প্রশ্নঃ হাজ্জের অভিধানিক অর্থ ও পারিভাষিক সংজ্ঞা দাও।হাজ্জের প্রকারভেদ কি কি?হাজ্জের প্রকারভেদ লিখ।হাজ্জ কাদের উপর ফরয আলোচনা কর। হাজ্জের গুরুত্ব ও ফযীলত নিয়ে আলোচনা কর।
ভূমিকা
আল্লাহ
বলেন,
কুরআনে
এসেছে, ‘এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আলাহর জন্য বায়তুলাহর হজ্জ করা ফরয। আরযে কুফরী করে, তবে আলাহ তো
নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী’। ( সূরা আলে ইমরান-৯৭)
ইসলাম
ধর্ম পাঁচটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। তার মধ্যে হজ্ব ইসলামের অন্যতম প্রধান
ভিত্তি। যা সক্ষম ব্যক্তির জীবনে একবারই ফরজ।হাজ্জ অস্বীকারকারী ব্যক্তি ইসলামের
ভিতর থাকতে পারে না।যারা তা অস্বীকার করবে তারা ইসলাম থেকে সম্পূর্ণরুপে খারিজ হয়ে
যায়।ইসলামে হাজ্জ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারনা নিম্নে দেওয়া হলঃ
হাজ্জ কি
হজ্ব আরবি শব্দ। অর্থ নিয়ত করা, দর্শন করা, সঙ্কল্প করা, এরাদা
করা, গমন করা, ইচ্ছা করা, প্রতিজ্ঞা
করাসহ , কোনো মহৎ কাজে ইচ্ছা করা। আর শরিয়তের পরিভাষায়
নির্দিষ্ট দিনে নিয়তসহ ইহরামরত অবস্থায় আরাফার ময়দানে অবস্থান করা এবং বায়তুল্লাহ
শরীফ তাওয়াফ করা।
আবার কেউ
বলেন, জিলহজ্বের ৯ তারিখ ইহরাম বেঁধে আরাফাতের মাঠে অবস্থানসহ কয়েকটি নির্দিষ্ট
স্থানে নির্ধারিত কয়েকটি আমল যথাযথভাবে আদায় করে কাবা গৃহ তাওয়াফ করাকে হজ্ব বলে।
আল-ফিকাউল
ইসলামী গ্রন্থে বলা হয়েছে, “নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কাজের মাধ্যমে নির্ধারিত স্থান যিয়ারত করা হল হাজ্জ”।
শরহে
বিকায়া গ্রন্থাগার বলেন, “নির্দিষ্ট সময়ে সুনির্দিষ্ট স্থান যিয়ারত করার নাম হল হাজ্জ”।
আল-কামসুল
ফিকহ গ্রন্থে আছে, “আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় একটা নির্ধারিত সময়ে মক্কা মুয়াযযামার বায়তুল
হারামে গমনের নিয়ত পোষণ করাই হল হাজ্জ”।
হাজ্জ যাদের উপর ফরয
(১) মুসলিম হওয়া
(২) বালিগ হওয়া
(৩) স্বাধীন হওয়া
(৪) বিবেকবান হওয়া
(৫)নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক যে ব্যক্তির এ পরিমাণ
ধনসম্পদ আছে যে, সে হজের সফর (পথ খরচ) বহন করতে সক্ষম এবং তার
অনুপস্থিতিকালীন তার পরিবারবর্গের প্রয়োজন মেটানোর মতো খরচও রেখে যেতে সক্ষম, এমন ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ। অথবা এমন ব্যক্তি যে হজের মৌসুমে অর্থাৎ শাওয়াল মাস
শুরু হওয়া থেকে সৌদি আরবে অবস্থানরত ছিল এবং জিলহজ মাস পর্যন্ত সৌদি আরবে অবস্থান
করতে থাকে এবং তার ওপর যদি কোনো বিধি-নিষেধ, ওজর ও
অসুবিধা না থাকে তাহলে তার ওপরও হজ পালন করা ফরজ
ইত্যাদি।
(৬) যাতায়াতে নিরাপত্তা
(৭) মহিলাদের সাথে মাহরুম থাকা
হজের প্রকারগুলো
হজ তিন
প্রকার যথা :
এক. হজে
ইফরাদ : অর্থাৎ হজের সফর শুরু করার সময় মিকাত থেকে যদি শুধু হজের নিয়তে ইহরাম
বাঁধে এবং হজের সঙ্গে ওমরাহ আদায় না করে তাহলে এ প্রকার হজকে ‘হজে ইফরাদ’ বলা হয়। এ প্রকার হজ পালনকারীকে শরিয়তের পরিভাষায় ‘মুফরিদ’ বলে।
দুই. হজে
কিরান : যদি একই সঙ্গে হজ এবং ওমরাহর নিয়ত করে উভয়টিই পালন করে এবং হজ ও ওমরাহর
