এলিয়ের কাহিনী
1গিলিয়দ প্রদেশের তিশবী নিবাসী নবী এলিয় রাজা আহাবকে বললেন, ইসরায়েলীদের আরাধ্য যে ঈশ্বরের সেবক আমি, সেই জাগ্রত প্রভু পরমেশ্বরের নামে বলছি, আমি না বলা পর্যন্ত আগামী কয়েক বছর দেশে বৃষ্টি বা শিশির কিছুই পড়বে না।
2তারপর প্রভু পরমেশ্বর তাঁকে প্রত্যাদেশ দিলনঃ 3তুমি এ দেশ ছেড়ে পূর্ব দিকে চলে যাও এবং জর্ডনের পূর্বে ছোট নদী কেরিতের ধারে গিয়ে লুকিয়ে থাক। 4তুমি নদীর জল খাবে আর দাঁড়কাকদের আমি আদেশ দিয়েছি, তারা তোমায় খাবার জোগাবে। 5এলিয় পরমেশ্বরের আদেশ অনুযায়ী কেরিত নদীর ধারে গিয়ে থাকতে লাগলেন। 6প্রতিদিন কাকেরা তাঁকে সকালে-সন্ধ্যায় রুটি আর মাংস এনে দিত। আর তিনি নদীর জল খেতেন। 7দেশে বৃষ্টি না হওয়ায় কিছুদিন পরে ঝরণার জলও শুকিয়ে গেল।
এলিয় এবং সারিফতের বিধবা
8তখন প্রভু পরমেশ্বর এলিয়কে প্রত্যাদেশ দিলেনঃ বললেন, 9এবার তুমি যাও সীদোন নগরের কাছে সারিফত গ্রামে এবং সেখানেই থাক। সেখানকার একজন বিধবাকে আমি আদেশ দিয়েছি। সে তোমাকে খাবার জোগাবে। 10এলিয় সারিফতে চলে গেলেন। শহরে ঢুকবার পথে তিনি দেখতে পেলেন একটি বিধবা নারী জ্বালানি কাঠ কুড়াচ্ছে। তিনি তাকে বললেন, দয়া করে আমায় একটু খাবার জল দেবে? 11সে যখন জল আনতে যাচ্ছিল তখন তিনি তাকে বললেন, সেই সঙ্গে আমার জন্য কিছু রুটিও এনো। 12বিধবা নারী বলল, আপনার ঈশ্বর, জাগ্রত প্রভুর দিব্য, আমার কাছে একটাও রুটি নেই। শুধু এক মুঠো ময়দা আর ভাঁড়ে সামান্য একটু তেল পড়ে আছে। এখান থেকে গোটা দুই কাঠ কুড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আমার ও আমার ছেলেটার জন্য খাবার তৈরী করে শেষবারের মত খাব, তারপর অনাহারে মারা যাব। 13এলিয় তাকে বললেন, ভয় নেই,। যাও, খাবার তৈরী কর গিয়ে। তবে, তোমার যেটুকু ময়দা আছে, তাই দিয়ে প্রথম আমার জন্য ছোট একখানা রুটি তৈরী করে নিয়ে এস। তারপর বাকীটা দিয়ে তোমার আর তোমার ছেলের জন্য রুটি করো। 14কারণ ইসরায়েলের ঈশ্বর, প্রভু পরমেশ্বর বলেছেন, যতদিন না আমি পৃথিবীতে বৃষ্টিপাত করি, ততদিন তোমার ময়দার পাত্র শূন্য হবে না বা তোমার তেলের ভাঁড় শুকাবে না। 15বিধবা নারী তখন এলিয়র কথা মত কাজ করল। তারপর থেকে তাদের সকলের অনেক দিন খাবারের অভাব হয়নি। 16এলিয়র মাধ্যমে প্রভু পরমেশ্বরের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাদের ময়দার পাত্র খালি হয়নি আর তেলের ভাঁড় শুকিয়ে যায় নি।
17কিছুদিন পর সেই বিধবা নারীর ছেলের খুব অসুখ করল। দিন দিন তার অবস্থা খারাপের দিকে চলতে লাগল। শেষে একদিন ছেলেটি মারা গেল। 18বিধবা মেয়েটি এলিয়কে বলল, হে ঈশ্বরের ভক্তদাস, আপনি কেন আমার এমন অবস্থা করলেন? আপনি কি ঈশ্বরকে আমার পাপের কথা মনে করিয়ে দিয়ে আমার ছেলের মরণ ডাকতে এসেছেন?
