প্রশ্নঃ১০২ঃ মুরজিয়া ও কাদরিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।

হাদীছের আলোকে মুরজিয়া ও কদরিয়া এবং মুরজিয়া চিন্তার প্রসারে মুয়াবিয়ার ভূমিকা
*****
এক. কদরিয়া
আরবী قدر শব্দের মূল অর্থ পরিমাণ। তাকদীর মানে পরিমাণ করা বা পরিমাণ মত কিছু করা। ইসলামী পরিভাষায় কদর বা তাকদীর বলা হয় সৃষ্টি ও বান্দার জন্য স্রষ্টা/আল্লাহর বরাদ্দ করা সুখ-দুঃখকে। তাকদীরকে বিশ্বাস করা আল্লাহর উপর ঈমানের অপরিহার্য অঙ্গ। যারা তাকদীরকে বিশ্বাস না, তারা পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামগামী। তবে তাকদীরে বিশ্বাস রাখার অর্থ কর্ম না করে বসে থাকা নয়। কর্ম করার পর যে ফল পাওয়া যায়, তাকে আল্লাহ বরাদ্দকৃত বলে বিশ্বাস করাই ঈমান। যেমন ধরুন, আপনি নিয়ত করলেন সে ২০১৮ সালে হজে যাবেন৷ এর জন্য চেষ্টাও করলেন। কিন্তু কাজ হলো না। কিন্তু আপনি চেষ্টা অব্যাহত রাখলেন। ফলে ২০১৯ বা ২০২০ সালে আপনি হজে যেতে পারলেন। তো এ অবস্থায় আপনাকে মনে করতে হবে, এটিই ছিল আপনার জন্য আল্লাহর কল্যাণকর বরাদ্দ। এটি আগে না হওয়ায় আপনি যদি আল্লাহর উপর রাগ করেন বা তাঁর ভুল ধরেন, তাহলে আপনি মুমিন নয়। একই কথা চাকরি, ব্যবসা, স্বাস্থ্য ও মৃত্যুর ক্ষেত্রেও। মুমিন হলে যে কারো জন্য নিয়ম মেনে ভালো কাজ তাড়াতাড়ি করার পাশাপাশি পছন্দ-অপছন্দের যে ভাগ্য বা পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে, তাকে আল্লাহর বরাদ্দ মনে করে ধৈর্যধারণ করা ও লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য রুচি থাকা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই হলো কর্তব্য। চেষ্টার এক পর্যায়ে অনেক সময় দেখা যায়, নগদ ফলাফল জিরো বা খারাপ। এই অবস্থায় বিষয়টির প্রতি যদি আপনার আগ্রহ বা রুচি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে মনে করতে হবে সেটি আপনার জন্য আল্লাহ প্রয়োজন বা কল্যাণকর মনে করেননি। যেমন ধরুন, আপনি একটি গাড়ি কেনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সফল হননি। তাহলে মনে করতে হবে, আল্লাহ আপনাকে ভালোবাসায় তিনি আপনার জন্য এখন গাড়ি কেনা প্রয়োজনীয় বা কল্যাণকর মনে করেননি। অনুরুপ আপনি একটি মেয়েকে বিয়ের জন্য পছন্দ করেছেন। কিন্তু কোনো বাধা আসায় আপনি তাকে বিয়ে করতে পারেননি। তাহলে মনে করতে হবে, আল্লাহ আপনাকে ভালোবাসায় তিনি আপনার জন্য ওই মেয়েকে প্রয়োজন বা কল্যাণকর মনে করেননি। অনুরুপ একটি মাদ্রাসা, মসজিদ বা এতীমখানা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। কিন্তু কোনো বাধা আসায় আপনি প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। তাহলে মনে করতে হবে, আল্লাহ আপনাকে ভালোবাসায় তিনি আপনার জন্য ওই কাজ প্রয়োজন বা কল্যাণকর মনে করেননি। কারণ, কারো জান্নাত লাভের জন্য মাদ্রাসা, মসজিদ বা এতীমখানা প্রতিষ্ঠা ফরজ নয়। এসব কাজ পারলে ভালো, করতে না পারলে আফসোসের কোনো কারণ নেই। মুমিন তার শক্তি ও সামর্থ থেকেই আল্লাহর ইবাদত ও মানুষের উপকার করতে কেবল বাধ্য। সামর্থের বাইরে সে কিছু করতে না পারলে তার জন্য আল্লাহ তাকে শাস্তি দিবেন না। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।
প্রসঙ্গত, জীবিকা, স্বাস্থ্য ও মৃত্যুসহ যেকোনো বিষয়ে যে কারো কদর/তাকদীর পরিবর্তনীয়। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন:
يَمْحُوا اللَّهُ مَا يَشَاءُ وَيُثْبِتُ وَعِنْدَهُ أُمُّ الْكِتَابِ
অর্থঃ “আল্লাহ যা চান মুছে দেন ও যা চান রেখে দেন। আর তার কাছে মূল কিতাব (সৃষ্টিজীবির তাকদীর লিখন)।” [সূরা রা‘দ: ৩৯]। হাদীছ শরীফে এসেছে:
عَنْ ثَوْبَانَ رضِي الله عنه ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «لاَ يَزِيدُ فِي الْعُمُرِ إِلاَّ الْبِرُّ ، وَلاَ يَرُدُّ الْقَدَرَ إِلاَّ الدُّعَاءُ ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيُحْرَمُ الرِّزْقَ بِالذَّنْبِ يُصِيبُهُ ». أخرجه أحمد (5/277 ، رقم 22440) ، وابن ماجه (2/1334 ، رقم 4022) ، وابن حبان (3/153 ، رقم 872) ، والرويانى (1/420 ، رقم 643) ، والحاكم (1/670 ، رقم 1814) ، وقال : صحيح الإسناد .
