প্রশ্ন: ৩৩৩ : খতমে নবুওয়াত সম্পর্কে বিস্তারিত ।

লিখেছেন: মাওলানা মওদুদী রাহ:, তার তাফসীর তাফহীমুল কুরআনে:
=================================
পরিশিষ্ট
{  ৩৩ নং সুরা আহযাবের ৭৭ নং  টীকার সাথে সংশ্লিষ্ট}
”খতমে নবুওয়াত”
বর্তমান যুগে একটি দল নতুন নবুওয়াতের ফিতনা সৃষ্টি করেছে। এর “খাতামুন নাবিয়্যীন” শব্দের অর্থ করে “নবীদের” মোহর। এরা বুঝাতে চায় রসূলুল্লাহর ﷺ পর তার মোহরাংকিত হয়ে আরো অনেক নবী দুনিয়ায় আগমন করবেন। অথবা অন্য কথায় বলা যায়, যতক্ষণ পর্যন্ত কারো নবুওয়াত রসূলুল্লাহর মোহরাংকিত না হয় ততক্ষণ তিনি নবী হতে পারবেন না।   
কিন্তু “খাতামুন নাবিয়্যীন” শব্দ সম্বলিত আয়াতটি যে ঘটনা পরস্পরায় বিবৃত হয়েছে, তাকে সেই বিশেষ পরিবেশে রেখে বিচার করলে, তা থেকে এ অর্থ গ্রহণের কোন সুযোগই দেখা যায় না। অধিকন্তু এ অর্থ গ্রহণ করার পর এ পরিবেশে শব্দটির ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তাই বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং বক্তব্যের আসল উদ্দেশ্যের ও পরিপন্থী হয়ে দাঁড়ায়। ১। 
----------
১. বর্ণনার ধারাবাহিকতা অনুধাবন করার জন্য এ সূরার ৬৭ থেকে ৭৯ টীকার আলোচনাও সামনে রাখা দরকার।     
----------
এটা কি নিতান্ত অবান্তর ও অপ্রাসঙ্গিক কথা নয় যে, যয়নবের নিকাহর বিরুদ্ধে উত্থিত প্রতিবাদ এবং তা থেকে সৃষ্ট নানা প্রকার সংশয়-সন্দেহের জবাব দিতে দিতে হঠাৎ মাঝখানে বলে দেয়া হলোঃ মুহাম্মাদ ﷺ নবীদের মোহর। অর্থাৎ ভবিষ্যতে যত নবী আসবেন তারা সবাই তারই মোহরাংকিত হবেন। আগে পিছের এ ঘটনা মাঝখানে একথাটির আকস্মিক আগমন শুধু অবান্তরই নয়, এ থেকে প্রতিবাদকারীদের জবাবে যে যুক্তি পেশ করা হচ্ছিল, তাও দূর্বল হয়ে পড়ে। এহেন পরিস্থিতিতে প্রতিবাদকারীদের হাতে একটা চমৎকার সুযোগ আসতো এবং তারা সহজেই বলতে পারতো যে, আপনার জীবনে যদি এ কাজটা সম্পন্ন না করতেন, তাহলে ভালই হতো, কোন বিপদের সম্ভাবনা থাকতো না, এই বদ রসমটা বিলুপ্ত করার যদি এতেই প্রয়োজন হয়ে থাকে, তাহলে আপনার পরে আপনার মোহরাংকিত হয়ে যেসব নবী আসবেন, এ কাজটা তাদের হাতেই সম্পন্ন হবে। 
 উল্লেখিত দলটি শব্দটির আর একটি বিকৃত অর্থ নিয়েছেঃ “খাতামুন নাবিয়্যীন” অর্থ হলঃ “আফজালুন নাবিয়্যীন।” অর্থাৎ নবুওয়াতের দরজা উন্মুক্তই রয়েছে, তবে কিনা নবুওয়াত পূর্ণতা লাভ করেছে রসূলুল্লাহর ওপর। কিন্তু এ অর্থ গ্রহণ করতে গিয়েও পূর্বোল্লিখিত বিভ্রান্তির পুনরাবির্ভাবের হাত থেকে নিস্তার নেই। অগ্রপশ্চাতের সাথে এরও কোন সম্পর্ক নেই। বরং এটি পূর্বাপরের ঘটনা পরস্পরার সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থবহ। কাফের ও মুনাফিকরা বলতে পারতোঃ “জনাব, আপনার চাইতে কম মর্যাদার হলেও আপনার পরে যখন আরো নবী আসছেন, তখন এ কাজটা না হয় তাদের ওপরই ছেড়ে দিতেন। এ বদ রসমটাও যে আপনাকেই মিটাতে হবে, এরই বা কি এমন আবশ্যকতা আছে”! 
 অভিধানের আলোকে খাতামুন নাবিয়্যীনের অর্থ :-                 
 তাহলে পূর্বাপর ঘটনাবলীর সাথে সম্পর্কের দিক দিয়ে একথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, এখানে “খাতামুন নাবিয়্যীন” শব্দের অর্থ নবুওয়য়াতের সিলসিলার পরিসমাপ্তি ঘোষণা অর্থাৎ রসূলুল্লাহর ﷺ পর আর কোন নবী আসবেন না। কিন্তু শুধু পূর্বাপর সম্বন্ধের দিক দিয়েই নয়, আভিধানিক অর্থের দিক দিয়েও এটিই একমাত্র সত্য। আরবী অভিধান এবং প্রবাদ অনুযায়ী ‘খতম’; শব্দের অর্থ হলঃ মোহর লাগানো, বন্ধ করা, শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া এবং কোন কাজ শেষ করে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ করা।                   
 খাতামাল আমাল (خَتَمَ ألعَمَلَ)   অর্থ হলোঃ ফারাগা মিনাল আমাল (فَرَغَ مِنَ ألعَمَلَ)   অর্থাৎ কাজ শেষ করে ফেলেছে।                 
 খাতামাল এনায়া (خَتَمَ ألاِنَاءَ)   অর্থ হলোঃ পাত্রের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে এবং তার ওপর মোহর লাগিয়ে দিয়েছে, যাতে করে তার ভেতর থেকে কোন জিনিস বাইরে আসতে এবং বাইরে থেকে কিছু ভেতরে যেতে না পারে।                 
 খাতামাল কিতাব (خَتَمَ الكِتَابَ)   অর্থ হলোঃ পত্রের মুখ বন্ধ করে তার ওপর মোহর লাগিয়ে দিয়েছে, ফলে পত্রটি সংরক্ষিত হবে।                 
 খাতামা আলাল কালব (خَتَمَ عَلَى القَلبِ)   অর্থ হলোঃ দিলের ওপর মোহর লাগিয়ে দিয়েছে। এরপর কোন কথা আর সে বুঝতে পারবে না এবং তার ভেতরের জমে থাকা কোন কথা বাইরে বেরুতে পারবে না।                 
 খিতামু কুল্লি মাশরুব (خَتَامَ كُلِّ مَشرُوبٍ)   অর্থ হলোঃ কোন পানীয় পান করার পর শেষে যে স্বাদ অনুভূত হয়।                 
 খাতিমাতু কুল্লি শাইয়িন আকিবাতুহু ওয়া আখিরাতুহু  (خاتمة كل شئ عاقبته و اخرته ) অর্থাৎ প্রত্যেক জিনিসের খাতিমা অর্থ হলো তার পরিণাম এবং শেষ।                   
 খাতামাশ শাইয়্যি বালাগা আখিরাহ (خَتَمَ الشئِ , بَلَغَ اخِرَهُ)   অর্থাৎ কোন জিনিসকে খতম করার অর্থ হলো তার শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া। খতমে কুরআন বলতে এ অর্থ গ্রহণকরা হয় এবং এ অর্থের ভিত্তিতে প্রত্যেক সূরার শেষ আয়াতকে বলা হয় ‘খাওয়াতিম’।   
 খাতামুল কওমে আখেরুহুম (خَاتَمُ القَومٍ اخرهم)   অর্থাৎ খাতামুল কওম অর্থজাতির শেষ ব্যক্তি (দ্রষ্টব্যঃ লিসানুল আরব, কামুস এবং আকারাবুল মাওয়ারিদ।) ১               
-------
  (১) এখানে আমি মাত্র তিনটি আভিধানের উল্লেখ করলাম। কিন্তু শুধু এই তিনটি অভিধানই কেন, আরবি ভাষায় যে কোন নির্ভরযোগ্য অভিধান খুলে দেখুন, সেখানে ‘খতম’ শব্দের উপরোল্লিখিত ব্যাখ্যাই পাবেন। কিন্তু ‘খতমে নবুওয়াত’ অস্বীকারকারীরা আল্লাহর দ্বীনের সুরক্ষিত গৃহে সিঁদ কাটার জন্য এর আভিধানিক অর্থকে পূর্ণরূপে এড়িয়ে গেছেন। তারা বলতে চান, কোন ব্যক্তিকে খাতামুশ শোয়ারা খাতামুল ফোকাহা অথবা ‘খাতামুল মুফাসসিরীণ’ বললে এ অর্থ গ্রহণ করা হয় নাযে, যাকে ঐ পদবী দেয়া হয়, তার পরে আর কোন শায়ের তথা কবি, ফকিহ অথবা মুফাসসির পয়দা হননি। বরং এর অর্থ এই যে, ঐ ব্যক্তির ওপরে উল্লিখিত বিদ্যা অথবা শিল্পের পূর্ণতার পরিসমাপ্তি ঘটেছে। অথবা কোন বস্তুকে অত্যধিক ফুটিয়ে তুলবার উদ্দেশ্যে এই ধরনের পদবী ব্যবহারের ফলে কখনো খতম-এর অভিধানিক অর্থ ‘পূর্ণ’ অথবা ‘শ্রেষ্ঠ’ হয় না এবং শেষ অর্থে এর ব্যবহার ত্রুটিপূর্ণ বলেও গণ্য হয় না। একমাত্র ব্যাকরণ-রীতি সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তিই এ ধরনের কথা বলতে পারেন। কোন ভাষারই নিয়ম এ নয় যে, কোন একটি শব্দ তার আসল অর্থের পরিবর্তে কখনো কখনো দূর সম্পর্কের অন্য কোন অর্থে ব্যবহৃত হলে সেটাই তার আসল অর্থে পরিণত হবে এবং আসল আভিধানিক অর্থে তার ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। আপনি যখন কোন আরবের সম্মুখে বলবেনঃ جَاءَ خَاتَمَ القَوْمَ  (জাআ খাতামুল কওম)--তখন কখনো সে মনে করবে না যে, গোত্রের শ্রেষ্ঠ অথবা কামেল ব্যক্তি এসেছে। বরং সে মনে করবে যে, গোত্রের সবাই এসে গেছে, এমনকি অবশিষ্ট শেষ ব্যক্তিটি পর্যন্তও।                 
  এই সঙ্গে একথাটিও সামনে রাখতে হবে যে, কোন কোন লোককে যে “খাতামুশ শো’য়ারা” “খাতামুল ফুকাহা” ও “খাতামুল মুহাদ্দিসীন” উপাধিগুলো দোয়া হয়েছে সেগুলো মানুষরাই তাদেরকে দিয়েছে। আর মানুষ যে ব্যক্তিকে কোন গুণের ক্ষেত্রে শেষ বলে দিচ্ছে তার পরে ঐ গুণ সম্পন্ন আর কেউ জন্মাবে কিনা তা সে কখনোই জানতে পারে না। তাই মানুষের কথায় এ ধরনের উপাধির অর্থ নিছক বাড়িয়ে বলা এবং শ্রেষ্ঠত্ব ও পূর্ণতার স্বীকৃতি ছাড়া আর বেশী কিছু হতে পারে না। কিন্তু আল্লাহ‌ যখন কারো ব্যাপারে বলে দেন যে, অমুক গুণটি অমুক ব্যক্তি পর্যন্ত শেষ হয়ে গেছে তখন তাকে মানুষের কথার মতো উপমা বা রূপক মনে করে নেবার কোন কারণ নেই। আল্লাহ‌ যদি কাউকে শেষ কবি বলে দিয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চিন্তভাবে তারপর আর কোন কবি হতে পারে না। আর তিনি যাকে শেষ নবী বলে দিয়েছেন তার পরে আর কোন নবী হওয়াই অসম্ভব। কারণ, আল্লাহ‌ হচ্ছেন ‘আলিমুল গাইব’ এবং মানুষ আলিমুল গাইব নয়। আল্লাহর কাউকে ‘খাতামুন নাবিয়্যীন’ বলে দেয়া এবং মানুষের কাউকে ‘খাতামুশ শোয়ারা বা খাতামুল ফুকারা’, বলে দেয়া কেমন করে একই পর্যায়ভুক্ত হতে পারে?   
-------
 এ জন্যই সমস্ত অভিধান বিশারদ এবং তাফসীরকারগণ একযোগে “খাতামুন নাবিয্যীন” শব্দের অর্থ নিয়েছেন, আখেরুন নাবিয়্যীন অর্থাৎ নবীদের শেষ। আরবী অভিধান এবং প্রবাদ অনুযায়ী ‘খাতাম’-এর অর্থ ডাকঘরের মোহর নয়, যা চিঠির ওপর লাগিয়ে চিঠি পোষ্ট করা হয় বরং সেই মোহর যা খামের মুখে এ উদ্দেশ্যে লাগানো হয় যে, তার ভেতর থেকে কোন জিনিস বাইরে বেরুতে পারবে না এবং বাইরের কোন জিনিস ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না।                                 
 খতমে নবুওয়াত সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উক্তি :- 
 পূর্বাপর সম্বন্ধ এবং আভিধানিক অর্থের দিক দিয়ে শব্দটির যে অর্থ হয়, রসূলুল্লাহর ﷺ বিভিন্ন ব্যাখ্যাও তা সমর্থন করে। দৃষ্টান্তস্বরূপ এখানে কতিপয় অত্যন্ত নির্ভুল হাদীসের উল্লেখ করছিঃ               
 (1) قَالَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ تَسُوسُهُمُ الأَنْبِيَاءُ ، كُلَّمَا هَلَكَ نَبِىٌّ خَلَفَهُ نَبِىٌّ ، وَإِنَّهُ لاَ نَبِىَّ بَعْدِى ، وَسَيَكُونُ خُلَفَاءُ (بخارى , كتاب المناقب , باب ماذكر عن بنى اسرائيل)                 
 রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ বনী ইসরাঈলের নেতৃত্ব করতেন আল্লাহর রসূলগণ। যখন কোন নবী ইন্তেকাল করতেন, তখন অন্য কোন নবী তার স্থলাভিষিক্তি হতেন। কিন্তু আমার পরে কোন নবী হবে না, শুধু খলীফা।
 جَاءَ خَاتَمَ القَوْمَ   (2) قَالَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ مَثَلِى وَمَثَلَ الأَنْبِيَاءِ مِنْ قَبْلِى كَمَثَلِ رَجُلٍ بَنَى بَيْتًا فَأَحْسَنَهُ وَأَجْمَلَهُ ، إِلاَّ مَوْضِعَ لَبِنَةٍ مِنْ زَاوِيَةٍ ، فَجَعَلَ النَّاسُ يَطُوفُونَ بِهِ وَيَعْجَبُونَ لَهُ ، وَيَقُولُونَ هَلاَّ وُضِعَتْ هَذِهِ اللَّبِنَةُ قَالَ فَأَنَا اللَّبِنَةُ ، وَأَنَا خَاتِمُ النَّبِيِّينَ (بخارى كتاب المناقب , باب خاتم النبين)   
 রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীদের দৃষ্টান্ত হলো এই যে, এক ব্যক্তি একটি দালান তৈরি করলো এবং খুব সুন্দর ও শোভনীয় করে সেটি সজ্জিত করলো। কিন্তু তার এক কোণে একটি ইটের স্থান শূন্য ছিল। দালানটির চতুর্দিকে মানুষ ঘুরে ঘুরে তার সৌন্দর্য দেখে বিস্ময় প্রকাশ করছিল এবং বলছিল, “এ স্থানে একটা ইট রাখা হয়নি কেন? বস্তুত আমি সেই ইট এবং আমিই শেষ নবী।” (অর্থাৎ আমার আসার পর নবুওয়াতের দালান পূর্ণতা লাভ করেছে, এখন এর মধ্যে এমন কোন শূন্যস্থান নেই যাকে পূর্ণ করার জন্য আবার কোন নবীর প্রয়োজন হবে।)                    এই বক্তব্য সম্বলিত চারটি হাদীস মুসলিম শরীফে কিতাবুল ফাযায়েলের বাবু খাতামুন নাবিয়্যানে উল্লেখিত হয়েছে এবং শেষ হাদীসটিতে এতোটুকু অংশ বর্ধিত হয়েছে- فَجِئْتُ فَخَتَمْتُ الْاَنْبِيَاءَ   “অতঃপর আমি এলাম এবং আমি নবীদের সিলসিলা ‘খতম’ করে দিলাম।”                    হাদীসটি তিরমিযী শরীফে এই শব্দ সম্বলিত হয়ে ‘কিতাবুল মানাকিবের বাবু ফাদলিন নবী’ এবং কিতাবুল আদাবের ‘বাবুল আমসালে’ বর্ণিত হয়েছে।                    মুসনাদে আবু দাউদ তিয়ালাসীতে হাদীসটি জাবের ইবনে আবদুল্লাহ বর্ণিত হাদীসের সিলসিলায় উল্লেখিত হয়েছে এবং এর শেষ অংশটুকু হলো خُتِمَ بِى الْاَنْبِيَاء   “আমার মাধ্যমে নবীদের সিলসিলা ‘খতম’ করা হলো।”                    মুসনাদে আহমাদে সামান্য শাব্দিক হেরফেরের সাথে এই বক্তব্য সম্বলিত হাদীস হযরত উবাই ইবনে কা’ব, হযরত আবু সাঈদ খুদরী এবং হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে।                 
 (3) أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فُضِّلْتُ عَلَى الأَنْبِيَاءِ بِسِتٍّ أُعْطِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ وَأُحِلَّتْ لِىَ الْغَنَائِمُ وَجُعِلَتْ لِىَ الأَرْضُ مَسْجِدًا وطَهُورًا وَأُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً وَخُتِمَ بِىَ النَّبِيُّونَ- (مسلم- ترمذى- ابن ماجه)   
 রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ “ছ’টা ব্যাপারে অন্যান্য নবীদের ওপর আমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছেঃ (‌১) আমাকে পূর্ণ অর্থব্যঞ্জক সংক্ষিপ্ত কথা বলার যোগ্যতা দেয়া হয়েছে। (২) আমাকে শক্তিমত্তা ও প্রতিপত্তি দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে। (৩) যুদ্ধলব্ধ অর্থ-সম্পদ আমার জন্য হালাল করা হয়েছে। (৪) পৃথিবীর যমীনকে আমার জন্য মসজিদে (অর্থাৎ আমার শরীয়াতে নামায কেবল বিশেষ ইবাদাতগাহে নয়, দুনিয়ার প্রত্যেক স্থানে পড়া যেতে পারে) এবং মাটিকে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে (শুধু পানিই নয়, মাটির সাহায্যে তায়াম্মুম করেও পবিত্রতা হাসিল অর্থাৎ অজু এবং গোসলের কাজ সম্পন্ন করা যেতে পারে) পরিণত করা হয়েছে। (৫) সমগ্র দুনিয়ার জন্য আমাকে রসূল হিসেবে পাঠানো হয়েছে এবং (৬) আমার ওপর নবীদের সিলসিলা খতম করে দেয়া হয়েছে।”       
 (4) قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ الرِّسَالَةَ وَالنُّبُوَّةَ قَدِ انْقَطَعَتْ فَلاَ رَسُولَ بَعْدِى وَلاَ نَبِىَّ (ترمذى- كتاب الرؤيا , باب ذهاب النبوة- مسند احمد , مرويات بن مالك رض)               
 রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ “রিসালাত এবং নবুওয়াতের সিলসিলা খতম করে দেয়া হয়েছে। আমার পর আর কোন রসূল এবং নবী আসবে না।”           
 (5) قَالَ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم أَنَا مُحَمَّدٌ وَأَنَا أَحْمَدُ وَأَنَا الْمَاحِى الَّذِى يُمْحَى بِىَ الْكُفْرُ وَأَنَا الْحَاشِرُ الَّذِى يُحْشَرُ النَّاسُ عَلَى عَقِبِى وَأَنَا الْعَاقِبُ وَالْعَاقِبُ الَّذِى لَيْسَ بَعْدَهُ نَبِىُّ- ( بخارى ومسلم , كتاب الفضائل- باب اسماء النبى- ترمذى , كتاب الادب , باب اسماء النبى- مؤطاء- كتاب اسماء النبى- المستدرك للحاكم , كتاب التاريخ , باب اسماء النبى)         
 রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ “আমি মুহাম্মাদ। আমি আহমাদ। আমি বিলুপ্তকারী, আমার সাহায্যে কুফরকে বিলুপ্ত করা হবে। আমি সমবেতকারী আমার পরে লোকদেরকে হাশরের ময়দানে সমবেত করা হবে। (অর্থাৎ আমার পরে শুধু কিয়ামতই বাকি আছে) আমি সবার শেষে আগমনকারী হলো সেই) যার পরে আর নবী আসবে না।”           
 (6) قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللَّهَ لَمْ يَبْعَثْ نَبِيًّا إِلاَّ حَذَّرَ أُمَّتَهُ الدَّجَّالَ وَأَنَا آخِرُ الأَنْبِيَاءِ وَأَنْتُمْ آخِرُ الأُمَمِ وَهُوَ خَارِجٌ فِيكُمْ لاَ مَحَالَةَ- (ابن ماجه , كتاب الفتن , باب الدجال)         
 রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ “আল্লাহ নিশ্চয়ই এমন কোন নবী পাঠাননি যিনি তার উম্মাতকে দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেননি। (কিন্তু এখন আমিই শেষ নবী এবং তোমরা শেষ উম্মাত। দাজ্জাল নিঃসন্দেহে এখন তোমাদের মধ্যে বহির্গত হবে।”               
 (7) عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ جُبَيْرٍ قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِى يَقُولُ خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْماً كَالْمُوَدِّعِ فَقَالَ أَنَا مُحَمَّدٌ النَّبِىُّ الأُمِّىُّ ثَلاَثاً وَلاَ نَبِىَّ بَعْدِى- (مسند احمد – مرويات – عبد الله بن عمروبن العاص)         
 আবদুর রহমান ইবনে জোবায়ের বলেনঃ আমিআবদুল্লাহ ইবনে উমর ইবনে আ’সকে বলতে শুনেছি, একদিন রসূলুল্লাহ ﷺ নিজের গৃহ থেকে বরে হয়ে আমাদের মধ্যে তাশরীফ আনলেন। তিনি এভাবে আসলেন যেন আমাদের নিকট থেকে বিদায় নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি তিনবার বললেন, আমি উম্মী নবী মুহাম্মাদ। অতঃপর বললেন, আমার পর আর কোন নবী নেই।             
 (8) قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لاَ نُبُوّةَ بعدى الا المبشرات قِيلِ وَمَا المُبَشّرات يَا رسول الله ؟ قَالَ الرُّؤيَا الحسنة- او قَالَ الرّؤيَا الصالِحَة- ( مسند احمد , مرويات ابو الطفيل – نسائى ابو داؤد)                    রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আমার পরে আর কোন নবুওয়াত নেই। আছে সুবংবাদ দানকারী ঘটনাবলী। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল, সুসংবাদ দানকারী ঘটনাগুলো কি? জবাবে তিনি বললেনঃ ভালো স্বপ্ন। অথবা বললেন, কল্যাণময় স্বপ্ন। (অর্থাৎ আল্লাহর অহী নাযিল হবার এখন আর সম্ভাবনা নেই। বড়জোর এতোটুকু বলা যেতে পারে যে, আল্লাহ‌ তায়ালার পক্ষ হতে যদি কাউকে কোন ইঙ্গিত দেয়া হয়, তাহলে শুধু ভালো স্বপ্নের মাধ্যমেই তা দেয়া হবে)।             
 (9) قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ كَانَ بَعْدِى نَبِىٌّ لَكَانَ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ- ( ترمذى – كتاب المناقب)   
 রসূলুল্লাহ(সা.) বলেনঃ আমার পরে যদি কোন নবী হতো, তাহলে উমর ইবনে খাত্তাব সে সৌভাগ্য লাভ করতো।       
 (10) قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَلِىٍّ أَنْتَ مِنِّى بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى إِلاَّ أَنَّهُ لاَ نَبِىَّ بَعْدِى- (بخارى ومسلم – كتاب فضائل الصحابه)               
 রসূলুল্লাহ ﷺ হযরত আলীকে (রা.) বলেনঃ আমার সাথে তোমার সম্পর্ক মূসারসাথে হারুনের সম্পর্কের মতো। কিন্তু আমার পরে আর কোন নবী নেই।           
 বুখারী এবং মুসলিম তাবুক যুদ্ধের বর্ণনা প্রসঙ্গেও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুসনাদে আহমাদে এই বিষয়বস্তু সম্বলিত দু’টি হাদীস হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস থেকে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে একটি বর্ণনার শেষাংশ হলোঃ الا انه لانبوة بعدى   “কিন্তু আমার পরে আর কোন নবুওয়াত নেই।” আবু দাউদ তিয়ালাসি, ইমাম আহমাদ এবং মুহাম্মাদ ইসহাক এ সম্পর্কে যে বিস্তারিত বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন তা থেকে জানা যায় যে, তাবুক যুদ্ধে রওয়ানা হবার পূর্বে রসূলুল্লাহ ﷺ হযরত আলীকে (রা.) মদীনা তাইয়্যেবার তত্ত্বাবধান এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রেখে যাবার ফয়সালা করেন। এ ব্যাপারটি নিয়ে মুনাফিকরা বিভিন্ন ধরনের কথা বলতে থাকে। হযরত আলী (রা.) রসূলুল্লাহকে ﷺ বলেন, হে আল্লাহর রসূল, আপনি কি আমাকে শিশু এবং নারীদের মধ্যে ছেড়ে যাচ্ছেন? রসূলুল্লাহ ﷺ তাকে সান্তনা দিয়ে বলেছিলেন-আমার সাথে তোমার সম্পর্কতো মূসার সাথে হারুনের সম্পর্কের মতো। অর্থাৎ তুর পর্বতে যাবার সময় হযরত মূসা (আ) যেমন বনী ইসরাঈলদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হযরত হারুনকে পেছনে রেখে গিয়েছিলেন অনুরুপভাবে মদীনার হেফাজতের জন্য আমি তোমাকে পেছনে রেখে যাচ্ছি। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে রসূলুল্লাহ ﷺ মনে এই সন্দেহও জাগে যে, হযরত হারুনের সঙ্গে এভাবে তুলনা করার ফলে হয়তো পরে এ থেকে কোন বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। কাজেই পরমুহুর্তেই তিনি কথাটা স্পষ্ট করে দেন এই বলে যে, “আমার পর আরকোন ব্যক্তি নবী হবে না।”                 
 (11) عَنْ ثَوْبَانَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ............ وَإِنَّهُ سَيَكُونُ فِى أُمَّتِى ثَلاَثُونَ كَذَّابُونَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِىٌّ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ لاَ نَبِىَّ بَعْدِى- (ابو داود – كتاب الفتن)   
 হযরত সাওবান বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আর কথা হচ্ছে এই যে, আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যাবাদী হবে। তাদের প্রত্যেকেই নিজেকে নবী বলে দাবী করবে। অথচ আমার পর আর কোন নবী নেই।                    এ বিষয়বস্তু সম্বলিত আর একটি হাদীস আবু দাউদ ‘কিতাবুল মালাহেমে’ হযরত আবু হুরাইরা ﷺ থেকে বর্ণনা করেছেন। তিরমিযীও হযরত সাওবান এবং হযরত আবু হুরাইরা ﷺ থেকে এ হাদীস দু’টি বর্ণনা করেছেন। দ্বিতীয় বর্ণনাটির শব্দ হলো এই-                    حَتَّى يُبْعَثَ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ قَرِيب مِنْ ثَلاَثِينَ ، كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَسُولُ اللَّهِ-                    অর্থাৎ এমন কি ত্রিরিশ জনের মতো প্রতারক আসবে। তাদের মধ্য থেকে প্রত্যেকেই দাবী করবে যে, সে আল্লাহর রসূল।       
 (12) قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقَدْ كَانَ فِيمَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ مِنْ بَنِى إِسْرَائِيلَ رِجَالٌ يُكَلَّمُونَ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَكُونُوا أَنْبِيَاءَ ، فَإِنْ يَكُنْ مِنْ أُمَّتِى مِنْهُمْ أَحَدٌ فَعُمَرُ- (بخارى , كتاب المناقب)         
 রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ তোমাদের পূর্বে অতিবাহিত বনী ইসরাঈল জাতির মধ্যে অনেক লোক এমন ছিলেন, যাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, অথচ তারা নবী ছিলেন না। আমার উম্মাতের মধ্যে যদি এমন কেউ হয়, তাহলে সে হবে উমর।                    মুসলিমে এই বিষয়বস্তু সম্বলিত যে হাদীস উল্লেখিত হয়েছে, তাতে يكلمون   এর পরিবর্তে محدثون   শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু মুকাল্লাম এবং মুহাদ্দাস শব্দ দু’টি সমার্থক। অর্থাৎ এমন ব্যক্তি যার সঙ্গে আল্লাহ‌ তায়ালা কথা বলেছেন অথবা যার সাথে পর্দার পেছন থেকে কথা বলা হয়। এ থেকে জানা যায় যে, নবুওয়াত ছাড়াও যদি এই উম্মাতের মধ্যে কেউ আল্লাহর সাথে কথা বলার সৌভাগ্য অর্জন করতো তাহলে তিনি একমাত্র হযরত উমরই হতেন।     
 (13) قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ نَبِىَّ بَعْدِى وَلاَ أَمَةً بَعْدَ اُمَّتِى (بيهقى , كتاب الرؤيا – طبرانى)   
 রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আমার পরে আর কোন নবী নেই এবং আমার উম্মাতের পর আর কোন উম্মাত (অর্থাৎ কোন ভবিষ্যত নবীর উম্মাত) নেই।     
 (14) قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِنِّى آخِرُ الأَنْبِيَاءِ وَإِنَّ مَسْجِدِى آخِرُ الْمَسَاجِدِ- (مسلم , كتاب الحج . باب فضل الصلواة بمسجد مكة والمدينة)   
 রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আমি শেষ নবী এবং আমার মসজিদ (অর্থাৎ মসজিদে নববী) শেষ মসজিদ। ১                    রসূলুল্লাহর ﷺ নিকট থেকে বহু সাহাবী হাদীসগুলো বর্ণনা করেছেন এবং বহু মুহাদ্দিস অত্যন্ত শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য সনদসহ এগুলো উদ্ধৃত করেছেন। এগুলো অধ্যয়ন করার পর স্পষ্ট জানা যায় যে, রসূলুল্লাহ ﷺ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন শব্দের ব্যবহার করে একথা পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, তিনি শেষ নবী। তার পর কোন নবী আসবে না। নবুওয়াতের সিলসিলা তার ওপর খতম হয়ে গেছে এবং তার পরে যে ব্যক্তি রসূল অথবা নবী হবার দাবী করবে, সে হবে দাজ্জাল (প্রতারক) এবং কাজ্জাব ও মিথ্যুক। ২ কুরআনের “খাতামুন নাবিয়্যীন” শব্দের এর চাইতে বেশী শক্তিশালী, নির্ভরযোগ্যএবং প্রামান্য ব্যাখ্যা আর কি হতে পারে! রসূলুল্লাহর বাণীই এখানে চরম সনদ এবং প্রমাণ। উপরন্তু যখন তা কুরআনের একটি আয়াতের ব্যাখ্যা করে তখন আরো অধিক শক্তিশালী প্রমাণে পরিণত হয়। এখন প্রশ্ন হলো এই যে, মুহাম্মাদের ﷺ চেয়ে বেশী কে কুরআনকে বুঝেছে এবং তার চাইতে বেশী এর ব্যাখ্যার অধিকার কার আছে? এমন কে আছে যে খতমে নবুওয়াতের অন্য কোন অর্থ বর্ণনা করবে এবং তা মেনে নেয়া তো দূরের কথা, সে দিকে ভ্রূক্ষেপ করতেও আমরা প্রস্তুত হবো?               
-------------------
 (১) খতমে নবুওয়াত অস্বীকারীরা এ হাদীস থেকে প্রমাণ করে যে, রসূলুল্লাহ ﷺ যেমন তাঁর মসজিদকে শেষ মসজিদ বলেছেন, অথচ এটি শেষ মসজিদ নয়; এরপরও দুনিয়ার বেশুমার মসজিদ নির্মিত হয়েছে অনুরূপভাবে তিনি বলেছেন যে, তিনি শেষ নবী। এর অর্থ হলো এই যে, তাঁর পরেও নবী আসবেন। অবশ্য শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়ে তিনি হলেন শেষ নবী এবং তাঁর মসজিদ শেষ মসজিদ। কিন্তু আসলে এ ধরনের বিকৃত অর্থই একথা প্রমাণ করে যে, এ লোকগুলো আল্লাহ‌ এবং রসূলের কালামের অর্থ অনুধাবন করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। মুসলিম শরীফের যে স্থানে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে সেখানে এ বিষয়ের সমস্ত হাদীস সম্মুখে রাখলেই একথা পরিষ্ফুট হবে যে, রসূল্লাহ ﷺ তাঁর মসজিদকে শেষ মসজিদ কোন্ অর্থে বলেছেন। এখানে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ ), হযরত আবদুল্লাহইবনে উমর (রাঃ ) এবং হযরত মায়মুনার (রাঃ ) যে বর্ণনা ইমাম মুসলিম উদ্ধৃত করেছেন, তাতে বলা হয়েছে, দুনিয়ার মাত্র তিনটি মসজিদ এমন রয়েছে যেগুলো সাধারণ মসজিদগুলোর ওপর শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার। সেখানে নামায পড়লে অন্যান্য মসজিদের চেয়ে হাজার গুণ বেশী সওয়াব হাসিল হয় এবং এ জন্য একমাত্র এ তিনটি মসজিদে নামায পড়ার জন্য সফর করা জায়েয। দুনিয়ার অবশিষ্ঠ মসজিদগুলোর মধ্যে সমস্ত মসজিদকে বাদ দিয়ে বিশেষ করে একটি সমজিদে নামায পড়বার জন্য সেদিকে সফর করা জায়েয নয়। এর মধ্যে মসজিদুল হারাম হলো প্রথম মসজিদ। হযরত ইবরাহীম (আঃ ) এটি বানিয়েছিলেন। দ্বিতীয়টি মদীনা তাইয়েবার মসজিদে নববী। এটি নির্মাণ করেন রসূলুল্লাহ (সাঃ )। রসূলুল্লাহ (সাঃ ) এরশাদের অর্থ হলো এই যে, এখন যেহেতু আমার পর আর কোন নবী আসবে না, সেহেতু আমার মসজিদের পর দুনিয়ার আর চতুর্থ এমন কোন মসজিদ নির্মিত হবে না, যেখানে নামায পড়ার সওয়াব অন্যান্য মসজিদের তুলনায় বেশী হবে এবং সেখানে নামায পড়ার উদ্দেশ্যে সেদিকে সফর করা জায়েয হবে।       
 (২) শেষ নবুওয়াতে অবিশ্বাসীরা নবী করিমের (সাঃ ) হাদীসের বিপরীতে হযরত আয়েশার (রাঃ ) বলে কথিত নিম্নোক্ত বর্ণনার উদ্ধৃতি দেয় ঃ “বল নিশ্চয়ই তিনি খাতামুন নাবিয়্যীন, একথা বলো না যে তার পর নবী নেই।” প্রথমত নবী করিমের (সা;) সুস্পষ্ট আদেশকে অস্বীকার করার জন্য হযরত আয়েশার (রাঃ) উদ্ধৃতি দেয়া একটা ধৃস্টতা। অধিকন্তু হযরত আয়েশার (রা.) বলে কথিত উপরোক্ত উদ্ধৃতি মোটেই নির্ভরযোগ্য নয়। হাদীস শাস্ত্রের কোন প্রমাণিক গ্রন্থেই হযরত আয়েশার (রা.) উপরোক্ত উক্তির উল্লেখ নেই। কোন বিখ্যাত হাদীস লিপিবদ্ধকারী এ হাদীসটি লিপিবদ্ধ বা উল্লেখ করেনি। উপরোক্ত হাদীসটি ‘দুররি মানসূর’ নামক তাফসীর এবং ‘তাকমিলাহ মাজমা-উল-বিহার’ নামক অপরিচিত হাদীস সংকলন থেকে নেয়া হয়েছে; কিন্তু এর উৎপত্তি বা বিশ্বস্ততা সম্বন্ধে কিছুই জানা নেই। রসূল (সা.)-এর সুস্পষ্ট হাদীস বর্ণনাকারীরা খুবই নির্ভরযোগ্য সূত্র ধেকে বর্ণনা করেছেন, তাকে অস্বীকার করার জন্য হযরত আয়েশার (রা.) উক্তির, যা দুর্বলতম সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। উল্লেখ চূড়ান্ত ধৃষ্টতা মাত্র।               
-----
 সাহাবীদের ইজমা:-
 কুরআন এবং সুন্নাহর পর সাহাবায়ে কেরামের ইজমা বা মতৈক্য হলো তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমস্ত নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, রসূলুল্লাহর ﷺ ইন্তেকালের অব্যবহিত পরেই যেসব লোক নবুওয়াতের দাবী করে এবং যারা তাদের নবুওয়াত স্বীকার করে নেয়, তাদের সবার বিরুদ্ধে সাহাবায়ে কেরাম সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ করেছিলেন। এ সম্পর্কে মুসাইলামা কাজ্জাবের ব্যাপারটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সে রসূলুল্লাহর ﷺ নবুওয়াত অস্বীকার করছিল না; বরং সে দাবী করেছিলযে, রসূলুল্লাহর নবুওয়াতে তাকেও অংশীদার করা হয়েছে। রসূলুল্লাহর ইন্তেকালের পূর্বে সে তার নিকট যে চিঠি পাঠিয়েছিল তার আসল শব্দ হলো এইঃ       