19এলিয় তাকে বললেন, ছেলেটিকে আমার কাছে দাও। তিনি তার কোল থেকে ছেলেটিকে নিয়ে উপর তলায় নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে নিজের বিছানায় শুইয়ে দিলেন। 20তারপর তিনি জোরে জোরে প্রার্থনা করতে লাগলেন, হে প্রভু, আমার ঈশ্বর, কেন তুমি এই বিধবার এমন সর্বনাশ করলে? সে আমার এত সেবা যত্ন করল আর তুমি তার ছেলেটিকে মেরে ফেললে। 21তারপর এলিয় ছেলেটির দেহের উপর তিনবার উবুড় হয়ে শুলেন এবং প্রার্থনা করলেন, হে প্রভু, আমার ঈশ্বর, তুমি ছেলেটির প্রাণ ফিরিয়ে দাও। 22প্রভু এলিয়ের প্রার্থনা শুনলেন। ছেলেটির আবার শ্বাস-প্রশ্বাস বইতে লাগল। সে বেঁচে উঠল।
23এলিয় ছেলেটিকে নীচে তার মায়ের কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন, দেখ, তোমার ছেলে বেঁচে উঠেছে।
24বিধবা জননী তখন বলল, এবার আমি জানলাম, আপনি সত্যিই ঈশ্বরের ভক্তদাস। সত্যিই প্রভু পরমেশ্ব আপনার মুখ দিয়ে কথা বলেন।
এলিয় ও বেলদেবের পুরোহিতবৃন্দ
1কিছুদিন পরে, তখনও খরার তৃতীয় বছর চলছে, প্রভু পরমেশ্বর এলিয়কে বললেন, যাও, রাজা আহাবের সঙ্গে দেখা কর। আমি বর্ষা পাঠাচ্ছি। 2এলিয় রওনা হলেন। তখন দুর্ভিক্ষে শমরিয়ার অবস্থা চরমে। 3তাই রাজা আহাব রাজপ্রাসাদের অধ্যক্ষ ওবদিয়াকে ডেকে পাঠালেন। (ওবদিয়া ছিলেন প্রভুর একজন ভক্ত সেবক। 4ইষেবল যখন পরমেশ্বরের ভক্ত নবীদের হত্যা করছিলেন ওবদিয়া তখন তাঁদের মধ্যে একশো জন নবীকে দু দলে ভাগ করে পঞ্চাশজনের এক একটা দলকে গুহায় লুকিয়ে রেখেছিলেন এবং অন্নজল দিয়ে তাঁদের প্রতিপালন করেছিলেন।) 5আহাব তাঁকে বললেন, দেশের যেখানে যত নদী আর ঝর্ণা আছে, চল সব দেখে আসি। আমাদের খচ্চর আর ঘোড়াগুলির জন্য ঘাস পাওয়া যায় কিনা। তা না হলে এই পশুপালকে বাঁচানো যাবে না। 6জল ও ঘাসের খোঁজে সারা দেশ পরিভ্রমণ করার জন্য তাঁরা দেশটাকে দুইভাগে ভাগ করে নিলেন। আহাব গেলেন এক দিকে এবং ওবদিয়া গেলেন অন্যদিকে।
7ওবদিয়া চলেছেন। পথে হঠাৎ এলিয়ের সঙ্গে দেখা। তাঁকে চিনতে পেরে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনিই কি আমার প্রভু এলিয়? একি সত্যি?
8কিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি এলিয়। যাও, তোমার মনিব রাজাকে গিয়ে বল যে, এলিয় এখানে আছে।
9ওবদিয়া বললেন, আমি আপনার কাছে কি অপরাধ করেছি যে আপনি আমাকে রাজা আহাবের হাতে তুলে দিয়ে মরণের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন? 10আপনার ঈশ্বর সদা জাগ্রত প্রভুর দিব্য, পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই যেখানে রাজা আপনার খোঁজ করেন নি। যখনই কোন রাজা খবর পাঠিয়েছেন যে আপনি সেখানে নেই, তখনই রাজা আহাব তাঁদের সে সম্বন্ধে শপথ করে বলতে বাধ্য করেছেন। 11আর এখন আপনি চাইছেন যে আমি তাঁর কাছে গিয়ে বলি যে আপনি এখানে আছেন? 12আর আমি এখান দিয়ে চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গে প্রভুর আত্মা যদি আপনাকে কোন অজানা জায়গায় নিয়ে যান? তাহলে, আমি যখন তাঁকে গিয়ে আপনার এখানে থাকার কথা বলব, তারপর এখানে আপনাকে পাওয়া না গেলে, তিনি আমাকে হত্যা করবেন। আপনি তো জানেন ছোটবেলা থেকেই আমি প্রভুর ভক্ত দাস। 13আপনি কি শোনেন নি, ইষেবল যখন প্রভুর নবীদের হত্যা করছিলেন, তখন আমি নবীদের মধ্যে একশো জনকে দুইদলে ভাগ করে পঞ্চাশজনের এক একটা দলকে গুহায় লুকিয়ে রেখে অন্নজল দিয়ে প্রতিপালন করেছিলাম? 14আর এখন আপনি বলছেন, যাও, তোমার মনিবকে বল যে, এলিয় এখানে আছেন? তিনি তো আমাকে হত্যা করবেন।
15এলিয় বললেন, আমি যাঁর সেবক, সেই সদাজাগ্রত সর্বশক্তিমান পরমেশ্বরের শপথ নিয়ে আমি বলছি, আজ রাজার সঙ্গে আমার দেখা হবেই।
16ওবদিয়া তখন রাজা আহাবের কাছে গিয়ে সব কথা বললেন। আহাব এলিয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য রওনা হলেন। 17এলিয়কে দেখামাত্র আহাব বললেন, এই যে তুমি, ইসরায়েলের কাঁটা।
18এলিয় বললেন, ইসরায়েলের কাঁটা আমি নই। কাঁটা হচ্ছ তুমি–তুমি আর তোমার বাবা। তোমরা পরমেশ্বরের আদেশ অমান্য করে বেলদেবতাদের পূজা করছ। 19এখন ইসরায়েলীদের আদেশ কর, তারা যেন কার্মেল পর্বতে আমার কাছে একত্র হয়। সেইসঙ্গে বেলদেবতার 450 জন নবী এবং দেবী আশেরার 400 জন নবী—যারা রাণী ইষেবলের আশ্রিত—সবাইকে সেখানে হাজির কর।
20সমস্ত ইসরায়েলী প্রজা ও সেই নবীদের কার্মেল পাহাড়ে জড়ো হবার জন্য রাজা আহাবের হুকুম জারি হয়ে গেল। 21এলিয় সমগ্র জনতার কাছে গিয়ে বললেন, আর কতকাল তোমরা দুই নৌকায় পা দিয়ে থাকবে? যদি মনে কর, প্রভুই পরমেশ্বর, তাহলে তাঁরই অনুগামী হও। আর যদি মনে কর বেলদেবই ঈশ্বর, তাহলে তার অনুগামী হও। তাঁর এ কথায় জনতার কাছ থেকে কোন সাড়া পাওয়া গেল না। 22এলিয় তখন তাদের বললেন, পরমেশ্বরের ভক্ত নবীদের মধ্যে একমাত্র আমিই বাকী রয়েছি। কিন্তু বেলদেবের 450 জন নবী আছে। 23দুটো বৃষ আমাদের দেওয়া হোক। বেলদেবের নবীরা একটা নিক। সেটাকে টুকরো টুকরো করে যজ্ঞবেদীতে সাজানো কাঠের উপর রাখুক—কিন্তু তাতে আগুন দেবে না। আমিও অন্য বৃষটা দিয়ে তাই করবো। তাতে আগুন দেব না। 24তারপর ওরা ওদের দেবতাকে আহ্বান করুক। আমিও আমার পরমেশ্বরকে আহ্বান জানাব। যিনি, আগুন পাঠিয়ে আহ্বানে সাড়া দেবেন, তিনিই প্রকৃত পরমেশ্বর। সকলে সমস্বরে সমর্থন জানিয়ে বলল, ঠিক কথা, তাই হোক।
