তাকবিরে তাশরিক নিয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন- তোমরা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ কর। (সূরা বাকারা: ২০৩)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এখানে নির্দিষ্ট দিনগুলো দ্বারা উদ্দেশ্য-তাকবিরে তাশরিক পাঠের দিনসমূহ। ( সহীহ বুখারী, মারিফাতুস সুনানি ওয়াল আছার, হাদিস ১০৮৭২)
তাকবিরে তাশরিক পাঠের তাৎপর্য কী?
তাকবিরে তাশরিকের তাৎপর্য হলো- আল্লাহতায়ালার জিকির এবং তাওহিদের চেতনায় সর্বদা উজ্জীবিত থাকা এবং শিরকের পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত তাওহিদের শিক্ষায় উদ্ভাসিত ঈমানী জীবন গঠনের লক্ষ্যে সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টায় নিজেকে নিয়োজিত করা।
কারণ দ্বীন-ধর্ম ও আমল আখলাক সবকিছুর মূল হল, নির্ভেজাল তাওহিদ। এই বিশ্বাসে খুঁত থাকলে পর্বতসম আমলেরও কোনো মূল্য নেই।
তাই মুমিনের দিলে তাওহিদের শিক্ষাকে আরো মজবুত আরো শাণিত করতেই এই দিনগুলোতে অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির করতে বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
শ্রদ্ধা, ভক্তি ও বিশ্বাসের সবটুকু মিশিয়ে মুমিন বলবে- আল্লাহু আকবার ওয়াহদাকা লা-শারীকা লাকা।
বিশেষ করে এই দিনগুলোতে আল্লাহর জিকিরের প্রতি আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয়ার কারণ সম্পর্কে মুহাদ্দিস আল্লামা খাত্তাবী (রহ.) বলেন- বর্বরতার যুগে লোকেরা তাদের কথিত প্রভুদের নামে পশু-প্রাণী উৎসর্গ করত। এর প্রতি উত্তরে মুমিনদের প্রতি আদেশ করা হয়েছে তারা যেন আল্লাহর জিকির ও তাকবিরের মাধ্যমে তাওহিদ ও আনুগত্যের ঘোষণা প্রদান করে।
আল্লাহই একমাত্র ইলাহ। তার কোনো শরীক নেই। তিনি ছাড়া কারো নামে প্রাণী উৎসর্গ করা যাবে না। কারণ তা সুস্পষ্ট শিরক। (ফাতহুল বারী ২/৫৩৫)
তাকবিরে তাশরিক কী?
তাকবিরে তাশরিকের মূল কথা হলো- আল্লাহর জিকির তথা তার বড়ত্ব প্রকাশ করা। তবে,বিশেষ দিনে এই আমলের জন্য বিভিন্ন শব্দ হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে।
হাদিস বিশারদদের মতে সর্বোত্তম ও সর্বজনবিদিত শব্দ হলো- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওলিল্লাহিল হামদ। (তাবারানী মুজামে কাবীর: হাদিস: ৯৫৩৮, মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা: হাদিস: ৫৬৭৯)
তাকবিরে তাশরিক আদায়ের পদ্ধতি।
৯ ই জিলহজ ফজরের নামাজ হতে ১৩ ই জিলহজ আসর পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্তের ফরজ নামাজের পর কোন কথা বা সুন্নত নামাজ না পড়ে একবার করে তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব।
জামাতে নামাজ পড়া হোক বা একাকি, পুরুষ বা নারী, মুকীম বা মুসাফির সকলের উপর ওয়াজিব।
(এবছর এই আমল আমরা শুক্রবার ফজরের নামাজ থেকে পরবর্তী মঙ্গলবার আসরের নামাজসহ প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর সমস্বরে আদায় করব ইনশাআল্লাহ)