 مِن مُسَيلَمَةِ رَسُوْلُ اللهِ اِلى مُحمَّدِرَّسُولُ الله سَلَامٌ عَلَيْكَ فَاِنِّى اُشْرِكْتُ فِى الْاَمْرِ مَعَكَ (طبرى ,جلد 2,صفحة 399,طبع مصر)               
 “আল্লাহর রসূল মুসাইলামার তরফ হতে আল্লাহর রসূল মুহাম্মাদের নিকট। আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আপনি জেনে রাখুন, আমাকে আপনার সাথে নবুওয়াতের কাজে শরীক করা হয়েছে।”               
 এছাড়াও ঐতিহাসিক তাবারী একথাও বর্ণনা করেছেন যে, মুসাইলামার ওখানে যে আযান দেয়া হতো তাতে اشهد ان محمدا رسول الله   শব্দাবলীও বলা হতো। এভাবে স্পষ্ট করে রিসালাতে মুহাম্মাদীকে স্বীকার করে নেবার পরও তাকে কাফের ও ইসলামী মিল্লাত বহির্ভূত বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হয়েছে। ইতিহাস থেকে একথাও প্রমাণ হয় যে, বনু হোনায়ফা সরল অন্তকরণে তার ওপর ‌ঈমান এনেছিল। অবশ্য তারা এই বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছিল যে, মুহাম্মাদ ﷺ নিজেই তাকে তার নবুওয়াতের কাজে শরীক করেছেন। এছাড়াও আর একটা কথা হলো এই যে, মদীনা তাইয়্যেবা থেকে এক ব্যক্তি কুরআনের শিক্ষা গ্রহণ করেছিল এবং বনু হোনায়ফারনিকটে গিয়ে সে কুরআনের আয়াতকে মুসাইলামার নিকট অবতীর্ণ আয়াতরূপে পেশ করেছিল। (البداية والنهاية لابن كثير – جلدة صفحة 1)   কিন্তু এ সত্ত্বেও সাহাবায়ে কেরাম তাকে মুসলমান বলে স্বীকার করেননি এবং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। অতঃপর একথা বলার যুযোগ নেই যে, ইসলাম বহির্ভূত হবার কারণে সাহাবীগণ তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেননি বরং বিদ্রোহ ঘোষণা করার কারণেই তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হয়েছিল। ইসলামী আইনের দৃষ্টিতে বিদ্রোহী মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হলেও তাদের যুদ্ধ বন্দীদেরকে গোলামে পরিণত করা যেতে পারে না। বরং শুধু মুসলমানই নয় জিম্মীও (অসুমলিম) বিদ্রোহ ঘোষণা করলে, গ্রেফতার করার পর তাকে গোলামে পরিণত করা জায়েয নয়। কিন্তু মুসাইলামা এবং তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) ঘোষণা করেন যে, তাদের মেয়েদের এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কা ছেলেদেরকে গোলাম বানানো হবে এবং গ্রেফতার করার পর দেখা গেলো, সত্যি সত্যিই তাদেরকে গোলাম বানানো হয়েছে। হযরত আলী (রা.) তাদের মধ্য থেকেই জনৈক যুদ্ধ বন্দিনীর মালিক হন। এই যুদ্ধ বন্দিনীর গর্ভজাত পূত্র মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়াই হলেন ১পরবর্তীকালে ইসলামের ইতিহাসে সবর্জন পরিচিত ব্যক্তি। (البداية والنهاية جلد 2- صفحه 316-320)   এ থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সাহাবায়ে কেরাম যে অপরাধের কারণে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, তা কোন বিদ্রোহের অপরাধ ছিল না বরং সে অপরাধ ছিল এই যে, এক ব্যক্তি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরে নবুওয়াতের দাবী করে এবং অন্য লোকেরা তার নবুওয়াতের ওপর ঈমান আনে। রসূলুল্লাহর ইন্তেকালের অব্যবহিত পরেই এই পদক্ষেপ গৃহীত হয়। এর নেতৃত্ব দেন হযরত আবু বকুর সিদ্দীক (রা.) এবং সাহাবীদের সমগ্র দলটি একযোগে তার নেতৃত্বাধীনে এ কাজে অগ্রসর হন। সাহাবীদের ইজমার এর চাইতে সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত আর কি হতে পারে।     
--------
 (১)হানাফিয়া নামে বনু হানাফিয়্যা গোত্রের মহিলা। 
--------
 উম্মাতের সমগ্র আলেম সমাজের ইজমা:-         
 শরীয়তে সাহাবীদের ইজমার পর চতুর্থ পর্যায়ের সবচাইতে শক্তিশালী দলিল হলো সাহাবীগণের পরবর্তী কালের আলেম সমাজের ইজমা। এদিক দিয়ে বিচার করলে দেখা যায়, হিজরীর প্রথম শতাব্দী থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত প্রত্যেক যুগের এবং সমগ্র মুসলিমজাহানের প্রত্যেক এলাকার আলেম সমাজ হামেশাই এ ব্যাপারে একমত রয়েছেন যে, “মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামেরপরে কোন ব্যক্তি নবী হতে পারে না এবং তার পর যে ব্যক্তি নবুওয়াতের দাবী করবে এবং যে ব্যক্তি এই মিথ্যা দাবীকে মেনে নেবে, সে কাফের এবং মিল্লাতে ইসলামের মধ্যে তার স্থান নেই।”             
 এ ব্যাপারে আমি কতিপয় প্রমাণ পেশ করছিঃ             
 ১) ইমাম আবু হানীফার যুগে (৮০-১৫০ হি) এক ব্যক্তি নবুওয়াতের দাবী করে এবং বলেঃ “আমাকে সুযোগ দাও, আমি নবুওয়াতের সংকেত চিহ্ন পেশ করব।”                    একথা শুনে ইমাম সাহেব বলেনঃ যে ব্যক্তি এর কাছ থেকে নবুওয়াতের কোন সংকেত চিহ্ন তলব করবে সেও কাফের হয়ে যাবে। কেননা রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ لَانَبِىُّ بَعْدِىْ  “আমার পর আর কোন নবী নেই।”                 
 ২) আল্লামা ইবনে জারীর তাবারী (২২৪-৩১০ হি) তাঁর বিখ্যাত কুরআনের তাফসীরে (ولكن رسول الله وخاتم النبين)   আয়াতটির বর্ণনা প্রসঙ্গে লিখেছেনঃ اَلَّذِىْ خَتَمَ اللنُّبُوَّةَ فَطُبِعَ عَلَيْهَا فَلَا تُفْتَحْ لَاحَدِ بَعْدَهُ اِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ-   “যে নবুওয়াতকে খতম করে দিয়েছে এবং তার ওপর মোহর লাগিয়ে দিয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত এর দরজা আর কারো জন্য খুলবে না।” (তাফসীরে ইবনে জারীর ২২ খন্ড ১২ পৃষ্ঠা।           
 ৩) ইমাম তাহাবী (হি ২৩৯-৩২১) তার আকীদাতুস সালাফীয়া গ্রন্থে সালাফেসালেহীন (প্রথম যুগের শ্রেষ্ঠ সৎকর্মশীলগণ) এবং বিশেষ করে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ রাহেমাহুমুল্লাহর আকিদা বিশ্বাস বর্ণনা প্রসঙ্গে নবুওয়াত সম্পর্কিত এ বিশ্বাস লিপিবদ্ধ করেছেন যে, “আর মুহাম্মাদ ﷺ হচ্ছেন আল্লাহর প্রিয়তম বান্দা, নির্বাচিত নবী ও পছন্দনীয় রসূল এবং শেষ নবী, মুত্তাকীদের উম্মাত, রসূলদের সরদার ও রব্বুল আলামীনের বন্ধু। আর তার পর নবুওয়াতের প্রত্যেকটি দাবী পথভ্রষ্টতা এবং প্রবৃত্তির লালসার বন্দেগী ছাড়া আর কিছুই নয়।”(শারহুত তাহাবীয়া ফিল আকীদাতিস সালাফিয়া, দারুল মা‌‌আরিফ মিসর, ১৫, ৮৭, ৯৬, ৯৭, ১০০ ও ১০২ পৃষ্ঠা।               
 ৪) আল্লামা ইবনে হাজাম আন্দালুস (৩৮৪-৪৫৬) হি) লিখেছেনঃ নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ ইন্তেকালের পর অহীর সিলসিলা খতম হয়ে গেছে। এর সপক্ষে যুক্তি এই যে, অহী আসে একমাত্র নবীর কাছে এবং মহান আল্লাহ‌ বলেছেন, মুহাম্মাদ তোমাদের পুরুষদের মধ্যে কারো পিতা নয়। কিন্তু সে আল্লাহ‌ রসূল এবং সর্বশেষ নবী (আল মুহাল্লা, প্রথম খন্ড ২৬ পৃষ্ঠা)         
 ৫) ইমাম গাযযালী বলেন-(৪৫০-৫০৫ হি) ১                    لو فتح هذا الباب (اى باب انكار كون الاجماع حجة) ابجو الى امور شنيعة وهو ان قائلا لو قال يجوز ان بيعث رسول بعد نبينا محمد صلى الله عليه وسلم فيبعد التوقف فى تكفيره , ومستبعد استحالة ذالك عند البحث تستمد من الاجماع لامحالة , فان العقل لايحيله , وما نقل فيه من قوله لانبى بعدى , ومن قوله تعالى خاتم النبيين , فلا يعجز هذا القائل عن تاويله , فيقول خاتم النبيين اراد به اولوا العزم من الرسل , فان قالوا النبيين عام , فلا يبعد تخصيص العام , وقوله لا نبى بعدى لم يردبه الرسول وفوق بين النبى والرسول والنبى اعلى مرتبة من الرسول الى غير ذالك من انواع الهذيان , فهذا وامثاله لايمكن ان ندعى استحالته , من حيث مجرد اللفظ , فانا فى تاويل ظواهر التشبيه فضينا باحتمالات ابعد من هذه , ولم يكن ذالك مبطلا للنصوص , ولكن الرد على هذا القائل ان الامة فهمت بالاجماع من هذا اللفظ ومن قرائن احواله انه افهم عدم نبى بعده , ابدا وعدم رسول الله ابدا وانه ليس فيه تاويل ولاتخصيص فمنكر هذا لايكون الامنكر الاجماع (الاقتصاد فى الاعتقاد المطبعة الادبيه , مصر , ص 114)                  
 “যদি এ দরোজাটি (অর্থাৎ ইজমাকে প্রমাণ হিসেবে মানতে অস্বীকার করার দরোজা) খুলে দেয়া হয় তাহলে বড়ই ন্যক্কারজনক ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। যেমন যদি কেউ বলে, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরে অন্য কোন নবীর আগমন অসম্ভব নয়, তাহলে তাকে কাফের বলার ব্যাপারে ইতস্তত করা যেতে পারে না। কিন্তু বিতর্কের সময় যে ব্যক্তি তাকে কাফের আখ্যায়িত করতে ইতস্তত করাকে অবৈধ প্রমাণ করতে চাইবে তাকে অবশ্যইইজমার সাহায্য নিতে হবে। কারণ নিরেট যুক্তি দ্বারা তার অবৈধ হবার ফয়সালা করা যায় না। আর কুরআন ও হাদীসের বাণীর ব্যাপারে বলা যায়, এ মতে বিশ্বাসী কোন ব্যক্তি “আমার পরে আর কোন নবী নেই।” এবং “নবীদের মোহর”এ উক্তি দু’টির নানা রকম চুলচেরা ব্যাখ্যা করতে অক্ষম হবে না। সে বলবে, “খাতামুন নাবীয়্যীন”মানে হচ্ছে অতীব মর্যাদাবান নবীদের আগমন শেষ হয়ে যাওয়া। আর যদি বলা হয়, “নবীগণ” শব্দটি দ্বারা সাধারণভাবে সকল নবীকে বুঝানো হয়েছে, তাহলে এই সাধারণ থেকে অসাধাণ ও ব্যতিক্রমী বের করা তার জন্য মোটেই কঠিন হবে না। “আমার পর আর নবী নেই” এ ব্যাপারে সে বলে দেবে, “আমার পর আর রসূল নেই” একথা তো বলা হয়নি। রসূল ও নবীর মধ্যে পার্থক্য আছে। নবীর মর্যাদা রসূলের চেয়ে বেশী। মোটকথা এ ধরনের আজেবাজে উদ্ভট কথা অনেক বলা যেতে পারে। আর নিছক শাব্দিক দিক দিয়ে এ ধরনের চুলচেরা ব্যাখ্যাকে আমরা একেবারে অসম্ভব ও বলি না। বরং বাহ্যিক উপমার ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে আমরা এর চেয়েও দূরবর্তী সম্ভাবনার অবকাশ স্বীকার করি।  মোট কথা  এ ধরনের আজেবাজে উদ্ভট কথা অনেক বলা যেতে পারে । আর নিছক শাব্দিক দিক দিয়ে এ ধরণর চুলচেরা ব্যাখ্যাকে আমরা একেবারে অসম্ভবও বলি না। বরং বাহ্যিক উপমার ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে আমরা এর চেয়েও দূরবর্তী সম্ভাবনার অবকাশ স্বীকার করি। আর এ ধরণের ব্যাখ্যাকারীদের সম্পর্কে আমরা একথাও বলতে পারিনা যে, কুরআন-হাদীসের সুশ্পষ্ট বক্তব্য সে অস্বীকার করছে। কিন্তু এ অভিমতের প্রবক্তার বক্তব্য খন্ডন করে আমি বলবো, মুসলিম উম্মাহ ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ শব্দ (অর্থাৎ আমার পরে আর কোন নবী নেই) থেকে এবং নবী সা. এর ঘটনাবলীর প্রমাণাদি থেকে এ কথাই বুঝেছে যে, নবী করীম সা. এর উদ্দেশ্য ছিলো একথা বুঝানো যে, তাঁর পরে আর কখনা কোন নবী আসবে না এবং রসূলও আসবে না। এছাড়া মুসলিম উম্মাহ এ ব্যাপারেও একমত যে, এর মধ্যে কোন তাবীল, ব্যাখ্যা ও বিশেষিত করারও কোন অবকাশ নেই। কাজেই এহেন ব্যক্তিকে ইজমা অস্বীকারকারী ছাড়া আর কিছুই বলা যেতে পারে না।  ]]
৬. মুহীউস সুন্নাহ বাগাবী র. (মৃত্যু: ৫১০ হি. তার তাফসীরে মা’আলিমুত তানযীল - এ লিখেচেন, রাসুলুল্লাহ সা: এর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা নবুওয়াতের সিলসিলা খতম করেছেন। কাজেই তিনি সর্বশেষ নবী এবং ইবনে আব্বাস বলেন, আল্লাহ তায়ালা এ আয়াতে ফায়সালা করে দিয়েছেন যে, মুহাম্মদ সা: এর পর কোন নবী নেই (তৃতীয় খন্ড, ১৫৮ পৃ:)
৭. আল্লামা যামাখশরী র. (৪৬৭-৫৩৮ হি.) তাফসীরে কাশশাফে লিখেছেন, যদি তোমরা বলো, রাসুলুল্লাহ সা: শেষ নবী কমেন করে হলেন, কেননা হযরত ঈমা আ: শেষ যুগে নাযিল হবেন, তাহলে আমি বলবো, রাসুলুল্লাহ সা: এর শেষ নবী হবার অর্থ এই যে, তাঁর পরে আর কাউকে নবীর পদে অধিষ্ঠিত করা হবে না। হযরত ঈসা আ: কে রাসুলুল্লাহ সা: এর পূবর্ে নবী বানানো হয়েছে। নাযিল হবার পর তিনি রাসুলুল্লাহ সা: এর অনুসারী হবেন এবং তাঁর কেবলার দিকে মুখ করে নামায পড়বেন। অর্থাৎ তিনি হবেন রাসুলুল্লাহ সা: এর উম্মাতের মদ্যে শামিল (দ্বিতীয় খন্ড ১১৫ পৃষ্ঠা।)
৮. কাযী ইয়ায রা: (মৃত্যু ৫৪৪ হ.) লিখেছেন, যে ব্যক্তি নিজে নবুওয়াতের দাবি করে অথবা একথাকে বৈধ মনে করে যে, যে কোন ব্যক্তি নিজের প্রচেষ্টায় নবুওয়াত হাসিল করতে পারে এবং অন্ততত পরিশদ্ধির মাধ্যমে নবীর পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে ( যেমন কোন দার্শনিক এবং বিকৃতমানা সূফী মনে করেন) এবং এভাবে যে ব্যক্তি নবুওয়াতেহর দাবি করে না কিন্তু একথার দাবি জানায় যে, তার ওপর ওহী নাযিল হয় .....  এ ধণের সমস্ত লোক কাফের  এবং তারা নবী সা: এর নবুওয়াতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে। কেনোনা তিনি খবর দিয়েছেন যে, তিনি শেষ নবী এবং তাঁর পরে আর কোন নবী আসবে না এবং তিনি আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে এ খরব পৌঠিয়েছেন যে, তিনি নবুওয়াতের পরিসমপ্তি ঘটিয়েছেন এবং সমগ্র মানবজিাতির জন্য তাঁকে পাঠনো হয়েছে। সমগ্র মুসলিম সমাজ এ ব্যাপারে একমত যে, এখানে কথাটির বাহ্যিক অর্থটিই গ্রহণীয এবং এর দ্বিতীয় কোন অর্থ গ্রহণ করার সুযোগই এখানে নেই। কাজেই উল্লেখিত দলগুলোর কাফের হওয়া সম্পর্কে কুরআন, হাদীস ও ইজমা’র দৃষ্টিতে কোন সন্দেহ নেই। (শিফা দ্বিতীয় খন্ড ২৭০-২৭১ পৃষ্ঠা)
৯. আল্লামা শাহারাস্তানী র: (মৃত্যু: ৫৪৮ হি:) তাঁর মশহুর কিতাব আল মিলাল ওয়ান নিহালে লিখেছেন, এবং যে ব্যক্তি এভাবেই বলে মুহাম্মদ সা: এর পরও কোন নবী আসবে (হযরত ঈসা আ: ছাড়া ) তার কাফের হওয়া সম্পর্কে যে কোন দু’জন ব্যক্তির মধ্যেও কোন মতবিরোধ থাকতে পারে না । (তৃতীয় খন্ড ২৪৯ পৃষ্ঠা)
১০. ইমাম রাযী র. (৫৪৩-৬০৬ হি.) তাঁর তাফসীরে কবীরে “খাতামুন নাবিয়্যীন” শব্দের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন, এ বর্ণনায় খাতামুন নাবিয়্যীন শব্দ এজন্য বলা হয়েছে যে, যে নবীর পর অন্য কোন নবী আসবেন তিনি যদি উপদেশ এবং নির্দেশাবলীর ব্যাখ্যার ব্যাপারে কিছু অতৃপ্তি রেখে যান, তাহলে তাঁর পর আগমনকারী নবী তা পূর্ণ করতে পারেন। কিন্তু যার পর আর কোন নবী আসবে না, তিনি নিজের উম্মতের ওপর খুব বেশী স্নেহশীল হন এবং তাদেরকে সুষ্পষ্ট নেতৃত্ব দান করেন। কেননা তাঁর দৃষ্টান্ত এমন এক পিতার ন্যায় যিনি জানেন যে, তাঁর মৃত্যুর পর পুত্রের দ্বিতীয় কোন অভিভাবক  এবং পৃষ্ঠপোষক থাকবে না। (ষষ্ঠ খন্ড, ৫৮১ পৃষ্ঠা)