25এলিয় বেলদেবের নবীদের বললেন, তোমরা তো অনেকজন আছ, তোমরাই বরং আগে একটা বৃষ বেছে নিয়ে বলি দিয়ে বেদীতে সাজিয়ে তোমাদের দেবতাকে আহ্বান কর। কিন্তু তাতে আগুন দিও না।
26তারা একটি বৃষ নিয়ে উৎসর্গ করল এবং সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চীৎকার করে বেলদেবকে আহ্বান করতে লাগল: হে বেলদেব, আমাদের ডাকে সাড়া দাও। সেই সঙ্গে নেচে নেচে তারা যজ্ঞবেদী প্রদক্ষিণ করতে লাগল। কিন্তু কোন সাড়া এল না।
27দুপুরে এলিয় তাদের ঠাট্টা করে বললেন, আরও জোরে প্রার্থনা কর। তিনি তো একজন দেবতা। হয়তো তিনি দিবাস্বপ্নে বিভোর হয়েছেন কিম্বা বিশ্রাম করছেন। নয়তো কোথাও গিয়েছেন কিম্বা ঘুমাচ্ছেন। তাঁকে তো জাগানো দরকার। 28বেলদেবের নবীরা আরও জোরে চীৎকার করতে লাগল এবং তাদের প্রথা অনুযায়ী ছুরি, ছোরা দিয়ে নিজেদের দেহ ক্ষতবিক্ষত করে রক্তপাত করতে লাগল। 29দুপুর পেরিয়ে বিকেলের বলিদানের সময় পর্যন্ত তারা আকুল হয়ে চীৎকার করে তাদের দেবতাকে ডাকতে লাগল। কিন্তু কেউ উত্তর দিল না, কারো কোন সাড়া পাওয়া গেল না।
30এলিয় তখন সকলকে বললেন, এবার আমার কাছে এস। সকলে এস তাঁকে ঘিরে দাঁড়াল। তখন তিনি 31যাকোবের বংশধর ইসরায়েলীদের বারো গোষ্ঠীর নামে বারোটা পাথর জোগাড় করে, তাই দিয়ে পরমেশ্বরের ভাঙ্গা বেদীটা সারালেন। 32পাথরগুলি দিয়ে বেদী সারানো হয়ে গেলে বেদীর চারিদিকে একটা নালা কাটলেন। নালাটা বেশ গভীর করলেন যাতে কমপক্ষে দুই সেয়া জল ধরে। 33এবার এলিয় বেদীতে কাঠ সাজালেন এবং বৃষটিকে বলি দিয়ে টুকরো টুকরো করে কাঠের উপরে সাজিয়ে রাখলেন। তারপর লোকদের বললেন, এবার চার ঘড়া জল এনে হোমের এই কাঠ আর নৈবেদ্যের উপরে ঢেলে দাও। তারা তাই করল। 34তিনি বললেন, এইভাবে আবার জল ঢালো। তারা তাই করল। তিনি তাদের একইভাবে আবার জল ঢালতে বললেন। তারা তা-ই করল। 35সমস্ত জল গড়িয়ে বেদীর চারিদিকে কাটা নালা কানায় কানায় ভরে গেল।
36বৈকালিক বলিদানের সময় এলিয় বেদীর কাছে গিয়ে প্রার্থনা করলেন, হে প্রভু, অব্রাহাম, ইস্হাক ও যাকোবের ঈশ্বর, এবার তুমি প্রমাণ করে দাও যে তুমিই ইসরায়েলের আরাধ্য ঈশ্বর এবং আমি তোমার ভক্ত সেবক, তোমারই আদেশে আমি এই কাজ করেছি। 37সাড়া দাও, হে পরমেশ্বর সাড়া দাও, যেন এরা জানতে পারে যে তুমিই প্রভু, তুমিই পরমেশ্বর। তুমিই এদের তোমার কাছে ফিরিয়ে আনতে চাও।
38পরমেশ্বর অগ্নিবর্ষণ করলেন। সেই আগুন বলির নৈবেদ্য কাঠ, পাথর ও যজ্ঞভূমি গ্রাস করল এবং নালার জল শুষে নিল। 39এই ঘটনা দেখে লোকেরা মাটিতে উবুড় হয়ে পড়ে বলতে লাগল, ইসরায়েলের আরাধ্য পরমেশ্বরই প্রকৃত ঈশ্বর। তিনিই একমাত্র ঈশ্বর।
40এলিয় জনতাকে আদেশ দিলেন, বেলদেবের ঐ নবীদের ধর, ওদের একটাকেও পালাতে দিও না। লোকেরা সব কটাকে ধরে ফেলল। এলিয় তাদের কিশোন নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে হত্যা করলেন।
