(আদিপুস্তক ১৬: ১-৪) (আদিপুস্তক ১৬: ১১) (১৬: ১৬) (আদি পুস্তক ১৭: ১৫-২৫) (আদি পুস্তক ২১: ৫)

(আদিপুস্তক ১৬: ১-৪) (আদিপুস্তক ১৬: ১১) (১৬: ১৬) 

ইশ্মায়েলের জন্ম
1অব্রামের স্ত্রী সারী ছিলেন নিঃসন্তান। হাগার নামে তাঁর একটি মিশরী দাসী ছিল। 2অব্রামকে বললেন, দেখ, প্রভু পরমেশ্বর আমাকে সন্তান ধারণ করতে দেন নি, তাই দয়া করে তুমি আমার এই দাসীকে গ্রহণ কর, হয়তো তার দ্বারাই আমি সন্তান লাভ করতে পারবো। অব্রাম সারীর কথায় সম্মত হলেন। 3কনান দেশে দশ বছর বাস করার পর অব্রামের স্ত্রী সারী তাঁর মিশরী দাসী হাগারের সঙ্গে তাঁর স্বামী অব্রামের বিবাহ দিলেন।
4অব্রামের সঙ্গে হাগারের বিবাহের পর সে গর্ভবতী হল। কিন্তু গর্ভধারণ করার পর সে তার কর্ত্রীকে অবজ্ঞা করতে লাগল। 5তখন সারী অব্রামকে বললেন, আমার প্রতি যে অন্যায় করা হয়েছে তার জন্য তুমিই দায়ী। আমি আমার দাসীকে তোমার অঙ্কশায়িনী হতে দিয়েছিলাম, কিন্ত গর্ভবতী হয়েছে বলে সে এখন আমাকে অবজ্ঞা করছে। প্রভু পরমেশ্বরই এখন তোমার ও আমার বিচার করুন। 6অব্রাম সারীকে বললেন, তোমার দাসী তোমারই অধীন, তোমার যা ভাল মনে হয় তার প্রতি তা-ই কর। সারী তখন হাগারকে এমন পীড়ন করতে লাগলেন যে সে তাঁর কাছ থেকে পালিয়ে গেল।
7প্রভু পরমেশ্বরের দূত প্রান্তরের মাঝে শূরের পথে জলের যে প্রস্রবণ আছে, তার কাছে হাগারকে দেখতে পেয়ে বললেন, 8ওগো সারীর দাসী হাগার, তুমি কোথা থেকে আসছ, আর যাবেই বা কোথায়? সে বলল, আমি আমার কর্ত্রী সারীর কাছ থেকে পালিয়ে এসেছি। 9প্রভু পরমেশ্বরের দূত তাকে বললেন, তুমি তোমার কর্ত্রীর কাছে ফিরে যাও আর তাঁর বশ্যতা স্বীকার কর। 10প্রভুর দূত তাকে বললেন, আমি তোমার বংশধরদের অতিশয় বর্ধিষ্ণু করব, তাদের সংখ্যা হবে অগণিত। 11দেখ,তুমি গর্ভবতী,একটি পুত্রের জননী হবে তুমি, তার নাম রেখ ইশ্মায়েল, কারণ প্রভু তোমার আর্তনাদ শুনেছেন।
12সে হবে বন্য গর্দভের মত দুর্দান্ত। সকলকে সে আক্রমণ করবে এবং সেও সকলের দ্বারা আক্রান্ত হবে। সে তার আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গেও শত্রুতা করবে। প্রভু পরমেশ্বর, যিনি তার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, হাগার তাঁর নাম রাখল, ‘এল-রোয়ী’, অর্থাৎ ঈশ্বর, যিনি আমাকে দর্শন দিয়েছেন। 13সে বলল, আমি কি সত্যিই ঈশ্বরকে দেখেছি? এবং তাঁকে দর্শন করার পরও জীবিত রয়েছি? এই জন্য সেই কূপের নাম হল, ‘বের-লাহয়রোয়ী’, অর্থাৎ সেই সদাজাগ্রত ঈশ্বরের কূপ, যিনি আমাকে দর্শন দিয়েছেন। 14কাদেশ ও বেরেদ-এর মাঝামাঝি স্থানে সেই কূপটি অবস্থিত।
15তারপর যথাসময়ে হাগারের একটি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করল, অব্রাম হাগারের গর্ভজাত সেই পুত্রের নাম রাখলেন ইশ্মায়েল।16অব্রামের ছিয়াশী বছর বয়সে হাগারের গর্ভে ইশ্মায়েলের জন্ম হল।

