যাকাত বণ্টনের খাত ৮ টি
মহান আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআন মাজীদে যাকাত প্রদানের ৮টি খাত উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ
لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْعَامِلِيْنَ عَلَيْهَا
وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَفِيْ الرِّقَابِ وَالْغَارِمِيْنَ وَفِيْ
سَبِيْلِ اللهِ وَابْنِ السَّبِيْلِ فَرِيْضَةً مِّنَ اللهِ وَاللهُ
عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ-
‘নিশ্চয়ই ছাদাক্বাহ্ (যাকাত) হচ্ছে ফকীর ও
মিসকীনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট
করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে,
ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর
পক্ষ হতে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়’ (তওবা ৯/৬০)।
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা যাকাত প্রদানের ৮টি খাত উল্লেখ করেছেন। নিম্নে প্রত্যেকটি খাত আলাদাভাবে আলোচনা করা হল-
(১) ফকীর : নিঃসম্বল
ভিক্ষাপ্রার্থী। যাকে আল্লাহ তা‘আলা যাকাতের ৮টি খাতের প্রথমেই উল্লেখ
করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রতিনিয়ত দারিদ্র্য থেকে আল্লাহর নিকটে আশ্রয়
প্রার্থনা করতেন। তিনি বলতেন, اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ ‘ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট কুফরী ও দারিদ্র্য থেকে আশ্রয় চাচ্ছি’।[1] অতএব ফকীর যাকাতের মাল পাওয়ার হকদার। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنْ تُبْدُوْا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ وَإِنْ تُخْفُوْهَا وَتُؤْتُوْهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ-
‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে ছাদাক্বাহ প্রদান কর তবে উহা ভাল; আর যদি তা গোপনে কর এবং দরিদ্রদেরকে দাও তা তোমাদের জন্য আরো ভাল’ (বাক্বারাহ ২/২৭১)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
أَنَّ اللهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً فِيْ أَمْوَالِهِمْ، تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ-
‘আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর তাদের সম্পদে
ছাদাক্বাহ্ (যাকাত) ফরয করেছেন। যেটা তাদের ধনীদের নিকট থেকে গৃহীত হবে আর
তাদের দরিদ্রের মাঝে বণ্টন হবে’।[2]
(২) মিসকীন : যাকাত
প্রদানের ৮টি খাতের মধ্যে দ্বিতীয় খাত হিসাবে আল্লাহ তা‘আলা মিসকীনকে
উল্লেখ করেছেন। আর মিসকীন হল ঐ ব্যক্তি যে নিজের প্রয়োজন মিটাতেও পারে না,
মুখ ফুটে চাইতেও পারে না। বাহ্যিকভাবে তাকে সচ্ছল বলেই মনে হয়। হাদীছে
এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رضى
الله عنه أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَيْسَ
الْمِسْكِيْنُ الَّذِى يَطُوْفُ عَلَى النَّاسِ تَرُدُّهُ اللُّقْمَةُ
وَاللُّقْمَتَانِ وَالتَّمْرَةُ وَالتَّمْرَتَانِ، وَلَكِنِ الْمِسْكِيْنُ
الَّذِى لاَ يَجِدُ غِنًى يُغْنِيْهِ، وَلاَ يُفْطَنُ بِهِ فَيُتَصَدَّقُ
عَلَيْهِ، وَلاَ يَقُوْمُ فَيَسْأَلُ النَّاسَ-
আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, এমন ব্যক্তি মিসকীন নয় যে এক মুঠো-দু’মুঠো
খাবারের জন্য বা দুই একটি খেজুরের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায়
এবং তাকে তা দেওয়া হলে ফিরে আসে। বরং প্রকৃত মিসকীন হল সেই ব্যক্তি যার
প্রয়োজন পূরণ করার মত যথেষ্ট সঙ্গতী নেই। অথচ তাকে চেনাও যায় না যাতে লোকে
তাকে ছাদাক্বাহ্ করতে পারে এবং সে নিজেও মানুষের নিকট কিছু চায় না।[3]
(৩) যাকাত আদায়কারী ও হেফাযতকারী
: আল্লাহ তা‘আলা যাকাত প্রদানের তৃতীয় খাত হিসাবে ঐ ব্যক্তিকে উল্লেখ
করেছেন, যে ব্যক্তি যাকাত আদায়, হেফাযত ও বণ্টনের কাজে নিয়োজিত। অতএব উক্ত
ব্যক্তি সম্পদশালী হলেও সে চাইলে যাকাতের অংশ গ্রহণ করতে পারবে।[4]
হাদীছে এসেছে,
عَنِ ابْنِ السَّاعِدِىِّ
الْمَالِكِىِّ أَنَّهُ قَالَ اسْتَعْمَلَنِيْ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رضى
الله عنه عَلَى الصَّدَقَةِ فَلَمَّا فَرَغْتُ مِنْهَا وَأَدَّيْتُهَا
إِلَيْهِ أَمَرَ لِيْ بِعُمَالَةٍ فَقُلْتُ إِنَّمَا عَمِلْتُ لِلَّهِ
وَأَجْرِى عَلَى اللهِ، فَقَالَ خُذْ مَا أُعْطِيْتَ فَإِنِّيْ عَمِلْتُ
عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَعَمَّلَنِيْ فَقُلْتُ
مِثْلَ قَوْلِكَ فَقَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا
أُعْطِيْتَ شَيْئًا مِنْ غَيْرِ أَنْ تَسْأَلَ فَكُلْ وَتَصَدَّقْ-
ইবনু সায়ে‘দী আল-মালেকী (রাঃ) হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আমাকে যাকাত আদায়কারী হিসাবে নিযুক্ত
করলেন। যখন আমি কাজ শেষ করলাম এবং তাঁর কাছে পৌঁছিয়ে দিলাম তখন তিনি
নির্দেশ দিলেন আমাকে পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য। আমি বললাম, আল্লাহর সন্তুষ্টি
অর্জনের জন্যই আমি ইহা করেছি। সুতরাং আমি আল্লাহর নিকট থেকেই এর প্রতিদান
নেব। তিনি বললেন, আমি যা দিচ্ছি তা নিয়ে নাও। কেননা আমিও রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর সময় যাকাত আদায়কারীর কাজ করেছি। তখন তিনিও আমাকে পারিশ্রমিক
প্রদানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখন আমিও তোমার মত এরূপ কথা বলেছিলাম। রাসূল
(ছাঃ) আমাকে বলেছিলেন, যখন তুমি না চাওয়া সত্ত্বেও তোমাকে কিছু দেওয়া হয়,
তখন তুমি তা গ্রহণ কর। তুমি তা নিজে খাও অথবা ছাদাক্বাহ্ কর।[5]
অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ تَحِلُّ الصَّدَقَةُ
لِغَنِىٍّ إِلاَّ لِخَمْسَةٍ لِغَازٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ أَوْ لِعَامِلٍ