খরার অবসান
41রাজা আহাবকে এলিয় তখন বললেন, এবার যাও, গিয়ে খাওয়া-দাওয়া কর। আমি ভারী বৃষ্টির গর্জন শুনতে পাচ্ছি। 42আহাব খেতে গেলে এলিয় কার্মেল পর্বতের চূড়ায় উঠে মাটিতে উবুড় হয়ে দুই হাঁটুর মধ্যে মুখ গুঁজে রইলেন এবং 43নিজের ভৃত্যকে বললেন, যাও, সমুদ্রের দিকে চেয়ে দেখ। ভৃত্যটি দেখে ফিরে এসে বলল, কিছুই দেখতে পেলাম না। এলিয় তাকে বার বার সাতবার এইভাবে দেখতে পাঠালেন। 44সপ্তম বারে সে ফিরে এসে বলল, সমুদ্র থেকে মানুষের হাতের তালুর সমান ছোট্ট একখণ্ড মেঘ উঠে আসতে দেখলাম। এলিয় তখন তাঁর ভৃত্যকে বললেন, যাও, রাজা আহাবকে গিয়ে বল, বৃষ্টিতে আটকে যাওয়ার আগেই সে যেন রথে চড়ে বাড়ি ফিরে যায়।
45কিছুক্ষণের মধ্যেই আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেল, জোরে বাতাস বইতে লাগল। শুরু হয়ে গেল প্রবল বর্ষণ। আহাব রথে চড়ে যিষ্রিয়েলে ফিরে চললেন। 46প্রভুর শক্তি এলিয়ের উপর ভর করল। তিনি শক্ত করে কোমরে কাপড় জড়িয়ে দৌড়ে আহাবের আগে যিষ্রিয়েল গিয়ে পৌঁছালেন।
সিনাই পর্বতে এলিয়
1আহাব এলিয়ের সমস্ত কীর্তিকাহিনী —কিভাবে এলিয় বেলদেবের নবীদের হত্যা করেছিলেন—সব তাঁর রাণী ইষেবলের কাছে বললেন। 2রাণী তখন এলিয়ের কাছে দূতের মুখে বলে পাঠালেন, আগামী কাল এই সময়ের মধ্যে আমি যদি তোমারও অবস্থা ঐ নবীদের মত না করি তো দেবতারা যেন আমার মৃত্যু দেন। 3একথা শুনে এলিয় প্রাণের ভয়ে পালিয়ে গেলেন। নিজের ভৃত্যকে সঙ্গে নিয়ে তিনি গেলেন যিহুদীয়া রাজ্যের বেরশেবাতে।
4ভৃত্যকে সেখানে রেখে জনশূন্য প্রান্তরের মধ্যে দিয়ে পুরো একদিনের পথ হেঁটে এসে একটি গাছের তলায় গিয়ে বসলেন। নিজের মৃত্যু কামনা করে তিনি বলতে লাগলেন, হে প্রভু, যথেষ্ট হয়েছে। এবার আমায় তুলে নাও। আমার মরণই ভাল!
5তিনি গাছের তলায় শুয়ে পড়লেন এবং ঘুমিয়ে গেলেন। হঠাৎ এক স্বর্গদূত তাঁকে স্পর্শ করে বললেন, ওঠ, উঠে খাও। 6তিনি উঠে দেখলেন, তাঁর শিয়রের কাছে টাটকা রুটি আর এক ভাঁড় জল রাখা আছে। রুটি আর জল খেয়ে তিনি আবার শুয়ে পড়লেন।
7প্রভুর দূত দ্বিতীয়বার এসে তাঁকে জাগিয়ে বললেন, ওঠ, খেয়ে নাও। নইলে পথ চলতে পারবে না।
8এলিয় উঠে আবার খেলেন এবং সেই খাদ্যের জোরে চল্লি দিন হেঁটে পবিত্র সিনাই পর্বতে গিয়ে পৌঁছালেন।
9সেখানে পর্বতের একটি গুহায় গিয়ে আশ্রয় নিলেন এবং সেখানেই রাত্রিযাপন করলেন। সেইসময় হঠাৎ এলিয় শুনতে পেলেন পরমেশ্বর তাঁকে বলছেন, এলিয়, এখানে বসে তুমি কি করছো? 10এলিয় বললেন, হে প্রভু সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, আমি চিরদিন তোমারই একান্ত অনুগত উদ্যোগী সেবক। কিন্তু ইসরায়েলী প্রজারা তোমার সঙ্গে তাদের চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে, তোমার বেদীগুলিকে ভেঙ্গে ফেলেছে, তোমার সমস্ত নবীদের হত্যা করেছে। একমাত্র আমিই বাকী রয়েছি—তারা আমারও প্রাণনাশের চেষ্টা করছে!