======================
(আদি পুস্তক ১৭: ১৫-২৫) 

সুন্নত সংস্কারের প্রবর্তন
1অব্রামের নিরানব্বই বছর বয়সে প্রভু পরমেশ্বর তাঁকে দর্শন দিয়ে বললেন, আমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, তুমি আমার প্রতি বিশ্বস্ত থেকে জীবন যাপন কর এবং পূর্ণতা লাভ কর। 2আমি তোমার সঙ্গে এক সন্ধির চুক্তিতে আবদ্ধ হব এবং তোমার বংশকে বহুগুণে বর্ধিত করব।
অব্রাম তখন উপুড় হয়ে প্রণিপাত করলেন। 3ঈশ্বর তাঁকে বললেন, 4দেখ, তোমার সঙ্গে আমি সন্ধির চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছি, সেই অনুযায়ী তুমি হবে বহুজাতির আদি পিতা। 5তোমার নাম আর অব্রাম (মহান পিতা) থাকবে না, তোমার নাম হবে অব্রাহাম। কারণ আমি তোমাকে বহু জাতির আদি পিতা করব। 6আমি তোমাকে প্রজাবন্ত করব, তোমা থেকে উৎপন্ন করব বহু জাতি। নৃপতিরা জন্মাবে তোমার বংশে। 7তোমার সঙ্গে এবং পুরুষানুক্রমে তোমার বংশধরদের সঙ্গে আমি যে সন্ধির চুক্তিতে আবদ্ধ হব, তা হবে চিরস্থায়ী। আমি তোমার ঈশ্বর এবং তোমার বংশধরদেরও ঈশ্বর হব। 8তুমি যে দেশে প্রবাস করছ, সেই সমগ্র কনান দেশের সত্ত্বাধিকার তোমাকে এবং তোমার বংশধরদের চিরকালের জন্য দান করব, আর আমিই হব তোমার ঈশ্বর।
9ঈশ্বর অব্রাহামকে আরও বললেন, তুমি আমার সঙ্গে স্থাপিত সন্ধি চুক্তি পালন করবে, তোমার উত্তরপুরুষেরা পুরুষানুক্রমে তা পালন করবে। 10তোমার সঙ্গে এবং তোমার উত্তরপুরুষদের সঙ্গে আমার সন্ধিচুক্তির শর্ত হল এই: তোমাদের মধ্যে যারা পুরুষ তাদের প্রত্যেকের লিঙ্গাগ্রচর্ম ছেদন করতে হবে। 11তোমরা নিজেদের লিঙ্গাগ্রচর্ম ছেদন করবে, তা-ই হবে তোমাদের সঙ্গে আমার স্থাপিত সন্ধি চুক্তির নিদর্শন।
12পুরুষানুক্রমে তোমরা প্রত্যেক পুরুষ সন্তানের বয়স আটদিন হলে তার লিঙ্গাগ্রচর্ম ছেদন করবে। তোমাদের বংশের নয় এমন বিজাতীয় কেউ যদি তোমাদের পরিবারে জন্মগ্রহণ করে বা কাউকে যদি অর্থমূল্যে ক্রয় করা হয় তাহলে তাদেরও লিঙ্গাগ্রচর্ম ছেদন করবে। 13তোমাদের পরিবারে জাত অথবা মূল্যদ্বারা ক্রীত উভয়েরই লিঙ্গাগ্রচর্ম অবশ্যই ছেদন করবে। তোমাদের দেহে আমার সঙ্গে সন্ধি চুক্তির এই চিহ্ন চিরস্থায়ী সম্বন্ধের চিহ্ন হয়ে থাকবে। 14লিঙ্গাগ্রচর্ম ছেদন করা হয়নি এমন কোন পুরুষ স্বজাতিচ্যুত হবে, কারণ সে আমার সন্ধিচুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে।
15ঈশ্বর অব্রাহামকে আরও বললেন, তুমি তোমার স্ত্রী সারীকে আর সারী বলে ডাকবে না। তার নাম হবে সারা। আমি তাকে আশীর্বাদ করব, সে হবে বহুজাতির আদিমাতা এবং তার থেকে উৎপন্ন হবে প্রজাকুলের নৃপতিবৃন্দ। 16অব্রাহাম তখন উপুড় হয়ে প্রণিপাত করলেন ও হাসলেন। 17তিনি মনে মনে বললেন, একশো বছর বয়স যার, সেই বৃদ্ধের কি সন্তান হবে? নব্বই বছরের বৃদ্ধা সারা কি সন্তান প্রসব করবে? 18অব্রাহাম ঈশ্বরকে বললেন, তোমার অনুগ্রহে ইশ্মায়েলই বেঁচে থাকুক। 19ঈশ্বর বললেন, কিন্তু তোমার স্ত্রী সারা অবশ্যই পুত্রের জননী হবে, তুমি তার নাম রেখ ইসহাক। আমি তার সঙ্গে সম্বন্ধ স্থাপন করব এবং তার ভাবী বংশধরদের সঙ্গে তা হবে চিরস্থায়ী সম্বন্ধ। 20ইশ্মায়েল সম্পর্কে তোমার নিবেদনও আমি গ্রাহ্য করলাম। আমি তাকেও আশীর্বাদ করব। তাকে আমি প্রজাবন্ত করব, তার বংশকে করব বহুগুণে বর্ধিত। তার বংশে বারোজন গোষ্ঠীপতি উৎপন্ন হবে এবং আমি তাকে এক বিরাট জাতিতে পরিণত করব। 21কিন্তু আগামী বছর এই সময়ে সারার যে পুত্র জন্মগ্রহণ করবে, সেই ইস্‌হাকের সঙ্গেই আমি আবদ্ধ হব এই সন্ধি চুক্তিতে। 22কথা শেষ করে ঈশ্বর অব্রাহামের কাছ থেকে অন্তর্হিত হলেন। অব্রাহাম ঈশ্বরের 23নির্দেশ অনুযায়ী সেই দিনই তাঁর পুত্র ইশ্মায়েল এবং তার সঙ্গে পরিবারে জাত এবং অর্থমূল্যে ক্রীত অব্রাহামের পরিবারে যত পুরুষ ছিল তাদের সকলেরই লিঙ্গাগ্রচর্ম ছেদন করলেন। 24লিঙ্গাগ্রচর্ম ছেদনের সময়ে অব্রাহামের বয়স হয়েছিল নিরানব্বই বছর, 25আর তাঁর পুত্র ইশ্মায়েলের বয়স ছিল তের বছর। 26একই দিনে অব্রাহাম ও তাঁর পুত্র ইশ্মায়েল উভয়ের লিঙ্গাগ্রচর্ম ছেদন করা হল। 27সেই সঙ্গে তাঁর পরিবারে জাত এবং বিজাতীয় লোকদের কাছ থেকে অর্থমূল্যে ক্রীত সমস্ত পুরুষেরও লিঙ্গাগ্রচর্ম ছেদন করা হল।