১১. আল্লামা বায়যাবী র: (মৃত: ৬৮৫হি:) তাঁর তাফসীর আনওয়ারুত তানযীল-এ লিখেছেন অর্থাৎ তিনিই শেষ নবী। তিনি নবীদের সিলসিলা খতম করে দিয়েছেন। অথবা তাঁর কারণেই নবীদের সিলসিলার ওপর মোহর লাগানো হয়েছে এবং তাঁর পর হযরত ঈসা আ: এর নাযিল হবার করণে কতমে নবুওয়াতের যপর কোন দেষ আসছে না। কেনোনা তিনি রাসুলুল্লাহ সা: এর দীনের মধ্যেই নাযিল হবে। (চতুর্থ খন্ড, ১৬৪ পৃষ্ঠা) ।
১২. আল্লামা হাফিয উদ্দীন নাসাফী রহ:(মৃত্যু ৮১০ হি:) তাঁর তাফসীরে মাদারেকুত তানযীল-এ লিখেছেন এবং রাসুলুল্লাহ সা: খাতুমুন নাবিয়্যিুন । অর্থাৎ তিনিই সর্বশেষ নবী। তাঁর পর আর কোন ব্যক্তিকে নবী করা হবে না। হযরত ঈসা আ: এর ব্যাপার এই যে, তাঁকে রাসুলুল্লাহ সা: এর পূবর্ে নবীর পদে অধিষ্ঠিত করা হয়েছিলো এবং পরে যখন তিনি নাযিল হবেন, তখন তিনি হবেন রাসুলুল্লাহ সা: এর শরীয়তের অনুসারী । অর্থাৎ, তিনি হবেন রাসুলুল্লাহ সা: এর উম্মত (৪৭১ পৃষ্ঠা) ।
১৩. আল্লামা আলাউদ্দীন বাগদাদী রাহ: (মৃত্যু ৭২৬ হি) তাঁর তাফসীরে “খাজিন”-এ লিখেছেন,  وخاتم النبيين  অর্থাৎو আল্লাহ তায়ালা রাসুলুল্লাহ সা: এর নবুওেয়াত সমাপ্ত করে দিয়েছেন। কাজেই তাঁর পরে আর কোন নবুওয়াত নেই এবং এ ব্যাপারে কেউ তাঁর অংশীদারও নয়। و كان الله بكل شيئ عليما  অর্থাৎو আল্লাহ একথা জানেন যেو তাঁর পর আর কোন নবী নেই্ (৪৭১-৪৭২)।
১৪. আল্লামা ইবনে কাসীর র: (মৃত্যু ৭৭৪ হি:) তাঁর মশহুর তাফসীরে লিখেছেন, অত:পর আলোচ্য আয়াত থেকে একথা ষ্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, যখন রাসুলুল্লাহ সা: এর পর কোন নবী নেই, তখন অপর কোন রাসূলেরও প্রশ্ন উঠতে পারে না। কেননা রিসালাত একটা বিশেষ পদমযর্াদা এবং নবুওয়াতের পদমযর্াদা ব্যাপকধর্মী। প্রত্যেক রাসূল নবী হন, কিন্তু প্রত্যেক নবী রাসূল হন না। ...... রাসুলুল্লাহ সা: এর পর যে ব্যক্তিই এই পদমাযর্াদার দাবি করবে, সেই হবে মিথ্যাবাদী, প্রতারক, দাজ্জাল এবং পথভ্রষ্ট। যতোই সে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন হোক না কেন, তার দাবী মানবার নয়... কিয়ামত পর্যন্ত যেসব ব্যক্তি এই পদমাযর্াদার দাবি করবে, তাদের প্রত্যেকেরই অবস্থা হবে এই ধরণের। (তৃতীয় খন্ড- ৪৯৩-৪৯৪ পৃষ্ঠা)
১৫.  আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহ: (মৃত্যু:৯১১ হি:) তাঁর তাফসীরে জালালাইন - এ লিখেছেন, অর্থাৎ আল্লাহ তাৎআলা জানেন, রাসুলুল্লাহ সা: সা: এর পর আর কোন নবী নেই এবং হযরত ঈসা আ: নাযিল হবার পর রাসুলুল্লাহ সা: এর শরীয়ত মোতাবেকই আমল করবেন (৭৬৮ পৃষ্ঠা)।
১৬. আল্লামা ইবনে নুজাইম রাহ: (মৃত্যু ৯৭০ হি:) উসূরে ফিকহের বিখ্যাত গ্রন্থ আল ইশবাহ ওয়ান নাযায়েরে “কিতাবুস সিয়ারের” ”বাবুর রুইয়ায়” লিখেছেন, যদি কেউ একথা মনে না করে যে, মুহাম্মদ সা: শেষ নবী তাহলে সে মুসলমান নয়। কেননা কথাগুলো জানা এবং স্বীকার করে নেয়া দীনের অপরিহার্য আকীদা-বিশ্বাসের শামিল (১৭৯ পৃষ্ঠা) ।
১৭. মোল্লা আলী আল কারী রাহ:( মৃত্যু-1016) হি: “শারহু ফিকহে আকবার” - এ লিখেছেন, আমাদের রাসুলুল্লাহ সা: এর পর অন্য কোন ব্যক্তির পর অন্য কোন ব্যক্তির নবুওয়াত দাবী করা সর্ববাদীসম্মতভাবে কুফর (২০২ পৃষ্ঠা)।
১৮. শায়খ ইসমাঈল হাক্কী রহ: (মৃত্যু: ১১৩৭ হি:) তাফসীরে রূহুর বায়ন এ উল্লেখিত ্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখেছেন, আলেম সমাজ খাতাম’ শব্দটির  ت - এর ওপর জবর লাগিয়ে পড়েছেন, এর অর্থ হয় খতম করবার যন্ত্র, যার সাহায্যে মোহর লাগানো হয়। অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সা: সকল নবীর শেষে এসেছেন এবং তাঁর মাধ্যমে নবীদের সিলসিলার ওপর মোহর লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। ফারসীতে আমরা একে বলবো “মোহরে পয়গম্বর” অর্থাৎ, তাঁর সাহায্যে নবুওয়াতের দরজা মোহর লাগিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং পয়গাম্বরদের সিলসিলা খতম করে দেয়া হয়েছে। অন্য বিশেষজ্ঞরা “তা”-এর নীচে জের লাগিয়ে পড়েছেন “খাতিমুন নাবিয়্যিন”। অর্থাৎ, রাসুলুল্লাহ সা: ছিলেন মোহর দানকারী। অন্য কথায় বলা যাবে, পয়গম্বরদের যপর মোহরকারী। এভাবে এ শব্দার্থা “খাতাম” এর সমার্থ হয়ে দাঁড়াবে। তাহলে রাসুলুল্লাহ সা: এরপর তাঁর উম্মতের আলেম সমাজ তাঁর কাছে থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাবেন একমাত্র তাঁর প্রতিনিধিত্ব। তাঁর িইন্তেকালের সাথে সাথেই নবুওয়াতের উত্তরাধিকারেরও পরিসমাপ্তি ঘটেছে এবং তাঁর পরে হযরত ঈসা আ: এর নাযিল হবার ব্যাপারটি তাঁর নবওয়াতকে ত্রুটিযুক্ত করবে না। কেননা খাতিমুন নাবিয়্যীন হবার অর্থ হলো, তাঁর পর আর কাউকে নবী বানানো হবে না এবং হযরত ঈসা আ: কে তাঁদের পূরেবই নবী বানানো হয়েছে। কাজেই তিনি রাসুলুল্লাহ সা: এর অনুসারীর মধ্যে শামিল হবেন, রাসুলুল্লাহ সা: এর কিবলার দিকে মুখ করে নামায পড়বেন এবং তাঁরই উম্মাতের অন্তরভূক্ত হবেন। তখন হযরত ঈসা আ: এর নিকট ওহী নাযিল হবে না এবং তিনি কোন নতুন বিধানও জারি করবেন না, বরং তিনি হবেন রাসুলুল্লাহ সা: এর প্রতিনিধি। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এ ব্যাপারে একমত যে, আমাদের নবীর পর আর কোন নবী নেই। কেননা আল্লাহ বলেছেন, মুহাম্মদ সা: শেষ নবী এবং রাসুলুল্লাহ সা: বলেছেন, আমার পরে কোন নবী নেই। কাজেই এখন যে বলবে, মুহাম্মদ সা: এর পর নবী আছে তাকে কাফের বলা হবে। কেননা সে কুরআনকে অস্বীকার করেছে এবং অনুরূপভাবে সে ব্রক্তিকেও কাফের বলা হবে যে এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করবে। কেননা সুষ্পষ্ট যুক্তি প্রমাণের পর হক বাতিল থেকে পৃথক হয়ে গেছে এবং যে ব্যক্তি মুহাম্মদ সা: এর নবুওয়াতের দাবী করবে, তার দাবী বাতিল হয়ে যাবে (২২ খন্ড, ১৮৮ পৃষ্ঠা)।
১৯. শাহানশাহ আওরঙ্গযেব আলমগীরের নির্দেশে বারো’শ হিজরীতে পাক-ভারতের বিশিষ্ট আলেমগণ সম্মিলিতভাবে “ফতোয়ায়ে আলমগিরী” নামে যে কিতাবটি লিপিবদ্ধ করেন তাতে উল্লেখিত হয়েছে যদি কেউ মনে করে যে,  মুহাম্মদ সা: শেষ নবী নন, তাহলে সে মুসলমান নয় এবং যদি সে বলে, আমি আল্লাহর রাসুল বা পয়গাম্বর, তাহলে তার ওপর কুফরীর ফতোয়া দেয়া হবে (দ্বিতীয় খন্ড ২৬৩ পৃষ্ঠা)।
২০. আল্লামা শাওকানী রাহ: (মৃত্যু ১২৫৫ হি:) তাঁর তাফসীর ফাতহুল কাদীরে লিখেছেন, সমগ্র মুসলিম সমাজ “খাতিম” এর “তা” এর নীচে জের লাগিয়ে পঢ়েছেন এবং একমাত্র আসেম জবরের সাথে পড়েছেন। প্রথমটার অর্থ হলো, রাসুলুল্লাহ সা: সমস্ত পয়গাম্রকে খতম করেছেন অর্থাৎ তিনি সবার শেষে এসেছেন এবং দ্বিতীয়টির অর্থ হলো, তিনি সমস্ত পয়গাম্বরের জন্য মোহরস্বরূপ এবং এর সাহায্যে নবীদের সিলসিলা মোহর এঁটে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে তাঁদের দলটি সর্বাঙ্গ সুন্দর হয়েছে (চতুর্থ খন্ড, ২৭৫ পৃষ্ঠা)।
২১. আল্লামা আলূসী রাহ: (মৃত্যু ১২৮০ হি:) তাফসীরে রূহুল মা’আনীতে লিখেছেন, নবী শব্দটি রাসূলের চাইতে বেশী ব্যাপক অর্থব্যঞ্জক । কাজেই রাসুলুল্লাহ সা: এর খাতিমুন নাবিয়্যীন হবার অর্থ হলো, তিনি খাতিমুল মুরসালীনও। তিনি শেষ নবী এবং শেষ রাসূল একথার অর্থ এই যে, এ দুনিয়া তাঁর নবুওয়াতের গুণে গুণান্বিত হবার পরেই মানুষ এবং জিনের মধ্য থেকে এ গুণটি চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে (২২ খন্ড, ৩২ পৃষ্ঠা)।
রাসুলুল্লাহ সা: এর পর যে ব্যক্তি নবুওয়াতের ওহীর দাবি করবে, তাকে কাফের বলে গণ্য করা হবে। এ ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে দ্মিতের অবকাশ নেই। (২২ খন্ড, ৩৮ পৃষ্ঠা)।
”রাসুলুল্লাহ সা: শেষ নবী - একথাটি কুরআন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছে, রাসুলুল্লাহ সা: এর সুন্নাত এটিকে সুষ্পষ্টরূপে ব্যাখ্যা করেছে এবং সমগ্র মুসলিম সমাজ এর ওপর আমল করেছে। কাজেই যে ব্যক্তি এর বিরোধী কোন দাবি করবে, তাকে কাফের গণ্য করা হবে” (২২ খন্ড, ৩৯ পৃষ্ঠা)।
বাংলা-পাক-ভারত উপমহাদেশ থেকে মরক্কো ও স্পেন এবং তুর্কী থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত মুসলিম জাহানের শ্রেষ্ঠ আলেম, ফকীহ, মুহাদ্দির ও তাফসীরকারণের ব্যাখ্যা ও মতামত আমি এখানে উল্লেখ করলাম। তাঁদের নামের সাথে সাথে তাঁদের জন্ম ও মৃত্যূ তারিখও উল্লেখ করেছি। এ থেকেই ধারণা করা যাবে যে, হিজরী প্রথম শতাব্দী থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত ইসলামের ইতিহারেস শেষ্ঠ আলেমগণ এর মধ্যে শামিল আছেন। হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর আলেম সমাজের মতামতও আমি এখানে উল্লেখ করতে পারতাম, কিন্তু ইচ্ছা করেই তাঁদেরকে বাদ দিয়েছি। কেননা তাঁরা মীর্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সমসাময়িক এবং হয়তো অনেকে বলতে পানে যে, মীর্জা সাহেবের বিরোধিতার মনোভাব নিয়েই তাঁরা খতমে নবুওয়াতের এই অর্থ বিবৃত করেছেন। এজন্য মীর্জা সাহেবের পূর্ববর্তী যুগের আলেম সমাজের মতামতের উদ্ধৃতিই এখানে পেশ করেছি - যেহেতু মীর্জা সাহেবের সাথে তাঁদের বিরোধের প্রশ্নই উঠতে পারেনা।
এসব মতামত থেকে একথা চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, হিজরী প্রথম শতাব্দী থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম জাহান একযোগে খাতুমুন নাবিয়্যীন শব্দের অর্থ নিয়েছে “শেষ নবী”। প্রত্যেক যুগের মুসলমানরাই এ একই আকীদা পোষণ করেছেন েযে, রাসুলুল্লাহ সা: এর পর নবুওয়াতের দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। একথা তাঁরা একযোগে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি মুহাম্মদ সা:  েএর পর নবী অথবা রাসূল হবার দাবী করলো এবং কোনো ব্যক্তি তার দাবি মেনে নিলে, সে কাফের হয়ে যায়, এ ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে কোনো যুগে সামান্যতম মতবিরোধও সৃষ্টি হয়নি।
অতএব এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যেক বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিই ফায়সালা করতে পারেন যে, “খাতামুন নাবিয়্যীন” শব্দের যে অর্থ আরবী অভিধান থেকে প্রমাণিত হয়, কুরআনের আয়াতের পূবর্াপর বর্ণনা থেকে যে অর্থ প্রতীয়মান হয়, রাসুলুল্লাহ সা: নিজেই যা ব্যাখ্যা করেছেন, সাহাবায়ে কেরাম যে সম্পর্কে মতৈক্য পোষণ করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম সমাজ একযোগে দ্ব্যর্থহীনভবে যা স্বীার করে আসছেন, তার বিপক্ষে দ্বিতীয় কোন অর্থ গ্রহণ অর্থাৎ কোনো নতুন দাবিদারের জন্য নবুওয়াতের দরজা উন্মুক্ত করার অবকাশ ও সুযোগ থাকে কি ? এবং এ ধরণের লোকদেরকে কেমন করে মুসলমান বলে স্বীকার করা যায়, যারা নবুওয়াতের দরজা উন্মুক্ত করার নিছক ধারণাই প্রকাশ করেনি, বরং ঐ দরজা দিয়ে এক ব্যক্তি নবুওয়াতের দালানে প্রবেশ করেছে এবং তারা তার নবুওয়াতের ওপর ঈমান পর্যন্ত এনেছে ? এই ধারাবাহিকতায় আরো তিনটি কথা বিবেচনা করতে হবে।
আমাদের ঈমানের সাথে আল্লাহর কি কোন শত্রুতা আছে ?
প্রথম কথা হলো, নবুওয়াতের ব্যাপারিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কুরআনের দৃষ্টিতে এ বিষয়টি ইসলামের বুনিয়াদী আকীদার অন্তরভূক্ত, এটি স্বীকার করার আর বা না করার ওপর মানুষের ঈমান ও কুফরী নির্ভর করে। কোন ব্যক্তি যদি নবী হয় এবং লোকেরা তাকে না মানে তাহলে তারা কাফের হয়ে যায়। আবার কোন ব্যক্তি নবী না হওয়া সত্ত্বেও যারা তাকে নবী বলে স্বীকার করে, তারাও কাফের হয়ে যায়। িএ ধরণের গুরুতর পরিস্থিতিতে আল্লাহর নিকট থেকে কোন প্রকার অসতর্কতার আশা করা যায় না। যদি মুহাম্মদ সা:  এর পর কোন নবী আসার কথা থাকতো  তাহলে আল্লাহ নিজেই কুরআনে স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তা ব্যক্ত করতেন, রাসুলুল্লাহ সা: এর মাধ্যমে প্রকাশ্যভাবে তা ঘোষণা করতে এবং রাসুলুল্লাহ সা: কখনো এ দুনিয়া থেকে তাশরীফ নিয়ে যেতেন না যতক্ষণ না তিনি সমগ্র উম্মতকে এ ব্যাপারে পুরোপুরি অবগত করতেন যে, তাঁর পরে আরো নবী আসবেন এবং আমরা সবাই তাঁদেরকে মেনে নিতে বাধ্য থাকবো। এটা কিভাবে সম্ভব যে, রাসুলুল্লাহ সা: এর পর নবুওয়াতের দরজা উন্মুক্ত থাকবে এবং এ দরজা দিয়ে কোন নবী প্রবেশ করবে, যার ওপর ঈমান না আনলে আমরা মুসলমান থাকতে থাকতে পরিনা, অথচ আমাদের এ সম্পর্কে শুধু বেখবরই রাখা হয়নি, বরং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল একযোগে এমন সব কথা বলেছেন, যার ফলে তেরোশত বছর পর্যন্ত উম্মত একথা মনে করছিলো এবং আজও মনে করে যে, মুহাম্মদ সা: এর পর আর কোন নবী আসবেন না। আমাদের দীন ও ঈমানের বিরুদ্ধে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে তো   কোন শত্রুতা নেই।
তর্কের খাতিরে যদি একথা মেনেও নেয়া যায় যে, নবুওয়াতের দরজা উন্মুক্ত আছে এবং কোনো নবী আসার পর আমরা যদি নির্ভয়ে এবং নিশ্চিন্তে তাঁকে অস্বীকার করে বসি, তাহলে ভয় থাকতে পারে একমাত্র আল্লাহর দরবারে জিজ্ঞাসাবাদের। কিন্তু কিয়ামতের দিন তিনি আমাদের নিকট থেকে এ সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করলে আমরা সোজাসুজি উল্লেখিত রেকর্ডগুলে তাঁর আদালতে পেশ করবো। এ থেকে অন্তত: প্রমাণ হয়ে যাবে যে, (মাআযাল্লাহ) আল্লাহর কিতাব এবং রসূলের সুন্নাতই আমাদের তথাকথিত কুফরীর মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। আমরা নির্ভয়ে বলতে পারি যে, এসব রেকর্ড দেখার পর কোন নতুন নবীর ওপর ঈমান না আনার জন্য আল্লাহ আমাদের শাস্তি দেবেন না। কিন্তু যদি সত্যি সত্যিই নবুয়াতের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়ে থাকে এবং কোন নতুন নবী যদি না আসতে পারে এবং এসব সত্ত্বেও কেউ কোন নবুওয়াতের দাবিদারের ওপর যদি ঈমান আনে, তাহলে তার চিন্তা করা উচিত যে, এ কুফরীর অপরাধ থেকে রক্ষা পাবার জন্য সে আল্লাহর দরবারে এমন কি রেকর্ড পেশ করতে পারবে, যার ফলে সে মুক্তি লাভের আশা করতে পারে, আদালতে হাজির হওয়ার পূর্বে তার নিজের জবাবদিহির জন্য সংগৃহীত দলীল প্রমাণগুলো এখানেই বিশ্লেষণ করে নেয়া উচিত এবং আমরা যেসব দরীল প্রমাণ পেশ করেছি, তার পরিপ্রেক্ষিতে তার বিবেচনা করা উচিত যে, নিজের জন্য যে সাফাইয়ের ওপর নির্ভর করে সে এ কাজ করছে, কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি কি এর ওপর নির্ভর করে কুফরীর শাস্তি ভোগ করা  বিপদকে স্বাগতম জানাতে পারে ?