অর্থঃ হযরত সাওবান রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “পূণ্যময় কাজ ছাড়া অন্য কিছুই মানুষের আয়ু বৃদ্ধি করে না এবং দোয়া ছাড়া অন্যকিছুই তাকদীর ফিরায় না। আর কৃত গুনাহের কারণে মানুষকে (মুমিনকে) জীবিকা থেকে বঞ্চিত করা হয় (শাস্তি স্বরূপ)।” [মুসনদে আহমদ (২২৪৪০), সুনানে ইবনে মাজা (৪০২২), ছহীহ ইবনে হিব্বান (৮৭২), মুসনদে রুয়ানী (৬৪৩) ও মুস্তাদরকে হাকেম (১৮১৪)]।
-
প্রসঙ্গত, আমাদের সমাজের যেসব লোক ফরজ-হারাম লঙ্ঘন ছাড়া অন্যান্য কাজে কথায় কথায় পরের দোষ দেখে, তারা তাকদীরে বিশ্বাস করে না। এসব বাজে লোকেরা সাধারণত মুনাফিক হয়। এরা কখনো নিজেদের দোষ ও দুর্বলতা দেখে না এবং পরের কষ্ট অনুভব করে না। এসব লোক সাধারণ মানুষ, হুজুর সমাজ ও ইসলামপন্থীসহ সকল মহলে প্রচুর রয়েছে। এরা মুখে স্বীকার না করলেও অন্তর থেকে তাকদীরে বিশ্বাস করে না।
-
দুই. মুরজিয়া বা জবরিয়া  
আরবী শব্দ ‘ইরজাউন’ إِرْجَاءٌ থেকে ‘মুরজিয়া’  مُرْجِئَةٌকর্তাবাচক বিশেষ্য। ‘ইরজাউন’ এর অর্থ হচ্ছে, দূরে ঠেলে দেয়া, এরা আমলকে ঈমান থেকে দূরে ঠেলে দেয় বিধায় আমাদের নবী মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর সম্মানিত ছাহাবা ও আমাদের আসলাফ, আকাবিরগণ তাদেরকে নাম দিয়েছেন ‘মুরজিয়া’। এদের কথা হচ্ছে, কেউ মুখে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র স্বীকৃতি দিলে সে মুসলিম হয়ে যাবে। চাই সে ইসলাম অনুযায়ী চলুক বা ইসলাম বিরোধী জীবন যাপন করুক। কিন্তু রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরীকা আকড়ে ধারণকারী ছাহাবা, তাবেয়ী ও পরবর্তী মুসলিমদের আকীদা হচ্ছে, মানুষ মুসলিম হওয়ার জন্য ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র মৌখিক স্বীকৃতি যথেষ্ট নয়। অনুযায়ী তথা আল্লাহর নির্দেশ ও রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত (পন্থা) অনুযায়ী তাকে জীবন যাপনে অভ্যস্ত হতে হবে। নতুবা সে কাফির কিংবা যিন্দীক (ভূয়া মুসলিম) বলে বিবেচিত হবে। মুরজিয়ারা মনে করে, বান্দার কোনো দোষ নেই। সবই তার ভাগ্য। তারা মনে করে সকলে পরিস্থিতির শিকার। তাই করা না করা কিছুর জন্য কাউকে দোষ দেওয়া যায় না।
উল্লেখ্য, মুরজিয়াদের অপর নাম জবরিয়া। এই মুরজিয়া বা জবরিয়া চিন্তা পথভ্রষ্ট ও জাহান্নাগামী। বিভিন্ন হাদীছ শরীফে মুরজিয়া ও কদরিয়া উভয়কে বেদীন বলা হয়েছে এবং তাদের সাথে উঠা-বসা করতে নিষেধ করা হয়েছে। নীচে আমি তা থেকে কয়েকটি হাদীছ তুলে ধরলাম:
عَنْ  عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رضِي الله عنه ، قال : قالَ رَسُوْلُ اللهُ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « صِنْفَانِ مِنْ أمَّتِيْ لَيْسَ لَهُمَا فِيْ الإسْلاَمِ نَصِيْبٌ : الْمُرْجِئَةُ وَالْقَدْرِيَّةُ ». أخرجه الترمذى (4/454 ، رقم 2149) وقال : غريب حسن صحيح . وابن ماجه (1/24 ، رقم 62) ، و عبد بن حميد (ص 201 ، رقم 579) ، والبخارى فى التاريخ الكبير (4/133).
অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “ইসলামে আমার উম্মতের দুইটি  দলের কোন অংশ নেই। তারা হল মুরজিয়া ও কদরিয়া(তাকদীর অস্বীকারকারী দল)।” [সুনানে তিরমিযী (২১৪৯), সুনানে ইবনে মাজা (৬২), মুসনদে আবদে ইবনে হুমাইদ (৫৭৯) ও বোখারীর তারীখে কবীর (৪/১৩৩), মান: সম্পূর্ণ ছহীহ]।
عَنْ جَابر بن عبد الله رضِي الله عنهما ، قال : قالَ رَسُوْلُ اللهُ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « صِنْفَانِ مِنْ أمَّتِيْ لَيْسَ لَهُمَا فِيْ الإسْلاَمِ نَصِيْبٌ : أهْلُ الإرْجَاءِ ، وَأهْلُ الْقَدْرِ » أخرجه ابن ماجه (1/28 ، رقم 73) ، وابن أبى عاصم (1/152 ، رقم 344) ، وابن جرير فى تهذيب الآثار (رقم 1967) ، والخطيب (5/367) .
অর্থঃ হযরত জাবির বিন আবদুল্লাহ রদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “ইসলামে আমার উম্মতের দুইটি  দলের কোন অংশ নেই। তারা হল মুরজিয়া ও কদরিয়া।” [সুনানে ইবনে মাজা (৭৩), ইবনে আবু আ‘ছিমের আস্সুন্নাহ (৩৪৪) ও তবারীর তাহযীবুল আ‘ছার (৫৭৯) ও খতীবের তারীখে বাগদাদ (৫/৩৬৭)]।
-
عن أنس بن مالك رضِي الله عنه ، قال : قالَ رَسُوْلُ اللهُ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « الْقَدَرِيَّةُ وَالْمُرْجِئَةُ مَجُوسَ هَذِهِ الأُمَّةِ ، فإِنْ مَرِضُوا فَلاَ تَعُودُوهُمْ ، وَإِنْ مَاتُوا فَلاَ تَشْهَدُوهُمْ‏ » قال الهيثمي (7 /207) : رواه الطبراني في الأوسط ورجاله رجال الصحيح غير هارون بن موسى الفروي وهو ثقة‏ .‏
অর্থঃ হযরত আনাস রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “কদরিয়া ও মুরজিয়া হল এ উম্মতের মাজুসী (অগ্নিউপাসক সম্প্রদায়)। তারা অসুস্থ হলে দেখতে যাবে না এবং মারা গেলে জানাযায় শরীক হবে না।” [মুজমে তবরানী আওসাত সুত্রে হাইছামীর মাজমাউয যাওয়ায়েদ (৭/২০৭)]।
-
عن محمد بن عبد الرحمن بن أبي ليلى الأنصاري ، عن أبيه ، عن جده ، قال : قالَ رَسُوْلُ اللهُ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « صِنْفَانِ مِنْ أمَّتِيْ لاَ يَرِدَانِ عَلَيَّ الْحَوْضَ : الْقَدْرِيَّةُ وَالْمُرْجِئَةُ » أخرجه الطبرى فى تهذيب الآثار (رقم 1969).
অর্থঃ হযরত আবু লাইলা আল-আনছারী রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “আমার উম্মতের দুইটি দল (কেয়ামতের দিন) হাউজে কাউছারে আমার কাছে ভিড়তে পারবে না। তারা হল কদরিয়া ও মুরজিয়া।” [তবারীর তাহযীবুল আ‘ছার (১৯৬৯)]।
عن واثلة بن الأسقع رضِي الله عنه ، قال : قالَ رَسُوْلُ اللهُ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « صِنْفَانِ مِنْ هِذِه الأمَّة لاَ تَنَالُهُمَا شَفَاعَتِي : الْمُرْجِئَةُ وَالْقَدْرِيَّةُ » أخرجه الطبرانى فى الأوسط (رقم 1648) .
