1প্রধান পুরোহিত তখন স্তিফানকে জিজ্ঞাসা করলেন, এ সব কথা কি সত্য?
2স্তিফান বললেন, হে আমার ভ্রাতা ও পিতৃস্থানীয় সকলে, আমার কথা শুনু। আমাদের পিতা অব্রাহাম হারাণে এসে বসতি স্থাপন করার আগে যখন মেসোপটেমিয়ায় বাস করতেন তখন মহিমময় ঈশ্বর তাঁকে দর্শন দিয়ে 3বলেছিলেন, ‘তুমি তোমার দেশ ও আত্মীয় স্বজনদের পরিত্যাগ করে এস, যে দেশ আমি তোমাকে দেখাব, সেই দেশে চল।’ 4তিনি তখন কলদীয়দের দেশ ছেড়ে চলে গেলেন হারাণে এবং সেখানে বসবাস করতে লাগলেন। তাঁর পিতার মৃত্যুর পর ঈশ্বর তাঁকে এই দেশে এনে বসতি করালেন। 5তবে এখানকার কোন কিছুর উপরে তিনি তাঁকে কোন সত্ত্ব দেননি, এমনকি একটি পা রাখার মত জমিও তাঁকে তিনি দেননি। কিন্তু পরবর্তীকালে তাঁর বংশধরদের তিনি সেই দেশের অধিকার দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যদিও সেই সময় অব্রাহাম ছিলেন নিঃসন্তান। 6ঈশ্বর তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর বংশধরেরা অন্যদেশে প্রবাসীর জীবন যাপন করবে এবং চারশো বছর ধরে উৎপীড়িত ও দাসত্ব-শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকবে। 7ঈশ্বর বলেছিলেন, ‘কিন্তু তারা যে জাতির দাসত্ব করবে আমি সেই জাতির দণ্ডবিধান করব। তারপর তারা সেখান থেকে মুক্তিলাভ করে এই দেশে এসে আমার সেবা করবে।’ 8তিনি অব্রাহামের সঙ্গে তাঁর সম্বন্ধের স্মারক হিসাবে সুন্নত সংস্কারের বিধান দিলেন। অব্রাহামের পুত্র ইস্হাকের জন্মের পর অষ্টম দিনে, বিধান অনুযায়ী তাঁর সুন্নত করা হল। ইস্হাকের পুত্র হলেন যাকোব । ইনিই ইসরায়েলীদের বারো জন কুলপতির পিতা।
9এই কুলপতিরা ঈর্ষাবশতঃ যোষেফকে বিক্রী করে পাঠিয়ে দিলেন মিশর দেশে। কিন্তু ঈশ্বর তাঁর সঙ্গে ছিলেন, 10তাই তিনি তাঁকে সমস্ত পিবর্যয় থেকে উদ্ধার করেছিলে এবং তাঁকে মেধা ও প্রজ্ঞা দান করে মিশররাজ ফারাও-এর অড়ুগ্রহভাজন করেছিলেন। মিশররাজ তাঁকে মিশরের সর্বোচ্চ শাসক পদে নিযুক্ত করলেন। এমনকি সমগ্র রাজপরিবারের দায়ইত্বভার তাঁর হাতে অর্পণ করলেন। 11একসময় সমগ্র মিশর ও কনান দেশে দেখা দিল দুর্ভিক্ষ। নেমে এল মহা বিপর্যয়। আমাদের পূর্বপুরুষেরা কোথাও পেলেন না খাদ্যের সন্ধান। 12কিন্তু যাকোব শুনতে পেলেন যে মিশরে খাদ্যশস্য পাওয়া যাচ্ছে। তখন তিন আমাদের পিতৃপুরুষদের পাঠিয়ে দিলেন সেখানে। মিশরের এই-ই ছিল তাঁদের প্রথম যাত্রা । 13তাঁরা যখন দ্বিতীয়বার সেখানে গেলেন তখন তাঁরা তাঁদের ভাই যোষেফকে চিনতে পারলেন এবং তাঁদের সঙ্গে আত্মীয়সম্বন্ধের কথা ফারাও এর কাছে প্রকাশিত হল। 