জন্য একই ইহরাম বাঁধে, তাহলে এ ধরনের হজকে শরিয়তের পরিভাষায় ‘হজে কিরান’ বলা হয়। এ প্রকার হজ পালনকারীকে ‘কারিন’ বলে।
তিন. হজে
তামাত্তু : অর্থাৎ হজের সঙ্গে ওমরাহকে এভাবে মেলানো যে ‘মিকাত’ থেকে শুধু ওমরাহর ইহরাম বাঁধা। এই ইহরামে মক্কায় পৌঁছে ওমরাহ পালনের পর ইহরাম
ভেঙে ৭ জিলহজ সেখান থেকেই হজের ইহরাম বেঁধে হজ পালন করাকে শরিয়তের পরিভাষায় ‘হজে তামাত্তু’ বলে। এ প্রকারের হজ পালনকারীকে ‘মুতামাত্তি’ বলে।
এই তিন
প্রকারের হাজ্জের ভিতর কিরান হাজ্জ সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ একটি হাজ্জ। দশম হিজরী সালে
মুহাম্মদ (সাঃ) কিরান হাজ্জ সম্পাদন করেছিলেন।
হজ্বের ফরজ
হজ্বের
ফরজ তিনটি-
১· ইহরাম বাঁধা অর্থাৎ হজ্বের নিয়ত করা। আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদুল হাজ্জা ওয়াল
উমরাতা ওয়াজ জিয়ারাতা ফাইয়াস সিরহুলি ওয়াতাক্কাব্বালহু মিন্নি- অর্থ ‘ হে আল্লাহ! আমি হজ্ব উমরা এবং
কাবাগৃহ তাওয়াফের জন্য নিয়ত করলাম। তুমি তা কবুল কর।
ইহরাম
বাঁধার নিয়ম : হজ ও ওমরাহর আমলগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম আমল হলো ইহরাম বাঁধা। ইহরাম
বাঁধার নিয়ম হলো- হজ অথবা ওমরাহর নিয়তে সেলাইকৃত কাপড় খুলে সেলাইবিহীন দুটি চাদর
পরিধান করে ‘তালবিয়াহ্’ পাঠ করা, শরিয়তের
পরিভাষায় একেই ‘ইহরাম’ বলা হয়। ইহরাম বাঁধার উত্তম পদ্ধতি
হলো-যখন ইহরাম বাঁধার ইচ্ছা করবে তখন প্রথমে গোসল অথবা অজু করবে, নখ কাটবে, বগল ও নাভীর নিচের চুল পরিষ্কার করবে এবং মাথা ও দাড়ি
চিরুনি করে সর্ববিষয়ে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করবে। ইহরামের জন্য দুটি নতুন অথবা ধোলাই
করা পরিষ্কার চাদর হওয়া সুন্নত। একটি চাদর দিয়ে লুঙ্গি বানাবে অন্যটি দিয়ে চাদর
বানাবে। ইহরামের কাপড় পরিধান করার পর নামাজের মাকরুহ সময় না হলে মাথা ঢেকে দুই
রাকাআত নফল নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব। নামাজ পড়ে মাথার কাপড় খুলে ফেলবে এবং যেই
হজের ইচ্ছা করবে মনে মনে সেই হজের নিয়ত করে ইহরামের ‘তালবিয়াহ্’ পাঠ করবে।
তালবিয়াহ্র
উচ্চারণ :
‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারীকালাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা, লাকা ওয়াল মুল্ক লা-শারীকালাক’
২· জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ ফজরের পর থেকে সূর্যাস্ত যাওয়া পর্যন্ত্ আরাফাতের
ময়দানে অবস্থান করা।
’৩· তাওয়াফে
জিয়ারাত অর্থাৎ মক্কা শরীফ পৌঁছার পর সর্বপ্রথম কাজটি হলো চারবার কাবাগৃহটি
প্রদক্ষিণ করা আবার হজ্বের কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরার সময় সর্বশেষ কাজ হলো তিনবার
কাবাগৃহ প্রদক্ষিণ করে রওনা হওয়া।
হজ্বের ওয়াজিব
হজ্বের
ওয়াজিব কাজ সাতটি-
১· সাফা ও মারওয়া উভয় পাহাড় সাতবার প্রদড়্গিণ করা।
২· মুজদালিফায় রাত যাপন করা।
৩· মিনায় তিনটি জামরাতে তিনদিনে প্রত্যেক জামরাতে ৭টি করে ৭*৭=৪৯টি পাথর শয়তানের
উদ্দেশে নিক্ষেপ করা,
৪· মিনার ময়দানে কোরবানি করা,
৫· মাথা মুণ্ড করা,
৬· ফরজ তাওয়াফ শেষে ৩ চক্কর দেয়া,
৭· বিদায়ী তাওয়াফ করা
হাজ্জের গুরুত্ব এবং ফযীলত
১.
