১১, ২৩: ১২ ও ১৩, ৩১: ১২-১৭, ৩৫: ২ ও ৩, গণনা পুস্তক ১৫: ৩২-৩৬

যাত্রা পুস্তক (শুমারী) ২০: ৮-১১

8“বিশ্রামবার পবিত্র করে রাখবে এবং তা পালন করবে। 9সপ্তার ছয় দিন তোমরা পরিশ্রম করবে এবং তোমাদের সমস্ত কাজ করবে, 10কিন্তু সপ্তম দিনটা হল তোমাদের মাবুদ আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যে বিশ্রামের দিন। সেই দিন তোমরা, তোমাদের ছেলেমেয়ে, তোমাদের গোলাম ও বাঁদী, তোমাদের পশু বা তোমাদের শহর ও গ্রামে বাস-করা অন্য জাতির লোক, মোট কথা, কারও কোন কাজ করা চলবে না। 11মাবুদ ছয় দিনে আসমান, জমীন, সমুদ্র এবং সেগুলোর মধ্যেকার সব কিছু তৈরী করেছিলেন, কিন্তু সপ্তম দিনে সেই কাজ আর করেন নি। সেইজন্য তিনি এই বিশ্রাম দিনটাকে দোয়া করে পবিত্র করেছিলেন।



 যাত্রা পুস্তক  ২৩: ১২ ও ১৩

 12“তোমরা সপ্তার ছয় দিন কাজ করবে কিন্তু সপ্তম দিনে কোন কাজ করবে না। তাতে তোমাদের গরু ও গাধা বিশ্রাম পাবে এবং তোমাদের ঘরে জন্মেছে এমন গোলাম আর অন্যান্য জাতির লোকেরাও পরিশ্রম থেকে রেহাই পাবে।
13“আমি তোমাদের যে যে নির্দেশ দিলাম তার প্রত্যেকটা অবশ্যই পালন করবে। কোন দেবতার নাম মুখে আনবে না, তা যেন তোমাদের মুখে শোনা না যায়।
 
 
 
 
যাত্রা পুস্তক  ৩১: ১২-১৭ 

বিশ্রামবার
12-13তারপর মাবুদ মূসাকে বনি-ইসরাইলদের এই কথা বলতে বললেন: “তোমরা আমার প্রত্যেকটি বিশ্রামবার পালন করবে। এই বিশ্রামবার বংশের পর বংশ ধরে তোমাদের ও আমার মধ্যে এমন একটা চিহ্ন হয়ে থাকবে যার দ্বারা তোমরা বুঝতে পারবে যে, আমিই মাবুদ এবং আমিই তোমাদের আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রেখেছি।
14“তোমরা বিশ্রামবার পালন করবে, কারণ এই দিনটা তোমাদের জন্য পবিত্র করা হয়েছে। যদি কেউ এই দিনটা পালন না করে তবে তাকে মেরে ফেলতে হবে; যদি কেউ এই দিনে কোন কাজ করে তবে তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে। 15তোমরা সপ্তার ছয় দিন কাজ করবে কিন্তু সপ্তম দিনটা হবে বিশ্রামের দিন, আর মাবুদের উদ্দেশ্যে সেটা একটা পবিত্র দিন। যদি কেউ এই দিনে কাজ করে তবে তাকে হত্যা করতে হবে। 16একটা স্থায়ী ব্যবস্থা হিসাবে এই বিশ্রামবার বনি-ইসরাইলদের বংশের পর বংশ ধরে পালন করতে হবে। 17এই দিনটা আমার ও বনি-ইসরাইলদের মধ্যে চিরকালের জন্য একটা চিহ্ন হয়ে থাকবে, কারণ আমি ছয় দিনের মধ্যে আসমান ও জমীন সৃষ্টি করেছি এবং সপ্তম দিনে আমি কোন কাজ করি নি।”
 
 
 
 
যাত্রা পুস্তক  ৩৫: ২ ও ৩
 
বিশ্রামবারের নিয়ম
1পরে মূসা বনি-ইসরাইলদের জমায়েত করে বললেন, “মাবুদ তোমাদের পালন করবার জন্য এই সব হুকুম দিয়েছেন। 2সপ্তার ছয় দিন তোমরা কাজ করবে কিন্তু সপ্তম দিনটি হবে তোমাদের একটা পবিত্র দিন, মাবুদের উদ্দেশে বিশ্রামের দিন। সেই দিনে যে কাজ করবে তাকে হত্যা করতে হবে। 3বিশ্রামবারে তোমাদের কোন ঘরে যেন আগুন জ্বালানো না হয়।”
 
 
 
 
 গণনা পুস্তক ১৫: ৩২-৩৬

বিশ্রামবার-অমান্যকারীর শাস্তি
32বনি-ইসরাইলরা মরুভূমিতে থাকবার সময় একজন লোককে বিশ্রামবারে কাঠ কুড়াতে দেখা গেল। 33যারা তাকে কাঠ কুড়াতে দেখল তারা তাকে মূসা, হারুন এবং সমস্ত বনি-ইসরাইলদের কাছে নিয়ে গেল। 34এই রকম লোককে নিয়ে কি করতে হবে তা বলা হয় নি বলে তাঁরা তাকে আটক করে রাখলেন। 35তখন মাবুদ মূসাকে বললেন, “লোকটাকে হত্যা করতে হবে। ছাউনির বাইরে নিয়ে গিয়ে সমস্ত বনি-ইসরাইল তাকে পাথর মারবে।” 36কাজেই বনি-ইসরাইলরা মূসার মধ্য দিয়ে দেওয়া মাবুদের হুকুম মত তাকে ছাউনির বাইরে নিয়ে গিয়ে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করল।
 
 
 
 
 

