উত্তর : জিরো থট বলতে আসলে তারা কি বুঝিয়ে থাকেন তা বিস্তারিত জানতে হবে। বিস্তারিত না জেনে বলা যাবে না। অবশ্য একজন বলেছেন, রাসুল সা: হেরা গুহায় ধ্যান মগ্ন হয়ে থাকতেন, এবং এরপর তার উপর কুরআন নাজিল হয়। এটাই মেডিটেশন।
কিন্তু উল্লেখ্য যে,
প্রথমত: কুরআন পাওয়ার পর তিনি আর কখনো হেরা গুহায় ধ্যান মগ্ন হয়ে থাকার জন্য যাননি। কুরআন তাকে হেরা গুহা থেকে বের করে সমাজের উন্মুক্ত প্রান্তরে এনে হাজির করে দেয়। সেখানে তিনি যুগের ভালো ব্যাক্তিদের একত্রিত করেন, এবং যারা কুরআনের বিরোধিতা করেছে, এ কুরআন তাদের সাথে তাকে দ্বন্দ, সংগ্রাম ও যুদ্ধে অবতীর্ণ করে দেয়। আল্লাহর জমিনে কুরআনের রাজ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এক মুহুর্তের জন্যও কুরআন তাকে বিশ্রাম নিতে দেয়নি। তাই বর্তমানে কুরআন বাহক জাতির দায়িত্ব তা-ই যা রাসুল সা: করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন।
দ্বিতীয়ত: মহান আল্লাহর গুণাবলী, কুরআনের আয়াত ও আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা গবেষণার কথা ইসলামে বলা হয়েছে। কিন্তু এই চিন্তা ও গবেষণা আসলে মেডিটেশন এর যে সংজ্ঞা দেওয়া হয় তার সাথে খাপ খায়না। এখানে মনকে খালি করার কথা বলা হয়নি, বরং, মনকে আল্লাহর গুণাবলী, বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে ভরপুর করার কথা বলা হয়েছে।
তৃতীয়ত: বরং, বিপরীতে, মনকে সমস্ত প্রকার সংশয় ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করে একজন মুমিন আল্লাহর উপর ভরসা করবে, কায়মনো বাক্যে নিজের অসহায়ত্ব আল্লাহর নিকট সোপর্দ করে আল্লাহর সাহায্য চাইবে, নিজের গুণাহের জন্য অসহায় হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমার জন্য ধর্ণা দেবে, নিজের যে কোনো চাহিদার জন্য আল্লাহর নিকট অসহায় হয়ে ধর্ণা দেবে। এগুলোই হচ্ছে ইসলামের আলোকে মেডিটেশন।
চতুর্থত: তাদের মতানুযায়ী, যদি জিরো থট দিয়ে যদি বুঝানো হয় মনকে সব কিছু থেকে খালি করে দেওয়া, তাহলে এটা আসলে ইসলাম সমর্থন করেনা। কারণ মুমিনের অন্তরে সর্বদা আল্লাহর স্মরণ কায়েম থাকবে। আর যদি জিরো থট দিয়ে যদি বুঝানো হয়, মনকে সর্বপ্রকার অসৎ চিন্তা, কুচিন্তা ইত্যাদি থেকে মুক্ত রেখে, আল্লাহর জিকরে মনকে মশগুল রাখা, তাহলে ঠিক আছে।
সুতরাং, প্রচলিত জিরো থট বা মেডিটেশন বলতে আসলে তারা কি বুঝাতে চান, ইসলামের সাথে তার কতটুকু সম্পর্ক আছে, তা বিচার বিবেচনা করতে হবে। তবে, আপাতত আমি যেটুকু জেনেছি, তাতে কোনো মিল পাইনি। বরং, বৈরাগ্যবাদ ইসলামে হারাম - এই কথার সাথে প্রচলিত মেডিটেশন ও জিরো থটের কিছু সামঞ্জস্যতার গন্ধ খুজে পেয়েছি।
No comments:
Post a Comment