আল্লাহর নির্দেশ পালন : হাজ্জ একটি অন্যতম ফরজ ইবাদাত। হাজ্জ পালনের মাধ্যমে
আল্লাহর নির্দেশ পালন হয়ে থাকে। আল্লাহ তায়ালা সামর্থবান মুসলিমের উপর হাজ্জ ফরজ
করেছেন । কুরআনে এসেছে, ‘এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আলাহর জন্য বায়তুলাহর হজ্জ করা ফরয। আরযে কুফরী করে, তবে আলাহ তো নিশ্চয়
সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী’। ( সূরা আলে ইমরান-৯৭)
২.
যিকরুল্লাহ প্রতিষ্ঠা : হজ্জ এমন একটি ইবাদাত যার প্রত্যেকটি কাজে আল্লাহর যিকর
করা হয়। তাওয়াফ, সাঈ, রমঈল জিমার (পাথর নিক্ষেপ),মিনা,মুযদালিফাহ, আরাফাহসহ প্রত্যেকটি নির্দেশনায়
আল্লাহর যিকরে ধ্বনিত, প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,‘তারপর যখন তোমরা তোমাদের হজের
কাজসমূহ শেষ করবে, তখন আলাহকে স্মরণ কর, যেভাবে তোমরা স্মরণ করতে তোমাদের বাপ-দাদাদেরকে, এমনকি
তার চেয়ে অধিক স্মরণ। আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে যে বলে, হে
আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতেই দিয়ে দিন। বস্ত্তত আখিরাতে তার
জন্য কোন অংশ নেই।(সূরা আলবাকারাহ-২০০)।
আল্লাহ
আরো বলেন, সুতরাং যখন তোমরা আরাফা থেকে বের হয়ে আসবে, তখন মাশআরে হারামের নিকট আলাহকে স্মরণ কর এবং তাকে স্মরণ কর
যেভাবে তিনি তোমাদেরকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যদিও তোমরা এর পূর্বে অবশ্যই পথভ্রষ্টদের
অন্তর্ভুক্ত ছিলে।’ (সূরা আলবাকারাহ-১৯৮)
৩.
জাহান্নামদের আযাব থেকে মুক্তি দানঃ হজ্জ জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রান দান করে।
মহানবী (সঃ) বলেন; মহান আল্লাহ আরাফাতের দিন যত মানুষকে জাহান্নাম থেকে
মুক্তি দান করেন অন্যকোন দিনে এত লোককে মুক্তি দেন না। (মুসলিম)
৪. হজ্জ পালনকারী সদ্যজাত শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে যায়: হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)
বলেন; আমি রাসূল (সঃ) কে বলতে শুনেছি; যে ব্যক্তি হজ্জ করে এবং হজ্জকালে যৌন সম্ভোগ ও কোনপাপাচারী কাজে লিপ্ত হয় না।
সে ব্যক্তি সদ্য মাতৃগর্ভ থেকে ভুমিষ্ট শিশুরমত নিষ্পাপ হয়েবাড়ি ফিরে যায়। (বুখারী
ও মুসলিম)
এক
হাদীসে এসেছে, ‘তোমরা পর-পর হজ্জ ও উমরা আদায় করো। কেননা তা দারিদ্র ও পাপকে সরিয়ে দেয় যেমন
সরিয়ে দেয় কামারের হাপর লোহা-স্বর্ণ-রুপার ময়লাকে। আর হজ্জে মাবরুরের প্রতিদান তো
জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়। (সহিহ নাসায়ী)
৫.
হজ্জের এক মাত্র প্রতিদান জান্নাত:হাজ্জের বিনিময় জান্নাত ছাড়া আর কিছুই হতে পারে
না। হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত; মহানবী (সঃ)বলেন;
একউমরাহ
হতে অন্য উমরাহ অন্তরবর্তী কালীন সময় গুনাহের কাফ্ফারা হয়। আর মাবরূর(গৃহীত )
হজ্জের একমাত্র প্রতিদান হল জান্নাত। (বুখারী ও মুসলিম)
৬.