শেষ পর্যন্ত এখন নবীর প্রয়োজনই বা কি ?
দ্বিতীয় কথা হলো, ইবাদত ও আমল -আখলাকে উন্নতি করে কোন ব্যক্তি নিজের মধ্যে নবুয়াতের গুণ পয়দা করতে পারে না। নবুওয়াতের যোগ্যতা কোন অর্জন করার জিনিস নয়। কোন বিরাট খেদমতের পুরস্কারস্বরূপ মানুষকে নবুওয়াত দান করা হয় া। বরং বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে আল্লাহ কোন বিশেষ ব্যক্তিকে এ মযর্াঃদা দান করে থাকেন। এ প্রয়োজনের সময় যখন উপস্থিত হয় তখনই আল্লাহ এক ব্যক্তিকে এ মযর্াদায় প্রতিষ্ঠিত করেন এবং যখন প্রয়োজন পড়ে না অথবা থাকে না তখন অযথা আল্লাহ নবীর পর নবী প্রেরণ করতে থাকেন না। কুরআন মাজীদ থেকে যখন আমরা একথা জানবার চেষ্ট করি যে, কোন পরিস্থিতিতে নবী প্রেরণের প্রয়োজন দেখা যে, তখন সেখানে এ ধরণের চারটি অবস্থার সন্ধান পাওয়া যায় :
এক. কোন বিশেষ জাতির মধ্যে এজন্য নবী প্রেরণের প্রয়োজন হয় যে, তাদের মধ্যে ইতিপূর্বে কোন নবী আসেনি এবং অন্য কোন জাতির মধ্যে প্রেরিত নবীর পয়গামও তাদের নিকট পৌছেনি।
দুই. নবী পাঠাবার এজন্য প্রয়োজন হয়, সংশ্লিষ্ট জাতি ইতিপূর্বে প্রেরিত নবীদের শিক্ষা ভূলে যায় অথবা তা বিকৃত হয়ে যায় এবং তাদের প্রদর্শিত পথ অনুসরণ অসম্ভব হয়ে পড়ে।
তিন. ইতিপূর্বে প্রেরিত নবীদে মাধ্যমে জনগণের শিক্ষা পূর্ণতা লাভ করতে পারেনি এবং দীনের পূর্ণতার জন্য অতিরিক্ত নবীর প্রয়োজন হয়।
চার. কোন নবীর সাথে তাঁর সাহায্য সহযোগিতার জন্য আর একজন নবীর প্রয়োজন হয়।
এখন একথা সুষ্পষ্ট যে,  উপরের এ বিষয়গুলোর মধ্য থেকে কোনটিই আর নবী সা: এর পর বিদ্যমান নেই।
কুরআন  নিজেই বলছে, রাসুলুল্লাহ সা: কে সমগ্র দুনিয়ার জন্য হিদায়তকারী হিসেবে পাঠানো হয়েছে। দুনিয়ার সাংস্কৃতিক ইতিহাস একথা বলে যে, তাঁর নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে সমগ্র দনিয়ায় এমন অবস্থা বিরাজ করছে, যাতে তাঁর দাওয়াত সব সময় দুনিয়ার সকল জাতির মধ্যে পৌছতে পার। এর পরেও প্রত্যেক জাতির মধ্যে পৃথক পৃথক নবী প্রেরেণের কোন প্রয়োজন থাকে না।
কুরআন একথাও বলে  এবং ্কই সাথে হাদীস এবং সীরাতের যাবতীয় বর্ণনাও একথার সাক্ষ্য দেয় যে, রাসুলুল্লাহ সা: এর শিক্ষা পুরোপুরি নির্ভূল এবং নির্ভেজাল আকারে সংরক্ষিত রয়েছে। এর মধ্যে কোন প্রকার বিকৃতি বা রদবদল হয়নি। তিনি যে কুরআন এনেছিলেন তার মধ্যে আজ পর্যন্ত একটি শব্দেরও কমবেশী হয়নি িএবং কিয়ামত পর্যন্তও তা হতে পারবে না। নিজের কথা ও কর্মের মাধ্যমে যে নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন তাও আজ আমরা এমনভাবে পেয়ে যাচ্ছ, যেনো আমরা তাঁর যুগেই বসবাস করছি। কাজেই দ্বিতীয় প্রয়োজনটাও খতম হয়ে গেছে।
আবার কুরআন মাজীদ স্পষ্ট ভাষায় একথাও ব্যক্ত করে যে, রাসুলুল্লাহ সা: এর মাধ্যমে আল্লাহর দীনকে পূর্ণতা দান করা হয়েছে। এতএব দীনের পূর্ণতার জন্যও এখন আর কোন নবীর প্রয়োজন  নেই।
এখন বাকি থাকে চতুর্থ প্রয়োজনটি। এ সম্পর্কে আমার বক্তব্য হলো, এজন্য যদি কোন নবীর প্রয়োজন হতো তাহলে রাসুলুল্লাহ সা: এর যুগে তাঁর সাথেই তাকে প্রেরণ করা হতো। কিন্তু একথা সবাই জানেন যে, এমন কোন নবী রাসুলুল্লাহ সা: এর যুগে প্রেরণ করা হয়নি। তাই এ কারণটাও বাতিল হয়ে গেছে।
এখন আমরা জানতে চাই, রাসুলুল্লাহ সা: এর পর আর একজন নতুন নবী আসার পঞ্চম কারণটা কি ? যদি কেহ বলে, সমগ্র উম্মত বিগড়ে গেছে, কাজেই তাদের সংস্কারের জন্য আর একজন নতুন নবীর প্রয়াজন তাহলে তাকে আমরা জিজ্ঞেস করবো, নিছক সঙস্কারের জন্য দুনিয়ায় আজ পর্যন্ত কি কোন নবী এসছেন যে, শুধু এ উদ্দেশ্যেই আর একজন নতুন নবী আবির্ভাব হলো ?  অহী নাযিল করার জন্যই তো নবী প্রেরণ করা হয়। কেননা নবীর নিকটে ওহী নাযিল করা হয়। আর ওহীর প্রয়োজন পড়ে কোন নতুন পয়গাম দেয়ার অথবা পূর্ববর্তী পয়গামকে বিকৃতি থেকে রক্ষা করার জন্য, আল্লাহর কুরআন এবং রাসুলুল্লাহ সা: এর সুন্নাত সংরক্ষিত হয়ে যাবার পর যখন আল্লাহর দীন পরিপূর্ণ হয়ে গেছেএবং ওহীর সমস্ত সম্ভব্য প্রয়োজন খতম হয়ে গেছে, তখন সংস্কারের জন্য একমাত্র সংস্করকের প্রয়োজনই বাকী রয়ে গেছে  - নবীর প্রয়োজন নয়।
নতুন নবুওয়াত বর্তমানে মুসলমনদের জন্য রহমত নয়,অভিশাপ: -
তৃতীয় কথা হলো, যখনই কোন জাতির মধ্যে নবীর আগমন হবে, তখনই সেখানে প্রশ্ন উঠবে কুফর ও ঈমানের । যারা ঐ নবীকে স্বীকার করে নেব, তারা এক উম্মতভুক্ত  হবে এবং যারা তাকে অস্বীকার করবে তারা অবশ্যই একটি পৃথক উম্মতে শামিল হবে। এ দুই উম্মতের মতবিরোধ কোন আনুসাঙ্গিক মতবিরোধ বলে গণ্য হবে না। বরং এটি এমন একটি বুনিয়াদী মতবিরোধের পযর্ায়ে চলে আসবে, যার ফলে তাদের একটি দল যতদিন না নিজের আকীদা-বিশ্বাসকে পরিত্যাগ করবে ততদিন পর্যন্ত তারা দুই দল কখনো একত্র হতে পারবে না। এছাড়াও কার্যত তাদের প্রত্যেকের জন্য হিদায়তা এবং আইনের উৎস হবে বিভিন্ন। কেননা একটি দল তাদের নিজেদের নবীর ওহী ও সুন্নাত থেকে আইন প্রণয়ন করবে এবং দ্বিীয় দলটি প্রথমত এ দু’টিকে তাদের আইনের উৎস হিসেবে মেনে নিতেই অস্বীকার করবে। কাজেই তাদের উভয়ের সম্মিলনে একটি সমাজ সৃ্ষ্টি কখনো সম্ভব হবে না।
এ প্রোজ্জ্বল সত্যগুলো পর্যবেক্ষণ করার পর যে কোন ব্যক্তি ষ্পষ্ট বুঝতে পারবেন, “খতমে নবুওয়াত” মুসলিম জাতির জন্য আল্লাহর একটি বিরাট রহমতস্বরূপ। এর বদৌলতেই সমগ্র মুসলিম উম্মাহএকটি চিরন্তন বিশ্বব্যাপী ভ্রাতৃত্বে শামিল হতে পেরেছে। এ জিনিসটা মুসলমানদেরকে এখন সব মৌলিক মতবিরোধ থেকে রক্ষা করেছে, যা তাদের মধ্যে চিরন্তন বিচ্ছেদের বীজ বপন করতো। অতএব, যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সা: কে হিদায়তদানকারী এবং নেতা বলে স্বীকার করে এবং তিনি যে শিক্ষা দিয়েছেন তাছাড়া অন্য কোন হিদায়াতের উৎসের দিকে ঝুঁকে পড়তে চায় না, সে আজ এই বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের অন্তরভুক্ত হতে পারবে। নবুওয়াতের দরজা বন্ধ না হয়ে গেলে মুসলিম উম্মাহ কখনো এ ঐক্যের সন্ধান পেত না। কেননা প্রত্যেক নবীর আগমনের পর এ ঐক্য ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতো।
চিন্তা-ভাবনা করলে মানুষের বিবেক-বুদ্ধিও একথাই সমর্থন করে যে, একটি বিশ্বজনীন ও পরিপূর।ন দীন দিয়ে দেয়ার এবং তাকে সকল প্রকার বিকৃতি ও রদবদল থেকে হেফাযত করার পর নবুওয়তের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়াই উচিত । এর ফলে সম্মিলিত ভাবে এই শেষ নবীর অনুগমন করে সমগ্র দুরিয়ার মুসলমান চিরকালের জন্য  একই উম্মতের অন্তরভুক্ত থাকতে পারবে এং বিনা প্রয়োজনে নতুন নতুন নবীদের আগমন উম্মতের মধ্যে বারবার বিভেদ সৃষ্টি করতে পারবে না। নবী “যিল্লী” হোক অথবা “বুরূযী” “উম্মতওয়ালা” ”শরীয়তওয়ালা” বা “কিতাব ওয়ালা” - যে কোন অবস্থায়ই যিনি নবী হবেন এবং আল্লাহর পক্ষ হতে যাকে প্রেরণ করা হবে, তাঁর আগমনের অবশ্যম্ভাবী ফল এই দাঁড়াবে যে, তাঁকে যারা মেন নেবে, তারা হবে একটি উম্মত আর যারা মানবে না তারা কাফের বলে গণ্য হবে। যখন নবী প্রেরণের সত্যিকার প্রয়োজন দেখা যায়, তখন - শুধুমাত্র তখনই - এ বিভেদ অবশ্যম্ভাবী হয়। কিন্তু যখন তাঁর আগমনের কোন প্রয়োজন থাকে না, তখন আল্লাহর পরম প্রজ্ঞা এবং তাঁর রহমতের নিকট কোনক্রমেই আশা করা যায় না যে, তিনি নিজের বান্দাদেরকে অযথা কুফর ও ঈমানের সংঘর্ষে লিপ্ত করবেন এবং তাদেরকে সম্মিলিতভঅবে একটি উম্মতভুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবেন না। কাজেই কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা’ থেকে যা কিছু প্রমাণিত হয়, মানুষের বিবেক-বুদ্ধিও তাকে নির্ভুল বলে স্বীকার করে এবং তা থেকে একথাই প্রমাণিত হয় যে, বর্তমানে নবুওয়াতের দরজা বন্ধ থাকাই উচিত।
”প্রতিশ্রুত মসীহ” - এর তাৎপর্য :-
নতুন নবুওয়াতের দিকে আহ্বানকারীরা সাধারণতঅজ্ঞ মুসলমানদেরকে বলে থাকে, হাদীসে “প্রতিশৃুত মসীহ” আসবেন বলে খবর দেয়া হয়েছে। আর মসীহ নবী ছিলেন। কাজেই তাঁর আগমনের ফলে খতমে নবুওয়াত কোন দিক দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে না। বরং খতমে নবুওয়াত এবং “প্রতিশ্রুত মসীহ”- এর আগমন দুটোই সমপর্যায়ে সত্য।
এ প্রসঙ্গে তারা আরো বলে যে, হযরত ঈসা ইবনে মারয়াম প্রতিশ্রুতমসীহ নন, তাঁর মৃত্যু হয়েছে। হাদীসে যাঁর আগমনের খবর দেয়া হয়েছে তিনি হলেন “মাসীলে মসীহ” অর্থাৎ হযরত ঈসা আ: সদৃশ একজন মসীহ এবং তিনি “অমুক” ব্যক্তি যিনি সম্প্রতি আগমন করেছেন। তাঁকে মেনে নিলে খতমে নবুওয়াত বিশ্বাসের বিরোধিতা করা হয় না।
এ প্রতারণার পর্দা ভেদ করবার জন্য আমি এখানে হাদীসের নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ থেকে এ ব্যপারে উল্লেখিত প্রামাণ্য হাদীস সমূহ সূত্র সহ নকল করছি। এসব হাদীস প্রত্যক্ষ করে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেই বুঝতে পারবেন, রাসুলুল্লাহ সা: কি বলেছিলেন এবং আজ তাঁকে কিভঅবে চিত্রিত করা হচ্ছে।
হযরত ঈসা  ইবনে মারয়াম আ: এর পুনরায় আগমন সম্পর্কিত হাদীস সমূহ :-
1- عن ابي هريرة قال قال رسولالله ﷺ والذي نفسي بيده ليوشكن ان ينزل فيكم ابن مريم حكما عدلا فيكسر الصليب ويقتل الخنزر ويضع الحرب ويفيض المال حتي لا يقبله احد حتي تكون السخدة الواحدة خير من الدنيا وما فيها - بخاري - كتاب احاديث الانبياء - باب نزول عيسي ابن مريم - مسلم -باب بيان نزول عيسي - ترمزي ابواب افتن - باب في نزول عيسي - مسند احمد مرويات ابو هريرة رض-

১. হযরত আবু হুরাইরা রা: বলেন, রাসুলুল্লাহ সা: বলেচেন : সেই মহান সতাতার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে ইবনে মারয়াম ন্যায়বিচারক শাসকরূপে আবির্ভূত হবেন। অত:পর তিনি ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন। ১। এবং যুদ্ধ খতম করে দেবেন (বর্ণনান্তরে যুদ্ধের পরিবর্তে জিয্ য়া শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে অর্থাৎ জিযিয়া খতম করে দেবেন।)২ । তখন ধন-সম্পদের পরিমাণ এতো বৃদ্ধি পাবে যে, তা গ্রহণ করার লোক থাকবে না এবং (অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌছবে যে মানুষ আল্লাহর জন্য ) একটি সিজদা করে নেয়াটাকেই দুনিয়া এবং দুনিয়ার যাবতীয় বস্তুর চাইতে বেশী মূল্যবান মনে করবে (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আহমদ)
-------------------------
১. ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলার এবং শুকর হত্যার করার অর্থ এই যে, একটি পৃথক ধর্ম  হিসেবে  ঈসায়ী ধর্মের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ঈসায়ী ধর্মের সমগ্র কাঠামো এ আকীদার ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে রয়েছে যে, আল্লাহ তাঁর একমাত্র পুত্রকে [অর্থাৎ ঈসা আ: কে ] ক্রুশবিদ্ধ করে “অভিশাপপূর্ণ মৃত্যু “ দান করেছেন এবং এতেই সমস্ত মানুষের গুণাহের কাফফারা হয়ে গেছে। অন্যান্য নবীদের উম্মতের সাথে ঈসায়ীদের পার্থক্য হলো, এরা শুধু আকীদাটুকু গ্রহণ করেছে, অত:পর আল্লাহর সমস্ত শরীয়ত নাকচ করে দিয়েছে। এমনকি শূকর ভক্ষণও এরা হালাল করে নিয়েছে - যা সকল নবীর শরীয়তে হারাম। কাজেই হযরত ঈসা আ: নিজে এসে যখন বলবেন, আমি আল্লাহর পুত্র নই, আমাকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়নি এবং আমি কারো গুণাহের কাফফারা হইনি, তখন ঈসায়ী ধর্মবিশ্বাসের বুনিয়াদই সমূলে উৎপাটিত হবে। অনুরূপভাবে যখন তিনি বলবেন, আমার অনুসারীদের জন্য আমি শুকর হালাল করিনি এবং তাদেরকে শরীয়তের বিধিনিষেধ থেকে মুক্তিও দেইনি, তখন ঈসায়ী ধর্মের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যও নির্মূল হয়ে যাবে।
২. অন্য কথায় বলা যায়, তখন ধর্মের বৈষম্য ঘুচিয়ে মানুষ একমাত্র দীন ইসলামের অন্তরভুক্ত হবে। এর ফল তার যুদ্ধের প্রয়োজন হবে না এবং কারো কাছ থেকে জিযয়াও আদায় করা হবে না। পরবর্তী ৫ এবং ১৫ নং হাদীস একথাই প্রমাণ করেছে।
--------------------------
২, অন্য একটি হাদীসে হযরত আবু হুরাইরা রা: বর্ণনা করেছেন যে,
لا تقوم الساعة حتي ينزل عيسي ابن مريم -
“ঈসা ইবনে  মারয়াম আগমন না করা পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না .... “ এবং এরপর উপরোল্লিখিত হাদীসের মতো একই বিষয়বস্তু বলা হয়েছে। (বুখারী, কিতাবুল মাজালিম, বাবু কাসরিস সালীব, ইবনে মাজাহ, কিতাবুল ফিতান, বাবু ফিতনাতিদ দাজ্জাল)।
عن عبي هريرة ان  رسول الله ﷺ قال كيف انتم اذا نزل ابن مريم فيكم واما مكم منكم - بحاري ء كتاب احاديث الانبياء -باب نزول عيسي - مسلم بيان نزول عيسي - مسند احمد - مرويات ابي هريرة -
৩.  হযরত আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সা: বলেন : কেমন হবে তোমরা যখন তোমাদের মধ্যে ইবনে মারয়াম নাযিল হবেন এবং তোমাদের ইমাম নিজেদের মধ্য থেকেই নিযুক্ত হবেন। ১
----------------
১. অর্থাৎ হযরত ঈসা আ: নামাযে ইমামতি করবেন না। মুসলমানদের পূর্ব নিযুক্ত ইমামের পেছনে তিনি এক্তেদা করবেন।
---------------
عن عبي هريرة ان  رسول الله ﷺ قال ينزل عيس الن مريم فيقتل الخنزير ويمحوا الصليب وتجمع له الصلواة و ويعطي المال حبي لا يقبل ويضع الخراج وينزل الروحا ء فيحج منها او يعبمرءاو يجمعها - مسنل احمد - بسلسله مرويات ابي هريرة رض - مسلم - كتاب الحج باب جواز التمته في الحج والقران -

৪. হযরত আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত।  রাসুলুল্লাহ সা: বলেন: ঈসা ইবনে মারয়াম নাযিল হবেন। অত:পর তিনি শুকর হত্যা করবেন, ক্রুশ ধ্বংস করবেন, তাঁর জন্য একাধিক নামায এক ওয়াক্তে পড়া হবে। তিনি এতো ধন বিতরণ করবেন যে, অবশেষে তার গ্রহীতা পাওয়া যাবে না। তিনি কর মওকুফ করে দেবেন। আর রাওহা২ নামক স্থানে অবস্থান করে তিনি সেখান থেকে হজ্জ অথবা ওমরাহ করবেন অথবা দুটোই করবেন। ৩ ( রাসুলুল্লাহ সা: এর মধ্যে কোনটি বলেছিলেন এ ব্যাপারে বর্ণনাকারীর সন্দেহ রয়ে গেছে (মুসলিম, আহমদ)
