যোহনের সুসমাচার, ১৫: ২৬, ১৬: ৭, ১৬: ১২-১৫

১৫: ২৬
জগতসংসারের ঘৃণা
18জগতসংসার যদি তোমাদের ঘৃণা করে, জেনো, তোমাদের আগে জগত আমাকেই ঘৃণা করেছে। 19তোমরা যদি সংসারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হতে তাহলে সংসার তার আপনজন রূপে তোমাদের ভালবাসত। কিন্তু যেহেতু তোমরা জগতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নও, যেহেতু এ জগতের মধ্যে আমি তোমাদের মনোনীত করেছি, সেইজন্যই জগত সংসার তোমাদের ঘৃণা করে। 20মনে রেখো আমার কথা, ‘দাস তার মনিবের চেয়ে বড় নয়।’ তারা যদি আমাকে নির্যাতন করেত পারে তাহলে তোমাদেরও নির্যাতন করবে। যদি তারা আমার কথা শুনত তাহলে তোমাদের কথাও শুনত।21আমারই জন্য তারা তোমাদের সঙ্গে এরকম আচরণ করবে কারণ আমাকে যিনি পাঠিয়েছেন তাঁকে তারা জানে না। 22আমি যদি না আসতাম, কিছু যদি না বলতাম তাদের, তাহলে তাদের কোন পাপ হত না। কিন্তু এখন তাদের এ পাপাচারের কোন কৈফিয়ৎ নেই। 23যে আমায় ঘৃণা করে সে আমার পিতাকেও ঘৃণা করে। 24তাদের মাঝে অনন্যপূর্ব কীর্তি যদি আমি সাধন না করতাম তাহলে তাদের কোন পাপ হত না। কিন্তু তারা আমার কীর্তি দেখা সত্ত্বেও আমাকে ও আমার পিতাকে-উভয়কেই ঘৃণা করেচে। 25সুতরাং পূর্ণ হল তাদেরই বিধান শাস্ত্রের এই বচনঃ অকারণেই তারা আমায় ঘৃণা করেছে।
26পিতা থেকে যাঁর উদ্ভব, তোমাদের সহায় সেই সত্য আত্মা যখন আসবেন, পিতার কাছ থেকে যাঁকে আমি পাঠাব, তিনিই আমার সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেবেন। 27তোমরাও আমার সাক্ষী কারণ প্রথম থেকেই তোমরা রয়েছ আমার সঙ্গে।