বিধর্মী হওয়া থেকে মুক্তিঃ যাদের উপর হাজ্জ ফরয হওয়ার পর হাজ্জ না করে মৃত্যুবরণ
করবে তাদের ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী দেওয়া হয়েছে। রাসূল(সাঃ) বলেন,
“যার উপর হাজ্জ ফরয হল অথছ সে যদি
হাজ্জ না করে মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে কি ইয়াহূদী হয়ে মরল নাকি খ্রিষ্টান হয়ে মরল
তাতে আমার কিছু যায় আসে না।”3
৭. উত্তম
নেক আমলঃ যারা সঠিকভাবে হাজ্জ সম্পাদন করবে তারা ইসলামের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ
কাজ করার সৌভাগ্য অর্জন করবে।রাসূল (সাঃ) বলেন,
‘উত্তম আমল কি এই মর্মে রাসূলুল্লাহ
(সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল। উত্তরে তিনি বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান।
বলা হল, ‘তারপর কী’? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ। বলা হল তারপর কোনটি? তিনি বললেন, মাবরুর হজ্জ। (বুখারী) একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে
প্রশ্ন করে আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কি আপনাদের সাথে জিহাদে ও অভিযানে যাব না? তিনি বললেন, ‘তোমাদের জন্য উত্তম ও সুন্দরতম জিহাদ হল ‘হজ্জ’, তথা মাবরুর হজ্জ।” (বুখারী)
৮.
আল্লাহর উদ্দেশ্য পূর্ণঃ আল্লাহ পাক মানুষকে এই উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন যে,তারা কেবলমাত্র এক আল্লাহর ইবাদত করবে। যারা হাজ্জ করবে তাদের সেই উদ্দেশ্য
পূর্ণ হবে।তাই আল্লাহ বলেন,
[বাকারাঃ২০০]
৯.
মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ লাভঃ যারা হাজ্জ পালন করবে তারা আমাদের প্রিয়নবী
মুহাম্মদ(সাঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করার সৌভাগ্য অর্জন করবে। এই ব্যাপারে
মুহাম্মদ(সাঃ) বলেন,
“আমার মৃত্যর পর যে হাজ্জ করল আর
আমার কবর যিয়ারত করল সে যেন আমার সাথে জীবিত অবস্থায় সাক্ষাৎ করল”।
১০.
আল্লাহর নৈকট্য লাভঃ হাজ্জব্রত অবস্থায় আল্লাহর একজন প্রিয়বান্দা বিভিন্ন ধরনের
আমল পালন করে।আল্লাহর যিকির করে থাকে।কাবা শরীফ প্রদক্ষিণ করে থাকে। এসকল আমলের
মধ্য দিয়ে একজন বান্দা অতি সহজে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে।
১১.
চারিত্রিক বিশুদ্বতাঃ হাজ্জব্রত অবস্থায় মানুষ সহজে তার চারিত্রিক বিশুদ্বতা অর্জন
করতে পারে।কারণ হাজ্জ অবস্থায় ঝগড়া করা,হাঙ্গামা সৃষ্টি করা, গীবত করা, হিংসা করা, কৃপনতা প্রদর্শন করা, অপচয় করা সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ব।তাই হাজীগণ এই সময় এসকল খারাপ কাজ থেকে নিজেদের
বিরত রাখার জন্য চেষ্টা করে এবং এর দ্বারা সে তার চরিত্রকে পূত-পবিত্র করতে পারে।
১২.
সামগ্রিক ইবাদত পালনঃ নামায এবং সাওম হল
কেবল দৈহিক ইবাদত আর যাকাত হল আর্থিক ইবাদত।আর হাজ্জ এমন একটি ইবাদত যা কিনা দৈহিক
এবং আর্থিক উভয় ইবাদতের সমন্বয়ে সাধিত হয়।তাই রাসূল(সাঃ) বলেন, “উত্তম জিহাদ হল হাজ্জ”।
১৩.