তাকবিরে তাশরিক পুরুষের জন্য জোরে পড়া ওয়াজিব। আস্তে পড়লে তাকবীরে তাশরীক পড়ার হক আদায় হবে না। আর মহিলারা নিচু আওয়াজে অর্থাৎ নিজে শুনতে পায় এমন আওয়াজে পড়বে।
শুধু পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক পড়তে হবে। বিতরের পর এবং অন্য কোনো সুন্নত বা নফলের পরে পড়ার নিয়ম সুন্নাহসম্মত নয়।
ইমাম তাকবির বলতে ভুলে গেলে মুক্তাদীরা ইমামের জন্য অপেক্ষা না করে নিজেরা তাকবির বলবেন।
কোনো সময় সকলেই বা কেউ কেউ তাকবির বলতে ভুলে গিয়ে মসজিদ থেকে বের না হয়ে গেলে তাকবির আদায় করে নিবে। আর যদি মসজিদ থেকে বের হয়ে যায় তাহলে এই ওয়াজিব ছুটে যাবে। এই ওয়াজিবের কোনো কাজা নেই এবং ওয়াজিব ছেড়ে দেয়ার কারণে ওই ব্যক্তি গুনাহগার হবে।
কোনো ব্যক্তির জামাত ছুটে গেলে ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর পর দাঁড়িয়ে স্বীয় নামাজ আদায় করার পর তাকবিরে তাশরিক বলবে।
৯ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত কোনো নামায কাজা হয়ে গেলে এবং ঐ কাজা এই দিনগুলোর ভিতরেই আদায় করলে সে কাজা নামাযের পরও তাকবিরে তাশরিক পড়বে।
হাজীদের ওপর ইহরাম অবস্থায় পূর্বোক্ত নিয়ম অনুযায়ী তাকবিরে তাশরিক পড়া ওয়াজিব।
ঈদুল আজহায় ঈদগাহে পৌঁছার আগ পর্যন্ত পথে পথে উচ্চস্বরে তাকবীর বলে বলে যাবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা: হাদিস ১৯২)
ঈদের দিন সাহাবায়ে কেরামের তাকবির ধ্বনিতে পুরো আশপাশ কেঁপে উঠত। আর এই তাকবির উচ্চ স্বরে বলার তাৎপর্য এটাও যে, এর দ্বারা ইসলামের তাওহিদের ঘোষণা প্রকাশ্যে উচ্চস্বরে দেওয়া হবে। গুনগুন শব্দে এর বহিঃপ্রকাশ কি সম্ভব? (ইসলাহী খুতবাত ২/১২৬-১২৯)
সার্বক্ষণিক জিকির ও তাকবিরের আমল ছাড়াও জিলহজের প্রাথমিক দিনগুলোর প্রায় প্রতিটি ইবাদত ও আমলের সাথে জিকির ও তাকবিরকে এমনভাবে জুড়ে দেয়া হয়েছে যেন সব আমল-ইবাদতের মূল কথা হল জিকরুল্লাহ, তাকবির ও তাওহিদ।
এজন্য এ সময়ের সকল ইবাদতের পরতে পরতে রয়েছে নির্ভেজাল তাওহিদের উপস্থিতি।
সাহাবায়ে কেরাম এই দিনগুলোতে সর্বদা আল্লাহু আকবারের ধ্বনি তুলতেন।
হযরত ইবনে উমর রা. ও আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বাজারে গিয়ে তাকবিরের আওয়াজ তুলতেন। শুনে শুনে লোকেরাও তাদের সাথে তাকবিরের সুর তুলত।
ইবনে ওমর রা. পথে-ঘাটে, বাজারে-ঘরে এবং নামাযের পরে শুধুই তাকবির বলতে থাকতেন। মিনার দিনগুলোতো তার তাকবিরের সাথে সমস্বরে মানুষের তাকবিরে মিনার প্রাঙ্গন মুখরিত হয়ে উঠত। মহিলারাও (নিচু স্বরে) তাকবীর বলতে থাকতেন। (সহীহ বুখারী;ফাতহুল বারী ২/৫৩০-৫৩৬)
তাই আসুন,তাকবিরে তাশরিকের যে বাক্যজুড়ে রয়েছে তাওহিদ,আল্লাহর বড়ত্ব ও প্রশংসার কথা;সে বাক্যে উচ্চকিত করে তুলি পৃথিবীর প্রতিটি জনপদ।
এ জিকির গুঞ্জরিত হোক, প্রতিটি মসজিদে, প্রতিটি মুসলিমের ঘরে; প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর, নারী-পুরুষ সকলের মুখে।
========================
তাকবিরে তাশরিক কী?
জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজর নামাজের পর থেকে নিয়ে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত সময়কে তাশরিকের দিন বলে এবং এই সময়ে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর অন্তত একবার ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ এই তাকবির পড়া ওয়াজিব। এটিকে তাকবিরে তাশরিক বলা হয়। (হেদায়া : ১/২৭৫)
তাকবিরে তাশরিকের পটভূমি
বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) বলেন, যখন হজরত ইবরাহিম (আ.) স্বীয় পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে জবাইয়ের উদ্দেশ্যে গলায় ছুরি রাখলেন, এদিকে আল্লাহর নির্দেশে হজরত জিবরাঈল (আ.) আসমান থেকে একটি দুম্বা নিয়ে দুনিয়ায় আগমন করছিলেন। কিন্তু জিবরাঈল (আ.)-এর আশঙ্কা ছিল, তিনি দুনিয়াতে পৌঁছার আগেই ইবরাহিম (আ.) জবাইপর্ব সমাপ্ত করে বসবেন। ফলে তিনি আসমান থেকে উঁচু আওয়াজে বলে উঠলেন : ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার।’ ইবরাহিম (আ.) আওয়াজ শুনে আসমানের দিকে নজর ফেরাতেই দেখতে পেলেন জিবরাঈল (আ.) একটি দুম্বা নিয়ে আগমন করছেন। ফলে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে উঠলেন : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর।’ পিতার কণ্ঠে এই কালিমা শুনতেই ইসমাঈল (আ.) উচ্চারণ করলেন : ‘আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ একজন ফেরেশতা আর দুজন প্রিয় নবীর এ বাক্যমালা আল্লাহর খুব পছন্দ হয়। তাই কিয়ামত পর্যন্ত এই বাক্যমালা আইয়ামে তাশরিকে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর পড়াকে ওয়াজিব করে দিয়েছেন। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ২/১৭৮, ইনায়া শরহুল হিদায়া : ১/৪৬৪)
তাকবিরে তাশরিকের ফজিলত
মহান আল্লাহ বলেন, ‘যেন তারা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।’ (সুরা হজ, আয়াত : ২৮)
বিখ্যাত সাহাবি মুফাসসির ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, এখানে ‘নির্দিষ্ট দিন বলতে ‘আইয়ামে তাশরিক’ ও ‘আল্লাহর স্মরণ’ বলতে তাকবিরে তাশরিক বোঝানো হয়েছে। (বুখারি, অধ্যায় দুই ঈদ)
এখানে নির্দিষ্ট দিনসমূহ দ্বারা আইয়ামে তাশরিক উদ্দেশ্য এবং জিকির দ্বারা তাকবিরে তাশরিক উদ্দেশ্য। (ইবনে কাসির)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, এই দিনগুলোতে তাকবিরে তাশরিকের আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমল উত্তম নয়। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, জিহাদও কি (উত্তম) নয়? নবী করিম (সা.) বলেন, ‘জিহাদও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে নিজের জান ও মালের ঝুঁকি নিয়ে জিহাদে যায় এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৯৬৯)
তাকবিরে তাশরিক সংক্রান্ত কিছু মাসায়েল
তাশরিকের দিনগুলোতে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর পুরুষদের ওপর উচ্চৈঃস্বরে একবার তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব। আর নারীরা নিচু স্বরে পড়বে, যাতে নিজে শোনে। ( শামি : ২/১৭৮)
ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়া হোক বা একাকী, ওয়াক্তের মধ্যে পড়া হোক বা কাজা, নামাজি ব্যক্তি মুকিম হোক বা মুসাফির, শহরের বাসিন্দা হোক বা গ্রামের—সবার ওপর ফরজ নামাজের পর একবার তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব। (দুররে মুখতার : ২/১৮০)
ফরজ নামাজের পর তাকবির বলতে ভুলে গেলে, স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকবির পড়ে নেবে। তবে হ্যাঁ, নামাজের বিপরীত কোনো কাজে লিপ্ত হয়ে গেলে, যেমন—কথা বলা, নামাজের স্থান থেকে উঠে পড়া ইত্যাদি হলে তাকবির বলতে হবে না, বরং ওয়াজিব ছুটে যাওয়ার কারণে আল্লাহর কাছে তওবা করবে। ( শামি : ৬/১৭৯)
========================
তাকবিরে তাশরিক ও ঈদ-উল-আজহা এক সুতোয় গাঁথা। তাকবিরে তাশরিকের ইতিহাস কুরবানির ঈদের সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িত। মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা ও প্রশংসায় ভরপুর তাকবিরে তাশরিক। কুরবানি বা আত্মত্যাগ হলো মহান আল্লাহর একন্ত আপন হওয়ার অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহর একান্ত প্রিয় হওয়ার ইবাদত পালনকালীন সময়েই তাকবিরে তাশরিকের প্রচলন শুরু হয়।
তাকবিরে তাশরিক প্রত্যেত হিজরি সালের জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজরের নামাজ থেকে শুরু করে ১৩ জিলহজ আসর নামাজ পর্যনর্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত পড়া ওয়াজিব। আর এ সময়ের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয় আত্মত্যাগের অন্যতম ইবাদত কুরবানি।