দ্বিতীয় বিবরণের ৪, ৬, ১০, ১১ ও ২৮ থেকে ৩০ অধ্যায়

 দ্বিতীয় বিবরণ:4
 
ঈশ্বরের বাধ্য হয়ে চলার জন্য
মোশির অনুরোধ
 
1এখন, হে ইসরায়েলকুল! যে সব বিধি ও অনুশাসন পালন করতে আমি তোমাদের শিক্ষা দেব তা মনোযোগ দিয়ে শোন, তাহলে তোমরা বাঁচবে এবং তোমাদের পিতৃপুরুষের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের যে দেশ দিচ্ছেন, সেই দেশে প্রবেশ করে তোমরা তা অধিকার করতে পারবে। 2আমি তোমাদের যে কথা বলব তার সঙ্গে তোমরা কিছু যোগ করবে না বা তা থেকে কিছু বাদও দেবে না। আমি তোমাদের যে সব নির্দেশ দিচ্ছি তা তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরেরই নির্দেশ, তোমরা সমস্ত নির্দেশ পালন করবে।প্রকা 22:18-19 3বেল-পিয়োরে প্রভু পরমেশ্বর যা করেছিলেন সবই তোমরা স্বচক্ষে দেখেছ। তোমাদের মধ্যে যারা পিরোয়ের বেলদেবের অনুগামী হয়েছিল তাদরে সকলকেই তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর সংহার করেছেন।গণনা 25:1-9 4কিন্তু তোমরা যারা তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের অনুরক্ত ছিলে, তারা সকলেই আজও বেঁচে আছ। 5দেখ, আমার আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর আমাকে যেমন নির্দেশ দিয়েছেন আমি সেই অনুযায়ী তোমাদের বিভিন্ন বিধি ও অনুশাসন শিখিয়েছি। তোমরা এখন যে দেশ অধিকার করতে যাচ্ছ সেখানে গিয়ে সেগুলি যথাযথভাবে পালন করবে। 6তোমরা সেগুলি মনে রাখবে এবং পালন করবে কারণ অন্যান্য জাতির কাছে সেগুলিই হবে তোমাদের জ্ঞান ও বোধশক্তির পরিচায়ক। তারা এই বিধিসমূহ শুনে বলবে, সত্যিই এই মহান জাতি জ্ঞানবান ও বুদ্ধিসম্পন্ন। 7কেননা আমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর যেমন আমাদের সহায় তেমন আর কোন মহান জাতিক ঈশ্বর তাদের সহায়? আমরা যখনই তাঁকে ডাকি তখনই তাঁকে কাছে পাই। 8আর আমি তোমাদের এই যে সব বিধান দিয়েছি তার মত ন্যায়সঙ্গত বিধি ও অনুশাসন আর কোন মহান জাতির আছে? 9কিন্তু তোমরা সতর্ক থাক, যেন একাগ্র থাকে তোমাদের চিত্ত, যে সব ব্যাপার তোমরা স্বচক্ষে দেখেছ তা যেন ভুলে না যাও, জীবন থাকতে তোমাদের হৃদয় যেন সেকথা বিস্মৃত না হয়। তোমাদের সন্তান সন্ততিদের সেই সব বিষয় শিক্ষা দেবে তোমরা। 10তোমরা যে দিন হোরেব পর্বতে তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের সম্মুখে উপস্থিত হয়েছিলে, সেদিন প্রভু আমাকে বলেছিলেন, তুমি আমার কাছে ইসরায়েলীদের একত্র কর, তাদের কাছে আমার কিছু বক্তব্য আছে, তাহলে তারা যতদিন এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে ততদিন আমাকে সম্ভ্রম করতে শিখবে এবং তাদের সন্তানসন্ততিদেরও সেই শিক্ষা দেবে। 11তোমরা তখন এগিয়ে গিয়ে পাহাড়ের নীচে দাঁড়িয়েছিলে। পাহাড়ে তখন আগুন জ্বলছিল এবং সেই অগ্নি শিখা আকাশ পর্যন্ত উঠেছিল। অন্ধকার, মেঘ ও ঘন কুয়াশায় চারিদিক ছিল আচ্ছন্ন। 12অগ্নিশিখার মধ্য থেকে প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের সঙ্গে কথা বললেন। তোমরা তাঁর কন্ঠস্বর শুনতে পেলে কিন্তু কোন মূর্তি দেখতে পাও নি, কেবল স্বরই শোনা যাচ্ছিল।যাত্রা 19:16-18; হিব্রু 12:18-19 13তিনি তাঁর সঙ্গে তোমাদের সম্বন্ধের শর্ত, তাঁর দশ অনুশাসন পালন করার নির্দেশ তোমাদের দিলেন এবং দুটি পাষাণ ফলকে নির্দেশগুলি লিপিবদ্ধ করলেন। 14তোমরা যে দেশ অধিকার করতে চলেছ সেই দেশে গিয়ে যে সমস্ত বিধি ও অনুশাসন তোমাদের পালন করতে হবে সে সম্পর্কে তোমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য সেই সময়ে প্রভু পরমেশ্বর আমাকে আদেশ দিয়েছিলেন।যাত্রা 21:1
15হোরেব পর্বতে প্রভু পরমেশ্বর যে দিন অগ্নিশিখার মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, সেদিন তোমরা কোন মূর্তি দর্শন কর নি, সুতরাং সাবধান হয়ো, 16কোন প্রকার প্রতিমূর্তি নির্মাণ করে তোমরা যেন ভ্রষ্টাচারে লিপ্ত না হও।যাত্রা 20:4; লেবীয় 26:1; দ্বি.বি. 5:8; 27:15 17পুরুষ, কিংবা নারীর প্রতিমূর্তি, পৃথিবীতে বিচরণশীল কোন পশু, কিংবা আকাশে উড্ডীয়মান কোন পাখি, ভূচর কোন সরীসৃপের কিংবা 18মাটির নীচে জলচর কোন প্রাণীর প্রতিমূর্তি তোমরা নির্মাণ করবে না। 19তোমরা আকাশের দিকে চেয়ে সূর্য, চন্দ্র,নক্ষত্ররাজি, আকাশের সমগ্র জ্যোতিষ্ক বাহিনী, যা তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর আকাশের নীচে সমস্ত জাতির জন্য নিরূপণ করেছেন, সেগুলি দেখে প্রণিপাত করবে না বা সেগুলিকে পূজা করবে না। 20প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের লোহা-গলানো চুল্লী থেকে উদ্ধার করার মতন মিশর থেকে উদ্ধার করে এনেছেন এবং তোমাদের নিজস্ব প্রজারূপে গ্রহণ করেছেন, আজ পর্যন্ত তোমরা তাঁরই প্রজা রয়েছ।যাত্রা 19:5; দ্বি.বি. 7:6; 14:2; 26:18; তীত 2:14; ১ পিতর 2:9 21কিন্তু প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের কারণে আমার উপর ক্রুদ্ধ হয়ে এই শপথ করেছেন যে তিনি আমাকে জর্ডন পার হতে দেবেন না এবং তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের অধিকারের জন্য যে দেশ দিচ্ছেন সেই উত্তম দেশে আমাকে প্রবেশ করতে দেবেন না।গণনা 20:12
22এ দেশেই আমার মৃত্যু হবে। জর্ডন পার হতে আমি পারব না, কিন্তু তোমরা পার হয়ে সেই উত্তম দেশ অধিকার করবে। 23তোমরা সাবধান হয়ো, তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের সঙ্গে যে সম্বন্ধ স্থাপন করেছেন তা ভুলে যেও না এবং কোন কিছুর প্রতিমূর্তি খোদাই করে তৈরী করো না। তিনি এ কাজ নিষিদ্ধ করেছেন। 24কারণ তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর সর্বগ্রাসী অগ্নিস্বরূপ, কোন প্রতিদ্বন্দ্বীকে সহ্য করেন না তিনি।হিব্রু 12:29
 
অলীক প্রতিমাপূজা সম্পর্কে সাবধানবাণী
25সেই দেশে তোমাদের পুত্র ও পৌত্রাদির জন্মের পরে তোমরা যখন বৃদ্ধ হবে, তখন যদি তোমরা ভ্রষ্ট হয়ে কোন কিছুর প্রতিমূর্তি খোদাই কর বা তৈরী কর এবং তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের দৃষ্টিতে যা মন্দ সেই কাজ করে তাঁর ক্রোধের উদ্রেক কর, 26তাহলে আজ আমি স্বর্গ ও মর্ত্যকে তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী রেখে বলছি, তোমরা জর্ডন পার হয়ে যে দেশ অধিকার করতে চলেছ সেই দেশ থেকে তোমরা অবিলম্বে নিঃশেষে উচ্ছিন্ন হবে। বেশী দিন সেখানে তোমরা বাস করতে পারবে না, ধ্বংস হয়ে যাবে। 27বিভিন্ন জাতির মধ্যে প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের ছত্রভঙ্গ করে দেবেন। যে জাতিসমূহের মধ্যে প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের বিক্ষিপ্ত করবেন, তাদের মধ্যে তোমরা সংখ্যালঘু হয়ে থাকবে।দ্বি.বি. 28:36 28সেখানে তোমরা মানুষের হাতে গড়া কাঠের ও পাথরের দেবতা-যারা দেখতে, শুনতে, খেতে, ঘ্রাণ নিতে পারে না, তাদের পূজা করবে। 29কিন্তু সেখানে থেকেও যদি তোমরা তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের অন্বেষণ কর, যদি সমগ্র মনপ্রাণ দিয়ে তাঁর সন্ধান কর তবে তাঁকে পাবে।যির 29:13 30যখন তোমরা সঙ্কটে পড়বে, যখন এই সব অঘটন তোমাদের ঘটবে, তখন ভবিষ্যতের সেই দিনে তোমরা তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের কাছে ফিরে আসবে এবং তাঁর বাধ্য হয়ে চলবে।
31তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর পরম করুণাময়, তিনি তোমাদের পরিত্যাগ করবেন না, তোমাদের ধ্বংস করবেন না এবং তিনি শপথ করে তোমাদের পিতৃপুরুষদের সঙ্গে যে সম্বন্ধ স্থাপন করেছেন তা বিস্মৃত হবেন না।
32অতীত অনুসন্ধান করে দেখ, পৃথিবীতে ঈশ্বর যে দিন মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন, সেই দিন থেকে সন্ধান করে দেখ, আকাশমণ্ডলের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত জিজ্ঞাসা করে দেখ, এমন মহৎ মহৎ কর্ম আর কখনও হয়েছে কিনা? কিম্বা এমন কথা কখনও কেউ শুনেছে কিনা? 33তোমাদের মত আর কোন জাতি কি অগ্নির মধ্য থেকে ঈশ্বরের কন্ঠস্বর শুনেছে এবং তার পরেও বেঁচে আছে? 34তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের দৃষ্টিগোচরে মিশরে যে সব কীর্তি সাধন করেছেন তেমন কি আর কোন দেবতা পরীক্ষিত প্রমাণ, অলৌকিক নিদর্শন। অদ্ভুত লক্ষণ, যুদ্ধবিগ্রহের দ্বারা নিজ পরাক্রম ও বাহুবল প্রদর্শন করে ভয়াবহ সব কীর্তি স্থাপন করেছেন এবং অন্যান্য জাতির মধ্য থেকে নিজস্ব প্রজারূপে কোন জাতিকে গ্রহণ করেছেন?
35প্রভু পরমেশ্বরই একমাত্র ঈশ্বর, তিনি ছাড়া আর কোন ঈশ্বর নেই, এ কথা যেন তোমরা জানতে পার, সেই জন্যই ঐ সমস্ত কীর্তি তোমাদের দেখানাে হয়েছে। মথি 12:32 36তিনি অন্তরীক্ষ থেকে কথা বলে তোমাদের উপদেশ দিয়েছেন, পৃথিবীতে তিনি তোমাদের তাঁর মহতী অগ্নিশিখা দেখিয়েছেন এবং তোমরা অগ্নিশিখার মধ্য থেকে তাঁর বাণী শুনেছ। 37তোমাদের পিতৃপুরুষদের তিনি ভালবাসতেন তাই তাঁদের পরে তাঁদের বংশধরদের তিনি মনোনীত করেছেন এবং তিনি স্বয়ং মহাপরাক্রমে মিশর থেকে তোমাদের উদ্ধার করে এনেছেন। 38তোমাদের চেয়ে বৃহৎ ও শক্তিমান জাতিসমূহকে তোমাদের সম্মুখ থেকে বিতাড়িত করে সেই দেশের অধিকার তোমাদের দেওয়ার জন্য তিনি সেখানে এখন তোমাদের নিয়ে যাচ্ছেন। 39সুতরাং আজ তোমরা জেনে রাখ এবং মনে মনে উপলব্ধি কর যে ঊর্ধ্বে স্বর্গে এবং নীচে এই পৃথিবীতে প্রভু পরমেশ্বরই একমাত্র ঈশ্বর, আর কেউ নয়।
40তাঁর যে সমস্ত বিধি নির্দেশ আজ আমি তোমাদের জ্ঞাত করলাম তা তোমরা পালন করবে তাহলে তোমাদের ও তোমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের কল্যাণ হবে এবং তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর যে দেশ তোমাদের চিরতরে দান করেছেন সেই দেশে তোমরা দীর্ঘকাল বাস করতে পারবে।
 
