সাহরী খাওয়ার ফজিলত :

‘সেহরি’ আরবি শব্দটি সাহ্রুন মূল ধাতু থেকে নির্গত। সাহ্রুন-এর বাংলা অর্থ রাত্রি জাগরণ করা। বাংলা ভাষাভাষী মুসলিম সমাজে সেহরি শব্দটি একটি ধর্মীয় পরিভাষা হিসেবে বহল প্রচলিত। শাব্দিক দিক দিয়ে রাত্রিকালীন খাবারকে সেহরি বলা হয়। আর ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় রোজাদার ব্যক্তি রোজা রাখার উদ্দেশ্যে রাতের শেষভাগে সুবহে সাদিকের আগে যে খাবার গ্রহণ করে, তাকে সেহরি বলা হয়। সেহরিতে খাবারের তালিকায় যা-ই থাকুক না কেন, সেহরি অত্যন্ত বরকতময় একটি খাবার। তা ছাড়া রোজাদারের জন্য সেহরি খাওয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত। বিশেষ করে রোজাদার রোজা রাখার উদ্দেশ্যে রাতের শেষাংশে ঘুম থেকে জেগে খাবার গ্রহণ করা আল্লাহর বিধান পালনে বিশেষ তৎপরতা এবং আল্লাহর বিধানের সামনে নিজের আরাম-আয়েশকে কোরবানি করার শামিল। এ কারণেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রোজাদারকে অত্যন্ত ভালোবাসেন। তাই পেটে ক্ষুধা থাকুক বা না থাকুক, সেহরি বর্জন করা মোটেও উচিত নয়। খাওয়ার চাহিদা একেবারেই যদি না থাকে, তা হলেও ঘুম থেকে উঠে সামান্য হলেও কিছু খেয়ে নেওয়া উচিত। এর দ্বারা একদিকে রাসূলের সুন্নাতের ওপর আমল হবে এবং সেহরির বরকতও হাসিল হবে। সেহরির ফজিলত ও বরকত সম্পর্কে রাসূলে কারিম (সা.) থেকে বেশ কিছু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। নিচে আলোচ্য বিষয়ে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো :


হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তোমরা সেহরি খাও। কারণ, সেহরির মধ্যে বরকত রয়েছে।’ (সহিহ আল-বুখারী : ১৯২৩, সহিহ মুসলিম : ১০৯৫, ইবনে মাযা : ১৬৯২, তিরমিজি : ৭০৮) হজরত আমর ইবনুল আস থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমাদের রোজা ও আহলে কিতাবদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো, সেহরি খাওয়া।’ (মুসলিম : ১০৯৬, আবু দাউদ : ২৩৪৩, আস্-সুনানুল কুবরা : ২৪৮৭, মুসনাদে আহমাদ : ১৭৭৬২) অর্থাৎ আহলে কিতাবগণ সেহরি না খেয়ে রোজা পালন করে, অর্থাৎ তারা উপবাস চর্চা করে। তাই রাসূলের উম্মত হিসেবে প্রত্যেক মুসলমানের উচিত আহলে কিতাবদের অনুকরণ বর্জন করে রাসূলের সুন্নত পালন করে সেহরি খেয়ে রোজা রাখা।

বিলম্বে সেহরি খাওয়া সুন্নত : বিলম্ব করে সেহরি খাওয়া সুন্নত। অর্থাৎ রাতের একেবারে শেষভাগে সুবহে সাদিকের আগমুহূর্তে সেহরি খাওয়া সুন্নত। তবে দেরি করার অর্থ এতটা বিলম্ব করা নয়, যে সূর্য উঠে যাওয়ার সন্দেহ হয়। হজরত জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সেহরি খেলাম, অতঃপর নামাজে দাঁড়ালাম। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো, সেহরি খাওয়া ও নামাজে দাঁড়ানোর মধ্যে সময়ের কতটুকু ব্যবধান ছিল? তিনি উত্তরে বললেন, পঞ্চাশ আয়াত পাঠ করার মতো সময়ের ব্যবধান ছিল। (সহিহ আল-বোখারি : ১৯২১, সহিহ মুসলিম : ১০৯৭, মুসনাদে আহমাদ : ২১৬১৯, সুনানে দারেমি : ১৭৩৭) অনেকের ধারণা, ফজরের নামাজের আজান পর্যন্ত সেহরি খাওয়া যায়। এ ধারণা একেবারেই ভুল। কারণ, ফজরের আজান দেওয়া হয় সুবহে সাদিকের পরে। আর সেহরির শেষ সময় হলো, সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত। অতএব, আজানের সময় পর্যন্ত সেহরি খেতে থাকলে, অর্থাৎ সুবহে সাদিকের পরে সেহরি খেলে রোজা হবে না।

