প্রশ্ন: ৪৪৪ : দ্বীনী কাজের বিনিময়ে বা কুরআন শিক্ষা দিয়ে অর্থ / টাকা গ্রহণ করা যাবে কি ?

 প্রশ্ন-বিস্তারিত: ছালাম নিবেন আশা করি ভালো আছেন। কোরআন শিক্ষা করে কতটুকু পরিমান টাকা নেওয়া যাবে।দয়া করে জানাবেন।


উত্তর : ওয়া আলাইকুম আস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

মূলত: সুরা ইয়াসীন এর ২১ নং আয়াত সহ আরো কিছু আয়াত এবং হাদীস এবং ইমামগণের মতামত অনুযায়ী শুধু কুরআন শিক্ষা নয়, দ্বীনের কোন খিদমত করেই টাকা নেওয়া যাবে না। আপনি কুরআন ও দ্বীন শিখেছেন ইহকালীন ও পরাকালীন কল্যাণের জন্য এবং এই শিক্ষার হক্ব ও শুকরিয়া আদায় করবেন অন্যকে শিক্ষা দিয়ে (সুরা দুহা, আয়াত ১০ ও ১১ ) । এখন যে ব্যাক্তি এরূপ খিদমতে আত্মনিয়োগ করবে সর্বতোভাবে এবং এরূপ একদল লোকেরও সমাজে প্রয়োজন আছে, তাদের ব্যয়ভার রাষ্ট্রিয় বাইতুল মাল থেকে বহন করতে হবে, সমাজের কল্যাণে ও দ্বীন প্রচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে। কিন্তু যেহেতু এই মুহুর্তে সেই ব্যবস্থা নাই। তাই জীবন পরিচালনার জন্য ন্যুনতম অর্থ গ্রহণ করার অনুমতি আলেমগণ দিয়েছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এটা অনুমতি। কিন্তু এটাই নিয়ম, বা বাধ্যতামূলক, তা কিন্তু নয়। আলহামদুলিল্লাহ, এর পরেও যদি কেউ উপার্জনের সাধারণ পন্থা (ব্যবসা/চাকুরী/কৃষি) ইত্যাদি অবলম্বন করে এবং কুরআন শিক্ষা বা দ্বীন শিক্ষা বা ওয়াজ নছিহত এর ক্ষেত্রে কোনরূপ বিনিময় গ্রহণ করেনা, সে তো সোনায় সোহাগা। তার এরূপ নি:স্বার্থ খিদমত দ্বারা আসলেই সমাজে এই দাওয়াতের ও শিক্ষার প্রভাব পড়বে, সমাজে দ্বীন প্রতিষ্ঠা ত্বরান্বিত হবে এবং পরকালেও সে প্রভূত কল্যাণের অধিকারী হবে, ইনশাআল্লাহ। দ্বীনের এরূপ দায়ীদের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ তার নিজের কাছে যে “উজর” রেখেছেন তা তাকে দুনিয়ায় ও আখিরাতে কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে মহান আল্লাহ তাকে দান করবেন বলে আশা করা যায়, ইনশাআল্লাহ। ওয়াল্লাহু আ’লামু বিচ্ছাওয়াব।



১।  

اتَّبِعُوا مَن لَّا يَسْأَلُكُمْ أَجْرًا وَهُم مُّهْتَدُونَ [٣٦:٢١]

(৩৬-সুরা ইয়াসিন:২১.) যারা তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চায় না এবং সঠিক পথের অনুসারী, তাদের কথা মেনে নাও।১৭ 

( অর্থাৎ,  তাঁর প্রচেষ্টা ও সংগ্রামের পেছনে কোন ব্যক্তিগত স্বার্থের লেশমাত্রও নেই। এরপর কোন বিবেকবান ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি তাঁদের কথা প্রত্যাখ্যান করবে কিসের ভিত্তিতে?) 



২। 

وَأَمَّا السَّائِلَ فَلَا تَنْهَرْ [٩٣:١٠]