জর্ডনের পূর্বতীরে আশ্রয় নগরী
41-42এই সময়ে মোশি জর্ডনের পূর্বতীরে তিনটি নগর নরহত্যাকারীদের আশ্রয় নেওয়ার জন্য পৃথক করে দিলেন। কোন লোক অতীতের কোন শত্রুতা থাকলেও অনিচ্ছাকৃত ভাবে যদি তার প্রতিবেশীকে হত্যা করে ফেলে তাহলে সে ঐ নগরগুলির কোন একটিতে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিতে পারবে। 43নগর তিনটি হলঃ সমতল অঞ্চলে প্রান্তরে স্থিত বেৎসের। এটি রূবেণ গোষ্ঠীর জন্য। গাদ গোষ্ঠীর জন্য গিলিয়দে অবস্থিত রামোৎ এবং মনঃশি গোষ্ঠীর জন্য বাশানে অবস্থিত গোলন। যিহো 20:8-9
মোশির দ্বিতীয় বক্তৃতা ভূমিকা
44মোশি ইসরায়েলীদের জন্য এই বিধান প্রবর্তন করেছিলেন। 45-46মিশর থেকে বেরিয়ে আসার পর জর্ডনের পূর্বতীরে বেৎ-পিয়োরের সম্মুখস্থ উপত্যকায়, হিষ্‌বোন নিবাসী ইমোরী রাজা সিহোনের দেশে অবস্থানকালে মোশি ইসরায়েলীদের কাছে এই সমস্ত আপ্তবাক্য, বিধি ও অনুশাসন বিবৃত করেছিলেন। মোশি ও ইসরায়েলীরা সেই রাজাকে পরাজিত করেন 47এবং তাঁর ও বাশানের রাজা ওগের রাজ্য, জর্ডনের পূর্বতীরবর্তী এই দুই ইমোরী রাজার রাজ্য, 48আর্ণোন উপত্যকার আরোয়ের থেকে সিরিয়োন অর্থাৎ হার্মোন পর্বত পর্যন্ত সমগ্র এলকা 49এবং পিস্‌গা পর্বতের নীচে অবস্থিত আরাবা সাগর থেকে জর্ডনের পূর্বতীরবর্তী সমগ্র আরাবা উপত্যকা দখল করে নিয়েছিলেন।
 
 দ্বিতীয় বিবরণ: 6
 
 
সর্বোত্তম অনুশাসন
1এই সমস্ত নির্দেশ, বিধি ও অনুশাসন তোমাদের শেখানোর জন্য তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর আমাকে আদেশ দিয়েছেন। তোমরা এখন নদী পার হয়ে যে দেশ অধিকার করতে যাচ্ছ, সেই দেশে গিয়ে তোমারা এই নির্দেশই পালন করবে। 2তোমরা পুত্র পৌত্রাদিক্রমে আজীবন তাঁর এই সমস্ত নির্দেশ ও বিধি, যা আমি তোমাদের জানালাম, পালন করবে এবং তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরকে সম্ভ্রম করবে, তাহলে তোমরা দীর্ঘ জীবন লাভ করবে। 3হে ইসরায়েলকুল! শোন, তোমরা এ সবই সযত্নে পালন করবে, তাহলে তোমাদের পিতৃপুরুষদের আরাধ্য ঈশ্বর তোমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেই অনুযায়ী সুজলা সুফলা প্রাচুর্যময় সেই দেশে তোমাদের মঙ্গল হবে এবং তোমরা অতিশয় বৃদ্ধিলাভ করবে। 4হে ইসরায়েলকুল! শোন, প্রভু পরমেশ্বরই আমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর এক ও অদ্বিতীয়।মার্ক 12:19 5তুমি তোমার সমগ্র হৃদয় সমগ্র প্রাণ ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়ে তোমার আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরকে ভালবাসবে।মথি 22:37; মার্ক 12:30; লুক 10:27 6এই সমস্ত নির্দেশ যা আমি আজ তোমাদের দিচ্ছি, তোমরা সব মনে রেখো, 7এবং প্রত্যেকে সেগুলি সযত্নে তোমাদের সন্তান সন্ততিদের শিখাবে। তোমরা গৃহে থাকাকালে, পথে যাত্রাকালে, শয়নে অথবা জাগরণে আলোচনা করবে। 8এগুলি তোমরা নিদর্শন স্বরূপ হস্তে ধারণ করবে, দুচোখের মাঝখানে ভূষণ স্বরূপ পরিধান করবে। 9তোমাদের ঘরের দরজার মাথায় এবং প্রবেশ পথে এগুলি লিখে রাখবে।দ্বি.বি. 11:18-20
10তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের পিতৃপুরুষ অব্রাহাম,ইস্‌হাক ও যাকোবকে যে দেশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেই দেশে তিনি তোমাদের নিয়ে যাওয়ার পর তোমরা তোমাদের দ্বারা নির্মিত নয় এমন অনেক বৃহৎ ও সুন্দর নগর,আদি 12:7; 26:3; 28:13 11তোমাদের সঞ্চিত নয় এমন উত্তম দ্রব্যে পরিপূর্ণ অনেক গৃহ, তোমাদের দ্বারা খনিত নয় এমন অনেক কূপ, তোমাদের তৈরী নয় এমন অনেক দ্রাক্ষাকুঞ্জ ও জলপাইয়ের উদ্যান ভোগদখল করে তোমরা যখন তৃপ্তি লাভ করবে, 12তখন তোমরা সাবধান হয়ো। মিশরের দাসত্বের আগার থেকে যিনি তোমাদের উদ্ধার করে এনেছেন, সেই প্রভু পরমেশ্বরকে তোমরা ভুলে যেও না। 13তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরকেই সম্ভ্রম করবে, কেবল তাঁরই সেবা করবে এবং তাঁর নামেই শপথ করবে।মথি 4:19; লুক 4:8 14তোমরা অন্য কোন দেবতার, তোমাদের চারিদিকে যে সব জাতি আছে তাদের দেবতাদের অনুগামী হবে না, 15যদি হও তাহলে তোমাদের মাঝে যিনি রয়েছেন, তোমাদের সেই আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের ক্রোধ প্রজ্বলিত হবে তোমাদের বিরুদ্ধে, এবং ধরাপৃষ্ঠ থেকে তোমাদের বিলুপ্ত করবেন তিনি, কারণ তিনি কোন প্রতিদ্বন্দ্বীকে সহ্য করেন না। সকল গৌরব ও মহিমা একমাত্র তাঁরই। 16মাসাহ্‌তে তোমরা যেমন করেছিলে তেমনি ভাবে তোমরা তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরকে কখনও পরীক্ষা করতে যেও না।যাত্রা 17:1-7; মথি 4:7; লুক 4:12 17তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর যে সমস্ত নির্দেশ, বিধি-বিধান দিয়েছেন সেগুলি তোমরা সযত্নে পালন করবে। 18তাঁর দৃষ্টিতে যা ন্যায্য এবং উত্তম তাই তোমরা করবে, তাহলে তোমাদের মঙ্গল হবে এবং প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের পিতৃপুরুষদের কাছে যে দেশ সম্পর্কে শপথ করে বলেছিলেন যে তোমাদের সম্মুখে থেকে তোমাদের সকল শত্রুকে তিনি বিতাড়িত করবেন, 19আর সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তোমরা সেই উত্তম দেশে প্রবেশ করে সেই দেশ অধিকার করতে পারবে। 20উত্তর কালে তোমাদের সন্তান যখন তোমাদের জিজ্ঞাসা করবে: আমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের যে সব বিধি বিধান ও অনুশাসন দিয়েছেন সেগুলির তাৎপর্য কি? 21তখন তোমরা তাকে বলবে: আমরা মিশরে ফারাও-এর দাস ছিলাম। প্রভু পরমেশ্বর সবল হস্তে আমাদের মিশর থেকে উদ্ধার করে আনলেন। 22তিনি আমাদেরই সামনে মিশরীদের বিরুদ্ধে ও ফারাও এবং তাঁর সকল লোকজনের বিরুদ্ধে পরমাশ্চর্য ও সাঙ্ঘাতিক অলৌকিক শক্তির নির্দশন ও অদ্ভুত লক্ষণ সমূহ প্রদর্শন করলেন। 23তিনি সেখান থেকে আমাদের উদ্ধার করে আনলেন এবং আমাদের পিতৃপুরুষদের কাছে যে দেশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেই দেশে আমাদের নিয়ে গেলেন। 24আর তিনি আমাদের তাঁর এই সমস্ত বিধি পালন করতে এবং আমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরকে সম্ভ্রম করতে আদেশ দিলেন যেন আজীবন আমাদের মঙ্গল হয় আর আজ যেমন তেমনি চিরকাল তিনি আমাদের রক্ষা করেন। 25আমরা আমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের আদেশ অনুযায়ী যদি তাঁর সাক্ষাতে নিষ্ঠাভরে এই সমস্ত বিধি ব্যবস্থা পালন করি তাহলে তা-ই হবে আমাদের পক্ষে প্রকৃত ধার্মিকতা।
 