11প্রভু তাঁকে বললেন, বাইরে বেরিয়ে এসে এই পাহাড়ের চূড়ায় আমার সামনে দাঁড়াও। এই বলে প্রভু তার সামনে দিয়ে চলে গেলেন এবং পাঠিয়ে দিলেন প্রচণ্ড ঝড়। সেই ঝড় পাহাড় ফাটিয়ে দিল, ভেঙ্গে ফেলল পাহাড়ের সমস্ত পাথর। প্রভু কিন্তু সেই ঝড়ের মধ্যে ছিলেন না। ঝড় থেমে গেলে শুরু হল ভূমিকম্প।
12ভূমিকম্পের মধ্যে প্রভু ছিলেন না। ভূমিকম্পের পরে শুরু হল অগ্ন্যুৎপাত। কিন্তু সেই আগুনের মধ্যেও পরমেশ্বর ছিলেন না। অগ্ন্যুপাত থেমে গেলে শোনা গেল একটি কোমল মধুর স্বর।
13সেই স্বর শোনামাত্র এলিয় নিজের আলখাল্লা দিয়ে মুখ ঢেকে বাইরে বেরিয়ে এসে গুহার মুখে দাঁড়ালেন। এলিয় শুনলেন এই কথা—এলিয়, এখানে তুমি কি করছ?
14তিনি বললেন, হে প্রভু সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, আমি চিরদিন একমাত্র তোমারই সেবা করেছি। কিন্তু ইসরায়েলীরা তোমার সঙ্গে তাদের চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে, তোমার বেদীগুলি ভেঙ্গে ফেলেছে এবং তোমার সমস্ত নবীদের হত্যা করেছে। একমাত্র আমিই বাকি রয়েছি—আমারও প্রাণনাশের চেষ্টা করছে তারা।
15প্রভু পরমেশ্বর তাঁকে বললেন, দামাসকাসের কাছে যে প্রান্তর আছে, সেখানে তুমি ফিরে যাও। তারপর নগরে গিয়ে হসায়েলকে সিরিয়ার রাজপদে অভিষিক্ত কর।
16ইসরায়েলের রাজপদে অভিষিক্ত কর নিম্শির পুত্র যেহুকে এবং আবেল মেহোলা নিবাসী শাফতের পুত্র ইলিশায়কে তোমার উত্তরসূরী হিসাবে কর্মভার নেবার জন্য নবীরূপে অভিষিক্ত কর। 17হসায়েলের হাত থেকে যে নিস্তার পেয়ে পালাবে, যেহুর হাতে সে মরবেই, আবার যেহুর হাত এড়িয়ে পালাতে পারলেও ইলিশায়ের হাতে তাকে মরতে হবে। 18তবুও বেলদেবের সামনে নতজানু হয় নি বা তার বিগ্রহ চুম্বন করে নি, ইসরায়েলীদের মধ্যে এমন সাত হাজার লোককে আমি অবশিষ্ট রাখব।
ইলিশায়ের আহ্বান
19এলিয় চলে গেলেন। গিয়ে দেখলেন ইলিশায় জমিতে লাঙ্গল দিচ্ছেন। এগারো জোড়া বলদের লাঙ্গল তাঁর আগে আগে চলছিল, আর শেষের জোড়ার সঙ্গে তিনি ছিলেন। এলিয় তাঁর পাশ দিয়ে যেতে যেতে নিজের উত্তরীয় ইলিশায়ের গায়ে ফেলে দিলেন। 20ইলিশায় তখন লাঙ্গল ফেলে এলিয়ের পিছনে পিছনে দৌড়ে গিয়ে বললেন, দয়া করে আমায় অনুমতি দিন, আমি আমার বাবা-মাকে চুম্বন করে তাঁদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসি, তারপর আমি আপনার অনুগামী হব।এলিয় বললেন, ঠিক আছে, যাও। আমি কি তোমায় বাধা দিচ্ছি? 21ইলিশায় তখন তাঁর বলদগুলির কাছে ফিরে গেলেন। সেগুলিকে বলিদান করলেন এবং জোয়ালের কাঠ জ্বালিয়ে বলদের মাংস রান্না করে সকলকে খাওয়ালেন। তারপর তিনি চলে গেলেন এলিয়ের কাছে এবং তাঁর সহকারী হয়ে কাজ করতে লাগলেন।