14যোষেফ তখন তাঁর পিতা যাকোব ও আত্মীয়স্বজন মিলে সবশুদ্ধ পঁচাত্তর জনকে নিজের কাছে নিয়ে এলেন। 15যাকোব গেলেন মিশর দেশে। তিনি ও আমাদের পূর্বপুরুষেরা সেখানেই বাকী জীবনটা কাটিয়ে দিলেন।16পরবর্তীকালে তাঁদের দেহাবশেষ শিখিমে এনে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। অব্রাহাম এই স্থানটি হমোর-এর পুত্রদের কাছ থেকে কিছু অর্থের বিনিময়ে কিনেছিলেন।
17অব্রাহামের কাছে ঈশ্বরের অঙ্গীকার পূরণের সময় যত এগিয়ে আসতে লাগল, মিশরদেশে ইসরায়েলীদের জনসংখ্যা তত বৃদ্ধি পেতে থাকল। 18অবশেষে মিশরে এমন একজন রাজার অভ্যুত্থান হল, যিনি যোষেফ সম্বন্ধে কিছুই জানতেন না। 19আমাদের স্বজাতির সঙ্গে তিনি ধূর্তের মত ব্যবহার করতে লাগলেন। তিনি নির্দয়ভাবে আমাদের পিতৃপুরুষদের বাধ্য করলেন তাঁদের শিশু সন্তানদের বাইরে ফেলে দিতে, যাতে তাদের মৃত্যু হয়। 20এই সময় জন্মগ্রহণ করলেন মোশি। পরম সুন্দর সেই শিশু ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করলেন। তিন মাস তিনি তাঁর পিতৃগৃহে প্রতিপালিত হলেন। 21কিন্তু যখন তাঁকে বাইরে ফেলে দেওয়া হল তখন ফারাও-দুহিতা তাঁকে দত্তকরূপে গ্রহণ করলেন এবং নিজের ছেলের মতই পালন করতে লাগলেন। 22মিশরী সভ্যতার সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানেই মোশি শিক্ষিত হয়ে উঠলেন। তেজস্বী বক্তা ও কর্মদক্ষ পুরুষ হয়ে উঠলেন তিনি।
23প্রায় চল্লিশ বছর বয়সে, একসময় তাঁরা স্বজাতি ইসরায়েলীদের অবস্থা খোঁজ করে দেখার ইচ্ছা হল। 24সেখানে একজনের উপর একটি মিশরী অন্যায় করছে দেখে উৎপীড়িত ব্যক্তিটিকে রক্ষা করার জন্য তার পক্ষ নিয়ে তিনি সেই মিশরী লোকটিকে হত্যা করলেন।25তিনি ভেবেছিলেন যে তাঁর স্বজাতিরা এ দেখে নিশ্চয়ই এ কথা বুঝতে পেরেছে যে ঈশ্বর এভাবেই তাঁর হাত দিয়ে তাদের মুক্তি দেবেন। কিন্তু তারা বুঝল না। 26তার পরদিন তাদের দুজন যখন নিজেরা মারামারি করছিল, তখন তিনি তাদের সামনে গিয়ে উপস্তিত হলেন এবং তাদের মধ্যে মিটমাট করে দিতে চাইলেন। বললেন, ভাইসব, তোমরা তো ভাই-ভাই। কেন তোমরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করছ? 27যে লোকটি তার প্রতিবেশীর উপর আগে অন্যায় করেছিল, সে এসে ধাক্কা দিয়ে তাঁকে সরিয়ে দিল। বলল, কে তোমাকে আমাদের বিচারক ও শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছে? 28কাল যেমন মিশরী লোকটিকে হত্যা করেছ, আজ আবার তেমনি আমাকেও হত্যা করতে চাও নাকি? 29এই কথা শুনে মোশি পালিয়ে গেলেন এবং মিদিয়ন দেশে প্রবাস জীবন বরম করলেন। এইখানেই তিনি দুটি পুত্রের জনক হয়েছিলেন।