অর্থঃ হযরত ওয়াছিলা বিন আসকা‘ রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “এ উম্মতের (অর্থাৎ, উম্মত হওয়ার দাবীদার) দুইটি দল (কেয়ামতের দিন) আমার সুপারিশ লাভ করবে না। তারা হল মুরজিয়া ও কদরিয়া।” [মুজমে তবরানী আওসাত (১৬৪৮)]।
-
عَنْ مُعَاذ بن جَبَلٍ رضِي الله عنه ، قال : قالَ رَسُوْلُ اللهُ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « إنَّ الله لَمْ يَبعَثْ نَبِيًّا قَبْلِىْ إلاَّ كَانَ فِىْ أمَّتِهِ مِنْ بَعْدِهِ مُرْجِئَةٌ وَقَدْرِيَّةٌ ، يُشَوِّشُوْنَ عَلَيْهِ أمْرَ أمَّتِهِ مِنْ بَعْدِهِ ، ألاَ وإنَّ اللهَ قَدْ لَعَنَ الْمُرْجِئَةَ والْقَدْرِيَّةَ عَلَىْ لِسَانِ سَبْعِيْنَ نَبِيًّا » أخرجه الطبرانى فى الكبير (20/117 ، رقم 232) ، وابن عساكر (65/155) .
অর্থঃ হযরত মুআয রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “আমার পূর্বে আল্লাহ যে উম্মতের মাঝেই নবী প্রেরণ করেছেন, সেই উম্মতে তাঁর পরে মুরজিয়া ও কদরিয়া সম্প্রদায়ের আবির্ভাব হতো, যারা উম্মতের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতো। শুনে রেখো! আল্লাহা তাআলা মুরজিয়া ও কদরিয়া সম্প্রদায়কে সত্তরজন নবীর জবানে লানত করেছেন।” [মুজমে তবরানী কাবীর (২০/১১৭) ও ইবনে আসাকিরের তারীখে দিমাশক (৬৫/১৫৫)],
-
عَنْ أبى أمامة رضِي الله عنه ، قال : قالَ رَسُوْلُ اللهُ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « لُعِنَتْ الْمُرْجِئَة عَلَىْ لِسَانِ سَبْعِيْنَ نَبِيًّا ، الَّذِينَ يَقُولُونَ الإيْمَانُ قَوْلٌ بِلا عَمَلٍ ». أخرجه الرويانى فى مسنده (2/271 ، رقم 1180) .
অর্থঃ হযরত আবু উমামা রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “মুরজিয়া সম্প্রদায়কে সত্তরজন নবীর জবানে লানত করা হয়েছে। তারা বলে, মুখের কথাই ঈমান। আমলের দরকার নেই।” [মুসনদে রূয়ানী (১১৮০)]।
-
মূলত মুরজিয়া ও কদরিয়া সম্প্রদায় হলো মুনাফিক। তাদের ঈমান থাকে মুখে। তবে পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে তারা অনেক সময় দীনদার, ইসলামপন্থী, মুজাহিদ ও আলিমের বেশ ধরে। আমার উপলব্ধি মতে হুজুর-শায়খ ও ইসলামপন্থী লোকজনসহ বর্তমান মুসলিম সমাজের অন্তত ৮০% মানুষ মুরজিয়া ও কদরিয়াবাদে দীক্ষিত। এদের কারণে মুসলিম সমাজে জুলুমের রাজতন্ত্র ও নাস্তিক্য-দুর্নীতির সেক্যুলারিজম মুসলিম জনপদগুলোতে শিকড় গেড়ে বসার সুযোগ পেয়েছে।
-
বিস্তার লাভ:
মদীনার সুখের নিরাপদ ছাহাবা সমাজে যেমন মুনাফিকরা শিকড় গেড়ে বসেছিল, তদ্রুপ পরবর্তীতে সৃষ্টি বিভিন্ন ইসলামী দল-প্রতিষ্ঠানেও সুখের সময় এসে মুনাফিকরা স্থান করে নিয়েছে। নবী সঃ এর যুগে সুখের সময় ইসলামগ্রহণকারী ২০ বছরের কট্টর ইসলাম বিরোধী আবু সুফিয়ান ও আল-হাকাম বিন আবুল আসের পরিবারের লোকজন পরবর্তীতে দুর্বল খলীফা হযরত উসমানের কাঁধে সওয়ার হয়ে এবং বিপদের সময়ের খলীফা হযরত আলীর বিরুদ্ধে অনৈতিক বিদ্রোহের সূচনা করে মুসলিম সমাজে রাজতান্ত্রিক স্বৈরশাসন চালু করেছিল। তাদের এই অপকর্মের ভবিষ্যদ্বাণী করে নবীজি সঃ বলে গিয়েছিলেন:
عن أبي هُريرة -رضي الله عنه- ، قال: سَمِعْتُ الصَّادِقَ الْمَصْدُوقَ يَقُولُ: « هَلَكَةُ أُمَّتِى عَلَى يَدَىْ غِلْمَةٍ مِنْ قُرَيْشٍ ». أخرجه البخارى (3/1319 ، رقم 3410) ، وأحمد (2/324 ، رقم 8287) .
অর্থঃ হযরত আবু হুরাইরা -رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সত্যবাদী বিশ্বস্ত নবীকে صلي الله عليه وسلم বলতে শুনেছি, “আমার উম্মতের ধ্বংস শুরু হবে কোরাইশের কিছু ছেলে-পেলের হাতে।” [ছহীহ বোখারী (৩৪১০) ও মুসনদে আহমদ (৮২৮৭)]।
-
আরেকটি হাদীছে তিনি বলেছেন:
عن أبى ذر رضي الله عنه ، قال: قال النبي صلى عليه وسلم: «أولُ مَنْ يُبدِّلُ سُنَّتىْ رجُلٌ مِنْ بَنِىْ أُمَيَّة». أخرجه ابن أبى شيبة (7/260 ، رقم 35877) بسند صحيح ، وعزاه الذهبى فى السير (1/330) للرويانى. وأخرجه ابن عساكر (65/250) ، وإسناده صحيح. وصححه الألباني فيما سماه "السلسلة الصحيحة" (4/329 ، رقم 1749).  