----------------
২. আর রওহা মদীনা থেকে ২৫ মাইল দূরের একটি স্থানের নাম।
৩. উল্লেখ্য যে, এ যুগে যাকে “মাসীলে মাসীহ” গণ্য করা হয়েছে তিনি জীবনে কখনো হজ্জ বা উমরাহ কোনটাই করেননি।
----------------
عن ابي هريرة (بعد ذكر خروج الدخال) فبينما هم يعدون للقبال يسرون الصفوف اذا اقيمت الصلوة فينزل عيسي الن مريم فامهم فاذاراء عدو الله يذب كما يذوب الملح في الما ء فلو تركه لا نذاب حتي يهلك ولكن يقتله الله بيده دمه في حربته - مشكواة - كتاب الفتن - باب الملاحم- بحواله مسلم -
৫. হযরত আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত।  দাজ্জালের আবির্ভাব বর্ণনার পর রাসুলুল্লাহ সা: বলেন : ইত্যবসরে যখন মুসলমানরা তার সাথে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকবে, নামাযের ইকামত হলে পর কাতারবদ্ধ হতে থাকবে তখন ঈসা ইবনে মারয়াম নাযিল হবেন এবং নামাযে মুসলমানদের ইমামতি করবেন। আল্লাহর দুশমন দাজ্জাল তাঁকে দেখতেই এমনভাবে বিগলিত হতে থাকবে যেমন পানিতে লবণ গলে যায়। যদি ঈসা আ: তাকে এ অবস্থায় পরিত্যাগ করেন, তাহলেও সে বিগলিত হয়ে মারা পড়বে। কিন্তু আল্লাহ তাকে হযরত  ঈসা আ:  এর হাতে কতল করবেন। তিনি দাজ্জালের রক্তে রঞ্জিত নিজের বর্শাফলক মুসলমানদের দেখাবেন। (মুসলিম থেকে মেশকাত )
عن ابي هريرة ان النبي ﷺ قال ليس بيني وبينه نبي (يعني عيسي ) وانه نازل فاذا رايتموه فاعرفوه رجل مربوع الي الحمره والبيا ض بين ممصر بين كان راصه يقطروان لم يصبه بلل فيقاتل الناس علي الاسلام فيدق الصليب ويقتل الخنزير ويضع الخزية ويهلك الله في زمانه الملل كلها الا الاسلام ويهلك المسيح الدجال فيمكث في الارض لربعين سنة ثم يتوفي فيصلي عيه المسلمون - ابو داود- كتاب الملاحم - باب خروج الدخال -  مسند احمدمرويات ابو هريره
৬. হযরত আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সা: বলেন : আমার এবং তাঁর (অর্থাৎ, হযরত ঈসার ) মাঝখানে আর কোন নবী নেই এবং তিনি নাযিল হবেন। তাঁকে দেখা মাত্রই তোমরা চিনতে পারবে। তিনি মাঝারি ধরণের লম্বা হবেন, বর্ণ লাল সাদায় মেশানো। পরনে দু’টো হলূদ রঙের কাপড়। তাঁর মাথার চুল থেকে মনে হবে এ বুঝি পানি টপকে পড়ছে। অথচ তা মোটেই সিক্ত হবে না। তিনি ইসলামের জন্য মানুষের সাথে যুদ্ধ করবেন, ক্রুশ ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করবেন। শূকর হত্যা করবেন এবং জিয্ য়া রহিত করবেন। তাঁর যামানায় আল্লাহ ইসলাম ছাড়া সমস্ত ধর্মকেই নির্মূল করবেন। তিনি মাসীহ দাজ্জালকে হত্যা করবেন এবং দুনিয়ায় চল্লিশ বছর অবস্থান করবেন। অত:পর তিনি ইনতিকাল করবেন এবং মুসলমানরা তাঁর জানাযার নামায পড়বে।
عن جابربن عبدالله قال سمعت رسول الله ﷺ ... فينزل عيسي ابن مريم عليه وسلم فيقول اميرهم تعال فصل فيقول لا ان بعضكم علي بعض امرا ء تكرمة الله هذث لامة - مسلم - بيا ن نزول عيس الن مريم - مسند احمد رسلسه مرويات جابر بن عبدالله -
৭. হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা: বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা: কে বলতে শুনেছি: অত:পর ঈসা ইবনে মারয়াম আবির্ভূত হবেন। মুসলমানদের আমীর তাঁকে বলবেন, আসুন আপনি নামায পড়ান। কিন্তু তিনি বলবেন, না, তোমরা নিজেরাই একে অপরের আমীর ১।  আল্লাহ এ উম্মতকে যে  ইজ্জত দান করেছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি একথা বলবেন।
---------
১. অর্থাৎ, তোমাদের আমীর তোমাদের নিজেরদের মধ্য থেকে হওয়া উচিত।
---------
عن جابربن عبد الله (في قصة ابن صيا د) فقال عمر بن الخطاب اءذنلي فاقتله يا رسول الله فقال رسول الله ﷺ ان يكن هو  فلست صاحبه انما صا حبه عيسي ابن مريم عليه الصلوة والسلام وان لا يكن فليس لك ان تقتل رجلا من اهل العهد - مشكواة - كتاب الفتن باب قصة ابن صيا د بحوله شرح السنه بغوي -

৮. হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে ( ইবনে সাইয়াদ প্রসংগে) বর্ণিত । অত:পর উমর ইবনে খাত্তাব রা: আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল ! অনুমতি দিন , আমি তাকে কতল করি। রাসুলুল্লাহ সা: বললেন, যদি এ সেই ব্যক্তি(অর্থাৎ দাজ্জাল) হয়ে থাকে, তাহলে তোমরা এর হত্যাকারী নও, বরং ঈসা ইবনে মারয়াম একে হত্যা করবেন এবং যদি এ সেই ব্যক্তি না হয়ে থাকে, তাহলে যিম্মীদের কাউকে হত্যা করার তোমাদের কোন অধিকার নেই (মেশকাত, শারহুস সুন্নাহ)।
عَنْ جابر بن عبد الله (في قصة الدجال) فاذب هم بقيسي ابن مريم عليه السلام فتقام اصلوة فيقال له تقدم يا رهحالله فيقول ليتقدم امامكم فليصل بكم فاذا صلي صلوةالصبح خرحوااليه قال فحين يري الكذاب ينماث كما ينمث الملح في الماء فيمشي اليه فيقتله حتي ان الشجر والحجر ينادي يا روحالله هذا اليهودي فلا يترك ممن كان يتبفه احد الا فتله-مسند احمد بسلسله روايات جابربن عبدالله
৯. হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে (দাজ্জাল প্রসঙ্গে) বর্ণিত। (রাসুলুল্লাহ সা: বলেছেন : ) সে সময় ঈসা ইবনে মারয়াম হঠাৎ মুসলমানদের মধ্যে এসে উপস্থিত হবেন। অত:পর নামাযের ইকামত দেয়া হবে। তাঁকে বলা হবে, হে রূহুল্লাহ ! অগ্রসর  হোন। কিন্তু তিনি বলবেন, না, তোমাদের ইমামের অগ্রবর্তী হওয়া উচিত, তিনিই নামায পড়াবেন। অত:পর ফজরের নামাযের পর মুসলমানরা দাজ্জালের মোকাবিলায় বের হবে। রাসুলুল্লাহ সা: বলেছেন : যখন সেই কাজ্জাব (মিথ্যাবাদী) হযরত ঈসাকে দেখবে, তখন বিগলিত হতে থাকবে যেমন লবণ পানিতে গলে যায়। অত:পর তিনি দাজ্জালের দিকে অগ্রসর হবেন এবং তাকে কতল করবেন। তখন অবস্থা এমন হবে যে,  গাছপালা ও প্রস্তুরখন্ড চিৎকার করে বলবে, হে রূহুল্লাহ ! ইহুদীটা এই আমার পিছনে লুকিয়ে রয়েছে। দাজ্জালের অনুগামীদের কেউ বাঁচবেনা, সবাইকে কতল করা হবে। (মুসনাদে আহমদ)
عن النواس بن سمعان (في قصة الدجال) فبينما هو كذلك اذ بعث الله المسيح ابن مريم فينزل عند المناة البيضاءشرقي دمشق بين مهروذتبن واضعا كقيه علي اجنحة ملكين اذا طا طا راسه قطر واذا رفعه تحدر منه جمان كاللؤ لوء فلا يحل لكافر يجذ ريح نفسه الا مات ونفسه ينتهي الي حيث ينتهي طرفه فيطلبه حتي يدركه بباب لد فيقتله - مسلم - ذكر الدجال - ابو داود - كتاب الملاحم - باب خروج الدجال - ترمذي - ابواب الفتن - باب في فتنة الدجال ابن ماجه-كتاب الفتن-باب فتهة الدجال -
১০. হযরত নওয়াস ইবনে সামআন আল কিলাবী রা: থেকে (দাজ্জাল প্রসঙ্গে) বর্ণিত (রাসুলুল্লাহ সা: বলেছেন:) দাজ্জাল যখন এসব সন্ত্রাস করতে থাকবে, ইত্যবসরে আল্লাহ মাসীহ ইবনে মারয়ামকে প্রেরণ করবেন। তিনি দামেশকের পূর্ব অংশে সাদা মিনারের সন্নিকটে দুটো হলুদ বর্ণের কাপড় পরিধান করে দু’জন ফেরেশতার কাঁধে হাত রেখে নামবেন। তিনি মাথা নীচু করলে পানি টপকাচ্ছে বলে মনে হবে। আবার মাথা উঁচু করলে মনে হবে যেনো বিন্দু বিন্দু পানি মোতির মতো চমকাচ্ছে। তাঁর নি:শ্বাসের হাওয়া যে কাফেরের গায়ে লাগবে -এবং এর গতি হবে তাঁর দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত - সে জীবিত থাকবে না। অত:পর ইবনে মারয়াম দাজ্জালের পশ্চাদ্ধাবন করবেন এবং লূদের ১ দ্বারপ্রান্তে তাকে গ্রেফতার করে হত্যা করবেন। (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ)
------------
১. এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, লুদ (Lydda) ফিলিস্তীনের অন্তর্গত বর্তমান ইসরাঈল রাষ্ট্রের রাজধানী তেলআবীব থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে অবস্থিত। ইহুদীরা এখানে একটি বিরাট বিমান বন্দর নির্মাণ করেছে।
-----------
عن عبدالله بن عمرو قال قا رسول الله ﷺ يخرج الدجال في امتي فيمكث اربعين (لا ادري اربعين يوما او اربعين شهرا او اربعين عاما) فيبعث الله عيسي ابن مريم كانه عروة بن مسعود فيطلبه فيهلكه ثم يمكث الناس سبع سنين ليس بين اثنين عداوة - مسلم - ذكر الدجال
১১. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা: বলেন, রাসুলুল্লাহ সা: বলেছেন, দাজ্জাল আমার উম্মতের মধ্যে বের হবে এবং চল্লিশ ( আমি জানি না চল্লিশ দিন, চল্লিশ মাস অথবা চল্লিশ বছর ২) অবস্থান করবে। অত:পর আল্লাহ ঈসা ইবনে মারয়ামকে পাঠাবেন । তাঁর চেহারা উরওয়া এবনে মাসঊদের (জনৈক সাহাবী) মতো। তিনি দাজ্জালের পশ্চাদ্ধাবন করবেন এবং তাকে হত্যা করবেন। অত:পর সাত বছর পর্যন্ত মানুষ এমন অবস্থায় থাকবে যে, এমনকি দু’জন লোকের মধ্যেও শত্রুতা থাকবে না। (মুসলিম)
----------
২. এটি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আসের নিজের বক্তব্য।
----------
عن حذيفة بن اسيد الغفري قال اطلع النبي ﷺ علينا ونحن نتذاكر فقال ما تذكرون - قالوا نذكر الساعة قال انها لن تقوم حتي ترون قبلها عشرايات - فذكر الدخان والدجال والدابة وطلوع الشمس من مغربها ونزول عيسي ابن مريم وياجوج و ماجوج وثلثة خسوف- خسف بالمشرق وخسق بالمغرب وخسف بجزيرة العرب واخر ذلك نار تخرج من اليمن تطرد الناس الي محشرهم - مسلم - كتاب الفتن واشراط الساعه ابو داود - كتاب الملاحم - باب امارات الساعه -
১২. হযরত হুযাইফা ইবনে আসীদ আল গিফারী রা: বলেন, রাসুলুল্লাহ সা: আমাদের মজলিসে তাশরীফ আনলেন। তখন আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় লিপ্ত ছিলাম। রাসুলুল্লাহ সা: জিজ্ঞেস করলেন : তোমরা কি আলোচনা করছো ?  লোকেরা বললে, আমরা কিয়ামতের কথা আলোচনা করছি। তিনি বললেন : দশটি নাশানা প্রকাশ না হওয়ার পূর্বে তা কখনো কায়েম হবে না। অত:পর তিনি দশটি নাশানা বলে গেলেন : (এক) ধোঁয়া (দুই) দাজ্জাল (তিন ) দাব্বাতুল আরদ (চার) পশ্চিম দিক হতে সূযর্োদয়  (পাঁচ) ঈসা ইবনে মারয়ামের অবতরণ (ছয়) ইয়াজুজ ও মাজুজ  (সাত) তিনটি প্রকান্ড ভূমি ধর (Landslide)  - একটি পূর্বে (আট) একটি পশ্চিমে (নয়) আর একটি আরব উপদ্বীপে (দশ) সর্বশেষ একটি প্রকান্ড  অগ্নি ইয়েমেন থেকে উঠবে এবং মানুষকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে হাশরের ময়দানের  দিকে (মুসলিম, আবু দাউদ)
عن ثوبان مولي رسولالله ﷺ عن النبي ﷺ عصابتان من امتي احرزهما الله تعالي من النار عصابة تغزوا الهند و عصابة تكون مع عيسي ابن مريم عليه السلام- نساءي - كتاب اجهاد - مسند اخمد -بسلسلة رايات ثوبان -
১৩. রাসুলুল্লাহ সা: এর মুক্তদাস সাওবান রা: থেকে বর্ণিত । রাসুলুল্লাহ সা: বলেন : আমার উম্মতের দুটো সেনাদলকে আল্লাহ জাহান্নামের আগুন থেকে নিষ্কৃতি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে একটি হলো যারা হিন্দুস্তানের ওপর হামলা করবে আর দ্বিতীয় দলটি যারা ঈসা ইবনে মরায়ামের সাথে থাকবে (নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ)।
عن مجمع بن جارية قال سمعت رسول الله ﷺ يقول يقتل الن مريم لدجال بباب لد- مسند احمد - ترمذي ابواب الفتن -
১৪. মুজাম্মে ইবনে জারিয়া আনসারী রা: বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা: কে বলতে শুনেছি : ইবনে মারয়াম দাজ্জালকে লুদের দ্বারপ্রান্তে কতল করবেন। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী)।
عن ابي امامة الباهلي (في حديث طويل في ذكر الدجال) فبينما امامهم قد تقدم يصلي بهم الصبح اذ نزل عليهم عيسي ابن مريم فرجع ذلك الامام ينكص يمشي قهقري ليتقدم عيسي يده بين كتفيه ثم يقول له بقدم فصل فانها لك اقيمتفيصلي بهم امامهم فاذا انصرف قال عيسي عليه السلام  افتحوا الباب فيفتح و و را ء ه الدجال ومعه سبعون الف يهودي كلهم ذو سيف محلي وساج فاذا نظر اليه الدجال ذاب كما يذوب الملح في الماء ويتطلق هارب ويقول عيسي ان لي فيك ضربة لن تسبقني بها فيدركه عند بابا اللد الشرقي فيهزم الله اليهود...... وتملا الرض  من المسلم كما يملا الاناء من الما ء وتكون الكلمة واحدة فلايعبد الا الله تعالي - ابن ماجه - كتاب الفتن -
১৫. আবু উমামা আল বাহেলী রা: (এক দীর্ঘ হাদীসে দাজ্জাল প্রসঙ্গে) বর্ণনা করেছেন : ফজরের নামায পড়ার জন্য মুসলমানদের ইমাম যখন অগ্রবর্তী হবেন, ঠিক সে সময় ঈসা ইবনে মারয়াম তাদের কাছে আবির্ভূত হবেন। ইমাম পিছনে সরে আসবেন ঈসা আ: কে অগ্রবর্তী করার জন্য। কিন্তু ঈসা আ: তাঁর কাঁধে হাত রেখে বলবেন, না, তুমিই নামায পড়াও। কেনা এরা তোমার জন্যই দাঁড়িয়েছে। কাজেই তিনিই (ইমাম) নামায পড়াবেন। সালাম ফেরানোর পর ঈসা আ: বলবেন, দরজা খোল। দরজা খোলা হবে। বাইরে দাজ্জাল সত্তর হাজার সশস্ত্র ইহুদী সৈন্য নিয়ে অপেক্ষা করবে। তার দৃষ্টি হযরত ঈসা আ: এর ওপর পড়া মাত্রই স এমনভাবে বিগলিত হতে থাকবে, যেমন লবণ পানিতে গলে যায় এবং সে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে। ঈসা আ: বলবেন, আমার নিকট তোর জন্য এমন এক আঘাত আছে যার থেকে তোর কোনক্রমেই নিষ্কৃতি নেই। অত:পর তিনি তাকে লুদের পূর্ব দ্বারদেশে গিয়ে গ্রেফতার করবেন এবং আল্লাহ ইহুদীদেরকে পরাজয় দান করবেন ...... এবং যমীন মুসলমানদের দ্বারা এমনভবে ভরপুর হবে যেমন পাত্র পানিতে ভরে যায়। সবাই একই কলেমায় বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং দুনিয়য় আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করা হবে না। (ইবনে মাজা)
