হযরত ইয়াহিয়া (আঃ)-এর মৃত্যু
1সেই সময়ে ঈসার বিষয় শুনে গালীল প্রদেশের শাসনকর্তা হেরোদ তাঁর কর্মচারীদের বললেন, 2“ইনি তরিকাবন্দীদাতা ইয়াহিয়া; মৃত্যু থেকে বেঁচে উঠেছেন। সেইজন্যই উনি এই সব অলৌকিক চিহ্ন-কাজ করছেন।”
3হেরোদ নিজের ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়ার দরুন ইয়াহিয়াকে বেঁধে নিয়ে গিয়ে জেলখানায় রেখেছিলেন, 4কারণ ইয়াহিয়া তাঁকে বলতেন, “হেরোদিয়াকে স্ত্রী হিসাবে রাখা আপনার উচিত নয়।” 5হেরোদ ইয়াহিয়াকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি লোকদের ভয় করতেন কারণ লোকে ইয়াহিয়াকে নবী বলে মানত।
6হেরোদের জন্মদিনের উৎসবে হেরোদিয়ার মেয়ে উপস্থিত লোকদের সামনে নেচে হেরোদকে সন্তুষ্ট করল। 7সেইজন্য হেরোদ কসম খেয়ে বললেন সে যা চাইবে তা-ই তিনি তাকে দেবেন। 8মেয়েটি তার মায়ের কাছ থেকে পরামর্শ পেয়ে বলল, “থালায় করে তরিকাবন্দীদাতা ইয়াহিয়ার মাথাটা এখানে আমার কাছে এনে দিন।”
9এতে বাদশাহ্ হেরোদ দুঃখিত হলেন, কিন্তু যাঁরা তাঁর সংগে খেতে বসেছিলেন তাঁদের সামনে কসম খেয়েছিলেন বলে তিনি তা দিতে হুকুম করলেন। 10তিনি লোক পাঠিয়ে জেলখানার মধ্যেই ইয়াহিয়ার মাথা কাটালেন। 11পরে মাথাটি থালায় করে এনে মেয়েটিকে দেওয়া হলে পর সে তার মায়ের কাছে তা নিয়ে গেল। 12এর পর ইয়াহিয়ার সাহাবীরা এসে তাঁর লাশটা নিয়ে গিয়ে দাফন করলেন এবং সেই খবর ঈসাকে গিয়ে দিলেন।
পাঁচ হাজার লোককে খাওয়ানো
13ইয়াহিয়ার
মৃত্যুর খবর শুনে ঈসা একাই সেখান থেকে নৌকায় করে একটা নির্জন জায়গায় চলে
গেলেন। লোকেরা সেই কথা শুনে ভিন্ন ভিন্ন গ্রাম থেকে হাঁটা-পথে তাঁর পিছন
ধরল। 14তিনি নৌকা থেকে নেমে লোকদের ভিড় দেখতে পেলেন আর মমতায় পূর্ণ হয়ে তাদের মধ্যে যারা অসুস্থ ছিল তাদের সুস্থ করলেন।
15দিনের
শেষে সাহাবীরা তাঁর কাছে এসে বললেন, “জায়গাটা নির্জন, বেলাও গেছে। লোকদের
বিদায় করে দিন যেন তারা গ্রামে গিয়ে নিজেদের জন্য খাবার কিনতে পারে।”
16ঈসা তাঁদের বললেন, “ওদের যাবার দরকার নেই, তোমরাই ওদের খেতে দাও।”
17সাহাবীরা তাঁকে বললেন, “আমাদের এখানে পাঁচখানা রুটি আর দু’টা মাছ ছাড়া আর কিছুই নেই।”
18-19তিনি
বললেন, “ওগুলো আমার কাছে আন।” পরে তিনি লোকদের ঘাসের উপর বসতে হুকুম
করলেন, আর সেই পাঁচখানা রুটি আর দু’টা মাছ নিয়ে আসমানের দিকে তাকিয়ে
আল্লাহ্কে শুকরিয়া জানালেন। এর পরে তিনি রুটি ভেংগে সাহাবীদের হাতে দিলেন
আর সাহাবীরা তা লোকদের দিলেন। তারা প্রত্যেকে পেট ভরে খেল। 20খাওয়ার পরে যে টুকরাগুলো পড়ে রইল সাহাবীরা তা তুলে নিলেন, আর তাতে বারোটা টুকরি পূর্ণ হল। 21যারা খেয়েছিল তাদের মধ্যে স্ত্রীলোক ও ছোট ছেলেমেয়ে ছাড়া কমবেশী পাঁচ হাজার পুরুষ ছিল।
পানির উপর দিয়ে হাঁটা
22এর পরে ঈসা সাহাবীদের তাগাদা দিলেন যেন তাঁরা নৌকায় উঠে তাঁর আগে অন্য পারে যান, আর এদিকে তিনি লোকদের বিদায় করলেন। 23লোকদের বিদায় করে মুনাজাত করবার জন্য তিনি একা পাহাড়ে উঠে গেলেন। যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসল তখনও তিনি সেখানে একাই রইলেন। 24ততক্ষণে সাহাবীদের নৌকাখানা ডাংগা থেকে অনেকটা দূরে গিয়ে পড়েছিল এবং বাতাস উল্টাদিকে থাকাতে ঢেউয়ে ভীষণভাবে দুলছিল। 25শেষ রাতে ঈসা সাগরের উপর দিয়ে হেঁটে সাহাবীদের কাছে আসছিলেন। 26সাহাবীরা একজনকে সাগরের উপর হাঁটতে দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে বললেন, “ভূত, ভূত,” আর তার পরেই চিৎকার করে উঠলেন।
27ঈসা তখনই তাঁদের বললেন, “এ তো আমি; ভয় কোরো না, সাহস কর।”
28পিতর তাঁকে বললেন, “হুজুর, যদি আপনিই হন তবে পানির উপর দিয়ে আপনার কাছে যেতে আমাকে হুকুম দিন।”
29ঈসা বললেন, “এস।”
তখন পিতর নৌকা থেকে নেমে পানির উপর দিয়ে হেঁটে ঈসার কাছে চললেন। 30কিন্তু জোর বাতাস দেখে তিনি ভয় পেয়ে ডুবে যেতে লাগলেন এবং চিৎকার করে বললেন, “হুজুর, আমাকে বাঁচান।”
31ঈসা তখনই হাত বাড়িয়ে তাঁকে ধরলেন এবং বললেন, “অল্প ঈমানদার, কেন সন্দেহ করলে?”
32-33ঈসা আর পিতর নৌকায় উঠলে পর বাতাস থেমে গেল। যাঁরা নৌকার মধ্যে ছিলেন তাঁরা ঈসাকে সেজদা করে বললেন, “সত্যিই আপনি ইব্নুল্লাহ্।”
34পরে তাঁরা সাগর পার হয়ে গিনেষরৎ এলাকায় এসে নামলেন। 35সেখানকার লোকেরা ঈসাকে চিনতে পেরে এলাকার সব জায়গায় খবর পাঠাল। 36তাতে
লোকেরা অসুস্থদের ঈসার কাছে আনল এবং তাঁকে অনুরোধ করল যেন সেই অসুস্থরা
তাঁর চাদরের কিনারাটা কেবল ছুঁতে পারে; আর যত লোক তা ছুঁলো তারা সবাই সুস্থ
হল।
No comments:
Post a Comment