  দ্বিতীয় বিবরণ:10
 
 
মোশির দ্বিতীয়বার অনুশাসন গ্রহণ
(যাত্রা 34:1-10)
1সেই সময় প্রভু পরমেশ্বর আমাকে বললেন, তুমি আগেকার মত দুটি পাষাণ পলক কেটে পাহাড়ের উপরে আমার কাছে নিয়ে এস। এই সঙ্গে কাঠের একটি সিন্দুকও তুমি নির্মাণ কর। 2প্রথম যে পাষাণফলক দুটি তুমি ভেঙ্গে ফেলেছ তাতে যে সব কথা লেখা ছিল সেগুলি আমি এই ফলক দুটিতে লিখে দেব। তুমি সে দুটি ঐ সিন্দুকে রাখবে। 3আমি তখন শিটিম কাঠের একটি সিন্দুক তৈরী করলাম এবং আগের পাষাণ ফলক দুটির মত দুটি পাষাণ পলক কেটে তৈরী করলাম এবং সে দুটি হাতে নিয়ে পাহাড়ে উঠে গেলাম। 4তোমরা যেদিন পাহাড়ে সমবেত হয়েছিলে সেদিন অগ্নিশিখার মধ্য থেকে প্রভু পরমেশ্বর দশটি অনুশাসন তোমাদের কাছে ব্যক্ত করেছিলেন সেগুলিই তিনি আগের মত এই পাষাণ ফলক দুটির উপরে লিখে আমাকে দিলেন। 5আমি পাহাড় থেকে নেমে ফিরে এসে প্রভু পরমেশ্বরের নির্দেশ মত সেই ফলক দুটি আমার তৈরী সিন্দুকের মধ্যে রাখলাম। তখন থেকে সে দুটি সেই সিন্দুকেই রয়েছে।
6(ইসরায়েলীরা বেরোৎ-বেনে-যাকন থেকে যাত্রা করে মোসেরাতে গিয়ে পৌঁছাল। সেখানে হারোণের মৃত্যু হল, তাঁকে সেখানেই কবর দেওয়া হল। তাঁর পুত্র ইলিয়াসর তাঁর স্থলে পুরোহিতরূপে নিযুক্ত হলেন।গণনা 20:28; 33:38 7সেখান থেকে তারা গুধগোদার দিকে যাত্রা করল এবং সেখান থেকে যট্‌বাথায় গিয়ে পৌঁছাল। স্থানটি ছিল নদী-নালায় পূর্ণ। 8এই সময় প্রভু পরমেশ্বর চুক্তি সিন্দুকটি বহন করা, তাঁর পরিচর্যা করা এবং প্রভু পরমেশ্বরের নামে আশীর্বাণী উচ্চারণ করার জন্য লেবির বংশধরদের পৃথক করে নিযুক্ত করলেন। আজ পর্যন্ত তারা সেই কাজই করে চলেছে।গণনা 3:5-8 9এই কারণেই জ্ঞাতিভাইদের সম্পত্তিতে লেবিগোষ্ঠীর কোন অংশ বা স্বত্বাধিকার নেই। পরিবর্তে তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রভুর পৌরোহিত্যেই তাদের উত্তরাধিকার।)
10আমি আগের মত এবারও চল্লিশ দিন ও রাত সেই পাহাড়ে থাকলাম এবং প্রভু পরমেশ্বর এবারেও আমার বিনতি শুনলেন, তোমাদের ধ্বংস করলেন না।যাত্রা 34:28 11পরে প্রভু পরমেশ্বর আমাকে বললেন, ওঠ, লোকদের অগ্রবর্তী হয়ে তুমি যাত্রা শুরু কর। তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে তাদের যে দেশ দেওয়ার অঙ্গীকার আমি করেছি, সেখানে প্রবেশ করে তারা সেই দেশ অধিকার করবে।
ইসরায়েলীদের কাছে ঈশ্বরের প্রত্যাশা
12হে ইসরায়েলকুল! শোন, তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের কাছে কি প্রত্যাশা করেন? তাঁর প্রত্যাশা—তোমরা তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরকে সম্ভ্রম কর, তাঁর নির্দেশিত পথে চল ও তাঁকে ভালবাস। তোমাদের সমগ্র হৃদয়, মন ও প্রাণ দিয়ে তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের সেবা কর। 13আজ আমি তোমাদের মঙ্গলের জন্য প্রভু পরমেশ্বরের যে সমস্ত বিধি ও নির্দেশ তোমাদের জানালাম, সেগুলি পালন করো। 14দেখ, অন্তরীক্ষ ও মহাকাশ, পৃথিবী ও তার সর্ববস্তু তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের। 15তবুও প্রভু তোমাদের পিতৃপুরুষদের এতো গভীরভাবে ভালবেসে ছিলেন যে তাদের পরে তাদের বংশধরদের মনোনীত করেছিলেন। সমস্ত জাতির মধ্যে আজও তোমরাই তাঁর মনোনীত। 16অতএব তোমরা হৃদয় পরিবর্তন কর, আর অবাধ্য হয়ো না, 17কেননা তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর ঈশ্বরদের ঈশ্বর, প্রভুদের প্রভু, তিনি মহান্‌, মহাপরাক্রমী ভয়ঙ্কর ঈশ্বর। তিনি কারও পক্ষপাতিত্ব করেন না বা উৎকোচ গ্রহণ করেন না।১ তিম 6:15; প্রকা 17:14; 19:16; প্রেরিত 10:34; রোমীয় 2:11; গালা 2:6; ইফি 6:9 18অনাথ ও বিধবাদের পক্ষ হয়ে তিনি বিচার নিষ্পত্তি করেন এবং প্রবাসীকে ভালবেসে অন্নবস্ত্র দেন। 19সুতরাং তোমরাও প্রবাসীকে ভালবাসবে, কেননা মিশরে তোমরাও ছিলে প্রবাসী। 20তোমরা তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরকে সম্ভ্রম করবে, তাঁর সেবা করবে, তাঁরই অনুগত থাকবে, শপথ নেবে তাঁরই নামে। 21তিনিই তোমাদের ঈশ্বর, তাঁর স্তব করো। তোমরা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছ তাঁর মহৎ ও ভয়াবহ কীর্তি, যা তিনি তোমাদেরই জন্য সাধন করেছেন। 22তোমাদের পিতৃপুরুষেরা মাত্র সত্তর জন মিশরে গিয়েছিল কিন্তু তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর এখন আকাশের নক্ষত্ররাজির মত তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন।আদি 15:5; 22:17; 46:27
 
