জ্বলন্ত ঝোপ
1মোশি
তখন তাঁর শ্বশুর মিদিয়নের পুরোহিত যিথ্রোর ভেড়ার পাল চরাচ্ছিলেন। একদিন
তিনি ভেড়ার পাল নিয়ে প্রান্তর পেরিয়ে ঈশ্বরের পর্বত হোরেব-এর কাছে গিয়ে
উপস্থিত হলেন। 2সেখানে
প্রভু পরমেশ্বরের দূত জ্বলন্ত অগ্নিশিখারূপে ঝোপের মধ্যে তাঁকে দর্শন
দিলেন। মোশি দেখলেন, একটি ঝোপের মধ্যে আগুন জ্বলছে কিন্তু সেটি পুড়ছে না।প্রেরিত 7:30-34 3ঝোপটি কেন পুড়ছে না, পরম বিস্ময়কর এই দৃশ্য কাছে গিয়ে দেখার সঙ্কল্প করলেন মোশি। 4এই
দৃশ্য দেখার জন্য মোশিকে কাছে এগিয়ে আসতে দেখে প্রভু পরমেশ্বর ঝোপের
মধ্যে থেকে তাঁকে ডাকলেন, মোশি! মোশি! মোশি উত্তর দিলেন, আজ্ঞে, এই যে
আমি। 5ঈশ্বর বললেন, আর এগিও না, তোমার পা থেকে জুতো খুলে ফেল, কারণ যে স্থানে তুমি দাঁড়িয়ে আছ পবিত্রভূমি। 6তিনি
আরও বললেন, আমি তোমার পূর্বপুরুষ অব্রাহাম, ইস্হাক ও যাকোবের আরাধ্য
ঈশ্বর। তখন মোশি মুখ ঢেকে ফেললেন, কারণ ঈশ্বরের দিকে তাকাবার সাহস তাঁর হল
না।
7প্রভু
পরমেশ্বর তাঁকে বললেন, মিশরে আমার প্রজাদের দুর্দশা আমি দেখেছি, নিষ্ঠুর
রাজার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তাদের বিক্ষোভ আমি শুনেছি, তাদের দুঃখ আমি
জানি। 8মিশরীদের কবল থেকে তাদের উদ্ধার করে সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলা সম্পদশালী বিস্তীর্ণ এক মনোরম দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি এসেছি।3:8 প্রাচীন অনুবাদ-দুগ্ধ মধু প্রবাহী দেশ সেই দেশ কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবুষীয় প্রভৃতি জাতির বাসভূমি।
9ইসরায়েলীদের আর্তনাদ আমি শুনেছি, মিশরীরা যেভাবে তাদের নির্যাতন করছে, তা আমি দেখেছি। 10আমি এখন তোমাকে ফারাও-এর কাছে পাঠাব এবং আমার প্রজা ইসরালেয়ীদের মিশর থেকে উদ্ধার করে আনব।
11মোশি ঈশ্বরকে বললেন, কিন্তু আমি এমন কে যে ফারাও-এর কাছে গিয়ে ইসরায়েলীদের মিশর থেকে উদ্ধার করে আনব?