অর্থঃ হযরত আবু যর -رضِى الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ বলেছেন, “আমার সুন্নত (শাসন ব্যবস্থার নিয়ম-নীতি) সর্বপ্রথম পরিবর্তন করবে বনু উমাইয়ার একজন পুরুষ।” [ছহীহ সনদে মুছন্নফে ইবনে আবী শায়বা (৩৫৮৭৭)। আলবানীর সিলসিলা ছহীহাহও (১৭৪৯) দেখা যেতে পারে]।
প্রসঙ্গত, মুহাক্কিক আলেমদের মতে এ হাদীছে বর্ণিত বনু উমাইয়ার একজন পুরুষ থেকে উদ্দেশ্য ইসলামে রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা বিতর্কিত ছাহাবী মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান।
-
মূলত বিতর্কিত ছাহাবী এই মুয়াবিয়া রাজার আমলেই মুসলিম সমাজে মুরজিয়া বা জবরিয়া চিন্তার বিস্তার ঘটেছে। কারণ, তিনি ছিলেন একজন ভোগবিলাসী, কূটনীতিবাজ ও স্বৈরাচার রাজা। খুন, প্রতারণা, মিথ্যাচার ও সুদ-ঘুষসহ নানা অপকর্মের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। তবে তার একটি গুণ ছিল, উপায় না দেখলে তিনি তার অন্যায়ের প্রতিবাদকারী লোকজনকে চ্যালেঞ্জ না করে হাদিয়া-তোহফা দিয়ে দুর্বল করে দিতেন। শামে তার জনপ্রিয়তার মূল কারণও ছিল এটা। কারণ, পাবলিক খেতে পেলে জামাল আবদুন নাসের (মিসরের বামঘেঁষা স্বৈরশাসক) ও হাফেজ আল-আসাদের (সিরিয়ার বাশার আল-আসাদের পিতা) মত স্বৈরাচারকেও ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেয়।
বিভিন্ন ছহীহ হাদীছের তথ্য মতে এই মুয়াবিয়া নবীজি সঃ এর নানা নিষেধ অমান্য করে ভোগবিলাসের স্বৈর রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই ব্যাপারে অনেক অকাট্য ছহীহ হাদীছ আছে। কিন্তু মুরজিয়া চিন্তাবান্ধব মুফতী-মুহাদ্দিছদের কেউকেউ সেগুলোর নানা ব্যাখ্যা-অপব্যাখ্যা করার চেষ্টার করে মুয়াবিয়া শাসনের কালো অধ্যায়কে সাদা করতে চেয়েছেন। আবার কিছু ক্ষেত্রে তারা নিশ্চুপও থেকেছেন।
নীচে আমি তালিবে ইলমদের সুবিধার্তে মতন বা ট্যাক্সটসহ ছহীহ বোখারী ও ছহীহ মুসলিমসহ সিহাহ সিত্তার তিনটি হাদীছ তুলে ধরছি:
عَنْ عِكْرِمَةَ بْنِ خَالِدٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى حَفْصَةَ وَنَسْوَاتُهَا تَنْطُفُ قُلْتُ قَدْ كَانَ مِنْ أَمْرِ النَّاسِ مَا تَرَيْنَ فَلَمْ يُجْعَلْ لِي مِنْ الْأَمْرِ شَيْءٌ. فَقَالَتْ: الْحَقْ فَإِنَّهُمْ يَنْتَظِرُونَكَ وَأَخْشَى أَنْ يَكُونَ فِي احْتِبَاسِكَ عَنْهُمْ فُرْقَةٌ فَلَمْ تَدَعْهُ حَتَّى ذَهَبَ ، فَلَمَّا تَفَرَّقَ النَّاسُ خَطَبَ مُعَاوِيَةُ قَالَ: مَنْ كَانَ يُرِيدُ أَنْ يَتَكَلَّمَ فِي هَذَا الْأَمْرِ فَلْيُطْلِعْ لَنَا قَرْنَهُ فَلَنَحْنُ أَحَقُّ بِهِ مِنْهُ وَمِنْ أَبِيهِ. قَالَ حَبِيبُ بْنُ مَسْلَمَةَ: فَهَلَّا أَجَبْتَهُ؟ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: فَحَلَلْتُ حُبْوَتِي وَهَمَمْتُ أَنْ أَقُولَ: أَحَقُّ بِهَذَا الْأَمْرِ مِنْكَ مَنْ قَاتَلَكَ وَأَبَاكَ عَلَى الْإِسْلَامِ. فَخَشِيتُ أَنْ أَقُولَ كَلِمَةً تُفَرِّقُ بَيْنَ الْجَمْعِ وَتَسْفِكُ الدَّمَ وَيُحْمَلُ عَنِّي غَيْرُ ذَلِكَ فَذَكَرْتُ مَا أَعَدَّ اللَّهُ فِي الْجِنَانِ قَالَ حَبِيبٌ حُفِظْتَ وَعُصِمْتَ. أخرجه البخاري (رقم 3882).
অর্থঃ ইকরমা বিন খালিদ হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি হাফসার (তাঁর বড় বোন ও নবীজি ছঃ এর স্ত্রী) ঘরে প্রবেশ করলাম। তখন তার চুলের বেণী থেকে পানি পড়ছিল (অর্থাৎ, তখন তিনি গোসলখানা থেকে বের হন)। আমি বললাম, তুমিতো দেখছো মুসলমানদের জন্য খলীফা নির্ধারণের কার্যক্রম চলছে (মুয়াবিয়া কর্তৃক ইমাম হাসানের সাথে সন্ধি অথবা ছেলে এজীদের জন্য অগ্রিম সমর্থন আদায় চলছিল)। হাফসা বললো, তুমি যাও। কারণ, (আমি মনে করি) তারা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, তোমার অনুপস্থিতি মুসলমানদের মাঝে আরো বেশী বিরোধ/ফাটল সৃষ্টি করবে। তার এমন কথায় তিনি গেলেন। অতঃপর সাধারণ লোকজন চলে গেলে মুয়াবিয়া (ইবনে উমরকে ইঙ্গিত করে) বক্তব্য দিয়ে বললেন, ‘এ বিষয়ে (মুসলমানদের নেতৃত্ব নিয়ে) কেউ কথা বলতে চাইলে সে যেন আমার সামনে আসে। বস্তুত এ কাজে (মুসলমানদের নেতৃত্বের জন্য) আমরা তার এবং তার পিতার (হযরত উমর) চেয়ে অধিক যোগ্য।’ ঘটনা শোনার পর হাবীব বিন মাসলামা বললেন, আপনি কি তার এমন কথার জবাবে কিছু বলেননি? ইবনে উমর বললেন, আমি তখন আমার আলখেল্লা জড়িয়ে নিলাম এবং বলতে চাইলাম, ‘এ কাজের জন্য অবশ্য তিনিই অধিক হকদার, যিনি তোমার ও তোমার পিতার বিরুদ্ধে ইসলামের পক্ষে (বদর, উহুদ ও খন্দকে) লড়াই করেছেন।’ তবে আমি মুসলমানদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি ও রক্তপাত এড়াতে এবং আমার বক্তব্য তাদের অন্যায় ভাবে গ্রহণের আশঙ্কা থেকে কথাটা বলা থেকে বিরত থাকলাম। অতঃপর আমি জান্নাতে (মুমিনদের জন্য) আল্লাহ যা রেখেছেন, তার কথা স্মরণ করলাম। হাবীব বললেন, আপনি (বড় ধরণের বিপদ থেকে) বেঁচে গেলেন। [ছহীহ বোখারী (৩৮৮২)]।