 
  দ্বিতীয় বিবরণ:11
 
 1তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরকে তোমরা ভালবাসবে এবং তিনি যে দায়িত্ব দিয়েছেন, অর্থাৎ তাঁর বিধি, অনুশাসন ও নির্দেশসমূহ সর্বদা পালন করবে। 2এ সবই আজ তোমরা তোমাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে জেনেছ। তোমাদের সন্তানদের এ অভিজ্ঞতা নেই কারণ তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর সম্পর্কে তারা কিছু জানে না। কিন্তু তোমরা তাঁর মাহাত্ম্য, পরাক্রম ও অলৌকিক ক্ষমতার কথা জান। 3মিশররাজ ফারাও ও তাঁর রাজ্যের বিরুদ্ধে তিনি যে সব অলৌকিক কাজ করেছিলেন সবই তোমরা দেখেছ।যাত্রা 7:8—12:13 4মিশরী সেনাবাহিনী, অশ্ব ও রথের যে দুর্দশা তিনি করেছিলেন, তারা যখন তোমাদের পিছনে তাড়া করেছিল তখন তিনি যে ভাবে লোহিত সাগরের জল তাদের উপরদিয়ে প্রবাহিত করেছিলেন সবই তোমরা দেখেছ। এইভাবে প্রভু পরমেশ্বর তাদের ধ্বংস করছিলেন এবং আজও তারা সেই অবস্থায় আছে।যাত্রা 14:28 5প্রান্তরের মধ্য দিয়ে এখানে পৌঁছানো পর্যন্ত তিনি তোমাদের জন্য যা করেছেন তাও তোমরা জান। 6রূবেণের পুত্র ইলিয়াবের সন্তান দাথন ও অবিরামের কি দশা তিনি করেছিলেন তা-ও তোমরা জান-সমগ্র ইসরায়েলী জনতার সাক্ষাতে পৃথিবী মুখ গহ্বর বিস্তার করে আত্মীয় পরিজন, ধন সম্পদ, তাঁবু সমেত তাদের সকলকে গ্রাস করেছিল।গণনা 16:31-32 7তোমরা স্বচক্ষে প্রভু পরমেশ্বরের এই সমস্ত মহৎ কীর্তি দেখেছ।
প্রতিশ্রুত দেশে সমৃদ্ধির আশ্বাস
8সুতরাং আজ আমি তোমাদের যে সব নির্দেশ দিচ্ছি, সব তোমরা পালন করবে, তাহলে তোমরা শক্তিমান হবে এবং নদী পার হয়ে যে দেশে তোমরা যাচ্ছ সেই দেশ অধিকার করতে পারবে। 9প্রভু তোমাদের পিতৃপুরুষদের ও তাদের বংশধরদের যে দেশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সুজলা-সুফলা সেই দেশে দীর্ঘকাল বাস করতে পারবে। 10তোমরা যে দেশে যাচ্ছ সেই দেশ মিশরের মত নয়, যেখান থেকে তোমরা বেরিয়ে এসেছ। সেখানকার মাটিতে বীজ বপন করার পর তোমাদের কঠোর পরিশ্রমে জল সেচন করতে হত। 11কিন্তু তোমরা যে দেশ অধিকার করতে যাচ্ছ, পর্বত ও উপত্যকায় সমৃদ্ধ সেই দেশ আকাশের বৃষ্টি ধারায় সিঞ্চিত। 12তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর সেই দেশের তত্ত্বাবধান করেন, বছরের প্রথম থেকে শেষ অবধি সর্বদা তার উপরে দৃষ্টি রাখেন।
13আমি আজ তোমাদের যে সব নির্দেশ দিলাম তা যদি সযত্নে পালন কর, তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরকে ভালবাস, তোমাদের হৃদয়, মন ও প্রাণ দিয়ে তাঁর সেবা কর,লেবীয় 26:3-5; দ্বি.বি. 7:12-16; 28:1-14 14তাহলে তিনি যথাসময়ে তোমাদের দেশে শরৎ ও বসন্ত ঋতুতে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন আর তার ফলে তোমরা তোমাদের শস্য, দ্রাক্ষারস ও তেল সংগ্রহ করতে পারবে। 15তোমাদের পশুপালের জন্য তিনি চারণভূমিতে তৃণ উৎপন্ন করবেন এবং তোমরা খাদ্যে পরিতৃপ্ত হবে। 16কিন্তু সাবধান তোমাদের চিত্ত যেন বিভ্রান্ত না হয় এবং তোমরা যেন বিপথে গিয়ে অন্য দেবতাদের সেবা ও আরাধনা না কর, 17তাহলে তোমাদের বিরুদ্ধে প্রভু পরমেশ্বরের কোপানল প্রজ্বলিত হবে এবং তিনি আকাশ রুদ্ধ করে দেবেন, ফলে বৃষ্টি হবে না, তোমাদের ক্ষেতে ফসল উৎপন্ন হবে না এবং প্রভু যে দেশ তোমাদের দিয়েছেন সেই সমৃদ্ধ দেশ থেকে তোমরা অচিরেই উৎখাত হয়ে যাবে।
18সুতরাং তোমরা আমার এই সব কথা অন্তরে সঞ্চয় করে রেখ। এগুলির স্মারক চিহ্ন তোমরা হাতে বেঁধে রাখবে এবং ভূষণ স্বরূপ দুচোখের মধ্যস্থলে ললাটে ধারণ করবে। 19তোমাদের সন্তানদের সেগুলি শিখাবে, আর তোমরা যখন ঘরে থাকবে, পথে চলবে, শয়ন করবে বা শয্যাত্যাগ করবে-সব সময়েই ঐগুলি আলোচনা করবে। 20তোমাদের ঘরের দরজায় ও বাড়ির প্রবেশ পথে সেগুলি লিখে রাখবে।দ্বি.বি. 6:6-9 21তাহলে প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের পিতৃপুরুষদের যে দেশ দেওয়ার প্রতিশ্রুত দিয়েছিলেন সেই দেশে তোমরা ও তোমাদের সন্তান সন্ততিরা দীর্ঘজীবন লাভ করবে এবং পৃথিবীর উপরে আকাশ যতদিন থাকবে ততদিন তোমরা সেই দেশে বসবাস করতে পারবে।
22যে সব নির্দেশ আমি তোমাদের দিলাম তা যদি তোমরা সযত্নে পালন কর, তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরকে ভালবাস, তাঁর নির্দেশিত পথে চল ও তাঁরই প্রতি তোমাদের অনুরাগ থাকে, 23তাহলে প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের সম্মুখ থেকে এই সমস্ত জাতিকে বিতাড়িত করবেন এবং তোমরা তোমাদের চেয়ে বৃহৎ ও শক্তিমান জাতিসমূহের দেশ অধিকার করতে পারবে। 24যে সব দেশে তোমরা পদার্পণ করবে সেগুলি হবে তোমাদের। তোমাদের সীমানা হবে মরুপ্রান্তর থেকে লেবানন এবং ইউফ্রেটিস নদী থেকে পশ্চিমের সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত।যিহো 1:3-5 25তোমাদের সামনে কেউ দাঁড়াতে পারবে না, যে দেশে তোমরা পদার্পণ করবে, প্রভু পরমেশ্বর তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেই দেশের সর্বত্র তোমাদের সম্পর্কে ভীতি ও ত্রাসের সঞ্চার করবেন।
26দেখ, আজ আমি তোমাদের সামনে আশীর্বাদ ও অভিশাপ দুই-ই রাখলাম। 27আজ আমি যে সব নির্দেশ তোমাদের জানিয়ে দিলাম, তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের সেই সমস্ত নির্দেশ যদি তোমরা পালন কর, তাহলে আশীর্বাদ লাভ করবে। 28আর যদি তোমরা তাঁর নির্দেশ অমান্য কর এবং আজ আমি যে পথে চলার নির্দেশ তোমাদের দিলাম সেই পথ পরিত্যাগ করে যদি তোমাদের অজ্ঞাত অন্যান্য দেবতাদের অনুগামী হও, তাহলে তোমরা হবে অভিশপ্ত।
29যে দেশ তোমরা অধিকার করতে যাচ্ছ, সেই দেশে প্রভু পরমেশ্বর যখন তোমাদের নিয়ে যাবেন তখন তোমরা গেরিষীম পর্বতে আশীর্বাণী এবং এবাল পর্বতে অভিশাপ বাণী উচ্চারণ করবে।দ্বি.বি. 27:11-14; যিহো 8:33-35 30এই দুটি পর্বত জর্ডনের ওপারে পশ্চিম দিকে আরাবা উপত্যকা নিবাসী কনানীদের দেশ গিল্‌গলের সম্মুখে মোরির ওক বনের কাছে অবস্থিত। 31তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের যে দেশ দেবেন, জর্ডন পার হয়ে সেই দেশে তোমাদের যেতে হবে।সেই দেশ অধিকার করে তোমরা সেখানে বসবাস করবে, 32এবং আজ আমি তোমাদের সাক্ষাতে যে সব বিধি ও অনুশাসন প্রবর্তন করলাম, সেগুলি অবশ্যই সযত্নে পালন করবে।
 
 
 
