প্রশ্ন: ৪১৪ : সাদা স্রাব সম্পর্কিত ।

 

সাদা স্রাব সম্পর্কিত বিস্তারিত মাসয়ালা

আজকাল সাদা স্রাব এর ব্যাপারে অনেক আপুরাই কনফিউশন এ ভোগেন তাদের জন্য পুরো মাসআলা বিস্তারিত লিখলাম

#অজু ভঙ্গের কারণ সমূহের মাঝে প্রথম কারনই হলো সাবিলাইন অর্থাৎ পেশাব পায়খানার রাস্তা দিয়ে কিছু বের হওয়া….
পেশাব পায়খানার রাস্তা দিয়ে কিছু বের হলে অজু করতে হবে।
অর্থাৎ এই দুই রাস্তা দিয়ে পেশাব পায়খানা ছাড়াও অন্য যা কিছু বের হোক অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে।
চাই তা হোক রক্ত,বীর্য,মযি,সাদা স্রাব, ইত্যাদি।
(الفقه الاسلام و ادلته ١/٣٧٢،ما لا بد منه)

#আর এই দুই স্থান হতে যে কোন কিছু সামান্য পরিমান ও বের হলে অজু ভেঙ্গে যায়।
এবং নামাজে অজু ভাঙ্গলে নামাজ ও ভেঙ্গে যাবে।
-হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তির ওযূ নষ্ট হয়ে গেলে পুনরায় ওযূ না করা পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা তার নামায কবুল করেন না।
(সহীহ। আবু দাউদ,৫৪)

#তবে হায়েজা নারীর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মেয়াদ এর কম বা বেশিদিন রক্ত প্রবাহিত হওয়াকে আল্লাহর রাসূল ইস্তেহাজা বলে আখ্যায়িত করে ওই দিন গুলোর জন্য হুকুম দিয়েছেন যে রক্ত চলা অবস্থাতেই প্রতি ওয়াক্তে অজু করে নামাজ পড়ে নিবে।
-হাদিসে আছে, একদা ফাতিমাহ বিনতে আবূ হুবায়শ (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার রক্তস্রাব হতেই থাকে এবং আমি কখনো পবিত্র হতে পারি না। আমি কি সলাত ছেড়ে দিবো?
তিনি বলেন- না, এটা এক প্রকার শিরাজনিত রোগ,
এটা হায়িযের রক্ত নয়।
তুমি তোমার হায়েযের মেয়াদকাল সলাত থেকে বিরত থাকো, অতঃপর গোসল করো এবং প্রতি ওয়াক্ত সলাতের জন্য উযু করে সলাত পড়ো,
( সহীহ,ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৬২৪)
এই মাসআলা থেকে মাজুর হওয়ার মাসআলা পাওয়া যায়।

#এবার বলি মূল বিষয় তথা মেয়েদের সাদা স্রাব বের হওয়া যাকে লিউকোরিয়া বলে,

#সাদা_স্রাবের_মাসআলা_হলো
– কারো যদি এত বেশি সাদা স্রাব নির্গত হতে থাকে যে, কোন নামাজের সম্পূর্ন ওয়াক্তের মাঝে এত টুকু সময় বিরত হয়না যার মাঝে সে তাড়াতাড়ি করে অজুর ফরজ অংঙ্গগুলো ধুয়ে ফরজ নামাজ আদায় করতে পারে।
এরুপ হলে সেই মেয়ে মাজুর (অক্ষম) বলে গন্য হবে এবং মাজুর ব্যাক্তি প্রতি ওয়াক্ত এর জন্য অজু করবে…
এবং অজুর পূর্বে স্রাব ধুয়ে নিবে।
এবং পাক পায়জামা পড়বে।
তারপর নামাজের মাঝে সাদা স্রাব বের হলেও নামাজ ভাঙ্গবেনা, ওভাবেই নামাজ পড়ে নিবে।
এবং সাদা স্রাব বের হওয়া ছাড়া অন্য কোন অজু ভঙ্গকারী কিছু পাওয়া না যায় তাহলে এই ওয়াক্তে যত খুশি নামাজ পড়তে পারবে।
কুরআন তেলাওয়াত করতে পারবে।
আর যদি এরপর কখনো এমন একটা ওয়াক্ত অতিবাহিত হয় যার মাঝে একবার ও ওই কারন পাওয়া না হয়।
অর্থাৎ একবার ও সাদা স্রাব বের না হয়।
তাহলে সে আর মাজুর থাকবেনা।
এখন যদি কারো অবস্থা মাজুর এর হয়ে থাকে তাহলে এই হুকুম।

– আর যদি মাজুর হওয়ার অবস্থা না হয়ে থাকে তাহলে প্রতি ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর থেকেই অজু করতে হবে।
নামাজে সাদা স্রাব বের হলে নামাজ ভেংঙ্গে যাবে এবং তখন আবারো অজু করতে হবে আর পায়জামায় তা লেগে থাকলে তাও পালটে নিতে হবে।
তবে সামান্য তথা কয়েনের চেয়ে কম লাগলে ওই পায়জামা পড়েই নামাজ হবে।
যদিও পালটে পড়াই উত্তম।
এভাবে কয়েকবার অজু করে ফরজ পড়া গেলে কস্ট হলেও কয়েকবার অজু করতে হবে।

(اپكي مسائل اور انكا حل ج/٣)
( فقه النساء)

প্রশ্ন

প্রশ্ন: আমি ওজু করে কুরআন শরিফ পড়া শুরু করেছি। কুরআন শরিফ পড়ার মাঝখানে যদি সাদা স্রাব নির্গত হয় তাহলে কি কুরআন শরিফ পড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য পুনরায় ওজু করতে হবে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।.