-
উল্লেখ্য, আমার জানা মতে রাজতন্ত্র সমর্থক মুরজিয়া শায়খ-হুজুররা এই হাদীছের অপব্যাখ্যা করেননি। সম্ভবত এর কারণ, মুয়াবিয়ার রাজতন্ত্র বিরোধী আলিমগণ এই হাদীছটাকে তাদের লেখায় উপস্থাপন করেননি। যাই হোক, এখন মুয়াবিয়া বান্ধব আমার পাঠকেরা এই হাদীছটার কোনো ব্যাখ্যা বা অপব্যাখ্যা লিখতে পারেন।
-
এবার আসুন দ্বিতীয় হাদীছে:
ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻜَﻌْﺒَﺔِ ، ﻗَﺎﻝ:َ ﺩَﺧَﻠْﺖُ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪَ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦُ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﻌَﺎﺹِ ﺟَﺎﻟِﺲٌ ﻓِﻲ ﻇِﻞِّ ﺍﻟْﻜَﻌْﺒَﺔِ ﻭَﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻣُﺠْﺘَﻤِﻌُﻮﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ، ﻓَﺄَﺗَﻴْﺘُﻬُﻢْ ﻓَﺠَﻠَﺴْﺖُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﻛُﻨَّﺎ ﻣَﻊَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓِﻲ ﺳَﻔَﺮٍ ﻓَﻨَﺰَﻟْﻨَﺎ ﻣَﻨْﺰِﻻً ، ﻓَﻤِﻨَّﺎ ﻣَﻦْ ﻳُﺼْﻠِﺢُ ﺧِﺒَﺎﺀَﻩُ ، ﻭَﻣِﻨَّﺎ ﻣَﻦْ ﻳَﻨْﺘَﻀِﻞُ ، ﻭَﻣِﻨَّﺎ ﻣَﻦْ ﻫُﻮَ ﻓِﻲ ﺟَﺸَﺮِﻩِ ، ﺇِﺫْ ﻧَﺎﺩَﻯ ﻣُﻨَﺎﺩِﻱ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ: ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﺟَﺎﻣِﻌَﺔً . ﻓَﺎﺟْﺘَﻤَﻌْﻨَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻘَﺎﻝَ: «إنَّهُ لَمْ يَكُنْ نبي قَبْلي إلاَّ كَانَ حَقا علَيْهِ أنْ يَدُلَّ أُمَّتَهُ عَلى خَيرِ ما يعْلَمُهُ لهُمْ ، ويُنذِرَهُم شَرَّ ما يعلَمُهُ لهُم ، وإنَّ أُمَّتَكُمْ هذِهِ جُعِلَ عَافيتُها في أَوَّلِها ، وسَيُصِيبُ آخِرَهَا بلاءٌ وأُمُورٌ تُنكِرُونَهَا، وتجيءُ فِتَنٌ فيُرقِّقُ بَعضُها بَعْضاً ، وتجيء الفِتْنَةُ فَيقُولُ المؤمِنُ: هذِهِ مُهْلِكَتي ، ثُمَّ تَنْكَشِفُ ، وتجيءُ الفِتنَةُ فَيَقُولُ المُؤْمِنُ: هذِهِ هذِهِ ، فَمَنْ أَحَبَّ أنْ يُزَحْزَحَ عن النَّارِ ، ويُدْخَلَ الجنَّةَ ، فَلْتَأْتِهِ منيَّتُه وَهُوَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ ، ولَيَأْتِ إلى الناسِ الذي يُحِبُّ أَنْ يُؤتَى إلَيْهِ .ومَنْ بَايع إماماً فَأَعْطَاهُ صَفْقَةَ يدِهِ ، وثمَرةَ قَلْبهِ فَليُطعْهُ إنِ اسْتَطَاعَ ، فَإنْ جَاءَ آخَرُ ينازعُهُ ، فاضْربُوا عُنُقَ الآخَرِ». ﻓَﺪَﻧَﻮْﺕُ ﻣِﻨْﻪُ ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻟَﻪ:ُ ﺃَﻧْﺸُﺪُﻙَ ﺍﻟﻠَّﻪَ أأﻧْﺖَ ﺳَﻤِﻌْﺖَ ﻫَﺬَﺍ ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ؟ ﻓَﺄَﻫْﻮَﻯ ﺇِﻟَﻰ ﺃُﺫُﻧَﻴْﻪِ ﻭَﻗَﻠْﺒِﻪِ ﺑِﻴَﺪَﻳْﻪِ ﻭَﻗَﺎﻝ:َ ﺳَﻤِﻌَﺘْﻪُ ﺃُﺫُﻧَﺎﻯَ ﻭَﻭَﻋَﺎﻩُ ﻗَﻠْﺒِﻲ . ﻓَﻘُﻠْﺖُ ﻟَﻪُ ﻫَﺬَﺍ ﺍﺑْﻦُ ﻋَﻤِّﻚَ ﻣُﻌَﺎﻭِﻳَﺔُ ﻳَﺄْﻣُﺮُﻧَﺎ ﺃَﻥْ ﻧَﺄْﻛُﻞَ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻨَﺎ ﺑَﻴْﻨَﻨَﺎ ﺑِﺎﻟْﺒَﺎﻃِﻞِ ﻭَﻧَﻘْﺘُﻞَ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻨَﺎ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳَﻘُﻮﻝُ: {ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻻَ ﺗَﺄْﻛُﻠُﻮﺍ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻜُﻢْ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﺑِﺎﻟْﺒَﺎﻃِﻞِ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥْ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﺗِﺠَﺎﺭَﺓً ﻋَﻦْ ﺗَﺮَﺍﺽٍ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻜُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻜُﻢْ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ}. ﻗَﺎﻝَ: ﻓَﺴَﻜَﺖَ ﺳَﺎﻋَﺔً ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ: ﺃَﻃِﻌْﻪُ ﻓِﻲ ﻃَﺎﻋَﺔِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻋْﺼِﻪِ ﻓِﻲ ﻣَﻌْﺼِﻴَﺔِ ﺍﻟﻠَّﻪِ. أخرجه مسلم (3/1472 ، رقم 1844) واللفظ له، والنسائى (7/153 ، رقم 4191) ، وابن ماجه (2/1306 ، رقم 3956) ، وأحمد (2/191 ، رقم 6793) .