12ঈশ্বর
বললেন, ভয় কি, আমি তোমার সঙ্গে থাকব। আর আমিই যে তোমাকে পাঠিয়েছি তার
প্রমাণ হবে এই যে, তুমি যখন ইসরায়েলীদের মিশর থেকে উদ্ধার করে আনবে তখন এই
পর্বতেই তোমরা ঈশ্বরের আরাধনা করবে।
মোশির কাছে ঈশ্বরের আত্মপ্রকাশ
13মোশি
তখন ঈশ্বরকে বললেন, আমি ইসরায়েলীদের কাছে গিয়ে যখন বলব, তোমাদের
পূর্বপুরুষদের আরাধ্য ঈশ্বর আমাকে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছেন, তখন তারা যদি
জিজ্ঞাসা করে, তার নাম কি?— আমি তখন তাদের কি বলব?যাত্রা 6:2-3 14ঈশ্বর মোশিকে বললেন, আমি ‘ইয়াহ্ওয়েহ্’, সেই নিত্যসত্তা
3:14 শাস্ত্রের
এই বিশেষ পদটিতে ইসরায়েলীদের উপাস্য ঈশ্বরের ব্যক্তিগত নামের মর্মার্থ
বিবৃত করা হয়েছে। মূল হিব্রু শব্দ ‘ইয়াহ্ওয়েহ্’ (যার প্রচলিত ইংরেজী
উচ্চারণ ‘জিহোবা’) একটি ক্রিয়াপদের সংক্ষিপ্ত রূপ। কোন স্বরচিহ্ন ছাড়াই
শুধুমাত্র ব্যঞ্জনবর্ণ সহযোগে সাধারণতঃ শব্দটি লিখিত হয়। ‘হায়াহ্’- এই
হিব্রু ধাতু থেকে ঐ শব্দটির উৎপত্তি এবং এর দ্বারা ঈশ্বরের শুধু শাশ্বত
অস্তিত্ব নয় বরং সদাপরিবর্তনশীল জগতের ইতিহাসে তাঁর চির সক্রিয় ভূমিকা ও
উপস্থিতিই সূচীত হয়। বর্তমান সংস্করণে এর পূর্বতন অনুবাদ ‘আছি’ বা ‘আমি যে
সেই আছি’ ইত্যাদির পরিবর্তে হিব্রু ‘হায়াহ্’ ধাতু থেকে উদ্ভূত শব্দের
সমার্থক শব্দ ‘নিত্যসত্তা’ ব্যবহার করা হয়েছে।। ইসরায়েলীদের তুমি বলবে, সেই নিত্যসত্তা ইয়াহ্ওয়েহ্ আমাকে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছেন।প্রকা 1:4,8
15ঈশ্বর
মোশিকে আরও বললেন, তুমি ইসরায়েলীদের বলবে যে তোমাদের পিতৃপুরুষ
অব্রাহাম, ইসহাক ও যাকোবের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর আমাকে তোমাদের
কাছে পাঠিয়েছেন। এ-ই আমার শাশ্বত নাম, এই নামেই পুরুষানুক্রমে পরিচিত হব
আমি। 16তুমি
গিয়ে ইসরায়েলীদের নেতৃবৃন্দকে একত্র করে বল, তোমাদের পিতৃপুরুষ অব্রাহাম,
ইস্হাক ও যাকোবের আরাধ্য ঈশ্বর, প্রভু পরমেশ্বর আমাকে দর্শন দিয়ে
বলেছেন, আমার কৃপাদৃষ্টি লাভ করেছ তোমরা, মিশরীরা তোমাদের যে দশা করেছে
তা আমি দেখেছি। 17মিশরের
দুর্দশা থেকে উদ্ধার করে আমি তোমাদের কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়,
হিব্বীয় ও যিবুষীয়দের দেশে নিয়ে যাব। সুজলা, সুফলা, প্রাচুর্যে উচ্ছল সেই
দেশ। 18তারা
তোমার কথা শুনবে, আর তুমি ইসরায়েলী নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে মিশররাজের
কাছে যাবে। তাকে বলবে, ইসরায়েলীদের আরাধ্য প্রভু পরমেশ্বর আমাদের আমাদের
দর্শন দিয়েছেন, অতএব আমাদের অনুমতি দিন যেন আমরা তিন দিনের পথ অতিক্রম করে
প্রান্তরে গিয়ে আমাদের আরাধ্য প্রভু পরমেশ্বরের উদ্দেশে বলি উৎসর্গ করতে
পারি। 19আমি জানি যে মিশর রাজকে বাধ্য করা না হলে সে আমাদের যেতে দেবে না। 20আমি আমার অলৌকিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে মিশরীদের শাস্তি বিধান করলে পর মিশররাজ তোমাদের যেতে দেবে। 21আমার অনুগ্রহে ইসরায়েলীরা মিশরীদের প্রীতিভাজন হয়ে উঠবে এবং এদেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় তাদের শূন্য হাতে যেতে হবে না।যাত্রা 12:35-36
22প্রত্যেক
নারী তার মিশরী প্রতিবেশিনী এবং তার পরিবারে বাস করে এমন অন্য মিশরী রমণীর
কাছ থেকে সোনা ও রূপোর অলঙ্কার এবং সাজ পোষাক চেয়ে নেবে। সেগুলি তোমরা
তোমাদের পুত্রকন্যাদের পরাবে। আর এই ভাবেই তোমরা মিশরীদের ধনসম্পদ নিয়ে
যাবে।
No comments:
Post a Comment