  দ্বিতীয় বিবরণ:28
 
 
বাধ্যতা ও আশীর্বাদ
(লেবীয় 26:3-13; দ্বি.বি. 7:12-24)
1তোমরা যদি তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের অনুশাসন সযত্নে পালন কর, তাঁর নির্দেশ যা আমি আজ তোমাদের দিলাম যদি নিখুঁতভাবে পালন কর তাহলে তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর পৃথিবীর সকল জাতির চেয়ে তোমাদের উন্নত করবেন,দ্বি.বি. 11:13 2এবং তোমাদের উপরে আশীর্বাদ বর্ষিত হবে। আশীর্বাদগুলি এই: 3তোমাদের নগর ও ক্ষেতখামারগুলি হবে আশীর্বাদপূত। 4তোমাদের সন্তান-সন্ততি, ক্ষেতের ফসল ও পশুপালের গোবৎস ও মেষশাবকগুলিও হবে আশীর্বাদযুক্ত। 5তোমাদের ঝুড়ি ও ময়দা মাখার পাত্রগুলির উপরেও নেমে আসবে আশীর্বাদ। 6তোমরা যখন ঘরের বাইরে যাবে ও ফিরে আসবে, তখনও তোমাদের উপরে থাকবে তাঁর আশীর্বাদ। 7যারা তোমাদের বিরোধিতা করবে, প্রভু পরমেশ্বর সেই শত্রুদের পরাস্ত করবেন, তোমরা স্বচক্ষে দেখবে সেই পরাজয়। তারা তোমাদের আক্রমণ করতে এলে দিশেহারা হয়ে চারদিক দিয়ে তাদের পালাতে হবে। 8প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের শস্য ভাণ্ডার ও তোমাদের সকল কর্মপ্রচেষ্টাকে আশীর্বাদযুক্ত করবেন এবং তিনি যে দেশ তোমাদের দান করছেন সেই দেশে তোমাদের আশীর্বাদ করবেন।
9প্রভু তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিজস্ব পবিত্র প্রজামণ্ডলীরূপে তোমাদের প্রতিষ্ঠিত করবেন যদি তোমরা তাঁর নির্দেশ পালন করে তাঁর পথে চল। 10পৃথিবীর সর্ব জাতি যখন দেখবে যে প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের তাঁর নিজস্ব প্রজারূপে আখ্যাত করেছেন, তারা তখন তোমাদের সমীহ করবে। 11প্রভু পরমেশ্বর যে দেশ তোমাদের দেওয়ার প্রতিশ্রুতি তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে দিয়েছিলেন, সেই দেশে তিনি তোমাদের সন্তান সন্ততি, পশুপাল এবং ক্ষেতের ফসল প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি করে তোমাদের সমৃদ্ধিশালী করবেন। 12তিনি তাঁর ঐশ্বর্যভাণ্ডার স্বরূপ আকাশ উন্মুক্ত করে যথাসময়ে তোমাদের দেশে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের সর্বপ্রকার কৃষিকর্মে আশীর্বাদ দান করবেন। অনেক জাতিকে তোমরা ঋণ দেবে, কিন্তু তোমাদের ঋণ নিতে হবে না। 13প্রভু পরমেশ্বর জাতিবৃন্দের মাঝে তোমাদের স্থান দেবেন শীর্ষে, তোমরা থাকবে সবার উপরে, নীচে কখনই নয়, যদি তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের নির্দেশ, যা আমি আজ তোমাদের জানালাম, সব সযত্নে পালন কর। 14আমি আজ তোমাদের যে সব নির্দেশ দিলাম তা থেকে কোন অবস্থায় তোমরা বিচ্যুত হবে না এবং অন্য কোন দেবতার পূজা করবে না বা অনুগামী হবে না।
15কিন্তু যদি তোমরা তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের কথায় কর্ণপাত না কর, তাঁর যে সব নির্দেশ ও অনুশাসন আজ আমি তোমাদের দিলাম তা যদি সযত্নে পালন না কর তাহলে তোমাদের উপরে নেমে আসবে এই সমস্ত অভিশাপ:
16তোমাদের নগর ও ক্ষেতখামারগুলি হবে অভিশপ্ত। 17তোমাদের ঝুড়ি ও ময়দা মাখার পাত্র হবে অভিশপ্ত। 18তোমাদের সন্তানসন্ততি, ক্ষেতের ফসল ও পশুপালের গোবৎস ও মেষশাবকগুলি হবে অভিশপ্ত। 19ঘরের বাইরে যাওয়া ও ফেরার সময় তোমাদের উপর নেমে আসবে তাঁর অভিশাপ। 20প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের সর্ব কর্ম প্রচেষ্টাকে অভিশপ্ত, বিভ্রান্ত ও ব্যর্থ করবেন, যত দিন না তাঁকে পরিত্যাগ করার অপরাধে সম্পূর্ণভাবে তোমরা ধ্বংস ও অচিরে বিনষ্ট না হও। 21যে দেশ তোমরা অধিকার করতে যাচ্ছ সেই দেশ থেকে তোমাদের সমূলে উচ্ছেদ না করা পর্যন্ত প্রভু পরমেশ্বর মহামারীর দ্বারা তোমাদের পীড়ন করবেন। 22তিনি তোমাদের ক্ষয়রোগ, জ্বর, প্রদাহ, প্রচণ্ড তাপ, খরা, ঝড়, উদ্ভিদ বিধ্বংসী ছত্রাক রোগের দ্বারা আঘাত করবেন। বিনষ্ট না হওয়া পর্যন্ত এগুলির দ্বারা তোমরা বিপর্যস্ত হবে। 23তোমাদের মাথার উপরে আকাশ হবে তাম্রবর্ণ এবং নীচে পায়ের তলার মাটি হবে লোহার মত কঠিন। 24প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের দেশে বারি ধারার পরিবর্তে ধূলি বর্ষণ করবেন, তোমরা ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত আকাশ থেকে ধূলিবৃষ্টি হবে।
25প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের শত্রু হস্তে পরাজিত করবেন। তোমরা তাদের আক্রমণ করতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পালাতে বাধ্য হবে। পৃথিবীর সমস্ত রাজ্যে তোমরা হবে বিভীষিকা স্বরূপ। 26তোমাদের মৃতদেহ হবে আকাশের পাখি ও বন্য পশুদের ভক্ষ্য, সেগুলিকে তাড়িয়ে দেওয়ার কেউ থাকবে না। 27প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের মিশরীয় স্ফোটক, ক্ষত, পাঁচড়া ও চুলকানির দ্বারা পীড়িত করবেন, 28আরোগ্যের কোন উপায় থাকবে না। প্রভু তোমাদের উন্মত্ততা, দৃষ্টিহীনতা ও মানসিক বৈকল্যের দ্বারা আঘাত করবেন, তার ফলে 29তোমরা প্রকাশ্য দিবালোকে অন্ধের মত পথ হাতড়ে বেড়াবে কিন্তু পথ খুঁজে পাবে না। দিনের পর দিন তোমরা শুধু উৎপীড়িত ও লুন্ঠিত হবে, তোমাদের উদ্ধার করার কেউ থাকবে না। 30তোমরা বিবাহের সম্বন্ধ স্থির করবে কিন্তু অন্য লোকে তোমাদের বাগ্‌দত্তা বধূর সতীত্ব হরণ করবে। তোমরা বাড়ি তৈরী করবে, কিন্তু সেখানে বাস করতে পারবে না, তোমরা দ্রাক্ষাকুঞ্জ রচনা করবে কিন্তু তার ফল ভোগ করতে পারবে না। 31তোমাদের চোখের সামনে তোমাদের বৃষ হনন করা হবে কিন্তু তোমরা তার মাংস ভক্ষণ করতে পারবে না। তোমাদের সামনে থেকেই তোমাদের গর্দভ অপহৃত হবে, তোমরা তা আর ফিরে পাবে না। তোমাদের মেষপাল শত্রুরা দখল করে নেবে, সেগুলিকে উদ্ধার করার কেউ থাকবে না। 32তোমাদের চোখের সামনেই তোমাদের পুত্র-কন্যাদের অন্য জাতির হাতে তুলে দেওয়া হবে, তোমরা সারাদিন তাদের আশায় পথ চেয়ে থেকে হতাশ হবে, এ কাজে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা তোমাদের থাকবে না। 33তোমাদের অপরিচিত এক জাতি তোমাদের ক্ষেতের ফসল ও তোমাদের শ্রমের ফল ভোগ করবে, আর তোমরা ক্রমাগত উৎপীড়িত ও নিষ্পেষিত হতে থাকবে। 34সেই দৃশ্য দেখে তোমরা উন্মাদ হয়ে যাবে, 35যন্ত্রণাদায়ক বিস্ফোটক দ্বারা প্রভু তোমাদের হাঁটু ও পা আক্রান্ত করবেন, সেই রোগ আরোগ্যের কোন উপায় তোমাদের থাকবে না, তোমাদের পায়ের তলা থেকে মাথার তালু পর্যন্ত সেই ক্ষত বিস্তৃত হবে। 36প্রভু তোমাদের এবং যে রাজাকে তোমরা নিযুক্ত করবে তাকে এমন এক জাতির অধীনে সমর্পণ করবেন যাদের তোমরা কিম্বা তোমাদের পিতৃপুরুষেরা কেউ কখনও জান না এবং সেখানে তোমরা প্রভুকে পরিত্যাগ করে পাথর ও কাঠের তৈরী দেবতাদের পূজা করবে। 37প্রভু পরমেশ্বর যে সব জাতির মধ্যে তোমাদের বিক্ষিপ্ত করবেন, তারা তোমাদের দুরবস্থা দেখে আতঙ্কিত হবে, তোমরা হবে তাদের কাছে তাচ্ছিল্য ও উপহাসের পাত্র। 38তোমরা ক্ষেতে অনেক বীজ বপন করবে কিন্তু শস্য সংগ্রহ করবে সামান্যই কারণ পঙ্গপাল সেই শস্য গ্রাস করবে। 39তোমরা দ্রাক্ষাকুঞ্জ রচনা করবে, তার পরিচর্যাও করবে কিন্তু তোমরা দ্রাক্ষাসুরা পান করতে পারবে না কিম্বা সেখান থেকে দ্রাক্ষা সংগ্রহ করতে পারবে না, কারণ কীটে সব নষ্ট করে দেবে। 40সারা দেশে তোমরা জলপাই গাছের চারা লাগাবে কিন্তু তার তেল তোমরা ব্যবহার করতে পারবে না কারণ তোমাদের জলপাই সব অকালে ঝরে পড়বে। 41তোমাদের পুত্র ও কন্যা জন্মাবে কিন্তু তারা তোমাদের হবে না, বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হবে তাদের। 42তোমাদের গাছপালা ও ক্ষেতের ফসল সবই পঙ্গপালের গ্রাসে যাবে। 43তোমাদের মধ্যে বিদেশী যে থাকবে সে তোমাদের চেয়ে ক্রমশঃই উন্নত হতে থাকবে আর তোমরা ক্রমশঃ অবনতির পথে নেমে যাবে। 44সে তোমাদের ঋণ দেবে, কিন্তু অপরকে ঋণ দেওয়ার মত ক্ষমতা তোমাদের থাকবে না। তার স্থান হবে তোমাদের শীর্ষে আর তোমরা হবে তার অধীন। 45এই সব অভিশাপ তোমদের উপর নেমে আসবে, যতদিন না তোমরা ধ্বংস হয়ে যাও, ততদিন এর হাত থেকে তোমাদের অব্যাহতি নেই। কারণ তোমরা তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের কথায় কর্ণপাত কর নি, তিনি যে সব নির্দেশ ও অনুশাসন তোমাদের দিয়েছিলেন, তা তোমরা পালন কর নি। 46এগুলি তোমাদের ও তোমাদের বংশধরদের কাছে যুগে যুগে ঈশ্বরের উদাহরণ স্বরূপ হয়ে থাকবে।
47যেহেতু তোমরা সর্ব বিষয়ে প্রাচুর্য সত্ত্বেও সানন্দে ও প্রফুল্লচিত্তে তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর ভজনা কর নি, 48সেই হেতু তিনি তোমাদের শত্রুদের দ্বারা আক্রান্ত করবেন, তোমরা তাদের দাসত্ব করবে। তখন তোমরা ক্ষুধায়, তৃষ্ণায়, বিবস্ত্র অবস্থায় চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাবে। তোমরা ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত তিনি তোমাদের কাঁধে চাপিয়ে দেবেন লোহার জোয়াল। 49পৃথিবীর সুদূর প্রান্ত থেকে প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করবেন এক জাতিকে, তারা ঈগল পাখির মত তোমাদের উপর ছোঁ মারবে, তাদের ভাষা হবে তোমাদের কাছে দুর্বোধ্য, 50তারা হবে কঠোর প্রকৃতির লোক, বৃদ্ধদের তারা সম্মান করবে না, শিশুদের প্রতিও তাদের থাকবে না দয়ামায়া। 51তারা তোমাদের পালের পশু ও ক্ষেতের ফসল গ্রাস করবে, যতদিন না তোমরা ধ্বংস হয়ে যাও। তারা তোমাদের ফসল, সুরা, তেল, বাথানের গরু বাছুর, পালের ভেড়া কিছুই অবশিষ্ট রাখবে না যতদিন না তোমরা সম্পূর্ণ ধ্বংস হও।
52তারা তোমাদের সমস্ত নগর অবরোধ করবে এবং সারা দেশের উঁচু ও সুরক্ষিত যে সব প্রাচীরের উপর তোমরা ভরসা করতে, সেগুলি ভেঙ্গে ফেলবে। তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের যে দেশ দিয়েছিলেন, সেই দেশের সমস্ত জনপদগুলিতে তারা তোমাদের অবরোধ করবে। 53তোমরা তখন শত্রুদের দ্বারা অবরুদ্ধ অবস্থায় ক্ষুধায় অতিষ্ঠ হয়ে নিজেদের পুত্র-কন্যাদেরও মাংস ভক্ষণ করবে যাদের ঈশ্বরের দান স্বরূপ তোমরা পেয়েছিলে। 54তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে সহৃদয় ও সুশিক্ষিত ব্যক্তি সে-ও তার ভাই কিম্বা প্রিয়তমা পত্নী, কিম্বা তার অবশিষ্ট সন্তানদেরও তার খাদ্যের ভাগ দেবে না, 55এমনকি সে যখন তার নিজের সন্তানের মাংস ভক্ষণ করবে, তখন তারও কোন অংশ সে এদের কাউকে দেবে না, কারণ তোমাদের সমস্ত জনপদে শত্রুদের দ্বারা অবরুদ্ধ ও উৎপীড়িত হয়ে তার তখন কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না। 56তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে অভিজাত কোমলাঙ্গী রমণী, যে মাটিতে পা রাখে না পাছে পায়ে ব্যথা লাগে, 57সে-ও তার নবজাত সন্তানকে, প্রসবান্তিক গর্ভ পুষ্পের ভাগও তার প্রিয়তম স্বামী কিম্বা তার পুত্র কন্যাকে দেবে না, কারণ তোমাদের সমস্ত জনপদ শত্রুদের দ্বারা অবরুদ্ধ ও উৎপীড়িত হওয়ার ফলে খাদ্যাভাবে সে নিজেই গোপনে তা ভক্ষণ করবে।২ রাজা 6:28-29; বিলাপ 4:10
সাবধান বাণী
58এই পুস্তকে যে সমস্ত বিধান লিপিবদ্ধ করা হল তা যদি তোমরা সযত্নে পালন না কর, যদি তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের মহিমান্বিত ও ভয়াবহ নামের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন না কর, 59তাহলে তিনি তোমাদের ও তোমাদের বংশধরদের অকল্পনীয় দুর্দশার মধ্যে ফেলবেন, কঠোর ও দীর্ঘস্থায়ী হবে সেই দুর্দশা এবং মারাত্মক ও দুরারোগ্য ব্যাধির দ্বারা তিনি আক্রান্ত করবেন তোমাদের।
60তোমরা যার ভয়ে ভীত, মিশরের সেই বাধিগুলি দ্বারা তিনি তোমাদের আক্রান্ত করবেন এবং সেগুলি তোমাদের চিরসঙ্গী হবে। 61তোমাদের ধ্বংস করার জন্য এই বিধান পুস্তকে যে সব ব্যাধি ও দুর্দশার উল্লেখ নেই, সেগুলির দ্বারাও প্রভু তোমাদের আঘাত করবেন। 62তোমরা, একদা আকাশের নক্ষত্ররাজির মত অসংখ্য ছিলে কিন্তু তখন তোমাদের অতি অল্প সংখ্যক লোকই অবশিষ্ট থাকবে কারণ তোমরা তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের আদেশ পালন কর নি। 63প্রভু যেমন তোমাদের প্রতি প্রসন্ন হয়ে তোমাদের লোকসংখ্যা বৃদ্ধি করেছিলেন ও তোমাদের সমৃদ্ধি দান করেছিলেন, ঠিক তেমনি ভাবেই তিনি তোমাদের ধ্বংস ও উচ্ছেদ সাধন করে প্রীতিলাভ করবেন। যে দেশ তোমরা এখন দখল করতে যাচ্ছ, সেখান থেকে তখন তোমরা সমূলে উচ্ছিন্ন হবে। 64পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত সর্বজাতির মাঝে প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের বিক্ষিপ্ত করবেন এবং সেখানে তোমরা কাঠ ও পাথরের তৈরী দেবতাদের পূজা করবে, যাদের পরিচয় তোমরা কিম্বা তোমাদের পিতৃপুরুষেরা কখনও পাও নি। 65এই সব জাতির মাঝে বাস করে তোমরা কখনও শান্তি পাবে না এবং তোমাদের আপন বাসস্থান বলে কিছুই থাকবে না। সেখানে প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের হৃদয়ে উদ্বেগ, দৃষ্টিতে ক্ষীণতা ও প্রাণে বুভুক্ষার সঞ্চার করবেন। 66সেখানে তোমরা সর্বদা অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবন যাপন করবে, দিন ও রাত্রি তোমরা ভয়ে ভয়ে কাটাবে, জীবনের কোন নিরাপত্তা থাকবে না তোমাদের। 67তোমাদের মনের ভীতি ও যে সব দৃশ্য তোমরা চোখে দেখবে তার জন্য প্রতিদিন সকালে তোমরা বলবে, ‘হায় ঈশ্বর! এখন যদি সন্ধ্যা হত।’—এবং প্রতি সন্ধ্যায় তোমরা বলবে, ‘হায় ঈশ্বর! এখন যদি সকাল হত—’। 68প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের ক্রন্দনরত অবস্থায় সেই পথেই মিশরে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন, যে পথ সম্পর্কে আমি তোমাদের বলেছিলাম, ‘ এ পথে তোমাদের আর কখনও যাত্রা করতে হবে না।’ আর সেখানে তোমরা তোমাদের শত্রুদের কাছে নিজেদের ক্রীতদাস ও ক্রীতদাসীদের বিক্রি করতে চাইবে, কিন্তু কেউ তোমাদের কিনবে না।
 