======================

(আদি পুস্তক ২১: ৫)

1প্রভু পরমেশ্বর তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সারার প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করলেন। তিনি সারাকে যে কথা দিয়েছিলেন, সে কথা সফল করলেন। 2সারা গর্ভধারণ করে ঈশ্বর কর্তৃক নির্দিষ্ট সময়ে বৃদ্ধ অব্রাহামের জন্য একটি পুত্র সন্তান প্রসব করলেন। 3অব্রাহাম সারার গর্ভজাত পুত্রের নাম রাখলেন ইস্‌হাক (হাস্যময়)। 4অব্রাহাম ঈশ্বরের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁর পুত্র ইস্‌হাকের আটদিন বয়সে তার লিঙ্গাগ্রচর্ম ছেদন করলেন।5অব্রাহামের একশো বছর বয়সে পুত্র ইস্‌হাকের জন্ম হল। 6সারা বললেন, ঈশ্বর আমার জীবনে হাসি ও আনন্দ দিয়েছেন, যে একথা শুনবে, সেও আমার সঙ্গে আনন্দ করবে।
7সারা আরও বললেন, অব্রাহামকে এমন কথা কি কেউ বলতে পারত যে সারা শিশুকে স্তন্যদান করবে? কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁর বৃদ্ধবয়সে আমি তাঁর পুত্রের জননী হয়েছি।

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...