عَلَيْهَا أَوْ لِغَارِمٍ أَوْ لِرَجُلٍ اشْتَرَاهَا بِمَالِهِ أَوْ
لِرَجُلٍ كَانَ لَهُ جَارٌ مِسْكِيْنٌ فَتُصُدِّقَ عَلَى الْمِسْكِيْنِ
فَأَهْدَاهَا الْمِسْكِيْنُ لِلْغَنِىِّ
আতা ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, সম্পদশালী ব্যক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ হালাল নয়।
তবে পাঁচ শ্রেণীর ধনীর জন্য তা জায়েয। (১) আল্লাহর পথে জিহাদরত ব্যক্তি।
(২) যাকাত আদায়ে নিয়োজিত কর্মচারী। (৩) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি। (৪) যে ব্যক্তি
যাকাতের মাল নিজ মাল দ্বারা ক্রয় করেছে এবং (৫) মিসকীন প্রতিবেশী তার
প্রাপ্ত যাকাত থেকে ধনী ব্যক্তিকে উপঢৌকন দিয়েছে।[6]
(৪) ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য কোন অমুসলিমকে যাকাত প্রদান করা :
ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে অথবা কোন অনিষ্ট বা কাফেরের ক্ষতি থেকে
রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে কোন অমুসলিমকে যাকাতের অর্থ প্রদান করা যায়।[7]
হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ
الْخُدْرِىِّ قَالَ بَعَثَ عَلِىٌّ رضى الله عنه وَهُوَ بِالْيَمَنِ
بِذَهَبَةٍ فِيْ تُرْبَتِهَا إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم
فَقَسَمَهَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَ أَرْبَعَةِ نَفَرٍ
الأَقْرَعُ بْنُ حَابِسٍ الْحَنْظَلِىُّ وَعُيَيْنَةُ بْنُ بَدْرٍ
الْفَزَارِىُّ وَعَلْقَمَةُ بْنُ عُلاَثَةَ الْعَامِرِىُّ ثُمَّ أَحَدُ
بَنِيْ كِلاَبٍ وَزَيْدُ الْخَيْرِ الطَّائِىُّ ثُمَّ أَحَدُ بَنِيْ
نَبْهَانَ قَالَ فَغَضِبَتْ قُرَيْشٌ فَقَالُوْا أَتُعْطِى صَنَادِيْدَ
نَجْدٍ وَتَدَعُنَا فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنِّيْ
إِنَّمَا فَعَلْتُ ذَلِكَ لأَتَأَلَّفَهُمْ فَجَاءَ رَجُلٌ كَثُّ
اللِّحْيَةِ مُشْرِفُ الْوَجْنَتَيْنِ غَائِرُ الْعَيْنَيْنِ نَاتِئُ
الْجَبِيْنِ مَحْلُوْقُ الرَّأْسِ فَقَالَ اتَّقِ اللهَ يَا مُحَمَّدُ
قَالَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَمَنْ يُطِعِ اللهَ إِنْ
عَصَيْتُهُ أَيَأْمَنُنِيْ عَلَى أَهْلِ الأَرْضِ وَلاَ تَأْمَنُوْنِيْ
قَالَ ثُمَّ أَدْبَرَ الرَّجُلُ فَاسْتَأْذَنَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ فِيْ
قَتْلِهِ يُرَوْنَ أَنَّهُ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيْدِ فَقَالَ رَسُوْلُ
اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ مِنْ ضِئْضِئِ هَذَا قَوْمًا يَقْرَءُوْنَ
الْقُرْآنَ لاَ يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ يَقْتُلُوْنَ أَهْلَ الإِسْلاَمِ
وَيَدَعُوْنَ أَهْلَ الأَوْثَانِ يَمْرُقُوْنَ مِنَ الإِسْلاَمِ كَمَا
يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ لَئِنْ أَدْرَكْتُهُمْ