বিলম্বে সেহরি খাওয়ার সুফল : বিলম্ব করে সেহরি খাওয়াতে রাসূলের সুন্নতের ওপর আমল ছাড়াও একটি বিশেষ লাভ হলো, সুবহে সাদিকের আগ মুহূর্তে সেহরি খাওয়ার পরে অল্প সময়ের ব্যবধানে ফজরের আজান হয়ে যায়। তাই সেহরি শেষে তাড়াতাড়ি ফজরের নামাজ আদায় করে বেশ কিছুটা সময় বিশ্রাম নেওয়ার জন্য পাওয়া যায়। বিশ্রাম শেষে দিনের স্বাভাবিক কাজকর্মে আত্মনিয়োগ করলে তেমন কোনো অসুবিধা হয় না। বিপরীত দিকে সুবহে সাদিকের অনেক আগে সেহরি খেলে, ফজরের নামাজের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা বেশ কষ্টকর। আবার সেহরি খেয়ে ঘুমিয়ে গেলে ঘুম থেকে পুনরায় উঠে নামাজ পড়াটা আরো বেশি কষ্টকর। এ অবস্থাতে ফজরের নামাজ কাজা হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। আমাদের সমাজে অনেককে দেখা যায়, সারা রাত টিভি-সিনেমা দেখে অথবা গল্প-গুজব করে, আড্ডা মেরে সময় পার করে শেষ রাতে সেহরি খেয়ে ঘুমাতে যান। এটা খুবই খারাপ অভ্যাস। আল্লাহর হুকুম পালনের প্রস্তুতি আল্লাহর নাফরমানির মাধ্যমে জঘন্য পাপাচার ছাড়া অন্য কিছু নয়। তা ছাড়া ঘুম থেকে উঠে খাবার গ্রহণের নামই সেহরি এবং সেটাই সুন্নত। তবে কাউকে যদি পেশাগত দায়িত্ব পালনে অথবা কোনো জরুরি কারণে সারা রাত জেগে থাকতে হয়, তার ব্যাপারটা ভিন্ন। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে শরিয়তের বিধান অনুযায়ী ফরজ আমলগুলো আদায়ের তাওফিক দান করুন!



 সাহরি খাওয়া সুন্নত। সাহরিতে রয়েছে বরকত ও কল্যাণ। ইয়াহুদি-খ্রিস্টানরাও রোজা পালন করত কিন্তু তারা ভোররাতে সাহরি গ্রহণ করত না। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভোররাতে সাহরি খাওয়ার বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। যে কারণে সাহরি খাওয়া উম্মাহর জন্য সুন্নাত। সাহরি খাওয়ার ফজিলত ও গুরুত্ব হলো-

>> সাহরি পেট ভরে খাওয়া জরুরি নয় বরং ন্যূনতম এক ঢোক পানি পান করলেও সাহরির সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-  تسحروا فإن في السحور بركة  অর্থাৎ ‘তোমরা সাহরি খাও। কেননা, সাহরিতে বরকত রয়েছে। (মুসলিম)


>> অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সাহরি খাওয়া বরকতময় কাজ। সুতরাং তোমরা তা পরিত্যাগ করো না। এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও সাহরি কর। কারণ যারা সাহরি খায় আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন।’ (মুসনাদে আহমদ, মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, ইবনে হিব্বান)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সাহরি খাওয়ার ফলে হাদিসে ঘোষিত ফজিলত, বরকত ও কল্যাণ লাভে বিশ্বনবির সুন্নাত পালনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে সাহরি খাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।





No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...