নাবোতের দ্রাক্ষা কুঞ্জ
1যিষ্রিয়েল রাজা আহাবের প্রাসাদের কাছে নাবোত নামে একটি লোকের একটি দ্রাক্ষাকুঞ্জ ছিল। 2একদিন আহাব নাবোতকে বললেন, তোমার দ্রাক্ষাকুঞ্জটা তো আমার প্রাসাদের কাছেই, ওটা আমাকে দিয়ে দাও। আমি ওখানে সবজির বাগান করব। তুমি যদি চাও এর বদলে আমি তোমাকে আরও ভাল একটা দ্রাক্ষাকুঞ্জ দেব। আর যদি তুমি চাও তবে এর জন্য আমি তোমায় ভাল দাম দেব।
3নাবোত বলল, এ আমার পৈতৃক সম্পত্তি। ঈশ্বর না করুন, এই দ্রাক্ষাকুঞ্জ আমি আপনাকে দিতে পারব না।
4আহাব প্রাসাদে ফিরে গেলেন। নাবোতের কথায় তিনি খুব ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন, রাগও হয়েছিল তাঁর। তাই তিনি দেওয়ালের দিকে মুখ করে শুয়ে রইলেন। খাওয়া-দাওয়া পর্যন্ত করলেন না। 5তাঁর স্ত্রী ইষেবল তাঁর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে তোমার, এত বিষণ্ণ দেখাচ্ছে কেন? কেন কিছু খাচ্ছ না?
6আহাব তখন বললেন, নাবোতের কথা আমার মনে খুব লেগেছে। আমি তার দ্রাক্ষাকুঞ্জটা কিনতে চেয়েছিলাম কিম্বা সে যদি চায় এর বদলে তাকে অন্য একটা দ্রাক্ষাকুঞ্জ দেব বলেছিলাম কিন্তু সে বলল, আমাকে ঐ জমি সে দিতে পারবে না।
7ইষেবল বললেন, ও এই কথা তা, তুমি না ইসরায়েলের রাজা? ওঠ, খাও-দাও, স্ফূর্তি কর। আমি নাবাতের দ্রাক্ষাকুঞ্জ তোমার পাবার ব্যবস্থা করছি।
8ইষেবল তখন কতকগুলি চিঠি লিখে তাতে আহাবের জাল সই করে তাঁর সীলমোহর দিয়ে যিষ্রিয়েলের সমাজপতি ও মাতব্বরদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। 9চিঠিতে লেখা ছিল: তোমরা একটি উপবাসের দিন ঘোষণা কর এবং প্রজাদের এক জায়গায় একত্র কর। সেই প্রজা সমাবেশে নাবোতকে একটি সম্মানিত আসনে বসাও। 10তারপর দুইজন দুষ্ট লোককে তার সামনা-সামনি বসিয়ে দাও। তাদের নাবোতের বিরুদ্ধে সবার সামনে এই অভিযোগ করতে বল: তুমি ঈশ্বর ও রাজার নিন্দা করেছ। তারপর তাকে নগরের বাইরে নিয়ে গিয়ে পাথর মেরে হত্যা করবে।
11যিষ্রিয়েলের সমাজপতি ও নেতারা ইষেবলের আদেশ অনুযায়ী কাজ করল। 12তারা উপবাসের জন্য দিন ঘোষণা করে সমস্ত লোককে একত্র করল এবং নাবোতকে একটি সম্মানিত আসনে বসাল। 13সেইখানে দুই জন দুষ্ট লোক সবার সামনে নাবোতের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলল যে নাবোত ঈশ্বর ও রাজার নিন্দা করেছে। তখন লোকেরা তাকে নগরের বাইরে নিয়ে গিয়ে পাথর মেরে হত্যা করল। 14তারপর ইষেবলের কাছে তারা খবর পাঠাল যে নাবোতকে হত্যা করা হয়েছে।