অর্থঃ তাবেয়ী আবদুর রহমান বিন আবদু রব্বিল কাবা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা মসজিদে হারামে প্রবেশ করলাম। তখন আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আছ কাবার ছায়ায় বসেছিলেন। লোকজন তাকে চারপাশ থেকে ঘিরেছিল। আমি তাদের নিকট গেলাম এবং তার পাশেই বসে পড়লাম। তখন তিনি বললেন, কোনো এক সফরে আমরা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সাথে ছিলাম। আমরা একটি জায়গায় অবস্থান গ্রহণ করলাম। আমাদের মধ্যকার কেউ তখন তার তাঁবু ঠিকঠাক করছিল, কেউ তীর ছুড়ছিল, কেউ তার পশুপাল দেখাশুনা করছিল। এমন সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র মুনাদী/নকীব হাঁক দিল, ‘নামায দাঁড়িয়ে যাচ্ছে!’ তখন আমরা গিয়ে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র কাছে জড়ো হলাম। তিনি বললেন, “আমার পূর্বে আগমন করা প্রত্যেক নবীর দায়িত্ব ছিল তার উম্মতকে সে সব বিষয়ের নির্দেশ করা, যা তিনি তাদের জন্য কল্যাণকর মনে করতেন এবং সে সব বিষয় থেকে তাদেরকে সতর্ক করা, যা তিনি তাদের জন্য ক্ষতিকর মনে করতেন। আর তোমাদের এ উম্মতের আফিয়ত (বিভেদ ও বিকৃতি থেকে রক্ষা) রাখা হয়েছে শুরুর দিকে। আর এর শেষের দিকে দেখা দিবে বিপদ ও এমন সব বিষয়, যা তোমাদের (প্রকৃত উম্মতদের) কাছে খুব খারাপ মনে হবে। আর এমন সব ফিতনা এসে আপতিত হবে, যার পূর্বেরটা পরেরটার চেয়ে হাল্কা হবে। তো এমন মারাত্মক ফিতনা এসে পতিত হবে, যখন মুমিন বলতে বাধ্য হবে, এইতো ধ্বংস হলাম। অতঃপর তা দূর হবে। অতঃপর এমন মারাত্মক ফিতনা এসে পতিত হবে, যখন মুমিন বলতে বাধ্য হবে, এইতো ধ্বংস হলাম, এইতো ধ্বংস হলাম। তো এই (ফিতনার) সময় যে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাতে প্রবেশ করতে চাইবে, তার কর্তব্য হবে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রেখে মৃত্যু বরণ করা এবং এমন লোকের সাথে সর্ম্পক রাখা, যে তার সাথে সর্ম্পক রাখতে চাই। আর কেউ কোনো শাসককে আনুগত্যের বাইয়াত দিলে ও অন্তর থেকে তাকে মেনে নিলে তার কর্তব্য হবে যতদূর সম্ভব ঐ শাসকের আনুগত্য করা এবং এ সময় অন্য কেউ পাল্টা শাসক হওয়ার দাবি করলে তাকে হত্যা করা।” (রাবী হযরত আবদুর রহমান বিন আবদু রব্বিল কাবা বলেন) তখন আমি (কাবা প্রান্তরে) তার নিকটে ঘেষলাম এবং তাকে বললাম, আমি আপনাকে আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলছি, আপনি কি সত্যি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র কাছে এরকম কথা শুনেছেন? তখন তিনি (আবদুল্লাহ বিন আমর) তার দুই কান ও হৃদয়ের দিকে দুই হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন, ‘আমার দুই কান তা শুনেছে এবং আমার হৃদয় তা সংরক্ষণ করেছে।’
তখন আমি তাকে বললাম, এই যে আপনার চাচাতো ভাই মুয়াবিয়া (তৎকালীন মুসলিম রাজা এবং আবদুল্লাহ বিন আমরের পিতার সঙ্গী) আমাদেরকে আদেশ দেন যেন, আমরা আমাদের পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করি এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরে খুনাখুনি করি, অথচ আল্লাহ বলেছেন:
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻻَ ﺗَﺄْﻛُﻠُﻮﺍ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻜُﻢْ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﺑِﺎﻟْﺒَﺎﻃِﻞِ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥْ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﺗِﺠَﺎﺭَﺓً ﻋَﻦْ ﺗَﺮَﺍﺽٍ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻜُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻜُﻢْ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ
“হে মুমিনগণ! তোমরা ব্যবসার মাধ্যমে পারস্পরিক সন্তুষ্টি ছাড়া তোমাদের সম্পদগুলো পরস্পরে অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং তোমরা আত্মহত্যা/পরস্পরে হানাহানি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।” (সূরা আন নিসাঃ ২৯)।
রাবী (তাবেয়ী আবদুর রহমান বিন আবদু রব্বিল কাবা) বলেন, তখন তিনি (ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আমর) কিছুক্ষণের জন্য চুপ থাকলেন। অতঃপর বললেন, ‘আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারসমূহে তুমি তার আনুগত্য করবে এবং আল্লাহর অবাধ্যতার বিষয়গুলোতে তার অবাধ্যতা করবে।’ [ছহীহ মুসলিম (১৮৪৪), সুনানে নাসায়ী (৪১৯১), সুনানে ইবনে মাজা (৩৯৫৬) ও মুসনদে আহমদ (৬৭৯৩)]।
-
 কেউকেউ বলতে পারেন, আবদুল্লাহ বিন আমরতো তার পিতাসহ মুয়াবিয়ার পক্ষে ছিলেন। তিনি কিভাবে মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মেনে নিলেন?
এর উত্তর নীচের বর্ণনায় রয়েছে:
عَنْ حَنْظَلَةَ بْنِ خُوَيْلِدٍ الْعَنَزِيِّ. قَالَ: بَيْنَمَا أَنَا عِنْدَ مُعَاوِيةَ ، إِذْ جَاءَهُ رَجُلاَنِ يَخْتَصِمَانِ فِي رَأْسِ عَمَّارٍ ، يَقُولُ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا: أَنَا قَتَلْتُهُ. فَقَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عَمْرٍو: لِيَطِبْ بِهِ أَحَدُكُمَا نَفْسًا لِصَاحِبِهِ ، فَإِنِّي سَمعتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «تَقْتُلُهُ الْفِئَةُ الْبَاغِيَةُ». قَالَ مُعَاوِيَةُ: فَمَا بَالُكَ مَعَنَا ؟ قَالَ: إِنَّ أَبِي شَكَانِي إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَقَالَ: «أَطِعْ أَبَاكَ مَا دَامَ حَيًّا وَلاَ تَعْصِهِ». فَأَنَا مَعَكُمْ وَلَسْتُ أُقَاتِلُ. أخرجه الإمام أحمد في مسنده (رقم 6538) ، وصحح إسناده أحمد شاكر وشعيب الأرنؤوط فى تخريجهما.
