প্রশ্ন : আমি আমার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এশার ও তারাবির নামাজ জামাতে আদায় করেছি। আমাদের এই নামাজ কি হয়েছে?
উত্তর : আমরা ধরেই নিলাম, আপনি হয়তো বিশেষ কোনো কারণে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে নামাজ আদায় করেছেন। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই আপনি মসজিদে না গিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে বাসায় নামাজ পড়বেন, এই কাজটি সঠিক নয়।
যদি বিশেষ কোনো কারণে এশার নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতে আদায় করতে না পারেন, তাহলে আপনি আপনার স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারবেন। তবে স্ত্রীকে দাঁড়াতে হবে আপনার পেছনে, সে আপনার পাশে দাঁড়াতে পারবে না। আর যদি ধরুন আপনার দুই ছেলে আছে এবং তারাও জামাতে দাঁড়িয়েছে, তাহলে আপনার ছেলেরা পেছনে দাঁড়াবে, তারপর আপনার স্ত্রী দাঁড়াবে। এ ক্ষেত্রে আপনার মেয়েও আপনার স্ত্রীর পাশে দাঁড়াতে পারবে।
(ড. মুহাম্মদ মতিউল ইসলাম।)
প্রশ্ন : স্বামী এবং স্ত্রী মিলে জামায়েতের সাথে সালাত আদায় করা যাবে কী?
প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:১০ এএম
উত্তর : মসজিদের জামাতের বিকল্প হিসাবে এ জামাত চলবে না। যদি কোনো কারণে ঘরেই নামাজ পড়তে হয়, আর তা জামাতে পড়ে সেটা গ্রহণযোগ্য। ফরজ নামাজ ছাড়া তো আর কোনো নামাজে জামাত নেই। ফরজ নামাজ যখন ঘরে পড়ার মত কারণ ঘটে তখন স্বামী স্ত্রী মিলেও জামাত পড়া যায়। তবে, ইমাম অবশ্যই স্বামীকে হতে হবে। দুই ব্যক্তি জামাত করলে যেভাবে একই কাতারে দাঁড়ায়, স্ত্রী এভাবে দাঁড়াবে না। স্ত্রী জামাতের সময় বরাবর না দাঁড়িয়ে পেছনে দাঁড়াবে।
সূত্র : জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামী ফিক্হ ও ফাতাওয়া বিশ্বকোষ।
উত্তর দিয়েছেন : আল্লামা মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভী
স্বামী ও স্ত্রী একসাথে নামাজ আদায় করতে পারবে কি?
১। ইমামের সাথে মাত্র একজন মুক্তাদী (পুরুষ বা শিশু) হলে উভয়ে একই সাথে সমানভাবে দাঁড়াবে; ইমাম বাঁয়ে এবং মুক্তাদী হবে ডানে। এ ক্ষেত্রে ইমাম একটু আগে এবং মুক্তাদী একটু পিছনে আগাপিছা হয়ে দাঁড়াবে না। ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে মহানবী (সাঃ) নিজের বরাবর দাঁড় করিয়েছিলেন। (বুখারী ৬৯৭নং) মৃত্যুরোগের সময় তিনি আবূ বাক্র (রাঃ)-এর বাম পাশে তাঁর বরাবর এসে বসেছিলেন।
(ঐ ১৯৮নং)
নাফে’ বলেন, ‘একদা আমি কোন নামাযে আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ)-এর পিছনে দাঁড়ালাম, আর আমি ছাড়া তাঁর সাথে অন্য কেউ ছিল না। তিনি আমাকে তাঁর হাত দ্বারা তাঁর পাশাপাশি বরাবর করে দাঁড় করালেন।’ (মালেক, মুঅত্তা ১/১৫৪)।
অনুরুপ বর্ণিত আছে হযরত উমার (রাঃ) কর্তৃকও।
এ জন্যই ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ গ্রন্থে উক্ত বিষয়ক পরিচ্ছেদ বাঁধার সময় বলেন, ‘দুজন হলে (মুক্তাদী) ইমামের পাশাপাশি তার বরাবর ডান দিকে দাঁড়াবে।’
(বুখারী ৬৯৭, সিলসিলাহ সহীহাহ,
আলবানী ২৫৯০ নং, ৬/১৭৫-১৭৬)
