যাত্রাপুস্তক ৪: ১০

মোশিকে ঈশ্বরের অলৌকিক ক্ষমতা দান
1মোশি বললেন, ইসরায়েলীরা আমাকে বিশ্বাস করবে না, আমার কথাও শুনবে না। তারা বলবে, প্রভু পরমেশ্বর তোমাকে দর্শন দেন নি। 2প্রভু পরমেশ্বর, তাঁকে বললেন, তোমার হাতে ওটা কি? মোশি বললেন, একটা লাঠি। 3প্রভু পরমেশ্বর বললেন, ওটা মাটিতে ফেলে দাও। মোশি লাঠিটা মাটিতে ফেলে দিলেন আর সেটা সাপ হয়ে গেল। মোশি দৌড়ে দূরে সরে গেলেন। 4কিন্তু প্রভু পরমেশ্বর তাঁকে বললেন, হাত বাড়িয়ে ওটার লেজ ধর। মোশি হাত বাড়িয়ে সাপটির লেজ ধরার সঙ্গে সঙ্গে আবার সেটি তাঁর হাতের লাঠিতে পরিণত হল। 5প্রভু পরমেশ্বর বললেন, তোমাকে এই রকম করতে দেখলে লোকে বিশ্বাস করবে যে তাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহাম, ইসহাক ও যাকোবের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর সত্যিই তোমাকে দর্শন দিয়েছেন।
6প্রভু পরমেশ্বর আবার বললেন, জামার ভিতরে হাত ঢুকিয়ে তোমার বুকে হাত দাও। মোশি তাই করলেন, তারপর হাত বের করে আনার পর দেখা গেল তাঁর হাতে শ্বেতকুষ্ঠ হয়েছে। 7প্রভু পরমেশ্বর বললেন, তোমার হাত আবার বুকে রাখ। মোশি আবার বুকে হাত রাখলেন। পরে তিনি যখন হাত বের করে আনলেন, তখন দেখা গেল তাঁর হাত দেহের অন্যান্য অংশের মতই সুস্থ হয়ে গেছে। 8প্রভু পরমেশ্বর বললেন, ইসরায়েলীরা যদি ঐশীশক্তির প্রথম নির্দশন দেখে তোমাকে বিশ্বাস না করে এবং তোমার কথা না শোনে তাহলে দ্বিতীয়টি দেখে তারা বিশ্বাস করবে। 9এই দুটি নির্দশন দেখেও যদি তাদের প্রত্যয় না হয় এবং তোমার কথা তারা না শোনে তাহলে তুমি নদীর জল খানিকটা নিয়ে মাটিতে ঢেলে দেবে। মাটিতে পড়ে নদীর সেই জল রক্তে পরিণত হবে।
 
10মোশি তখন প্রভু পরমেশ্বরকে বললেন, হে প্রভু, আমি কোন কালেই সুবক্তা নই, এমন কি তুমি তোমার এ দাসের সঙ্গে বাক্যালাপ করার পরেও আমি বাক্‌পটু হতে পারি নি। আমার মুখে আড়ষ্ট, তোৎলা লোক আমি।  
 
11প্রভু তাঁকে বললেন, মানুষের বাক্‌শক্তি কার অবদান? কে মানুষকে মূক ও বধির করে সৃষ্টি করে? কে তাকে দেয় দৃষ্টিশক্তি? অথবা কে তাকে করে অন্ধ? আমি, প্রভু পরমেশ্বরই কি তা করি না? 12সুতরাং তুমি এখন সেখানে যাও, আমিই তোমাকে কথা বলার ক্ষমতা দেব, আর কি বলতে হবে তাও তোমাকে জুগিয়ে দেব।
 