15এই খবর পাওয়ামাত্র ইষেবল আহাবকে বললেন, নাবোত আর নেই, মারা গেছে। এবার যাও, যে দ্রাক্ষা ক্ষেত্র সে তোমাকে অর্থ দেওয়া সত্ত্বেও দিতে রাজি হয় নি, সেই ক্ষেত্র দখল কর। 16সঙ্গে সঙ্গে আহাব সেই দ্রাক্ষাকুঞ্জ দখল করতে চললেন।
17তিশ্বী নিবাসী নবী এলিয়ের কাছে পরমেশ্বরের প্রত্যাদেশ এল: 18শমরিয়ায় ইসরায়েলের রাজা আহাবের কাছে যাও। তাকে তুমি নাবোতের দ্রাক্ষাকুঞ্জে পাবে। সে সেখানে জমির দখল নিতে গেছে। 19তাকে বল যে আমি স্বয়ং পরমেশ্বর বলছি যে লোকটিকে খুন করেছ, আবার এসেছ তার জমি দখল করতে? আর বল যে প্রভু বলেছেন, যে জায়গায় কুকুরেরা নাবোতের রক্ত চেটে খেয়েছে, ঠিক সেই জায়গায় তোমারও রক্ত কুকুরেরা ঐভাবেই চেটে খাবে।
20আহাব যখন এলিয়কে দেখতে পেলেন, তাঁকে বললেন, আমার চিরশত্রু, এবার বুঝি আমাকে হাতে পেয়েছে? এলিয় বললেন, হ্যাঁ পেয়েছি বৈকি! পরমেশ্বরের অপ্রীতিকর কাজেই তুমি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে ডুবিয়ে দিয়েছ। 21কাজেই, পরমেশ্বর তোমাকে বলেছেন, আমি তোমার সর্বনাশ করব, শিশু-বৃদ্ধ, স্বাধীন বা ক্রীতদাস নির্বিশেষে তোমার বংশকে সমূলে উৎখাত করব। 22নবাটের পুত্র রাজা যারবিয়ামের বংশ এবং অহিয়র পুত্র রাজা বাশার বংশের মতই তোমার বংশের দশা করব। কারণ তুমি নিজে পাপ করেছ এবং ইসরায়েলকে পাপের পথে পরিচালিত করে আমায় অত্যন্ত ক্রুদ্ধ করেছ। 23ইষেবলের সম্পর্কে পরমেশ্বর বলেছেন, যিষ্রিয়েল শহরের মধ্যে কুকুরেরা ইষেবলের দেহ ছিঁড়ে খাবে। 24আহাব বংশের কেউ নগরের মধ্যে মরলে তাকে কুকুরে খাবে এবং পথে-প্রান্তরে মরলে তাকে শকুনে খাবে।
25(ঈশ্বরের অপ্রীতিকর মন্দ কাজে আহাবের মত এমন করে কেউ কখনও সম্পূর্ণভাবে নিজেকে ডুবিয়ে দেয় নি। আহাব তাঁর স্ত্রী ইষেবলের প্ররোচনায় এ কাজ করেছিলেন। 26ইমোরীদের মত তিনি জঘন্য পৌত্তলিক আচার-অনুষ্ঠান করতেন—যে ইমোরীদের পরমেশ্বর ইসরায়েলীদের দেশ দখল করার আগে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন।)
27এলিয়র কথা শুনে আহাব পরণের পোষাক ছিঁড়ে ফেলে চট পরে উপবাস করলেন। রাতে চট পরেই শুতেন এবং বিষণ্ণ ভাবে দিন কাটাতে লাগলেন।
28পরমেশ্বর তখন নবী এলিয়কে বললেন, দেখেছ, আহাব আমার কাছে কেমন নত হয়েছে? তাই আমি তার জীবনকালে তার অমঙ্গল করব না। কিন্তু তার পুত্রের আমলে তার বংশের উপর সেই অমঙ্গল আনব।
No comments:
Post a Comment