জ্ঞাতব্য যে, একক মুক্তাদীর ইমামের ডানে দাঁড়ানো সুন্নত বা মুস্তাহাব। অর্থাৎ, যদি কেউ ইমামের বামে দাঁড়িয়ে নামায শেষ করে, তাহলে ইমাম-মুক্তাদী কারো নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৩৭৫, সালাতুল জামাআতি হুকমুহা অআহকামুহা, ডক্টর সালেহ সাদলান ১১১পৃ:)
২। মুক্তাদী ২ জন বা তার বেশী (পুরুষ) হলে ইমামের পশ্চাতে কাতার বাঁধবে।
জাবের (রাঃ) বলেন, একদা মহানবী (সাঃ) মাগরেবের নামায পড়ার জন্য দাঁড়ালেন। এই সময় আমি এসে তাঁর বাম দিকে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে তাঁর ডান দিকে দাঁড় করালেন। ইতিমধ্যে জাব্বার বিন সাখার (রাঃ) এলেন। তিনি তাঁর বাম দিকে দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি আমাদের উভয়ের হাত ধরে ধাক্কা দিয়ে তাঁর পশ্চাতে দাঁড় করিয়ে দিলেন। (মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান,
মিশকাত :১১০৭নং)
উল্লেখ্য যে, দুই জন মুক্তাদী যদি ইমামের ডানে-বামে দাঁড়িয়ে নামায পড়ে তাহলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৩৭০)।
নামায হয়ে যাবে, কারণ ইবনে মাসঊদ আলক্বামাহ্ ও আসওয়াদের মাঝে দাঁড়িয়ে ইমামতি করেছেন এবং তিনি নবী (সাঃ)-কে ঐরুপ দাঁড়াতে দেখেছেন। (আবূদাঊদ, সুনান, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৫৩৮নং)।
অবশ্য মহানবী (সাঃ)-এর সাধারণ সুন্নাহ্ হল, তিন জন হলে একজন সামনে ইমাম এবং দুই জনের পিছনে কাতার বাঁধা। পক্ষান্তরে আগে-পিছে জায়গা না থাকলে তো এক সারিতে দাঁড়াতে বাধ্যই হবে।
৩। মুক্তাদী একজন মহিলা হলে (সে নিজের স্ত্রী হলেও) ইমাম (স্বামীর) পাশাপাশি বরাবর না দাঁড়িয়ে তার পিছনে দাঁড়াবে। (আদাবুয যিফাফ, আলবানী ৯৬পৃ: দ্র:)।
৪। মুক্তাদী দুই বা ততোধিক পুরুষ হলে এবং একজন মহিলা হলে, ইমামের পিছনে পুরুষরা কাতার বাঁধবে এবং মহিলা সবশেষে একা দাঁড়াবে।
একদা হযরত আনাস (রাঃ)-এর ঘরে আল্লাহর রসূল (সাঃ) ইমামতি করেন। আনাস (রাঃ) ও তাঁর ঘরের এক এতীম দাঁড়ান নবী (সাঃ)-এর পিছে এবং তাঁর আম্মা দাঁড়ান তাঁদের পিছে (একা)।
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১১০৮-১১০৯নং)
৫। মুক্তাদী একজন শিশু ও একজন বা একাধিক পুরুষ হলে শিশুও পুরুষদের কাতারে শামিল হয়ে দাঁড়াবে।
৬। মুক্তাদী দুই বা দুয়ের অধিক পুরুষ, শিশু ও মহিলা হলে, ইমামের পিছনে পুরুষরা, অতঃপর শিশুরা এবং সবশেষে মহিলারা কাতার বাঁধবে।
মহানবী (সাঃ) বলেন, “পুরুষদের শ্রেষ্ঠ কাতার হল প্রথম কাতার এবং নিকৃষ্ট কাতার হল সর্বশেষ কাতার। আর মহিলাদের শ্রেষ্ঠ কাতার হল সর্বশেষ কাতার এবং নিকৃষ্ট কাতার হল প্রথম কাতার।” (মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ, সুনানু আরবাআহ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্), মিশকাত ১০৯২নং)
প্রকাশ থাকে যে, শিশু ছেলেদের পৃথক কাতার করার কোন সহীহ দলীল নেই। তাই শিশু ছেলেরাও পুরুষদের সঙ্গে কাতার করতে পারে। (তামামুল মিন্নাহ্, আলবানী ২৮৪পৃ:)
৭। ইমামের সামনে কাতার বেঁধে নামায হয় না। অবশ্য ভিড়ের সময় ইমামের সামনে ছাড়া কোন দিকে জায়গা না থাকলে নিরুপায় অবস্থায় নামায হয়ে যাবে। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ৪/৩৭২-৩৭৩)
No comments:
Post a Comment