আখিরাতের কথা স্মরণঃ হাজ্জের প্রত্যেকটি কাজ মানুষকে আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে
দেয়। ১. এহরামের কাপড় গায়ে জড়িয়ে আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে হজ্জের সফরে রওয়ানা হওয়া কাফন
পরে আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে আখেরাতের পথে রওয়ানা হওয়াকে স্মরণ করিয়ে দেয়।হজ্জের সফরে
পাথেয় সঙ্গে নেয়া আখেরাতের সফরে পাথেয় সঙ্গে নেয়ার প্রয়োজনয়ীতাকে স্মরণ করিয়ে
দেয়।এহরাম পরিধান করে পুত-পবিত্র হয়ে আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেয়ার জন্য ‘লাব্বাইক’ বলা সমস্ত গুনাহ-পাপ থেকে পবিত্র হয়ে পরকালে আল্লাহর কাছে হাজিরা দেয়ার
প্রয়োজনীয়তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আরো স্মরণ করিয়ে দেয় যে এহরামের কাপড়ের মতো
স্বচ্ছ-সাদা হৃদয় নিয়েই আল্লাহর দরবারে যেতে হবে।
সামাজিক শিক্ষা
১.
বিশ্বভাতৃত্ববোধ : হাজ্জের মাধ্যমে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধের স্বরুপ প্রকাশ পায়।এ মিলন
কেন্দ্রে পৃথিবীর সকল দেশের মুসলমান মিলিত হন।তাই বলা হয় যে হাজ্জ মুসলমানদের
বিশ্বসম্মেলন।বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার নানা ভাষা,আকৃতি ও
বর্ণের লক্ষ লক্ষ মুসলমান একই পোশাকে একই নিয়মে হাজ্জব্রত উদযাপনে শরীক হন।
২. বদ
অভ্যস দূরীকরণ : হাজ্জের মাধ্যমে মানুষের মন থেকে কৃপনতা,অপচয়
প্রবণতা দূরীভূত হয়।আর মিতব্যয়ী হওয়ার দরুন দারিদ্য দূর হয়।অর্থনৈতিক ভারসাম্য
বজায় থাকে।
৩.
সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্বি : আমাদের সমাজে হাজীদের মর্যাদা ও সম্মান অনেক
বেশি।আল্লাহর ঘর তওয়াফ করার জন্য সাধারণ মানুষ হাজীদের সম্মান করে থাকে।
৪.
কলুষমুক্ত সমাজব্যবস্থা গঠনঃ বিশ্বের সকল দেশ থেকে লোক আল্লাহর ঘরের কাছে সমবেত হয়
এবং সর্বপ্রকার কলহ দ্বন্দ্ব,বিবাদ,ঝগড়া,ফাসাদ,অনাচার,অবিচার থেকে হাজীগণ পবিত্র
থাকেন।কোন জাতির প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ বলতে কিছু থাকে না।এর মধ্য দিয়ে একটি
কলুষমুক্ত সমাজ গঠনে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫.
শৃংখলা শিক্ষাঃ হাজ্জ পালনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম-শৃংখলার শিক্ষা পাওয়া যায়।
নির্দিষ্ট সময় ঘুম থেকে উঠা, নির্দিষ্ট সময় সালাত আদায় করা, নির্দিষ্ট সময় আরাফার ময়দান,মুযদালিফায় অবস্থান,শয়তানের উদ্দেশ্যে পাথর নিক্ষেপ করা ইত্যাদি যথা সময়ে যথাযথভাবে পালন করার
শিক্ষা পাওয়া যায়।
৬.
আন্তর্জাতিক সম্মেলনঃ এই সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের নেতৃবর্গ একত্রিত হয় এবং তাদের
মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনা চলতে থাকে যা মুসলিম দেশসমূহের ভিতর সুন্দর
সম্পর্ক গড়ে তুলতে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
৭.
ত্যাগের শিক্ষাঃ জাহহের মাধ্যমে ব্যক্তি ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়।পশু কুরবানী
করে।আর সে হাজীদের সুবিধার জন্য ত্যাগ করে।ইসলামের মৌলিক শীক্ষা অনুযায়ী সর্বদা
অন্যকে অগ্রাধিকার দেয়। এভাবে করে ক্ষুদ্র ত্যাগের শিক্ষার মাধ্যমে বৃহত্তর
প্রশিক্ষণ পাওয়া যায়।
উপসংহার
এছাড়াও হাজ্জের রাষ্ট্রীয়,অর্থনৈতিক,নৈতিক,আন্তর্জাতিক এবং বাণিজ্যি গুরুত্ব অপরিসীম।তাই আমরা সকলে হাজ্জ যথাযথভাবে পালন করার জন্য চেষ্টা করব এবং আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করার জন্য চেষ্টা করব।
সূত্র:
No comments:
Post a Comment