অর্থঃ হানজালা বিন খুওয়াইলিদ আনাযী বলেন, একসময় আমি মুয়াবিয়ার কাছে ছিলাম। তখন তার কাছে দুইজন লোক এসে আম্মারের (তিনি ছিফফীন যুদ্ধে নিহত হওয়া জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত শীর্ষ ও সিনিয়র মুহাজির ছাহাবী এবং মক্কায় ইসলামের প্রথম মজলুম শহীদ ইয়াসির-সুমাইয়া দম্পতির সন্তান) হত্যা নিয়ে ঝগড়া করতে লাগলো। প্রত্যেকে বলছিল, আমিই তাকে হত্যা করেছি। তখন আবদুল্লাহ বিন আমর বললেন, যেকোনো একজনই দাবি করুন। কারণ, আমি রসূলুল্লাহকে صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ বলতে শুনেছি, “তাকে বাগী/বিদ্রোহী দল হত্যা করবে।” এই কথা শুনে মুয়াবিয়া বললেন, তাহলে তুমি আমাদের সাথে কেন?  আবদুল্লাহ বললেন, আমার পিতা আল্লাহর রসূলের صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ কাছে আমার ব্যাপারে নালিশ করেছিলেন। তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন, “তোমার বাপ যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন তুমি তার আনুগত্য করবে এবং তার অবাধ্য হবে না।” তাই আমি (বাপের ডাকে সাড়া দিতে) আপনাদের সাথে রয়েছি। কিন্তু আমি কিতাল করছি না (আপনাদের ক্ষমতার লড়াইয়ে সম্পৃক্ত হইনি)।” [মুসনদে আহমদ (৬৫৩৮)। মানঃ ছহীহ]।
-
এবার আসুন তৃতীয় হাদীছে:
عَنْ خَالِدٍ قَالَ: وَفَدَ الْمِقْدَامُ بْنُ مَعْدِي كَرِبَ وَعَمْرُو بْنُ الْأَسْوَدِ وَرَجُلٌ مِنْ بَنِي أَسَدٍ مِنْ أَهْلِ قِنَّسْرِينَ إِلَى مُعَاوِيَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ ، فَقَالَ مُعَاوِيَةُ لِلْمِقْدَامِ أَعَلِمْتَ أَنَّ الْحَسَنَ بْنَ عَلِيٍّ تُوُفِّيَ؟ فَرَجَّعَ الْمِقْدَامُ. فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ أَتَرَاهَا مُصِيبَةً؟ قَالَ لَهُ: وَلِمَ لَا أَرَاهَا مُصِيبَةً وَقَدْ وَضَعَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حِجْرِهِ فَقَالَ: «هَذَا مِنِّي وَحُسَيْنٌ مِنْ عَلِيٍّ». فَقَالَ الْأَسَدِيُّ :جَمْرَةٌ أَطْفَأَهَا اللَّهُ. قَالَ: فَقَالَ الْمِقْدَامُ: أَمَّا أَنَا فَلَا أَبْرَحُ الْيَوْمَ حَتَّى أُغَيِّظَكَ وَأُسْمِعَكَ مَا تَكْرَهُ. ثُمَّ قَالَ: يَا مُعَاوِيَةُ إِنْ أَنَا صَدَقْتُ فَصَدِّقْنِي وَإِنْ أَنَا كَذَبْتُ فَكَذِّبْنِي. قَالَ: أَفْعَلُ. قَالَ: فَأَنْشُدُكَ بِاللَّهِ هَلْ تَعْلَمُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ لُبْسِ الذَّهَبِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: فَأَنْشُدُكَ بِاللَّهِ هَلْ تَعْلَمُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ لُبْسِ الْحَرِيرِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: فَأَنْشُدُكَ بِاللَّهِ هَلْ تَعْلَمُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ لُبْسِ جُلُودِ السِّبَاعِ وَالرُّكُوبِ عَلَيْهَا؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: فَوَاللَّهِ لَقَدْ رَأَيْتُ هَذَا كُلَّهُ فِي بَيْتِكَ يَا مُعَاوِيَةُ. فَقَالَ مُعَاوِيَةُ: قَدْ عَلِمْتُ أَنِّي لَنْ أَنْجُوَ مِنْكَ يَا مِقْدَامُ. قَالَ خَالِدٌ: فَأَمَرَ لَهُ مُعَاوِيَةُ بِمَا لَمْ يَأْمُرْ لِصَاحِبَيْهِ وَفَرَضَ لِابْنِهِ فِي الْمِائَتَيْنِ ، فَفَرَّقَهَا الْمِقْدَامُ فِي أَصْحَابِهِ. قَالَ: وَلَمْ يُعْطِ الْأَسَدِيُّ أَحَدًا شَيْئًا مِمَّا أَخَذَ. فَبَلَغَ ذَلِكَ مُعَاوِيَةُ فَقَالَ: أَمَّا الْمِقْدَامُ فَرَجُلٌ كَرِيمٌ بَسَطَ يَدَهُ وَأَمَّا الْأَسَدِيُّ فَرَجُلٌ حَسَنُ الْإِمْسَاكِ لِشَيْئِهِ. أخرجه أبو داود (رقم 4131) بسند صحيح. وصححه الألباني فيما سماه صحيح أبي داود (2/778).
অর্থঃ খালেদ (একজন তাবেয়ী) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একসময় মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ানের কাছে মিকদাম বিন মা‘দীকারাব (শাম বিজয়ের একজন শীর্ষ বীর ছাহাবী), আমর বিন আসওয়াদ ও কিন্নাসরীন (শামের একটি শহর) থেকে বনু আসাদের একজন লোক এলো। তখন মুয়াবিয়া মিকদামকে বললেন, হাসান বিন আলী যে মারা গেছেন, তা কি আপনি জেনেছেন? মিকদাম বললেন, ইন্না লিল্লাহ ...। তখন দরবারের এক লোক বললো, আপনি কি এটাকে মুসীবত মনে করেন? তিনি বললেন, কেন মনে করবো না! আল্লাহর রসূল صلَّى الله علَيه وَسلَّمَ তাঁকে নিজের কোলে রেখে বলেছিলেন, “এর স্বভাব আমার মত। আর হুসাইনের স্বভাব আলীর মত।” তখন আসাদী (বনু আসাদের লোকটি) বললো, আল্লাহ একটি জামরাকে (অঙ্গার) নিভিয়ে ভালো করেছেন। মিকদাম বললেন, তাই নাকি? তোমাকে আজ অপমানিত না করে ও অপছন্দনীয় কথা না শুনিয়ে আমি ক্ষান্ত হবো না! অতঃপর মিকদাম মুয়াবিয়াকে বললেন, মুয়াবিয়া! আমি কিছু কথা বলবো। আমি সত্য বললে সত্য বলবে, আর আমি