1তোমরা যাতে বিশ্বাস না হারাও সেইজন্য এই সমস্ত কথা আমি তোমাদের বললাম। 2তারা তোমাদের সমাজচ্যুত করবে। এমনও দিন আসবে যখন কেউ তোমাদের হত্যা করলে সে ভাববে যে সে ঈশ্বরের সেবা করছে। 3পিতাকে কিম্বা আমাকে জানে না বলেই তারা এসব কাজ করবে। 4এসব কথা আমি তোমাদের বললাম যাতে এইসব ঘটনা ঘটার সময়ে তোমরা স্মরণ কর আমার আজকের এই সতর্কবাণী। আগে এসব কথা তোমাদের আমি বলি নি কারণ তখন আমি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম। এবার আমি তাঁর কাছে চলে যাচ্ছি যিনি আমায় পাঠিয়েছেন। 5কিন্তু তোমরা তো জিজ্ঞাসা করলে না আমায়, কোথায় আপনি যাচ্ছেন? 6তা না করে আমার কথা শুনেই তোমরা দুঃখে মূহ্যমান হয়ে পড়লে। 7তাহলেও যা সত্য তা-ই তোমাদের আমি বলছি, তোমাদের মঙ্গলের জন্যই আমি তোমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমি না যাওয়া পর্যন্ত তোমাদের সেই সহায় আসবেন না। এ ক্ষেত্রে আমি গিয়ে তাঁকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব। 8তিনি এসে এ জগতের পাপ, ন্যায়, নিষ্ঠা এবং ঈশ্বরের বিচার সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান দান করবেন। 9তারা আমাকে বিশ্বাস করে নি, এইটাই পাপ। 10তোমাদের দৃষ্টিওর অন্তরালে পিতার কাছে আমি যে প্রত্যাবর্তন করেছি সে কথা প্রমাণ করে তিনি আমার ন্যায়নিষ্ঠতা প্রতিপন্ন করবেন 11এবং এই জগতের অধিপতির অপরাধ প্রমাণ করেই তিনি ঐশ্বরিক বিচার সম্বন্ধে তাদের করবেন নিঃসংশয়।
12তোমাদের আরও অনেক কথা আমার বলার আছে কিন্তু এখন তোমাদের পক্ষে তা হৃদয়ঙ্গম করা কঠিন। 13সেই সত্যের আত্মা যখন আসবেন তিনিই তখন তোমাদের পূর্ণ সত্যের উপলব্ধি দান করবেন। তিনি নিজে থেকে কিছুই বলবেন না, যা তিনি শুনবেন শুধুমাত্র তা-ই বলবেন এবং সমস্ত ভাবী ঘটনার কথা তিনি তোমাদের কাছে প্রকাশ করবেন। 14তিনি আমাকেই মহিমান্বিত করবেন কারণ আমার সংক্রান্ত বিষয তিনি তোমাদের কাছে ব্যাখ্যা করবেন। 15পিতার সম্সত ঐশ্বর্যই আমার। সেইজন্যই আমি বললাম, আমার কাছ থেকেই সব কিছু নিয়ে তিনি তোমাদের কাছে প্রকাশ করবেন।
আনন্দ-বেদনা
16আমি আর মাত্র কিছুক্ষণ আচি, তারপর আমাকে তোমরা আর দেখতে পাবে না। তারপর আর অল্পকাল পরেই আবার আমাকে দেখতে পাবে।
17যীশুর শিষ্যদের কয়েকজন আলোচনা করতে লাগলেন, ‘আর মাত্র অল্পকাল, তারপর আমাকে তোমরা দেখতে পাবে না। আবার অল্পদিন পরে আমাকে দেখথে পাবে'-আবার বলছেন, ‘আমি পিতার কাছে যাচ্ছি'- ওঁর এসব কথার অর্থ কি? 18তাঁরা বলতে লাগলেন, ‘আর অল্পকাল'-এ কথারই মানে কি? উনি কি বলতে চান, আমরা বুঝতে পারছি না।
19যীশু বুঝতে পারছিলেন যে তাঁরা তাঁকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে চান, তাই তিনি তাঁদের বললেন, ‘আর অল্পকাল পরে তোমরা আমাকে দেখতে পাবে না কিন্তু তার কিছুকাল পরে আবার তোমরা আমাকে দেখতে পাবে'-আমার এই কথার অর্থ নিয়ে তোমরা আলোচনা করছ-তাই তো? 20সত্যিই আমি তোমাদের বলছি, তোমরা শোকাকুল হবে কিন্তু জগত হবে উৎফুল্ল। তোমরা শোকার্ত হবে ঠিকই কিন্তু তোমাদের শোক পরিণত হবে আনন্দে। 21সন্তান প্রসবের সময় নারী বেদনায় আর্ত হয় কিন্তু সন্তান বূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে ভুলে যায় তার যন্ত্রণা, একটি শিশুর আগমন হয়েছে এই জগতে-এই আনন্দই তাকে করে উদ্বেল। 22সেই রকম এখন তোমরা বেদনার্ত হয়েছ কিন্তু আবার যখন তোমাদের সঙ্গে আমার দেখা হবে এবং তোমাদের হৃদয় তখন উচ্ছল হবে আনন্দে। সেই আনন্দ কেউ অপহরণ করতে পারবে না।
23সেদিন আমার কাছে তোমাদের আর কিছুই জিজ্ঞাসা করার থাকবে না। সত্যি, সত্যিই আমি তোমাদের বলছি, আমার নামে তোমরা পিতার কাছে যদি কিছু প্রার্থনা কর, তিনি তা পূর্ণ করবেন। 24আমার নামে এ পর্যন্ত তোমরা প্রার্থনা কর নি। প্রার্থনা কর, পাবে এবং তখনই তোমাদের আনন্দ হবে পরিপূর্ণ।
জগতবিজয়ী খ্রীষ্ট
25রূপকের মাধ্যমে এ সব কথা তোমাদের আমি বলেছি কিন্তু এমন সময় আসছে যখন আমি রূপক দিয়এ আর কিছউ বলব না, পিতার সম্বন্ধে যা কিছু বক্তব্য সব সোজাসুজিই বলব। 26সেদিন তোমরা আমার নামে তাঁর কাছে প্রার্থনা করবে। তাই আমি আর বলছি না যে আমাদের হয়ে আমি তাঁর কাছে প্রার্থনা করব কারণ 27পিতা স্বয়ং তোমাদের ভালবেসেছ এবং আমি যে ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছি একথা তোমরা বিশ্বাস করেছ। 28আমি এই জগতে এসেছি পিতার কাছ থেকে। আবার এ জগত পরিত্যাগ করে আমি পিতার কাছে ফিরে যাব।
29তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে বললেন, এবার আপনি রূপক দিয়ে না বলে সোজাসুজিই বলছেন। 30এখন আমরা নিশ্চিতভাবে জানলাম যে সবকিছুই আপনার জানা। আপনাকে প্রশ্ন করার কোন প্রয়োজন নেই, এতেই আমরা বিশ্বাস করেছি যে আপনি ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছেন।
31-32যীশু তাঁদের বললেন, এবার তোমরা বিশ্বাস করলে? দেখ, এমন সময় আসছে বরং এখনই সে লগ্ন উপস্থিত যখন তোমরা সকলে ছত্রভঙ্গ হয়ে আমাকে একলা ফেলে চলে যাবে যে যার গৃহে, তখনও আমি কিন্তু নিঃসঙ্গ থাকবে না, কারণ পিতা আমার সঙ্গে আছেন। 33আমারই মাঝে তোমরা শান্তিলাভ করবে, এইজন্যই এমন কথা আমি তোমাদের বললাম। জগত তোমাদের দুঃখ-যন্ত্রণা দেবে কিন্তু সাহস কর আমিই বিজয়ী, আমিই জয় করেছি এই জগতকে।

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...