 
 
দ্বিতীয় বিবরণ:29
 
 
 1মোয়াব দেশে থাকতে ইসরায়েলীদের সঙ্গে সম্বন্ধ স্থাপন করে প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে যে সব নির্দেশ দিয়েছিলেন সেগুলি ছাড়াও সিনাই পর্বতে প্রভু পরমেশ্বর ইসরায়েলীদের সঙ্গে যে সম্বন্ধ স্থাপন করেছিলেন, এ হল তারই বয়ান।
চতুর্থ বক্তৃতা
মোশির শেষ আবেদন
2মোশি ইসরায়েলীদের সকলকে ডেকে বললেন, তোমরা মিশর দেশে থাকতে প্রভু পরমেশ্বর ফারাও, তাঁর সমস্ত কর্মচারী ও সমগ্র দেশের যে দুর্দশা করেছিলেন তা তোমরা স্বচক্ষে দেখেছ। 3সেই সব মহাপরীক্ষা, অলৌকিক কীর্তিকলাপ এ অদ্ভুত নিদর্শনও তোমরা দেখেছ, 4কিন্তু প্রভু পরমেশ্বর আজও তোমাদের উপলব্ধি করার মন, দেখার চোখ ও শোনার মত কান দেন নি। 5চল্লিশ বছর ধরে আমি প্রান্তরে তোমাদের পরিচালনা করেছি, এর মধ্যে তোমাদের বসন জীর্ণ হয় নি কিম্বা তোমাদের পায়ের জুতো পুরানো হয় নি। 6তোমরা রুটি খাও নি, সুরা কিম্বা উত্তেজক কোন পানীয় পান কর নি, আর এর দ্বারাই তোমাদের জানা উচিত যে আমিই তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর।
7তোমরা এখানে আসার পর হিষবোণের রাজা সিহোন ও বাশানের রাজা ওগ আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছিল কিন্তু আমরা তাদের পরাস্ত করেছি।গণনা 21:21-35 8তাদের দেশ দখল করে আমরা রূবেণ ওগাদ গোষ্ঠী এবং মনঃশি গোষ্ঠীর অর্ধেক লোকজনের মধ্যে উত্তরাধিকার স্বরূপ বন্টন করে দিয়েছি।গণনা 32:33 9সুতরাং তোমাদের সকল প্রচেষ্টায় সাফল্য অর্জনের জন্যই এই সম্বন্ধের সমস্ত শর্ত তোমরা সযত্নে পালন করবে।
10আজ তোমরা সকলে তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছ, তোমাদের গোষ্ঠীপতিরা প্রবীণ নেতৃবৃন্দ ও কর্মকর্তারা, 11ইসরায়েল কুলের সমস্ত পুরুষ, বালক-বালিকা ও তোমাদের পত্নীরা, তোমাদের ছাউনিতে বিদেশী যারা কাঠ কাটে ও জল বয়ে আনে সকলেই উপস্থিত আছে, 12এবং তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের সঙ্গে আজ যে সম্বন্ধের শর্ত স্থির করতে চলেছেন তোমরা শপথ করে তা গ্রহণ করতে রাজী আছ। 13এই সম্বন্ধের ফলে তোমরা আজ থেকে তাঁর প্রজা হবে এবং তিনি হবেন তোমাদের ঈশ্বর—এই প্রতিশ্রুতি তিনি তোমাদের দিয়েছিলেন এবং তোমাদের পিতৃপুরুষ অব্রাহম, ইস্‌হাক ও যাকোবের কাছে এই শপথই তিনি করেছিলেন। 14আমি যে শুধু তোমাদের সঙ্গেই এই সম্বন্ধ স্থাপন করছি ও তোমাদের কাছেই এই শপথ করছি তা নয়, 15কিন্তু যারা আজ আমাদের সঙ্গে আমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে এবং যারা আজ আমাদের সঙ্গে নেই,তাদেরও সকলের সঙ্গে করছি।
16তোমরা জান মিশরে আমরা কিভাবে জীবন যাপন করতাম। বিভিন্ন জাতির মধ্য দিয়ে আসার সময় 17তাদের ঘৃণার্হ বস্তুগুলি—কাঠ, পাথর, রূপো ও সোনা দিয়ে তৈরী তাদের অসার প্রতিমাগুলি তোমরা দেখেছ। 18তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষ কিম্বা কোন নারী, কোন পরিবার কিম্বা গোষ্ঠী যদি থাকে, যাদের চিত্ত আমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের প্রতি বিমুখ হয়ে ঐ সমস্ত জাতির দেবতাদের পূজা করার জন্য উৎসুক হয়ে থাকে, যদি এই রকম তিক্ত ও বিষবৃক্ষের মূল তোমাদের মধ্যে থেকে থাকে,হিব্রু 12:15 19তাহলে সে যখন এই শপথবাক্য শুনবে তখন হয়তো মনে মনে সে নিজের স্বস্তিবাচন করে বলবে, ‘দুরন্ত মনের বাসনা অনুযায়ী চললেও আমি নিরাপদেই থাকব।’— কিন্তু এর ফলে ভালো-মন্দ সকলেরই ধ্বংস ডেকে আনা হবে। 20প্রভু পরমেশ্বর তাকে ক্ষমা করবেন না, তাঁর তীব্র রোষানল সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধূমায়িত হয়ে উঠবে এবং এই পুস্তকে লিখিত সমস্ত অভিশাপ তার উপর বর্তাবে। পৃথিবীর বুক থেকে প্রভু পরমেশ্বর তার নাম মুছে ফেলবেন। 21এই বিধানপুস্তকে বর্ণিত সম্বন্ধ স্থাপনের শপথবাক্য অনুযায়ী সমস্ত অভিশাপ তার উপরে বর্ষণ করার জন্য প্রভু পরমেশ্বর ইসরায়েলীদের সকল গোষ্ঠীর মধ্য থেকে তাকে পৃথক করবেন।
22পরবর্তী প্রজন্ম, তোমাদের ভাবী বংশধরেরা, এবং দূরবর্তী দেশ থেকে আগত বিদেশীরা এই দেশের দুর্দশা এবং এখানকার অধিবাসীদের প্রভু পরমেশ্বর যে ব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত করেছেন সব দেখবে, 23প্রভু তাঁর রোষ ও ক্রোধে সদোম, ঘমোরা, আদ্‌মা ও সবোয়িম নগরগুলি যে ভাবে ধ্বংস করেছিলেন সেইভাবে এদেশেও জ্বলন্ত গন্ধক ও লবণ বর্ষণে এমন ভাবে দগ্ধ হবে যে এখানে কোন কিছু বপন করা যাবে না, কোন তৃণগুল্মও উৎপন্ন হবে না।আদি 19:24-25 24এসব দেখে তারা এবং সর্বজাতির লোকই তখন বলবে, প্রভু পরমেশ্বর এ দেশের এমন দশা কেন করলেন? কি কারণে প্রজ্বলিত হল তাঁর এমন ভয়ঙ্কর ক্রোধ? 25লোকে তখন বলবে এদের পিতৃপুরুষদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর মিশর থেকে তাদের উদ্ধার করে আনার পর তাদের সঙ্গে যে সম্বন্ধ স্থাপন করেছিলেন, সেই সম্বন্ধের শর্ত এরা অমান্য করেছিল, তার ফলে এই অবস্থা। 26এরা প্রভু পরমেশ্বরের নিষিদ্ধ অন্যান্য দেবতাদের পূজা করতে শুরু করেছিল, এই দেবতাদের তারা জানত না। 27তাই এই দেশের বিরুদ্ধে প্রভু পরমেশ্বরের ক্রোধ প্রজ্বলিত হয়েছিল এবং এই পুস্তকে বর্ণিত সমস্ত অভিশাপ তিনি এই দেশের উপর বর্ষণ করেছিলেন। 28প্রচণ্ড রোষ ও ক্রোধে প্রভু এদেশ থেকে এদের উৎপাটন করে অন্য দেশে নির্বাসিত করেছেন, আজ পর্যন্ত তারা সেখানেই আছে।
29নিগূঢ় সমস্ত বিষয় আমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের অধিকারভুক্ত, কিন্তু যা কিছু প্রকাশিত তার সব কিছুর উপরই আমাদের ও আমাদের সন্তান সন্ততিদের চিরকাল অধিকার থাকবে। এই বিধিব্যবস্থার সব কিছুই আমাদের পালন করতে হবে।
 