عن عثمان بن ابي العاص قال سمعت رسول الله ﷺ يقول ..... و ينزل عيسي بن مريم عليه السلام عند صلواة الفجر فيقول له اميرهم يا روح الله تقدم صل فيقول هذه الامة بعضهم امررء علي بعض فيقدم اميرهم فيصلي فاذا قضي صلوته اخذ عيسي حربته فيذهب تحوالدجال فاذا يراه الدجال ذاب كما يذوب الرصاص فيضع حربهبين شندوبته فيقتله وينهزم اصحابه ليس يومئذ شيء يواري منهم احدا حتي ان الشجر يقول يا مؤمن هذا كافر ويقول الحجر يا مؤمن هذا كافر - مسند احمد- طبراني - حاكم -
১৬. উসমান ইবনে আবিল আস রা: বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা: কে বলতে শুনেছি ...  এবং ঈসা ইবনে মারয়াম আ: ফজরের নামাযের সময় আগমন করবেন। মুসলমানদের আমীর তাঁকে বলবেন, হে রূহুল্লাহ! আপনি নামায পড়ান। তিনি জবাব দেবেন: এ উম্মতের লোকেরা নিজরাই নিজেদের আমীর। তখন মুসলমানদের আমীর অগ্রবর্তী হয়ে নামায পড়াবেন। অত:পর নামায শেষণ করে ঈসা আ: নিজেই সেনাবাহিনী নিয়ে দাজ্জালের দিকে অগ্রসর হবেন। সে গখন তাঁকে দেখবে তখন এমনভাবে বিগলিত হতে থাকবে যেমন সীসা গলে যায়। তিনি নিজের অস্ত্র দিয়ে দাজ্জালকে কতল করবেন এবং তার দলবল পরাজিত হয়ে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে। কিন্তু কোথাও তারা আত্মগোপন করার জায়গা পাবে না, এমনকি বৃক্ষও চিৎকার  করে বলবে: হে মু’মিন ! এখানে কাফের লুকিয়ে আছে এবং প্রস্তর খন্ডও চিৎকার করে বলবে : হে মুমিন এখানে কাফের লুকিয়ে আছে (মুসনাদে আহমদ, তাবারাণী)।
عن سمرة بن جندب عن النبي ﷺ ( في حديث طويل) فيصبح فيهم عيسي ابن مريم فيهزمه الله و جنوده حتي ان اجذم الحائط واصل الشجر لينادي يا مؤمن هذا كافر يستتر بي فتعال اقتله - مسند احمد- حاكم
১৭. সামুরা ইবনে জুনদুব রা: থেকে (এক দীর্ঘ হাদীস ) বর্ণিত । রাসুলুল্লাহ সা:  বলেন : অত:পর সকাল বেলা ঈসা ইবনে মারয়াম আ: মুসলমানদের মধ্যে আসবেন এবং আল্লাহ দাজ্জাল ও তার সেনাবাহিনীকে পরাজয় দান করবেন। এমন কি প্রাচীর এবং বৃক্ষের কান্ডও ডেকে বলবে, হে মুমিন ! এখানে কাফের আমার পেছনে লুকিয়ে রয়েছে, এসো  একে কতল করো (আহমদ, হাকেম)।
عن عمران بن حصين ان رسول الله ﷺ قال لا تزال طائفة من امتي علي الحق ظاهرين علي من ناواهم حتي ياتي امر الله تبارك و تعا لي وينزل عيسي بن مرنم عليه السلام - مسند احمد
১৮.  ইমরান ইবনে হুসাইন রা: থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সা: বলেন: আমার উম্মতের মধ্যে হামেশা একটি দল হকের ওপর কায়েম থাকবে এবং তারা বিরোধী দলের ওপর প্রতিপত্তি বিস্তার করবে। অবশেষে আল্লাহর ফয়সালা এসে যাবে এবং ঈসা ইবনে মারয়াম আ: নাযিল হবেন (আহমদ)।
عن عائشة (في قصة الدجال ) فينزل عيسي عليه  السلام فيقتله ثم يمكث عيسي عليه السلام في الارض اربعين سنة اماما عادلا وحكما مقسطا - مسند احمد
১৯. হযরত আয়েশা রা: থেকে ( দাজ্জাল প্রসঙ্গে) বর্ণিত ।  রাসুলুল্লাহ সা:  বলেন : অত:পর ঈসা আ: আবির্ভূত হবেন। তিনি দাজ্জালকে হত্যা করবেন। অত:পর ঈসা আ: চল্লিশ বছর আদেল ইমাম এবং ন্যায়নিষ্ঠ শাসক হিসেবে দুনিয়ায় অবস্থান করবেন (মুসনাদে আহমদ)।
عن سفينة مولي رسول الله ﷺ ( في قصاة الدجال) فينزل عيسي عليه الاسلام فيقتله الله تعالي عند عقبة افيق - مسند احمد
২০. রাসুলুল্লাহ সা:  এর মুক্ত সাফীনা রা: থেকে (দাজ্জাল প্রসঙ্গে) বর্ণিত । রাসুলুল্লাহ সা:  বলেন, অত:পর ঈসা আ: আবির্ভূত হবেন এবং আল্লাহ উফায়েকের পার্বত্য পথের সন্নিকটে তাকে (দাজ্জালকে) মেরে ফেলবেন (মুসনাদে আহমদ)।
عن حذيفة (في ذكر الدجال) فلما قاموا يصلون نزل عيسي ابن مريم اما مهم فصلي بهم فلما انصرف قال هكذا فرجوابيني وبين عدو الله .....و يسلط الله عليهم المسلمين فيقتلونهم حتي ان الشجر والحجر لينادي يا عبد الله يا عبدا لرحمن يا مسلم هذااليهودي فاقتلهم فيفنهم الله تعالي ويظهر المسلمون فيكسرون الصليب ويقتلون الخنزير و يضعون الخزية - مستدرك حاكم -
২১. হযরত হুযািইফা ইবনুল ইয়ামান রা: থেকে (দাজ্জাল প্রসঙ্গে) বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সা:  বলেন, অত:পর যখন মুসলমানরা নামাযের জন্য তৈরী হবে, তখন তাদের চোখের সম্মুখে ঈসা ইবনে মারয়াম আ: আবির্ভূত হবেন। তিনি মুসলমানদের নামায পড়াবেন অত:পর সালাম  ফিরিয়ে লোকদের বলবেন, আমার এবং আল্লাহর এ দুশমনের মাঝখান থেকে সরে যাও... এবং আল্লাহ দাজ্জালর দলবলের ওপর মুসলমানদেরকে বিজয় দান করবেন। মুসলমানরা তাদেরকে বেধড়ক হত্যা করতে থাকবে। অবশেষে গাছপালা এবং প্রস্তুর খন্ডও চিৎকার করে বলবে, হে আল্লাহর বান্দাহ ! হে রহমানের বান্দাহ! হে মুসলমান ! দেখো, এখানে এই ইহুদী, একে হত্যা করো। এভাবে আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করবেন এবং মুসলমানগণ বিজয়লাভ করবে। তারা ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবে, শূকর হত্যা করবে এবং জিযিয়া মওকুফ করবে। ২
----------------------------
১. উফায়েফকে বর্তমানে ফায়েক বলা হয়। সিরিয়া এবং ইসরাঈল সীমান্তে বর্তমান সিরিয়া রাষ্ট্রের সর্বশেষ শহর। এরপরে পশ্চিমের দিকে কয়েক মাইল দূরে তাবারিয়া নামক হ্রদ আছে। এখানেই জর্দান নদীর উৎপত্তিস্থল। এর দক্ষিণ-পশ্চিমে পাহাড়ের মধ্যভাগে নিম্নভূমিতে একটি রাস্তা রয়েছে। এ রাস্তাটি প্রায় দেড় হাজার ফুট গভীরে নেমে গিয়ে সে স্থানে পৌছায় যেখান থেকে জর্দান নদী তাবারিয়ার মধ্য হতে নির্গত হচ্ছে। এ পার্বত্য পথকেই বলা হয় আকাবায়ে উফায়েক ( উফায়েকের নিম্ন পার্বত্য পথ)।
২. সহীহ মুসলিমেও হাদীসটি সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছে এবং হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী ফাতহুল বারীর ষষ্ঠ খন্ডে ৫৫০ পৃষ্ঠায় এটিকে সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন।
-----------------------------
এসব হাদীস থেকে কি প্রমাণিত হয় ?
যে কোন  ব্যক্তি হাদীসগুলো পড়ে নিজেই জুভতে পারবেন যে, এখানে কোন “প্রতিশ্রুত মসীহ” “মাসীলে মসীহ”র কোন উল্লেখই করা হয়নি। এমন কি বর্তমান কালে কোন পিতার ঔরসেও মায়ের গর্ভে জন্মগ্রহণ করে  কোনো ব্যক্তির একথা বলার অবকাশ নেই যে, বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সা: যে মসীহ সম্পর্কে ভব্যিদ্বণী করেছিলেন তিনিই সেই মসীহ। আজ থেকে দু্ই হাজার বছর আগে পিতা ছাড়াই হযরত মারয়াম আ: এর গর্ভে যে ঈসা আ: এর জন্ম হয়েছিলো এ হাদীসগুলোর দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য থেকে তাঁরই পুনরাগমনের সংবাদ শ্রুত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি ইন্তেকাল করেছেন, না জীবিত অবস্থায় কোথাও রয়েছেন এ আলোচনা সম্পূর্ণ অবান্তর। তর্কের খাতির যদি একথা মেনে নেয়া হয় যে, তিনি ইন্তেকাল করেছেন তাহলেও বলা যায় যে, আল্লাহ তাঁকে জীবিত করার ক্ষমতা রাখেন। ১ উপরন্তু আল্লাহ তাঁর বান্দাকে তাঁর এ বিশাল সৃষ্টিজগতের কোন এক স্থানে হাজার হাজার বছর জীবিত অবস্থঅয় রাখার পর নিজের ইচ্ছামতো যে কোন সময় তাঁকে এ দুনিয়ায় ফিরিয়ে আনতে পারেন। আল্লাহর অসীম ক্ষমতার প্রেক্ষিতে একথা মোটেই  অস্বাভাবিক মনে হয় না।
বলা বাহুল্য, যে ব্যক্তি হাদীসকে সত্য বলে স্বীকার করে তাকে অবশ্যই ভবিষ্যতে আগমনকারী ব্যক্তিকে উল্লেখিত ঈসা ইবনে মারয়াম বলে স্বীকার করতেই হবে। তবে যে ব্যাক্তি হাদীস অস্বীকার করে সে আদতে কোন আগমনকারীর অস্তিত্বই স্বীকার করতে পারেনা। কারণ আগমনকারীর আগমন সম্পর্কে যে বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে হাদীস ছাড়া আর কোথাও তার ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু এ অদ্ভূত ব্যাপারটি শুধু এখানেই লক্ষ করা যাচ্ছে যে, আগমকারীর আগমন সম্পর্কিত ধারণা-বিশ্বাস গ্রহণ করা হচ্ছে হাদীস থেকে, কিন্তু সে হাদীসগুলোই আবার যখন সুষ্পষ্ট করে এ বক্তব্য তুলে ধরছে যে, উক্ত আগমনকারী কোন “মাসীলে মসীহ” (মসীহ সদৃশ ব্যক্তি) নন, বরং তিনি হবেন স্বয়ং ঈসা ইবনে মারয়াম আ:, তখন তা অস্বীকার করা হচ্ছে।
এ হাদীসগুলো থেকে দ্বিতীয় যে বক্তব্যটি সুষ্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীনভাব ফুটে উঠেছে তা হচ্ছে হযরত ঈসা ইবনে মারয়াম আ: দ্বিতীয়বার নবী হিসেবে অবতরণ করবেন না। তাঁর ওপর ওহী নাযিল হবে না। আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনি কোন নতুন বাণী বা বিধান আনবেন না। শরীয়তে মুহাম্মদীর মধ্যেও তিনি কিছু যোগ-বিয়োগ হ্রাস ও বৃদ্ধি করবেন না। দীন ইসলামের পুনরুজ্জীবনের জন্যও তাঁকে দুনিয়ায় পাঠানো হবে না। তিনি এসে লোকদেরকে নিজের ওপর ঈমান আনার আহ্বান জানাবেন না এবং তাঁর প্রতি যারা ঈমান আনবে তাদেরকে নিয়ে একটি পৃথক উম্মতও গড়ে তুলবেন না। ২
--------------------------
১, যারা আল্লাহর এই পুনরুজ্জীবনের ক্ষমতা অস্বীকার করেন তাদের সুরা বাকারার ২৫৯ নং আয়াতটির অর্থ অনুধাবন করা উচিত। এ আয়াতে আল্লাহ বলেন যে,তিনি তার এক বান্দাকে ১০০ বছর পর্যন্ত মৃত অবস্থায় রাখার পর আবার তাকে জীবিত করেছেন।
২. পূর্ববর্তী আলেমগণ এ বিষয়টিকে অত্যন্ত সুষ্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। আল্লামা তাফতাযানী রহ: ( হি: ৭২২-৭৯২) “শারহু আকাইদিন নাসাফী” গ্রন্থে লিখেছেন :
تبت انه اخر الانبياء ..... فان قبل قد روي في الحديث نزول عيسي عليه السلام بعده قلنا نعم لكنه يتابع محمدا عليه السلام لان شريعته قد نسخت فلا نكون اليه وحي ولانصب احكام بل يكون خليفة رسول الله عليه السلام (طبع مصر -ص:135
”মুহাম্মদ সা: সর্বশেষ নবী , একথা প্রমাণিত সত্য ...... যদি বলা হয় তার পর হাদীসে হযরত ঈসা আ:ঘ এর আগমনের কথা বর্ণিত হয়েছে, তাহলে আমি বলবো, হা, হযরত ঈসা আ: এর আগমনের কথা বলা হয়েছে সত্য, তবে তিনি মুহাম্মদ সা: এর অনুসারী হবেন। কারণ তার শরীয়ত বাতিল হয়ে গেছে। কাজেই তার ওপর ওহী নাযিল হবে না এবং তিনি নতুন বিধানও প্রবর্তন করবেন না। বরং তিনি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা: এর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবেন। (মিসরে মুদ্রিত- ১৩৫ পৃষ্ঠা)
আল্লামা আলূসী তাঁর রুহুল মাআনী নামক তাফসীর গ্রন্থেও প্রায় একই বক্তব্য পেশ করেছেন। তিনি বলেছেন :
ثم انه عليه السلا م حين ينزل باق علي نبوته السا بقة لم يعزل عنها بحال لكنه لا يتعبد بها لنسخها في حقه وحق غيره وتكليفه باحكام هذه الشريعة الصلا وفرعا فلا يكون اليه عليه السلام وحي ولا نصب احكام بل يكون خليفة لرسول ﷺ وحاكما من حكام ملته بين امته (جلد 22 ص 32)
”অত:পর ঈসা আ: নাযিল হবেন। তিনি অবশ্যই তাঁর পূর্ব-প্রদত্ত নবুওয়াতের মযর্াদায় প্রতিষ্ঠিত থাকবেন। কারণ তিনি নিজের আগের মর্যাদা থেকে তো অপসারিত েহবেন না, কিন্তু নিজের পূর্বের শরীয়াতের অনুসারী হবেন না। কারণ তা তাঁর নিজের ও অন্যসব লোকদের জন্য বাতিল হয়ে গেছে। কাজেই বর্তমানে তিনি মূলনীতি থেকে খুটিনাটি ব্যাপার পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়াতের অনুসারী হবেন। তার নিকট ওহীও নাযিল হবে না তিনি শরীয়াতের বিধানও প্রবর্তন করবেন না। বরং তিনি মুহাম্মদ রাসুলূল্লাহ সা: এর প্রতিনিধি এবং তাঁর উম্মতে মধ্যস্থিত মুহাম্মদী মিলাতের শাসকদের মধ্যকার থেকে একজন শাসক হবেন”( ২২শ খন্ড ৩২ পৃষ্ঠা) ।
ইমাম রাযী রহ: এ কথাটিকে আরো সুষ্পষ্ট করে নিন্মোক্ত ভাষায় পেশ করেছেন :
انتها ء النبيا ء الي مبعث مجمدﷺ فعند مبعث انتهت تلك المدة فلا يبعدان يصير (راي عيسي بن مريم ) بعدنزوله تبعا لمجمد (تفسير كبير -ج3-ص343
”মুহাম্মদ সা: পর্যন্ত নবীদের যুগ শেষ হয়ে গেছে। মুহাম্মদ সা: এর আগমনের পর নবীদের আগমন শেষ হয়ে গেছে। কাজেই বর্তমানে হযরত ঈসা আ: এর আগমনের পর তিনি হযরত মুহাম্মদ সা: এর অনুসারী হবেন একথা মোটেই অযৌক্তিক নয়”(তাফসীরে কবীর, ৩য় খন্ড, ৩৪৩ পৃষ্ঠা)।
--------
তাঁকে কেবলমাত্র একটি পৃথক দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়া পাঠানো হবে। অর্থাৎ তিনি দাজ্জালের ফিতনাকে সমূলে বিনাশ করবেন । এজন্য তিনি এমনভাবে অবতরণ করবেন যার ফলে তাঁর অবতরণের ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশই থাকবে না। যেসব মুসলমানের মধ্যে তিনি অবতরণ করবেন তারা নিসংশয়ে বুঝতে পারবে যে, রাসুলুল্লাহ সা: যে ঈসা ইবনে মারায়াম সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তিনিই এই ব্যাক্তি এবং রাসুলুল্লাহ সা:  এর কথা অনুযায়ী তিনি যথাসময়ে অবতরণ করেছেন, তিনি এসে মুসলমানদের দলে শামিল হয়ে যাবেন। মুসলমানদের তদানীন্তন ইমামের পিছনে তিনি নামায পড়বেন। ১
---------
১. যদিও দু’টি হাদীসে (৫ ও ২১ নং) বলা হয়েছে যে, ঈসা আ: আবির্ভূত হবার পর প্রথম নামাযটি নিজে পড়াবেন। কিন্তু অধিকাংশ এবং বিশেষ করে শক্তিশালী কতিপয় হাদীস (৩, ৭, ৯, ১৫ ও ১৬ নং ) থেকে জানা যায় তিনি নামাযে ইমামতি করতে অস্বীকার করবেন এবং মুসলমানদের তৎকালীন ইমাম ও নেতাকে ইমামতি করার জন্য এগিয় দিবেন। মুহাদ্দিস ও মুফাসসিরগণ সর্বসম্মতভাবে এ মতটি গ্রহণ করেছেন।
-----------
তৎকালে মুসলমানদের যিনি নেতৃত্ব দেবেন তিনি তাঁকেই অগ্রবর্তী করবেন যাতে এ ধরণের সন্দেহের কোন অবকাশই না থাকে যে, তিনি নিজের নবওয়াতী পদমর্যাদা সহকারে পুনর্বার নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করার জন্য ফিরে এসেছেন। নি:সন্দেহে বলা যেতে পারে, কোন দলে আল্লাহর নবীর উপস্থিতিতে অন্য কোন ব্যক্তি ইমাম বা নেতা হতে পারেন না। কাজেই নিছক এক ব্যক্তি হিসেবে মুসলমানদের দলে তাঁর অন্তরভূক্ত স্বতষ্ফুর্তভাবে একথাই ঘোষণা করবে যে, তিনি নবী হিসেবে আগমন করেননি। এজন্য তাঁর আগমনে নবুওয়াতের দুয়ার উন্মুক্ত হওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না।