আলহামদুলিল্লাহ।

এক:

লঘু অপবিত্রতা নিয়ে স্পর্শ না করে কুরআন শরিফ পড়া জায়েয আছে। অনুরূপভাবে তাফসির গ্রন্থসমূহ স্পর্শ করা এবং সেখান থেকে কুরআন পড়া জায়েয আছে। 

দুই:

জরায়ু থেকে নির্গত সাদা স্রাব পবিত্র। তবে এটি বের হলে ওজু ভাঙ্গবে কিনা এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। জমহুর আলেমের মতে, এটি ওজু ভঙ্গকারী। যদি কারো ক্ষেত্রে এটি লাগাতরভাবে বের হতে থাকে তবে তার ক্ষেত্রে ‘প্রস্রাবে অসংযম’ রোগীর বিধান প্রযোজ্য হবে। এমন নারী প্রতি ওয়াক্তের নামাযের জন্য নতুন করে ওজু করবেন এবং এ ওজু দিয়ে ফরজ বা নফল যত রাকাত নামায পড়তে চান পড়ে নিবেন, কুরআন শরিফ স্পর্শ করতে পারবেন। এ সময় স্রাব নির্গত হতে থাকলেও কোন অসুবিধা নেই।


প্রশ্ন

প্রশ্ন: আমি জানি না নারীদের থেকে নির্গত তরলকে কখন বীর্য ধরা হয়; যার ফলে গোসল ফরয হয়। আর কখন সেটাকে সাধারণ স্রাব ধরা; যার ফলে ওজু ফরয হয়। আমি একাধিকবার বিষয়টি জানার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কেউ আমাকে যথাযথ জবাব দেয়নি। তাই আমি নির্গত সকল তরলকে সাধারণ স্রাব ধরি; যা বের হলে গোসল ফরয হয় না। আমি শুধু সঙ্গম করা ছাড়া গোসল করি না। আশা করব, আপনার এ দুটোর মধ্যকার পার্থক্য পরিস্কারভাবে উল্লেখ করবেন।

আলহামদু লিল্লাহ।.

আলহামদুলিল্লাহ।

নারীর জরায়ু থেকে নির্গত তরল হতে পারে বীর্য, হতে পারে মযী বা কামরস, হতে পারে সাধারণ স্রাব। এ তিনটির প্রত্যেকটির রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও প্রত্যেকটির রয়েছে স্বতন্ত্র বিধিবিধান।

বীর্য এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-

১। হলুদ রঙের পাতলা। এ বৈশিষ্ট্যটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে- “নিশ্চয় পুরুষের পানি ঘন সাদা। আর মহিলার পানি পাতলা ও হলুদ রঙের।”[সহহি মুসলিম (৩১১)]

২। বীর্যের গন্ধ গাছের মঞ্জরির মত। আর মঞ্জরির গন্ধ ময়দার খামিরের কাছাকাছি।

৩। সুখানুভূতির সাথে বের হওয়া এবং বের হওয়ার পর যৌন নিস্তেজতা আসা।

এ তিনটি বৈশিষ্ট্য একত্রে পাওয়া শর্ত নয়। বরং একটি পাওয়া গেলেই সে তরলকে বীর্য হিসেবে সাব্যস্ত করা হবে। ইমাম নববী তাঁর ‘আল-মাজমু’ নামক গ্রন্থে (২/১৪১) এ কথা বলেছেন।

কামরস:

সাদা স্বচ্ছ পিচ্ছিল পানি। যৌন উত্তেজনার সময় এটি বের হয়; যৌন চিন্তার ফলে কিংবা অন্য কোন কারণে। এটি বের হওয়ার সময় সুখানুভূতি হয় না এবং এটি বের হওয়ার পর যৌন নিস্তেজতা আসে না।

সাদা স্রাব:

গর্ভাশয় থেকে নির্গত পদার্থ, যা স্বচ্ছ। হতে পারে এটি বের হওয়ার সময় নারী টেরও পায় না। এক মহিলা থেকে অপর মহিলার ক্ষেত্রে এটি বের হওয়ার পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে।

পক্ষান্তরে, এ তিনটি তরল (বীর্য, কামরস ও স্রাব) এর মাঝে হুকুমগত দিক থেকে পার্থক্য হচ্ছে-

বীর্য পবিত্র। বীর্য কাপড়ে লাগলে সে কাপড় ধোয়া ফরয নয়। তবে, বীর্য বের হলে গোসল ফরয হয়; সেটা ঘুমের মধ্যে বের হোক কিংবা জাগ্রত অবস্থায়; সহবাসের কারণে বের হোক কিংবা স্বপ্নদোষের কারণে কিংবা অন্য যে কোন কারণে।

আর কামরস বা মযী নাপাক। এটি শরীরে লাগলে ধুয়ে ফেলা ফরয। কাপড়ে লাগলে কাপড় পবিত্র করার জন্য পানি ছিটিয়ে দেয়া যথেষ্ট। কামরস বের হলে ওজু ভেঙ্গে যাবে। কামরস বের হওয়ার কারণে গোসল ফরয হয় না।

পক্ষান্তরে, স্রাব পবিত্র। এটি ধৌত করা কিংবা কাপড়ে লাগলে সে কাপড় ধৌত করা আবশ্যক নয়। তবে, এটি ওজু ভঙ্গকারী। তবে এটা যদি চলমানভাবে বের হতে থাকে তাহলে সে মহিলা প্রত্যেক নামাযের জন্য ওয়াক্ত হওয়ার পর নতুন করে ওজু করবে। ওজু করার পর স্রাব বের হলেও কোন অসুবিধা নেই।


No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...