لأَقْتُلَنَّهُمْ قَتْلَ عَادٍ-
আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, আলী (রাঃ) নবী (ছাঃ)-এর নিকট কিছু স্বর্ণের টুকরো পাঠালেন। তিনি তা
চার ব্যক্তির মাঝে বণ্টন করে দিলেন। (১) আল-আকরা ইবনু হানযালী যিনি
মাজায়েশী গোত্রের লোক ছিলেন। (২) উআইনা ইবনু বাদার ফাযারী। (৩) যায়েদ
ত্বায়ী, যিনি পরে বনী নাবহান গোত্রের ছিলেন। (৪) আলকামাহ ইবনু উলাছাহ
আমেরী, যিনি বনী কিলাব গোত্রের ছিলেন। এতে কুরাইশ ও আনসারগণ অসন্তুষ্ট হলেন
এবং বলতে লাগলেন, নবী (ছাঃ) নজদবাসী নেতৃবৃন্দকে দিচ্ছেন আর আমাদেরকে
দিচ্ছেন না। তখন নবী (ছাঃ) বললেন, আমি তো তাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য এমন
মনরঞ্জন করছি। তখন এক ব্যক্তি সামনে এগিয়ে আসল, যার চোখ দু’টি কোটরাগত,
গন্ডদ্বয় ঝুলে পড়া, কপাল উঁচু, ঘন দাড়ি এবং মাথা মোড়ানো ছিল। সে বলল, হে
মুহাম্মাদ! আল্লাহকে ভয় করুন। তখন তিনি বললেন, আমিই যদি নাফরমানী করি তাহলে
আল্লাহর আনুগত্য করবে কে? আল্লাহ আমাকে পৃথিবীবাসীর উপর আমানতদার
বানিয়েছেন, আর তোমরা আমাকে আমানতদার মনে করছ না। তখন এক ব্যক্তি তাঁর নিকট
তাকে হত্যা করার অনুমতি চাইল। (আবু সা‘ঈদ (রাঃ) বলেন, আমি তাকে খালিদ ইবনু
ওয়ালিদ বলে ধারণা করছি। কিন্তু নবী (ছাঃ) তাকে নিষেধ করলেন। অতঃপর যখন
অভিযোগকারী লোকটি ফিরে গেল, তখন নবী (ছাঃ) বললেন, এ ব্যক্তির বংশ হতে বা এ
ব্যক্তির পরে এমন কিছু সংখ্যক লোক হবে তারা কুরআন পড়বে, কিন্তু তা তাদের
কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। দ্বীন হতে তারা এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমনি ধনুক
হতে তীর বেরিয়ে যায়। তারা ইসলামের অনুসারীদেরকে হত্যা করবে আর মুর্তি
পূজারীদেরকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকবে। আমি যদি তাদেরকে পেতাম তাহলে
তাদেরকে আদ জাতির মত অবশ্যই হত্যা করতাম।[8]
(৫) দাস মুক্তির জন্য :
যারা লিখিত কোন চুক্তির বিনিময়ে দাসে পরিণত হয়েছে। তাদেরকে মালিকের নিকট
থেকে ক্রয়ের মাধ্যমে মুক্ত করার লক্ষ্যে যাকাতের অর্থ প্রদান করা যায়।
অনুরূপভাবে বর্তমানে কোন মুসলিম ব্যক্তি অমুসলিমদের হাতে বন্দি হলে সে
ব্যক্তিও এই খাতের অন্তর্ভুক্ত হবে।[9]
হাদীছে এসেছে,
عَنِ الْبَرَاءِ قَالَ جَاءَ
رَجُلٌ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ دُلَّنِيْ عَلَى
عَمَلٍ يُقَرِّبُنِيْ مِنَ الْجَنَّةِ وَيُبَاعِدُنِيْ مِنَ النَّارِ قَالَ
لَئِنْ كُنْتَ أَقْصَرْتَ الْخُطْبَةَ لَقَدْ أَعْرَضْتَ الْمَسْأَلَةَ
أَعْتِقِ النَّسَمَةَ وَفُكَّ الرَّقَبَةَ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ
أَوَلَيْسَا وَاحِدًا قَالَ لاَ عِتْقُ النَّسَمَةِ أَنْ تُفْرِدَ
بِعِتْقِهَا وَفَكُّ الرَّقَبَةِ أَنْ تُعِيْنَ فِيْ ثَمَنِهَا
وَالْمِنْحَةُ الْوَكُوْفُ وَالْفَىْءُ عَلَى ذِى الرَّحِمِ الظَّالِمِ