নিসন্দেহে তাঁর আগমন বর্তমান ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপ্রধানের আমলে প্রাক্তন রাষ্ট্র প্রধানের আগমনের সাথে তুলনীয়। এ অবস্থায় প্রাক্তন রাষ্ট্র প্রধান বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধানের অধীনে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে অংশগ্রহণ করতে পারেন। সাধারণ বোধসম্পন্ন কোন ব্যক্তি সহজেই একথা বুঝতে পারেন যে, এক রাষ্ট্র প্রধানের আমলে অন্য একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধানের নিছক আগমনেই আইন ভেঙ্গে যায় না। তবে দুটি অবস্থায় আইনের বিরুদ্ধাচরণ অনিবার্য হয়ে পড়ে। এক. প্রাক্ত রাষ্ট্রধান এসে যদি আবার নতুন করে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেন। দুই. কোন ব্যক্তি যদি তাঁর রাষ্ট্রপ্রধঅনের মর্যাদাও দায়িত্ব অস্বীকার করে বসেন। কারণ এটা হবে তাঁর রাষ্ট্রধান থাকাকলে যেসব কাজ হয়েছিলো সেগুলোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করার নামান্তর। এ দুটি অবস্থার কোন একটি না হলে প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধানের নিছক আগমনই আইনগত অবস্থাকে কোন প্রকারে পরিবর্তিত করতে পারে না।
হযরত ঈসা আ: এর দ্বিতীয় আগমনের ব্যাপারটিও অনুরূপ। তাঁর নিছক আগমনেই খতমে নবওয়াতের দুয়ার ভেঙ্গে যাবে। তবে তিনি এসে যদি নবীর পদে অধিষ্ঠিত হন এবং নবুওয়াতের দায়্বি পালন করতে থাকেন অথবা কোন ব্যক্তি যদি তাঁর প্রাক্তন নবুওয়াতের মর্যাদাও অস্বীার করে বসে, তাহলে এক্ষেত্রে আল্লাহর নবওয়াত বিধি ভঙ্গ হয়। হাদীসে এ দুটি পথই পরিপূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হাদীসে একদিকে সুষ্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হচ্ছে যে, মুহাম্মাদু রাসুলুল্লাহ সা: এর পর আর কোন নবী নেই এবং অন্যদিকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে, ঈসা আ: পুনর্বার আগমন করবেন। এ থেকে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে, তাঁর এ দ্বিতীয় আগমন নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করার উদ্দেশ্যে হবে না।
অনুরূপভাবে তাঁর আগমনে মুসলমানদের মধ্যে কুফর ও ঈমানের কোন নতুন প্রশ্ন দেখা দেবে না। আজও কোন ব্যক্তি তাঁর পূর্বের নবুওয়াতের ওপর ঈমান না আনলে কাফের হয়ে যাবে। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা: নিজেও তাঁর ঐ নবুওয়াতের প্রতি ঈমান রাখতেন। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা:  এর সমগ্র উম্মতও শুরু থেকেই তাঁর ওপর ঈমান রাখে। হযরত ঈসা আ: এর পুনর্বার আগমনের সময়ও এই একই অবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে। মুসলমানরা কোন নতুন নবওয়াতের প্রতি ঈমান আনবে না, বরং আজকের ন্যায় সেদিনও তারা ঈসা ইবনে মারয়াম আ: এর পূর্বের নবুওয়াতের ওপরই ঈমান রাখবে। এ অবস্থাটি বর্তমানে যেমন খতমে নবওয়াত বিরোধী নয়, তেমনি সেদিনও বিরোধী হবে না।
সর্বশেষ যে কথাটি এ হাদীসগুলো এবং অন্যান্য বহুবিধ হাদীস থেকে জনা যায় তা হচ্ছে, হযরত ঈসা আ: কে যে দাজ্জালের বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস নির্মুল করার জন্য পাঠনো হবে সে হবে ইহুদী বংশোদ্ভুত। সে নিজেকে ”মসীহ” রূপে পেশ করবে। ইহুদীদের ইতিহাস ও তাদের ধর্মী চিন্তা-বিশ্বাস সম্পর্কে জ্ঞান নেই এমন কোনো ব্যক্তি বিষয়টির তাৎপর‌্য অনুধাবন করতে সংক্ষম হবে না। হযরত সুলায়মান আ: এর মৃত্যুর পর যখন বনী ইসরাঈল ক্রমাগত অবক্ষয় ও পতনের শিকার হতে থাকলো এমন কি অবশেষে ব্যাবিলন ও আসিরিয়া অধিপতিরা তাদেরকে পরধীন করে দেশ থেকে বিতাড়িত করলো এবং দুনিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্ত করে দিলো, তখন বনী ইসরাঈরে নবীগণ তাদেকে সুসংবাদ দিতে থাকলেন যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন “মসীহ” এসে তাদেরকে এ চরম লাঞ্ছনা থেকে মুক্তি দেবেন। এসব ভবিস্যদ্বানীর প্রেক্ষিতে ইহুদীরা একজন সমীহের আগমনের প্রতীক্ষারত ছিল্ তিনি হবেন বাদশাহ। তিনি যুদ্ধ করে দেশ জয় করবেন। বনী ইসরাঈলকে বিভিন্ন দেশ তেকে এনে ফিলিস্তীনে একত্র করবেন এবং তাদের একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র কায়েম করবেন। কিন্তু তাদের এসব আশা আকাংখাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে যখন ঈসা ইবনে মারায়ম আ: আল্লাহর পক্ষ থেকে “মসীহ” হয়ে আসলেন এবং কোন সেনাবাহিনী ছাড়াই আসলেন, তখন ইহদীরা তাঁকে “মসীহ” বলে মেনে নিতে অস্বীকার করলো। তারা তাঁকে হত্যা করতে উদ্যত হলো। সে সময় থেকে আজ পর্যন্ত ইহুদী দুনিয়া সে প্রতিশ্রুত মসীহর প্রতীক্ষা (Promised Messiah) করছে,  যার আগমনের সুসংবাদ তাদেরকে দেয়া হয়েছিল। তাদের সাহিত্য সে কাঙ্ক্ষিত যুগের সুখ-স্বপ্ন কল্পকাহিনীতে পরিপূর্ণ। তালমুদ ও রিব্বীদের সাহিত্য গ্রন্থ সমূহে এর যে নকশা তৈরি করা হয়েছে তার কল্পিত স্বাদ আহরণ করে শত শত বছর থেকে ইহুদী জাতি জীবন ধারণ করছে। তারা বুক ভরা আশা নিয়ে বসে আছে যে, এ প্রতিশ্রুত মসীহ হবেন একজন শক্তিশারী সামরিক ও রাজনৈতিক নেতা। তিনি নীল নদ থেকে ফোরাত নদী পর্যন্ত সমগ্র এলাকা ( যে এলাকাটিতক ইহুদীরা নিজেদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বলে মনে করে) আবার ইহুদীদের দখলে আনবেন এবং সারা দুনিয়া থেকে ইহুদীদেরকে এনে এখানে একত্র করবেন।
বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে রাসুলুল্লাহ সা: এর ভবিষ্যদ্বানীর আলোকে ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, মহানবী সা: এর কথামতো ইহুদীদের প্রতিশ্রুত “মসীহ”র ভূমিকা পালনকারী প্রধানতম দাজ্জালের আগমনের জন্য মঞ্চ সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত হয়ে গেছে। ফিলিস্তীনের বৃহত্তর এলাকা থেকে মুসলমানদেরকে বেদখল করা হয়েছে।  সেখানে ইসরাঈল নামে একটি ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সারা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদীরা দলে দলে এসে এখানে বাসস্থান গড়ে তুলছে। আমেরিকা, বৃটেন ও ফ্রান্স তাকে একটি বিরাট সামরিক শক্তিতে পরিণত করেছে।  ইহুদী পুঁজিপতিদের সহায়তায় ইহুদী বৈজ্ঞানিক ও শিল্পপতিগণ তাকে দ্রুত উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। চারপাশের মুসলিম দেশগুলোর জন্য তাদের এ শক্তি এক মহাবিপদে পরিণত হয়েছে। এ রাষ্ট্রের শাসকবর্গ তাদের এ “উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দেশ” দখল করার আকাংখাটি মোটেই ঢেকে ছেপে রাখেনি। দীর্ঘকাল থেকে ভবিষ্যত ইহুদী রাষ্ট্রের যে নীলনকশা তারা প্রকাশ করে আসছে পরের পাতায় তার একটি প্রতিকৃতি  দেয়া হলো। (মানচিত্র বিভাগ দেখূন)
উক্ত নকশায় দেখা যাবে, সিরিয়া, লেবানন ও জর্দানের সমগ্র এলাকা এবং প্রায় সমগ্র ইরাক ছাড়াও তুরস্কের ইস্কান্দারুন, মিসরের সিনাই ও ব-দ্বীপ এলাকা এবং মদীনা মুনাওয়ারাসহ আরবের অন্তরগত হিজায ও নজদের উচ্চভূমি পর্যন্ত তারা নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে চায়। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে যে, আগামীতে কোনো একটি বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে তারা ঐসব এলাকা গখল করার চেষ্টা করবে এবং ঐ সময়ই কথিত প্রধানতম দাজ্জাল তাদের প্রতিশ্রুত মসীহরূপে আগমন করবে। রাসুলুল্লাহ সা: কেবল তার আগমন সংবাদ দিয়েই ক্ষান্ত হননি, বরং এই সাথে একথাও বলেছেন যে,  সে সময় মুসলমানদের ওপর বিপদের পাহাড় ভেঙ্গে পড়বে এবং এক একটি দিন তাদের নিকট এক একটি বছর মনে হবে। এজন্য তিনি নিজে মসীহ দাজ্জালের সন্ত্রাস থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন এবং মুসলমানদেরকেও আশ্রয় চাইতে বলেছেন।
এ মসীহ দাজ্জালের মোকাবিলা করার জন্য আল্লাহ কোনো ‘মসীলে মসীহ’কে পাঠাবেন না, বরং আসল মসীহকে পাঠাবেন। দুই হাজার বছর আগে ইহুদীরা এই আসল মসীহকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছিলো এবং নিজেদের বিশ্বাস ও জানামতে তারা তাঁকে শূলবিদ্ধ করে দুনিয়ার বুক থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। এ্ই আসল মসীহ ভারত, আফ্রিকা বা আমেরিকায় আত্মপ্রকাশ করবেন না, বরং তিনি আবির্ভূত হবেন দামেশকে। কারণ তখন সেখানেই যুদ্ধ চলতে থাকবে। মেহেরবানী করে পরের পাতার নকশাটিও দেখুন (মানচিত্র বিভাগে দেখুন)। এতে দেখা যাচ্ছে, ইসরাঈলের সীমান্ত থেকে দামেশক মাত্র ৫০ থেকে ৬০ মাইলের মধ্যে অবস্থিত। ইতি পূর্বে আমি যে হাদীস উল্লেখ করে এসেছি, তার বিষয়বস্তু মনে থাকলে সহজেই একথা বোধগম্য হবে যে, মসীহ দাজ্জাল ৭০ হাজার ইহূদী সেনাদল নিয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করবে এবং দামেশকের সামনে উপস্থিত হবে। ঠিক সেই মুহুর্তে দামেশকের পূর্ব অংশের অবস্থিত মসজিদের একটি সাদা মিনারের নিকট সুবহে সাদেকের পর হযরত ঈসা আ: নাযিল হবেন এবং ফজর নামায শেষে মুসলমানদেরকে নিয়ে দাজ্জালের মুকাবিলায় রওয়ানা হবেন। তাঁর প্রচন্ড আক্রমণে দাজ্জাল পশ্চাদপরসরণ করে উফায়েকের পার্বত্য পথ দিয়ে (২১ নম্বর হাদীস দেখুন) ইসরাঈলের দিকে ফিরে যাবে। কিন্তু তিনি তার পশ্চাদ্ধাবন করতেই থাকবেন। অবশেষে লিড্ডা বিমান বন্দরে সে তাঁর হাতে নিহত হবে ( ১০, ১৪, ১৫ নং হাদীস )। এরপর ইহুদীদেরকে সব জায়গা থেকে ধরে ধরে হত্যা করা হবে এবং ইহুদী জাতির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে ( ১, ২, ৪ ও ৬ নম্বর হাদীস) এবং মুসলিম মিল্লাতের মধ্যে সমস্ত মিল্লাত একীভূত হয়ে যাবে (৬ ও ১৫ নং হাদীস)।
কোনো প্রকার জড়তা ও অষ্পষ্টতা ছাড়াই এ দ্ব্যর্থহীন সত্যটিই হাদীস থেকে ফুটে উঠেছে। এই সুদীর্ঘ আলোচনার পর এ ব্যাপারে কোনো প্রকার সন্দেহের অবকাশ থাকে না যে, “প্রতিশ্রুত মসীহ”র নামে আমাদের দেশে যে ব্যবসা চালানো হচ্ছে তা একটি প্রকান্ড জালিয়াতি ছাড়া আর কিছুই নয়।
এ জালিয়াতির সবচাইতে হাস্যকর দিকটি এবার আমি তুলে ধরতে চাই। যে ব্যক্তি নিজেকে এ ভবিষ্যদ্বানীতে উল্লিখিত মসীহ বলে ঘোষণা করেছেন, তিনি নিজে ঈসা ইবনে মারয়াম হবার জন্য নিম্নোক্ত বক্তব্যটি পেশ করেছেন:
”তিনি (অর্থাৎ আল্লাহ) বারাহীনে আহমদীয়ার তৃতীয় অংশে আমার নাম রেখেছেন মারয়াম। অত:পর যেমন বারাহীনে আহমদীয়য় প্রকাশিত হয়েছে, দুই বছর পর্যন্ত আমি মারয়ামের গুণাবলী সহকারে লালিত হই..... অত:পর....মারয়ামের ন্যায় ঈসার রূহ আমার মধ্যে ফুঁৎকারে প্রবেশ করানো এবং রূপকার্থে আমাকে গর্ভবতী করা হয়। অবশেষে কয়েকমাস পরে, যা দশ মাসের চাইতে বেশী হবে না, সেই ইলহামের মাধ্যমে যা বারাহীনে আহমদীয়ার চতুর্থ অংশে উল্লেখিত হয়েছে, আমাকে মারয়াম থেকে ঈসায় পরিণত করা হয়েছে। কাজেই এভাবে আমি হলাম ঈসা ইবনে মারয়াম।” (কিশতীয়ে নূহ ৮৭, ৮৮, ৮৯ পৃষ্ঠা)।
অর্থাৎ প্রথমে তিনি মারয়াম হন, অত:পর নিজে নিজেই গর্ভবতী হন তারপর নিজের পেট থেকে নিজেই ঈসা ইবনে মারয়ামরূপে জন্ম নেন। এরপরেও সমস্যা দেখো দিল যে, হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী ঈসা ইবনে মারয়াম দামেশকে আত্মপ্রকাশ করবেন। দামেশক কয়েক হাজার বছর থেকে সিরিয়ার একটি প্রসিদ্ধ ও সর্বজন পরিচিত শহর। পৃথিবীর মানচিত্রে আজও এ শহরটি এ নামেই চিহ্নিত । কাজেই অন্য একটি রসাত্মক বক্তব্যের মাধ্যমে  এ সমস্যাটির সমাধান দেয়া হয়েছে।
”উল্লেখ্য যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে দামেশক শব্দের অর্থআমার নিকট এভাবে প্রকাশ করা হয়েছে যে,  এ স্থানে এমন একটি শহরের নাম দামেশক রাখা হয়েছে যেখানে এজিদের স্বভাবসম্পন্ন ও অপবিত্র এজিদের অভ্যাস ও চিন্তার অনুসারী লোকদের বাস। ....... এই কাদীয়ান শহরটি এখানকার অধিকাংশ এজিদী স্বভাব সম্পন্ন লোকের অধিবাসের কারণে দামেশকের সাথে সামঞ্জস্য ও সম্পর্ক রাখে।(এযালায়ে আওহাম, টিকা ৬৩ থেকে ৭৩ পর্যন্ত।)
আর একটি জটিলতা এখনো রয়ে গেছে। হাদীসের বক্তব্য অনুসারে ইবনে মারয়াম একটি সাদা মিনারের নিকট নেমে আসবেন। এ সমস্যার সমাধান সহজেই করে ফেলা হয়েছে অর্থাৎ মসীহ সাহেব নিজেই এসে নিজের মিনারটি তৈরী করে নিয়েছেন। এখন বলুন, কে তাঁকে বুঝাতে যাবে যে, হাদীসের বর্ণনা অনুসারে দেখা যায়, ইবনে মারয়ামের নেমে আসার পূর্বেই মিনারটি সেখানে মওজুদ  থাকবে। অথচ এখনা দেখো যাচ্ছে, প্রতিশ্রুত মসীহ সাহেবের আগমেনর পর মিনারটি তৈরি হচ্ছে।
সর্বশেষ ও সবচেয়ে জটিল সমস্যটি এখনো রয়ে গেছে। অর্থাৎ হাদীসের বর্ণনামতে ঈসা ইবনে মারয়াম আ.লুদ্দ (লিড্ডা)-এর প্রবেশদ্বারে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। এ সমস্যার সমাধান কনতে গিয়ে প্রথমে আবোলতাবোল অনেক কথাই বলা হয়েছে। কখনো স্বীকার করা হয়েছে যে, বায়তুল মুকাদাদাসের একটি গ্রামের নাম লিড্ডা ( এযালায়ে আওহাম, আঞ্জুমানে আহমদীয়া, লাহোর কর্তৃক প্রকাশিত, ক্ষুদ্রাকার, ২২০ পৃষ্ঠা)। আবার কখনো বলা হয়েছে, লিড্ডা এমন সব লোককে বলা হয় যারা অনর্থক ঝগড়া করে। ....... যখন দাজ্জালের অনর্থক ঝগড়া চরমে পৌছে যাবে তখন প্রতিশ্রুত মসীহর আবির্ভাব হবে এবং তার সমস্ত ঝগড়া শষে করে দেবে” (এযালায়ে আওহাম, ৭৭০ পৃষ্ঠা)। কিন্তু এতোকিছু করেও যখন সমস্যার সমাধান হলো না তখন পরিস্কার বলে দেয়া হলো যে, লিড্ডা ( আরবীতে লুদ্দ) অর্থ হচ্ছে পাঞ্জাবের লুদিয়ানা শহর। আর লুদিয়ানার প্রবেশ দ্বারে দাজ্জালকে হত্যা করার অর্থ হচ্ছে, দুষ্টদের বিরোধিতা সত্ত্বেও মীর্জা গোলাম আহমদ সাহেবের হাতে এখানেই সর্বপ্রথম বাইয়াত হয় (আলহুদা, ৯১ পৃষ্ঠা)।
যে কোন সুস্থ বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তি এসব বক্তব্য-বর্ণনার নিরপেক্ষ পর্যালোচনা করলে এ সিদ্ধান্তে পৌছতে বাধ্য হবেন যে, এখানে প্রকাশ্য দিবালোকে ডাহা মিথ্যুক ও বহুরূপীর অভিনয় করা হয়েছে।

1 comment:

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...