 
 দ্বিতীয় বিবরণ:30
 
 1যে সব আশীর্বাদ ও অভিশাপ আজ আমি তোমাদের সামনে উল্লেখ করেছি, সেগুলি তোমাদের জীবনে নেমে আসবে। তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর যে সব জাতির মাঝে তোমাদের বিতাড়িত করবেন সেখানে থেকে যদি তোমরা চেতনা লাভ কর, 2তোমরা ও তোমাদের সন্তানেরা যদি মনে প্রাণে তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের কাছে ফিরে আস এবং আজ আমি তোমাদের যে সব নির্দেশ দিলাম, সর্বান্তঃকরণে যদি সেগুলি পালন কর, 3তাহলে তিনি তোমাদের দুর্দশার অবসান ঘটাবেন ও তোমাদের প্রতি করুণা প্রদর্শন করবেন। যে সব জাতির মধ্যে তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের বিক্ষিপ্ত করেছিলেন তাদের মধ্যে থেকে তিনি আবার তোমাদের সংগ্রহ করবেন। 4তোমরা যদি বিতাড়িত হয়ে পৃথিবীর প্রান্তে গিয়ে পড়, তাহলে সেখান থেকেও তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের সংগ্রহ করে আবার ফিরিয়ে আনবেন। 5তোমাদের পিতৃপুরুষেররা যে দেশ অধিকার করেছিল সেই দেশেই তিনি তোমাদের নিয়ে আসবেন। তোমরা সেই দেশ আবার অধিকার করবে, তিনি তোমাদের মঙ্গল করবেন, তোমাদের পিতৃপুরুষদের চেয়েও তিনি তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করবেন। 6তোমরা যাতে তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরকে সমগ্র মন-প্রাণ দিয়ে ভালবেসে জীবন লাভ করতে পার তার জন্য তিনি তোমাদের ও তোমাদের বংশধরদের হৃদয়ের সংস্কার সাধন করবেন।
7যারা তোমাদের নির্যাতন করেছে তোমাদের সেই শত্রুদের উপরে তখন তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর এই সমস্ত অভিশাপ বর্ষণ করবেন। 8তোমরা আবার তাঁর বাধ্য হবে এবং তাঁর সমস্ত নির্দেশ যা আমি আজ তোমাদের দিলাম সব পালন করবে। 9তোমাদের সকল কর্মপ্রচেষ্টায়, তোমাদের সন্তান ও পশুপালের বংশ বৃদ্ধিতে ও জমির ফসলে তিনি তোমাদের প্রচুর পরিমাণে সমৃদ্ধিশালী করবেন। তোমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি তিনি যেমন প্রসন্ন ছিলেন, তেমনি তোমাদেরও কল্যাণ সাধনে তিনি প্রীতিলাভ করবেন, 10যদি তোমরা তাঁর বাধ্য হও, এই বিধান-পুস্তকে লিখিত তাঁর সমস্ত নির্দেশ ও অনুশাসন মেনে চল এবং মনে প্রাণে তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরকে ভালবাস।
11আমি আজ তোমাদের যে নির্দেশ দিলাম তা তোমাদের পক্ষে দুঃসাধ্য নয় এবং তা তোমাদের আয়ত্তেরও বাইরে নয়। 12এটি স্বর্গে স্থাপিত নয় যে তোমরা বলবে, ‘আমাদের পক্ষে কে স্বর্গে গিয়ে এই নির্দেশ নিয়ে আসবে ও আমাদের কাছে ঘোষণা করবে যাতে আমরা তা পালন করতে পারি?’রোমীয় 10:6-8
13কিম্বা এ নির্দেশ সমুদ্রের ওপারে নেই যে তোমরা বলবে, ‘আমাদের পক্ষে কে সাগর পার হয়ে নিয়ে এসে আমাদের শোনাবে যাতে আমরা তা মেনে চলতে পারি?’
14কিন্তু সেই বাক্য তোমাদের অত্যন্ত নিকটেই আছে, তোমাদের ওষ্ঠাগ্রে, তোমাদের অন্তরে রয়েছে যেন তোমরা তা পালন করতে পার।
15দেখ, আজ আমি তোমাদের জীবন ও কল্যাণ এবং মৃত্যু ও অকল্যাণ বেছে নেওয়ার সুযোগ দিলাম। 16তোমরা যদি তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরকে ভালবাস, তাঁর পথে চল, তাঁর নির্দেশ যা আমি আজ তোমাদের দিচ্ছি, তাঁর বিধি ও অনুশাসন সব পালন কর, তাহলে তোমরা বাঁচবে ও বৃদ্ধিলাভ করবে। যে দেশ তোমরা অধিকার করতে যাচ্ছ সেখানে তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের আশীর্বাদ করবেন।
17কিন্তু যদি তোমাদের চিত্ত বিমুখ হয়, তোমরা যদি তাঁর বাধ্য না হয়ে অন্য দেবতাদের পূজা অর্চনা কর, 18তাহলে আমি তোমাদের আজ জানিয়ে দিচ্ছি যে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে, জর্ডন পার হয়ে তোমরা যে দেশ অধিকার করতে যাচ্ছ সেখানে তোমরা বেশীদিন স্থায়ী হবে না। 19স্বর্গ ও মর্ত্যকে সাক্ষী রেখে আমি আজ তোমাদের বলছি যে আমি আজ তোমাদের সামনে বেছে নেওয়ার জন্য জীবন ও মৃত্যু, আশীর্বাদ ও অভিশাপ রেখেছি। তোমরা জীবন বেছে নাও, তাহলে তোমরা ও তোমাদের সন্তানসন্ততিরা বাঁচবে। 20তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরকে ভালবাস, তাঁর বাধ্য হও, তাঁর প্রতি আসক্ত হও কেননা তিনিই তোমাদের জীবন। তাহলেই তোমাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহাম, ইস্‌হাক ও যাকোবকে যে দেশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রভু দিয়েছিলেন সেই দেশে তোমরা দীর্ঘকাল বাস করতে পারবে।আদি 12:7; 26:3; 28:13
 
 

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...