মিথ্যা বললে মিথ্যা বলবে। মুয়াবিয়া বললেন, ঠিক আছে। মিকদাম বললেন, আমি তোমাকে আল্লাহর দোহাই দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, আল্লাহর রসূল সঃ কি সোনা ব্যবহার থেকে নিষেধ করেননি? মুয়াবিয়া বললেন, হ্যা! করেছেন। মিকদাম বললেন, আমি তোমাকে আল্লাহর দোহাই দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, আল্লাহর রসূল সঃ কি রেশমী কাপড় পরা থেকে নিষেধ করেননি? মুয়াবিয়া বললেন, হ্যা! করেছেন। মিকদাম বললেন, আমি তোমাকে আল্লাহর দোহাই দিয়ে জিজ্ঞেস করছি, আল্লাহর রসূল ছঃ কি হিংস্র প্রাণীর চামড়া ব্যবহার ও সেগুলো উপর সওয়ার হওয়া থেকে নিষেধ করেননি? মুয়াবিয়া বললেন, হ্যা! করেছেন। মিকদাম বললেন, তাহলে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি! আমিতো এগুলোর সবই তোমার ঘরে দেখতে পাচ্ছি হে মুয়াবিয়া! মুয়াবিয়া বললেন, বুঝতে পেরেছি আজ তোমার ধরা থেকে আমার মুক্তি নেই। খালেদ বললেন, তখন মুয়াবিয়া মিকদামের জন্য তাঁর দুই সঙ্গীর চেয়ে আরো বেশী হাদিয়া বরাদ্দ দিলেন এবং তাঁর ছেলের জন্য দুইশতের মত মুদ্রা (সম্ভবত মাসিক ভাতা) নির্ধারিত করলেন। মিকদাম হাদিয়াগুলো তাঁর লোকজনের মাঝে বণ্টন করে দিলেন। কিন্তু আসাদী (বনু আসাদের যে লোকটি হযরত হাসানের মৃত্যুতে তাঁর ব্যাপারে কটুক্তি করেছিল) প্রাপ্ত হাদিয়া থেকে কিছুই কাউকে দিল না। পরে বিষয়টি মুয়াবিয়ার কাছে পৌঁছুলে তিনি বললেন, মিকদামতো করমওয়ালা মানুষ, যা পেয়েছে ছিটিয়ে দিয়েছে। আর আসাদী যা পেয়েছে, তা ভালো করে সংরক্ষণ করেছে। [সুনানে আবু দাউদ (৪১৩১)। মানঃ ছহীহ]।
এই হাদীছটি চারটি বিষয় রয়েছে। ১. হযরত হাসানের মৃত্যুতে আনন্দিত হওয়া বনু আসাদের লোকটিকে হাদিয়া দেওয়ায় মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে কৃত হযরত হাসানকে বিষ প্রয়োগে হত্যার বিষয়টি সন্দেহ করা যায়। ২. মুয়াবিয়া ঘুষ দিয়ে মানুষকে তার পক্ষে রাখার চেষ্টা করতেন। এই কারণে অনেক লোকজন তাকে ভালো পেতেন। ৩. তিনি হারাম বিলাসিতায় লিপ্ত হতে ভয় পেতেন না। যেমন এই হাদীছে তার তিনটি হারাম জিনিস ব্যবহারের কথা উল্লেখিত হয়েছে। ৪. মিকদাম ও সাদ বিন ওয়াক্কাসের মত ছাহাবীদের অনেকে মুয়াবিয়ার পাপ ও অন্যায় কাজের সমালোচনা করতেন এবং উপায়ন্তর না দেখে মুয়াবিয়া তা হেসে উড়িয়ে দিতেন এবং হাদিয়া দিয়ে প্রতিবাদকারীর মন জয় করার চেষ্টা করতেন।
-
প্রসঙ্গত, গতানুগতিক মুহাদ্দিস আল্লামা যাহাবী সিয়ারু আ‘লামিন নুবালায় এই হাদীছ উল্লেখ করে বলেছেনঃ
"ومعاوية من خيار الملوك الذين غلب عدلهم على ظلمهم ، وما هو ببريء من الهَنَات ، والله يعفو عنه." (سير أعلام النبلاء ، الجزء 3 ، الصفحة 159).
অর্থঃ “মুয়াবিয়া সেসব উত্তম রাজাদের অন্তর্ভূক্ত, যাদের জুলুমের চেয়ে ইনসাফই বেশি ছিল। আর তিনি هَنَات হানাত (পাপ ও দুর্নীতি) থেকে মুক্ত ছিলেন না। আল্লাহ তাকে মাফ করুন।” [সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা (৩/১৫৯)]।
-
মুয়াবিয়ার চিন্তা-চরিত্রে ইরজা থাকার আরেকটি প্রমাণ হলো, তার নিজের সিদ্ধান্তকে আল্লাহর সিদ্ধান্ত বলে দাবি করা। অবশ্য এমন কাজ এই যুগের আওয়ামীলীগের ধার্মিকেরাও করে। আমি তাদের সাথে কথা বলে যা বুঝেছি তাহলো: তারা মনে করে, তাদেরকে আল্লাহই ক্ষমতা দিয়েছেন এবং তারা যা করছেন, তা আল্লাহর হুকুমেই করছেন। তো ৬০ হিজরীতে মৃত্যুর আগে মুয়াবিয়া যখন ছেলে এজীদের জন্য বাইয়াত নিচ্ছিল, তখন বিশিষ্ট ছাহাবী আবদুল্লাহ বিন উমর ও উম্মুল মুমিনীন আয়েশা তার এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। তখন স্বৈরচার বাদশা মুয়াবিয়া জবাব দিয়েছিল:
إن أمر يزيد قضاء من القضاء وليس للعباد الخيرة من أمرهم. الإمامة والسياسة لابن قتيبة (1/167) ، (1/171) .
অর্থ: “এজীদের (ক্ষমতা লাভের) বিষয়টা তাকদীরের একটি ফয়সালা। মানুষের জন্য এই ফয়সালার সাথে দ্বিমত করা ঠিক হবে না।” [ইবনে কুতাইবার আল-ইমামাহ ওয়াস সিয়াসাহ (খন্ড: ১, পৃষ্ঠা: ১৬৭, ১৭১)]।
-
মহান আল্লাহ আমাদেরকে কদরিয়া ও মুরজিয়া চিন্তা থেকে মুক্ত রাখুন।
-
পরবর্তী পোস্ট গজওয়ায়ে হিন্দ বিষয়ক হাদীছগুলো নিয়ে ইনশা-আল্লাহ।
-
আবুল হুসাইন আলেগাজী
সদর লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম।

1 comment:

  1. হযরত মুয়াবিয়া রাঃ কৃতকর্মের যে দুইটি বোখারী ও মুসলিমের বর্ণনা দিয়েছেন তা কিতাবে খোজে পাচ্ছি না। হাদিস গুলোর বাবের নাম সহ উল্লেখ করলে উপকৃত হবো।
    আর হাদিছ গুলো দ্বারা হযরত মুয়াবিয়া রাঃ প্রতি আপনি যে মত পোষন করছেন বা যে হযরত মুয়াবিয়া রাঃ এর শানে যে ভাবে বিশ্লেষণ করেছেন সে ভাবে কি কোনো গ্রহণ যোগ্য মুহাদ্দিস, মুফাস্সির,বা শারেহীনদের কারো রেফারেন্স আছে ?

    ReplyDelete

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...