তাকবিরে তাশরিকের ৫ দিনের মধ্যে ৩ দিন কুরবানি করা যায়। তাকবিরে তাশরিকের আবশ্যকভাবে পড়া শুরু হওয়ার পেছনে রয়েছে আল্লাহর দুই প্রিয় পয়গাম্বরের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিক জড়িত। তাকবিরে তাশরিক যেভাবে শুরু হলো তা জানতে হলে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের জীবনের সেই গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি বিজড়িত ঘটনা উল্লেখ করা প্রয়োজন। আর তাহলো-
কুরবানির বিধান জারি করে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘অতঃপর সে (ইসমাইল) যখন পিতার সঙ্গে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইবরাহিম তাকে বলল, হে ছেলে! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে জবাই করছি; এখন তোমার অভিমত কি? সে বলল, হে পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যধারণকারীর দলভূক্ত পাবেন।’ (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০২)
হজরত ইবরাহিম আলাইহি সালাম স্বপ্নে প্রাণপ্রিয় সন্তান হজরত ইসমাইলকে আল্লাহর জন্য কুরবানি করার নির্দেশ পান। আল্লাহর পয়গাম্বর পুত্রকে তার স্বপ্নে বর্ণনা দিলে সন্তান একবাক্যে স্বপ্নে কার্যাদেশ বাস্তবায়নের অভিমত প্রকাশ করেন এবং নিজেকে ধৈর্যধারণকারীদের অন্তর্ভূক্ত পাওয়া যাবে বলেও আশ্বাস দেন।
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম যখন হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে কুরবানি করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখনই সূচনা হয় এ তাকবিরে তাশরিকের। যা কেয়ামত পর্যন্ত ইসলামে এ তাকবির প্রত্যেক বছর ৫ দিন পড়া ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়।
তাকবিরে তাশরিকের সূচনা
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম যখন শিশুপুত্র ইসমাইলকে কুরবানির নির্দেশ পালনে জরার করার জন্য মাটিতে শোয়ালেন, তখন আল্লাহ তাআলা হজরত জিবরিল আলাইহিস সালামকে বেহেশত থেকে দুম্বা নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন।
হজরত ইসমাইলকে জবাই করার আগে হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম যাতে দুম্বা নিয়ে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের ছুরির নিচে দুম্বা পৌঁছাতে পারেন এবং তাকবিরের আওয়াজ যেন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের কানে আসে, সে জন্য আকাশে থাকতেই আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে থাকেন-
اَللهُ اَكْبَر – اَللهُ اَكْبَر (আল্লাহু আকবার; আল্লাহু আকবার। অর্থ : আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান)
অতঃপর হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এ তাকবিরের আওয়াজ শুনে কাপড় দ্বারা আবৃত চোখ খুলে দেখলেন হজরত জিবরিল আলাইহি সালাম আনিত দুম্বা হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের পরিবর্তে কুরবানি হয়ে যায়। তখন তিনি তাওহিদের কালেমা ও তার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে বলেন-
لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ اَللهُ اَكْبَر (লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার। অর্থ : আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; আপনিই শ্রেষ্ঠ)
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে তাওহিদের কালেমা ও আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে দেখে হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রশংসা করে বলেন-
اَللهُ اَكْبَر وَ لِلهِ الْحَمْد (আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ। অর্থ : আল্লাহ মহান, সব প্রশংসা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য)
হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম, হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের তাকবির, তাওহিদের কালেমার প্রশংসা আল্লাহর কাছে এতই পছন্দনীয় হয়ে যায় যে, হজ পালনকারী, কুরবানি দাতাসহ মুসলিম উম্মাহর জন্য জিলহজ মাসের ৯-১৩ পর্যন্ত এ ৫ দিন তাকবিরে তাশরিক পড়া আবশ্যক হয়ে যায়।
সুতরাং এ তাকবিরে তাশরিক আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার অন্যতম টনিকও বটে। এ তাকবিরে তাশরিকের ভাব-মর্মার্থ ও শিক্ষা নিজেদের মধ্যে লালন করতে পারলেই কুরবানি তথা আত্মত্যাগ সফল হবে।
তাই মুসলিম উম্মাহর সব প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষ, মুকিম-মুসাফির, গ্রামবাসী-শহরবাসী এবং জামায়াতে কিংবা একাকি নামাজ আদায়কারী ব্যক্তির উচিত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর একবার করে তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা। আত্মত্যাগের শিক্ষা ও তাৎপর্য গ্রহণ করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাকবিরে তাশরিকের ইতিহাস জানার পর উল্লেখিত দিনগুলোতে শুকরিয়া হিসেবে এ ওয়াজিব কাজ যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করে তার একান্ত নৈকট্য অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
========================
No comments:
Post a Comment