13কিন্তু মোশি তবুও বললেন, হে প্রভু, আমাকে নয়, দয়া করে আর কাউকে পাঠান। 14এ কথায় প্রভু পরমেশ্বর মোশির উপর ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, লেবিকুলের হারোণ তো তোমার ভাই, আমি জানি সে বাক্‌পটু। সে তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসছে। তোমাকে দেখে সে খুব আনন্দিত হবে। 15তুমি তার সঙ্গে কথা বলে তাকে কি বলতে হবে তা জানিয়ে দিও। আমি তোমাদের দুজনের মুখেই কথা জোগাব আর কি করতে হবে তাও দুজনকে বলে দেব। 16সে তোমার হয়ে জনতার কাছে সব কথা বলবে। সে হবে তোমার মুখপাত্র আর তুমি হবে তার কাছে ঈশ্বরস্বরূপ। 17আর এই লাঠিখানা তুমি হাতে নাও, এর দ্বারাই তুমি সমস্ত অলৌকিক নির্দশন দেখাবে।
18মোশি তখন তাঁর শ্বশুর যিথ্রোর কাছে ফিরে গিয়ে বললেন, আমাকে মিশরে আত্মীয়স্বজনের কাছে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিন। আমি গিয়ে দেখব তারা এখনও বেঁচে আছে কি না। যিথ্রো শুভেচ্ছা জানিয়ে মোশিকে বিদায় দিলেন।
মোশির মিশরে প্রত্যাবর্তন
19মোশি মিদিয়ন দেশে থাকতেই প্রভু পরমেশ্বর তাঁকে বলেছিলেন, তুমি মিশরে ফিরে যাও। যারা তোমার জীবন নাশের চেষ্টা করেছিল তারা সকলেই গত হয়েছে। 20মোশি তখন তাঁর স্ত্রী-পুত্রদের গাধার পিঠে চড়িয়ে ঈশ্বরদত্ত সেই লাঠিখানা হাতে নিয়ে মিশরের দিকে যাত্রা করলেন। 21প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, তুমি এখন মিশরে ফিরে যাচ্ছ, দেখো, আমি যে সব অলৌকিক নির্দশন দেখাবার ক্ষমতা তোমাকে দিয়েছি সে সবই যেন স্মরণে থাকে। ফারাও-এর সাক্ষাতে সেগুলি প্রদর্শন করবে। কিন্তু আমি তার বোধশক্তি বিকল করে দেব ফলে সে ইসরায়েলীদের মুক্তি দেবে না। 22তখন তুমি ফারাওকে বলবে, প্রভু পরমেশ্বর বলেছেন, ইসরায়েল আমার প্রথম সন্তান। 23আমি তোমাকে বলেছিলাম, আমার সন্তানকে মুক্ত করে দাও, সে আমার আরাধনা করবে। কিন্তু তুমি তাকে মুক্তি দিতে অস্বীকার করলে, তাই আমি এখন তোমার প্রথমজাত পুত্রকে সংহার করব।যাত্রা 12:29
24পথে মোশি এক পান্থশালায় রাত্রিযাপন করলেন। প্রভু পরমেশ্বর সেখানে দেখা দিয়ে তাঁকে বধ করতে উদ্যত হলেন। 25সিপ্পোরা তখন ধারাল একটা পাথরখণ্ড নিয়ে তাঁর পুত্রের লিঙ্গত্বক্ ছেদন করলেন এবং তা মোশির পায়ে ছোঁয়ালেন। আর তিনি বললেন, তুমি সত্যিই আমার রক্তমূল্যে পাওয়া স্বামী।
26প্রভু পরমেশ্বর তখন মোশিকে অব্যাহতি দিলেন। পুত্রের লিঙ্গত্বক্ ছেদনের জন্যই সিপ্পোরা বলেছিলেন ‘রক্তমূল্যে পাওয়া স্বামী’। 27প্রভু পরমেশ্বর হারোণকে বললেন, মোশির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য প্রান্তরে যাও। হারোণ ঈশ্বরের পর্বতে গিয়ে মোশির দেখা পেলেন এবং তাঁকে চুম্বন করে অভ্যর্থনা জানালেন। 28প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে পাঠাবার সময় যে সব কথা বলেছিলেন এবং যে সমস্ত অলৌকিক নিদর্শন দেখাবার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিনি সব কথাই হারোণকে বললেন। 29তখন মোশি ও হারোণ গিয়ে ইসরায়েলী নেতৃবৃন্দকে একত্র করলেন। 30প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে যা বলেছিলেন, সবই হারোণ তাদের কাছে ব্যক্ত করলেন। আর মোশি জনতার সাক্ষাতে সমস্ত অলৌকিক নির্দশন দেখালেন। 31ইসরায়েলীরা তখন তাঁকে বিশ্বাস করল আর প্রভু পরমেশ্বর তাদের প্রতি সদয় হয়েছেন এবং তাদের দুর্দশা দেখেছেন —এ কথা শুনে তারা প্রণত হয়ে প্রভু পরমেশ্বরের আরাধনা করল।
 
 

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...