30এরপর চল্লিশ বছর কেটে গেল। একদিন সিনাই পর্বতের কাছে প্রান্তরের মধ্যে জ্বলন্ত একটি ঝোপের অগ্নিশিখায় এক স্বর্গদূত মোশির সামনে আবির্ভূত হলেন। 31মোশি এই দৃশ্য দেখে খুব আশ্চর্য হয়ে গেলন এবং কি ব্যাপার দেখবার জন্য কাছে যেতেই প্রভুর কথা শুনতে পেলেনঃ 32‘আমিই তোমার পিতৃকুলের ঈশ্বর, অব্রাহাম, ইস্হাক ও যাকোবের আরাধ্য ঈশ্বর।’ মোশি ভয়ে কাঁপতে লাগলেন এবং সেদিকে আর তাকাতে সাহস করলেন না। 33প্রভু তাঁকে বললেন, তোমার পা থেকে জুতো খুলে ফেল, কারণ যেখাএন তুমি দাঁড়িয়ে আছে, সেটি অতি পবিত্র স্থান। 34মিশরদেশে আমার প্রজাদের দুর্দশা আমি দেখেছি। শুনেছি তাদের আর্তনাদ। তাই আমি ওদের উদ্ধার করতে এসেছি। প্রস্তুত হও, আমি তোমাকে মিশর দেশে পাঠাব।
35যাঁকে তারা একদিন প্রত্যাখ্যান করে বলেছিল, ‘কে তোমাকে আমাদের বিচারক ও শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছে?’ সেই মোশিকেই ঝোপের মধ্যে আবির্ভূত স্বর্গদূতের মাধ্যমে ঈশ্বর একাধারে শাসনকর্তা ও উদ্ধারকর্তারূপে প্রেরণ করেছিলেন। 36তিনি মিশর দেশে, লোহিত সাগরে ও জনহীন প্রানতের চল্লিশ বৎসর ধরে নানা অলৌকিক কীর্তি সম্পাদন করে সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে আনলেন। 37এই মোশিই ইসরায়েলীদের বলেছিলেন, ঈশ্বর আমাকে যেমন উৎপন্ন করেছেন, তেমনি তোমাদের ভ্রাতৃগণের মধ্যে থেকে এক নবীকে তিনি প্রেরণ করেবন। 38ইনিই সেই ব্যক্তি, যিনি নির্জন প্রান্তরে জনমণ্ডলীর সঙ্গে ছিলেন, সিনাই পর্বতে স্বর্গদূত যাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন, যাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন আমাদের পিতৃপুরুষেরা। ঈশ্বরের জীবনময় বাণী তিনি লাভ করেছিলেন, যা তিনি আমাদের জানিয়ে গিয়েছেন।
39আমাদের পিতৃপুরুষেরা কিন্তু তাঁর নেতৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকার করে তাঁকে অগ্রাহ্য করেছিল। তারা মিশরে ফিরে যেতে চাইল।40হারোণকে তারা বলল, মিশর দেশ থেকে মোশি আমাদের উদ্ধার করে এনেছিলেন, কিন্তু এখন তাঁর কি হয়েছে, আমরা জানি না। তাই আমাদের নেতৃত্ব দেবার জন্য দেববিগ্রহ নির্মাণ করে দাও। 41তখন তারা একটা গোবৎসের মূর্তি নির্মাণ করে তার কাছে বলি উৎসর্গ করল এবং নিজেদের হাতে গড়া সেই মূর্তির সম্মানার্থে উৎসবে মত্ত হল। 42ফলে ঈশ্বর তাদের প্রতি বিমুখ হলেন এবং নিজেদের ইচ্ছামত নক্ষত্ররাজির পূজা করার জন্য তাদের ছেড়ে দিলেন। নবীদের গ্রন্থে এ বিষয়ে লেখা আছেঃ'হে ইসরায়েলকুল, চল্লিশ বর্ষব্যাপী প্রান্তরবাসেউৎসর্গ করেছিলে কি আমার কাছেকোন বলি কি নৈবেদ্য?