فَإِنْ لَمْ تُطِقْ ذَلِكَ فَكُفَّ لِسَانَكَ إِلاَّ مِنْ خَيْرٍ-
বারা ইবনু আযেব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, আমাকে এমন একটি
আমল বলে দিন যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী করবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে
রাখবে। রাসূল (ছাঃ) বললেন, প্রশ্ন তো তুমি অল্প কথায় বলে ফেললে; কিন্তু
তুমি অত্যন্ত ব্যাপক বিষয় জানতে চেয়েছ। তুমি একটি প্রাণী আযাদ করে দাও এবং
একটি দাস মুক্ত করে দাও। লোকটি বলল, এ উভয়টি কি একই কাজ নয়? তিনি বললেন, না
(উভয়টি এক নয়)। কেননা একটি প্রাণী আযাদ করার মানে হল, তুমি একাকী গোটা
প্রাণীকে মুক্ত করে দিবে। আর একটি দাস মুক্ত করার অর্থ হল, তার মুক্তির
জন্য কিছু মূল্য প্রাদানের মাধ্যমে সাহায্য করবে। (এদ্ভিন্ন জান্নাতে
প্রবেশকারী কাজের মধ্যে অন্যতম হল) প্রচুর দুধ প্রদানকারী জানোয়ার দান করা
এবং এমন নিকটতম আত্নীয়ের প্রতি অনুগ্রহ করা, যে তোমার উপর অত্যাচারী। যদি
তুমি এ সমস্ত কাজ করতে সক্ষম না হও, ক্ষুদার্থকে খাদ্য দান কর এবং
পিপাসিতকে পানি পান করাও। সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ কর। আর যদি
তোমার দ্বারা এ কাজ করাও সম্ভব না হয়, তবে কল্যাণকর কথা ব্যতীত অন্য কথা
থেকে তোমার জিহবাকে সংযত রাখ।[10]
উল্লিখিত হাদীছে ইসলাম দাসমুক্তিকে
জান্নাত লাভের বিশেষ মাধ্যম হিসাবে উল্লেখ করেছে। আর দাসমুক্তির জন্য
যেহেতু প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়, সেহেতু আল্লাহ তা‘আলা ইসলামী অর্থনীতির
প্রধান উৎস যাকাত বণ্টনের খাত সমূহের মধ্যে দাসমুক্তিকে উল্লেখ করেছেন।
(৬) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি : ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে তার ঋণ থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে যাকাত প্রদান করা যাবে। হাদীছে এসেছে,
عَنْ قَبِيصَةَ بْنِ مُخَارِقٍ
الْهِلاَلِىِّ قَالَ تَحَمَّلْتُ حَمَالَةً فَأَتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم أَسْأَلُهُ فِيْهَا فَقَالَ أَقِمْ حَتَّى تَأْتِيَنَا
الصَّدَقَةُ فَنَأْمُرَ لَكَ بِهَا قَالَ ثُمَّ قَالَ يَا قَبِيْصَةُ إِنَّ
الْمَسْأَلَةَ لاَ تَحِلُّ إِلاَّ لأَحَدِ ثَلاَثَةٍ رَجُلٍ تَحَمَّلَ
حَمَالَةً فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ حَتَّى يُصِيْبَهَا ثُمَّ يُمْسِكُ
وَرَجُلٍ أَصَابَتْهُ جَائِحَةٌ اجْتَاحَتْ مَالَهُ فَحَلَّتْ لَهُ
الْمَسْأَلَةُ حَتَّى يُصِيْبَ قِوَامًا مِنْ عَيْشٍ أَوْ قَالَ سِدَادًا
مِنْ عَيْشٍ وَرَجُلٍ أَصَابَتْهُ فَاقَةٌ حَتَّى يَقُوْمَ ثَلاَثَةٌ مِنْ
ذَوِى الْحِجَا مِنْ قَوْمِهِ لَقَدْ أَصَابَتْ فُلاَنًا فَاقَةٌ فَحَلَّتْ
لَهُ الْمَسْأَلَةُ حَتَّى يُصِيْبَ قِوَامًا مِنْ عَيْشٍ أَوْ قَالَ