(৯৩-সুরা দুহা:১০.) প্রার্থীকে তিরস্কার করো না।১০ 

টিকা:১০) এর দু’টি অর্থ হয়। যদি প্রার্থীকে সাহায্য প্রার্থনাকরী অভাবী হিসেবে ধরা হয় তাহলে এর অর্থ হয়, তাকে সাহায্য করতে পারলে করো আর না করতে পারলে কোমল স্বরে তাকে নিজের অক্ষমতা বুঝিয়ে দাও। কিন্তু কোনক্রমে তার সাথে রূঢ় ব্যবহার করো না। এই অর্থের দিক দিয়ে নির্দেশটিকে আল্লাহর সেই অনুগ্রহের জবাবে দেয়া হয়েছে বলা যেতে পারে, যাতে বলা হয়েছে “তুমি অভাবী ছিলে তারপর আল্লাহ‌ তোমাকে ধনী করে দিয়েছেন। আর যদি প্রার্থীকে জিজ্ঞেসকারী অর্থাৎ দ্বীনের কোন বিষয় বা বিধান জিজ্ঞেসকারী অর্থে ধরা হয় তাহলে এর অর্থ হয়, এই ধরনের লোক যতই মূর্খ ও অজ্ঞ হোক না কেন এবং যতই অযৌক্তিক পদ্ধতিতে সে প্রশ্ন করুক বা নিজের মানসিক সংকট উপস্থাপন করুক না কেন, সকল অবস্থায়ই স্নেহশীলতা ও কোমলতা সহকারে তাকে জবাব দাও এবং জ্ঞানের অহংকারে বদমেজাজ লোকদের মতো ধমক দিয়ে বা কড়া কথা বলে তাদেরকে তাড়িয়ে দিয়ো না। এই অর্থের দিক দিয়ে এই বাণীটিকে আল্লাহর সেই অনুগ্রহের জবাবে দেয়া হয়েছে বলা যেতে পারে, যাতে বলা হয়েছে---“তুমি পথের খোঁজ জানতে না তারপর তিনিই তোমাকে পথনির্দেশনা দিয়েছে।” হযরত আবু দারদা(রা.), হাসান বসরী (র), সুফিয়ান সওরী (র) এবং অন্যান্য কয়েকজন মনীষী এই দ্বিতীয় অর্থটিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কারণ তাদের মতে বক্তব্য বিন্যাসের দিক দিয়ে বিচার করলে এ বক্তব্যটি ( وَوَجَدَكَ ضَآلاًّ فَهَدٰى ) এর জবাবেই দেয়া হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।


৩। 

وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ [٩٣:١١]

(৯৩-সুরা দুহা:১১.) আর নিজের রবের নিয়ামত প্রকাশ করো।১১ 

 টিকা:১১) নিয়ামত শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক। এর অর্থ এমন সব নিয়ামত হয়, যা এই সূরাটি নাযিল হওয়ার সময় পর্যন্ত আল্লাহ‌ তাঁর রসূলকে দান করেছিলেন। আবার এমন সব নিয়মিতও হয়, যা এই সূরায় প্রদত্ত নিজের ওয়াদা এবং পরবর্তীকালে তা পূর্ণতা দান প্রসঙ্গে তিনি রসূলকে প্রদান করেছিলেন। এর ওপর আবার হুকুম দেয়া হয়েছে, হে নবী! আল্লাহ‌ তোমাকে যেসব নিয়মিত দান করেছেন তার প্রত্যেকটির কথা স্মরণ কর। এ নিয়ামত বিশেষ আকারে নিজেকে প্রকাশ করতে চায়। সামগ্রিকভাবে সমস্ত নিয়ামত প্রকাশের পদ্ধতি নিম্নরূপঃ মুখে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবেএবং একথার স্বীকৃতি দিতে হবে যে, আমি যেসব নিয়ামত লাভ করেছি সবই আল্লাহর মেহেরবানীও অনুগ্রহের ফল। নয়তো এর মধ্যে কোনো একটিও আমার নিজের ব্যক্তিগত উপার্জনের ফসল নয়। দাওয়াতও তাবলীগের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করে নবুওয়াতের নিয়ামত প্রকাশ করা যেতে পারে। লোকদের মধ্যে বেশী বেশী করে কুরআন প্রচার করে এবং তার শিক্ষাবলীর সাহায্যে মানুষের হৃদয়দেশ আলোকিত করে কুরআনের নিয়ামত প্রকাশ করা যেতে পারে। পথহারা মানুষদের সরল সত্য পথ দেখিয়ে দিয়ে এবং সবরের সাহায্যে এই কাজের যাবতীয় তিক্ততা ও কষ্টের মোকাবেলা করে হেদায়েত লাভের নিয়ামত প্রকাশ করা যেতে পারে। এতিম অবস্থায় সাহায্য-সহায়তা দান করে আল্লাহ‌ যে অনুগ্রহ দেখিয়েছেন এতিমদের সাথে ঠিক তেমনি অনুগ্রহপূর্ণ ব্যবহারকরে এই নিয়ামতটি প্রকাশ করা যেতে পারে। দারিদ্র্য ও অভাব থেকে সচ্ছলতাও ধনাঢ্যতা দান করার জন্য যে অনুগ্রহ আল্লাহ‌ করেছেন অভাবী মানুষদের সাহায্য করেই সেই নিয়ামত প্রকাশ করা যেতে পারে। মোটকথা, আল্লাহ‌ তাঁর অনুগ্রহ ও নিয়ামতসমূহ বর্ণনা করার পর একটি সংক্ষিপ্ত বাক্যের মাধ্যমে তাঁর রসূলকে এই গভীর ও ব্যাপক অর্থপূর্ণ হেদায়াত দান করেন। 



No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...