43নির্মাণ করেছিল তোমরাযে মূর্তিগুলি পূজার উদ্দেশ্যেসেই মোলক দেবতার প্রতীক তারকাবহন করেছ তোমরা।তাই তোমাদের আমি নির্বাসন দেবব্যাবিলনের সীমার ওপারে।’
44ঈশ্বরের উপস্থিতির সাক্ষ্যরূপে প্রান্তরে আমাদের পিতৃপুরুষদের একটি তাম্বু ছিল। ঈশ্বরের নির্দেশে এবং তাঁরই প্রদত্ত নক্সা অনুসারে মোশি সেটি নির্মাণ করেছিলেন। 45পরবর্তীকালে যিহোশূয়ের আমলে আমাদের পিতৃপুরুষেরা যখন ঈশ্বর কর্তৃক বিতাড়িত জাতিকে উচ্ছেদ করে তাদের দেশ অধিকার করলেন, তখনও তাঁরা সেই শিবিরটি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। দাউদের আমল পর্যন্ত সেটি সেখানেই ছিল। 46এই দাউদ ঈশ্বরের অনুগ্রহলাভ করেছিলেন এবং যাকোবের* আরাধ্য ঈশ্বরের জন্য এক মন্দির নির্মাণ করার অনুমতি প্রার্থনা করেছিলেন। 47কিন্তু ঈশ্বরের জন্য এই মন্দির নির্মাণ করলেন শলোমন।
48পরাৎপর ঈশ্বর কিন্তু মানুষের হাতে গড়া কোন মন্দিরে বাস করেন না।
49নবী যেমন বলেছেনঃ'স্বর্গ আমার সিংহাসনমর্ত্য আমার পাদপীঠ,প্রভু বলেন, কেমন আবাস নির্মাণ করবেতোমরা আমার জ্য,অথবা কোথায় হবে আমার বিশ্রামের স্থান?
50আমারই হাতে গড়া নয় কি এগুলি?’
51হে উদ্ধত জনসাধারণ, হৃদয় তোমাদের অইহুদীদের মত অপবিত্র, শ্রবণ তোমাদের ঈশ্বরের বাণীর প্রতি বিমুখ। চিরকালই তোমরা পবিত্র আত্মার বিরোধিতা করছ। যেমন ছিল তোমাদের পূর্বপুরুষেরা তেমনিই হয়েছ তোমরাও। 52তোমাদের পূর্বপুরুষেরা কোন নবীকে না নির্যাতন করেছে? শাস্ত্রোক্ত ধর্মময় পুরুষেরর আগমন বার্তা যাঁরা ঘোষণা করেছিলেন, তাঁদের তোমরা হত্যা করেছ। এখন তাঁর সঙ্গেও বিশ্বাসঘাতকতা করে তাঁকে হত্যা করেছ। 53তোমরা যারা স্বর্গদূতের মাধ্যমে ঈশ্বরের বিধান লাভ করেছ, তা তোমরা পালন করনি।
প্রস্তরাঘাতে স্তিফানের মৃত্যু
54স্তিফানের এই ভাষণে তারা ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে উঠল এবং দাঁত ঘষতে লাগল। 55স্তিফান পবিত্র আত্মায় আবিষ্ট হয়ে একদৃষ্টে চেয়ে রইলেন স্বর্গের দিকে। দেখলেন সেখানে ঈশ্বরের মহিমা। ঈশ্বরের দক্ষিণ দিকে দাঁড়িয়ে আছেন যীশু। 56তিনি বলে উঠলেন, আকাশ উন্মুক্ত হয়ে গেছে, আমি দেখতে পাচ্ছি মানবপুত্র দাঁড়িয়ে আছেন ঈশ্বরের দক্ষিণ দিকে।
57একথা শুনে কানে আঙুল দিয়ে তারস্বরে তারা সকলে চীৎকার করে উঠল। তারা একসঙ্গে তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। 58তারপর তাঁকে টানতে টানতে নগরের বাইরে নিয়ে গিয়ে পাথর মেরে হত্যা করার উদ্যোগ করল। স্তিফানের ভাষণ যারা শুনছিল তারা সকলে নিজেদের পোষাক খুলে শৌল নামে এক যুবকের জিম্মায় রেখে পাথর মারতে শুরু করল। 59স্তিফানকে তারা যখন পাথর মারছিল তখন তিনি প্রার্থনা করে বললেন, প্রভু যীশু, আমার আত্মাকে গ্রহণ কর। 60তারপর হাঁটু পেতে চীৎকার করে নিবেদন করলেন, প্রভু, এদের এইপাপ তুমি গণ্য করো না। এই কথা বলে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন।
No comments:
Post a Comment