سِدَادًا مِنْ عَيْشٍ فَمَا سِوَاهُنَّ مِنَ الْمَسْأَلَةِ يَا قَبِيْصَةُ
سُحْتًا يَأْكُلُهَا صَاحِبُهَا سُحْتًا-
কাবীছা ইবনু মাখারেক (রাঃ) হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, একবার আমি কিছু ঋণের যিম্মাদার হয়েছিলাম। অতএব এ ব্যাপারে কিছু
চাওয়ার জন্য আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট গেলাম। তিনি আমাকে বললেন,
(মদ্বীনায়) আবস্থান কর যতক্ষণ পর্যন্ত আমার নিকট যাকাতের মাল না আসে। তখন
আমি তা হতে তোমাকে কিছু দেওয়ার নির্দেশ দান করব। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন,
মনে রেখ হে কাবীছা! তিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো জন্য (যাকাতের মাল হতে)
সাহায্য চাওয়া হালাল নয়। (১) যে ব্যক্তি কোন ঋণের যিম্মাদার হয়েছে তার জন্য
(যাকাতের মাল হতে) সাহায্য চাওয়া হালাল যতক্ষণ না সে তা পরিশোধ করে। তারপর
তা বন্ধ করে দিবে। (২) যে ব্যক্তি কোন বালা মুছীবতে আক্রান্ত হয়েছে যাতে
তার সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেছে তার জন্য (যাকাতের মাল হতে) সাহায্য চাওয়া হালাল
যতক্ষণ না তার প্রয়োজন পূর্ণ করার মত অথবা তিনি বলেছেন, বেঁচে থাকার মত কোন
কিছু লাভ করে এবং (৩) যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত হয়েছে এমনকি তার প্রতিবেশীদের
মধ্যে জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন তিন জন ব্যক্তি তার দারিদ্র্যের ব্যাপারে
সাক্ষী প্রদান করেছে তার জন্য (যাকাতের মাল থেকে) সাহায্য চাওয়া হালাল
যতক্ষণ না সে তার জীবিকা নির্বাহের মত অথবা তিনি বলেছেন, বেঁচে থাকার মত
কিছু লাভ করে। হে কাবীছা! এরা ব্যতীত যারা (যাকাতের মাল থেকে) চায় তারা
হারাম খাচ্ছে।[11]
(৭) আল্লাহর রাস্তায় :
আল্লাহর দ্বীনকে সমুন্নত করার লক্ষ্যে যে কোন ধরনের প্রচেষ্টা ‘ফী
সাবীলিল্লাহ’ বা আল্লাহর রাস্তার অন্তর্ভুক্ত। জিহাদ, দ্বীনী ইলম অর্জনের
যাবতীয় পথ এবং দ্বীন প্রচারের যাবতীয় মাধ্যম এ খাতের অন্তর্ভুক্ত। হাদীছে
এসেছে,
আতা ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, সম্পদশালী ব্যক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ হালাল নয়।
তবে পাঁচ শ্রেণীর ধনীর জন্য তা জায়েয। (১) আল্লাহর পথে জিহাদরত ব্যক্তি।
(২) যাকাত আদায়ে নিয়োজিত কর্মচারী। (৩) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি। (৪) যে ব্যক্তি
যাকাতের মাল নিজ মাল দ্বারা ক্রয় করেছে এবং (৫) মিসকীন প্রতিবেশী তার
প্রাপ্ত যাকাত থেকে ধনী ব্যক্তিকে উপঢৌকন দিয়েছে।[12]
(৮) মুসাফির : সফরে গিয়ে
যার পাথেয় শেষ হয়ে গেছে সে ব্যক্তিকে যাকাতের অর্থ প্রদান করে বাড়ী
পর্যন্ত পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে যাকাতের অর্থ দান করা যাবে। এক্ষেত্রে উক্ত
মুসাফির সম্পদশালী হলেও তাকে যাকাত প্রদান করা যাবে।
No comments:
Post a Comment